স্থানীয় হেলাল দেখা অনুযায়ী রোযা ও ঈদ : কিছু প্রশ্নের উত্তর – মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক (দা.বা)

খাইরুল কুরূন থেকে এ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ যুগ যুগ ধরে যে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত নিয়ম অনুসরণ করে আসছে এর উপর বিচ্ছিন্নতা অবলম্বনকারীদের তরফ থেকে নানা প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এখানে এসব প্রশ্ন নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হবে- ইনশাআল্লাহ।

১. রমযান আগে-পিছে হওয়ার কারণে শুরু রমযানে এক-দুইটি রোযা না রাখার গুনাহ হয়; বরং এক এক রোযার ষাট ষাট দিনের কাফফারা ওয়াজিব হয়। যা আদায় করা হয় না।

২. ঈদের দিন রোযা রাখা নাজায়েয। অথচ ঈদ আগে-পিছে হওয়ার কারণে এই নাজায়েয কাজটি করা হয়।

৩. তাকবীরে তাশরিকের কিছু অংশ থেকে যায়।

৪. আরাফার রোযা ঈদুল আযহার দিন রাখা হয়।

৫. যারা বারো তারিখে কুরবানী করেন তা প্রকৃতপক্ষে তেরো তারিখে হওয়ার কারণে তাদের কুরবানী শুদ্ধ হয় না।

এই পাঁচটি অভিযোগই নানা কারণে ভিত্তিহীন। আলোচনার সহজার্থে শুধু একটি কারণ উল্লেখ করছি। আর তা এই যে, শরীয়তের ইজমায়ী তথা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, যেসকল মাসআলায় ইমামদের মাঝে মতভিন্নতা রয়েছে, তাতে যিনি যে মাযহাবের অনুসারী তার কর্মের হুকুম ঐ মাযহাব অনুযায়ী হবে, অন্য মাযহাব অনুযায়ী নয়। উদাহরণস্বরূপ :

শরীরের কোনো জায়গা থেকে রক্ত বের হলে শাফেয়ী মাযহাবে অজু নষ্ট হয় না। সুতরাং শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী কোনো মুসল্লী রক্ত বের হওয়া সত্ত্বেও যদি নতুন করে অজু না করেন, আগের  অজুতেই নামায পড়েন, তাহলে হানাফী মাযহাবের অনুসারী কারো ঐ মুসল্লীকে এই অভিযোগে অভিযুক্ত করা জায়েয নয় যে, বিনা অজুতে নামায পড়েছেন তিনি। তেমনি এই বিধান আরোপ করাও জায়েয নয় যে, আপনাকে এই নামায আবার পড়তে হবে। অথচ হানাফী মাযহাবের কোনো অনুসারী এই কাজ করলে তাকে বলা হবে, আপনার অজু ভেঙ্গে গেছে; আপনি নতুন করে অজু করুন এবং নামাযটি আবার পড়ুন।

আরেকটি উদাহরণ : শাফেয়ী মাযহাবে ইমামের পিছনে মুকতাদীর সূরা ফাতেহা পড়া ফরয। হানাফী মাযহাবে ফরয তো নয়ই; বরং না পড়ার হুকুম। এখন শাফেয়ী মাযহাবের কারো জন্য জায়েয নয় কোনো হানাফী মুসল্লীকে এ কথা বলা যে, আপনি ইমামের পিছনে ফাতিহা পড়েননি তাই আপনার নামায হয়নি; আপনাকে নামাযটি আবার পড়তে হবে। ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির দৃষ্টিতেও কোনো হানাফী মুসল্লীকে এমন কথা বলা কোনো শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারীর জন্য জায়েয নয়।

এই মাসআলা জানার পর এখন লক্ষ্য করুন, হানাফী মাযহাবের অগ্রগণ্য ও অনুসৃত অভিমত হচ্ছে, প্রত্যেক অঞ্চলের অধিবাসী নিজ নিজ অঞ্চলের হিলাল দেখার উপর আমল করবে। আর এটাই অন্যান্য মাযহাবের বড় বড় ফকীহের সিদ্ধান্ত। এরই উপর একমত ছিলেন খাইরুল কুরূনের অধিকাংশ ফকীহ। তাই এই নিয়ম অনুসারে যিনি রোযা ও ঈদ করছেন তাকে এই কথা বলা ভুল যে, আপনার একটি রোযা ছুটে গেছে! কারণ তার তো ঐ দিন রমযান শুরুই হয়নি। তদ্রƒপ তিনি যখন ত্রিশতম রোযা রাখছেন তখনও এ কথা বলা সঠিক নয় যে, আপনি ঈদের দিন রোযা রাখছেন। কারণ তার এখনো পয়লা শাওয়াল আসেনি।[1]

তাকবীরে তাশরীক ও ৯ যিলহজে¦র রোযার ব্যাপারেও একই কথা। হাদীস শরীফে ইয়াওমে আরাফা বলে উদ্দেশ্য হল ৯ যিলহজ¦। ঐ সময় নয় যখন আরাফায় উকূফ চলছে। তার কারণ, ঈদুল আযহার জন্য কোনো ইসলামী শহরে স্থানীয় হেলালের পরিবর্তে উকূফে আরাফা বা মক্কার হেলালকে ভিত্তি বানানো হয়নি। নবী-যুগ ও খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগে মাদীনাতেও নয় এবং পরবর্তী কোনো যুগে অন্য কোনো শহরেও নয়। বিস্তারিত জানার জন্য দেখা যেতে পারে ড. হামীদুল্লাহ-এর প্রবন্ধ। যা ‘মুসলিম ওয়ার্ল্ড’ পত্রিকার ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ ঈসাব্দ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এর উর্দূ অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে ‘আলবালাগ’ করাচীর ডিসেম্বর ১৯৭৫ ঈসায়ীর সংখ্যায়। আরো দেখুন www.albalagh.net -এ প্রকাশিত হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানীর প্রবন্ধ Determination of Eid al-Adha । যা এ ঠিকানায় দেখা যেতে পারে-

https://www.albalagh.net/qa/moon_qa.shtml ।

তাছাড়া এদিকটিও চিন্তা করুন : আমাদের ও মক্কা মুকাররমার উদয়াস্তে কয়েক ঘণ্টার পার্থক্য। যদি নয় যিলহজ্বের রোযাকে মক্কার আরাফার সাথে যুক্ত করা হয় তাহলে যখন আমরা রোযা শুরু করব তখন তো আরাফা-দিবস শুরু হয়নি। তা শুরু হবে আরো তিন ঘণ্টা পর। তেমনি যখন ইফতার করব তখনও আরাফা-দিবস সমাপ্ত হয়নি। তখনও দিবসের তিন ঘণ্টা বাকি।

এরপর আরাফা-দিবসে পৃথিবীর যেসকল অঞ্চলে রাত থাকবে তারা কি রাতেই রোযা রাখবেন? এরা যদি নিজেদের রাত শেষ হওয়ার পর রোযা রাখেন তখন তো আরাফা-দিবসও শেষ। হাজীরাও কেউ তখন আরাফার ময়দানে নেই, তারা তখন মুযদালিফায়।

এ কারণে নিঃসন্দেহে আরাফার দিন রোযা রাখা বিষয়ক হাদীসের অর্থ ৯ জিলহজ¦ রোযা রাখা। যে অঞ্চলে যেই দিন ৯ জিলহজ্ব হবে ঐ অঞ্চলের অধিবাসীরা ঐ দিনই রোযা রাখবেন। খোদ হাজীদের জন্য তো আরাফার দিন রোযা রাখা মাসনূনও নয়।

আরো চিন্তা করুন, পশ্চিমের যেসকল অঞ্চলে যিলহজে¦র হিলাল সৌদিয়ার এক দিন আগে দেখা যাবে, মক্কা-মুকাররমার আরাফা-দিবস হবে তাদের ১০ যিলহজ¦। ঐ দিন তাদের রোযা রাখতে বললে তা হবে ঈদুল আযহার দিন রোযা রাখা, যা নিষেধ।

সুতরাং পরিশেষে একথাই বলতে হবে যে, প্রত্যেক অঞ্চলের মানুষ নিজ নিজ হিলাল অনুসারে আমল করবেন। আর তারা যেহেতু শরীয়তের বিধান অনুযায়ী নিজেদের হিলাল দেখা অনুসারে আমল করছেন তাই এতে আপত্তির কোনো অবকাশ নেই।[2]

মোটকথা, উপরের পাঁচ অভিযোগ যদি শুধু কূটতর্কের জন্য না হয়; বরং ভুল বোঝাবুঝির কারণে হয়ে থাকে তাহলে আশা করা যায়, উপরের আলোচনা বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য যথেষ্ট। আর কাফফারার ব্যাপারটা তো একেবারেই অহেতুক। কাফফারা তো আসে ইচ্ছা করে রোযা ভাঙ্গার কারণে। তারা তো কোনো রোযা ভাঙ্গেনি; রোযা ছাড়েওনি। আপনি বলছেন তারা প্রথম রমযানের রোযা ছেড়ে দিয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। বরং তারা মূলত ৩০ শাবানে রোযা রাখেনি, প্রথম রমযানের রোযা তারা ঠিকই রেখেছে। যে ফকীহগণ উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য মনে করেন না তারাও তাদেরকে এই রোযার কাযা আদায়েরও আদেশ করবেন না, কাফফারা তো দূরের কথা।

