মুজাহিদের কারামত
কথা অনেক দীর্ঘ। আমি এখন একজন যুবক মুজাহিদের কারামতের ঘটনা বলে আমার বক্তব্য শেষ করে দিব। যুবকটির নাম আহমাদ ফাইয। সে পাঞ্জশীরের রণক্ষেত্রে আহত হওয়ার খবর পেয়ে তার পরিবারের লোকজন এসে তাঁকে একটি গাছের খাটে তুলে নেয়। রাস্তা দুর্গম ও উঁচু নীচু হওয়ায় তারা তাঁকে রশি দিয়ে খাটের সাথে বেঁধে নেয় যাতে পড়ে না যায়। রুশ বাহিনী তাঁদেরকে দেখার পর গুলি করে সবাইকে হত্যা করে। ভাই আহমাদ ফাইয এবারসহ দু’বার গুলিবিদ্ধ হল। গুলিতে তার পেটে ছিদ্র হয়ে যায়। কিন্তু সে তখনো জীবিত। সে বলল, আমি চোখ খুললাম। চোখ খুলে দেখি আমি রশিতে বাঁধা। আমার পা ভেঙ্গে যাওয়ায় নড়াচড়া সম্ভব হচ্ছিল না। আর আমার শরীরে বাঁধা রশিগুলোও খোলা সম্ভব হয়নি। তখন আমি বললাম, আল্লাহ্ আপনি যে ভাবেই হোক আমাকে বাঁচান। বলল, আমি বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। অতঃপর জাগ্রত হয়ে দেখলাম রশিগুলো খুলে গেছে। তখন আমি চাইলাম নদীর ওপারে যেতে। নদী ছিল বড় ও প্রবাহমান। সুস্থ হলেও আমার পক্ষে এ নদী পার হওয়া সম্ভব ছিল না। আর এখন যেহেতু পেটে ভর দিয়ে ব্যতীত আমার পক্ষে নড়াচড়া করাও সম্ভব নয়, সেহেতু এ নদী পার হওয়াতো কল্পনাতীত ব্যাপার। তাই আমি আশাহত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর দেখি আমি নদীর ওপাড়ে। এরপর আমি তের দিন পেটে ভর দিয়ে চললাম। আমার কাছে কোন খাবার ছিল না। এ সময় ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর দেখতাম যে আমি এখনই খাওয়া শেষ করলাম। অতঃপর আমি আরেকটি নদীর সম্মুখীন হলাম। তখন আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি নদীর ওপাড়ে। অতঃপর আরো তের দিন বুকে ভর দিয়ে চললাম। অতঃপর একটি পরিত্যক্ত ঘর দেখে তাতে প্রবেশ করলাম। সেখানে একটি দুধের থলি ব্যতীত আর কিছুই ছিল না। দুধের থলেটা যেন আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। দুধগুলো পান করে নিলাম। রাত্রে মুজাহিদরা এ ঘরে ঢুকে একটি রক্তাক্ত ও কর্দমাক্ত আজব প্রকৃতির মানুষ দেখতে পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। তখন আমি ডাক দিয়ে বললাম, আস আমি আহমাদ ফাইয। মুজাহিদরা আমাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি কীভাবে বেঁচে গেলে? আমরা তো মনে করেছি তুমি মারা গেছ। অতঃপর সে তাঁদেরকে তার ঘটনা খুলে বলল। আহমাদ ফাইয এখন মুজাহিদদের সাথে জিহাদরত। যখনই সে তার মুজাহিদ ভাইদেরকে তার এ ঘটনা বলেছে, সেদিন রাত্রে অদৃশ্য থেকে একটি আওয়াজ আসে যে, তুমি এটা মানুষকে বলে বেড়াইও না। এটা আমার ও তোমার মধ্যকার গোপন ব্যাপার। আমি এ কথা বলে আমার বক্তব্য শেষ করছি এবং আমার ও তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, ওয়াস সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। (অতঃপর শহীদ আযযাম রহিমাতুল্লাহ এভাবে দু’আ করলেন)
‘হে আল্লাহ্ ! মুমিনদেরকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দান করুন । হে আল্লাহ্ ! আমরা আপনার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ জান্নাত ফিরদাউস কামনা করছি। হে আল্লাহ্ ! আমাদেরকে আপনার স্মরণ, কৃতজ্ঞতা ও সুন্দরভাবে ইবাদত করার তাওফীক দিন। হে আল্লাহ্ ! আমাদেরকে পুন্যবান জীবন ও শহীদি মৃত্যু দান করুন এবং মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দলের অন্তর্ভুক্ত করে পুনরুত্থিত করুন। হে আল্লাহ্ ! মুজাহিদদেরকে আফগানিস্তানে, ফিলিস্তিনে লেবাননে ও সকল স্থানে বিজয় দান করুন। হে আল্লাহ্ ! ইসলামের ঝান্ডাকে উন্নত রাখুন, কুরআনের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে দিন এবং আমাদেরকে কুরআনের সৈন্যদের অন্তর্ভুক্ত করুন। হে আল্লাহ্ আমাদের নেতা মুহাম্মদ, তার পরিবার ও তার সাহাবীদের উপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন।’
(এরপর ইমাম আযযাম রহিমাতুল্লাহ শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন)।
প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ শায়খ আমরা আপনাকে আল্লাহর জন্য ভালবাসি।
উত্তরঃ যে আল্লাহর জন্য আপনারা আমাকে ভালবাসেন, তিনি আপনাদেরকেও ভালবাসুন।
প্রশ্নঃ আফগানিস্তানে আল্লাহর পথে জ্বিহাদ করার জন্য যেতে চাই। আমরা কীভাবে যেতে পারি?
