পাশ্চাত্য ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র (১১ তম পর্ব) – শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম (রহঃ)

সমস্যা না জানার নয় না মানার

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেছেন-

الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمْ

“আমি যাদেরকে কিতাব প্রদান করেছি তারা তাকে (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )নিজেদের সন্তানের মতই চিনে।”[বাকারাহঃ১৪৬] ।

পশ্চিমারা কখনো ইসলাম নিয়ে অজ্ঞতায় ছিল না, বর্তমানেও নেই। তারা ইসলামকে ভালভাবে চেনে এবং কীভাবে তাকে ধরাশায়ী করতে হয়, তাও তারা ভাল জানে। তারা মুহাম্মদী ইসলামকে বস্তুবাদী ইসলামে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে মুসলমানকে একটি পরাধীন ও ভীরু জাতিতে পরিণত করার জন্য সকল ষড়যন্ত্র ও কৌশল নিরলস ভাবে প্রয়োগ করে যাচ্ছে।

মুসলমনারা তাদের চেয়ে উন্নত কৌশল ও দ্রুত গতিতে কাজ চালিয়ে তাদেরকে নিজেদের অধীন ও ভীরু জনগোষ্ঠীতে পরিণত করাতো দূরের কথা, কাফেরদের ষড়যন্ত্রের স্বরূপটাও তারা উপলব্ধি করতে সক্ষম হচ্ছে না । পশ্চিমারা মুসলিম উম্মাহর মন মানস থেকে জিহাদের চিত্র নির্মূল করার জন্য লাগাতার তিন শতাব্দী পর্যন্ত কাজ করেছে। ফলে এখন জিহাদ বলতে সর্বোচ্চ যা মানুষ বুঝে, তা হচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকের সামনে সাহস করে কোন কথা বলা বা কোন ওয়ায সমাবেশের আয়োজন করা।

যে সশস্ত্র লড়াইকে ইসলাম জিহাদ বলে অভিহিত করেছে, তা আজ অধিকাংশের ধারণায়ই আসে না । তারা সশস্ত্র জিহাদ যে করা সম্ভবতার কল্পনাও করে না। তাই তারা বলছে, তোমার অধিকারের কথা জাতিসংঘকে জানাও, নিরাপত্তা পরিষদকে বল এবং তোমার দাওয়াত পৌঁছানোর জন্য যুক্তি, কৌশল  ও বুদ্ধি কাজে লাগাও। অস্ত্রধারণ করে জ্ঞান- বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষের এ যুগে ইসলামের প্রচার-প্রচার কল্পনাতীত ব্যাপার।

জ্ঞান ও তথ্য প্রকাশের নামে সাংবাদিকরা এখন আফগান জিহাদের চিত্র বিক্রিতকরণে ব্যস্ত। আমি সর্বপ্রথম আরব মুসলিম, যে আফগান জিহাদের ব্যাপারে সঠিক ও নিশ্চিত ধারণা লাভ করেছি। তিন মাস ধরে যে সাংবাদিকরা আফগান জিহাদের চিত্র বিকৃত করছে, আমার চেয়ে বেশী কথা বলছে, তারা সরেজমিনে এসে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে গেলেও তাদের পক্ষে আফগান জিহাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার আমাদের চেয়ে বেশী জানা সম্ভব হবে না। তাই মুসলমানদের কাছে আমরা আবেদন করছি এ রকম কোন ঘটনা ঘটলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-

وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِّنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا     [٤:٨٣]

“তাদের নিকট যদি আনন্দ বা দুঃখজনক কোন বিষয় এসে উপস্থিত হয়, তখন তারা তা প্রচার করে বেড়ায়। তবে যদি তারা তা রাসূল ও তাদের কর্তাব্যক্তিদের কাছে পেশ করত, তাহলে তাদের মধ্যকার যারা বিষয়টি জানতে আগ্রহী, তারা বিষয়টির বাস্তবতা জানতে পারত। ”[নিসাঃ ৮৩]।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا

“হে মুমিনগণ, তোমাদের নিকট যদি কোন ফাসিক কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা যাচাই কর। ”[হুজুরাতঃ৬ ]।

এটা ব্যক্তিগত ব্যাপারে বলা হয়েছে। অতএব, যদি ব্যাপারটা গোটা উম্মাহ সংশ্লিষ্ট হয়, তাহলে সে ব্যাপারে মন্তব্য করতে যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন, তা সহজে অনুমেয়। যেখানে আপনারা দশ দিরহাম বা দশ রিয়াল সংশ্লিষ্ট ব্যাপার পর্যন্ত অনুসন্ধান করতে ত্রুটি করেন না, সেখানে যে ব্যাপারটা সমগ্র মুসলিম উম্মাহর নাড়ির সাথে সম্পর্কিত, সে ব্যাপারে কোন প্রকার অনুসন্ধান না করেই যেমন তেমন মন্তব্য করে চলছেন।

পশ্চিমারা এ জিহাদের প্রভাব ও গুরুত্ব টের পেয়েছে। কয়েক বছর ধরে আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারে কিছু বই ছাড়া হয়েছে। ঐগুলোতে লেখা আছে যে, আফগান জিহাদ শিগগিরই সোভিয়েত ইউনিয়নকে পদানত করে সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ইসলামী অঞ্চলগুলোর সাহায্যে ইউরোপে প্রবেশ করবে। অতঃপত ইউরোপ উসমানী বংশকে যেমন পাঁচশত বছর জিযয়া দিয়েছিল, তদ্রুপ আবারও তাকে মুসলমানদের হাতে জিযয়া তুলে দিতে হবে। তখন আমেরিকা ইসলামের ব্যাপারে ছাড় দিতে বাধ্য হবে। এ ছাড় আফগানিস্তানের মাটিতে নয়, ইউরোপের গভীরে। পাশ্চাত্যের গবেষকরা তাদের জনগণকে এ কথাগুলো বুঝায়। নিক্সনও সেদিন এ কথা বলেছে। সে বলেছে, এখন রাশিয়ার সাথে আমেরিকার বিরোধ মিটিয়ে ফেলা দরকার এবং যে সশস্ত্র ইসলামী অভিযান দিন দিন এগিয়ে চলছে তা বন্ধ করা দরকার।