বারো তারিখের কুরবানীর ব্যাপারেও একই কথা। এই দিনটি কুরবানীকারীদের জন্য তেরো তারিখ নয়, বারো তারিখ। যেমন প্রথম দিন যারা কুরবানী করেছেন তাদের তারিখটিও ছিল ১০ যিলহজ¦, ৯ যিলহজ¦ নয়।

অন্য দেশে সফরের কারণে রোযা ২৮ বা ৩১ হওয়া

এই প্রশ্নও করা হয় যে, বিশ্বব্যাপী তারিখ এক না হওয়ার কারণে বাংলাদেশে রোযা শুরু করে সৌদি গেলে এক রোযা কম হয় আর ওখানে রোযা শুরু করে এখানে এলে এক রোযা বেশি হয়।

এই প্রশ্ন অযৌক্তিক। কারণ, এ তো নবী-যুগ থেকে অনুসৃত ‘প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য তাদের চাঁদ দেখা’- এই শরয়ী নীতির  অনিবার্য ফল। যা আগেও ঘটেছে, এখনও ঘটছে। এতে তো আপত্তির কিছু নেই। এর সমাধানও আগে থেকেই আছে। আর তা এই, যার রোযা আঠাশটি হয়েছে তিনি একটি কাযা রাখবেন। এর নজীর হযরত আলী রাযিআল্লাহু আনহুর রেওয়ায়েতে পাওয়া যায়। তার যুগে একবার ২৮ রোযা রাখার পর চাঁদ দেখা গেল। তখন তিনি সকলকে ১ টি রোযা কাযা রাখতে বলেছেন। -আততারীখুল কাবীর, ইমাম বুখারী ২/৩৫৫, হুমাইদ ইবনে আব্দুল্লাহ আলআছাম্ম; আসসুনানুল কুবরা বায়হাকী, ৪/২৫১

আলবেরুনীও এই রেওয়ায়েতের উল্লেখ করেছেন। (দ্র. আল আসারুল বাকিয়া, পৃষ্ঠা : ৬৭)

আর যাদের রোযা বেশি হয়েছে তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। মাস একত্রিশের হয় না। বিশেষ অবস্থার কারণে ঐ ব্যক্তির একটি রোযা বেড়ে গেছে।

শবে কদর কয়টি? জান্নাতের দরজা কয়বার খোলা হবে?

একটি ভিত্তিহীন প্রশ্ন এই যে, শবে কদর কয়টি। জান্নাতের দরজা কয়বার খোলা হবে আর জাহান্নামের দরজা কয়বার বন্ধ করা হবে।

এই বন্ধুরা ঊর্ধ্বজগতের বিষয়াদিকে নিচের জগতের বিধিবিধানের সাথে মিলিয়ে ফেলেছেন। অদৃশ্য-জগতের বিষয়গুলোকে দৃশ্যজগতের উপর কিয়াস করছেন। ঐ জগতের কাজ আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের উপর অর্পণ করেছেন এবং সে কাজের জন্য যে তাকভীনী নিয়ম দিয়েছেন সে নিয়মেই তারা তা পালন করবেন। এর সাথে মানুষকে দেয়া শরীয়তী বিধানের কী সম্পর্ক?

এরপরও সহজতার জন্য হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (১৮৬৩-১৯৪৩ ঈ.)-এর বক্তব্য তুলে ধরা যেতে পারে। তিনি শবে কদরের ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন-

‘কিন্তু এ বিষয়ে কারো কারো মনে একটি প্রশ্ন জাগবে যে, এখন তো চাঁদের তারিখে ভিন্নতা আছে, কাজেই এখানে যা সাতাশের রাত কোনো কোনো জায়গায় তা আঠাশের রাত হবে তাহলে কি লাইলাতুল কদর দুইটা হচ্ছে আর যদি একটি হয়, তাহলে কার চাঁদ দেখা গ্রহণযোগ্য? এর জবাব হচ্ছে, আপনার কি জানা আছে, ওখানে (ঊর্ধ্বজগতে) দিন-রাত নেই। আর এ তো বিজ্ঞান যারা পড়েছে তাদের কাছে স্বীকৃত যে, রাত-দিন হচ্ছে সৌরজগতের ব্যাপার। ঊর্ধ্বজগতে তো রাত-দিনের ভাগ নেই বরং ওখানে এক অবস্থা। …একারণে লায়লাতুল কদরের যে শান ও বরকত তা রাত-দিনের সাথে যুক্ত নয়; বরং তা আল্লাহ্র ইচ্ছার অধীন। আল্লাহ তাআলার প্রদত্ত শরীয়ত মোতাবেক যে আমল করবে, আল্লাহ তাআলা ঊর্ধ্বজগতে তার জন্য এমন ব্যবস্থা দিয়ে দেবেন যেন কেউ মাহরূম না হয়। সুতরাং নিশ্চিন্ত মনে নিজ নিজ তারিখ অনুযায়ী কাজ করুন। আল্লাহ তাআলা সবার নিয়ত ও আমল দেখেন। তিনি সবাইকে তাদের হিসাব অনুযায়ী লাইলাতুল কদরের বরকত দান করবেন। (বারাকাতে রমযান, ওয়াজ : ইকমালুল ইদ্দাহ, খুতবাতে হাকীমুল উম্মত, খ- : ১৬, পৃষ্ঠা : ৪২৭)

আরো কথা হচ্ছে, শুধু তারিখের অভিন্নতার দ্বারাই কি এই প্রশ্ন দূর হবে? মনে করুন, গোটা পৃথিবীতে রমযান একই তারিখে শুরু হল, কিন্তু শবে কদর কি সব জায়গায় একসময়েই হবে? বাংলাদেশের মুসলমান যখন সাতাইশের রাত অতিবাহিত করছেন তখন তো কানাডার অধিবাসীরা ২৬ তম রোযা রাখছেন। এই রোযা শেষ করে যখন শবে কদর শুরু করবেন তখন তো বাংলাদেশবাসীর শবে কদর শেষ। শবেকদর তো সূর্যাস্ত থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত, চব্বিশ ঘণ্টা তো নয়। তো এদের মতো অর্থহীন প্রশ্ন যদি কেউ এভাবে করে যে, আসল শবে কদর কোন্টা? বাংলাদেশেরটা, না কানাডারটা। তাহলে এছাড়া এর জবাব আর কী হবে যে, প্রশ্নটাই ভুল ও অর্থহীন।

আল্লাহ তাআলা জাযায়ে খায়ের দান করুন হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ.-কে তিনি এই বিষয়টিও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কারো যদি সংশয় জাগে যে, শবে কদর তো একবারই হয় এবং এক রাতেই হয়। সময়ের ব্যবধান তো জানা কথা। কোথাও রাত থাকে আর কোথাও দিন। কিন্তু শবে কদর তো রাতের সাথেই সম্পৃক্ত। আর তা এক রাতেরই বিষয়। তো যেখানে রাত সেখানে শবে কদর, ঠিক আছে কিন্তু যেখানে দিন সেখানে শবে কদর কীভাবে হবে?

এর জবাব হল, শবে কদর প্রত্যেক স্থানের জন্য আলাদা আলাদা। যেমন আদালত খোলার সময় সকাল দশটায়। তো সব জায়গায় স্থানীয় সময় দশটা বাজেই আদালত খুলবে। কলকাতায় খুলবে কলকাতার সময় মোতাবেক, লন্ডনের সময় মোতাবেক লন্ডনে।

হুকুক ওয়া ফারায়েজ, ওয়াজ : আলওয়াক্ত, খুতুবাতে হাকীমুল উম্মত, খ- : ৪, পৃষ্ঠা : ৪১৮

বগুড়ার চাঁদ, কলকাতার চাঁদ পার্থক্য কোথায়?

কেউ কেউ এভাবেও প্রশ্ন করে থাকেন :

“যদি বগুড়ার চাঁদ দিয়ে ঢাকায় ঈদ হতে পারে তাহলে কলকাতার চাঁদ দিয়ে হতে পারবে না কেন?”