উত্তরঃ কেউ আফগানিস্তানে জ্বিহাদ করার জন্য আসতে চাইলে আমরা তাঁকে স্বাগত জানাই। চার-পাঁচ বছর পূর্বে আমরা পৃথিবীর মুসলমানদেরকে আফগানিস্তানে জিহাদে শরীক হওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছিলাম। আমরা বলেছিলাম,আসুন, জ্বিহাদ করে কল্যাণ অর্জন করুন। কিন্তু আশানুরুপ সাড়া মেলেনি। তখন আমি ‘মুসলমানের দেশ রক্ষা করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরযে আইন’ নামে একটি ফতওয়া লিখি। এটা ছাপিয়ে শায়খ বিন বায, শায়খ ইবনে উছাইমীন, শায়খ উমার সাইফ, শায়খ সাঈদ হিওয়া, শায়খ আবদুল্লাহ আলওয়ান, শায়খ মুহাম্মদ নজীব আল মতীঈর মত বড় বড় আলেমদের সম্মুখে পেশ করলাম। তারা সকলে এটার সপক্ষে মত দেন। অতঃপর আমি এর উপর তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর গ্রহণ করলাম। স্বাক্ষর গ্রহণ করার সময় এটা বিতরণ করলাম। এতে লেখা ছিল যে, আফগানিস্তানে ও ফিলিস্তিনসহ যে সব মুসলিম অঞ্চলে কাফিরদের দখলদারিত্ব চলছে, সেখানে জ্বিহাদ ফরযে আইন।
আর জ্বিহাদ বলতে সশস্ত্র সংগ্রামকেই বুঝায়। যেমন আল্লামা ইবনে রুশদ বলেছেন-
‘কুরআন ও হাদীসে যেখানেই জ্বিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে, সেখানে জ্বিহাদ মানে হচ্ছে কাফিরদের সাথে তরবারী (অস্ত্র) দ্বারা লড়াই করা, যতক্ষণ না তারা ইসলাম গ্রহণ করে বা লাঞ্চিত হয়ে জীযয়া আদায় করে ।’
চার মাযহাবের ইমাম ও চার মাযহাবের সকল যুগের আলেমরা জিহাদের অর্থ করেছেন তরবারী দ্বারা লড়াই করা। এর ফলে বক্তব্য ভাষণ সহ -যেমন আমার এখানে প্রদত্ত জ্বিহাদ বিষয়ক ভাষণ- সকল প্রকার আলোচনাকে জ্বিহাদ বলে অভিহিত করার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। অনুরুপ যে ঘরে বা অফিসে বসে জীবিকা উপার্জন করে, তার কর্মকে পরিবার বা জীবন-রক্ষার জ্বিহাদ নামে অভিহিত করা যাবে না। এমনিভাবে মসজিদে গিয়ে দু-চার কথা বলাকেও জ্বিহাদ বলে অভিহিত করা যাবে না। আলেমগণ বলেছেন, জ্বিহাদ নামায ও রোযার মত একটি পরিভাষা। নামায বলতে যেমন তাকবীর দ্বারা শুরু করে বিশেষ কিছু শব্দ উচ্চারণ ও কাজ করে সালাম ফিরিয়ে সম্পন্ন করা একটি ইবাদতকে বুঝানো হয়, তদ্রুপ জ্বিহাদ বলতেও বুঝানো হয় কাফিরদের সাথে তরবারী দ্বারা লড়াই করাকে। অতএব, ‘কলমের জ্বিহাদ’ ধরণের কোন কিছু বলা যাবে না।
‘কলমের জ্বিহাদ’ ও ‘নফসের সাথে জ্বিহাদ’ ধরণের শব্দগুলোকে জায়িয করার জন্য কিছু লোক একটি জঈফ হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করে-
“আমরা ছোট জ্বিহাদ থেকে বড় জিহাদের দিকে ফিরে এসেছি”।
তরবারীর গুলি তার মাথায় এসে বিদ্ধ হচ্ছে-এটা ছোট জ্বিহাদ আর এয়ারকন্ডিশনের নীচে বসে রোযা রাখা বড় জ্বিহাদ হয়ে গেল? মানুষ তার চাকুরি ও স্ত্রী-পুত্রের ভালবাসাকে ঠিক রেখে নামায ও রোযা আদায় করতে পারে। এতে তার চাকুরি, পরিবার, ঘর ও গ্রাম কোন কিছুই ছাড়তে হয় না। যে কেউ তিন দিন ব্যয় করে হজ করতে পারে এবং টেলিফোনে বা বসে একটি চেক লিখে দিয়ে যাকাত আদায় করতে পারে। কিন্তু জ্বিহাদ করতে গেলে তার সন্তান, ঘর, গ্রাম চাকুরি ও বিশ্ববিদ্যালয় সব ত্যাগ করতে হয়। এ জন্য আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তার এ কথা-
قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ [٩:٢٤]