পৃথিবী আফগান জিহাদের গুরুত্ব বুঝতে শুরু করেছে

আফগানিস্তানের জিহাদের দৈনন্দিন ঘটনাবলী বিশ্লেষণ ও আফগানিস্তান নিয়ে গবেষণা করার জন্য মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়  সমূহে কিছু পৃথক বিভাগ ও একাডেমী রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে প্রতি মাসে বা সপ্তাহে মার্কিন গবেষকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে আফগানিস্তান নিয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করার জন্য বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করা হয়। আমরা মুসলমানরা যেন এতীম বাচ্চা, যারা পিতার রেখে যাওয়া ধনকে নিয়ে রাস্তায় খেলা করছে আর বিভিন্ন স্থান থেকে দুর্বৃত্তরা এসে ওই ধনকে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ভাইয়েরা ! এ মহান বিষয়টার ব্যাপারে সাবধান থাকবেন। রক্ত দিয়ে ইতিহাস তৈরীর এ বিষয়টাকে জ্বেলে পুড়ে নষ্ট করবেন না । ভাল খবর ব্যতীত অন্য কোন বিষয় মানুষের কাছে প্রচার করবেন না । অনেক সময় কম বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের কাছে সঠিক খবর বলা ঠিক নয়। কারণ, সে ওটার গভীরতা নিয়ে চিন্তা না করে ওই বিষয়ে তার সুধারণাকে নষ্ট করে ফেলতে পারে।

আর যদি সবকিছু সুস্পষ্ট ভাবে বলে বেড়ানো তোমার কাছে যুক্তিসম্পন্ন মনে হয়, তাহলে তুমি তোমার মা বাপের দোষ ত্রুটি ও ঝগড়া ঝাটির ব্যাপার বিস্তারিত জানা সত্ত্বেও কেন তা মানুষের সামনে প্রকাশ কর না ? নাকি তোমার মা বাপ তোমার কাছে এ মহান জিহাদের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যা দ্বারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা সারা পৃথিবীর সকল মুসলমানকে সম্মানিত করেছেন ? বাস্তবতা জনসম্মুখে স্পষ্ট করে তুলে ধরাতে যদি তুমি বিশ্বাসী হও, তাহলে তুমি ‘জনসম্মুখে বাস্তবতা তুলে ধরার নামে’ তোমার দীর্ঘ মাদরাসা জীবন ও আন্দোলনের জীবনের দোষ ত্রুটিগুলো কেন মানুষের কাছে প্রচার কর না ? নাকি ওইসব তোমার কাছে গোটা মুসলিম মর্যাদাদানকারী এ মহান জিহাদের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। শুনুন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ     [٩:١١٩]

“হে মুমিনগণ ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও ”[তাওবাহঃ১১৯ ]।

وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِينَ     [٨٣:١]

الَّذِينَ إِذَا اكْتَالُوا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُونَ     [٨٣:٢]

وَإِذَا كَالُوهُمْ أَو وَّزَنُوهُمْ يُخْسِرُونَ     [٨٣:٣]

“ওজনে কম প্রদানকারীর জন্য রয়েছে দুর্যোগ, যারা মানুষের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পরিপূর্ণ নেয়। আর যখন তারা মানুষকে মেপে বা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। ”[আলমুতাফফেফীনঃ ১-৩ ]।

তোমাদের চিন্তা চেতনা, দাওয়াত, মাতৃভূমি ও গোত্রের প্রতি তোমাদের টান রয়েছে। আর আফগান জিহাদ ও তোমাদের দাওয়াতের সাথে অমিল যা কিছু রয়েছে, তা ইসলাম সম্মত হলেও সেগুলোর প্রতি তোমাদের কোন টান নেই। তাই এ ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে গবেষণা করে বাস্তবতাকে জনসমক্ষে তোমাদের তূলে ধরতেই হবে। আর নিজেদের বেলায় হলে এটার প্রয়োজন নেই। তাই না ? আল্লাহ তোমাদের এ দ্বিমুখীতাকে খণ্ডন করে বলছেন-

وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَىٰ أَلَّا تَعْدِلُوا ۚ اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ

“কোন সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা যেন তোমাদেরকে তাদের প্রতি অন্যায় করতে প্ররোচিত না করে ।তোমরা ন্যায়কে আঁকড়ে ধর। এটাই তাকওয়ার সর্বাধিক নিকটবর্তী।  ”[আল মায়েদাঃ ৮ ]।

দ্বীনদ্রোহী আন্দোলন

মুসলিম বিশ্বে ইসলাম বিরোধী তৎপরতা ও আন্দোলন কীভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, আজ সে ব্যাপারেই আমি আলোচনা করব। ইসলাম বিরোধী এসব আন্দোলনের জন্ম মূলত ময়দানে ইসলামের অনুপস্থিতির সুযোগেই হয়েছে। পশ্চিমা প্রচার মাধ্যমের আধিপত্যের সামনে মুসলমানদের চিন্তার জগতে শূন্যতার সৃষ্টি হয়। ক্রুসেডের অভিজ্ঞতা থেকে ইউরোপ বুঝতে সক্ষম হল যে, যুদ্ধের মাধ্যমে এ উম্মাহকে বশে আনা সম্ভব নয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহু আঁকবারের ধ্বনি তাদেরকে আন্দোলিত করবে, ঈমান যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের অন্তর্জগতে আসন গেড়ে বসবে, ততক্ষন পর্যন্ত তাদেরকে কাবু করা সম্ভব পর নয়। মনসূরার দারে লুকমানে অবস্থান কালে ক্রুসেডের নেতৃত্বদানকারী ফরাসী সম্রাট নবম লুইস বিষয়টা নিয়ে খুব চিন্তা করল।

বলল, ইউরোপের অত্যাধুনিক অস্ত্রের সামনে কোন বস্তুটা এ নিরস্ত্র জনগোষ্ঠীকে মাথা তূলে দাঁড়াতে প্ররোচিত করে ? বিপুল অস্ত্রের অধিকারী খৃষ্টবাদের সৈন্যদেরকে হাল্কা অস্ত্রধারী এ লোকেরা কীভাবে পরাজিত করে ছাড়ে ? শেষ পর্যায়ে তার শয়তান এ ব্যাপারে তাকে সঠিক সিদ্ধান্ত দিল যে, এ উম্মাহর শক্তির উৎস তাদের দ্বীন ‘ইসলাম ‘।

