হযরত ইউসুফ (আঃ) – ১৩

‘বুরহান’ কি?

لَوْلا أَن رَّآى بُرْهَانَ رَبِّهِ ‘যদি সে তার পালনকর্তার প্রমাণ না দেখত’ এ কথার মধ্যে কোন্ প্রমাণ ইউসুফকে দেখানো হয়েছিল, সেটা বলা হয়নি। তবে কুরআনে মানুষের তিনটি নফসের কথা বলা হয়েছে। (১) নফসে আম্মারাহ। যা মানুষকে অন্যায় কাজে প্ররোচিত করে (২) নফসে লাউয়ামাহ। যা মানুষকে ন্যায় কাজে উদ্বুদ্ধ করে ও অন্যায় কাজে বাধা দেয় এবং (৩) নফসে মুত্বমাইন্নাহ, যা মানুষকে ন্যায়ের উপর দৃঢ় রাখে, আর তাতে দেহমনে প্রশান্তি আসে। নবীগণের মধ্যে শেষের দু’টি নফস সর্বাধিক জোরালোভাবে ক্রিয়াশীল থাকে। আর নফসে লাউয়ামাহ বা বিবেকের তীব্র কষাঘাতকেই এখানে ‘বুরহান’ বা ‘আল্লাহর প্রমাণ’ হিসাবে বলা হয়ে থাকতে পারে। যেমন হাদীছে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছিরাতে মুস্তাক্বীমের উদাহরণ বর্ণনা করে তার মাথায় একজন আহবানকারীর কথা বলেছেন, যিনি সর্বদা মানুষকে ধমক দেন যখনই সে অন্যায়ের কল্পনা করে। তিনি বলেন, খবরদার! নিষিদ্ধ পর্দা উত্তোলন করো না। করলেই তুমি তাতে প্রবেশ করবে। এই ধমকদানকারীকে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) واعظُ اللهِ في قلبِ كلِّ مؤمنٍ ‘প্রত্যেক মুমিনের হৃদয়ে আল্লাহর উপদেশদাতা’ হিসাবে অভিহিত করেছেন’।[39] ইউসুফের হৃদয়ে নিশ্চয়ই ঐ ধমকদাতা উপদেশ দানকারী মওজুদ ছিলেন যাকে (بُرْهَانَ رَبِّهِ) বা ‘আল্লাহর প্রমাণ’ বলা হয়েছে।

অতএব এখানে ‘বুরহান’ বা প্রমাণ বলতে যেনার মত জঘন্য অপকর্মের বিরুদ্ধে বিবেকের তীব্র কষাঘাতকেই বুঝানো হয়েছে। যা নবীগণের হৃদয়ে আল্লাহ প্রোথিত রাখেন। ইমাম জা‘ফর ছাদিক্ব বলেন, ‘বুরহান’ অর্থ নবুঅত, যাকে আল্লাহ নবীগণের হৃদয়ে গ্রথিত রাখেন। যা তার মধ্যে এবং আল্লাহর ক্রোধপূর্ণ কাজের মধ্যে প্রতিবন্ধক হিসাবে কাজ করে। অতএব ‘বুরহান’ অর্থ নবুঅতের নিষ্পাপত্ব, যা ইউসুফকে উক্ত পাপ থেকে বিরত রাখে।

৬. আয়াত সংখ্যা ২৬ : (وَشَهِدَ شَاهِدٌ مِّنْ أَهْلِهَا) ‘আর মহিলার পরিবারের জনৈক ব্যক্তি সাক্ষ্য দিল’। কিন্তু কে সেই সাক্ষী? এ নিয়ে মুফাসসিরগণের মধ্যে প্রচুর মতভেদ রয়েছে। যেমন কেউ বলেছেন এটি ছিল দোলনার শিশু, কেউ বলেছেন, মহিলার এক দূরদর্শী চাচাতো ভাই, কেউ বলেছেন, তিনি মানুষ বা জিন ছিলেন না, বরং আল্লাহর অন্য এক সৃষ্টি ছিলেন। ছাহাবী ও তাবেঈগণের নামেই উক্ত মতভেদগুলি বর্ণিত হয়েছে। অথচ কুরআন স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছে যে, ‘ঐ ব্যক্তি ছিলেন মহিলার পরিবারের সদস্য’ (ইউসুফ ২৬)। এটা বুঝতে মোটেই কষ্ট হয় না যে, লোকটি ছিলেন নিরপেক্ষ ও অত্যন্ত জ্ঞানী ব্যক্তি এবং তিনি ছিলেন আযীযে মিছরের নিকটতম লোক। নইলে তিনি তার সঙ্গে অন্দরমহলে আসতে পারতেন না।