“বলুন, যদি তোমাদের মাতা-পিতা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, স্ত্রীবর্গ, আত্মীয়-স্বজন, উপার্জিত ধন-সম্পদ, ঐ ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দার ভয় কর ও ঐসব ঘর-বাড়ী যাকে নিয়ে তোমরা সন্তুষ্ট-তোমাদের নিকট আল্লাহ্, তার রাসূল ও তার পথে জ্বিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তাহলে তোমরা আল্লাহ্ তোমাদের এ অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অপেক্ষায় থাক। আর আল্লাহ্ ফাসিকদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন্ না।”[আততাওবাহঃ২৪] ।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা গোটা দুনিয়াকে এক পাল্লায় রাখলেন ও জিহাদকে আরেক পাল্লায় রাখলেন এবং বললেন, হয়তো জিহাদকে গ্রহণ কর নতুবা দুনিয়াকে গ্রহণ কর। যদি তুমি দুনিয়াকে গ্রহণ কর, তাহলে তুমি ফাসিক এবং আল্লাহর আযাবের অপেক্ষা কর। আর তোমার মত ফাসিককে আল্লাহ্ সঠিক পথে পরিচালিত করবেন না।
তো আমরা মানুষকে জিহাদের পথ গ্রহণ করার জন্য আহবান জানিয়েছিলাম। কিন্তু মানুষ আসেনি। ফলে আমরা জিহাদের পক্ষে ফতওয়া লিখে তাদের মাঝে বিতরণ করলাম। এমনকি তারা আমার মেয়ের স্বামীদের ব্যাপারে এ পর্যন্ত বলেছে যে, তিনি তাঁদেরকে তার মেয়ে বিয়ে দিয়ে মেরে ফেলতে নিয়ে গেছেন।
এখন আমরা জ্বিহাদ করার জন্য আসতে ইচ্ছুক সবাইকে স্বাগতম জানাই। শুরুতে আগত মুজাহিদদের খরচ বহন করা আমাদের পক্ষে সহজ ছিল। ভাই উসামা বিন লাদিন হাফিযাহুল্লাহ (আল্লাহ্ তাঁকে হেফাজত করুন) বলেছিলেন, আফগানিস্তানে আসতে ইচ্ছুক সকল আরবের বিমান খরচ, থাকা-খাওয়ার খরচ, পরিবারের খরচ, চলাচল করার খরচ ও আসবাব পত্রের খরচ আমি বহন করব। তখন আমরা কম ছিলাম। এখন আমাদের সংখ্যা হাজারে এসে পৌঁছেছে। তাই সঙ্গত কারণে এসব লোকদের সব কিছুর জিম্মাদারী গ্রহণ করা আমাদের পক্ষে এখন সম্ভব নয়। তাই আমরা এখন জিহাদের জন্য আগমনকারীদের কেবল থাকা খাওয়া ও চলাচল করার খরচই বহন করছি। যারা ফিলিস্তিনে জ্বিহাদ করার জন্য প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে চায়, তাদের আসা যাওয়া ও পরিবারের খরচ বহনের দায়িত্ব তাদেরই গ্রহণ করা দরকার, যারা নিজেদের ভূমিকে পুনরুদ্ধার করতে চায় বা নিজেদের প্রভুকে সন্তুষ্ট করতে চায়।
প্রশ্ন: ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার জন্য আফগানিস্তানের মত নিহত ও ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার চেয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শরনাপন্ন হওয়া উত্তম নয় কি?
উত্তরঃ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলছেন-
“আল্লাহ্ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময় ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করবে। আর এতে মারবেও এবং মরবেও।”
তুমি কি মনে করছ যে, নিহত হওয়া ছাড়া ফিলিস্তিনকে পুনরুদ্ধার করতে পারবে? আল্লাহর কসম তুমি ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করাতো দূরের কথা, মুক্ত করার ঘ্রাণও পাবে না। তোমার কথা শোনে ইয়াহুদীরা হাসবে। রিগ্যান* ও বেনগোরিন* বলেছে, ফিলিস্তিনের এক বিঘাত ভূমি ছেড়ে দেয়া তাওরাতকে অস্বীকার করার নামান্তর। তারা বলেছে তাদের রাষ্ট্র ইসরাঈলকে মৌখিক স্বীকৃতি দিলে চলবে না। ইসরাঈলকে স্বীকৃতি দান বিষয়ক প্রত্যেক কথা লিখিত হতে হবে। মার্কিনীরা আরবদের কাছ থেকে ইসরাঈলের প্রতি লিখিত স্বীকৃতি আদায় করে মার্কিন টিভিতে তা পড়ে শোনানোর পর ইয়াহুদীদেরকে বলল, তোমাদের রাষ্ট্র নিরাপদ হয়ে গেছে। ইয়াহুদীরা বলল, হ্যাঁ ! এখন ঠিক আছে।
তোমরা কি মনে কর ইয়াহুদীরা তোমাদের সাথে বৈঠক বসবে? বুশ বলেছে, আন্তর্জাতিক বৈঠক ফিলিস্তিন সমস্যাকে আন্দোলিত করার জন্য, সমাধান করার জন্য নয়। এসব আফগানদের হাত থেকে অস্ত্র পড়ে যেত, তাহলে আগফানিস্তানের পরিণতিও ফিলিস্তিনের ন্যায় হত। অতএব, কতল ও কিতালই উম্মাহর রক্ষকবচ। উম্মাহ (জাতি) হচ্ছে একটি বৃক্ষ, যা বৃদ্ধি ও বেঁচে থাকার পানি হচ্ছে রক্ত। যখনই এ বৃক্ষের রক্তদান বন্ধ হয়ে যাবে, তখনই মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ জালালাবাদের রণক্ষেত্রে শহীদ হওয়া আরব যুবকদের শাহাদাতের ঘটনা জানতে চাই?
