হজ্জ্বঃ হাদীস ও আছারের আলোকে – ফাতাওয়া বিভাগ, মারকাযুদ্ দাওয়াহ আলইসলামিয়া – ঢাকা (৭ম পর্ব)

হজ্বের তৃতীয় ফরয তাওয়াফে যিয়ারত

তাওয়াফে যিয়ারতের সময়

মাসআলা : সুন্নত হল জামরা আকাবার রমী, কুরবানী এবং মাথা কামানোর পর তাওয়াফ করা। জাবির রা. থেকে বর্ণিত … রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃক্ষের নিকটবর্তী জামরায় ৭টি কংকর নিক্ষেপ করলেন। অতঃপর কুরবানীর স্থানে গিয়ে কুরবানী করলেন। এরপর সওয়ারীতে আরোহণ করে বাইতুল্লাহর উদ্দেশে রওনা হলেন এবং মক্কায় যোহরের নামায আদায় করলেন।-সহীহ মুসলিম ১/৩৯৯

মাসআলা : উকূফে আরাফার পূর্বে তাওয়াফে যিয়ারত করলে তা দ্বারা ফরয তাওয়াফ আদায় হবে না। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি যখন মক্কা থেকে ইহরাম গ্রহণ করতেন তখন মিনা থেকে ফেরার আগে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করতেন না।-আলক্বিরা লিমাক্বাসিদি উম্মিল ক্বুরা পৃ. ২৬৪ মুজাহিদ ও সায়ীদ ইবনে যুবায়ের রাহ. থেকে বর্ণিত, তারা ৮ যিলহজ্ব যখন হজ্বের ইহরাম বাঁধতেন তো ১০ যিলহজ্বের পূর্বে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করতেন না।-আল ক্বিরা লিমাকাসিদি উম্মিল কুরা পৃ. ২৬৪

মাসআলা : উকূফে আরাফার পর ১০ যুলহজ্ব সুবহে সাদিক থেকে ১২ যুলহজ্ব সূর্যাসে-র আগে এই তাওয়াফ করার অবকাশ রয়েছে। মুজাহিদ রাহ. থেকে বর্ণিত, তাওয়াফে যিয়ারত ইয়াওমুন নাহর (অর্থাৎ ১২ যিলহজ্ব) পর্যন- বিলম্ব করলে অসুবিধা নেই।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩২২৮

মাসআলা : যদি ১২ তারিখ সূর্যাস- হয়ে যায় এবং তাওয়াফে যিয়ারত করা না হয় তবে দম দেওয়া জরুরি।-রদ্দুল মুহতার ২/৫১৭, ৫৩৩, আহকামে হজ্ব ৮০

ইবরাহীম রাহ. বলেন, যদি ঐ দিনগুলোতে তা (তাওয়াফে যিয়রাত) না করা হয় তবে দম দিতে হবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩২২৭ মাসআলা : অসুস্থ হলেও তাওয়াফে যিয়ারত নিজেকেই করতে হবে। প্রয়োজনে হুইল চেয়ার ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু অন্যকে দিয়ে তাওয়াফ করানো যাবে না।

উম্মে সালামা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অসুস’তার অভিযোগ করলাম। তিনি বললেন, ‘সওয়ারীতে আরোহণ করে ভিড় থেকে দূরে সরে তাওয়াফ করো।’-সহীহ বুখারী ১/২২১

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস’ ছিলেন। তাই উটের উপর আরোহণ করে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করেছেন।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩৩০৩মাসআলা : অচেতন ব্যক্তির পক্ষ থেকে বদলী তাওয়াফে যিয়ারত করা যাবে। আর সুস’ ব্যক্তিদের জন্য পায়ে হেঁটে তাওয়াফে যিয়ারত করা ওয়াজিব। মাসআলা : পায়ে তাওয়াফ করার সামর্থ্য থাকাবস্থায় হুইল চেয়ারে করে বা অন্য কোনো বাহনে চড়ে তাওয়াফে যিয়ারত করা যাবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৭; মানাসিক পৃ. ২৩৩ হিশাম ইবনে উরওয়া রাহ. বলেন, ‘আমার বাবা লোকদেরকে বাহনে চড়ে তাওয়াফ করতে দেখলে নিষেধ করতেন।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩৩০৬