এই প্রশ্নের উদ্দেশ্য সম্ভবত এই যে, ভূ-পৃষ্ঠের উপর বিভিন্ন দেশের যে সীমান্ত রয়েছে সেটা তো নতুন, সেটা স্থায়ী কিছু নয়; বরং পরিবর্তনশীল। অতএব এইসব সীমানা হিলাল বিষয়ক আলোচনার ভিত্তি হতে পারে না। যাকে কেন্দ্র করে বলা যাবে সীমান্তের এপারে হিলাল দেখা গেলে তা গ্রহণযোগ্য। আর ওপারে পাঁচ দশ কিলোমিটার দূরত্বে হিলাল দেখা গেলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। এমন কথা খুবই অযৌক্তিক।

এ প্রশ্নের উত্তর এই যে, এমন কথা তো কেও বলেনি যে, অন্য এলাকার হিলাল গ্রহণযোগ্য হওয়া না হওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সীমানাগুলো মানদ-। এটা কেউ বলেনি, বরং নিকট ও দূরের যেই মাপকাঠি ফিকহ ও ফতোয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত হয়েছে, তার বিচারে যেসকল অঞ্চল হিলাল দেখা যাবার স্থান থেকে নিকটে অবস্থিত সেগুলো নিকটবর্তী। হোক তা অন্য দেশের অন্তর্গত। আর যেসব অঞ্চল হিলাল দৃষ্টিগোচর হবার স্থান থেকে দূরে, সেগুলো দূরবর্তী বলেই গণ্য হবে। যদিও তা এক দেশভুক্ত হয়।

আর সে কারণেই মাসআলা হল, কোনো বড় দেশে উদাহরণস্বরূপ, যদি দুটি শহর এমন হয় যে, একটি একেবারে পূর্ব প্রান্তে আর অন্যটি তার থেকে অনেক দূরে একেবারে পশ্চিম প্রান্তে; এবং শহরদু’টোর উদয়স্থলও সম্পূর্ণ ভিন্ন। তো এক্ষেত্রে মূল বিধান এই যে, পশ্চিমা শহরের হিলাল দেখা মোতাবিক আমল করা পূর্বের শহরের জন্য আবশ্যিক নয়। কিন্তু যদি সরকারপ্রধান কিংবা তার নিযুক্ত করা হিলাল কমিটি একেবারে পশ্চিমে দেখতে পাওয়া হিলালের ভিত্তিতে সমগ্র দেশবাসীর জন্য রোযা কিংবা ঈদের ফায়সালা করে দেন তাহলে এই ফায়সালা গোটা দেশবাসীর জন্য মানা বাধ্যতামূলক। কেননা ‘দূরবর্তী দেখা’ ধর্তব্য হওয়ার ক্ষেত্রেও যেহেতু কোনো কোনো ফকীহের মত রয়েছে, আর জানা কথা যে, সেটাও একটা মুজতাহাদ ফী মত- তাই সরকারপ্রধান কিংবা তার প্রতিনিধি যদি সেই অনুসারে ফায়সালা দিয়ে দেন তাহলে তা অবশ্যপালনীয় হবে। এই বিধান ফিক্হশাস্ত্রের ঐ স্বতঃসিদ্ধ নীতির কারণে, যাতে বলা হয়েছে حُكْمُ الحَاكِمِ يَرْفَعُ الخِلَافَ।

এমনিভাবে কোনো অঞ্চল যদি হিলাল দেখা যাবার স্থানের একেবারে কাছে অবস্থিত হয়, কিন্তু হিলাল দেখা যাবার সেই স্থানটি পড়েছে সীমান্তের বাহিরে, তো এমন ক্ষেত্রে শুধু সীমানার বাহিরে হবার কারণে ওখানকার দেখা গ্রহণযোগ্য হবে না- এমন কথা কেউ বলেওনি, আর না বলা সম্ভব। বরং মাসআলা এটাই যে, যদি এ ধরনের কাছাকাছি অঞ্চলসমূহ (যেমন ঢাকা ও কলকাতা)-এর সংবাদ কিংবা সাক্ষ্য (যে ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি কাম্য) ‘তরীকে মুজিব’-এর মাধ্যমে হিলাল কমিটির কাছে পৌঁছে এবং পৌঁছার মাধ্যম সম্পর্কে ফিকহ ও ফতোয়ার আলোকে তারা এই মর্মে আশ্বস্ত হন যে, এটা ‘তরীকে মুজিব’ তাহলে হিলাল কমিটি অবশ্যই সে মোতাবেক ফায়সালা করবেন।

এখানে মনে রাখা প্রয়োজন, কোনো সংবাদ গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য সংবাদদাতার ব্যক্তিসত্তা ও ন্যায়নিষ্ঠতা সম্পর্কে অবগত হওয়া জরুরি তথা পূর্বশর্ত। যদি ফোনে সংবাদ দেয় তাহলে নিশ্চিত হতে হবে এই কন্ঠ তারই। আর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য শর্ত হল, সাক্ষী ন্যায়পরায়ণ হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তির সামনে উপস্থিত হয়ে ঐ সাক্ষ্য প্রদান করা। ফোনে সাক্ষ্য দান করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। শরীয়তে এর কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।

আশা করি, এই আলোচনা থেকে প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এখন যদি কেউ সৌদি, কানাডা কিংবা হাওয়াই দ্বীপকেই ঢাকার নিকটবর্তী বলতে শুরু করে তাহলে তার চিকিৎসা তো কারো কাছেই নেই। কিংবা যদি কেউ এ কথা বলতে আরম্ভ করে যে, সৌদির হিলাল কমিটির ফায়সালাই বাংলাদেশীদের জন্য যথেষ্ট- তো এই কথা যেমন শরয়ী বিধানের আলোকে গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি দুনিয়ার সাধারণ আইনেও তা কবুলযোগ্য নয়।

কারণ প্রথম কথা তো হল, সৌদির হিলাল কমিটি যেই জায়গার হিলাল দেখার ভিত্তিতে ফায়সালা করেছে সেটা নিকট ও দূরের সকল মাপকাঠির বিচারেই বাংলাদেশ থেকে দূরে। সেজন্য ওখানকার দেখা বাংলাদেশের জন্য এমনিতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

দ্বিতীয় কথা, বাংলাদেশের উপর সৌদি হিলাল কমিটির কর্তৃত্ব নেই। সুতরাং এর সিদ্ধান্ত এখানের জন্য প্রযোজ্য নয়। এটা তাদেরও ফতোয়া, যারা উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য নয় বলে মনে করেন। এ কারণেই শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম পরিষ্কার বলেছেন-

“প্রশ্ন হল, কোনো ব্যক্তি কি এখানে (পাকিস্তান) সৌদি আরবের ফায়সালা অনুযায়ী আমল করতে পারবে? এর উত্তর, এখানে থেকে সৌদি আরবের ফায়সালা অনুযায়ী আমল করা জায়েয হবে না। কেননা সৌদি আরবের ফায়সালার এখানে কর্তৃত্ব নেই।

(ইন্আমুল বারী, বুখারী শরীফের দরস সংকলন, মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী, খ- : ৫, পৃ. ৪৯৭, মাকতাবাতুল হেরা, করাচী)।

এটা তো সর্বস্বীকৃত যে, প্রত্যেক কাযী ও শাসকের ফায়সালা তার এখতিয়ারের গ-িতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। (আলআহকামুস সুলতানিয়্যাহ ওয়ালওলায়াতিদ দীনিয়্যাহ, ইমাম আবুল হাসান মাওয়ারদী, পৃষ্ঠা : ১৪১-১৪২, অধ্যায় : ৬, পরিচ্ছেদ : ৪; আলআহকামুস সুলতানিয়্যাহ, আল্লামা আবু ইয়ালা, পৃষ্ঠা : ৬৮, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা বৈরুত, ১৪২১হিজরী মোতাবেক ২০০০ঈসায়ী)

বিশেষ করে হিলালের ফায়সালার ক্ষেত্রে তো অনেক কিতাবেই বিষয়টি স্পষ্ট বলা হয়েছে। দেখুন : ফাতাওয়া গিয়াছিয়্যাহ, পৃষ্ঠা : ৫০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া, খ- : ৩, পৃষ্ঠা :৩৬৬; বাযযাযিয়া, পৃষ্ঠা : ৯৬ (আলমগীরী : ৪)

আমরা এই প্রবন্ধে পিছনের সংখ্যাগুলোতে কয়েকবার হেদায়া গ্রন্থকারের কিতাব : ‘আত্তাজনীস ওয়াল মাযীদ’-এর হাওয়ালা উল্লেখ করেছি। সেখানে বলা হয়েছে কাযীর কর্মপরিধি যে শহর পর্যন্ত আবদ্ধ, তার হিলাল দেখা বিষয়ক ফায়সালা ঐ শহর ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট শহরতলীর যেসব পল্লী রয়েছে সে পর্যন্তই সীমিত থাকবে। অন্য শহর যদি নিকটবর্তী হয় তবু তা তার কর্মপরিধির সীমা বহির্ভূত হওয়ার কারণে তার সিদ্ধান্ত ওখানে সরাসরি কার্যকর হবে না। তবে নিকটতম হওয়ার কারণে ওখানকার কাযী তার উপর নির্ভর করে (যদি তার কাছে এই রায় শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতে প্রমাণিত হয়ে যায়) নিজ কর্মপরিধির ভিতর হিলালের ফায়সালা করে দেবেন। আর যদি দূরবর্তী হয় তাহলে ফায়সালা করবেন না।

দেখুন : ‘আত্তাজনীস ওয়াল মাযীদ, ইমাম আবু বকর মারগীনানী, হেদায়া গ্রন্থকার খ. ২ পৃ. ৪২৩, ৪৩০-৪৩২।

রাষ্ট্রীয় সীমানা হিলাল সাব্যস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কীভাবে প্রভাব ফেলে?