অতএব, যদি এ ভূমি থেকে এ দ্বীনের মূলোৎপাটন করা যায় এবং মানুষের সাথে তার যে নাড়ির সম্পর্ক রয়েছে তাকে যদি কেটে দেয়া যায়, তাহলে এ অঞ্চলে খৃষ্টবাদের শক্তভাবে পা ফেলা কোন ব্যাপার নয়। এ অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করার জন্য ইউরোপ আরেকবার শক্তি ব্যবহার করছিল। তখন নেপলিয়ানের সৈন্যরা আলআযহারে কদম রেখেছিল। কিন্তু ‘আল্লাহু আকবার ‘ ধ্বনি নেপোলিয়ান ও সৈন্যদের অন্তরকে প্রকম্পিত করে তুলেছিল এবং সে বুঝতে পারল যে, আগ্রাসীদের রুখে দাঁড়ানোর জন্য ইসলামী শিক্ষার উর্বর ঘাটি আলআযহারই এ জাতিকে আন্দোলিত করেছে। তাই ইউরোপ এ যুদ্ধ স্থাগিত রেখে অন্য এক যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করল। এ যুদ্ধ সশস্ত্র কোন আগ্রাসন নয়, এটা সাংস্কৃতিক ও চৈন্তিক আগ্রাসন। এ আগ্রাসন সৈন্য, ট্যাংক ও যুদ্ধ বিমানের আগ্রাসনের চেয়ে লক্ষ্যার্জনে আরও অধিক কার্যকর এবং তার ফলাফল আরও দীর্ঘমেয়াদী । ইউরোপ বলল, এ যুদ্ধে ইসলামের অনুসারীদের সাথে পেরে উঠা সহজ হবে না ।

যতক্ষণ না এই  সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মুসলমানদের মধ্য থেকে এমন লোকদের  দ্বারা পরিচালিত হবে, যারা হবে ধর্মীয় অনুশাসন পালনের দিক দিয়ে তাদের সগোত্রীয় এবং তাদের ভাষায় কথা বলবে ও তাদের মাঝেই বসবাস করবে। এ ক্ষেত্রে সাইয়েদ কুতুব রহিমাহুতুল্লাহ- এর একটি কথা আমার মনে পড়ছে। এক লোক এসে তাকে ‘জালা ‘চুক্তির সুসংবাদ শোনাল। তখন তিনি বললেন, ‘লাল চামড়ার ইংরেজরা তো চলে গেছে। এখন চাচ্ছি গুদুম বর্ণের ইংরেজরা চলে যাক। ‘এদের চাল-চলন সম্পূর্ণ ইউরোপের পরিকল্পনা মত। এ আগ্রাসনের নেপথ্যে যারা ভূমিকা পালন করে, তাদের অধিকাংশই ইয়াহুদী। তাদের বিভিন্ন নথিপত্রে এ বিষয়ের অনেকটা উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া তাদের লেখা ও বক্তব্যও প্রমাণ করে যে, এর পিছনে ইয়াহুদীরাই খুব সক্রিয়। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বিস্তারকারী আন্দোলনগুলোর মধ্যে রয়েছে, কম্যুনিজম, জাতীয়তাবাদ ও ফ্রীম্যাসনবাদ।এ ছাড়া এদের সৃষ্ট ইসলাম বহির্ভূত আরো কতিপয় আন্দোলন রয়েছে। যেমন বাহাঈবাদ, কাদিয়ানীবাদ, নুসাইরিবাদ ও দারুয। এসব দলগুলো ইসলামের নামে আত্মপ্রকাশ করেছে। কিন্তু  বাস্তবে এগুলো হচ্ছে ইসলামের লেবেলে ইউরোপীয় পণ্য। এরা কাফির। এদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, এদের যবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়া, এদের সালামের উত্তর দেয়া ও মুসলমানদের কবরস্থানে এদেরকে দাফন করা সম্পূর্ণ হারাম। এসব আন্দোলন নিয়ে যারা গভীর ভাবে চিন্তা করবে, তারা অবশ্যই উপলব্ধি করতে পারবে যে, ইয়াহুদীদের হাত কত লম্বা এবং এটাও বুঝতে সক্ষম হবে যে, এসব হল বাস্তবতার মুখ দর্শনকারী বিকৃত তাওরাত ও তালমূদের বাণী সম্ভার। এসব বাস্তবায়িত হয়েছে ইসলামী নামে নাম ধারণকারী এ উম্মাহর সন্তানদের মাধ্যমেই । মুহাম্মদ, উমর, উসমান, আহমদ ও আলীরা ইসলাম নির্মূলে এমন ভূমিকা পালন করেছে, যার সামনে ক্রুসেড এবং খৃষ্টবাদ ও ইয়াহুদীবাদের সৈন্যবাদের ইসলাম বিরোধী সশস্ত্র আগ্রাসন কোন গুরুত্বই রাখে না।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কোন মহান হেকমতের কারণে কাফেরদের বন্ধু রূপে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন, তা আমি পরিপূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে পেরেছি। দীর্ঘক্ষণ আমি আল্লাহর এ কথাগুলো নিয়ে ভাবলাম-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ

“ওহে ঈমানদারেরা ! তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। ”[মুমতাহিনাঃ১ ]।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ۘ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗ إِنَّ  [٥:٥١]اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

“হে ঈমানদারেরা ! তোমরা ইয়াহুদী ও খৃস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের যে তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ যালিমদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না । ”[আলমায়েদাঃ৫১ ]।

এ আয়াতের দু’আয়াত পর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ [٥:٥٤]

“হে মুমিনগণ ! তোমাদের যে স্বীয় দ্বীন পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তার পরিবর্তে এমন এক সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারাও তাকে ভালবাসবে। তারা মুমিনদের প্রতি হবে সহানুভূতিশীল ও কাফিরদের প্রতি হবে কঠোর। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং এ ক্ষেত্রে তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে কোন পরোয়া করবে না।  ”[মায়েদাঃ৫৪ ]।

আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করাকে ইরতিদাদ বলে উল্লেখ করেছেন। এখানেই এসে মানুষের পক্ষে মুমিন ও ইসলামের শত্রুদের মধ্যকার অনুভূতি ও চিন্তাগত পার্থক্যের বিষয়টা পরিপূর্ণরূপে বুঝা সম্ভব। আর সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথাটি বুঝতেও সক্ষম হবে-

“কোন ব্যাপারে আহলে কিতাবদের কাছে জানতে চাইবে না। কারণ, তারা তোমাদেরকে হিদায়াত করতে পারবে না। তারা নিজেরাই পথ ভ্রষ্ট। আল্লাহর কসম ! যদি মুসা আলাইহিসসালামও তোমাদের মাঝে উপস্থিত থাকত, তাহলে আমার অনুসরণ ছাড়া তার জন্য অন্য কিছু করা জায়েয হত না। ”

ভ্রষ্ট মতবাদসমূহ

বর্তমানে দু’টি বড় মতবাদ এ উম্মাহর একটি অংশকে পথচ্যুত করছে। এ মতবাদ দু’টি হচ্ছে সমাজবাদ ও জাতীয়তাবাদ । তৃতীয় আরেকটি মতবাদ যেটা এ উম্মাহর কর্তাব্যক্তিদের মাধ্যমে এ উম্মাহর মেরুদণ্ডকে ভেঙ্গে দিচ্ছে, সেটা হচ্ছে ইয়াহুদীবাদ নিয়ন্ত্রিত ফ্রীম্যাসনবাদ।