তাওয়াফে যিয়ারাতে রমল ও সায়ী

মাসআলা : যারা মিনায় যাওয়ার পূর্বে হজ্বের সায়ী করেছে অর্থাৎ ইফরাদ হজ্বকারী যদি তাওয়াফে কুদূমের পর সায়ী করেন তদ্রূপ তামাত্তু ও কিরানকারী ভিন্ন করে নফল তাওয়াফের পর সায়ী করলে তাদের যেহেতু তাওয়াফে যিয়ারতের পর সায়ী করতে হবে না তাই এই তাওয়াফে তাদেরকে রমলও করতে হবে না।

হিশাম রাহ. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, ‘ইয়াওমুন নাহরে (অর্থাৎ তাওয়াফে যিয়ারতে) রমল নেই।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫২৯৮ আতা রাহ. বলেন, ‘ইয়াওমুন নাহরের তাওয়াফে (অর্থাৎ তাওয়াফে যিয়ারতে) রমল নেই।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৩০০ মাসআলা : যারা ইতিপূর্বে হজ্বের সায়ী করেনি তাদের যেহেতু এই তাওয়াফের পর সায়ী করতে হবে তাই তাওয়াফে রমলও করতে হবে। ইবনে খুছায়েম রাহ. বলেন, ‘আমি মুজাহিদ রাহ.কে তাওয়াফে যিয়ারতে রমল করতে দেখেছি।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫২৯৯;

আহকামে হজ্ব ৮১

ঋতুমতী মহিলার তাওয়াফ

মাসআলা : ঋতুমতী নারীর স্রাব চলা অবস্থায় তাওয়াফ করা নিষেধ। তাই পবিত্র হওয়া পর্যন- অপেক্ষা করবে। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেন, আমি যখন মক্কায় পৌঁছলাম তখন আমার হায়েয চলছিল। আমি বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করিনি এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করিনি। তিনি বলেন, তখন আমি এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অভিযোগ করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাজী যে কাজগুলো করে তুমিও তা করতে থাক। শুধু বাইতুল্লাহর তাওয়াফ পবিত্র হওয়া পর্যন্ত- করবে না।-সহীহ বুখারী ১/২২৩

মাসআলা : ১২ তারিখ সূর্যাসে-র আগে পবিত্র হয়ে গেলে অবশ্যই এর ভিতরে তাওয়াফ সেরে নিতে হবে। যদি ১২ তারিখ সূর্যাসে-র ভিতর পবিত্র না হয় তাহলে পবিত্র হওয়ামাত্র আদায় করবে। এক্ষেত্রে বিলম্বের কারণে কোনো জরিমানা আসবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৯ পবিত্র হওয়ার আগেই দেশে ফিরতে হলে

মাসআলা : যদি কোনো মহিলা হায়েয বা নেফাস অবস্থায় থাকার কারণে তাওয়াফে যিয়ারত করতে না পারে, আর তার দেশে ফেরার সময় হয়ে যায়, কোনোভাবেই তা বাতিল করা বা বিলম্ব করা সম্ভব না হয় তবে এই অপারগতার কারণে সে অবস্থাতেই তাওয়াফ করবে। আর এজন্য একটি উট বা গরু জবাই করবে। সাথে আল্লাহ তাআলার দরবারে ইস্তি-গফারও করবে। মোটকথা কোনো অবস্থাতেই তাওয়াফে যিয়ারত না করে দেশে যাবে না। অন্যথায় তাকে আবার মক্কায় এসে তাওয়াফ করতে হবে। যতদিন তাওয়াফ না করবে ততদিন স্বামীর সাথে থাকতে পারবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৮-৫১৯; মাআরিফুস সুনান ৬/৩৫৭-৩৫৮মাসআলা : কোনো মহিলার ওষুধ সেবনের কারণে যদি স্রাব একেবারে বন্ধ হয়ে যায় তবে সে গোসল করে তাওয়াফ করতে পারবে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর নিকট এক মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, যে ওষুধ সেবন করে স্রাব বন্ধ করেছে। ইবনে উমর রা. তা দোষের বিষয় মনে করেননি।-আলক্বিরা লিমকাসিদি উম্মিল কুরা পৃ. ৪৬০

