আবু কাতাদাহ্ আল-আনসারী (রা)

হযরত আবু কাতাদাহ মদীনার বিখ্যাত খাযরাজ গোত্রের বনী সুলামা শাখার সন্তান। তাঁর আসল নামের ব্যাপারে মতভেদ আছে। কেউ বলেছেন ‘আল হারিস’; আবার কেউ বলেছেন ‘আমর’। আল-কালবী ও ইবন ইসহাকের মতে ‘আন-নু’মান’। তবে ‘আল-হারিস’ অধিকতর প্রসিদ্ধ। ইতিহাসে তিনি ‘আবু কাতাদাহ্’ এ ডাক নামেই খ্যাত। পিতা রাব’য়ী ইবন বালদামা এবং মাতা কাবশা বিনতু মুতাহ্হির। তিনিও খাযরাজ গোত্রের বনী সুলামার সাওয়াদ ইবন গানাম শাখার মেয়ে। রাসূলুল্লাহর সা. মদীনায় হিজরাতের ১৮ বছর পূর্বে ৬০৪ খ্রীষ্টাব্দে মদীনায় জন্মগ্রহণ করেন। (উসুদুল গাবা- ৫/২৭৪, আল ইসাবা- ৪/১৫৮; আল-আ’লাম- ২/১৫৪) তাবুক যুদ্ধে যোগদান না করার কারণে যে কা’ব ইবন মালিক আল-আনসারীর শাস্তি হয় এবং পরে আল্লাহ পাক যাঁকে ক্ষমা করেন, তিনি আবু কাতাদাহ্র চাচাতো ভাই। সে সময় তিনিও অন্য সকলের মত কা’বকে বয়কট করেন। (হায়াতুস সাহাবা- ১/৪৬৭)

শেষ ’আকাবার পরে কোন এক সময় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। বদর যুদ্ধে তাঁর অংশ গ্রহণের ব্যাপারে সীরাত বিশেষজ্ঞদের মতবিরোধ আছে। অনেকে তাঁকে বদরী সাহাবী বলেছেন। তবে মুসা ইবন ’উকবা বা ইবন ইসহাক, এঁদের কেউই বদরী সাহাবীদের তালিকার মধ্যে তাঁর নামটি উল্লেখ করেননি। উহুদসহ পরবর্তী সকল যুদ্ধে রাসূলুল্লাহর সা. সাথে যোগ দেন। (আল-ইসাবা- ৪/১৫৮; উসুদুল গাবা- ৫/২৭৪)

৬ হিজরীর রবীউল আউয়াল মাসে জীকারাদ বা গাবা অভিযান পরিচালিত হয়। সেই অভিযানে তিনি দারুণ দুঃসাহসের পরিচয় দান করেন। হযরত রাসূলে কারীমের সা. উটগুলি জীকারাদ নামক একটি পল্লীতে চরতো। রাসূলুল্লাহর সা. দাস রাবাহ ছিলেন সেই উটগুলির দায়িত্বে। গাতফান গোত্রের কিছু লোক রাখালদের হত্যা করে উটগুলি লুট করে নিয়ে যায়। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত সালামা ইবন আকওয়া এ সংবাদ পেয়ে আরবের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে মদীনার দিকে মুখ করে শত্রুর আক্রমণের সতর্ক ধ্বনি ‘ইয়া সাবাহাহ্!’ বলে তিনবার চিৎকার দেন। অন্যদিকে রাবাহকে দ্রুত রাসূলুল্লাহর সা. নিকট পাঠিয়ে দিয়ে নিজে গাতফানী লুটেরাদের পিছে ধাওয়া করেন। হযরত রাসূলে কারীম সা. তাঁকে সাহায্যের জন্য দ্রুত তিনজন অশ্বারোহীকে পাঠিয়ে দেন এবং তাঁদের পিছনে তিনি নিজেও বেরিয়ে পড়েন। সালামা ইবন আকওয়া মদীনার সাহায্যের প্রতীক্ষায় ছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি দেখতে পেলেন, আবু কাতাদাহ আল-আনসারী, আল-আখরাম আল-আসাদী এবং তাঁদের পিছনে মিকদাদ আল-কিন্দী বাতাসের বেগে ঘোড়া ছুটিয়ে আসছেন। এই অশ্বারোহীদের দেখে গাতফানীর উট ফেলে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আল- আখরাম আল-আসাদীর মধ্যে তখন শাহাদাতের তীব্র বাসনা কাজ করছে। তিনি সালামার নিষেধ অমান্য করে গাতফানীদের পিছে ধাওয়া করেন। এক পর্যায়ে তাঁর ও ’আবদুর রহমান গাতফানীর মধ্যে হাতাহাতি লড়াই হয় এবং আল-আখরাম শাহাদাত বরণ করেন। আবদুর রহমান আল-আখরামের ঘোড়াটি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এমন সময় আবু কাতাদাহ্ এসে উপস্থিত হন এবং তিনি বর্শার এক খোঁচায় আবদুর রহমানকে হত্যা করেন। (আল-কামিল ফী আত-তারীখ- ২/১৯৮-১৯১; আল-ইসাবা- ৪/১৫৮; হায়াতুস সাহাবা- ১/৫৬১; সাহীহ মুসলিম- ২/১০১)

