নবুওতপ্রাপ্তির প্রাক্কালে মুহাম্মদ (সাঃ)

মুহাম্মদের (সাঃ) বয়স যখন চল্লিশে, তখন তাঁর বিচার-বিবেচনা, বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা-ভাবনা, যা জনগণ এবং তাঁর মধ্যে ব্যবধানের এক প্রাচীর সৃষ্টি করে চলেছিলো, তা উন্মুক্ত হয়ে গেলো এবং ক্রমান্বয়ে তিনি নির্জনতাপ্রিয় হয়ে উঠতে লাগলেন। খাবার এবং পানি সঙ্গে নিয়ে মক্কা নগরী হতে দুই মাইল দূরে অবস্থিত হেরা পর্বত-গুহায় গিয়ে ধ্যানমগ্ন হতে থাকলেন।

পুরো রমজান মুহাম্মদ (সাঃ) হেরা গুহায় আল্লাহ তাআলার ইবাদাত বন্দেগিতে মশগুল থাকেন। বিশ্বের দৃশ্যমান বস্তুনিচয়ের অন্তরাল থেকে যে মহাশক্তি প্রতিটি মুহূর্তে সকল কিছুকে জীবন, জীবিকা ও শক্তি জাগিয়ে চলেছেন, সেই মহা মহীয়ান ও গরিয়ান সত্তার ধ্যানে মশগুল থাকতেন। স্বগোত্রীয় লোকদের অর্থহীন বহুত্ববাদী বিশ্বাস ও পৌত্তলিক ধ্যান-ধারণা তাঁর অন্তরে নিদারুণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতো; কিন্তু তাঁর সামনে এমন কোন পথ খোলা ছিলো না, যে পথ ধরে তিনি শান্তি ও স্বস্তির সঙ্গে পদচারণা করতে সক্ষম হবেন।

মুহাম্মদের (সাঃ) নির্জন-প্রিয়তা ছিল প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাআলার কুদরতি ব্যবস্থাপনা ও তরবিয়তের একটি অংশ; এভাবে আল্লাহ তাআলা ভবিষ্যতের এক মহতী কর্মসূচির জন্য তাঁকে প্রস্তুত করে নিচ্ছিলেন। যে আত্মার নসিবে নবুওতরূপী এক মহান আসমানি নেয়ামত নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে এবং যিনি পথভ্রষ্ট ও অধঃপতিত মানুষকে সঠিক পথ নির্দেশনা দিয়ে ধন্য করবেন, তাঁর জন্য যথার্থই প্রয়োজন সমাজ-জীবনের যাবতীয় ব্যস্ততা, জীবন-যাত্রা নির্বাহের যাবতীয় ঝামেলা এবং সমস্যা থেকে মুক্ত থেকে নির্জনতা অবলম্বনের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করা।

আল্লাহ তাআলা যখন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বিশ্বব্যবস্থায় সবচেয়ে মর্যাদাশীল ও দায়িত্বশীল-আমানতদার মনোনীত করে তাঁর কাঁধে দায়িত্বভার অর্পণের মাধ্যমে বিশ্বমানবের জীবন-বিধানের রূপরেখা পরিবর্তন এবং অর্থহীন আদর্শের জঞ্জাল সরিয়ে শাশ্বত আদর্শের আঙ্গিকে ইতিহাসের পরিমার্জিত ধারা প্রবর্তন করতে চাইলেন, তখন নবুয়ত প্রদানের প্রাক্কালে তাঁর জন্য এক মাসব্যাপী নির্জনতা অবলম্বন অপরিহার্য করে দিলেন, যাতে তিনি গভীর ধ্যানের সূত্র ধরে দিব্য জ্ঞান লাভের পথে অগ্রসর হতে সক্ষম হন। নির্জন হেরা-গুহার সেই ধ্যানমগ্ন অবস্থায় তিনি বিশ্বের আধ্যাত্মিক জগতে পরিভ্রমণ করতেন এবং সকল অস্তিত্বের অন্তরালে লুক্কায়িত অদৃশ্য রহস্য সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা ও গবেষণায় মগ্ন হতেন, যাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নির্দেশ আসামাত্রই তিনি বাস্তবায়নের ব্যাপারে ব্রতী হতে পারেন।

এক কালে নবি হবেন যে মুহাম্মদ (সাঃ), তিনি এভাবেই অদৃশ্যের নানা ইশারা-ইঙ্গিতের ছাপ রেখে রেখে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ও নবুওত ও রিসালাতের মতো এক বিশ্বব্যাপৃত গুরুভারের দিকে…