উপরোক্ত প্রশ্নটিকে আরো ব্যাপক ভাষায় এভাবেও উপস্থাপন করে থাকেন :

যদি মেনে নিই, উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য এবং এজন্য নিকটবর্তী ও দূরবর্তী অঞ্চলের পার্থক্যও স্বীকৃত। কিন্তু প্রশ্ন হল, সৌদির মত বড় রাষ্ট্রে রোযা ও ঈদ একই তারিখে করা হয় কেন? এত বড় দেশের সব অঞ্চলের উদয়স্থল কি অভিন্ন? অথচ সাধারণত এত বড় দেশের এক প্রান্তের উদয়স্থল অন্য প্রান্ত থেকে ভিন্ন হয়ে যায়। আর এত বড় দেশে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের দূরত্ব আলাদা আলাদা দুই দেশের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

অন্যদিকে কাছাকাছি অঞ্চলের ক্ষেত্রে একই হিলালের ভিত্তিতে আমল করা অবশ্য-অনুসরণীয় হয়। তাহলে যশোর/বেনাপোল আর কলকাতায় কেন একই হিলাল দেখা অনুসারে আমল হয় না? শুধু সীমান্তের কাঁটাতারের এপার-ওপার হওয়ার কারণে হুকুম পরিবর্তন হয়ে যায়?

এটা মূলত উপরোক্ত প্রশ্নের আরেকটি রূপ। এর উত্তরও সেই প্রশ্নের উত্তর থেকে বুঝে নেওয়া সহজ। তাও একটু বিস্তারিত বলছি :

এর উত্তর বুঝার জন্য তিনটি মূলনীতি ভালভাবে বুঝতে হবে-

প্রথম মূলনীতি

হেলালের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কার কাজ?

ঐ বন্ধুরা চিন্তা করেননি যে, হেলালের সিদ্ধান্ত কে বাস্তবায়ন করবেন। রোযা ও ঈদের ঘোষণা কি নাগরিকসাধারণের কাজ, না রাষ্ট্রপ্রধান ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দায়িত্বশীলদের কর্তব্য?

সুন্নতে নববী, হাদীস ও আছার এবং ইসলাম ও মুসলমানদের ইতিহাসের উপর যাদের দৃষ্টি আছে, উম্মাহর অবিচ্ছিন্ন কর্মধারা এবং উম্মাহর মুজতাহিদ ও ফকীহগণের ফতোয়াসমূহের বিষয়ে অবগতি আছে তারা জানেন, শরীয়ত রোযা ও ঈদকে ব্যক্তিগত ইবাদতের মতো ব্যক্তির হাতে ছেড়ে দেয়নি; শরীয়ত একে সম্মিলিত ইবাদত সাব্যস্ত করেছে এবং এর ব্যবস্থার ভার অর্পণ করেছে রাষ্ট্রপ্রধান ও তার নায়েবগণের উপর। আর জনসাধারণকে আদেশ করেছে তাদের আনুগত্যের। এ এক ইজমায়ী (সর্বসম্মত) মাসআলা, যাতে নির্ভরযোগ্য কোনো ফিকহী মাযহাবের ভিন্নমত নেই। নবী-যুগ ও খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ থেকে অবিচ্ছিন্ন কর্মধারায় এ নীতি অনুসৃত।

এ প্রসঙ্গে হাদীস-আছার ও ফিকহের কিতাবসমূহের উদ্ধৃতি সহকারে বিশদ আলোচনা করা যায়, কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রবন্ধটি দীর্ঘ হয়ে পড়েছে; তাছাড়া প্রসঙ্গটিও আলাদা প্রবন্ধের দাবি রাখে তাই সংক্ষেপণের স্বার্থে শুধু ক’টি মৌলিক বিষয়ের দিকে ইশারা করছি :

১. হাদীসের যে কোনো কিতাব থেকে রমযান, শাওয়াল ও যুলহিজ্জাহর চাঁদ সংক্রান্ত হাদীস ও আছারগুলো পাঠ করুন এবং ফিকহ-ফতোয়ার যে কোনো কিতাবে সওম ও ঈদের মাসায়েল অধ্যয়ন করুন, তাহলে আপনার কাছে এ বাস্তবতা দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যাবে।

২. হাদীসে দেখুন, যারা চাঁদ দেখেছেন তারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে সাক্ষ্য দিচ্ছেন আর তিনি সাক্ষ্য কবুল করে সওম ও ঈদের ফয়সালা করছেন এবং ঘোষক দ্বারা ঘোষণা করাচ্ছেন। একই অবস্থা ছিল খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগেও।

৩. ইতিহাস ও সীরাতের কিতাবসমূহ পাঠ করুন, দেখবেন, একই অবস্থা পরের আমীর ও খলীফাদের আমলেও ব্যাপকভাবে জারি। কেন্দ্রে এ ফয়সালা করছেন স্বয়ং আমীরুল মুমিনীন, অন্যান্য অঞ্চলে সে জায়গার গভর্নর বা তার আদেশে প্রত্যেক শহরের কাযী (বিচারপতি)।

৪. ফিকহে ইসলামীর যে কোনো গ্রন্থে ‘কিতাবুস সওম’ অংশটি পাঠ করলে দেখবেন, চাঁদ সংক্রান্ত সকল মাসআলা এ মৌলনীতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত যে, চাঁদের প্রসঙ্গ কাযীর উপর ন্যস্ত। তার কাছেই সাক্ষ্য উপস্থাপিত হবে এবং তিনিই তা যাচাই করবেন ও ফয়সালা করবেন।

৫. সাহাবা-তাবেয়ীনের আছার ও চার মাযহাবের ফিকহের কিতাবসমূহে এ মাসআলা আলোচিত হয়েছে যে, এক বা একাধিক ব্যক্তি রমযানের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিল। কিন্তু ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান বা তার নিয়োগকৃত কাযী বা দায়িত্বশীল) কোনো কারণে তার সাক্ষ্য কবুল না করায় ত্রিশ শাবান ধরে সাধারণ জনগণ রোযা থেকে বিরত থাকল, এক্ষেত্রে এ ব্যক্তির করণীয় কী? তেমনি এ মাসআলাও এসেছে যে, দুই ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিল, কিন্তু ইমাম কোনো কারণে সাক্ষ্য রদ করল তো এরা কি অন্যদের সাথে ত্রিশ রোযা রাখবে, না নিজে নিজে ঈদ করবে?

এ বিষয়ক সকল রেওয়ায়েত ও সকল ফিকহী ইবারত পাঠ করুন, কোনো কোনো ফকীহ্র এটুকু কথা তো আপনি পাবেন যে, এ ব্যক্তি চুপে চুপে নিজের রোযা রাখবে, কিন্তু সে অন্যদেরও রোযা রাখার আদেশ করবে- এ অনুমতি কেউ দেননি। তেমনি ঈদের চাঁদের মাসআলাতেও অধিকাংশ ফকীহ বলেছেন, তাকে ত্রিশতম রোযা রাখতে হবে। রোযা না রাখারও অনুমতি নেই, ঈদ করারও অনুমতি নেই। আবার কোনো কোনো ফকীহ বলেছেন, সেদিন সে রোযা রাখবে না তবে তা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকবে। ঈদ তো অবশ্যই করবে অন্য সবার সাথে, একা একদমই নয়।

৬. এসকল মাসাইল দ্বারা একদিকে যেমন পরিষ্কার হয় যে, রমযান ও ঈদের চাঁদের ফয়সালার অধিকার রাষ্ট্রপ্রধানের বা তার পক্ষ হতে নির্ধারিত ব্যক্তি বা মজলিসের; সাক্ষ্য তাদের কাছেই পেশ করা হবে এবং তারাই তা যাচাইয়ের পর শরীয়তের বিধান অনুসারে ফয়সালা জারি করবেন, তেমনি এ সকল মাসাইল থেকে এ-ও প্রতীয়মান হয় যে, ব্যক্তিবিশেষের অন্যদের থেকে আলাদা হওয়ার অনুমতি নেই, এমনকি তারও না, যে নিজ ধারণায় চাঁদ দেখেছে ও তার সাক্ষ্যও দিয়েছে।

৭. ফিকহ ও ফতোয়ার গ্রন্থাদিতে এ মাসআলাও আলোচিত হয়েছে যে, অমুসলিম দেশগুলোতে অবস্থানকারী মুসলিমগণ রোযা ও ঈদ কীভাবে করবেন, যেখানে না আছেন মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান, না কোনো মুসলিম কাযী। তেমনি গ্রামের লোকেরা কী করবেন, যেখানে কোনো কাযী থাকে না। ফিকহ-ফতোয়ার সমকালীন গ্রন্থাবলিতে এ মাসআলাও এসেছে যে, কোনো মুসলিম দেশে সরকারী হেলাল কমিটি আছে, কিন্তু চাঁদের ফয়সালার ক্ষেত্রে তারা শরীয়তের বিধিবিধান অনুসরণ করে না; বরং ফিকহে ইসলামীর ইজমায়ী ও সর্বসম্মত বিধানও লঙ্ঘন করে ফেলে, এক্ষেত্রে মুসলিম জনগণের করণীয় কী।