অন্য একটি বর্ণনা মতে এই জীকারাদ যুদ্ধে আবু কাতাদাহ্ যাকে হত্যা করেন তার নাম হাবীব ইবন ’উয়াইনা ইবন হিস্ন। তিনি হাবীবকে হত্যা করে নিজের চাদর দিয়ে লাশটি ঢেকে শত্রুর পিছনে আরও এগিয়ে যান। পিছনের লোকেরা যখন দেখতে পেল, আবু কাতাদাহ্র চাদর দিয়ে একটি লাশ ঢাকা তখন তারা মনে করলো, নিশ্চয় এ আবু কাতাদাহ্র লাশ। সাথে সাথে তারা ‘ইন্নালিল্লাহ’ উচ্চারণ করলো। তারা নিজেরা বলাবলি করতে লাগলো’ আবু কাতাদাহ্ নিহত হয়েছে। একথা শুনে রাসূল সা. বললেন’ আবু কাতাদাহ্ নয়; বরং আবু কাতাদাহ্র হাতে নিহত ব্যক্তির লাশ। সে একে হত্যা করে নিজের চাদর দিয়ে ঢেকে রেখে গেছে, যাতে তোমরা বুঝতে পার, এ ঘাতক সেই। এ যুদ্ধে আবু কাতাদাহ্র ঘোড়াটির নাম ছিল ‘হাযওয়া’। (সীরাতু ইবন হিশাম- ২/২৮৪)

আবু কাতাদাহ বলেন, জীকারাদের দিন অভিযান শেষে রাসূলুল্লাহর সা. সাথে আমার দেখা হলে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে দু’আ করেনঃ হে আল্লাহ! তুমি তার কেশ ও ত্বকে বরকত দাও। তার চেহারাকে কামিয়াব কর। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহ আপনার চেহারাও কামিয়াব করুন! (উসুদুল গাবা- ৫/২৭৫) এ দিন তাঁর বীরত্ব ও সাহসিকতার বর্ণনা শুনে রাসূল সা. মন্তব্য করেনঃ ‘আবু কাতাদাহ্ আজ আমাদের সর্বোত্তম অশ্বারোহী।’ (আল-কামিল ফী আত-তারীখ- ২/১৯১; আল-ইসাবা- ৪/১৫৮)

হুদাইবিয়া সন্ধির সফরে রাসূলুল্লাহর সা. সাথে আবু কাতাদাহ্ও ছিলেন। এ সফরে ফেরার পথে একদিন রাসূলসহ সা. তাঁর সফর সঙ্গীদের ফজরের নামায কাজা হয়ে যায়। সে কাজা নামায কখন কিভাবে রাসূল সা. আদায় করেছিলেন তার একটা বিবরণ আবু কাতাদাহ্ বর্ণিত একটি হাদীস থেকে জানা যায়। (হায়াতুস সাহাবা- ৩/২৯)

হিজরী সপ্তম অথবা অষ্টম সনে রাসূল সা. আবু কাতাদাহ্র নেতৃত্বে একটি বাহিনী ‘ইদাম’-এর দিকে পাঠান। এই ‘ইদাম’ একটি স্থান বা একটি পাহাড়ের নাম এবং মদীনা থেকে শামের রাস্তায়। তাঁরা ‘ইদাম’ উপত্যকায় পৌঁছানোর পর তাঁদের পাশ দিয়ে ’আমের ইবন আল-আদবাত আল-আশজা’য়ী যাচ্ছিলেন। তিনি আবু কাতাদাহ্ ও তাঁর বাহিনীর সদস্যদের সালাম দিলেন। তা সত্ত্বেও পূর্ব শত্রুতার কারণে এ বাহিনীর সদস্য মুহাল্লিম ইবন জাসসামা ইবন কায়েস তাঁকে হত্যা করেন এবং তাঁর উট ও অন্যান্য জিনিস ছিনিয়ে নেন। তাঁরা রাসূলুল্লাহর সা. নিকট উপস্থিত হয়ে যখন তাঁকে এ ঘটনা অবহিত করেন তখন সূরা আন নিসার ৯৪ নং আয়াতটি নাযিল হয়। (আনসাবুল আশরাফ- ১/৩৮১; হায়াতুস সাহাবা- ২/৩৮৯)