আমি আগেও বলেছি কম্যুনিজম মতবাদটি তালমুদী চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। পরমত বিদ্বেষী ইয়াহুদীরা যারা বাবেল শহরে বিতাড়িত  হয়েছিল, তারা এ তালমূদের প্রবর্তক। খৃষ্টানদের প্রথম ও দ্বিতীয় শতকে এ তালমুদী চিন্তাধারা পরিপূর্ণতা লাভ করে। ইয়াহুদীদের সম্পর্কে কুরআন বলছে-

وَلَتَجِدَنَّهُمْ أَحْرَصَ النَّاسِ عَلَىٰ حَيَاةٍ وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا ۚ يَوَدُّ أَحَدُهُمْ لَوْ يُعَمَّرُ أَلْفَ سَنَةٍ

“তুমি তাদেরকে (ইয়াহুদীরা) জীবনের সবচেয়ে বেশী লোভী দেখতে পাবে। অনুরূপ মুশরিকদেরকেও। তাদের কেউ কেউ এক হাজার বছর বাঁচতে চায়। ” [বাকারাঃ৯৬]।

وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ اللَّهَ قَدْ بَعَثَ لَكُمْ طَالُوتَ مَلِكًا ۚ قَالُوا أَنَّىٰ يَكُونُ لَهُ الْمُلْكُ عَلَيْنَا وَنَحْنُ أَحَقُّ بِالْمُلْكِ مِنْهُ وَلَمْ يُؤْتَ سَعَةً مِّنَ الْمَالِ ۚ

“তাদের নবী তাদেরকে বললেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য তালূতকে শাসক হিসেবে প্রেরণ করেছেন। তারা বলল, তিনি কীভাবে আমাদের শাসক হবেন ? আমরাতো শাসনভার পাওয়ার জন্য তার চেয়ে অধিক যোগ্য। আর তিনি তো আর্থিক ভাবেও সচ্ছল নন। ” [বাকারাহঃ ২৪৭] ।

সম্পদ হচ্ছে ইয়াহুদীদের গো বাছুর, তাদের স্বর্ণ ও তাদের সে প্রভু যাকে তারা পূজা করেছে। তাদের অন্তরে গো বাছুরের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছিল। আর কম্যুনিজমের ভিত্তি দাঁড় করা হয়েছে সম্পদ প্রীতির উপর। ফরওয়েডের চিন্তাধারাও তাওরাতের দর্শন প্রসূত। এটা সে বিকৃত তাওরাত , যা আল্লাহর নবী আলাইহিমুসসালামগণের প্রতি যিনার অপবাদ দিয়েছে। হযরত লূত , দাউদ ও লাবী বিন ইয়াকুব প্রমুখের প্রতি তারা যিনার অপবাদ ছড়িয়েছে। এ বিষাক্ত ইয়াহুদী চিন্তাধারা ফরওয়েডের মাধ্যমে জ্ঞানের জগতে মানবিক চিন্তাধারা নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

কম্যুনিজমের সাথে ইয়াহুদীদের মিত্রতা

কম্যুনিজমের বিস্তারের পরিকল্পনা ইয়াহুদীরাই করেছে। কারণ, তারা দেখেছে পুঁজিবাদ চিরকাল টিকে থাকতে পারবে না। পুঁজিবাদের এ নায়করা পুঁজিবাদের চয়ে মারাত্মক যে কুফরি মতবাদের জন্ম দিয়েছে, সেটি হল কম্যুনিজম। কারণ, তা বিকৃত খৃষ্টবাদের অতি সূক্ষ্ম মুখোশপরা পুঁজিবাদের চেয়ে আরো কঠোর ভাবে দ্বীন নির্মূলের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে। তাই ইয়াহুদীরা কম্যুনিস্টদের জন্য পথ করে দিয়েছে এবং মার্কসকে সহায়তা করেছে। তাকে কম্যুনিস্টরা তাদের প্রতিশ্রুত নবী, ত্রাণকর্তা ও মানবতার মুক্তিদূত বলে মনে করে।

মার্কসের মাতা পিতা উভয়ে ইয়াহুদী। তার দাদা মার্ডখায় মার্কস ছিল ইয়াহুদী পণ্ডিত। এ মার্কস তার পিতার মৃত্যুর পর মা ও বোনদের নিকট সমবেদনা প্রকাশ করে একটি চিঠিও পাঠায়নি। উত্তরাধিকার সম্পত্তি চেয়েই কেবল চিঠি পাঠিয়েছিল। মার্কসকে তার অন্তরঙ্গ বন্ধু ফ্রেডার্ক এঙ্গলস বলেছিল, ‘তোমার মত স্বার্থবাদী মানুষ আমি আর দেখিনি।’ এ মার্কস যে নাকি শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করার কথা বলেছে, মালিক শ্রমিকদের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়েছে, যে আজীবন তার মাতা ও বোনের কাছ থেকে খরচ নিয়ে চলেছে। অতঃপর বই বের করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে একাধিকবার অর্থ নিয়েছে। কিন্তু কোন পাণ্ডুলিপি তাদেরকে দেয়নি। তার বই ‘পূজি’ একই সঙ্গে দু’টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে অর্থের বিনিময়ে ছাপাতে দিয়েছিল। এই সে মার্কস যে নাকি বিশ্বের শ্রমিকদের মুক্তিদূত।

মার্কসের চিন্তাধারা বাস্তবায়নকারী লেনিনও ইয়াহুদী। কুসরোল গোল্ডমান নামে এক জার্মান ইয়াহুদী পিতার ঔরসে তার জন্ম। তার মাও একজন জার্মান ইয়াহুদী। তার স্ত্রীও ইয়াহুদী। ১৯২০ সালে ফ্রান্সের এক পত্রিকা লিখেছে, ‘কোন প্রকার বাহুল্য ব্যতিরেকে আমরা বলতে পারি যে , রাশিয়ার যে মহা বিপ্লব ঘটেছে , তার পরিকল্পক ও বাস্তবায়নকারী ইয়াহুদীরাই। ‘