উত্তরঃ এ ব্যাপারে অনেক কথা রয়েছে। আমরা এ শহীদদেরকে আল্লাহর কাছে আমাদের রক্ষিত আমানত বলে মনে করি। শায়খ তামীম বলেছেন, ‘আমি রমযানের ত্রিশতম দিনে জালালাবাদের ঐ রণক্ষেত্রে ছিলাম। শত্রুরা আমাদের দিকে যে ক্ষেপনাস্ত্রগুলো ছুঁড়ছিল, তা একটা একটা ছিল না, বরং এক সাথে একচল্লিশটি বের হত। এর উপর রয়েছে বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপসহ আরো বিভিন্ন ভাবে আক্রমণ। শায়খ তামীম বলেন, তখন আমি একটি গাছের নীচে বসে কুরআন তিলাওয়াত করছিলাম এবং আল্লাহর কাছে শাহাদতের জন্য দুআ করছিলাম। এক পারা শেষ করার পর দেখলাম গুলি এসে আমার কানের পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, গাছ ভেঙে যাচ্ছে ও গাছের ছালগুলো ঝরে পড়ছে। গাছটি এখন কেউ দেখলে মনে করবে না যে, ঐ সময় এ গাছের নীচে মানুষ জীবিত ছিল। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম পারা শেষ করার পর আসমানের দিকে তাকিয়ে বললাম, ইয়া রব ! আমি কি শুধু সামান্য আহতই হব, শহীদ হতে পারব না? অতঃপর ষষ্ঠ ও সপ্তম পারা শেষ করলাম। গোলাগুলির মধ্যে এভাবে সাড়ে চার ঘন্টা চলে যায়।’ শায়খ তামীম বলেন, এরপর আমি বুঝতে পারলাম যে, কারো পক্ষে তার মৃত্যুক্ষণ না আসার পূর্বে মৃত্যুবরণ করা সম্ভব নয়।
তাই আমি শায়খ তামীম থেকে দুঃসাহসী লোক আর দেখিনি। তো ওই সময় ওখানে একদল যুবক শাহাদাত বরণ করে। শাওয়ালের প্রথম দিন আমরা আবদুল্লাহ মিশরীকে হারিয়েছিলাম। আমরা তার লাশ পেয়েছিলাম যিল’কাদার দ্বিতীয় দিনে। দেখা গেল যেখানে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে কম্যুনিস্টদের লাশ ফুলে গিয়ে পোকা বের হয়, সেখানে এক মাস পরও তার শরীর থেকে তাজা রক্ত বেয়ে পড়ছে। আল্লাহর কাছে জাহান্নামীদের অবস্থা থেকে আশ্রয় কামনা করছি। রুশ সৈন্যরা তাদের নেতাদেরকে বলেছে এসে দেখ, স্থানও এক, গুলিও এক এবং পরিবেশও এক। আমাদের দেহগুলো কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ফুলে ফেটে যায় আর তাদের দেহগুলো দু’মাস পড়ে থাকলেও কিছু হয় না। অতএব, মার্কসবাদ ও সমাজতন্ত্রের আলোকে এটার রহস্য খুলে বলুন। এ কথা শোনে তারা লা-জওয়াব হয়ে গেল। শহীদের ঘটনাবলী শোনে তারা পরামর্শ দিল শহীদদের দেহে এসিড মার, যাতে করে তা কাল হয়ে যায় ও দেহের গোশতগুলো ছিড়ে পড়ে যায়।
আমাদের এক ভাই বলল, কম্যুনিস্টরা একজন শহীদের দেহে এসিড মারায় তা কাল হয়ে যায় ও গোশত ঝরে যায়। আমরা তাঁকে দাফন করলাম। কিছু দিন পর আমরা তার কবরটি খোড়তে বাধ্য হলাম, দেখলাম তার শরীর এসিড মারার আগে যে রকম ছিল, এ রকম হয়ে গেছে।
আবদুল্লাহ আলগামিদীর কবর থেকে দেড় বছর পর আল্লাহু আকবরের ধ্বনি শোনা গেছে। মাইন ফেটে খালিদ আলকুরদীর পা উড়ে যায় এবং পেট ফেটে গিয়ে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায়। ড.সালিহ আললীবি এসে তার নাড়িভুঁড়ি একত্রিত করে পেটে ঢুকিয়ে দেন এবং তাঁকে একটি কম্বল দিয়ে মোড়িয়ে দেন। এ সময় তার চোখ দিয়ে অশ্রু চলে আসে। তখন খালিদ বলল, আপনি কাঁদছেন কেন আমি তো আমার হাতের পিঠে সামান্য আঘাত পেয়েছি। সে জানে না যে, তার পা উড়ে গেছে এবং পেট ফেটে গিয়ে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে গেছে। সে তার সাথীদের সাথে দু’ঘন্টা পর্যন্ত কথা বলেছে। অথচ তার পা ও পেটের খবর ছিল না। অতঃপর তা প্রাণ বের হয়ে যায় এবং ওই এলাকায় মেশকের সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে। তখন সবাই জানতে পারল যে, তার প্রাণ বের হয়ে গেছে। সাধারণত শহীদের প্রাণ বের হয়ে যাওয়ার আলামত ছিল তার শরীর থেকে সুগন্ধি বের হওয়া। হাদীসে আছে-
“হে পবিত্র দেহের পবিত্র রূহ ! তুমি দুনিয়াতে এ দেহকে পরিচালনা করতে। এখন তুমি শান্তি ও সুগন্ধি এবং তোমার প্রতি সন্তুষ্ট প্রভুর দিকে চল।”[আহমাদ,আবু দাউদ,নাসায়ী ও ইবনে মাজা]।