ফিকহের এ সকল মাসআলাও প্রমাণ করে, চাঁদের ফয়সালার প্রকৃত হকদার হচ্ছেন রাষ্ট্রপ্রধান বা তার পক্ষ হতে নিয়োজিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ। এতে সাধারণ মানুষের না অনুপ্রবেশের হক আছে, না সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার।

হ্যাঁ, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা যদি তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে-একেবারেই পালন না করে বা খোলাখুলিভাবে শরীয়তের নীতি ও বিধান লঙ্ঘন করতে থাকে তখন আলিমদের অবশ্য-কর্তব্য, তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া আর সাধারণ মানুষের কর্তব্য, আলিমদের ফতোয়া অনুযায়ী আমল করা। তবে এক্ষেত্রেও বিচ্ছিন্নতা ও বিশৃঙ্খলার অনুমতি নেই।[3]

এ ফতোয়া শুধু ঐ আলিমদের নয়, যারা উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রাহ্য করেন; বরং এ ফতোয়া তাঁদেরও, যারা উদয়স্থলের ভিন্নতা অগ্রাহ্য করেন। এমনকি সমকালীন ঐসব আলিমেরও, যারা উদয়স্থলের ভিন্নতা অগ্রাহ্য করার মাযহাব থেকেও অগ্রসর হয়ে সরাসরি রোযা ও ঈদে ঐক্যের আহ্বান করেন।

মুনাসিব মনে হচ্ছে, তাঁদের কয়েকজনের ফতোয়া এখানে উল্লেখ করি। আল্লাহ করুন, আমাদের ঐ বন্ধুদেরও সঠিক কথা বুঝে এসে যায়। তবে এর আগে হাদীস ও আছার থেকে আকাবিরে উম্মতের এ সর্বসম্মত ফতোয়ার দু-একটি সূত্র নমুনাস্বরূপ পেশ করা হচ্ছে :

১. তাবেয়ী ইমাম মাসরূক রাহ. বর্ণনা করেছেন, তিনি ও তার সাথী আরাফার দিন আয়েশা রা.-এর নিকটে গেলেন (ঐ দিনটি এমন ছিল, যা ‘ইয়াওমুন নাহর’ হওয়ারও সন্দেহ ছিল) আয়েশা রা. খাদেমাকে বললেন, তাদেরকে সুমিষ্ট করে ছাতুর শরবত পান করাও। আমি যদি রোযাদার না হতাম তাহলে আমিও পান করতাম। মাসরূক ও তার সঙ্গী বললেন, ‘আপনি রোযা রেখেছেন! আজ যদি কোরবানীর দিন হয়ে থাকে?!’ (মাসরূক এ কথাও বলেছিলেন, যে, আমি তো শুধু এই ভেবে রোযা রাখিনি যে, যদি আজ কোরবানীর দিন হয়?’) উম্মুল মুমিনীন বললেন-

إنما يوم الأضحى يوم ضحى الإمام وجماعة الناس.

অর্থাৎ কোরবানীর দিন তো সেটি যেদিন ইমাম ও জনগণ কোরবানী করে।[4]

অন্য বর্ণনায় কথাটি এভাবে আছে-

إنما النحر إذا نحر الإمام وعُظْمُ الناس، والفطرُ إذا أفطر الإمام وعُظْمُ الناس.

অর্থাৎ কোরবানী তো তখন যখন ইমাম (মুসলমানদের রাষ্ট্রপ্রধান) ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কোরবানী করে এবং ইফতার (রোযা না-রাখা) তো তখন যখন ইমাম ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইফতার করে।[5]

অন্য আরেক বর্ণনায় আছে-

إنما يوم النحر يوم ينحرالناس، ويوم الفطر يوم يفطر الناس

অর্থাৎ কোরবানীর দিন তো সেটি যেদিন লোকেরা কোরবানী করে এবং ফিতরের (ঈতুল ফিতরের) দিন তো সেটি যেদিন লোকেরা রোযা ছাড়ে।[6]

(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/১৫৭, হাদীস ৭৩১০; মাসাইলু আহমাদ, আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদ-আহকামুল ইখতিলাফ ফী রুয়াতি হিলালি যিলহিজ্জাহ, ইবনে রজব পৃষ্ঠা : ৩৪-৩৫; কিতাবুল আছার, ইমাম আবু হানীফা, রেওয়ায়েত ইমাম আবু ইউসুফ পৃষ্ঠা : ১৭৯, হাদীস ৮১৮; আসসুনানুল কুবরা বাইহাকী ৪/২৫২)

ইমাম ইবনে রজব রাহ. লেখেন-

فهذا الأثر صحيح عن عائشة رضي الله عنها،إسناده في غايةالصحة، ولايعرف لعائشة مخالف من الصحابة.

অর্থাৎ হযরত আয়েশা রা. থেকে এ বাণী প্রমাণিত। এর সনদ সর্বোচ্চ মানের সহীহ সনদ এবং এ সিদ্ধান্তে তাঁর সাথে কোনো সাহাবীর দ্বিমত পাওয়া যায় না। (আহকামুল ইখতিলাফ, ইবনে রজব পৃষ্ঠা : ৩৬)

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর এ বাণী তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিল না; এ তো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীরই প্রতিধ্বনি। সামনের হাদীসটি দেখুন-

২.         আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

الصوم يوم تصومون، والفطر يوم تُفْطِرُون، والأضحى يوم تُضَحّون.

অর্থাৎ, সিয়াম সেদিন যেদিন তোমরা রোযা রাখ; ‘ফিতর’ সেদিন যেদিন তোমরা রোযা ছাড়। আর কোরবানী সেদিন যেদিন তোমরা কোরবানী কর। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৭০৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৩২৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬৬০; আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৪/২৫১-২৫২)

ইমাম তিরমিযী রাহ. এ হাদীসকে ‘হাসান’ বলেছেন, কিন্তু এর একাধিক সনদ আছে, যার সম্মিলনে তা ‘সহীহ’ হওয়া প্রমাণিত হয়। (আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব, নববী ৭/৪৪৫; আলআলামুল মানশূর, তকীউদ্দীন সুবকী পৃষ্ঠা : ১৮; ফয়যুল কাদীর, মুনাভী ৪/৪৪১; আততালীকুল মুগনী আলা সুনানিদ দারাকুতনী ২/২২৪; ইরওয়াউল গালীল ৪/১১)

ইবনুল মুনকাদির-এর বর্ণনায় আছে, আয়েশা রা. নিজেই আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইরশাদ নকল করেছেন-

عرفة يوم يعرف الإمام، والأضحى يوم يضحي الإمام، والفطر يوم يفطر الإمام

আরাফা সেদিন যেদিন ইমাম আরাফায় উকুফ করে, কোরবানী সেদিন যেদিন ইমাম কোরবানী করে, আর ফিতর সেদিন যেদিন ইমাম রোযা ছাড়ে। (আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৫/১৭৫, باب خطأ الناس يوم عرفة)

রমযান ও ঈদ প্রমাণ হওয়ার বিষয়ে এ হাদীস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে বেশ কিছু মৌলিক মাসআলার দলীল রয়েছে। আমি শুধু দুটি মাসআলা উল্লেখ করছি :

ক. রোযা, ঈদুল ফিতর, কোরবানী ও হজ্ব- এসব ইবাদতের সময় সম্পর্কে ফয়সালা করার অধিকার ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের নয়, এ ফয়সালা করবেন ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) বা তাঁর নায়েব। যেদিন শরয়ী দলীলের ভিত্তিতে ইমাম ও জনগণ রোযা শুরু করবে সেদিনই পয়লা রমযান। যেদিন তারা রোযা ছাড়বে সেদিন ঈদ। যেদিন আরাফায় উকূফ করবে তা হজ্বের দিন আর যেদিন কোরবানী করবে তা কোরবানীর দিন। এসকল বিষয়ে তাদের থেকে আলাদা হওয়ার অধিকার কারো নেই।

ইমাম তিরমিযীর ভাষায়-

وفسر بعض أهل العلم هذا الحديثَ، فقال : إنما معنى هذا : الصوم والفطر مع الجماعة وعُظْم الناس.

এবং আবুল হাসান সিন্ধীর কথায়-

الظاهر أن معناه أن هذه الأمور ليس للآحاد فيها دخل، وليس لهم التفرد فيها، بل الأمر فيها إلى الإمام والجماعة، ويجب على الآحاد اتباعهم للإمام والجماعة.