দুর্ভাগ্য যে, এ প্রসঙ্গে একটি হাদীছও বলা হয়ে থাকে। সেখানে বলা হয়েছে যে, চার জন শিশু দোলনায় থাকতে কথা বলেছে, তার মধ্যে ইউসুফের সাক্ষী একজন। চারজনের মধ্যে তিন জনের বিষয়টি সঠিক। কিন্তু ইউসুফের সাক্ষী কথাটি মিথ্যা। যার কারণে হাদীছটি যঈফ।[40] ঐ তিন জন হ’লেন, ঈসা (আঃ), ২- জুরায়েজ নামক বনু ইস্রাঈলের জনৈক সৎ ব্যক্তি, যাকে এক দুষ্টু মহিলা যেনার অপবাদ দেয়। পরে তার বাচ্চা স্বয়ং জুরায়েজ-এর নির্দোষিতার সাক্ষ্য দেয় ও প্রকৃত যেনাকারীর নাম বলে দেয় (মুত্তাফাক্ব আলাইহ)। ৩- শেষনবীর জন্মগ্রহণের প্রায় ৪০ বছর পূর্বে সংঘটিত আছহাবুল উখদূদের ঘটনা, যেখানে এক যালেম শাসক বহু গর্ত খুঁড়ে সেখানে আগুন জ্বালিয়ে একদিনে প্রায় বিশ হাযার মতান্তরে সত্তুর হাযার ঈমানদার নর-নারীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। সে সময় একজন মহিলা তার কোলে থাকা দুধের বাচ্চাকে নিয়ে আগুনে ঝাঁপ দিতে ইতস্তত করায় শিশু পুত্রটি বলে উঠেছিল إصبِرى يااُمَّهْ فإنكِ على الحق ‘ছবর কর মা! কেননা তুমি সত্যের উপরে আছ’।[41] এইসব ছহীহ হাদীছের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ইউসুফের সাক্ষীর নাম। অথচ কুরআন স্পষ্টভাবেই বলে দিয়েছে যে, সাক্ষী ছিলেন মহিলাটির পরিবারের একজন ব্যক্তি। তাছাড়া আরও বলে দিয়েছে উক্ত ব্যক্তির দূরদর্শিতাপূর্ণ পরামর্শ যে, যদি ইউসুফের জামা পিছন দিকে ছেঁড়া হয়, তাহ’লে সে সত্যবাদী’ (ইউসুফ ২৭)। এক্ষণে কীভাবে একথা বলা যায় যে, ঐ সাক্ষী ছিল দোলনার শিশু বা আল্লাহর অন্য এক সৃষ্টি? যদি তাই হবে, তাহ’লে সেটাই তো যথেষ্ট ছিল। অন্য কোন তদন্তের দরকার ছিল না বা ইউসুফকে হয়ত জেলও খাটতে হ’ত না।

৭. আয়াত সংখ্যা ২৮ : (إِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيمٌ) ‘নিশ্চয়ই তোমাদের ছলনা খুবই মারাত্মক’। এই আয়াতের সঙ্গে যদি অন্য একটি আয়াত মিলানো হয়, যেখানে বলা হয়েছে যে, إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيْفاً ‘নিশ্চয়ই শয়তানের কৌশল সর্বদা দুর্বল’ (নিসা ৭৬)। তাহ’লে ফলাফল দাঁড়াবে এই যে, মহিলারা শয়তানের চাইতে মারাত্মক। ইমাম কুরতুবী এর পক্ষে একটি মরফূ হাদীছ এনেছেন, যেখানে বলা হয়েছে যে, إنَّ كَيْدَ النِّسَاءِ أَعْظَمُ مِنْ كَيْدِ الشَّيْطَانِ ‘নিশ্চয়ই নারীদের ছলনা শয়তানের ছলনার চাইতে বড়’। অথচ হাদীছটি যঈফ ও জাল।[42] অথচ শয়তানকে আল্লাহ ক্ষমতা দিয়েছেন মানুষকে পথভ্রষ্ট করার। আর এটা করেছেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য, কে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আর কে না পড়ে। পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে ভাল ও মন্দ রয়েছে। উভয়ে শয়তানের খপ্পরে পড়তে পারে। কিন্তু কেউই শয়তানের চাইতে বড় নয়। আলোচ্য আয়াতে দুষ্টু নারীদের ছলনার ভয়ংকরতা বুঝানো হয়েছে। যেকথা একটি ছহীহ হাদীছে আল্লাহর রাসূলও বলেছেন যে, ‘জ্ঞানী পুরুষকে হতবুদ্ধি করার মোক্ষম হাতিয়ার হ’ল নারী’।[43] কেননা সাধারণ নীতি এই যে, নারীর প্রতি পুরুষ সহজে দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু তাই বলে এর অর্থ এটা নয় যে, নারীদের ছলনা শয়তানের চাইতে বড়। এ ধরনের ব্যাখ্যা নারী জাতিকে অপমান করার শামিল।