হজ্বের ৪র্থ দিন ১১ যুলহজ্ব

মাসআলা : ১১ ও ১২ যুলহজ্বের রাত্রিতে মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। কেউ যদি মিনায় না থাকে তবে সুন্নতের খেলাফ হবে বটে, কিন্তু কোনো প্রকার জরিমানা দিতে হবে না।-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩৩ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দিন যোহর পড়ে মক্কায় এলেন (তাওয়াফে যিয়ারতের জন্য) অতঃপর মিনায় ফিরে গেলেন এবং আইয়্যামে তাশরীকের রাত্রিগুলো মিনায় অবস্থান করলেন …।-সুনানে আবু দাউদ ১/২৭১

মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব রাহ. বলেন, সুন্নত এই যে, তুমি যখন বাইতুল্লাহর তাওয়াফ (তাওয়াফে যিয়ারত) করবে তখন অবশ্যই মিনায় রাত্রি যাপন করবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৬০৬

১১ যিলহজ্ব রমীর সময়

মাসআলা : যোহরের সময় থেকে আগত রাত্রের সুবহে সাদিক পর্যন- রমীর সময়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে যাওয়ার পর রমী করতেন।-জামে তিরমিযী ১/১৮০ মাসআলা : সম্ভব হলে এই রমী সূর্যাসে-র আগে করে নেওয়া ভালো। সূর্যাসে-র পর মাকরূহ সময়। হাসান রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি রাতে রমী করাকে মাকরূহ বলেছেন।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৫৫১ উরওয়া রাহ.ও রাতে রমী করাকে মাকরূহ বলেছেন।-মুসন্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৫৫২

মাসআলা : মহিলা ও দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য কিংবা অত্যধিক ভিড়ের কারণে সূর্যাসে-র পর এই রমী করার অবকাশ রয়েছে। আমর রা. বলেন, এক ব্যক্তি আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি একজন উম্মুল মু’মিনীনকে (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী) সূর্যাসে-র সময় রমী করতে দেখেছেন।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৫৫৬ আতা ও তাউস রাহ. থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি দিনে রমী করতে ভুলে যায় সে রাতে রমী করতে পারবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৫৫৭

মাসআলা : ১১ যুলহজ্ব তিন জামরাতেই রমী করতে হবে। প্রথম দুই জামরাতে রমী (কংকর নিক্ষেপ) করে কিবলামুখী হয়ে দুআ করা সুন্নত। জামরায়ে আকাবার রমীর পর দুআ নেই।-রদ্দুল মুহতার ২/৫২১ উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর পড়ে দিনের শেষ ভাগে (তাওয়াফে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে) মক্কায় এলেন। অতঃপর মিনায় গেলেন এবং আইয়্যামে তাশরীকের রাতগুলো মিনায় যাপন করলেন। তিনি সূর্য ঢলে যাওয়ার পর রমী করতেন। প্রতি জামরায় ৭টি করে কংকর নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতি কংকর নিক্ষেপের সময় তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলতেন। প্রথম ও দ্বিতীয় জামরায় দীর্ঘ সময় অবস্থান করতেন এবং কাকুতি-মিনতির (সঙ্গে দুআ) করতেন। তৃতীয় জামরায় রমী করে সেখানে অবস’ান করতেন না।-সুনানে আবু দাউদ ১/২৭১

