পাশ্চাত্য ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র (১০ম পর্ব) – শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম (রহঃ)

ইসলামের উপর কুফরি বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ আক্রমণ

সুদানের নুমাইরীর সরকার যখন অধ্যাপক তুরাবীর ইসলামিক ফ্রন্টের সাথে মিলে ইসলামী  শাসন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল, তখন তাদের উপর মিলে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হল। তারা দাবী জানায় ইসলামিক ফ্রন্টকে সরকার থেকে বের করে দেয়ার জন্য।

ইসলামিক ফ্রন্টকে সরকার থেকে বের করে দেয়ায় তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। তারা এখন বুদ্ধি ভিত্তিক আন্দোলন  থেকে সশস্ত্র পথে পা বাড়িয়েছে। এখন জ্বিহাদের বহ্নি শিখা শুধু আফগানিস্তানে নয়, ফিলিস্তিনের নিকটবর্তী সুদানেও ছড়িয়ে পড়ে শুরু করেছে। আফগানিস্তানের পর ওটাকে এখন দ্বিতীয় বিপদ হিসেবে গণ্য পড়া শুরু করেছে। কারণ, আফগানিস্তানের মুজাহিদরা এখন শাসনভার গ্রহণের দ্বার প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। আরব বিশ্বের বামপন্থীরা দেখছে তাঁদের জননী সোভিয়েত ইউনিয়ন হিন্দুকুশ পর্বতমালায় তাঁর প্রভাব খুইয়ে বসছে। আফগানিস্তানে তাঁদের মায়ের এ করুণ দশা দেখে তাঁদের উচিত লজ্জায় আত্মগোপন করা।উপসাগরের তীরে বসে এ লাল ব্যঙ্গগুলো এখনো চিল্লাচিল্লি করছে যে, নজীব সরকার ময়দানে এখনো বিজয়ী রয়েছে। তাঁরা জানে না যে, এখন তাঁর নাভিশ্বাস শুরু হয়েছে এবং এ দিনগুলো তাঁর সরকারের শেষ দিন।

ইসলামের উত্থানকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য ইসলামের শত্রুদের বর্তমান কৌশল হচ্ছে মুসলিম বিশ্ব ও জ্বিহাদের মাঝে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। কারণ, ইসলামী খেলাফত ধ্বংস করার পর মুসলিম বিশ্বের কোথাও আফগানিস্তানের ন্যায় জ্বিহাদের আগুন জ্বলে উঠেনি এবং আফগান জ্বিহাদ নিয়ে মুসলিম বিশ্বে যতটুকু উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টির হয়েছে, তা অন্য কোন আন্দোলন নিয়ে হয়নি।আফগানিস্তানের পূর্বে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ ও বিভিন্ন অঞ্চলের লোক ইসলামের জন্য অন্য কোন জায়গায় এত জান ও মাল উৎসর্গ করেনি, এত রক্ত প্রবাহিত করেনি ও এত ত্যাগ ও কষ্ট হাসিমুখে বরণ করেনি।

মিথ্যার বেসাতি

মিডিয়া ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হয়ে ইসলামের শত্রুরা এখন দরিদ্র আফগানদের অর্থের লোভ দেখিয়ে তাঁদের উদ্দেশ্য সাধন করতে যাচ্ছে। কিন্তু তাঁরা ইসলামী আন্দোলনের কোলে পালিত হওয়া মুজাহিদ নেতৃবৃন্দকে হাত করতে পারছে না। তারা আরব মুজাহিদদের বিরুদ্ধে অপ্রচারের সেই পুরাতন নোংরা কৌশলই গ্রহণ করেছে, যা ব্রিটেন সাইয়েদ আহমদ শহীদ ও ইসমাঈল শহীদের জিহাদী আন্দোলনকে নষ্ট করে দেয়ার জন্য গ্রহণ করেছিল। তাঁরা পেশোয়ারে কয়েক বছর ইসলামী শাসন পরিচালনা করেছিলেন। অতঃপর ওয়াহাবী অপবাদ দিয়ে ব্রিটিশরা জনগণকে তাঁদের বিরুদ্ধে উসকে দেয় এবং অর্থের লোভ দেখিয়ে তাদেরকে হত্যা করায়।

জহির শাহকে ফিরিয়ে আনা, মুজাহিদ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা, ওয়াহাবী অপবাদ দিয়ে জনগণকে উত্তেজিত করা ও উপসাগরীয় অঞ্চলে তোতাপাখিদের* দিয়ে চিল্লাচিল্লি করানোসহ অনেক ষড়যন্ত্র করানোসহ অনেক ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ বলছেন-

يُرِيدُونَ أَن يُطْفِئُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَيَأْبَى اللَّهُ إِلَّا أَن يُتِمَّ نُورَهُ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ [٩:٣٢]

“তাঁরা চাচ্ছে আল্লাহর আলোকে ফুঁৎকার দিয়ে নিভিয়ে দিতে। কিন্তু কাফিরদের খারাপ লাগলেও আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণ করে ছাড়বেন।”[তাওবাহঃ৩২]।

আমি আপনাদেরকে সুসংবাদ শোনাতে চাই। মুজাহিদরা গতকাল ও আজকে জালালাবাদের নিকটবর্তী সারখাবাদের পথে পাঁচটি কম্যুনিস্ট কেন্দ্র ও একটি গ্রাম দখল করে নিয়েছে। এতে তাঁরা প্রচুর অস্ত্র গণীমত লাভ করে।এখন কম্যুনিস্ট সরকারের পক্ষে জালালাবাদের শহরতলীর বাইরে তাঁদের ট্যাংক চালানো কোন ভাবেই সম্ভব নয়। উপসাগরীয় পত্র-পত্রিকাগুলো এখনো ইচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যা প্রচার করে যাচ্ছে। যেমন হিটলারের তথ্যমন্ত্রী গোয়েবলস বলেছিল, একটি মিথ্যা বারবার বলতে থাক, যে পর্যন্ত না লোকজন তাঁকে সত্য বলে গ্রহণ করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-

وَاللَّهُ غَالِبٌ عَلَىٰ أَمْرِهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ [١٢:٢١]

“আল্লাহ তাঁর সিদ্ধান্তে সফলকাম। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।”[ইউসুফঃ২১]।