৮. আয়াত সংখ্যা ৪২ : (اذْكُرْنِيْ عِنْدَ رَبِّكَ فَأَنسَاهُ الشَّيْطَانُ ذِكْرَ رَبِّهِ فَلَبِثَ فِي السِّجْنِ بِضْعَ سِنِيْنَ) ‘যে কারাবন্দী সম্পর্কে ইউসুফের ধারণা ছিল যে, সে মুক্তি পাবে, তাকে সে বলে দিল যে, তুমি তোমার মনিবের কাছে আমার কথা আলোচনা করো। কিন্তু শয়তান তাকে তা ভুলিয়ে দেয় ফলে তাঁকে কয়েক বছর কারাগারে থাকতে হয়’।

মালেক ইবনে দীনার, হাসান বাছরী, কা‘ব আল-আহবার, ওহাব বিন মুনাবিবহ ও অন্যান্য বিদ্বানগণের নামে এখানে বিষ্ময়কর সব তাফসীর বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন আইয়ূব রোগভোগ করেন সাত বছর, ইউসুফ কারাভোগ করেন সাত বছর, বুখতানছর আকৃতি পরিবর্তনের শাস্তি ভোগ করেন সাত বছর’ (কুরতুবী)। আমরা বুঝতে পারি না আল্লাহর নবীগণের সাথে ফিলিস্তীনে ইহুদী নির্যাতনকারী নিষ্ঠুর রাজা বুখতানছরের তুলনা করার মধ্যে কি সামঞ্জস্য রয়েছে?

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, ইউসুফ যখন কারাবন্দী সাক্ষীকে উক্ত কথা বলেন, তখন তাকে বলা হয়, হে ইউসুফ! তুমি আমাকে ছেড়ে অন্যকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করলে? অতএব শাস্তি স্বরূপ আমি তোমার কারাভোগের মেয়াদ বাড়িয়ে দিলাম। তখন ইউসুফ কেঁদে উঠে বললেন, হে আমার পালনকর্তা! বিপদ সমূহের বোঝা আমার অন্তরকে ভুলিয়ে দিয়েছে। সেজন্য আমি একটি কথা বলে ফেলেছি। আর কখনো এরূপ বলব না’।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, জিবরীল কারাগারে প্রবেশ করলেন এবং ইউসুফকে বললেন, বিশ্বপালক তোমাকে সালাম দিয়েছেন এবং তোমাকে বলেছেন যে, ইউসুফ! তোমার কি লজ্জা হয়নি যে, তুমি আমাকে ছেড়ে মানুষের কাছে সুফারিশ করলে? অতএব আমার সম্মান ও উচ্চ মর্যাদার কসম! অবশ্যই আমি তোমাকে কয়েক বছর জেলে রাখব। ইউসুফ বললেন, এর পরেও কি তিনি আমার উপর সন্তুষ্ট আছেন? জিব্রীল বললেন, হ্যাঁ আছেন। তখন ইউসুফ বললেন, তাহ’লে আমি কিছুরই পরোয়া করি না’।

অন্য একজন মুফাসসির বলেছেন, পাঁচ বছর জেল খাটার পরে এই ঘটনা ঘটে। ফলে শাস্তি স্বরূপ তাঁকে আরো সাত বছর জেল খাটতে হয়। এরপর তাঁর মুক্তির অনুমতি হয় এবং বাদশাহ স্বপ্ন দেখেন ও সেই অসীলায় তাঁর মুক্তি হয়’। এভাবে কেউ বলেছেন ১২ বছর, কেউ বলেছেন ১৪ বছর জেল খেটেছেন (ইবনু কাছীর)। তবে অধিকাংশের মতে ৭ বছর। আর কুরআনে রয়েছে কেবল بضع سنين যার অর্থ হ’ল কয়েক বছর, যা ৩ থেকে ৯ অথবা ১০ বছরের মধ্যে (কুরতুবী)