দু’মাস পূর্বে এখানে মুহাম্মদ ইয়াসির নামে একজন লোক আসে। তার একজন ভায়রা ছিল। তার নাম ড.মিয়াগুল। এ ড.মিয়াগুল দু’মাস পূর্বে শহীদ হন। তিনি বাগলান এলাকার কমান্ডার ছিলেন। তিনি কম্যুনিস্টদেরকে উচিত শিক্ষা দিয়েছিলেন। তাই কম্যুনিস্টরা তাদের ক্রোধ মিটানোর জন্য তার লাশের অবমাননা করতে আসে। কম্যুনিস্টদের কমান্ডার এসে তার পা দ্বারা শহীদ মিয়াগুলের মাথায় লাথি মারতে চাইল। কিন্তু লাথি মারার জন্য সে পা উঠাতে চাইলে সাথে সাথে তা অবশ হয়ে যায়। অতঃপর সৈন্যরা এসে তাঁকে ট্যাংকের সাথে বেধে বাগলানের রাস্তায় ঘুরতে চাইল। যাতে তারা এটা প্রচার করতে চেয়েছিল যে, আমরা কম্যুনিস্টরাই মিয়াগুলকে হত্যা করেছি। কিন্তু যখনই কম্যুনিস্টের দল তার লাশকে তুলে নেয়ার জন্যে কাছে আসতে চাইল, তখনই শহীদ মিয়াগুল বলে উঠল, ‘আমার অস্ত্রটি নিয়ে আস।’ এ কথা শোনে তারা পালিয়ে যায়। এভাবে তারা তার লাশের কাছে তিনবার আসতে চেয়ে তিনবার পালিয়ে যায়। অতঃপর এ কম্যুনিস্টরাই একটি মুল্যবান কাফনের কাপড় এনে এলাকার বয়স্ক লোকদের বলল, এটা দিয়ে মিয়াগুলকে কাফন দিন। এ রকম লোক আপনাদের মাঝে থাকলে আমাদের বিজয় অর্পিত হবে না। মিয়াগুলকে দাফন করার পরও তার কবর থেকে আল্লাহু আকবার ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর ধ্বনি বের হয়। পেশোয়ারে তার বোনেরা তার জন্য খুব কান্নাকাটি করেছে। তিনি একজন ডক্টর, ইসলামী আন্দোলনের প্রথম সারির কর্মী ও বাগলান জেলার মুজাহিদদের কমান্ডার ছিলেন। অর্থাৎ, তিনি এমন একজন যুবক, যার মধ্যে সকল ভাল গুণের সমাবেশ ঘটেছে। তার বোনেরা খুব কান্নাকাটি করছিল। তাই তার ভাই রাত্রে উঠে আল্লাহর কাছে দুয়া করল, হে আল্লাহ্ ! যদি আমার ভাই শহীদ হয়, তাহলে আমাকে তার শাহাদাতের একটি আলামত দেখান। দুআর পর হঠাৎ ছাদ থেকে কী যেন পড়ছিল মনে হল। চেরাগ নিয়ে আসা হল। দেখা গেল একটি ফুলের তোড়া, সৌন্দর্যে যার তুলনা পৃথিবীর কোন ফুলের সাথে হয় না । তখন শীতকাল ছিল। গিয়ে তিনি তার বোনদের জাগ্রত করলেন এবং বললেন, আমার ভাইয়ের শহীদ হওয়ার আলামত দেখতে চাইল আস। তারা দেখার পর বললেন, মুহাম্মদ ইয়াসিরকেও ডাক। তারা বলল, রাত এখন দুটা। এখন তাঁকে আর কষ্ট না দেই। তাকে সকালে দেখানো হবে। এ কথা বলে তারা ফুলের তোড়াটিকে কুরআন শরীফের ভিতর রাখল। সকালে যখন কুরআন শরীফ খুলে দেখল, তখন ফুলের তোড়াটি আর পাওয়া গেল না।
বাস্তবেই শহীদের ঘটনাবলী বিস্ময়কর। কিছু দিন পূর্বে ইয়াসীন আবদুশ শাকূর আলহুমায়েদী নামের একজন জর্ডানি যুবক শহীদ হয়েছে। আমি তাঁকে নিজেই হাতে ধরে কবরে রাখলাম। মৃতদেহ দেখতে একটা ভয় লাগে। কিন্তু আল্লাহর কসম ! শহীদের লাশ দেখলে মনে চায় বক্ষে জড়িয়ে রাখতে। তোমার মন চাইবে না শহীদের কবর ছেড়ে চলে আসতে। আমরা তাঁকে এশার পর কবরে রেখেছি। কবরে রাখার সময় আমি এক পাশে ছিলাম এবং জর্ডানের আবু খালিদ আরেক পাশে ছিলেন। মৃতলোকের দেহ বলতেই ঠাণ্ডা থাকে। আমরা শীতকালে এশার পর তাঁকে কবরে রাখছিলাম। দেখা গেল তার শরীর গরম। আবু খালিদ আমাকে বললেন আপনি কি তার শরীরের গরম অনুভব করছেন। বললাম হ্যাঁ ! আমরা তাঁকে কবরে রাখলাম। মনে হচ্ছে সে ঘুমিয়ে আছে। অতঃপর কিবলার দিকে মুখ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমি তার চেহারার কাপড় খুলে ফেললাম। দেখা গেল তার চেহারার বিস্ময়কর নূর ঝলমল করছে। মন চাচ্ছে না তার চেহারা থেকে চোখ ফিরিয়ে নিতে। বললাম, সুবহান্নাল্লাহ ! সুবহান্নাল্লাহ ! এক কাল হারবী যুবকের ঘটনা শুনুন। যখন একশজন আরব যুবক শাহাদাত বরণ করল, তখন যে কক্ষে তার লাশ পড়ে ছিল, তার পাশে যারা এসেছিল তারা সবাই জানালা দিয়ে আতরের সুগন্ধি আসতে দেখে। তার চেহারা অন্য রকম পরিচ্ছন্ন। বাইশ ঘন্টা পর যখন আমরা নাঙ্গাহার থেকে তার লাশ নিয়ে আসছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল সে একজন ঘুমন্ত ব্যক্তি।