আফগানদের কাছে আরবদের মূল্য

ভাইয়েরা ! সম্প্রতি আমাদেরকে ওয়াহাবী বলে যে প্রচার করা হচ্ছে, তা আফগানদের নিজস্ব ষড়যন্ত্র নয়। বরং এটা একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। এ শব্দটা কেবল সে সব রক্তব্যবসায়ীরা সুবিধাবাদী আফগানরাই ব্যবহার করছে, যারা এতীম ও বিধবাদের রক্ত শোষন ও আহত ও শহীদের সম্পদ খেতে খেতে পেটে রোগ টেনে এনেছে। এরা প্রকৃত হকদারদের কাছে সাহায্য পৌঁছতে দিত না । এদের সাথে মুজাহিদ নেতৃবৃন্দ, সত্যিকারের মুজাহিদ ও আরবদেরকে শ্রদ্ধাকারী আফগান জনগণের কোন সম্পর্ক নেই। তোমরা এমন অনেক ঘটনা শুনেছ যে, এসব সত্যিকারের মুজাহিদরা অনেক সময় আরব মুজাহিদকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নারত হয়ে বলেছে, ‘ওহে নবীর বংশধর !’।অনেকে আরব মুজাহিদের হাতে চুমুও খেয়েছে।

সেদিন আমি কোয়েটার একটি খৃষ্টান হাসপাতালে যা দেখেছি , তা এখনো ভুলতে পারছি না। যখন আমরা সেখানে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা দেখার জন্য কৌশলে সেখানে প্রবেশ করলাম, তখন কান্দাহারের একজন বৃদ্ধ তাঁর আহত ছেলেকে ফেলে আমাদের দিকে দৌড়ে আসে এবং আমাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করা শুরু করে। অথচ তাঁর ছেলের ক্ষতস্থান থেকে তখনও  রক্ত ঝরছিল।

ড. মুহাম্মদ উমর ইরাকীকে আফগান মিলিশিয়ারা আটক করেছিল। কিন্তু যখন তাঁরা জানল যে, তিনি আরব, তখন তাঁরা তাঁকে ছেড়ে দেয়।

হেরাতে যখন আবদুল্লাহ তাহির অবস্থান করেছিল, সে সময়ের ঘটনা। মিলিশিয়া ও মুজাহিদদের মাঝে যুদ্ধ চলছিল। তখন মুজাহিদরা মিলিশিয়াদের সাথে যোগাযোগ করে বলল, আমাদের সাথে একজন আরব মেহামান রয়েছে। তিনি নিহত হলে আমাদের ও তোমাদের উভয়ের লজ্জা হবে।অতএব, আমরা তাঁকে রণক্ষেত্র থেকে অন্য খানে স্থানান্তর করা পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ থাক। মিলিশিয়ারা মুজাহিদদের এ কথায় সাড়া দিল। যখন আবদুল্লাহ তাহিরকে স্থানান্তর করা হল,তখন যুদ্ধ আবার শুরু হল।

আহমদ আলমুবারককে পরওয়ান এলাকা মিলিশিয়ারা আটক করার পর যখন জানতে পারল তিনি আরব, তখন তাঁরা তাঁকে কিছু অর্থ দিয়ে সম্মানের সহিত মুজাহিদদের ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়।ইউনুস খালিছ বলেছেন, ‘আরবদেরকে ভালবাসা আমাদের উপর ফরয এবং আমাদের দ্বীন ও ঈমানের অঙ্গ।’

তবে যারা আরবদের প্রতি এসব বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, তারা আফগান নয়, আফগানদের শত্রু ! কাদের পক্ষে এসব কথা প্রচার করা সম্ভব যে, ‘ওয়াহাবীকে যে সালাম দেয় বা কথা বলে বা শাদী করে বা আপ্যায়ন করে সে মুরতাদ ও কাফির?’ জ্বিহাদের মাধ্যমে সুবিধা ভোগকারী কতিপয় আলিম নামধারী লোকেরাই এসব ফতওয়া ছড়াচ্ছে। আফগানরা এসব থেকে মুক্ত। যারা এসব করছে তাদেরকে তাঁরা কম্যুনিস্ট সরকার ও আমেরিকা ব্রিটেনের চর হিসেবে আখ্যায়িত করছে।

ভাইয়েরা ! আফগান জিহাদে আমাদের সাহায্য করা মানে হককে সাহায্য করা ইনশাআল্লাহ আমরা যদি ইখলাস নিয়ে আসি, তাহলে আমাদের জ্বিহাদ অবশ্যই সত্যিকারের ইসলামী জিহাদ।আল্লাহর নিকট কামনা করি, যেন তিনি আমাদের সওয়াব নষ্ট না করেন ও ইজ্জত রক্ষার জ্বিহাদের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপনাকারী এ জনগোষ্ঠীর  (আফগান) ব্যাপারে আমাদের ধারণায় পরিবর্তন না আনেন।

ভাইয়েরা ! আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক হও। সাবধান থেকো যেন তোমাদের অন্তর ও নিয়তের মধ্যে কোন পরিবর্তন না আসে। আর এখানে এসে যে ত্যাগ স্বীকার করেছো তাঁকে পন্ডশ্রম মনে করে অনুতপ্ত হওয়া থেকেও সাবধান থেকো। আলহামদুলিল্লাহ, একটি মুসলিম জনগোষ্ঠীর জ্বিহাদ থেকে আফগান জিহাদকে মুসলিম উম্মাহর আন্তর্জাতিক জিহাদে রুপান্তরিত করণে আমাদের উপস্থিতি অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে।

আফগানদের মাঝে আরবদের উপস্থিতির প্রভাব

তোমরা যারা জিহাদের বিভিন্ন ফ্রন্টে গিয়েছ, তারা অবশ্যই আফগান মুজতাহিদদেরকে আরবী ভাষা ও কুরআন মজীদ শিক্ষা দান এবং সাহায্যের প্রকৃত হকদারদের হাতে সাহায্য পৌছানো,তাদের কষ্ট লাঘব ও তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে তোমাদের একটা বিরাট অবদান লক্ষ্য রয়েছে। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে তোমাদের নিজেদের রণাঙ্গনে উপস্থিত থাকা, ইসলামী চেতনার উন্নতি ঘটানো এবং তাঁদের মাঝে ইসলামের মূলনীতি ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা। আল্লাহ বলেন-

إِنَّ هَٰذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُونِ [٢١:٩٢]

“নিশ্চয় এটা (মুসলমানরা) তোমাদের দল ও তা অভিন্ন দল। আর আমি তোমাদের পালনকর্তা।অতএব, তোমরা সবাই আমারই ইবাদত কর।”[আম্বিয়া”৯২]।