‘হে মুমিনগণ! তোমরা যখন আল্লাহর পথে যাত্রা করবে তখন পরীক্ষা করে নেবে কেউ তোমাদেরকে সালাম দিলে ইহ-জীবনের সম্পদের আকাঙ্ক্ষায় তাকে বলো না, ‘তুমি মুমিন নও’। কারণ, আল্লাহর নিকট অনায়াসলভ্য সম্পদ প্রচুর আছে। তোমরা তো পূর্বে এরূপই ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। সুতরাং তোমরা পরীক্ষা করে নেবে। তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে বিশেষভাবে অবহিত।’ (সূরা আন নিসা- ৯৪)

হিজরী ৮ম সনের শা’বান মাসে রাসূল সা. নাজ্দের ‘খাদরাহ্’ নামক স্থানের দিকে পনেরো সদস্যের একটি বাহিনী পাঠান। আবু কাতাদাহ্ ছিলেন এই বাহিনীর আমীর। সেখানে গাতফান গোত্রের বসতি ছিল। তারা ছিল মুসলমানদের চরম শত্রু এক লুটেরা গোত্র। তাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল। একারণে সারা রাত চলতেন এবং দিনে কোথাও লুকিয়ে থাকতেন। এভাবে হঠাৎ তাঁরা গাতফান গোত্রে পৌঁছে যান। তারাও ছিল ভীষণ সাহসী। সাথে সাথে বহুলোক উপস্থিত হয়ে গেল এবং যুদ্ধ শুরু হলো। আবু কাতাদাহ্ সঙ্গীদের বললেন, যারা তোমাদের সাথে লড়বে শুধু তাদেরকেই হত্যা করবে। সবাইকে ধাওয়া করার কোন প্রয়োজন নেই। এমন নীতি গ্রহণের ফলে দ্রুত যুদ্ধ শেষ হয়ে গেল। মাত্র ১৫ দিন পর প্রচুর গণীমতের মাল সঙ্গে নিয়ে মদীনায় ফিরে আসলেন। গণীমতের মালের মধ্যে ছিল দু’শো উট, দু’হাজার ছাগল এবং বহু বন্দী। এই মালের এক পঞ্চমাংশ পৃথক করে রেখে বাকী সবই তাঁদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হয়।

এ ঘটনার কিছুদিন পর আল্লাহর রাসূল সা. রমজান মাসে ৮ জন লোকের একটি দল ‘বাতানে আখাম’- এর দিকে পাঠান। এঁদেরও নেতা ছিলেন আবু কাতাদাহ্। ‘বাতানে আখাম’- এর অবস্থান হচ্ছে জী-খাশাব ও জী-মারওয়ার মাঝামাঝি মদীনা থেকে মক্কার দিকে তিন মনযিল দূরে। রাসুল সা. মক্কায় সেনা অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মানুষ যাতে একথা মোটেই বুঝতে না পারে এ জন্য এই দলটিকে পাঠান। মূলতঃ মানুষের চিন্তা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই একাজ করেন। জী-খাশাব পৌঁছার পর এ দলটি জানতে পেল যে, রাসূল সা. মক্কার দিকে বেরিয়ে পড়েছেন। সুতরাং তাঁরা ‘সুকাইয়্যা’ নামক স্থানে রাসূলুল্লাহর সা. বাহিনীর সাথে মিলিত হন। (তাবাকাতঃ মাগাযী অধ্যায়- ৯১)

মক্কা বিজয়ের পর হুনাইন অভিযান পরিচালিত হয়। এ অভিযানে লড়াই এত তীব্র ছিল যে, মুসলমানদের অনেক বড় বড় বীরও পিছু হঠতে বাধ্য হন। আবু কাতাদাহ্ এ যুদ্ধে দারুন বীরত্ব প্রদর্শন করেন। এক স্থানে একজন মুসলমান ও একজন মুশরিক সৈনিকের মধ্যে হাতাহাতি লড়াই হচ্ছে। দ্বিতীয় একজন পিছন দিক থেকে মুসলিম সৈনিককে আক্রমণের পায়তারা করছে। ব্যাপারটি আবু কাতাদাহর নজরে পড়লো। তিনি চুপিসারে এগিয়ে গিয়ে পিছন দিক থেকে লোকটির কাঁধে তরবারির ঘা বসিয়ে দিলেন। লোকটির একটি হাত কেটে পড়ে গেল; কিন্তু অতর্কিতে সে দ্বিতীয় হাতটি দিয়ে আবু কাতাদাহ্র গলা পেঁচিয়ে ধরলো। লোকটি ছিল অতি শক্তিশালী। সে এত জোরে আবু কাতাদাহ্কে চাপ দিল যে, তাঁর প্রাণ বেরিয়ে যাবার উপক্রম হলো। দু’জনের মধ্যে ধস্তাধস্তি চলছে, এর মধ্যে লোকটির দেহ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় সে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সুযোগে আবু কাতাদাহ্ লোকটির দেহে আরেকটি ঘা বসিয়ে দেন। লোকটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