আরব জাতীয়াতাবাদ ও উসমানী সাম্রাজ্য

আমি আগেই বলেছি যে, জাতীয়তাবাদ ইউরোপের সৃষ্টি। তবে আরব বিশ্বে যারা একে প্রতিষ্ঠিত করেছে, তারা এতদাঞ্চলের পশ্চিমাবাদী খৃস্টান। আরব জাতীয়তাবাদ প্রচারের কাজ প্রথমে শুরু হয় ‘লিটারেচার এন্ড আর্টস এসোসিয়েশন’ এর মাধ্যমে। ১৮৪৭ সালে এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করে ইব্রাহীম আল ইয়াযিজী ও বুট্রোস আল বুসতানী নামের দু’ খৃস্টান।  অতঃপর ১৮৬৮ সালে এ সংগঠনটির নামে পরিবর্তন করে ‘সিরিয়ান নলেজ এসোসিয়েশন’ রাখা হয়। আমাদের স্কুল সমূহে ইব্রাহীম আলইয়াযিজীর এ কবিতা এখনও শিক্ষা দেয়া হয় –

সতর্ক হও এবং সচেতন হও ওহে আরব

স্রোত এত প্রচণ্ড যে, যাত্রীরা ডুবে গেল সব।

তোমাদের মান সম্মান তুর্কীদের চোখে গেল সব

তোমাদের মান সম্মান তুর্কীদের চোখে গেল সব

তোমাদের অধিকার তুর্কীদের সামনে লুণ্ঠিত আর তারা নীরব।

আরব জাতীয়তাবাদের প্রচারকরা যে ইসলামী খেলাফতের রাজধানী তুরস্ক থেকে মুক্তি কামনা করত, তার প্রমাণ তাদের নেতা এডওয়ার্ড আতিইয়ার মুখে শুনুন। সে বলেছে, ‘খৃস্টানরা তুর্কী নেতৃত্বকে ঘৃণা করতো এবং তুরস্ক থেকে স্বাধীন হবার স্বপ্ন দেখতো।’

লেবানন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যকলা বিভাগের শিক্ষকদের রচিত ‘আরব সমাজ’ নামীয় বইতে বলা হয়েছে যে, ‘আরব বিশ্বে তুর্কী শাসন বিরোধী যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে, তার মূল ভিত্তি ছিল আরববাদ ।’

বৈরুতে খৃস্টান যুবকদের পরিচালিত একটি গোপন সংগঠন ছিল , যার একমাত্র কাজ ছিল , আরব এবং তুর্কীদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করা। এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পেছনে মূল প্রেরণা যোগিয়েছিল ‘যওক মেকাইল’ এলাকার এক লোক, যে লেবাননের আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে ফ্রান্স ভাষার শিক্ষক ছিল। ইব্রাহীম আলইয়াযেজী, ইয়াকুব সরুফ ও শাহীন মাকারিউস তার ছাত্র ছিল। ঐ লোক ইয়াহুদীদের ষড়যন্ত্রে সংগঠিত ‘ফ্রান্স বিপ্লব’ এর একজন ঘোর সমর্থক ছিল।

আরব জাতীয়তাবাদ যে পশ্চিমাদের তৈরী মতবাদ সে ব্যাপারে ফিলেব- এর কথা প্রণিধানযোগ্য। ফিলেব জাতীয়াতাবাদীদের বড় উস্তাদ এবং বার্থ পার্টির লোকেরা আমাদের ছেলেদের জন্য তাকে নিয়ে ইতিহাস লিখেছে। ফিলেব বলেছে , ‘সিরীয় দেশাত্মবোধ ও পশ্চিমা চিন্তাধারার সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছে আরব জাতীয়তাবাদের পরিপূর্ণ নিয়ম নীতি এবং তা (আরব জাতীয়তাবাদ) মার্কিন রাজনৈতিক চিন্তাধারা থেকে তার অধিকাংশ অনুপ্রেরণা গ্রহণ করেছে। এর বিপরীত হচ্ছে তুর্কী জাতীয়তাবাদ, যা আত্মপ্রকাশ করেছে আরব জাতীয়তাবাদের পর এবং তা অনুপ্রেরণা গ্রহণ করেছে ফ্রান্স বিপ্লব থেকে।’  ফিলেব আরো বলেছে, ‘আরব জাতীয়তাবাদের চিন্তাধারা উনবিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে কতিপয় সিরীয় চিন্তাবিদের মাধ্যমেই আত্মপ্রকাশ করে, যাদের অধিকাংশই লেবাননের আমেরিকান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে শিক্ষা প্রাপ্ত খৃস্টান। আর এ কথা নিঃসন্দেহে সত্য যে, জাতীয়তাবাদ হচ্ছে একটি পশ্চিমা পণ্য, যা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় পূর্ব আরব অঞ্চলও আমদানী করেছে ‘। এ হচ্ছে আরব জাতীয়তাবাদের প্রবক্তাদের কথা।

লেবাননের খৃস্টান নজীব আযোরী যে প্যারিসে বসবাস করতো, সে এ শতকের (বিংশ) শুরুতে আরব জাতীয়তাবাদের সূক্ষ্ম ও সফল প্রচারণা চালায়। সে প্যারিসে আরব আঞ্চলিক পরিষদ নামে একটি সংগঠন দাঁড় করায়। ‘আরব জাতির জাগরণ’ নামে একটি বইও লিখে সে। ১৯০৭ সালে সে ‘আরব স্বাধীনতা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে।

সাতে’ আল হুছাইরী’র মতে আরব জাতীয়তাবাদের বিকাশ শুরু হয় নজীব আযোরীর মাধ্যমে, যে কাজ শুরু করে প্রথমে ফ্রান্সে অতঃপর ব্রিটেনে।

আরব অঞ্চলের ব্রিটিশ গোয়েন্দা প্রধান লরেন্স যাকে আরবরা মুকুটহীন আরব সম্রাট বলে অভিহিত করে, তার ‘প্রজ্ঞার সপ্তখুঁটি’ নামক বইয়ে বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে তুরস্ক  (উসমানী সাম্রাজ্য) ভেঙে টুকরো টুকরো হওয়ার পেছনে একমাত্র ভূমিকা পালনকারী হচ্ছে জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা।’

আর জাতীয়তাবাদীরা যে ইসলামের স্থলে জাতীয়তাবাদকে একটা ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করতে চায়, সে ব্যাপারে আরব জাতীয়াতাবাদী লেখক উমর ফাখোরী তার ‘আরবরা কিভাবে জাগবে?’ নামক বইতে বলেন, ‘আরবরা ততক্ষণ পর্যন্ত জেগে উঠতে সক্ষম হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আরববাদকে ততটুকু গুরুত্বের সহকারে গ্রহণ করবে না, যতটুকু গুরুত্বের সহিত মুসলমান কুরআনকে গ্রহণ করে।’