ইসলামে আফগানিস্তান ও মিশরের মাটি কিংবা ফিলিপাইন বা ফিলিস্তিনের মাটির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সবই ইসলামী ভূমি। সবটাকে আল্লাহর জন্য খাঁটি করতে হবে এবং তাতে আল্লাহর আইন প্রয়োগ ও সবার কথার উপর ‘লা ইলাহা ইল্লল্লাহ ‘ কথাটির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।অতএব, এ যুদ্ধ ইসলামের যুদ্ধ, এ ঝান্ডা ইসলামের ঝান্ডা, এ ভূমি ইসলামী ভূমি ও তাঁর অধিবাসীরা মুসলিম এবং আমরাও মুসলিম। আল্লাহর কসম ! এসব সত্যনিষ্ঠ লোকেরা যাদের প্রভাব, আপোষহীনতা ও পৌরুষের চর্চা মানুষের মুখে মুখে চলছে, তাদের খেদমত করার তাওফীক দিয়ে আল্লাহ আমাদেরকে যে সওয়াব দান করেছেন ,তার জন্য আমরা কখনো অনুতপ্ত হব না। এখান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা এক যুবককে প্রায় এক মাস পূর্বে পবিত্র নগরীতে (জেরুযালেম) গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে পাঁচজন ইয়াহুদি পুলিশ ধরতে চেয়েছিল। তার পকেটে ছিল একটি ছুরি ।সে ছুরিটি বের করে পাঁচজন পুলিশ সবাইকে আঘাত করে। সাথে সাথে দু’জন পুলিশ মারা যায় ও বাকী তিনজন আহত হয়। দুনিয়ার পত্র পত্রিকাগুলো বিস্ময় প্রকাশ করছে যে, অস্ত্রধারী পাঁচজন পুলিশকে কীভাবে একজন লোক ছুরি দিয়ে হতাহত করতে পারে?

মিথ্যার পরাজয়

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-

أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَالَتْ أَوْدِيَةٌ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَّابِيًا ۚ وَمِمَّا يُوقِدُونَ عَلَيْهِ فِي النَّارِ ابْتِغَاءَ حِلْيَةٍ أَوْ مَتَاعٍ زَبَدٌ مِّثْلُهُ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْحَقَّ وَالْبَاطِلَ ۚ فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءً ۖ وَأَمَّا مَا يَنفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ [١٣:١٧]

“তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর তা নদীসমূহ দিয়ে পরিমাণ মত প্রবাহিত হয়।অতঃপর স্রোতধারা স্ফীত ফেনারাশি উপরে নিয়ে আসে। আর মানুষ অলঙ্কার অথবা যে বস্তুকে আগুনে উত্তপ্ত করে, তাতেও অনুরূপ ফেনা রাশি থাকে। আল্লাহ সত্য ও মিথ্যার দৃষ্টান্ত এভাবে পেশ করেন। অতঃপর ফেনা শুকিয়ে খতম হয়ে যায় এবং যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিতে রয়ে যায়। আল্লাহ এমনিভাবেই দৃষ্টান্ত সমূহ বর্ণনা করেন।”[রা’দঃ ১৭]।

সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বের এটি চিরাচরিত নিয়মটা কখনো লুপ্ত হওয়ার নয়। সত্য স্থির, তাঁর শিকড় মাটির গভীরে, আর মিথ্যার অস্থির, ফেনার ন্যায় দ্রুত অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে। আল্লাহ আরো বলেছেন-

أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ [١٤:٢٤]

تُؤْتِي أُكُلَهَا كُلَّ حِينٍ بِإِذْنِ رَبِّهَا ۗ وَيَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ [١٤:٢٥]

وَمَثَلُ كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍ كَشَجَرَةٍ خَبِيثَةٍ اجْتُثَّتْ مِن فَوْقِ الْأَرْضِ مَا لَهَا مِن قَرَارٍ [١٤:٢٦]

يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۖ وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ ۚ وَيَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ [١٤:٢٧]

“আপনি কি জানেন না, আল্লাহ কীভাবে কালেমা তাইয়িবার (ভাল কথা) উদাহারণ দিয়েছেন?কালেমা তাইয়িবা একটি ভাল গাছের ন্যায়, যার শিকড় মজবুত ও মাথা আকাশে। সেটা তাঁর প্রভুর হুকুমে সব সময় তাঁর ফল দিয়ে যাচ্ছে। আর আল্লাহ উদাহারণ এ জন্য পেশ করেন, যাতে মানুষ তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করে। আর কালিমা খবীছার (খারাপ কথা) উদাহারণ হচ্ছে একটি খারাপ বৃক্ষ, যাকে মাটি থেকে উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং তাঁর কোন দৃঢ়তা নেই। আল্লাহ মজবুত কথার দ্বারা মুমিনদেরকে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে দৃঢ়পদ রাখেন এবং অপরাধীদের পথচ্যুত করেন। আর আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করে থাকেন। ”[ইব্রাহীমঃ২৪-২৭]।

সত্য মূলসম্পন্ন ও সুদৃঢ়

দুনিয়ার জীবনে সত্য, সুদৃঢ়, প্রকৃতির সাথে লাগসই ও পৃথিবীর নিয়ম নীতির  অনুকূলে চলাচলকারী। কারণ, যিনি সত্য পাঠিয়েছেন, তিনি সত্য। তিনি মানুষের প্রকৃতিকে এমন ভাবে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তাঁর পক্ষে দুনিয়ার প্রাকৃতিক নিয়ম নীতির অনুকূলে চলা সম্ভব হয়।

সত্যের সাথে প্রকৃতির কোন সংঘর্ষ নেই। আর সত্যের প্রকৃতি হচ্ছে সব সময় মিথ্যার উপর বিজয়ী থাকা। ইসলামের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বে মিথ্যার পরাজয় সুস্পষ্টরূপে দেখতে পাই। মুসলিম উম্মাহ যতদিন তাঁর দ্বীনকে আকড়ে ধরে থেকেছিল, ততদিন তাঁরা মিথ্যার অনুসারীদের উপর বিজয়ী ও প্রভাবধারী ছিল। কিন্তু যখনই তাঁরা সত্যের পথ থেকে দূরে সরতে আরম্ভ করে, তখনই তাঁরা লাঞ্চনা ও বঞ্চনার পাত্রে পরিণত হয়।