আবু কাতাদাহ্ যখন তার হত্যা কর্মে ব্যস্ত তখন মক্কার এক মৃসলিম সৈনিক সেই পথে যাচ্ছিল। সে নিহত ব্যক্তির সকল সাজ-সরঞ্জাম ও জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়ে গেল। এরপর মুসলিম বাহিনীর মধ্যে দারুন ত্রাস ছড়িয়ে পড়ে। তারা ময়দান থেকে যে যেদিকে পারে, পালিয়ে যাচ্ছিল। আবু কাতাদাহ্ও এক দিকে যাচ্ছেন। পথে এক স্থানে হযরত ’উমারের রা. সাথে দেখা। আবু কাতাদাহ্ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ কী ব্যাপার? ’উমার রা. বললেনঃ আল্লাহর যা ইচ্ছা। এর মধ্যে মুসলমানরা দুর্বলতা ঝেড়ে ফেলে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে এবং রণক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করে।

আবু কাতাদাহ্ বলেনঃ যুদ্ধ থেমে গেল। আমরাও বিশ্রাম নিচ্ছি। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সা. ঘোষণা করলেনঃ কেউ কোন ব্যক্তিকে হত্যা করলে হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত জিনিস লাভ করবে। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি একজন সাজ-সরঞ্জামবিশিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যা করেছি। আমি যখন তার হত্যা কর্মে ব্যস্ত তখন কে একজন তাঁর জিনিস ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আমি তাকে চিনিনে। তখন মক্কার সেই ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! সে সত্য বলেছে। নিহত ব্যক্তির জিনিস আমার কাছে আছে। সেগুলি আমাকে দেওয়ার জন্য তাঁকে একটু রাজী করিয়ে দিন।

সাথে সাথে আবু বকর রা. বলে উঠলেনঃ আল্লাহর কসম! রাসূল সা. তাকে রাজী করাবেন না। একজন শেরে খোদা আল্লাহর রাহে জিহাদ করেছে, আর তুমি তার প্রাপ্য জিনিস হাতানোর মতলবে আছ? নিহত ব্যক্তির জিনিস তাকে দিয়ে দাও। তখন রাসূল সা. বললেনঃ আবু বকর সত্য বলেছে। তুমি তার লুণ্ঠিত দ্রব্য ফিরিয়ে দাও। আবু কাতাদাহ্ বলেনঃ আমি সেই জিনিসগুলি নিয়ে বিক্রী করি এবং সে অর্থ দিয়ে দশটির মত খেজুর গাছ ক্রয় করি। ইসলাম গ্রহণের পর এই ছিল আমার প্রথম কোন সম্পদ ক্রয়। (সীরাতু ইবন হিশাম- ২/৪৪৮, ৪৪৯; হায়াতুস সাহাবা- ২/৯০, ৯১; মুসনাদ- ৫/৩০৬)

রাসূলুল্লাহর সা. ইনতিকালের পর খলীফাদের সময়ে আবু কাতাদাহ্র কর্মকান্ডের বিস্তারিত তেম কোন তথ্য পাওয়া যায় না। হযরত ’উসমান রা. যখন বিদ্রোহীদের দ্বারা মদীনায় নিজ গৃহে ঘেরাও অবস্থায়, তখন হজ্জ মওসুম। সে সময় একদিন আবু কাতাদাহ্ অন্য একজন লোককে সংগে করে খলীফা ’উসমানের রা. নিকট গিয়ে হজ্জে যাওয়ার অনুমতি চান। তিনি তাদেরকে অনুমতি দেন। তখন তারা খলীফার নিকট জানতে চানঃ যদি এই বিদ্রোহীরা বিজয়ী হয় তাহলে তাঁরা কার সাথে থাকবেন? খলীফা বললেনঃ সংখ্যাগরিষ্ঠ জামা’য়াতের সাথে। তাঁরা আবার প্রশ্ন করেনঃ যদি এই সংখ্যাগরিষ্ঠ জামা’য়াতই আপনার ওপর বিজয়ী হয় তখন কার সাথে থাকবো? সংখ্যাগরিষ্ঠ দল যারাই হোক না কেন তাদের সাথে থাকবে। (হায়াতুস সাহাবা- ২/১২৬)

হযরত আলী রা. তাঁকে একবার মক্কার আমীর নিয়োগ করেন। পরে তাঁর স্থলে কুছাম ইবন ’আব্বাসকে নিয়োগ করেন। হিজরী ৩৬ সনে উটের যুদ্ধ এবং এর পরের বছর সিফ্ফীনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। হযরত আবু কাতাদাহ্ রা. দু’টি যুদ্ধেই হযরত আলীর রা. পক্ষে যোগ দেন। (আল-আ’লাম- ২/১৫৪; আল-ইসাবা- ৪/১৫৮) হিজরী ৩৮ সনে খারেজীরা বিদ্রোহের পতাকা উড্ডীন করে। হযরত আলী রা. যে বাহিনী নিয়ে তাদের বিরেুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন, আবু কাতাদাহ্ ছিলেন তার পদাতিক দলের অফিসার।