আরেক আরব জাতীয়তাবাদী লেখক মাহমূদ তাইমূর ‘আরব জাহান’ পত্রিকার ১৭১ সংখ্যায় লেখেন, ‘আর নিঃসন্দেহে আরব লেখকদের কাঁধে একটি যিম্মাদারী রয়েছে। তা হচ্ছে, এ সত্যিকারের নবুওয়াতের (আরব জাতীয়তাবাদ) পক্ষে কথা বলা ও এর সত্যতা তুলে ধরা। ‘

আরেক আরব জাতীয়াবাদী লেখক আলো নাসিরুদ্দিন তার ‘আরবদের সমস্যা’ নামক বইতে লিখেন, ‘মুসলিম ও খৃস্টান সম্প্রদায়ের আমরা যারাই আরব জাতীয়তাবাদে গভীরভাবে বিশ্বাসী , তাদের নিকট আরববাদ স্বয়ং একটি ধর্ম। যদি প্রত্যেক যুগে কোন না কোন নবুওয়াত বিদ্যমান থাকে, তাহলে এ যুগের নবুওয়াত হচ্ছে আরব জাতীয়তাবাদ। ‘

১৯৫৯ সালের ‘আরব জাহান’ পত্রিকার ২য় সংখ্যার ৯ম পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে , ‘মুমিনদের অন্তরে আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি যেমন অগাধ বিশ্বাস রয়েছে, তেমনি আরবদেরও উচিত যেখানেই থাকুক না কেন আরব একত্ববাদে তেমনিভাবে বিশ্বাসী হওয়া।’

বার্থ পার্টির নেতা ইব্রাহীম খালাস ‘জনযোদ্ধা’ নামক এক সিরীয় ম্যাগাজিনে ২৫.০৪.১৯৬৭ সালে লিখেন, ‘আরব সভ্যতার উন্নতি ও আরব সমাজ বিনির্মাণের একমাত্র পথ হচ্ছে, এমন আরব সমাজবাদী লোক তৈরী করা, যারা বিশ্বাস করবে, আল্লাহ, ধর্ম, জমিদারী, পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদসহ অন্যান্য যে সব নিয়ম নীতি সমাজে ইতোপূর্বে ছেয়ে বসেছে, তা সবই খেলার পুতুল যার স্থান হচ্ছে যাদুঘর।’ এ কথা সে বলেছিল ইসরাঈলের হাতে সিরিয়ার পরাজিত হওয়ার ৪৭ দিন পূর্বে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার ঘোষণা-

وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ

“অপরাধীরা যা করছে, সে ব্যাপারে আল্লাহকে অবহিত ধারণা করবেন না।” [ইব্রাহীমঃ৪২] ।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা অবকাশ দেন। কিন্তু অনবহিত এমন নয়।

ব্রিটেনের ‘দি ইকোনোমিষ্ট’ পত্রিকা ১৯৬২ সালে ‘জাতীয়তাবাদ বনাম ইসলাম’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে লিখেছে যে, ‘প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর কাফের ইংরেজদের সাথে নিয়ে তুর্কীদের থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্য যখন আরবরা লড়াই করে, তখন তারা জাতীয়তাবাদকে সব কিছুর উপর প্রাধান্য দেয়। ইখওয়ানুল মুসলিমীনের চিন্তাধারা তারা পরিত্যাগ করেছে। তাই এখন আরব বিশ্বে এমন কোন রাজনৈতিক দল নেই, যারা আরব জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা ত্যাগ করে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ‘

আরব জাতীয়তাবাদ যে পশ্চিমাদের পরিকল্পিত এবং তার কার্যকরকারীরা যে খৃস্টান , তার প্রমাণ হচ্ছে, আরব অঞ্চলের জাতীয়তাবাদী দলগুলো সৃষ্টি হয়েছে বার্থ পার্টির পথ ধরে এবং খৃস্টানদের কাছ থেকে সরাসরি শিক্ষা দীক্ষাপ্রাপ্ত লোকদের মাধ্যমে। আরব জাতীয়তাবাদীদের প্রথম দলের উৎপত্তি হয় লেবাননের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর চ্যান্সেলর ডোডজ ও  কুস্টন্টিন জরীক ছাত্রদেরকে আরব জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা ও মতামতের প্রতি উৎসাহিত করতো এবং তাদেরকে আরব জাতীয়তাবাদের নামে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে মিছিল করতে প্ররোচিত করতো। কুস্টন্টিন জরীক একজন যোগ্য শিষ্য তৈরী করতে সমর্থ হয়েছে, যে আরব জাতীয়তাবাদীদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছে। তার নাম জর্জ হাবশ।

আরব শ্যাশ্যলিষ্ট বার্থ পার্টির নেতা ছিল মিশেল আফলাক এবং তার সহকারী ঝিল যকী আরসূজী নুসাইরী আলাবী। মিশেল আফলাক পোপ থেকে পদক গ্রহণ করার সময় বলেছিল, ‘আমি এমন কাজ করতে সক্ষম হয়েছি, খৃস্টান মিশনারীরা যা তিনশত বছর ধরে করতে সক্ষম হয়নি ।’

সিরিয়ার জাতীয়তাবাদের নেতৃত্বে ছিল আনতোওয়ান সাআদাহ। সে নিহত হবার পর তার স্ত্রী তার স্থলাভিষিক্ত হয়। অতঃপর জাতীয়তাবাদের নেতৃত্বে আসে আসাদ আশকর এবং অতঃপর জর্জ আবদুল মসীহ।

ফ্রীম্যাসনবাদ ও ইয়াহুদী

সমাজবাদ ও জাতীয়তাবাদের পর তৃতীয় যে বিষয়টার প্রতি আসক্ত হয়ে আরব বিশ্বের নেতৃস্থানীয় লোকেরা ধ্বংস হচ্ছে, সেটা হল মাসূনিয়াহ (ফ্রীম্যাসনবাদ)। মাসূনিয়াহ ইংরেজী শব্দ গঅঝঙঘ-এর আরবি রূপ। গঅঝঙঘ অর্থ বানানো। যারা মাসূনিয়াহ-এর সাথে সম্পৃক্ত তাদেরকে মাসূনী বা ফ্রীম্যাসন্স (স্বাধীন নির্মাতা) বলা হয়। অর্থাৎ, যারা শিগগিরই মসজিদে আকসা ধ্বংস করে তাতে সোলেমানী কাঠামো নির্মাণ করবে। তাই তাদের প্রতীক হচ্ছে একটি গোল চিহ্ন, যার ভিতরে রয়েছে একটি ছয়কোণা বিশিষ্ট তারা। আর এ তারার ভিতর রয়েছে ইংরেজী অক্ষর এ। এ অক্ষর ইয়াহুদীদের সর্বশেষ রাজা গ্যকিনের প্রতি ইঙ্গিতে, যাকে নবুখযনসসর বন্দী করেছিল।