এ নীতির সত্যতা এখনও বিদ্যমান

সত্যকে আকড়ে ধরার ফলে যে মানুষ মিথ্যার উপর বিজয় লাভ করে, এটার প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেখেছি আমরা আফগানিস্তানে। আল্লাহ জিয়াউল হককে রহম করুন। ‘ ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব শান্তি ‘ নামে করাচিতে অনুষ্ঠিত হওয়া একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে যখন একজন কথিত ইসলামী দাঈ গর্বাচেবের প্রশংসা করে চলেছিল যে, তিনি আফগানিস্তান থেকে সৈন্য ফিরিয়ে নিতে আন্তরিক এবং শান্তিকামী, তখন তিনি (জিয়াউল হক) দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র প্রধান হওয়ার কথা ভুলে গিয়ে কোন গোষ্ঠীকে সতর্ক করার ন্যায় বললেন, ‘আমরা এমন এক জাতি, যার জন্য আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ নবীকে সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন। যতদিন এ জাতি তাঁর প্রভুর রজ্জুকে আকড়ে ধরে তার বিধানকে দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জ্বিহাদ করেছে, ততদিন তাদেরকে তিনি (আল্লাহ) সাহায্য করেছেন এবং তাঁরা মানবজাতির নেতৃত্ব দান করেছে।

অতঃপর সে পথ আমরা ছেড়ে দিলাম। ফলে আমরা লাঞ্চনার স্বীকার হলাম। অতঃপর যখন আল্লাহ তাআলা আমাদের সামনে একটি দৃষ্টান্ত পেশ করে আমাদের এ কথা জানিয়ে দিতে চাইলেন যে, যদি আমরা আমাদের দ্বীন ও জিহাদকে আকড়ে ধরি, তাহলে আমাদের পক্ষে আমাদের হারানোর গৌরব ও ইজ্জত পুনরুদ্ধার করা সম্ভব, তখন তিনি আফগানিস্তানের এ বিশাল ইস্যু সৃষ্টি করলেন এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বিশাল শক্তি ও সর্বাধিক নৃশংস হিংস্রদের মোকাবেলা করার জন্য একটি অনুন্নত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে নির্বাচিত করলেন। তাদের কাছে না আছে কোন কৌশল ও প্রযুক্তি এবং না আছে তাঁদের অক্ষর জ্ঞান। অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা এ নিরস্ত্র দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মোকাবেলায় রাশিয়াকে পরাজিত করে আমাদের এ শিক্ষা দিলেন যে,এ (মুসলিম) উম্মাহ যতই দুর্বল, দরিদ্র, ক্ষুদ্র ও অক্ষর জ্ঞানহীন হোক না কেন, যদি তাঁরা তাঁদের দ্বীনকে আকড়ে ধরে, তাহলে তাঁরা আল্লাহর হুকুমে অবশ্যই বিজয়ী হবে।’ অতঃপর তিনি (তাঁকে আল্লাহ রহম করুন) বললেন, ‘গর্বাচেভ কীভাবে প্রশংসার যোগ্য হতে পারে, সেটা আমার বুঝে আসছে না। সে তো একজন ডাকাত, যে ঘরে প্রবেশ করে ঘরের আসবাবপত্র জ্বালিয়ে ঘরের মালিককে হত্যা করেছে । অতএব, সে কীভাবে প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা পাবার যোগ্য হতে পারে?’

আফগান জ্বিহাদ মানুষের ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিয়েছে

পৃথিবীর মুসলমানরা ইসলামের বিজয় নিয়ে সবখানে হতাশায় অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছিল, তখন তিনি এ জ্বিহাদের মাধ্যমে তাদেরকে আশার আলো দেখালেন। ইসলামী চিন্তাবিদ ও দাঈরা যখন মানুষকে বলছিল যে, আমরা ইসলামের বিধান প্রয়োগ করতে চাই, তখন মানুষ বলেছে আমরা আমেরিকা ও রাশিয়ার রোষানলে পড়ে এটা কীভাবে করতে পারি ? রাশিয়ার তো দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, রয়েছে সর্বাধুনিক যুদ্ধ বিমান ও মহাকাশ যান যা দিয়ে তাঁরা চাঁদে পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এদের তোপের মুখে পড়ে কীভাবে ইসলামের বিধান বাস্তবায়ন করা সম্ভব ? কিন্তু আল্লাহ তাঁদের ভুল ধারণা ভেঙে দিলেন। ফলে আল্লাহর হুকুমে রাশিয়া দরিদ্র আফগানিস্তান থেকে লাঞ্চিত, অপদস্ত ও অপমানিত হয়ে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়।

আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে এ জনগোষ্ঠীর (আফগান) মাধ্যমে যে জীবন্ত দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন, তা ইসলামের বিজয়কামী লোকদের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ ও লক্ষ্যে পৌছার অমোঘ উপায়।আফগানিস্তানে ইসলামের এ বিজয় লাভের জন্য যে ত্যাগ ও কুরবানী দিতে হয়েছে, তা নজিরবিহীন। শহীদের সংখ্যা প্রায় তের লক্ষ। বিধবা, পঙ্গু ও এতীমের সংখ্যা কত তা বলা দুস্কর।এদের দুঃখ কষ্টের কথা যদি লেখা হয় তাহলে বিশাল বিশাল কয়েক খন্ড বই ভরে যাবে। কিন্তু এ সবের যে ফলাফল পাওয়া যায়, তা খুবই চমৎকার। এ জ্বিহাদের পূর্বে এ রকম ফলাফলের কল্পনাও করা খনো সম্ভব ছিল না। কোন মুসলমান বা আলিমের পক্ষে এ জ্বিহাদের পূর্বে মার্কিনীদের উপর ফিলিস্তিনীরা আগামীতে বিজয় লাভ করবে-এ রকম ধারণা করা কল্পনাতীত ব্যাপার ছিল। বরং তাঁদের অনেকে শুধু এতটুকু ধারণা করত যে, যদি জর্ডান বা সিরিয়ায় কেঁউ ইসলামে ফিরে গিয়ে ফিলিস্তিনের সাহায্যে এগিয়ে আসে, তাহলেই কেবল বিশাল সামরিক শক্তির অধিকারী ইসরাঈলের মুকাবিলা করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হবে।

আফগান জ্বিহাদ পৃথিবীর সকল হিসাব নিকাশকে পালটে দিয়েছে। বরং গর্বাচেভের মন মানসিকতারও আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। গর্বাচেভ এখন বুঝতে পেরেছে যে, যে জাতির ধর্ম নেই, তাদের পক্ষে টিকে থাকা অসম্ভব। তারা শুধু লোহা ও আগুনের নীচে থেকে চেঁচামেচি করতে থাকবে। তাই এখন গর্বাচেভ তাঁর পূর্ব পুরুষ লেনিন ও ষ্টালিন প্রমুখরা যে নিয়ম-ব্যবস্থা গড়েছিল, তা এখন সে নিজের হাতে ধ্বংস করছে। ওরা বলত, ধর্ম জনগণের জন্য আফিমের ন্যায়, ধর্ম জনগণের রক্ত চোষণকারী একটি জোঁক এবং মানুষকে ঘুমন্ত রাখার একটি মাদকদ্রব্য।