আপনাদের আর কী বলব? শহীদের ঘটনাবলী হৃদয় ও মনকে জীবিত করে তোলে। তাই আমাদের পক্ষে এসব জায়গা ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি আমাদের বাচ্চা ও স্ত্রীদের মুখে মুখে শহীদ ও মুজাহিদদের ঘটনাবলী এখন চর্চা হচ্ছে । আলহামদুলিল্লাহ, এখন মুজাহিদদের হাতে কান্দাহার বিমান বন্দরের পতন হয়েছে।
শেষ পর্যায়ে আপনাদেরকে জালালাবাদ থেকে প্রাপ্ত কিছু সংবাদ শুনিয়ে আনন্দিত করতে চাই। তারা আজকেও টেলিফোন করে আমাকে আফগানিস্তানের খবরা খবর জানিয়েছে। মানুষ মনে করছে যে, মুজাহিদরা এখন সামনে আগ্রসর হতে পারছে না। মুজাহিদরা গত সপ্তাহেও জালালাবাদের আশেপাশের একশটি কম্যুনিস্ট ক্যাম্প দখল করে নিয়েছে। তারা জালালাবাদের আশেপাশের অনেক এলাকা দখল করে নিয়েছে। এখন জালালাবাদের গাযীআবাদেই যুদ্ধ চলছে। রাশিয়া থেকে পাওয়া অস্ত্র গনীমতের পরিধি তিন কিলোমটার। মুজাহিদরা গনীমত লাভ করার জন্যেই আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা রুশদের মাথায় অস্ত্র বানিয়ে স্টক করে রাখার বুদ্ধি ঢেলে দিয়েছেন।
আলহামদুলিল্লাহ প্রাপ্ত গনীমত দ্বারা মুজাহিদদের সরকার পাঁচ বছর চলে যেতে পারবে। আলহামদুলিল্লাহ গনীমত মুজাহিদদের জন্য অপেক্ষায় আছে । আফগানিস্তানের সকল জায়গার খবর ভাল। এখন জালালাবাদ শহরটি কম্যুনিস্টদের উৎপত্তিস্থলে পরিণত হয়েছে। রাশিয়ান কম্যুনিস্টদের চেয়ে আফগান কম্যুনিস্টরা এখন বেশী তৎপর। তারা মরা-বাচার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। তাই ইনশাআল্লাহ্ শিগগিরই জালালাবাদের পতন ঘটবে। আর কাবুলের পতনের জন্য সময় লাগবে বেশীর থেকে বেশী ঈদুল আযহা পর্যন্ত। ইনশাআল্লাহ্ তোমরা ঈদুল আযহা উদযাপন করার জন্য কাবুলে যেতে পারবে এবং ইনশাআল্লাহ্ সকলেই শরীয়ত মতে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে একেকজন কম্যুনিস্টকে যবাই করে নিজের কুরবানী আদায় করতে পারবে। হেরাতে মুজাহিদরা এগারটি ট্যাংক ধবংস করেছে ও পাঁচজন বৈমানিককে বন্দী করেছে। আরেকটি স্থানে তিনশ’ পঞ্চাশজনকে আহত করেছে ও দু’শ জনকে হত্যা করেছে। অন্য একটি জায়গায় তিনটি ট্যাংক ধবংস করেছে ও একটি সামরিক ট্রাক ধবংস করে সবাইকে হত্যা করেছে। জালালাবাদ রক্ষা করার জন্য মাযারইশরীফ থেকে ৫৪টি কম্যুনিস্ট ক্যাম্প থেকে ১৮টি ডিভিশন আসছিল। মামারসালাঙ্গ পর্যন্ত এসে পৌছলে আহমাদ শাহ মাসউদ ১৬০ জন সৈন্য ও ৪০ জন অফিসারের সবাইকে বন্দী করে ফেলেন। এতে দশটি অক্ষত ট্যাংক, আঠারটি সামরিক ট্রাক ও চৌদ্দটি খাদ্য ভর্তি ট্রাক গনীমত পাওয়া যায়।
মুজাহিদরা জালালাবাদের নাঙ্গহার এলাকায় চল্লিশজন সৈন্যের একটি চেক পয়েন্ট দখল করে নিয়েছে এবং দুটি সামরিক ট্রাক ধবংস করেছে। জালালাবাদের পার্শ্বস্থ খাযদার ও নাঙ্গাহারের পোস্ট আহমদ এলাকার আরো তেরটি চেক পয়েন্ট দখল করে নিয়েছে মুজাহিদরা। এসব বিজয় গতকাল ও আজকেরই সংঘটিত হওয়া। কম্যুনিস্ট সৈন্যরা এসব এলাকাগুলো রক্ষা করতে এসে ১৪০ জন নিহত হয়েছে, ৯২ জন বন্দী হয়েছে ও বিপুল সংখ্যক আহত হয়েছে। মুজাহিদরা জালালাবাদ বিমান বন্দরের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ধবংস করেছে। শত্রুরা বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহার করেছে। মুজাহিদরা জালালাবাদে ৫৭ জন হিন্দুকে হত্যা করেছে ও তাদের একটি মন্দির ধবংস করেছে। কাবুলের শহরতলীর নিকটস্থ জান্দারআব এলাকায় মুজাহিদরা ১৩৫ জন শত্রুসেনাকে বন্দী করেছে এবং আটটি ট্যাংক গনীমত পেয়েছে। আমাদের কাছে মুজাহিদদের বিজয়ের ঘটনাবলীর কিছুটা পৌঁছেছে মাত্র।
এখন জালালাবাদের রণক্ষেত্রে অবস্থান করা তোমাদের ভাইদের ভুলবে না রমযান দোর গোড়ায় এসে গেছে। মুজাহিদদেরকে যাকাত দেয়া জায়েজ; বরং সর্বোত্তম। আমাকে একজন জিজ্ঞেস করেছে মুজাহিদদের জন্য যাকাত হালাল কিনা। আমি বললাম-