পঞ্চম দিন ১২ যিলহজ্ব

রমীর তৃতীয় দিন

মাসআলা : এদিন রমী করার সময় যোহরের সময় থেকে রাতের সুবহে সাদিক পর্যন-। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘সূর্য যখন ঢলে যেত তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কংকর নিক্ষেপ করতেন।’-জামে তিরমিযী ১/১৮০; মুয়াত্তা মালেক ১/১৫৮ হযরত জাবির রা. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াওমুন নাহর (অর্থাৎ ১০ যিলহজ্ব) চাশতের সময় কংকর নিক্ষেপ করতেন। পক্ষান-রে পরবর্তী দিনসমূহে রমী (কংকর নিক্ষেপ) করতেন সূর্য ঢলে যাওয়ার পর।’-সহীহ মুসলিম ১/৪২০ মাসআলা : সম্ভব হলে সূর্যাসে-র পূর্বে রমী করা মুস্তাহাব।আবদুল্লাহ ইবনে উসমান রাহ. বলেন, আমি সাঈদ ইবনে জুবাইর রাহ.কে রমীর জন্য সূর্য ঢলার অপেক্ষায় থাকতে দেখেছি। তিনি সূর্য ঢলার সাথে সাথেই রমী করতেন।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৭৯৬

মাসআলা : আজও তিন জামরাতেই কংকর নিক্ষেপ করতে হবে। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দীকা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আইয়্যামে তাশরীকের রাতগুলোতে মিনায় অবস’ান করতেন এবং সূর্য যখন ঢলে যেত তখন প্রতি জামরায় ৭টি করে কংকর নিক্ষেপ করতেন।-সুনানে আবু দাউদ ১/২৭১ মাসআলা : ১১ ও ১২ তারিখ যোহরের পূর্বে রমীর সময় শুরু হয় না। তাই এ সময় কেউ রমী করলে তা আদায় হবে না। হযরত জাবির রা. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১০ যিলহজ্ব চাশতের সময় কংকর নিক্ষেপ করতেন। পক্ষান-রে পরবর্তী দিনগুলোতে রমী করতেন সূর্য ঢলে যাওয়ার পর।’-সহীহ মুসলিম ১/৪২০

মাসআলা : কেউ যদি ১১ ও ১২ তারিখে নির্ধারিত সময়ের ভিতর রমী করতে না পারে তবে ১৩ তারিখ সূর্যাস্তে-র পূর্ব পর্যন্ত- তা কাযা করার (অর্থাৎ রমী করার) সুযোগ আছে। কিন’ ১৩ তারিখ সূর্যাসে-র পূর্বে কাযা করতে না পারলে এরপর আর রমী করার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে দম দেওয়া জরুরি।-রদ্দুল মুহতার ২/৫২১

বিখ্যাত তাবেয়ী আতা রাহ.কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, যে শুধু পাঁচটি কংকর নিক্ষেপ করেছে। জবাবে তিনি বললেন, যদি আইয়্যামে তাশরীক অতিবাহিত না হয়ে থাকে তাহলে বাকি কংকর নিক্ষেপ করবে। আর আইয়্যামে তাশরীক অতিবাহিত হয়ে গেলে দম দিতে হবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩৬১৬

১৩ যিলহজ্ব, রমী করা

মাসআলা : ১২ তারিখ দিবাগত রাতে মিনায় থাকা উত্তম এবং ১৩ তারিখ রমী করাও উত্তম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চতুর্থ দিন অর্থাৎ ১৩ তারিখ রমী করে মিনা ত্যাগ করেছিলেন। ইতিপূর্বে একাধিকবার উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আইয়্যামে তাশরীক (অর্থাৎ ১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ্ব) মিনায় অবস্থান করেছেন এবং মিনায় রাত্রি যাপন করেছেন।