এখন গর্বাচেভ দেখছে কম্যুনিজমই জনগণের রক্ত চোষণকারী জোঁক এবং কম্যুনিজমই সোভিয়েত ইউনিয়নের এ দুর্দশা ডেকে এনেছে। ফলে এখন তাঁকে আমেরিকা ও কানাডা থেকে আমদানী করা গমের অর্থ যোগাড় করার জন্য বহির্বিশ্বের কাছে হাত পাততে হচ্ছে।

পূর্ব ইউরোপে আফগান জ্বিহাদের প্রভাব

গর্বাচেভ রাশিয়ার জন্য বার্ষিক আমদানি করা ১৬ মিলিয়ন টন গমের অর্থ যোগাড় করার জন্য সরকারী কিছু জমি বন্ধক দিয়েছে। অথচ রাশিয়ার পক্ষে গম দ্বারা গোটা পাশ্চাত্যকে ডুবিয়ে রাখা সম্ভব ছিল। এখন গর্বাচেভ উপলব্ধি করছে যে, প্রকৃতিকে দীর্ঘ দিন যাবত দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়।কিছু দিন তাঁকে দমিয়ে রাখা গেলেও শেষ পর্যন্ত সেই বিজয়ী। গর্বাচেভ বুঝতে পেরেছে যে, ধর্মীয় যে অনুভূতি মানবাত্মার গভীরে বিস্তৃত , তাঁকে সমাজতান্ত্রিক প্রপাগান্ডা ও নাটক দ্বারা নির্মূল করা সম্ভব নয়। সে এখন বাধ্য হয়ে তাজাকিস্তানে আরবী ভাষায় কুরআন প্রচার ও আরবীতে আযান দেয়ার অনুমতি দিয়েছে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের এক মুসলিম প্রদেশে ইসলামের দাওয়াত পৌছার এগারশত বছর পূর্তি উপলক্ষে এক মাস পূর্বে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে রাবেতা আল-আলামিল ইসলামীর মহাসচিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং রাশিয়া তাঁকে সেখানের মুসলমানদের মাঝে দশ লক্ষ কুরআনের কপি বিতরণ করার অনুমতি দান করে। অথচ ইতোপূর্বে রাশিয়ায় কেঁউ কুরআন শরীফ সংগ্রহ করলে তাকে চার বছর কারাদন্ডে দন্ডিত করা হত।

তিন আল্লাহতে বিশ্বাসী বিকৃত খৃষ্ট ধর্মের ভ্রান্ত নীতি অনুযায়ী রুশরা আল্লাহর আরাধনা করার জন্য গির্জার দরজা সমূহ খুলে দিতে বাধ্য হয়েছে। অনুরূপ মুসলমানদের কিছু কিছু মসজিদের দরজাও খুলে দিতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, তাঁরা খৃষ্টবাদ চর্চার সুযোগ দিয়ে দেয়ায় কিছু মসজিদের দরজা খুলে দেয়া ব্যতীত ষাট মিলিয়ন মুসলমানকে তাঁদের শাসনাধীনে রাখতে সক্ষম হবে না।

এখন গর্বাচেভের মা ও স্ত্রী পর্যন্ত গির্জার আসা যাওয়া করছে। কোথায় আজ সমাজতন্ত্র ? কোথায় আজ মার্কস, লেনীন ও ষ্টালিনের বুলীগুলো। সত্যি-

ۚ فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءً ۖ وَأَمَّا مَا يَنفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ

“অতঃপর ফেনাগুলো আবর্জনা হিসেবে চলে যায়। আর যা মানুষের উপকারী, তা ভূমিতে থেকে যায়।”

فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا ۚ لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ [٣٠:٣٠]

“এটা আল্লাহর সে প্রকৃতি যার উপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন নেই। ওটাই সঠিক ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না ।”[আররূমঃ৩০]।

প্রভুর দিকে ঝুঁকে পড়ার যে স্বভাবের উপর আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন , তা পরিবর্তন করা কখনো সম্ভব না । আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করার কেউ নেই ।

কোথায় ভিয়েতনাম কোথায় আফগানিস্তান?

ভিয়েতনামের যুদ্ধের সাথে আফগানিস্তানের জিহাদকে তুলনা করা মারাত্মক অন্যায়। যখন ইসলামকে আকড়ে ধারণকারী জনগোষ্ঠীর (আফগান) যুদ্ধ বিজয়ের কথা বলা হয়, তখন অনেকেই বলে, এরকমতো ভিয়েতনামেও হয়েছে। এদের জানা উচিত যে, ভিয়েতনামে রাশিয়া তাঁর অস্ত্রসম্ভার ও যুদ্ধ সামগ্রী পাঠিয়ে ঐ অঞ্চলকে অস্ত্রে ডুবিয়ে রেখেছিল। অন্য দিকে সবাই জানে যে, এ পবিত্র আফগান জ্বিহাদ কিভাবে লাঠি ও পাথর দিয়ে তাঁর যাত্রা শুরু করেছিল।

আরো একটি ব্যাপার এখানে লক্ষ্যণীয়, ভিয়তেনামে আমেরিকাকে অস্ত্র নিয়ে পৌছতে সাগর মহাসাগর পাড়ি দিয়ে যেতে হত। কিন্তু রাশিয়াকে তাঁর অস্ত্র কারখানা থেকে অস্ত্র নিয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করার জন্য কেবল হিরতা সেতুটি পার হতে হয়েছে। অন্য দিকে রাশিয়ার যুদ্ধবিমানগুলো তিরমিয ও তাসকন্দ বিমান বন্দর থেকে উড়ে এসে আফগানিস্তানে এসে বোমা মেরে আবার সেখানে ফিরে যেতে পারত।

আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় রহস্য যেটা, তা হচ্ছে, বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য কিছু লোক রয়েছে। সেখানে রয়েছে কংগ্রেস, যার কাছে প্রেসিডেন্টকে জবাবদিহি করতে হয়। কংগ্রেসের কাছে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্টকে যে কোন ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হয়। আর সেখানের জনগণ প্রচার মাধ্যম দ্বারা প্রেসিডেন্টের ব্যাপারে যা ইচ্ছা তা লিখে প্রচার করতে পারে। জবাবদিহিতার আশংকা প্রচার মাধ্যমের বিরোধীতার ফলে মার্কিন সরকার অনেক সময় তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। তাই এ মার্কিন সরকার ও নিরংকুশ একনায়ক দ্বারা পরিচালিত সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। এ সোভিয়েত ইউনিয়ন লোকজনকে এক প্রদেশ থেকে আরেক প্রদেশে যাওয়ার অনুমতি পত্র থেকেও বঞ্চিত করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নে কেঁউ পাসপোর্ট রাখতে পারে না।গর্বাচেভ পূর্ব বার্লিনের লোকদের উপর থেকে যখন বিধিনিষেধ কিছুটা উঠিয়ে নিল, তখন দেখা গেল পূর্ব বার্লিন থেকে হাজার হাজার পরিবার পশ্চিম বার্লিনে চলে যাচ্ছে।