হযরত আবু কাতাদাহ্র রা. মৃত্যু সন নিয়ে দারুন মতভেদ আছে। কুফাবাসীদের মতে হিজরী ৩৮ সনে তিনি কুফায় মারা যান এবং হযরত আলী রা. সাত তাকবীরের সাথে তাঁর জানাযার নামায পড়ান। ইমাম শা’বী বলেন, সাত নয়, বরং ছয় তাকবীরের সাথে। হাসান ইবন ’উসমান বলেন, তিনি হিজরী- ৪০ সনে মারা যান। ওয়াকিদী বলেন, হিজরী ৫৪ সনে ৭২ বছর বয়সে মদীনায় মারা যান। আবার কেউ বলেছেন, ৭২ নয়; বরং ৭০ বছর বয়সে। ইমাম বুখারী ‘আল-আওসাত’ গ্রন্থে যারা হিজরী ৫০ থেকে ৬০ সনের মধ্যে মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে আবু কাতাদাহ্র নামটি উল্লেখ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, মারওয়ান যখন মু’য়াবিয়ার রা. পক্ষ থেকে মদীনার ওয়ালী তখন তিনি আবু কাতাদাহ্কে একবার দেখা করার জন্য ডেকে পাঠান এবং তিনি মারওয়ানের সাথে দেখা করেন। এর সমর্থনে আর একটি বর্ণনা দেখা যায়। মু’য়াবিয়া রা. যখন মদীনায় আসেন তখন সবশ্রেণীর মানুষ তাঁর সাথে দেখা করে। তখন তিনি আবু কাতাদাহ্কে ডেকে বলেনঃ শুধু আপনারা-আনসাররা ছাড়া সব মানুষই আমার সাথে দেখা করেছে। এসব বর্ণনা দ্বারা নিশ্চিতভাবে বুঝা যায় তিনি হিজরী ৪০ সনের পরে মারা গেছেন। (দ্রঃ আল-ইসাবা- ৪/১৫৯; আল-আ’লাম- ২/১৫৪; উসুদুল গাবা- ৫/২৭৫)

হযরত আবু কাতাদাহ্র রা. দৈহিক আকার-আকৃতি সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। তবে তিনি ঘাড় পর্যন্ত চুল রাখতেন যাকে ‘হামিয়্যা’ বলা হয়। চুলে মাঝে মাঝে চিরুনী করতেন। হযরত রাসূলে কারীম সা. একবার তাঁর চুলের অযত্ন ও বিক্ষিপ্ত অবস্থা দেখে বলেন, এগুলি একটু ঠিক কর। মানুষের উচিত চুল রাখলে তার যত্ন নেওয়া। অন্যথায় সে রাখার ফায়দা কি?

তাঁর ছিল চার ছেলেঃ আবদুল্লাহ, মা’বাদ, আবদুর রহমান ও সাবিত। শেষের জন ছিলেন দাসীর গর্ভজাত। তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল সালাফা বিনতু বারা’ ইবন মা’রূর ইবন সাখার। সুলামা খান্দানের এক অভিজাত ঘরের মেয়ে। তিনি নিজেও একজন ‘সাহাবিয়্যা’ (মহিলা সাহাবী) এবং তাঁর পিতা বারা’ ইবন মা’রূর ইবন সাখারও ছিলেন একজন খ্যাতিমান সাহাবী।

হযরত আবু কাতাদাহ্ কুরআন-হাদীসের প্রচার প্রসারের দায়িত্ব সম্পর্কে মোটেই উদাসীন ছিলেন না। হাদীস বর্ণনার ব্যাপারে ছিলেন দারুন সতর্ক। রাসূলুল্লাহর সা. নিকট থেকে ‘কিজব’ ’আলার রাসূলে’- বা রাসূলের প্রতি মিথ্যা আরোপের হাদীস শোনার পর থেকে হাদীসের ব্যাপারে দারুন সতর্কতা অবলম্বন করেন। (মুসনাদ- ৫/২৯২)

একদিন তাবঈদের একটি মজলিসে হাদীসের চর্চা হচ্ছিল। প্রত্যেকেই বলছিলেন, ‘রাসূল সা. এমন বলেছেন, রাসূল সা. এমন বলেছেন’। আবু কাতাদাহ্ তাঁদের এসব আলোচনা শুনে বললেন; হতভাগার দল, তোমাদের মুখ থেকে এসব কী বের হচ্ছে? রাসূল সা. মিথ্যা হাদীস বর্ণনাকারীদের জাহান্নামের শাস্তির কথা বলেছেন। (মুসনাদ- ৫/৩১০)