মূলতঃ ইহুদী লেখকরা ইউসুফ (আঃ)-এর কারাভোগকে তাঁর অপরাধের শাস্তি হিসাবে প্রমাণ করার জন্য এরূপ গল্প বানিয়েছে। অথচ এটা আদৌ কোন অপরাধ নয়। কেননা ছহীহ হাদীছে এসেছে, ‘আল্লাহ মানুষের সাহায্যে অতক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ মানুষ মানুষের সাহায্যে থাকে’।[44] অতএব একজন মানুষ আরেকজন মানুষের কাছে সাহায্য চাইবে এবং পরস্পরকে সাহায্য করবে, এটাই স্বাভাবিক এবং এতে অশেষ নেকী রয়েছে। কিন্তু অপরাধ হ’ল সেটাই যখন জীবিত ব্যক্তি কোন মৃত ব্যক্তি বা কোন বস্ত্তর কাছে সাহায্য চায়, অথচ তার কোন ক্ষমতা নেই। মুসলিম তাফসীরকারগণও এক্ষেত্রে ধোঁকায় পড়েছেন। এমনকি উক্ত মর্মে ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে রাসূলের নামে একটি হাদীছও বর্ণিত হয়েছে যে, رحم الله يوسف لولم يقل الكلمة التي قالها ما لبث في السجن طول ما لبث، حيث يبتغي الفرج من عند غير الله- ‘ইউসুফের উপর আল্লাহ রহম করুন! যদি তিনি ঐ কথা না বলতেন যা তিনি কারা সাথীকে বলেছিলেন, তাহ’লে এত দীর্ঘ সময় তাঁকে কারাগারে থাকতে হতো না। কেননা তিনি কারামুক্তির জন্য আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সাহায্য কামনা করেছিলেন’।[45] অথচ হাদীছটি মুনকার ও যঈফ এবং অত্যন্ত দুর্বল। যা থেকে কোন দলীল গ্রহণ করা যায় না (হাশিয়া কুরতুবী; ইবনু কাছীর)। এর বিপরীত ছহীহ হাদীছে আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لولَبِثْتَ فى السِّجْنِ ما لَبِثَ يوسفُ لأَجَبْتُ الداعِيَ ‘ইউসুফ যতদিন জেল খেটেছেন, অতদিন যদি আমি জেল খাটতাম, তাহ’লে আমি বাদশাহর দূতের ডাকে সাড়া দিতাম’।[46] অন্য বর্ণনায় এসেছে, لو كنت أنا لأسرعتُ الإجابةَ وما ابتغيتُ العذرَ ‘যদি আমি হ’তাম, তাহ’লে দ্রুত সাড়া দিতাম এবং কোনরূপ ওযর করতাম না’।[47]

বস্ত্ততঃ এটি ছিল নবী হিসাবে ইউসুফ (আঃ)-এর পরীক্ষা। আর নবীগণই দুনিয়াতে বেশী পরীক্ষিত হন, যা বহু ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।[48]

৯. আয়াত সংখ্যা ৫২ : (ذَلِكَ لِيَعْلَمَ أَنِّي لَمْ أَخُنْهُ بِالْغَيْبِ) ‘এটা এজন্য যাতে গৃহস্বামী জানতে পারেন যে, আমি তার অগোচরে তার সাথে কোন বিশ্বাসঘাতকতা করিনি’।

এখানে ‘আমি’ কে? গৃহকত্রী না ইউসুফ? বড় বড় মুফাসসিরগণ লিখেছেন, ইউসুফ। এজন্য ইবনু আববাস (রাঃ)-এর নামে একটি হাদীছ বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, বাদশাহ নগরীর মহিলাদের জমা করে তাদের কাছে ইউসুফ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সবাই বলে যে, আমরা তার ব্যাপারে মন্দ কিছু জানি না। তখন আযীয-পত্নী বলেন, এখন সত্য প্রকাশিত হ’ল। আমিই তাকে প্ররোচিত করেছিলাম এবং সে ছিল সত্যবাদীদের     অন্তর্ভুক্ত। তখন ইউসুফ বলল, এটা এজন্য যাতে গৃহকর্তা জানতে পারেন যে, আমি তার অসাক্ষাতে তার সাথে কোন বিশ্বাসঘাতকতা করিনি’। তখন জিবরীল ইউসুফকে গুঁতা মেরে বলেন, যখন ঐ নারীর প্রতি তুমি কুচিন্তা করেছিলে তখনও কি নয়? অর্থাৎ তখন কি তুমি বিশ্বাসঘাতকতা করো নি? জবাবে ইউসুফ বলেন, আমি নিজেকে নির্দোষ বলি না। নিশ্চয়ই মানুষের  অন্তর মন্দ প্রবণ’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, জিবরীল ইউসুফকে বলেন, যখন তুমি পায়জামা খুলেছিলে, তখনও কি বিশ্বাসঘাতকতা করোনি? ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলি যে স্রেফ বাজে কথা, তা যেকোন পাঠকই বুঝতে পারেন। অথচ এগুলি এমন এমন তাফসীর গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, যা সব সময় আমরা মাথায় রাখি।[49]