আমি অনেক বার বলেছি যে, যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন তাঁদের জনগণকে বিদেশে যাবার পাসপোর্ট দিত, তাহলে ৫ মিলিয়ন ছাড়া ২৭০ মিলিয়ন জনগণের সকলেই এক মাসের মধ্যে দেশ ছেড়ে চলে যেত। এ সোভিয়েত ইউনিয়নে কম্যুনিস্ট পার্টির লোক ছাড়া বাকী সকল লোক সম্মান ও সম্পদ থেকে বঞ্চিত। রাশিয়ার আফগানিস্তান থেকে বের হওয়ার সাথে আমেরিকার ভিয়েতনাম থেকে বের হওয়ার মধ্যে মিল খোজা একটি বড় অন্যায়। কারণ, রাশিয়া আফগানিস্তান থেকে লাঞ্চিত ও অপদস্ত হয়ে বের হওয়ার সময় তাঁর বাকী সম্মান রক্ষা করার জন্য মুজাহিদদের কাছে একটি স্বাক্ষরযুক্ত কাগজের আবেদন করেছিল, যাতে মানুষকে বলতে পারে যে, আমরা চুক্তির মাধ্যমে চলে এসেছি। কিন্তু মুজাহিদরা তা প্রত্যাখ্যান করে।আর আমেরিকা ভিয়েতনাম থেকে চলে এসেছে সংলাপ ও চুক্তি করে।

জ্বিহাদের বিরুদ্ধে তথ্য সন্ত্রাস

আফগানিস্তানে ইসলামের এ মহান বিজয় যা দ্বারা আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সকল মুসলমানকে সম্মানিত করেছেন, সেটা খেলোয়াড়দের খেলার পুতুলে পরিণত হয়েছে এবং হলুদ সাংবাদিকতা ও মূর্খদের দ্বারা ঘৃণা ও বিকৃতির খপ্পরে পড়েছে । এ জিহাদকে নিয়ে যার যা ইচ্ছা তা বলে বেড়াচ্ছে। জিহাদের প্রতি এটা কোন ধরণের অবিচার ? কোন বিষাক্ত খঞ্জর দিয়ে আমরা নিজেদের অজান্তে নিজেদের উপর আঘাত করছি ? না জেনে না বুঝে আমরা ইতিহাসকে কীভাবে বিকৃত করছি ?

সাংবাদিকরা যাই লিখুক না কেন, এ জ্বিহাদ নিঃসন্দেহে ইতিহাস পরিবর্তনের সূত্র বা পয়েন্ট হিসেবে বাকী থাকবে এবং আল্লাহর পথের যে সব সৈনিকরা মনজিলে মাকসুদে পৌছতে চায়, তাদের কাছে একটি জীবন্ত আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হবে।

إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّأُولِي الْأَبْصَارِ

“নিঃসন্দেহে এতে দৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের জন্য শিক্ষনীয় রয়েছে ।”[আল ইমরানঃ১৩]।

বিংশ শতাব্দীর মু’জিযা

এই প্রথম বারের মত একটি মুসলিম জনগোষ্ঠীর (আফগান) কাছে লাল ফৌজের পরাজয় ও রাশিয়ার লাঞ্চনাকর প্রস্থান ইসলামের পথে অন্ধকার অনুভবকারী লোকদের জন্য কয়েক শতক পর্যন্ত একটি আলক স্তম্ভ হিসেবে বাকী থাকবে। আফগান কম্যুনিস্টদের সাথে যুদ্ধে মুজাহিদরা পেরে উঠুক বা না উঠুক, রাশিয়ার আফগানিস্তান থেকে লাঞ্চনাকর প্রত্যাবর্তন অবশ্যই বিগত দু যুগের সবচেয়ে বড় ঘটনা ও বিংশ শতাব্দীর মু’জিযা। এ জ্বিহাদ ও তাঁর বিজয় নিয়ে মুসলিম উম্মাহর সকল সদস্য গৌরব বোধ করবে। আমি নিশ্চিত যে, এ জ্বিহাদ আফগানিস্তানে বাকী কম্যুনিস্টদের এ ক্ষুদ্র দলের উপরও বিজয় লাভ করবে। পরাশক্তি নামের যে হিংস্র পশুকে মানুষ ভয় করত, সে ভয়ের প্রাচীর আফগান জ্বিহাদ চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে। আফগান জ্বিহাদ প্রত্যেক মুসলমানকে অনিশ্চয়তা ও হতাশার অন্ধকার থেকে মুক্ত করে এ আশার আলোর দিকে নিয়ে এসেছে যে, এই উম্মাহ যখনই তাঁর দ্বীনকে আকড়ে ধরবে, তখনই বিজয় তাঁর পদচুম্বন করবে।

এ পর্যন্ত আফগানিস্তানের এ ঘটনা খৃস্টীয় শেষের তিন শতকের (১৮, ১৯, ২০)ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন বলে বিবেচিত হচ্ছে। এ ঘটনা এখন বিশ্ব কাপানো এক বিশাল বিস্ফোরণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না। এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী অজ্ঞতায় রিয়েছে মুসলমানরা। পশ্চিমারা কিন্তু ঠিকই এ ব্যাপারটা যথাযথ উপলদ্ধি করেছে।

তাই রাশিয়া চলে যাওয়ার পর থেকে তাঁরা তাঁদের মিডিয়াকে দু’টি কাজ সম্পাদনে নিয়োজিত রেখেছে। প্রথম কাজ মুসলমানদের মাঝে এ জ্বিহাদের যে প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে তাঁকে নষ্ট করা, জিহাদের চিত্র বিকৃত করা, জিহাদের নেতৃবৃন্দ ও ব্যক্তিবর্গের চরিত্র হনন ও তাঁদের প্রভাবকে খাটো করা। যাতে পৃথিবীতে এ দ্বীনকে বিজয়ী করতে যারা ইচ্ছুক, তাদের চলার পথে এ জ্বিহাদ উজ্জ্বল আদর্শ হিসেবে বাকী না থাকে। রাশিয়া চলে যাওয়ার পর থেকে আফগানদের মাঝে বর্ণ, গোত্র ও আঞ্চলিকতার বিভেদ উসকে দেয়া ও জ্বিহাদের চিত্র বিকৃতকরণ ছাড়া পাশ্চাত্য মিডিয়ার আর কোন কাজ নেই।

বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি

তাখারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মিডিয়া তিনমাস পর্যন্ত ষড়যন্ত্রের বিষবাষ্প ছড়িয়ে আসছে। আজ রবিউল আউয়ালের সাত তারিখ। তাখারের ঘটনাটি ঘটেছে যিলহজের সাত তারিখ। এ দুর্ঘটনা যাকে তাঁরা ‘ তাখার হত্যাকান্ড ‘ নাম দিয়েছে তা ছাড়া তিন মাস ধরে ঢাক ঢোল পিটিয়ে প্রচার করার অন্য কোন সংবাদ তাঁদের কাছে আর নেই। ইসলামের ইতিহাসের এ উজ্জ্বল চিত্র (আফগান জ্বিহাদ) যাকে ধ্বংস করার জন্য পশ্চিমারা আগুন জ্বালাচ্ছে, দুঃখের বিষয় তাঁকে আরো তীব্র করার জন্য অনেক মুসলমান যুবক এমনকি আফগান মুজাহিদদের অনেক অপরিণামদর্শী যুবকও ফুঁৎকার দিচ্ছে।

এখন সকলের জিজ্ঞেসের বিষয় হয়ে গেছে তাখারের হত্যাকান্ড, রব্বানী হিকমতিয়ারের বিরোধ ও আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ। অনেকে এর চেয়ে আরো নীচে গিয়ে জিজ্ঞাসা করছে, কোন কোন মুজাহিদের দুর্নাম সম্বলিত এ ক্যাসেট ও প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে সেগুলোর ব্যাপারে জানতে চাই। আমি বললাম, যুদ্ধ ও গৌরব ভূমি (আফগানিস্তান) থেকে আসার সাথে সাথে তোমরা আমার কাছে মুজাহিদদের বিজয় ও অগ্রগতির কথা জিজ্ঞেস করার পরিবর্তে শুধু ইখতিলাফের কথাই জিজ্ঞেস করছ ? বিভিন্ন খানে তোমাদের কাছে যে ক্যাসেট পৌঁছেছে, তা আমার কাছে অনেক দিন যাবত পড়ে আছে। আমি এ ক্যাসেটের একটি অক্ষরও শুনিনি। এ মুহূর্তে এ সবের দিকে তাকানোর সময় আমার কাছে নেই। এখন যে ব্যাপারটি আমার হৃদয়, মন ও অনুভূতিকে গ্রাস করে নিয়েছে, সেটি হচ্ছে কীভাবে আমরা কাবুলের কম্যুনিস্ট প্রশাসনের কবর রচনা করব ও তাঁর শিকড়কে সম্পূর্ণ রূপে উপড়ে ফেলব?

অনুরূপ এ প্রচার পত্রও তোমাদের হাতে পৌছার পূর্ব থেকে আমার ব্যাগে পড়ে আছে। আমি এসব পড়িনি। কারণ, এসব বোকামিপূর্ণ কথাবার্তা পড়ার সময় আমার হাতে নেই। এসবের প্রতি তাকানো মানে ইসলামকে বিজয়ী করার এ জ্বিহাদ থেকে দূরে সরে যাওয়া।

গুযব সৃষ্টির অপচেষ্টা

তাখারে পাঁচজন কমান্ডার নিহত হয়েছে। আমি সাংবাদিকদের জিজ্ঞেস করতে চাই, তোমরা পাঁচজনকে কীভাবে আটত্রিশজন বানিয়ে ফেললে। নিহত হয়েছে পাঁচজন। আর তোমরা প্রচার করছ মাসউদের আটত্রিশজন কমান্ডার নিহত হয়েছে। আর পাঁচজনও যেখানে নিহত হয়নি, সেখানে তোমরা বলছ মাসউদ সাইয়্যেদ জামালের তিনশ সৈন্যকে হত্যা করেছে। এটা আমি শপথ করে বলতে পারি এবং এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। অতএব, বিশ্বের মুসলমানদের নিকট তোমরা জ্বিহাদের চিত্র যে বিকৃত করেছ, তা কি আবার সঠিক রূপে তুলে ধরতে পারবে ?

আমি তোমাদেরকে তিরস্কার করছি না; অপারগ মনে করছি। কারণ, তোমরা ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস ও সংবাদ সংস্থা রয়টার্স প্রভৃতির কাছে যিম্মি। কারণ, তোমাদের নিজস্ব কোন আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম নেই। দশ দিন পূর্বে আমি সিন্ধী টাইমস পত্রিকায় দেখলাম যে, ‘নাসিরাবাদের শরণার্থী ক্যাম্পের আট হাজার মহিলা আরব কামুকদের কুদৃষ্টির শিকার।’ এরা  জ্বিহাদ করতে আগমণ করা আরবদেরকে এভাবেই বিশ্বের সামনে তুলে ধরছে এবং এভাবেই তাঁরা আফগান জ্বিহাদের উপর কলঙ্ক লেপন করছে। আর আমরা মুসলমানরা যেন নির্বোধ তোতাপাখি।

অপবাদ ও মিথ্যা দ্বারা আচ্ছাদিত করে রাখা হয়েছে তাঁকে

আক্ষেপ সে তোতার জন্য যার বুদ্ধি তাঁর উভয় কানে।

আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ, রক্তপাত আফগান মুজাহিদদের দুর্নাম-এ তিনটি বিষয়ই এখন ইয়াহুদী নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও পত্র পত্রিকার মূল আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এর একমাত্র লক্ষ্য দুনিয়ায় যা কিছু ভাল, সুন্দর ও শাশ্বত দ্বীন ‘ইসলাম’ নির্দেশিত বিষয় রয়েছে, তাকে ধ্বংস করে মানবতাকে সম্পূর্ণ রূপে পশুত্বে নিয়ে যাওয়া। আমি আফগান জিহাদের সত্যতার ব্যাপারে সন্দিহান লোকদের বললাম, আপনারা কেন আফগান জিহাদে সহযোগিতা করছেন না?