আর মাসূনিয়াহ (ফ্রীম্যাসনবাদ) হচ্ছে রক্তি খাটি ইয়াহুদী সংগঠন। আর এর সকল প্রতীক ও গোপন অক্ষর ও ইয়াহুদীবাদ সম্পর্কীয়। খ্রোকাস তার বই ‘ইয়াহুদী মানসিকতা’য় উল্লেখ করেছে যে, ‘পৃথিবী আজ জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ের সম্মুখীন । ইয়াহুদীবাদী ফ্রীম্যাসনবাদ সারা বিশ্বের জন্য ‘মৃত্যু’ পরিণতি সৃষ্টি করছে ‘।

ফ্রীম্যসনবাস যা গোপনে প্রতারণার মাধ্যমে পৃথিবীতে ইয়াহুদীবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য নিবেদিত , এর ইতিহাস সম্পর্কে কেউ কেউ বলেছেন যে, এর সূচনা হয় ঈসা আলাইহিসসালামের এর যুগে। তবে আধুনিক ফ্রীম্যাসনবাদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে ১৭৭৭ সাল থেকে। এর প্রধান কার্যালয় লন্ডনে। একে তারা আমাদের মুসলমানদের কিবলা কা’বা এর মত মর্যাদা দেয়। ফ্রীম্যাসনবাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের চতুর্থ, পঞ্চম, নবম ও এগারতম ধারায় উল্লেখ আছে যে, ‘ফ্রীম্যাসনবাদ আমাদের অন্ধ সেবা করে যাচ্ছে। শিগগিরই আমরা অইয়াহুদী পৃথিবীকে গোপন ফ্রীম্যাসবাদী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সমূহের মাধ্যমে ধ্বংস করব। অতঃপর সে সব ফ্রীম্যাসনবাদী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সমূহ ধ্বংস করব, যা জন্মগত ইয়াহুদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। যখন কোন গাধা- ইয়াহুদী ব্যতীত পৃথিবীর সকল লোককে তারা গাধা বলে অভিহিত করে- মারা যাবে, তখন আমরা অন্য গাধার উপর সওয়ার হবো। আমরা আল্লাহর নির্বাচিত জাতি। অন্যান্য জাতিসমূহকে আল্লাহ আমাদের সেবা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। গাধারা আমাদের গোপন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সমূহের ব্যাপারে কিছুই জানে না। তাদেরকে আমরা আমাদের সংগঠনে প্রবেশ করাতে সক্ষম হয়েছি। শিগগিরই আমরা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পুলিশদেরকে আমাদের ফ্রীম্যাসনবাদী প্রতিষ্ঠান সমূহে প্রবেশ করাবো, যাতে তাদেরকে আমাদের সেবায় নিয়োজিত করতে পারি এবং যাতে   তারা আমাদের পক্ষে গোয়েন্দাগিরী করে। ‘

এ হচ্ছে নির্ভেজাল ইয়াহুদীবাদী প্রতিষ্ঠান ফ্রীম্যাসনবাদের পরিকল্পনা। এ ফ্রীম্যসনবাদ পরিচালিত দু’টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে লায়ন্স ক্লাব ও রোটারী ক্লাব। দেশের প্রভাবশালী লোকদেরকে এসব ক্লাবের সদস্য করা হয়। (মিশরের আলাআযহার ও রাবেতা আল-আলামিন ইসলামীর পক্ষ থেকে ফ্রীম্যাসনবাদের সাথে সম্পর্ক রাখা ও তাদের নিয়ন্ত্রিত লায়ন্স ও রোটারী ক্লাবের সদস্য হওয়া মুসলমানদের জন্য হারাম বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছে- অনুবাদক )।

ফ্রীম্যাসনবাদের স্তর সমূহ

ফ্রীম্যাসনবাদের তিনিটি স্তর রয়েছে। ১. প্রাথমিক স্তর। প্রাথমিক স্তরে ৩৩ পদ রয়েছে। যে ৩৩ পদ অর্জন করে তাকে গলায় একটি রশি এবং চোখে পট্টি বেঁধে ফ্রীম্যাসনবাদের প্রধান কার্যালয়ের একটি লাল অন্ধকার কক্ষে প্রবেশ করানো হয়, যেখানে রয়েছে মানুষের মাথার অনেক খুলি। সেখানে তাকে অশ্লীল কাজে লিপ্ত করা হয়। ১৯৬৫ সালে মিশরের ‘সশস্ত্র বাহিনী পত্রিকা’ এ ব্যাপারে লিখেছিল। অতঃপর তাকে সিংহাসনে অধিষ্টিত তিনজনের স্যামনে এনে এ শপথ করানো হয় যে, সে ফ্রীম্যাসনবাদের কাজে আন্তরিক হবে, যদিও তাকে তার ছেলে স্ত্রী ও নিকটাত্মীয়ের বিরোধিতা করতে হয়। আর তার কাছ থেকে এ অঙ্গিকারও নেয়া হয় যে, যদি সে ফ্রীম্যাসনবাদের গোপন বিষয়গুলো প্রকাশ করে, তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। এ ব্যাপারে এত কড়াকড়ি করার কারণ হচ্ছে, কেউ কেউ ফ্রীম্যাসনাবাদের এ ব্যাপারটি প্রকাশ করে ফেললে আরব পত্র পত্রিকাগুলো তা ফলাও করে প্রচার করবে।