এত সতর্কতা সত্ত্বেও তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ১৭০ (একশত সত্তর)। তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনাকারীদের মধ্যে যেমন শ্রেষ্ঠ সাহাবাগণ আছেন, তেমনি আছেন শ্রেষ্ঠ তাবে’ঈগণও। যেমনঃ আনাস ইবন মালিক, জাবির ইবন ’আবদিল্লাহ, আবু মুহাম্মাদ নাফে, (তাঁর আযাদকৃত দাস), সা’ঈদ ইবন কা’ব ইবন মালিক, কাবশা বিনতু কা’ব ইবন মালিক, ’আবদুল্লাহ ইবন রাবাহ, ’আতা ইবন ইয়াসার, আবু সালামা ইবন ’আবদির রহমান ইবন ’আউফ, ’উমার ইবন সুলাইম যারকী, ’আবদুল্লাহ ইবন মা’বাদ, মুহাম্মাদ ইবন সীরীন, সা’ঈদ ইবন মুসায়্যিব প্রমুখ। উল্লেখিত ব্যক্তিগণের সকলের হাদীস শাস্ত্রের এক একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র।

হযরত আবু কাতাদাহ্র মধ্যে ইসলামী উখুওয়াত বা ভ্রাতৃত্বের চরম বিকাশ ঘটেছিল। একবার রাসূলুল্লাহর সা. সামনে এক আনসারী ব্যক্তির মৃতদেহ আনা হলো জানাযার জন্য। রাসূল সা. প্রথমে জানতে চাইলেন, তার উপর কোন ঋণ আছে কিনা। লোকেরা বললো তার দু’দীনার ঋণ আছে। তিনি আবার জানতে চাইলেন, সে কোন সম্পদ রেখে গেছে কিনা। লোকেরা বললো, না, সে কিছুই রেখে যায়নি। তখন রাসূল সা. বললেনঃ তোমরা তার নামায পড়। হযরত আবু কাতাদাহ্ আরজ করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ আমি যদি তার ঋণ পরিশোধ করে দেই, আপনি কি নামায পড়াবেন? বললেনঃ হ্যাঁ। আবু কাতাদাহ্ লোকটির ঋণ পরিশোধ করে রাসূলকে সা. খবর দিলেন। রাসূল সা. এসে জানাযার নামায পড়ান। (মুসনাদ- ৫/২৯, ২০৩)

একজন মুসলমান তাঁর কাছে কিছু ঋণী ছিল। যখন তিনি তাগাদায় যেতেন তখন সে লুকিয়ে থাকতো। একদিন তিনি লোকটির বাড়ীতে গেলেন এবং তার ছেলের কাছে খবর পেলেন, সে খাবার খাচ্ছে। তিনি চেঁচিয়ে বললেনঃ তুমি বেরিয়ে এসো, আজ আমি জেনে ফেলেছি। আজ লুকিয়ে কাজ হবে না। সে বেরিয়ে এলে আবু কাতাদাহ্ তার এভাবে লুকানোর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। লোকটি বললোঃ আসল কথা হেলো, আমি খুবই গরীব। আমার কাছে কিছুই নেই। তার ওপর আছে পরিবার-পরিজনের বোঝা। আবু কাতাদাহ্ বললেনঃ সত্যিই কি তোমার এমন দুরবস্থা? সে বললোঃ হাঁ। আবু কাতাদাহ্র চোখ পানিতে ভরে গেল। তিনি তার ঋণ মাফ করে দিলেন। (মুসনাদ- ৫/৩০৮)

হযরত আবু বকরের সা. খিলাফতকালে রিদ্দার যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধেল এক পর্যায়ে খলীফা খালিদ ইবন ওয়ালীদকে পাঠালেন মালিক ইবন নুওয়াইরা ইয়ারবু’য়ীর বিরুদ্ধে। মালিক ইবন নুওয়াইরা ইসলাম কবুল করেন। তা সত্ত্বেও যে কোন কারণেই হোক খালিদ তাঁকে হত্যা করেন। খালিদের একাজে আবু কাতাদাহ্ এতই ক্ষুব্ধ হন যে, খলীফার নিকট আবেদন করেন; আমি খালিদের অধীনে থাকতে রাজী নই। সে একজন মুসলমানের রক্ত ঝরিয়ছে।

অতি ক্ষুদ্র বিষয়েও তিনি মানুষকে সঠিক আকীদা বিশ্বাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন। একবার তিনি ছাদে দাঁড়িয়ে আছেন। এমন সময় একটা উল্কা আসতে থাকে। মানুষ সে দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে। তিনি তাদেরকে লক্ষ্য লক্ষ্য করে বললেনঃ এটা বেশী দেখা নিষেধ (মুসনাদ- ৫/২৯৯)