বস্ত্ততঃ ৫০, ৫১, ৫২ ও ৫৩ চারটি আয়াতের পূর্বাপর সম্পর্ক বিচার করলে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, ৫২ ও ৫৩ আয়াতের বক্তব্য হ’ল আযীযে মিছরের স্ত্রীর। কেননা ঐ সময় ইউসুফ ছিলেন জেলখানায়। তিনি কিভাবে মহিলাদের ঐ মজলিসে হাযির থাকলেন এবং উক্ত মন্তব্য করলেন? নগরীর মহিলাদের ও আযীয-পত্নীর স্পষ্ট স্বীকৃতির মাধ্যমে সত্য উদঘাটনের পরেই তো ইউসুফের মুক্তির পথ খুলে গেল এবং বাদশাহ বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তাকে আমার একান্ত সহচর করে নেব (ইউসুফ ৫৪)। কুরআনের প্রকাশ্য অর্থকে পাস কাটিয়ে দূরতম অর্থ গ্রহণের পিছনে নবী বিদ্বেষী ইহুদী লেখকদের অপপ্রচারের ফাঁদে পা দেওয়া ছাড়া এগুলি আর কীইবা হ’তে পারে?

প্রাচীনতম মুফাসসির হিসাবে ইবনু জারীর ত্বাবারী (মৃঃ ৩১০ হিঃ) তাঁর বিখ্যাত তাফসীরে এমন অনেক দুর্বল বর্ণনা জমা করেছেন, যা নবীগণের মর্যাদার খেলাফ। রাসূল (ছাঃ), ছাহাবী, তাবেঈ ও অন্যান্য বিদ্বানগণের নামে সেখানে অসংখ্য যঈফ ও ভিত্তিহীন বর্ণনা জমা করা হয়েছে।

যেমন ২৪ আয়াতাংশ (وَلَقَدْ هَمَّتْ به وَهَمَّ بِهَا) -এর তাফসীরে ইবনু আববাসের ৮টি সহ ছয়জন বিদ্বানের মোট ১৪টি উক্তি  উদ্ধৃত করার পর তিনি বলেছেন, هذا قول جميع أهل العلم بتأويل القرآن الذين عنهم يؤخذ تأويله ‘এগুলি হ’ল কুরআন ব্যাখ্যায় অভিজ্ঞ সেই সকল বিদ্বানের ব্যাখ্যা সমূহ, যাঁদের থেকে কুরআনের ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হয়ে থাকে’।[50]  অথচ এসব বিদ্বানগণের নামে উদ্ধৃত বক্তব্যগুলি বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত বলে পরবর্তী বিদ্বানগণ স্বীকার করেননি।

এভাবে প্রধানতঃ ইবনু জারীরের তাফসীরের উপরে ভিত্তি করেই পরবর্তী বহু খ্যাতনামা মুফাসসির ঐসব ত্রুটিপূর্ণ বর্ণনা অথবা এ সবের মর্ম সমূহ স্ব স্ব তাফসীরে স্থান দিয়েছেন। যেমন ওয়াহেদী, বাগাভী, কুরতুবী, ইবনু কাছীর, জালালায়েন, বায়যাভী, কাশশাফ, আলূসী, আবুস সঊদ, শাওকানী প্রমুখ বিদ্বানগণ। যদিও তাঁদের অনেকেই এসবের সমর্থক ছিলেন না। তবুও তাঁদের তাফসীরে এসব বর্ণনা স্থান পাওয়ায় লোকেরা তাঁদের নামে সেগুলি অন্যদের নিকট বর্ণনা করে এবং জনগণ বিভ্রান্ত হয়। অবস্থা দাঁড়িয়েছে এই যে, নবীগণের শত্রু হিব্রুভাষী ইহুদী যিন্দীক্বদের কপট লেখনীগুলো আরবী ভাষী মুসলিম বিদ্বানগণের মাধ্যমে বিশ্বের সর্বত্র প্রচারিত হয়েছে। বিদ্বানগণের সরলতা এভাবেই অনেক সময় অন্যদের পথভ্রষ্টতার কারণ হয়।