(হাশিয়াতু সুনানি ইবনে মাজাহ, আবুল হাসান সিন্ধী খ- : ২, পৃষ্ঠা : ৩০৬, দারুল মারিফাহ, বৈরুত)

খ. দায়িত্বশীলরা যখন শরীয়তের বিধান অনুসারে এসকল ইবাদতের মাসের চাঁদ সম্পর্কে ফয়সালা করবেন তো সেটা যদি বাস্তবসম্মত না-ও হয়, যা আমাদের অজানা, তো এ কারণে আল্লাহ্র কাছে কোনো জবাবদিহি হবে না। আল্লাহ তাআলা ইবাদত কবুল করবেন।

ইমাম তকীউদ্দীন সুবকীর ভাষায়-

وهذا معناه -والله أعلم- إذا اجتمع الناس علىذلك فلا يكلفون بما عسى أن يكون فينفس الأمر ولم يعلموا به. (العلم ا لمنشورص১৮)

আরো জানার জন্য দেখুন : মাআলিমুস সুনান, ইমাম আবু সুলায়মান খাত্তাবী (৩৮৮ হি.) ২/৮২; শরহুস সুন্নাহ, ইমাম বগভী ৬/২৪৭-২৪৯; তাহযীবু সুনানি আবু দাউদ, ইবনুল কায়্যিম ৩/২১৩-২১৪; নায়লুল আওতার, শাওকানী ৩/৩৮১; কিতাবুল ঈদাইন; মাআরিফুস সুনান, ইউসুফ বানূরী ৫/৩৫৬-৩৫৭

এ ভূমিকার পর এবার আকাবির আলিমগণের ফতোয়া ভালোভাবে পড়–ন, সেগুলো এই প্রবন্ধে রজব ১৪৩৫হি. (মে ২০১৪ঈ.) সংখ্যায় পৃষ্ঠা ১৫-১৯-এ  প্রকাশিত অংশে উদ্ধৃত হয়েছে (শিরোনাম : ‘চাঁদের বিষয়ে স্বদেশবাসী থেকে আলাদা হওয়া জায়েজ নয়’)। তাঁদের মধ্যে যারা উদয়স্থলের বিভিন্নতা গ্রাহ্য করেন এবং যারা গ্রাহ্য করেন না, আর কিছু আলিম, যারা আরো অগ্রসর হয়ে ঈদ ও সিয়ামের ঐক্যের বিষয়ে উৎসাহ দান করেন তাদের সবাই এ বিষয়ে একমত যে, কারো জন্য নিজ দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ ও মুসলিম জনগণ থেকে রোযা ও ঈদের ক্ষেত্রে আলাদা হওয়া জায়েয নয়।

হিলাল প্রমাণ ও হিলালের ফায়সালা বাস্তবায়ন করা দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে নির্ধারিত দ্বীনী ইলম ও দ্বীনী সমঝের অধিকারী, আমানতদার, বিশ্বস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাজ। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মতামতের কোনো ই‘তিবার নেই। এমনিভাবে নির্ভরযোগ্য দায়িত্বশীল হিলাল কমিটির বিরুদ্ধে মুজতাহাদ ফীহ বিষয়ে শাখাগত মতপার্থক্যের কারণে আওয়াজ তোলাও ঠিক নয়। হাকীমুল উম্মত রাহ. ইমদাদুল ফাতাওয়ায় বড় তাকীদের সাথে এ বিষয়ে সর্তক করেছেন। তিনি বলেছেন-

ظاہرا قواعد سے معلوم ہوتا ہے کہ قاضي کے ساتھ اختلاف نہ کرے نہ عملا نہ اعلاما يا اعمالا… الخ ج ২ ص ১৫৫ طبع جدید شعبان ১৪৩১

প্রথম মূলনীতি হৃদয়ঙ্গম করার পর এবার দ্বিতীয় মূলনীতি পড়ুন!

দ্বিতীয় মূলনীতি

দ্বিতীয় মূলনীতিটি শরীয়তেরও মূলনীতি আবার সাধারণ বিবেক-বুদ্ধির দ্বারাও তা সমর্থিত এবং বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। সেই মূলনীতি হল, যে কোনো হাকিম (শাসক), যে কোনো কাযীর (বিচারক) হুকুম ও সিদ্ধান্ত তার কর্তৃত্বের সীমার মধ্যেই কার্যকর হয়। কর্তৃত্বের বাইরে কারো রায় বা হুকুম কার্যকর হতে পারে না। এই মূলনীতি যেহেতু অতি সুস্পষ্ট এইজন্য এই মূলনীতির বিষয়ে বেশি উদ্ধৃতি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা শুধু হিদায়া লেখক ইমাম আবুল হাসান মারগীনানী রাহ.-এর কিতাব ‘আততাজনীসু ওয়াল মাযীদ’-এর উদ্ধৃতি পেশ করব।

أهل مصر اشتبه عليهم الهلال، فشهد شاهدان عند القاضي برؤيته، وقضى بذلك، لا يظهر هذا الحكم في أهل أمصار أخر، ويظهر في أهل قرى المصر ومحاله.

ولو شهد عند قاضي بلدة شاهدان ولم ير أهله الهلال، أن قاضي مصر كذا قضى بالهلال من وقت كذا، واستجمعت الشرائط، يقضي القاضي به، ذكره في مجموع النوازل.

والمعنى فيه أن في الوجه الأول قاضي هذا المصر ليس له ولاية على مصر آخر، أما له ولاية على القرى، فيظهر قضاؤه على أهل قرى مصره، لا على أهل مصر آخر، وفي الوجه الثاني يلزمهم الصوم بإمضاء قاضي مصرهم، حكمَ قاضي ذلك المصر الأخر… .

قال رضي الله عنه : وهذا إذا تقاربت مطالع البلدتين، أما إذا تباعدت ليس للثاني أن يمضي قضاء الأول في أهل مصره، مطالع سمرقند وبخارا قريب، فيمضي قاضي أحدهما قضاء قاض آخر.

(التجنيس والمزيد ج২ ص ৪৩০-৪৩২، مسألة ১২৪৯، ১২৫০، طبع إدارة القرآن كراتشي)

অর্থ : ১. কোনো শহরের অধিবাসীদের কাছে হিলালের বিষয়টি অমীমাংসিত থেকে গেল। তখন দুজন সাক্ষী কাযীর দরবারে গিয়ে হিলাল দেখার সাক্ষ্য দিল। কাযী সেই সাক্ষ্য মোতাবেক ফায়সালা করে দিলেন। এই ফায়সালা অন্যান্য শহরের অধিবাসীদের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না। অবশ্য এই শহরের অন্তর্গত সকল গ্রাম এবং মহল্লায় কার্যকর হবে।

২. কোনো শহরের অধিবাসীরা হিলাল দেখল না। কিন্তু দুইজন সাক্ষী এসে ঐ শহরের কাযীর কাছে সাক্ষ্য দিল যে, অমুক শহরের কাযী অমুক সময়ে হিলালের ফায়সালা করেছেন। যদি উক্ত সাক্ষ্যে উপযুক্ত শর্তাবলী পাওয়া যায়, তাহলে এই শহরের কাযী সে মোতাবেক ফায়সালা দিয়ে দিবেন।

৩. হিদায়া লেখক বলেন, উল্লেখিত উভয় মাসআলা مجموع النوازل -এ আছে। উভয় মাসআলার হাকীকত হল, প্রথম ক্ষেত্রে অন্যান্য শহরে এই শহরের কাযীর রায় এজন্য কার্যকর হবে না যে, ঐ শহরে তো তার কর্তৃত্ব নেই। কিন্তু তার শহরে এবং শহরের সকল গ্রাম ও মহল্লায় তো তার কর্তৃত্ব আছে, এজন্য এখানে তার রায় কার্যকর হবে।

আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে হল, যখন এই শহরের কাযী অন্য শহরের কাযীর ফায়সালা (তার কাছে শরয়ী পদ্ধতিতে প্রমাণিত হওয়ার পর) এই শহরে কার্যকর করবেন, তখন এই শহরের অধিবাসীদের উপরও রোযা জরুরি হয়ে যাবে।

৪. হিদায়া লেখক বলেন, এই শহরের কাযী যে অন্য শহরের কাযীর ফায়সালা (প্রমাণিত হওয়ার পর) নিজের শহরে কার্যকর করবেন; এটা তখনই পারবেন, যদি উভয় শহরের উদয়স্থল কাছাকাছি হয়। যদি উদয়স্থল দূরে দূরে হয় তাহলে এই শহরের কাযীর জন্য ঐ শহরের কাযীর ফায়সালা নিজের শহরে কার্যকর করা ঠিক হবে না।

৫. হিদায়া লেখক বলেন, (উদাহরণস্বরূপ) সমরকন্দ আর বুখারার উদয়স্থল কাছাকাছি। তো এক্ষেত্রে এক শহরের কাযী অন্য শহরের কাযীর ফায়সালা নিজের শহরে কার্যকর করতে পারবেন।

এই পুরো আলোচনা হেদায়া লেখক তার কিতাব ‘আততাজনীসু ওয়া মাযীদে’র খ- : ২, পৃষ্ঠা : ৪২৩-এ করেছেন। তাঁর পুরো আলোচনা এত স্পষ্ট যে, আমরা মনে করি এর চেয়ে বেশি স্পষ্ট করে বলার প্রয়োজন নেই।

এবার তৃতীয় মূলনীতি পাঠ করুন,

তৃতীয় মূলনীতি

মুজতাহাদ ফীহ পর্যায়ের ইখতিলাফী মাসআলার ক্ষেত্রে হাকিম যদি কোনো এক মত অনুযায়ী ফায়সালা করে দেন তাহলে তার কর্তৃত্বের অধীন অন্য মতাবলবম্বীদের জন্যও তা কার্যকর হয়ে যায়।

এটাও শরয়ী মূলনীতি। চার মাযহাবেরই ফুকাহায়ে কেরামের কাছে এই মূলনীতি স্বীকৃত। এই মূলনীতির শাস্ত্রীয় বাক্য হল, حكم الحاكم يرفع الخلاف। হাকিমের সিদ্ধান্ত তার কর্তৃত্বের সীমায় আমলের ক্ষেত্রে ইখতিলাফ শেষ করে দেয়। অর্থাৎ মুজতাহাদ ফীহ মাসআলার মধ্যে হাকিম যদি কোনো এক মত অনুসারে ফায়সালা করে দেন তাহলে তার এই ফায়সালা তার কর্তৃত্বের মধ্যে বসবাসকারী সকল মানুষের ক্ষেত্রেই  কার্যকর হবে। যদিও এই মাসআলায় তার অধীন কিছু লোক অন্য মতের অনুসারী হোক না কেন?