হযরত আবু কাতাদাহ্ রা. রাসূলুল্লাহর সা. সার্বক্ষণিক সাহচর্য ও খিদমতের সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। একবার এক সফরে তিনি রাসূলুল্লাহর সা. সঙ্গী ছিলেন। রাসূল সা. সাহাবীদের বললেন, পানি কোথায় আছে তা খুঁজে বের কর অন্যথায় সকালে ঘুম থেকে পিপাসিত অবস্থায় উঠতে হবে। লোকেরা পানির তালাশে বেরিয়ে গেল। কিন্তু হযরত আবু কাতাদাহ্ রা. রাসূলুল্লাহর সা. সাথেই থেকে গেলেন। রাসুল সা. উটের ওপর সওয়ার ছিলেন। ঘুম কাতর অবস্থায় তিনি যখন এক দিকে ঝুঁকে পড়ছিলেন তখন আবু কাতাদাহ্ এগিয়ে গিয়ে নিজের হাত দিয়ে সে দিকে ঠেস দিচ্ছিলেন। একবার তো রাসূল সা. পড়ে যাবারই উপক্রম হলেন। আবু কাতাদাহ্ দ্রুত হাত দিয়ে ঠেকালেন। রাসূল সা. চোখ মেলে জিজ্ঞেস করলেনঃ কে? বললেনঃ আবু কাতাদাহ্। রাসূল সা. আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ কখন থেকে আমার সাথে আছ? বললেনঃ সন্ধ্যা থেকে। তখন রাসূল সা. তাঁর জন্য দু’আ করলেন এই বলেঃ হে আল্লাহ! আপনি আবু কাতাদাহ্কে হিফাজত করুন যেমন সে সারা রাত আমার হিফাজত করেছে। (মুসনাদ- ৫/২৯৮; হায়াতুস সাহাবা- ৩/৩৪৭; আল-ইসাবা- ৪/১৫৯)

একবার হযরত আবু কাতাদাহ্ রা. রাসূলুল্লাহর সা. একটি মু’জিযা প্রত্যক্ষ করেন। আবু নু’য়ায়িম ‘আদ-দালায়িল’ গ্রন্থে (১৪৪) ইবন মাস’উদ রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমরা এক সফরে রাসূলুল্লাহর সা. সংগে ছিলাম। এক সময় যাত্রা বিরতিকালে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের সাথে কি পানি আছে? বললামঃ হাঁ। আমার কাছে একটি পাত্রে কিছু পানি আছে। বললেনঃ নিয়ে এসো। আমি পানির পাত্রটি নিয়ে এলাম। তিনি বললেনঃ এর থেকে কিছু পানি নিয়ে তোমরা সবাই অজু কর। অজুর পর সেই পাত্রে এক ঢোক মত পানি থাকলো। রাসূল সা. বললেনঃ আবু কাতাদাহ্, তুমি এ পানিটুকু হিফাজতে রেখে দাও। খুব শিগগিরই এর একটি খবর হবে। আস্তে আস্তে দুপুরের প্রচন্ড গরম শুরু হলো। রাসূল সা. সঙ্গীদের সামনে উপস্থিত হলেন। তারা সবাই বললেনঃ না, তোমরা মরবে না। এই বলে তিনি আবু কাতাদাহ্কে ডেকে পানির পাত্রটি নিয়ে আসতে বললেন। আবু কাতাদাহ্ বলেনঃ আমি পাত্রটি নিয়ে এলাম। রাসূল সা. বললেনঃ আমার পিয়ালাটি নিয়ে এসো। পিয়ালা আনা হলো। তিনি পাত্র থেকে একটু করে পানি পিয়ালায় ঢেলে মানুষকে পান করাতে লাগলেন। পানি পানের জন্য রাসূলুল্লাহর সা. চারপাশে ভীড় জমে গেল। দারুন হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। রাসূল সা. বললেনঃ তোমরা ভদ্রভাবে শান্ত থাক, সবাই পান করতে পারবে। আবু কাতাদাহ্ বলেনঃ একমাত্র রাসূল সা. ও আমি ছাড়া সকলের পান শেষ হলে তিনি বললেনঃ আবু কাতাদাহ্, এবার তুমি পান কর। আমি বললাম! আপনি আগে পান করুন। তিনি বললেনঃ সম্প্রদায়ের যিনি সাকী বা পানি পান করান, তিনি সবার শেষে পান করেন। অতঃপর আমি পান করলাম এবং সবার শেষে রাসূল সা. পান করলেন। সবার পান করার পরেও পাত্রের ঠিক যতটুকু পানি ছিল তাই থেকে গেল। বর্ণনাকারী বলেনঃ সে দিন তিন শো লোক ছিল। অন্য একটি বর্ণনা মতে, লোক সংখ্যা ছিল সাতশো। (হায়াতুস সাহাবা- ৩/৬২০, ৬২১)
তিনি স্বভাবগতভাবেই ছিলেন কোমল। জীবের প্রতি ছিল তাঁর দারুন দয়। একবার ছেলের বাড়ী গেলেন। ছেলের বউ অজুর জন্য পানি রেখেছিল। একটি বিড়াল তাতে মুখ দিয়ে পান করতে শুরু করলো। হযরত আবু কাতাদাহ্ রা. বিড়ালটি না তাড়িয়ে পাত্রটি তার দিকে আরো একটু কাত করে দিলেন, যাতে সে ভালো করে পান করতে পারে। পাশে দাঁড়িয়ে ছেলের বউ এ দৃশ্য দেখছিল। তিনি ছেলে-বউকে বললেনঃ এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ বিড়ালের এঁটে না পাক নয়। কারণ, এরা ঘরের মধ্যে বিচরণকারী জীব। (মুসনাদ- ৫/৩০৩)