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,

وأما ما ينقل أنه حل سراويله وجلس مجلس الرجل من المرأة وأنه رأى صورة يعقوب عاضاً على يده وأمثال ذلك فكله مما لم يخبر الله به ولا رسوله و مالم يكن كذلك فهو مأخوذ عن اليهود الذين هم أعظم الناس كذبًا على الأنبياء وقدحاً فيهم، وكل من نقله من المسلمين فعنهم نقله، لم ينقل من ذلك أحد عن نبينا صلى الله عليه وسلم حرفاً واحداً-

‘অতঃপর যেসব কথা বর্ণিত হয়েছে যে, ইউসুফ তার পাজামা খুলে ফেলেছিলেন ও উক্ত নারীর উপর উদ্যত হয়েছিলেন এবং এ সময় তিনি তার পিতাকে দাঁতে নিজ আঙ্গুল কামড়ে ধরা অবস্থায় দেখেছিলেন- এধরনের কাহিনী সমূহের সবটাই ঐসমস্ত কথার অন্তর্ভুক্ত, যে বিষয়ে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল কোন খবর দেননি। আর তা আদৌ ঐরূপ নয়। বরং এগুলি ইহুদীদের কাছ থেকে গৃহীত, যারা নবীগণের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপবাদ দেওয়ার ব্যাপারে মানবজাতির মধ্যে সেরা। মুসলমানদের মধ্যে যারা এসব বিষয়ে বলে, তারা তাদের থেকে নকল করে বলে। অথচ তাদের কেউ এ বিষয়ে আমাদের নবী (ছাঃ) থেকে একটি হরফও বর্ণনা করেনি’।[51] তিনি আরও বলেন, وقد اتفق الناس على أنه لم تقع منه الفاحشة ولكن بعض الناس يذكر أنه وقع منه بعض مقدماتها- ‘বিদ্বানগণ এ বিষয়ে একমত যে, ইউসুফ থেকে কোন ফাহেশা কাজ হয়নি। তবে কিছু লোক বর্ণনা করে যে, তাঁর থেকে উক্ত কাজের প্রারম্ভিক কিছু নমুনা পাওয়া গিয়েছিল। যেমন তারা এ বিষয়ে কিছু বর্ণনা করে থাকে। যার কোনটাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে নয়। বরং কিছু ইহুদী থেকে তারা এগুলি বর্ণনা করে থাকে মাত্র’।[52]

উল্লেখ্য যে, সূরা ইউসুফ-এর ৪২ আয়াতটিকে লুফে নিয়ে একদল কাহিনীকার কল্পনার ঘোড়া দৌড়িয়ে এমনকি মহাকাব্য পর্যন্ত রচনা করেছেন। এ ব্যাপারে ফারসী ভাষায় কবি ফেরদৌসীর (মৃঃ ৪১৬ হিঃ/১০২৫ খৃঃ) ‘মাছনাবী ইউসুফ-যোলেখা’ (مثنوى يوسف زليخا) কাব্য প্রসিদ্ধ। যদিও এটি তাঁর সময়কার অজ্ঞাত কোন কবির লেখনী বলে অনেকে ধারণা করেন। তারপর তা তুর্কী ভাষায় অনুদিত হয়। অতঃপর ফারসী ও তুর্কী ভাষা হ’তে তা এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত ও রূপান্তরিত হয়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। দিল্লীর সুলতান গিয়াছুদ্দীন আযম শাহের সময় (১৩৮৯-১৪১০ খৃঃ) পনের শতকের প্রথম মুসলিম কবি শাহ মুহাম্মাদ ছগীর সম্ভবতঃ সর্বপ্রথম বাংলায় ‘ইউসুফ-জুলেখা’ কাব্য রচনা করেন। বর্তমানে নামধারী কিছু মুফাসসিরে কুরআন গ্রামে ও শহরে তাফসীর মাহফিলের নামে কয়েকদিন ব্যাপী ইউসুফ-যুলায়খার রসালো কাহিনী শুনিয়ে থাকেন। অথচ ‘যুলায়খা’ নামটিরও কোন সঠিক ভিত্তি নেই। কুরআনে কেবল امرأة العزيز বা ‘আযীয-পত্নী’ বলা হয়েছে। নবী বিদ্বেষী ইহুদী গল্পকারদের খপপরে পড়ে মুসলমান গল্পকারগণ আজকাল রীতিমত মুফাসসিরে কুরআন বনে গেছেন।

অতএব জান্নাত পিয়াসী পাঠক, গবেষক, লেখক, আলেম, মুফতী ও বক্তাগণকে অবশ্যই সাবধান হ’তে হবে এবং মন্দটা বাদ দিয়ে ভালটা বাছাই করে নিতে হবে। নইলে ক্বিয়ামতের মাঠে জওয়াবদিহিতার সম্মুখীন হ’তে হবে। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন- আমীন!