তবে কেউ যদি মিনা ত্যাগ করতে চায় তাহলে রমী সমাপ্ত করে ১২ তারিখ সূর্যাসে-র আগেই চলে যেতে হবে। কেননা, ১২ তারিখ সূর্যাসে-র পূর্বে রমী করে মিনা ত্যাগ করতে না পারলে সূর্যাসে-র পর মিনা ত্যাগ করা মাকরূহ। তবে এ কারণে দম বা কোনো কিছু ওয়াজিব হবে না। হযরত ইবরাহীম রাহ. বলেছেন, কারো যদি মিনায় আইয়্যামে তাশরীকের দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যা হয়ে যায় তাহলে তৃতীয় দিন আসার পূর্বে সে মিনা ত্যাগ করবে না।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১২৯৫৪, ১২৯৫৯ আর মিনায় ১৩ তারিখ সুবহে সাদিক হয়ে গেলে ঐ দিন রমী করা ওয়াজিব। রমী না করে চলে যাওয়া না জায়েয এবং এতে দম ওয়াজিব হবে। -রদ্দুল মুহতার ২/৫২১, আহকামে হজ্ব ৮৫

মাসআলা : ১৩ তারিখ যোহরের পূর্বেও রমী করা জায়েয। হযরত ইবনে আবী মুলাইকা রাহ. বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.কে লক্ষ্য করছিলাম। দেখলাম তিনি দ্বিপ্রহরের সময় সূর্য ঢলে যাওয়ার পূর্বেই রমী করলেন।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৭৯৫, ১৪৭৯৩ মাসআলা : তবে যোহর থেকে সূর্যাস- পর্যন- রমী করার সুন্নত ওয়াক্ত।- রদ্দুল মুহতার ২/৫২১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩৩ হযরত জাবির রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১০ যিলহজ্ব চাশতের সময় রমী করেছেন পক্ষান-রে পরবর্তী দিনগুলোতে রমী করেছেন সূর্য ঢলে যাওয়ার পর।-সহীহ মুসলিম ১/৪২০

তাওয়াফে বিদা

মাসআলা : মীকাতের বাইরে অবস্থানকারী হাজীদের জন্য মক্কা মুকাররামা ত্যাগ করার আগে একটি তাওয়াফ করা ওয়াজিব। একে তাওয়াফে বিদা বলা হয়। এই তাওয়াফ মক্কা থেকে বিদায়ের সময় করা উত্তম।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, লোকেরা চর্তুদিকে চলে যেতে আরম্ভ করল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেউ যেন বাইতুল্লাহর নিকট তার শেষ উপসি’তি ব্যতীত ফিরে না যায়।-সহীহ মুসলিম ১/৪২৭ মাসআলা : মক্কা ও মীকাতের ভিতর অবস্থানকারীদের জন্য তাওয়াফে বিদা ওয়াজিব নয়, মুস্তাহাব।-রদ্দুল মুহতার ২/৫২৩ বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত মুজাহিদ রাহ. বলেন, তারা (সাহাবায়ে কেরাম) পছন্দ করতেন যেন বিদায়ের সময় তাদের শেষ উপসি’তি বাইতুল্লাহর নিকট হয়।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৮৫৪

তাওয়াফে যিয়ারতের পর হাজী নফল তাওয়াফ আদায় করলেও তা দ্বারা বিদায়ী তাওয়াফের ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। অবশ্য এরপরও ভিন্ন করে বিদায়ী তাওয়াফের নিয়তে একটি তাওয়াফ করে নেওয়া ভালো।

লক্ষণীয় হজ্বের মৌলিক বিষয়গুলো উপরে উল্লেখ করা হল। এগুলো ছাড়াও হজ্বের আরো বহু মাসআলা রয়েছে। প্রয়োজন হলে কোনো নির্ভরযোগ্য আলেম থেকে তা জেনে নেওয়া আবশ্যক।