শিকার করা ছিল তাঁর বিশেষ শখ। একবার হযরত রাসূলে কারীমের সা. সাথে যাচ্ছিলেন। পথে যাত্রা বিরতিকালে কয়েকজন সংগী নিয়ে শিকারে বেরিয়ে পড়লেন। স্থানটি ছিল পাহাড়ী এলাকা। খুব দ্রুত পাহাড়ে উঠার অভ্যাস ছিল তাঁর। তিনি সংগীদের নিয়ে পাহাড়ের উপর উঠে গেলেন। সেখানে একটি জন্তু দেখতে পেলেন। আবু কাতাদাহ্ একটু এগিয়ে গিয়ে ভালো করে দেখে সংগীদের জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা বলতো এটা কি জন্তু? তাঁরা বললেনঃ আমরা তো ঠিক বলতে পারছিনা। তিনি বললেনঃ এটা একটা বন্য গাধা। আবু কাতাদাহ্ পাহাড়ে উঠার সময় তাঁর চাবুকটি ভুলে রেখে গিয়েছিলেন। তিনি সংগীদের চাবুকটি নিয়ে আসতে বললেন। তাঁরা ছিলেন ইহরাম অবস্থায়। একারণে তাঁরা শিকারে কোন রকম সহযোগিতা করলেন না। শেষে তিনি নিজেই বর্শা নিয়ে জন্তুটির পিছু ধাওয়া করে হত্যা করেন। তারপর সেটি ওঠানোর জন্য সংগীদের সাহায্য চান; কেউ তাঁকে সাহায্য করলেন না। অবশেষে তিনি একাই সেটা উঠিয়ে আনেন এবং গোশত তৈরী করে রান্না করেন। কিন্তু সংগীরা খেতে দ্বিধাবোধ করেন।

কেউ কেউ সেই গোশ্ত খেলেন, আবার অনেকে খেতে অস্বীকৃতি জানালেন। আবু কাতাদাহ্ বললেন, আচ্ছা আমি রাসূলুল্লাহর সা. নিকট জিজ্ঞেস করে কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমাদেরকে বলছি। তিনি রাসূলুল্লাহর সা. সাথে দেখা করে ঘটনাটি খুলে বললেন। রাসূল সা. শুনে বললেনঃ ওটা খেতে অসুবিধা কি? ওটা তো আল্লাহ তোমাদের জন্য পাঠিয়েছেন। যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তাহলে আমার জন্য কিছু নিয়ে এসো। গোশত সামনে আনা হলে রাসূল সা. সাহাবীদের বললেনঃ তোমরা খাও। (ফাতহুল বারী- ৯/৫২৮)

তিনি ছিলেন অত্যন্ত মিশুক প্রকৃতির। একারণে তাঁর বন্ধুদের একটা দল ছিল। হুদাইবিয়ার সফরে তিনি রাসূলুল্লাহর সা. সংগী ছিলেন। তিনি ইয়ার-বন্ধুদের সাথে হাসি-তামাশা ও কৌতুক করতে করতে পথ চলছিলেন। আবু মুহাম্মাদও ছিলেন তাঁর বান্ধব মজলিসের একজন সদস্য। (মুসনাদ- ৫/২৯৫; ৩০১)

হযরত আবু কাতাদাহ্ রা. একবার একটি ‘আদনী’ (আদনে তৈরী) চাদর গায়ে জড়িয়ে হযরত মু’য়াবিয়ার রা. দরবারে যান। তখন সেখানে আবদুল্লাহ ইবন মাস’য়াদাহ্ বসা ছিলেন। ঘটনাক্রমে আবু কাতাদাহ্র গায়ের চাদরটি আবদুল্লাহর গায়ে খসে পড়ে। অত্যন্ত রাগের সাথে আবদুল্লাহ সেটি ছুঁড়ে ফেলে দেন। আবু কাতাদাহ্ প্রশ্ন বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তার পিতার বুক বর্শা দিয়ে প্রতিরোধ করেছি- সে দিন সে মদীনার উপকণ্ঠে আক্রমণ করেছিল। একথা শুনে ’আবদুল্লাহ চুপ থাকে। (আনসাবুল আশরাফ- ১/৩৪৯) উল্লেখ্য যে, আবু কাতাদাহ্ জীকারাদ অভিযানের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। সেই গাতফানী লুটেরাদের মধ্যে এই ’আবদুল্লাহর পিতাও ছিল।