[আলোচনা দ্রষ্টব্যঃ ইবনু তায়মিয়াহ, মজমূ‘ ফাতাওয়া ‘তাফসীর’ অধ্যায়; মুহাম্মাদ আল-আমীন শানক্বীত্বী, তাফসীর আযওয়াউল বায়ান (বৈরুত: ‘আলামুল কুতুব, তাবি); ডঃ মুহাম্মাদ আবু শাহবাহ, আল-ইস্রাঈলিয়াত (কায়রোঃ মাকতাবাতুস সুন্নাহ ৪র্থ সংস্করণ ১৪০৮); ডঃ তাহের মাহমূদ, আসবাবুল খাত্বা ফিত তাফসীর (দাম্মাম, সঊদী আরব, দার ইবনুল জাওযী ১ম সংস্করণ ১৪২৫ হিঃ) প্রভৃতি]

ইউসুফের কাহিনীতে শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ:

(১) ইউসুফের কাহিনীতে একথা পূর্ণভাবে প্রতিভাত হয়েছে যে, আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকেই পরিণামে বিজয়ী করেন। এই বিজয় তো আখেরাতে অবশ্যই। তবে দুনিয়াতেও হ’তে পারে।

(২) আল্লাহর কৌশল বান্দা বুঝতে পারে না। যদিও অবশেষে আল্লাহর কৌশলই বিজয়ী হয়। যেমন অন্ধকূপে নিক্ষেপ করে অতঃপর বিদেশী কাফেলার কাছে ক্রীতদাস হিসাবে বিক্রি করে দিয়ে ইউসুফের ভাইয়েরা নিশ্চিন্ত হয়ে ভেবেছিল যে, আপদ  গেল। কিন্তু আল্লাহ তাঁর নিজস্ব কৌশলে ইউসুফকে দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন করলেন এবং ভাইদেরকে ইউসুফের কাছে আনিয়ে অপরাধ স্বীকারে বাধ্য করলেন’ (ইউসুফ ৯১)। যেটা ইউসুফ নিজে কখনোই পারতেন না।

(৩) সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপরে ভরসা করা ও সুন্দরভাবে ধৈর্য ধারণ করাই হ’ল আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বৈশিষ্ট্য। সেজন্যেই দেখা গেছে যে, ইউসুফ (আঃ) জেলে গিয়েও সর্বদা আল্লাহর উপরে ভরসা করেছেন ও সুন্দরভাবে ধৈর্য ধারণ করেছেন। অন্যদিকে পিতা ইয়াকূব (আঃ) সন্তান হারিয়ে পাগলপরা হ’লেও তাঁর যাবতীয় দুঃখ ও অস্থিরতা আল্লাহর নিকটে পেশ করে ধৈর্য ধারণ করেছেন’ (ইউসুফ ৮৬)

(৪) নবীগণ মানুষ ছিলেন। তাই মনুষ্যসূলভ প্রবণতা ইয়াকূব ও ইউসুফের মধ্যেও ছিল। ইউসুফের শোকে ইয়াকূবের বিরহ-বেদনা এবং আযীযের গৃহে চরিত্র বাঁচানো কঠিন হবে বিবেচনায় ইউসুফের কারাগারকে বেছে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশের মধ্যে উপরোক্ত দুর্বলতার প্রমাণ ফুটে ওঠে। কিন্তু তাঁরা সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রতি নিবিষ্টচিত্ত  থাকার কারণে আল্লাহর অনুগ্রহে নিষ্পাপ থাকেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ তাঁর প্রত্যেক তাক্বওয়াশীল বান্দার প্রতি একইরূপ অনুগ্রহ করে থাকেন।

(৫) ইউসুফের কাহিনী কেবল তিক্ত বাস্তবতার এক অনন্য জীবন কাহিনী নয়। বরং বিপদে ও সম্পদে সর্বাবস্থায় আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা ও তাঁর উপরে একান্ত নির্ভরতার এক বাস্তব দলীল।