তারা বলল, ‘আমরা কি হেকমতিয়ারের বাহিনী দ্বারা রব্বানীর দলকে আর রব্বানীর দল দ্বারা হেকমতিয়ারের দলকে হত্যা করার জন্য আফগান জিহাদে সহযোগিতা করব ? বা কম্যুনিস্টদের কাছে দেশ বিক্রি করে দেওয়ার জন্য মাসউদকে সাহায্য করব ? সে তো ফ্রান্সের দালাল। ‘ এ ছাড়া তারা মুজাহিদদের ব্যাপারে আরও বিভিন্ন আপত্তিকর কথা বলেছে। এদের কথা শোনে আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ ! এ ছাগলছানারা হাতীকে ধাক্কা দিচ্ছে ? তোমরা কীভাবে এদের দুর্নাম করছে, যাদের বীরত্বের সামনে গোটা পৃথিবী আন্দোলিত হচ্ছে ? তাদের ন্যায় ধৈর্য্য ও ত্যাগ কারা স্বীকার করেছে ?

তোমরা আমার কাছে তাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে আমি বলব, তাদের সমালোচনা করার যোগ্য আমি এখনও হইনি। দুর্নামের আগুনে যাদেরকে এখন বেশী জ্বালানো হচ্ছে, তারা হচ্ছে মাসউদ, হেকমতিয়ার, রব্বানী ও সাইয়াফ। আমি তাদের বললাম, তোমরা আমাকে মাসউদের সাথে তুলনা করবে-এত বড় আমি এখনও হইনি। মাসউদের সমালোচনা করা আমার জন্য লজ্জার ব্যাপার বরং আমি আমার অন্তরে যা আছে, তা বলতে চাই যে, যখন মাসউদ বা হেকমতিয়ার বা জালালুদ্দিন হক্কানী বা শায়খ সাইয়াফ আমাকে তাদের পাশে বসার সুযোগ দেয়, তখন এর জন্য আমি গর্ববোধ করি। কারণ, তারা ইতিহাস রচনা করেছে রক্ত দিয়ে। আর আমি তাদের রক্ত মাখা ইতিহাস কালি দিয়ে লিখছি মাত্র। হয়তো আমি ভাল ভাবে বক্তব্য প্রদান ও লিখতে জানি। কিন্তু তারা যে কাজ, যে ধৈর্য্য ও যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে , তা আমার পক্ষে করা তো দূরের কথা, কল্পনাও করা কঠিন। এটাই আমার আন্তরিক উপলব্ধি। কিন্তু যারা এদের দুর্নাম করে চলেছে, তারা ইসলামের ইতিহাসকেই ধ্বংস করছে। যদি এদের একেকজনকে একেকটি দোষ দিয়ে কলুষিত করা হয় এবং  জিহাদ সায়্যিদ জামাল ও সায়্যিদ মীর্জার কতিপয় ঘটনায় পরিণত হয়, তাহলে মানুষের জন্য অনুসরনীয় আদর্শ ও পথ নির্দেশকারী আলোকস্তম্ভ বলতে তো আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না ।

আমরা নিজেদের অজান্তে নিজেদেরকেই আঘাত করে চলেছি এবং নিজেদের হাতে নিজেদের ঘর ধ্বংস করছি । আমরা এখন উম্মাহর কাছে এ জিহাদকে বিকৃতরূপে তুলে ধরে তার ফলাফলকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা গ্রহণকারী পশ্চিমাদের ফাঁদে পা দিতে যাচ্ছি। এ দ্বারা তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে, পৃথিবীর অন্য কোন অঞ্চলের জনগণ আমেরিকা কিংবা ব্রিটেনের মুখোমুখি হওয়ার সাহস না করুক ।

فَاعْتَبِرُوا يَا أُولِي الْأَبْصَارِ

“অতএব, হে চক্ষুমান লোকেরা তোমরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর।” [সূরা আলহাশরঃ ২]।

আফগান জিহাদ একটি জীবন্ত দৃষ্টান্ত , একটি পথ নির্দেশক অভিজ্ঞতা। হ্যাঁ ! চলার পথের মাঝখানে অনেক সময় বিকৃতি এসে প্রভাবিত করে। তবে যে পথ চলতে চায়, বা উপদেশ গ্রহণ করতে চায়, তার জন্য তা সব সময় উজ্জ্বল ও চমৎকার শিক্ষার বিষয় হিসেবে বাকী থাকে। মানুষ এখন আফগান জিহাদের সমালোচনা করা শুরু করেছে। যে আফগান জিহাদ সারা পৃথিবীর মুসলমানকে একত্রিত করেছে, সে আফগান জিহাদের প্রতি মানুষ বিরক্তি প্রকাশ করছে এবং তার নেতৃত্বের দুর্নাম করতে শান্তিবোধ  করছে। এটা পশ্চিমাদের তথ্য বিকৃতি ও পরিকল্পিতভাবে আফগান জিহাদের ফলাফল বিনাশ করার ষড়যন্ত্রের ফলেই হচ্ছে। পাশ্চাত্যের প্রচার মাধ্যমগুলো এখন শুধু একটি বৃত্তকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। আর তা হচ্ছে আফগান জিহাদকে বিকৃত করে উপস্থাপন ও মুজাহিদ নেতৃবৃন্দের গায়ে কলঙ্ক লেপন। এসব করে তারা, যে লক্ষ্য অর্জন করতে চাচ্ছে, তা হল মুসলমানদের অন্তর থেকে এ জিহাদের প্রভাব মুছে ফেলা এবং বছরের পর বছর ধরে এ জিহাদ তাদের অন্তরের গভীরে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলের যে দৃঢ় মানসিকতা তৈরী করেছে তাকে উপরে ফেলা। পাশ্চাত্য মিডিয়ার উদ্দেশ্যমূলক ভাবে বিকৃত তথ্য উপস্থাপনের দ্বিতীয় আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে, মুসলিম উম্মাহকে আফগানিস্তানের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা থেকে  দূরে রাখা। যাতে তারাই আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালনের সুযোগ পায়। এ দুটি লক্ষ্য সাধনের পেছনেই আজ বিশ্ব প্রচার মাধ্যম কাজ করে যাচ্ছে। তারা চাচ্ছে আফগানিস্তানের বিষয়টা একটি অভ্যন্তরীন বিষয় হিসেবেই থাকুক। তারা চায় না আফগানিস্তানের বিষয়টা একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিষয় হিসেবে মর্যাদা পাক। যাতে তারা একে ইচ্ছেমত কামড়ে ছিঁড়ে নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে। আর এর জন্য দুঃখবোধ করার কোন লোকও থাকবে না। অতএব, সাবধান ! এ মহা ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সবাই সাবধান হোন । কেউ যেন ভুলেও এ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না রাখেন, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।