বলছিলাম ফ্রীম্যাসনবাদের সদস্যদের পদের কথা। যদি কেউ প্রথম স্তরের ৩৩টি পদ অর্জন করে, তখন তাকে উস্তাদে আযম (মহান শিক্ষক) উপাধি দেয়া হয়। ফ্রীম্যাসনবাদের দ্বিতীয় স্তরের জন্য আগে জন্মগত ইয়াহুদী ছাড়া কাউকে গ্রহণ করা হতো না। এখন এ কড়াকড়ি আর নেই। তবে শর্ত থাকে যে তাকে ইয়াহুদীদের জন্য বড় কোন অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ফায়দা লুটিয়ে দিতে হবে। কেউ প্রথম স্তরের ৩৩ টি পদ অতিক্রম করে মহান শিক্ষক উপাধি নিয়ে দ্বিতীয় স্তরে পদার্পণ করতে যায়, তখন তাকে ফ্রীম্যাসনবাদের গোপন কথা সমূহ বলে দেয়া হয়। দ্বিতীয় স্তরে পদার্পণ করার পর তার কাছ থেকে আবার অঙ্গীকার নেয়া হয়। আগের মত তার উভয় চোখে পট্টি বেঁধে তাকে ফ্রীম্যাসনবাদের মূল প্রশ্ন করা হয় ‘তুমি কে’ ? সে উত্তরে বলে, ‘আমি একজন অন্ধকার জগতের লোক। আমি আলোর সন্ধান করছি। আমি জেনেছি যে ,আপনারা সোলেমানী কাঠামো তৈরী করবেন। তাই আপনাদেরকে সহায়তা করতে এসেছি।’ এ সময় তাকে বলা হয়, ‘আমরা জন্মগত ইয়াহুদী ছাড়া এ কাজে অন্য কাউকে গ্রহণ করি না ‘। সে তখন বলে, ‘আমি আপনাদের একজন এবং আপনাদের আত্মীয়’। অতঃপর তার চোখ খুলে দেয়া হয় এবং তাকে দু’টি মূর্তির সামনে আনা হয়। এ দু’টি মূর্তির একটি মুসা আলাইহিসসালাম ও আরেকটি হারুন আলাইহিসসালাম-এর। তাকে বলা হয়, ‘এ দু’জন হচ্ছেন মুসা আলাইহিসসালাম ও হারুন আলাইহিসসালাম। তুমি কি এ দু’জন ছাড়া অন্য কোন নবীকে বিশ্বাস কর’ ? তখন সে বলে ‘না’। অতঃপর তাকে অন্যান্য নবীগণকে লা’নত করতে বলা হয় (নাউযুবিল্লাহ)। এরপর তাকে তাওরাতের কাছে নিয়ে আসা হয় এবং বলা হয় ‘এটা হচ্ছে তাওরাত। তুমি কি এ ছাড়া অন্য কোন কিতাবকে বিশ্বাস কর’ ? সে বলে ‘না’। অতঃপর তাকে অন্যান্য আসমানি কিতাব সমূহকে গালমন্দ করতে বলা হয়।

ফ্রীম্যাসনবাদের তৃতীয় স্তরকে বলা হয় মহাজাগতিক বন্ধন। এটা কতিপয় ইয়াহুদী শয়তানের সমষ্টি। তাদেরকে হাকিম (প্রজ্ঞাবান) নামে অভিহিত করা হয়। এরা রাতদিন মানবতাকে কিভাবে ধ্বংস করা যায়, সে ব্যাপারে পরিকল্পনা তৈরীতে ব্যস্ত থাকে। এরা বাস করে নিউইয়র্কে। ফ্রীম্যাসনবাদ সম্প্রসারিত হলে আদ্দিস আবাবা ও সুইজারল্যান্ডের বেরনে এদের দু’টি শাখা খোলা হয়।

এ হচ্ছে ফ্রীম্যাসনবাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস যা আমদেরকে ইসলামী মূল্যবোধ থেকে দূরে সরিয়ে আমাদের সমাজকে ধ্বংস করছে। আমাদের সমাজের একটি অংশ এখনো এ ফ্রীম্যাসনাবাদের বলি হচ্ছে।

বাহাঈ মতবাদ

বাহাঈ মতবাদ প্রথমে বাবিয়া নামে পরিচিত ছিল। কারণ, তারা তাদের প্রধানকে প্রতিশ্রুত মাহদীর প্রতিশ্রুত বাব (দরজা) বলে অভিহিত করতো। তাদের প্রধান হচ্ছে আলী শিরাজী। সে ‘আলবয়ান’ নামে একটি বই লিখেছে এবং বলেছে তার এ বইটি কুরআনের চেয়ে বড় আর সে নাকি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেয়ে বড় (কতইনা মারাত্মক তার এসব কথা)। ১৮৪৮ সালে বাদাশত শহরে তাদের মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং তাতে তাদের মূলনীতি ঘোষণা করা হয়। এ সম্মেলনের প্রধান আকর্ষণ ছিল রজীন তাজ নামের এক মহিলা। এ সম্মেলনে সে ঘোষণা দেয় যে আলবয়ান ইসলামী শরীআহকে রহিত করেছে।

ইরানের আলেমগণ এ প্রতিশ্রুত বাবের (আলী শিরাজী) বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন এবং বাদশাকে তাকে গ্রেফতারে বাধ্য করলেন। অতঃপর জনগণের পক্ষ থেকে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার জোর দাবী উঠলে সরকার তাকে মৃত্যুদণ্ড দিতে বাধ্য হয়। ইসলাম বিদ্বেষী পশ্চিমা রাষ্ট্র রাশিয়া ও ব্রিটেন তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। আলী শিরাজীর যে শিষ্যটির সাথে রজীন তাজের গভীর সম্পর্ক ছিল, তার নাম হুসাইন বিন আলী মাজান্দারানী। সে নিজের জন্য বাহাউল্লাহ উপাধি গ্রহণ করে। সেই বাহাঈ মতবাদ (যার পূর্ব নাম বাবিয়া) প্রচারের কাজ শুরু করে। আর এ বাহাঈ মতবাদ হচ্ছে ইস্পাহান, তেহরান ও হামদানের ইয়াহুদীদের পরিচালিত একটি ইয়াহুদী ষড়যন্ত্র। এ মতবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ইরানের আলেম ও জনসাধারণ যখন এ মতবাদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেন, তখন ইরানের রাজতান্ত্রিক সরকার তাকে (বাহাউল্লাহ) গ্রেফতার করে। এবারও ব্রিটেন ও রাশিয়া তাকে বাঁচানোর জন্য মধ্যস্থতা শুরু করে। এবং ইরান সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করে। ফলে ইরান সরকার তাকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে ইরাকে দেশান্তর করে। কিন্তু ওখানের লোকজনও তার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেন। তাই ইরাক সরকারও তাকে গ্রেফতার করে। এখানেও ব্রিটেন তাকে বাঁচাবোর জন্য নাক গলায়। ফলে ইরাক সরকার তাকে শাস্তি না আককায়* দেশান্তর করে। সেখানে ব্রিটিশ সরকার তাকে লালনপালন করে। তার কবর এখনো বাহাঈদের তীর্থ ভূমি হিসেবে বিবেচিত হয়।

বাহাঊল্লাহ মনে করতো যে, আল্লাহর ছবি তার মধ্যে প্রবেশ করেছে। তাই যাতে ভক্তদেরকে কথিত আল্লাহর নূর পোড়াতে না পারে, সে জন্য সে তার মুখ সবসময় ঢেকে রাখতো। এ বাহাঈরা কাফের। তাদের যবাইকৃত পশু খাওয়া জায়েয নেই এবং তাদেরকে মুসলমানের কবরস্থানে দাফন করাও জায়েয নেই।