মায়ের মৃত্যু, দাদার প্রতিপালনে মুহাম্মদ
তখন মুহাম্মদের বয়স ছয়। তিনি দুধ-মা হালিমার কাছ থেকে ফিরে এসে মায়ের কাছেই আছেন। আমিনা পিতাহারা এই শিশুর দিকে তাকিয়ে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন। এই অতিক্রান্ত দিনগুলোতে থেকে-থেকে তাঁর মনে পড়ে আব্দুল্লাহর কথা, মুহাম্মদের বাবার কথা, তাঁর স্বামীর কথা। তিনি অস্থির হয়ে পড়েন। মুহাম্মদের দিকে তাকালে সে অস্থিরতা যেন আরও বাড়ে—এমন সুন্দর ছেলে, না বাবাকে দেখলো, না বাবা তাঁকে দেখলো—ভীষণ শোকে তিনি মথিত হয়ে পড়েন। অন্তত সমাধিস্থ আব্দুল্লাহর পাশে গিয়ে হলেও তিনি এই শোকের উপশম খোঁজেন…
শ্বশুর আব্দুল মুত্তালিবের ব্যবস্থাপনায় শিশুপুত্র মুহাম্মাদ এবং পরিচারিকা উম্মে আয়মানকে সঙ্গে নিয়ে মক্কা-মদিনার মধ্যবর্তী পাঁচশো কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মদিনায় পৌঁছেন। সেখানে এক মাস অবস্থানের পর মক্কায় ফেরার উদ্দেশ্যে তিনি মদিনা থেকে যাত্রা করেন। সামনে মক্কা অনেক দূরের পথ, পেছনে মদিনা তুলনামূলক কম দূরত্বে অবস্থিত। পথ চলার এমন এক পর্যায়ে আমিনা হয়ে পড়লেন অসুস্থ। ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলো তাঁর অসুখ। মুহাম্মদের সামনেই তিনি কাতর হতে থাকলেন মৃত্যুর দিকে। তারপর একসময় এতিম বালক মুহাম্মদ এবং আত্মীয়-স্বজনকে শোক-সাগরে ভাসিয়ে আবওয়া নামক স্থানে আমিনা মৃত্যুবরণ করেন। একা মুহাম্মদ আরও আরও একা হয়ে গেলেন…
মায়ের মৃত্যুর পর বেঁচে রইলো বৃদ্ধ দাদা। শোকাভিভূত দাদা পিতা-মাতাহীন পুত্রকে নবুয়ত ও রিসালাতের নিকেতন মক্কায় নিয়ে এলেন। প্রাণের চেয়ে বেশি প্রিয় পুত্র আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে আব্দুল মুত্তালিব যতটা ব্যথা অনুভব করেছিলেন, তারচেয়ে অনেক বেশি ব্যথা অনুভব করলেন পুত্রবধূ আমিনার মৃত্যুতে। কারণ, আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর শিশু মুহাম্মদের অবলম্বন ছিলেন তাঁর মা আমিনা। কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর তাঁর যে আর কোনো অবলম্বনই রইলো না। এ দুঃখ তাঁর শত গুণে বেড়ে গেলো। অন্যদিকে আবার এতিম শিশুটির জন্য তাঁর স্নেহসুধাও শত ধারায় বর্ষিত হতে থাক্লো। মনে হতো, যেন ঔরসজাত সন্তানের চেয়েও বেশি মাত্রায় তিনি তাঁকে স্নেহ করতে লাগলেন।