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ
“নিশ্চয় যাকাতের অধিকারী হচ্ছে ফকীর, মিসকীন, যাকাত উত্তোলনকারী, ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হতে ইচ্ছুক লোকজন, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি, জ্বিহাদের পথে থাকা লোকজনও মুসাফির।”[তাওবাহঃ৬০] ।
আয়াতে উল্লিখিত লোকদের প্রায় গুণাগুণ আফগানদের মধ্যে বিদ্যমান। তারা ফকীরও, মিসকীনও, আল্লাহর রাস্তায় জ্বিহাদের পথেও এবং ঋণগ্রস্থও। অতএব, আপনাদের দান তাঁদেরকে দিতে ভুলবেন না এবং পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনের হামাসকেও ভুলবেন না। যারা আগামীতে ফিলিস্তিনে ও বর্তমানে আফগানিস্থানে দান করতে ইচ্ছুক, তাদেরকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা আমাদের ও সকল মুসলমানের পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন। হাদীসে আছে-
“এক দিরহাম সওয়াব বৃদ্ধি পেয়ে এক লক্ষ দিরহামের সম পরিমাণ হয়ে যায়। ”[মুসলিম]।
“আল্লাহর কসম ! সদকা করার কারণে সম্পদ কমে যায় না।”[মুসলিম,তিরমিযী ও আহমদ] ।
আল্লাহ সুনহানাহু ওয়াতাআলা বলেছেন-
وَمَا أَنفَقْتُم مِّن شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ ۖ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ [٣٤:٣٩]
“তোমরা যে বস্তুই ব্যয় কর না কেন, আল্লাহ তা পূর্ণ করে দিবেন। আর তিনি হচ্ছেন সর্বোশ্রেষ্ঠ জীবিকা দানকারী। ”[সাবাঃ৩৯]।
বিশ্ববাপী জিহাদ ভীতি
আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ, পাহারাদারী ও অস্ত্র ধারণ আল্লাহর এক বিশেষ নেয়ামত। এ নেয়ামত আল্লাহ্ যাকে ভালবাসেন, তাকেই দান করেন, যাকে ভালবাসেন না, তাকে তিনি এ নেয়ামত দান করেন না।
তিনি বলেন-
وَلَوْ أَرَادُوا الْخُرُوجَ لَأَعَدُّوا لَهُ عُدَّةً وَلَٰكِن كَرِهَ اللَّهُ انبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيلَ اقْعُدُوا مَعَ الْقَاعِدِينَ [٩:٤٦]
“যদি তারা (আল্লাহর রাস্তায় জ্বিহাদের জন্য) বের হওয়ার ইচ্ছা করতো, তাহলে তারা জ্বিহাদের সরঞ্জাম প্রস্তুত করে রাখত। কিন্তু আল্লাহ্ তাদের জিহাদে যাওয়াকে পছন্দ করেননি। তাই তাঁদেরকে বিরত রাখলেন এবং তাঁদেরকে বল হল, তোমরা যারা (সঙ্গত বা অসঙ্গত কারনে) বসে আছে তাদের সাথে বসে থাক।”[তাওবাহঃ৪৬]।
জিহাদে যাওয়ার সুযোগ আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ একটি অনুগ্রহ। যখন তুমি জ্বিহাদের জন্য বের হয়ে তাতে দৃঢ়পদ থাকার নিয়ত করেছ, তাহলে যেখানে মরো ও যেভাবেই নিহত হও শহীদ হবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“যে আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার জন্য তার বাহনে উঠার জন্য পা রাখা অবস্থায় বাহন তাঁকে ফেলে দেয়ায় মৃত্যুবরণ করেছে বা তাঁকে কোন সাপ কামড় দেয়ায় মৃত্যুবরণ করেছে কিংবা অন্য কোন ভাবে মৃত্যু বরণ করেছে, তাহলে সে শহীদ বলে গণ্য হবে এবং তার জন্যে রয়েছে জান্নাত।” [আবু দাউদ]।
তিনি আরো বলেছেন-
“শয়তান আদম সন্তানকে পথভ্রষ্ট করার জন্য তার সব ক’টি পথেই আগলে বসে থাকে। ইসলামের পথে বসে তাঁকে বলে, তুমি কি ইসলাম গ্রহণ করে বাপ দাদার ধর্ম ত্যাগ করছ ? কিন্তু সে তার কথা না শুনে ইসলাম গ্রহণ করেছে। অতঃপর সে তার হিজরতের পথে আগলে বসে এবং বলে, তুমি কি হিজরত করছ এবং তোমার ভূমি ও আকাশ ছেড়ে চলে যাচ্ছ ? কিন্তু সে তার কথা না শুনে হিজরত করল। অতঃপর সে তার জ্বিহাদের পথে বসে এবং বলে , তুমি কি নিহত হতে যাচ্ছ অথচ মানুষ অঢেল সম্পদ অর্জন করছে ও সুন্দরী রমনী বিবাহ করছে ? কিন্তু সে তার কোথায় কর্ণপাত না করে জিহাদ করেছে। আর যে ব্যক্তি জিহাদ করতে গিয়ে নিহত হবে, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহর কর্তব্য। আর যে ব্যক্তি তা করতে গিয়ে ডুবে যাবে, তাকেও জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহর কর্তব্য। আর যে ব্যক্তি জিহাদ করতে গিয়ে অন্য কোন ভাবে মারা যাবে, তাকেও জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহর কর্তব্য।”[আল জামিউস সগীরঃ হাদীস নং৬১৫২]।