উপরোক্ত মূলনীতির জন্য ফিকহ ও ঊসূলুল ফিকহের নিমে¥াক্ত কিতাবগুলো দেখা যেতে পারে-

১. ‘বাদায়েউস সানায়ে’, ইমাম কাসানী হানাফী, খ : ৫, পৃষ্ঠা : ৪৫৭-৪৫৮

২. ‘আলফুরূক’, ইমাম কারাফী মালেকী খ : ২, পৃষ্ঠা : ১৯২

৩. ‘আলমানসূর ফিল ফাওয়ায়েদ’, ইমাম যারকাশী শাফেয়ী, খ : ১, পৃষ্ঠা : ৩০৫

৪. ‘আলমুগনী’, ইমাম ইবনে কুদামা হাম্বলী, খ : ১১, পৃষ্ঠা : ৪৭৯

৫. ‘রদ্দুল মুহতার’, আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী হানাফী, খ : ৪, পৃষ্ঠা : ৫৯৭

৬. ‘মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায’, খ : ২০, পৃষ্ঠা : ৪১৩

৭. ‘মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলিল উসাইমীন’, খ : ৪১, পৃষ্ঠা : ১৯

প্রশ্নের জবাব

এই মূলনীতিসমূহের  আলোকে উক্ত প্রশ্ন নিয়ে পর্যালোচনা করা হলে জানা যাবে যে, এই প্রশ্নের সৃষ্টি-ই হয়েছে এ কারণে যে, সংশ্লিষ্ট এইসকল গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি জানা ছিল না; আর নয়তো মাসআলা বিলকুল পরিষ্কার। আমাদের আলোচ্য বিষয়ে উল্লেখিত মূলনীতিগুলোর প্রয়োগের কথা তো দ্বিতীয় শতকের কোনো কোনো ফকীহও উল্লেখ করেছেন। ইমাম মালিক রাহ. (১৭৯হি.)-এর শাগরিদ আবদুল মালিক ইবনুল মাজিশুন (২১২ হি.)-এর বক্তব্য লক্ষ্য করুন। তিনি বলেন-

وإن كان إنما ثبت عند حاكمهم بشهادة شاهدين،لم يلزم ذلك من البلاد،  إلا من كان يلزمه حكم ذلك الحاكم ممن هو في ولايته. أويكون ثبت ذلك عند أمير المؤمنين، فيلزم القضاء جماعة المسلمين. قال: وهذا قول مالك.

…এখানে ইবনুল মাজিশুন ইমাম মালেকের উদ্ধৃতিতে বলেছেন, যদি স্বয়ং আমীরূল মুমিনীনের কাছে হিলাল প্রমাণিত হয়ে যায় আর তিনি তার কর্তৃত্বাধীন সমস্ত অঞ্চলে এর ফায়সালা করে দেন তাহলে সবার জন্য তা অবশ্য-অনুসরণীয় হবে। -তাফসীরে কুরতুবী, খ. ৩ পৃ. ১৫৯; আলমুনতাকা, আবুল ওয়ালিদ খ. ২, পৃ. ৪৩০-৪৩১; আননাওয়াদিরু ওয়ায যিয়াদাত, ইবনে আবী যায়েদ কায়রাওয়ানী খ. ২, পৃ. ১১

ইবনুল মাজিশুনের এই বক্তব্যের আলোচনা হাফেজ ইবনে হাজার রাহ. ফাতহুল বারীতে করেছেন। আরো দেখুন, আলমুফহিম, শরহু সহীহি মুসলিম, ইমাম আবুল আব্বাস আলকুরতুবী (৫৭৮-৬৫৬ হি.), খ- : ৩, পৃষ্ঠা : ১৪২-১৪৪

ইবনে হাজার মাক্কী শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী। তিনি উদয়স্থলের বিভিন্নতা ধর্তব্য হওয়ার মতের প্রবক্তা। কিন্তু তিনি লিখেছেন, কোনো হাকিম যিনি উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য গণ্য করেন না, তিনি যদি তার মত অনুসারে হিলালের ফায়সালা করে দেন তাহলে তার কর্তৃত্বের অধীন সব মানুষের জন্য তার ফায়সালা অবশ্য-অনুসরণীয়। চাই কেউ উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য হওয়ার মতই অবলম্বন করুক। ইবনে হাজার মাক্কীর উক্ত আলোচনা ইবনে আবেদীন শামী রাহ. ‘তাম্বীহুল গাফিলি ওয়ালওসানান’-এ উদ্ধৃত করে এর সাথে সহমত ব্যক্ত করেছেন। মাজমুআয়ে রাসায়েলে ইবনে আবিদীন খ. ১ পৃ. ২৫৩

হিজাযের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব মসজিদে নববীর মুদাররিস শায়খ আতিয়্যাহ মুহাম্মাদ সালেমও তার কিতাব ‘আসসুয়াল ওয়াল জওয়াব ফিল কিতাব’ পৃ. ৫৯-এ আয়াত ২ : ১৮৯-এর অধীনে এ কথাই লিখেছেন। তার আরবী বক্তব্য হল-

إلا أن الذي يجب التنبيه عليه هو أن القطر الواحد مهما تباعدت أطرافه، كالسعودية مثلا- شرقا وغربا شمالا وجنوبا فإن الرؤية فيه من أي بلد فإنها تلزم جميعا لبلدان، لوحدة الولاية والسلطان، ووجوب اتحاد المواطنين بَدْءًا وختاما”

قال الراقم: قوله: ووجوب، كأنه كان الأنسب أن يقول: فيجب اتحاد…

এটাই হল সেই বিষয়, যার জন্য এক দেশ যত বড় আর বিস্তৃত হোক না কোন সেই দেশের অধিবাসীদের একই দিনে রোযা ও ঈদ করতে হবে। এটা মূলত রাষ্ট্রপ্রধানের হুকুমের কারণে। যদিও সেই হুকুম বিশেষ কোনো মাযহাবের বিপরীতে হয় কিন্তু অন্য কোনো মাযহাব অনুযায়ী সঠিক। এরও দলীল আছে এবং মুজতাহাদ ফীহ অভিমতের অন্তর্ভুক্ত।[7]

বাকী থাকল সেই প্রশ্ন যে, যেই হিলালের ভিত্তিতে সারা দেশের মানুষ পরস্পর দূর-দূরান্তে অবস্থান করেও রোযা ও ঈদ করছে। সেই ক্ষেত্রে শুধু সীমান্তের পার্থক্যের কারণে সীমান্তের ওপারের মানুষের জন্য এই হিলাল কেন ধর্তব্য হবে না?

তো এর উত্তরও স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, বিষয় এখানে এই নয় যে, ঐ হিলাল তাদের জন্য ধর্তব্য নয়। বরং হেলালের এই ফায়সালা তাদের জন্য ধর্তব্য নয়; কারণ তারা ফায়সালাকারীদের কর্তৃত্বের বাইরে।

হিদায়ার আলোচনায় আমরা দেখেছি কাছাকাছি অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও শুধু কাযীর কর্তৃত্বের সীমানার বাহিরে থাকার কারণে তার ফয়সালা তাদের উপর কার্যকর হচ্ছে না। সুতরাং কাযীর কর্তৃত্বের বাইরে থাকার কারণে হিলালের সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়া এক কথা আর সেই হিলাল ধর্তব্য না হওয়া ভিন্ন কথা।

যদি দেশের সীমান্তের অপর পাশে এই হিলালের সাক্ষ্য সঠিক পদ্ধতিতে পেশ করা হয় আর সেখানকার দায়িত্বশীল সে অনুযায়ী ফায়সালা করে দেন তাহলে তাদের জন্যও ঐ হিলাল কার্যকর হয়ে যাবে। এটা কেউ অস্বীকার করে না। এ কথা কেউ বলে না যে, রাষ্ট্রের সীমান্তের এপারের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হিলাল দেখার সাক্ষ্য দিলে গ্রহণযোগ্য আর সীমান্তের দশ হাত দূর থেকে এসে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিই কাযীর সামনে সাক্ষ্য দিলে সেটা অগ্রহণযোগ্য!