(৬) ইউসুফের কাহিনীর সার-নির্যাস হ’ল ‘তাওহীদ’ অর্থাৎ ‘তাওহীদে ইবাদত’।  কারণ এখানে বাস্তব ঘটনাবলী দিয়ে প্রমাণ করে দেওয়া হয়েছে যে, কেবল আল্লাহর স্বীকৃতিই যথেষ্ট নয়, বরং জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁর দাসত্ব করা ও তাঁর বিধান মেনে চলার মধ্যেই বান্দার প্রকৃত মঙ্গল ও সার্বিক কল্যাণ নির্ভর করে। যেমন ইউসুফের সৎ ভাইয়েরা আল্লাহকে মানতো। কিন্তু তাঁর বিধান মানেনি বলেই তারা চূড়ান্তভাবে পরাজিত ও লজ্জিত হয়েছিল। অথচ ইউসুফ অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও আল্লাহর দাসত্বে ও তাঁর বিধান মানায় অটল থাকায় আল্লাহ তাঁকে অনন্য পুরস্কারে ভূষিত করেন ও মহা সম্মানে সম্মানিত করেন।


[39] . রাযীন, আহমাদ, মিশকাত হা/১৯১ সনদ ছহীহ, ‘কিতাব ও সুন্নাহকে অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ।
[40]. আলবানী, যঈফুল জামে‘ হা/৪৭৬২, ৪৭৭৫।
[41]. আহমাদ, সনদ ছহীহ, রাবী ছোহায়েব (রাঃ), সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৮০।
[42]. মারাসীলু ইবনে আবী হাতেম হা/৪২৯; কুরতুবী, ঐ, ২৮ আয়াত, ৯/১৫০ পৃঃ।
[43]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৯ ‘ঈমান’ অধ্যায়।
[44]. মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪ ‘ইল্ম’ অধ্যায়।
[45]. কুরতুবী হা/৩৬৭০-৭১; ইবনু জারীর, ইবনু কাছীর, ত্বাবারাণী, ইবনু হিববান প্রভৃতি।
[46]. বুখারী হা/৩৩৭২, ৩৩৮৭, ৪৬৯৪, ৬৯৯২; মুসলিম, নাসাঈ, আহমাদ; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৭০৫ ‘কিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায় ‘সৃষ্টির সূচনা ও নবীগণের আলোচনা’ অনুচ্ছেদ।
[47]. আহমাদ হা/৯২৯৮ রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ), হাদীছ হাসান।
[48]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩২৬৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৯৯৪-৯৬।
[49]. যেমন ১-সঊদী সরকার প্রকাশিত ও মাওলানা মুহিউদ্দীন খান অনূদিত করাচীর মুফতী মুহাম্মাদ শফী কৃত তাফসীর মা‘আরেফুল কুরআনে বক্তব্যটি ইউসুফের বলে লেখা হয়েছে (পৃঃ ৬৬৯)। ২-ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বঙ্গানুবাদে ১৩১ নং টীকাতে বলা হয়েছে যে, অধিকাংশ তাফসীরকারের মতে ৫২ ও ৫৩ নম্বর আয়াতে বর্ণিত কথাগুলি হযরত য়ূসুফের উক্তি (ঐ, পৃঃ ৩৬৭)। ৩- তাফসীর ইবনে কাছীরের অনুবাদে ডঃ মুজীবুর রহমান ব্রাকেটে লিখেছেন, ‘ইউসুফ বললেন’ (ঐ, দারুস সালাম, রিয়াদ পৃঃ ৪৫৫)। ৪- মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী অনূদিত ঐ উর্দূ তাফসীরে একই অনুবাদ করা হয়েছে, যা সঊদী সরকার কর্তৃক পাকিস্তানের ছালাহুদ্দীন ইউসুফের তাফসীর সহ প্রকাশিত হয়েছে (ঐ, পৃঃ ৬৫৬)। ৫- সঊদী সরকার প্রকাশিত ইংরেজী অনুবাদেও (পৃঃ ৩১০) একই কথা লেখা হয়েছে। ৬- অথচ আবদুল্লাহ ইউসুফ আলী তাঁর ইংরেজী তাফসীরে সঠিক অর্থ করেছেন (ঐ, পৃঃ ৫৭০)। ৭- অন্যদিকে মাওলানা মওদূদী কেবল এটি ইউসুফের উক্তি বলে সমর্থনই করেননি, উল্টা এর বিরোধিতা করার কারণে ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনু কাছীর প্রমুখ জগদ্বিখ্যাত বিদ্বানগণকে কটাক্ষ করে তাফসীর লিখেছেন (ঐ, বঙ্গানুবাদ ৬/১০৪ পৃঃ)। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
[50]. দ্রঃ তাফসীর ত্বাবারী (বৈরুতঃ ১৪০৭/১৯৮৭) ১২/১০৮-১১০ পৃঃ।
[51]. দাক্বায়েকুত তাফসীর ৩/২৭৩ পৃঃ।
[52]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ‘তাফসীর’ অধ্যায় (কায়রোঃ ১৪০৪ হিঃ) ১৫/১৪৮-৪৯ পৃঃ।