বাইয়াতে রিজওয়ানও হুদাইবিয়ার সন্ধি
ষষ্ঠ হিজরির যিলকদে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামওমরা করার নিয়তে ইহরাম বাঁধেন। নবীজির সাথে মক্কাভিমুখে রওনা হন১৪ বা ১৫ শত সাহাবির বিরাট জামাত। হুদাইবিয়া মক্কা মোয়াযযমা থেকে এক মনযিল দূরে একটি কূপ;এর নামানুসারেই এলাকার নামওহুদাইবিয়া। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে যাত্রাবিরতি করলেন।
নবীকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মর্মে অবহিত করতেহযরত উসমানকে মক্কায়পাঠিয়েদিলেন, এ সময়নবীজি শুধুই বায়তুল্লাহ শরিফের যিয়ারত এবং ওমরা পালনকরার জন্যই তাশরিফ নিয়েএসেছেন;এ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তাঁর নেই।হযরত উসমান মক্কা পৌঁছুতেই কাফেররা তাঁকে আটক করলো।এদিকে মুসলমানদের মধ্যে এ গুজবছড়িয়ে পড়্লো, কাফেররা হযরত উসমানকে হত্যা করেছে।নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ সংবাদ পৌঁছুলে, তিনি একটি বাবলাগাছেরনিচে বসে সাহাবাদের নিকটহতে জিহাদের বাইয়াত গ্রহণ করলেন;এর আলোচনা কুরআনে রয়েছে এবং এটাকে বাইয়াতেরিজওয়ান বলা হয়।
পরে জানা গেলো, উসমান-হত্যার খবরটি মিথ্যা ছিলো। কুরাইশরা বরং মুসলিমদের সাথে সন্ধির প্রস্তাব করলো এবং সন্ধির শর্তসমূহ চূড়ান্ত করার জন্য সুহাইলইবনে আমরকে প্রেরণ করলো।নিম্নোক্ত শর্তগুলো চূড়ান্ত করে অঙ্গীকারপত্র লেখা হলো এবং দশ বছরের জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে সন্ধি অনুষ্ঠিত হলো।
১। মুসলমানরা এবার ওমরা না করেই ফিরে যাবে।
২। আগামী বছর হজ করতে এসেমাত্র তিনদিন অবস্থান করে চলে যাবে।
৩। অস্ত্র-সজ্জিত হয়ে আসতে পারবে না।তরবারি সাথে থাকলে কোষদ্ধ থাকবে।
৪। মক্কা হতে কোনো মুসলমানকে সাথে নিয়ে যেতে পারবে না।
৫। কোনো মুসলমান যদি মক্কাতে থেকে যেতে চায়, তাকে বাধা দিতে পারবে না।
৬। যদি কোনোব্যক্তি মদিনা চলে যায়, তাহলে নবীজি তাকে ফেরত পাঠাবেন।
৭। মদিনা হতে কেউ মক্কায় চলে আসলে করে তাকে ফেরত পাঠাবে না।
এসব শর্ত যদিও বাহ্যত মুসলমানদের বিরুদ্ধে এবং প্রকাশ্যভাবে পরাজয় ও বৈষম্যমূলক ছিলো, কিন্তু মহান আল্লাহ কুরআনে একে ‘মহা বিজয়’ বলে অভিহিত করেন। সাহাবাগণ এভাবে নতজানু হয়ে সন্ধি করাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। নবীজি তাঁদের মনোভাব বুঝতে পেরে বললেন, ‘আমার প্রতি এটাই মহান আল্লাহর নির্দেশ এবং এতেই আমাদের ভবিষ্যৎ-কল্যাণ নিহিত রয়েছে। পরবর্তী কালের ঘটনাসমূহ এ রহস্যের সমাধান করে দেয়; যেমন, সন্ধির কল্যাণে শান্তি ও পূর্ণ নিরাপত্তায় মক্কা-মদিনার মধ্যে যাতায়াত আরম্ভ হয়ে যায়। কাফেররা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে এবং মুসলমানদের কাছে বিনা বাধায় আসা-যাওয়া করতে থাকে। এদিকে ইসলামি চরিত্রের চুম্বকশক্তি কাফেরদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করতে শুরু করে। ঐতিহাসিকগণের বর্ণনা, ওই সময় এত অধিক পরিমাণ লোক ইসলাম গ্রহণ করে, ইতিপূর্বে কখনো এত পরিমাণ ইসলামে দীক্ষিত হয়নি; প্রকৃতপক্ষে এ সন্ধি ছিলো মক্কা-বিজয়েরই ভূমিকা।
তথ্যসূত্র:আর-রাহিকুল মাখতুম, সফিউর রহমান মোবারকপুরি;সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, মুফতি শফি।