নেকনিয়্যাত! – শায়খ আতিক উল্লাহ (দা.বা)

(১): নিয়্যাত আমলের ভিত্তি। নিয়্যাত একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। আমি নেক আমলের নিয়্যাত করলে, নিয়্যতের জন্য আলাদা করে সওয়াব পাবো। সবার পক্ষে সব আমল করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। কিন্তু নেকআমলের নিয়্যাত সবার পক্ষেই করা সম্ভব। আমি শহীদ হতে পারছি না আপাতত, কিন্তু নিয়্যাত করতে বাধা কোথায়? নিছক নিয়্যত থাকলেও আল্লাহ তা‘আলা বড় প্রতিদান দিয়ে দেন।

(২): বদরে বন্দী হয়েছে সত্তরজন কুরাইশ। তাদের উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে,
إِن يَعْلَمِ اللَّهُ فِي قُلُوبِكُمْ خَيْرًا يُؤْتِكُمْ خَيْرًا مِّمَّا أُخِذَ مِنكُمْ
আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালো কিছু দেখলে তোমাদের থেকে যে সম্পদ (ফিদয়ারূপে) নেওয়া হয়েছে, তোমাদেরকে তা অপেক্ষা উত্তম কিছু দান করবেন (আনফাল ৭০)।

(৩): ভালো কিছু দেখার অর্থ যারা ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, তারা আসলেই আন্তরিকভাবে ইসলাম গ্রহনের ইচ্ছা করেছে কি না, সেটা। পরবর্তীতে দেখা গেছে, যারা প্রকৃতই ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছা করেছিলেন, সকলেই পরবর্তীতে প্রভূত কল্যাণের অধিকারী হয়েছিলেন।

(৪): নেকনিয়্যাত যেমন কল্যাণ বয়ে আনে, তদ্রুপ বদনিয়্যাত অকল্যাণ বয়ে আনে,
فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا ۖ
তাদের অন্তরে আছে রোগ। আল্লাহ তাদের রোগ আরও বৃদ্ধি করে দিলেন (বাকারা ১০)।

(৫): নেক নিয়তের জন্য বিশুদ্ধ কলব প্রয়োজন। আধার পবিত্র না হলে, আধেয় পবিত্র হতে পারে না। আল্লাহর কাছে বিশুদ্ধ চিত্তের অনেক দাম,
يَوْمَ لَا يَنفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ إِلَّا مَنْ أَتَى اللَّهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ
যে দিন কোনও অর্থ-সম্পদ কাজে আসবে না এবং সন্তান-সন্ততিও না। তবে যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে সুস্থ মন নিয়ে (সে মুক্তি পাবে) শু‘আরা ৮৮-৮৯।

(৬): নিয়্যাতের কারণে, অনেক ছোট আমলও অনেক বড় হয়ে যায়। নিয়্যাত না করে, গাফলতের সাথে আমল করার কারণে, অনেক বড় আমলও ছোট হয়ে যায়।

(৭): নিয়্যাত ‘আদত’ (অভ্যেসকে) ইবাদতে পরিণত করে। যেমন আমার আদত হল, রাতে একটু বেশি পানি খাওয়া। এমনিতেই। আমি যদি নিয়্যাত করি, বেশি পানি পান করছি, তাহলে ভোররাতে হাম্মামের প্রয়োজনে হলেও উঠতে বাধ্য হব। ব্যস আদতটা ইবাদত হয়ে গেল। আমি দিনে ও রাতে এমন অসংখ্য কাজ করি, অভ্যেসের বশে। কোনও সওয়াব পাই না। পাওয়ার কথাও নয়। চাকুরি, মানুষের সাথে সম্পর্ক ইত্যাদি। আমি মুসলিম ভাইয়ের সাথে সুসম্পর্ক রাখার নিয়তে তার সাথে কথা বললাম, ব্যস ইবাদত হয়ে গেল। সাহাবায়ে কেরাম প্রতিটি কাজকে ইবাদতে রূপান্তরিত করতেন। এমনকি রাতের আরামদায়ক ঘুমকেও। কিভাবে? নিয়্যাতের মাধ্যমে? আমি দিনে হালাল রিযিক অন্বেষণের শক্তি অর্জনের জন্য ঘুমুচ্ছি।

(৮): নিয়্যাত গোপন বিষয়। অদৃশ্য, দেখা যায় না। আমল বাহ্যিক প্রকাশ্য বিষয়। দেখা যায়। তারপরও আমলের চেয়ে নিয়্যতের শক্তি অনেক বেশি। আমলবিহীন নেকনিয়্যত ফলদায়ক। নিয়্যতবিহীন নেকআমল ফলদায়ক নয়, অনেক সময় ক্ষতিকরও হয়। নিকনিয়্যত, অল্প আমলের মানুষকেও অনেক উপরে উঠিয়ে নিয়ে যায়। মন্দনিয়্যত মানুষকে অধঃপতিত করে দেয়। আমলটা না করলেও, তার পতন রোধ হয় না।

(৯): নেকনিয়্যত ব্যক্তির জীবনে অনেক গভীর প্রভাব ফেলে। নিয়্যতের পর আমলটা করলে, আল্লাহ তার আমলে অনেক বরকত দান করেন। তার জীবনেও বরকত দান করেন। নেকনিয়্যাতের আমল করতে গিয়ে ভুল করে ফেললেও, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা কল্যাণকামীকে কখনো হতাশ করেন না।

(১০): প্রতিটি কাজের আগে নিয়্যত করে নেয়া জরুরী। এমনকি ছোট্ট একটা কথা বলার আগেও। কথার চেয়ে নিয়তের মূল্য বেশি। অনেক সময় ছোট্ট একটি কথা, বিশাল একটি বইয়ের চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে।

(১১): ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিয়্যত শর্ত। নিয়্যতের স্থান হল কলব। নিয়্যত করতে হলে বেশি কিছু করতে হয় না। শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজটা করার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করা।

(১২): মুবাহ বা বৈধ কাজ, নেকনিয়্যতের কারণে ইবাদত হয়ে যায়।

(১৩) একআমল একনিয়্যত, এমনটা হতেই হবে এটা জরুরী নয়। একটা আমলে কয়েকটা নিয়্যত হতে পারে। যত নিয়্যত তত সওয়াব, এই চিন্তা মাথায় রেখে, আমি একেকটা আমলের শুরুতে, মাঝে, শেষে নেকনিয়্যতের নবায়ন করতে পারি। নতুন নিয়্যত নতুন সওয়াব। নতুন নিয়্যত নতুন আমল। আমি একটা আমলকেই কয়েকটা আমলে রূপান্তরিত করতে পারি। অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ।

(১৪): নেকনিয়্যতের মাধ্যমে মানুষ এমন স্থানে পৌঁছতে পারে, আমল দ্বারা সেখানে পৌঁছা তার পক্ষে হয়তো সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমার জীবন সসীম, আমলের সুযোগও সসীম। কিন্তু আমি সসীম জীবনে অসীম আমলের নিয়্যত করে, জীবনকেও অসীমের ছোঁয়া দিতে পারি। রাব্বে কারীমের রহমতের ভাণ্ডারে কি কমতি আছে?