অতএব, এটা এক মহা নেয়ামত। এ নেয়ামত আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন যাকে দান করেন, সেই কেবল তা প্রাপ্ত হয়। আর এ নেয়ামতের স্বাদ কেবল সেই বুঝতে পারে সে তা আস্বাদন করে দেখেছে।
হিজরত ও জ্বিহাদের গুরুত্ব
জ্বিহাদের ন্যায় হিজরতও আল্লাহর একটি মহান নেয়ামত। তিনি বলেছেন-
وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ قُتِلُوا أَوْ مَاتُوا لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللَّهُ رِزْقًا حَسَنًا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ [٢٢:٥٨]
لَيُدْخِلَنَّهُم مُّدْخَلًا يَرْضَوْنَهُ ۗ وَإِنَّ اللَّهَ لَعَلِيمٌ حَلِيمٌ [٢٢:٥٩]
“যারা আল্লাহর পথে হিজরত করেছে অতঃপর নিহত হয়েছে বা মৃত্যুবরণ করেছে, আল্লাহ তাঁদেরকে অবশ্যই উত্তম জীবিকা দান করবেন। আর নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ হচ্ছেন সর্বোত্তম জীবিকা দানকারী। তিনি তাঁদেরকে অবশ্যই তাদের সন্তোষজনক স্থানে (জান্নাতে) প্রবেশ করাবেন। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বজ্ঞাত ও সহনশীল।”[হজঃ ৫৮-৫৯]।
অর্থাৎ, হিজরতের পথে নিহত ও মৃত্যুবরণ করা উভয়ই বরাবর । হযরত ফাযালা বিন উবাইদ রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণীত আছে যে, তারা একটি সামুদ্রিক অভিযানে ছিলেন। এ সময় তাদের একজন মিনজানিকের (প্রাচীণ ক্ষেপনাস্ত্র বিশেষ) আঘাতে পড়ে নিহত হলেন এবং একজন স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করলেন । তারা তাঁদেরকে জানাযা নামায শেষে দাফন করলেন। অতঃপর ফাযালা বিন উবাইদ স্বাভাবিক মৃত্যুবরণকারীর মাথায় কাছে বসলেন। ফাযালা বিন উবাইদ একজন প্রসিদ্ধ মুজাহিদ সাহাবী ছিলেন। তখন লোকজন বললেন, আপনি শহীদকে বাদ দিয়ে মৃত্যুবরণকারীর মাথার পাশে গিয়ে কেন বসছেন ? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম আমি উভয়ের কবরের যে কারো কবর থেকে পুনরুত্থিত হওয়া সমান মনে করি। অর্থাৎ, হিজরতের পথে শাহাদাত বরণ ও মৃত্যুবরণ উভয়কে আমি সমান মনে করি । কারণ,আল্লাহ্ বলেছেন-
“যারা আল্লহর পথে হিজরত করেছে। অতঃপর নিহত হয়েছে বা মারা গেছে, তাঁদেরকে আল্লাহ্ অবশ্যই উত্তম জীবিকা দান করবেন এবং তাদের সন্তোষজনক স্থানে প্রবেশ করাবেন, আর নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ সর্বজ্ঞাত ও সহনশীল।”
অতএব, যদি আল্লাহ আমাকে উত্তম জীবিকা দান করেন এবং সন্তোষজনক স্থানে তথা জান্নাতে প্রবেশ করান, তাহলে আমার আর চাওয়া-পাওয়ার কী আছে। উভয় কবরের যে কোন কবর থেকে উত্থিত হলেই তো এটা পাওয়া যাচ্ছে।’
আর জ্বিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে নামাযের জন্য অজুর মত। আর জ্বিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ জিহাদে অবিচল থাকার নিয়ত থাকার প্রমাণ । কারন-
“যদি তারা জিহাদে বের হওয়ার ইচ্ছা করত, তাহলে তারা অবশ্যই তার জন্য কোন সরঞ্জাম প্রস্তুত করত।”
তা জ্বিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ জ্বিহাদের সত্যিকার সংকল্প থাকার প্রমাণ। তুমি এখন যে স্থানে রয়েছ, তা জ্বিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের সর্বোত্তম জায়গা। এখানে প্রস্তুতি গ্রহণে যে সময় ব্যয় হবে, তার প্রতিটি ক্ষণের জন্য তুমি সওয়াব পাবে এবং তোমার অভিজ্ঞতা অর্জিত হবে। অতএব, প্রস্তুতি গ্রহণ না করেই লড়াই করার জন্য দৌড়ে যেয়ো না।