সতর্কীকরণ

রাষ্ট্রপ্রধানের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ফিকহী ইখতিলাফ খতম হয়ে যায় বলে যে কথা বলা হয়েছে সেখান থেকে কেউ যেন ভুল বুঝার শিকার না হয়। ইখতিলাফ খতম হয়ে যায়- এটা শুধু মুজতাহাদ ফীহ এবং মুখতালাফ ফীহ মাসায়েলের ক্ষেত্রে, মানসূস আলাইহি ও মুজমা আলাইহি মাসায়েলের ক্ষেত্রে এই মূলনীতি প্রযোজ্য নয়। সুতরাং দুর্ভাগ্যবশতঃ কোনো রাষ্ট্রপ্রধান যদি শরীয়তের ইজমায়ী হুকুম হিলাল দেখার বিধান অগ্রাহ্য করে জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাবের ভিত্তিতে চান্দ্রমাস শুরু করার ফায়সালা করে তাহলে তার এই ফায়সালা কার্যকর হবে না। এই ক্ষেত্রে তার অনুসরণ করা কখনোই জায়েয হবে না।

এক কথায় শরীয়ত-বিরোধী কোনো ফায়সালা এবং শরীয়ত-বিরোধী কোনো আইনের ক্ষেত্রে কারো আনুগত্য জায়েজ নেই। শরীয়তের অকাট্য হুকুম-

لا طاعة لمخلوق في  معصية الله عز وجل.

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের উপর ইস্তেকামাত দান করেন এবং সকল প্রকার প্রান্তিকতা থেকে রক্ষা করেন- আমীন। হ


[1] ১. একপক্ষ থেকে এই অন্যায় প্রশ্ন তোলা হলে তো অন্য পক্ষ থেকেও প্রশ্ন উঠতে পারে যে, সৌদিআরবের অধিবাসীরা! আপনারা শা‘বানের ত্রিশ তারিখে কেন রোযা রাখছেন? রমযানের ঊনত্রিশ/ত্রিশ তারিখে কেন রোযা রাখেননি? আর রমযান মাসেই কেন ঈদ করে ফেললেন? ৯ যিলহজে¦ কুরবানী করছেন কেন? তো এই প্রশ্নগুলো যেমন অন্যায় ঐগুলোও অন্যায়। তবে হাঁ, যারা এ অঞ্চলে অবস্থান করে এখানের উলামা ও দায়িত্বশীলদের ছেড়ে সৌদির অনুসরণের দাবি করে তাদের ব্যাপারে এই প্রশ্নগুলো যৌক্তিক ও যথার্থ। কারণ, তাদের আমল কোনো মুজতাহাদ ফী মাসলাক অনুসারে নয়। বরং শায ও বিচ্ছিন্ন মতানুসারে হচ্ছে। তাই তাদের উপর এমন আপত্তি উত্থাপন করা যথাযথ হবে।

[2] ২. এ বিষয়ে সুন্দর আলোচনা রয়েছে ‘ফাতাওয়া আসহাবুল হাদীস’ কিতাবে, যার লেখক শায়েখ আবু মুহাম্মাদ হাফেজ আব্দুস সাত্তার, পৃষ্ঠা : ২২০-২২১, আলকিতাব ইন্টারন্যাশনাল, জামেয়া নগর, নয়াদিল্লী। আরো দেখুন, মাসিক আলকাউসারের জানুয়ারী ২০১৩ সংখ্যায় প্রকাশিত মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ্র প্রবন্ধ।

[3] ৩. قال الراقم : ولا يغرن أحدا ما وقع في البحر ورد المحتار من أن هلال رمضان لا يدخل تحت الحكم، فإن عدم دخول شيء تحت الحكم أو القضاء من حيث الاصطلاح لا يلزم منه أن لا يكون ذلك الشيء من فرائض الحاكم والقاضي، فهلال رمضان وإن كان مما لا يدخل تحت الحكم فهو وهلال شوال لا ريب في كون الحكم بثبوتهما من فرائض الولاة أو نوابهم من القضاة والحكام، وهذا أمر معلوم من التاريخ ضرورة. وتأمل كم من مسألة في البحر ورد المحتار بنيت على أن أمر الهلال، هلال رمضان كان أو هلال شوال، إلى الخليفة أو نائبه من وال أو قاض، بل قد وقع التصريح بكون أمر العيد إلى السلطان في كتب العقائد أيضا، راجع منها على سبيل المثال كتاب >العقائد النسفية< للإمام أبي حفص عمر النسفي المتوفى سنة ৫৩৭هـ، ومعلوم أن هلال العيد (أعني عيد الفطر ) تابع لهلال رمضان، فكيف لا يكون أمر هلال رمضان من فرائض السلطان؟

من أجل تلك العبارات المبهمة والموهمة التي وقعت في “رد المحتار” وغيره من كتبنا، وبعض كتب المذاهب الأخرى اشتبه الأمر على بعض المصنفين، فوقعوا في تخليط في هذا الباب، كما تراه عند بخيت المطيعي، ومحمد بن عبد الرزاق المَرّاكُشِي، وأحمد الغُماري وغيرهم، فلا تغتر بكلامهم وتذكر ما قاله العلامة السيد يوسف البنوري رحمه الله تعالى في معارف السنن ৫⁄৩৫৭ في باب ما جاء أن الفطر يوم تفطرون والأضحى يوم تضحون، تحت قول الإمام الترمذي : وفسر بعض أهل العلم هذا الحديث،  فقال : إنما معنى هذا الصوم والفطر مع الجماعة وعُظْم الناس.

قال البنوري رحمه الله تعالى : ومن هنا أدار الفقهاء حكم ثبوت الهلال على قضاء القاضي، ثم ما يذكر في كتب الفقه من أن القضاء لا ينفذ إلا في المعاملات ولا مدخل له في العبادات، فقال الشيخ الإمام (أنور شاه الكشميري) : ليس هذا مطردا عاما، فإنا نجد لقضاء القاضي مدخلا في العبادات، ألا ترى أن إقامة الحج والأعياد وصلاة الكسوف مفوضة إلى الإمام والحاكم، …، وكذلك الصيام يحتاج ثبوتها إلى حكم القاضي على الشهادة أو الإخبار عند الغيم، فإن رد القاضي الشهادة لا يكون قوله حجة.

[4] ৪. এ রেওয়ায়েতটি ইমাম ইবনে রজব রাহ. আহকামুল ইখতিলাফ ফি রুইয়াতি হিলালি যিলহিজ্জায় (পৃষ্ঠা : ৩৪-৩৫) মাসায়েলে আব্দুল্লাহ আন আবিহীর সূত্রে সনদসহ নকল করেন, যা সহীহ। ইমাম আহমাদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনাটি আব্দুর রহমান ইবনে মাহদীর মাধ্যমে নকল করেন-

(ابن مهدي: عن سفيان، عن أبي إسحاق، عن أبي عطية ومسروق قالا: دخلنا على عائشة…)।

[5] ৫. এ রেওয়ায়েত মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, খ- : ৪, পৃষ্ঠা : ১৫৭, রেওয়ায়েত : ৭৩১০-এ বর্ণিত হয়েছে। এ বর্ণনাও সঠিক।

سوى أن جعفر بن برقان قال: >عن الحكم أو غيره عن مسروق<، فإن كان غير الحكم فهو مبهم، ولكن هذا ضعف خفيف لا يضر، فإن الرواية السابقة الصحيحة شاهدة لهذه الرواية، مع شواهد أخرى كثيرة مذكورة في كتاب ابن رجب وغيره (عبد المالك)

[6] ৬. এটি রেওয়ায়েত করেছেন ইমাম আহমাদ, সনদ সহীহ।

(أحمد عن ابن نمير وابن فضيل كليهما، عن الأعمش عن أبي إسحاق به)

দেখুন ‘আহকামুল ইখতিলাফি ফী রুয়াতি হিলালি যিলহিজ্জা’, ইমাম ইবনে রজব, ‘মাসাইলু আহমাদ’ আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদের উদ্ধৃতিতে।

[7] ৭.  যদি  খোশ  কিসমতের কারণে সমগ্র বিশ্বই এক মুসলিম শাসকের অধীনে চলে আসে তখন সময়ের ব্যবধানের কারণে এমনিতেই পৃথিবীকে ভাগ করতে হবে। সেখানে শুধু শুধু ফায়সালা করে দিলে কাজ হবে না। কারণ অতি বেশি দূর দূরান্তের অঞ্চল হলে তো সকল ফকীহের ইজমা অনুযায়ী এক জায়গার দেখা অন্য জায়গার জন্য প্রযোজ্য নয়। (আলইসতিযকার, মাআরিফুস সুনান, আততামহীদ) তাছাড়া সেটা কার্যক্ষেত্রে সম্ভবই নয়।

শাবান-রমযান ১৪৩৯ – মে-জুন ২০১৮

মাসিক আল কাউসার