ইখলাস/সততা (আল্লাহর সাথে) – শায়খ মুহাম্মদ মুখতার আশ-শিনকিতি

بسم الله الرحمن الرحيم

তিনিই একমাত্র সত্বা, যিনি একজন মানুষের মধ্যকার সকল গোপন কাজ সম্পর্কে অবহিত, যদিওবা সেটি তার অন্তরের অন্তঃস্থলে লুকায়িত অবস্থায় থাকে। তিনি তাঁর বান্দাদের আদেশ দিয়েছেন একটি বিষয়ে, যেটি তাঁর নিকট সর্বাধিক প্রিয়, যেটি তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার সর্বোত্তম পন্থা, তা হচ্ছে ইখলাস বা সততা (আল্লাহর ইবাদাতের ব্যাপারে)। ইখলাস/সততা হচ্ছে হৃদয়কে আল্লাহ ব্যতিত বাকি সকল কিছু থেকে মুক্ত করা, যার ফলে সে (বান্দা) যখন ইবাদাহতে মগ্ন হয় তখন তার রবেরই ইবাদাত করে, আর তার (বান্দা) রব তখন সেই বান্দার হৃদয়ে (নিয়্যাতে) তাঁর (রবের) সন্তুষ্টি অর্জনের ইচ্ছা ব্যতীত অন্য কিছুই পাননা।

সে যদি কথা বলে, তবে তা আল্লাহর (সন্তুষ্টি অর্জনের) জন্য, সে যখন কাজ করে, তবে তা আল্লাহর (সন্তুষ্টি অর্জনের) জন্য। তখন তার কথা ও কাজ পছন্দনীয় (আল্লাহর কাছে) হয়ে যায়, তার পরিশ্রমের পুরষ্কার দেয়া হয় এবং সে আল্লাহর সাথে তার ব্যবসায় ঠকে না। এটাই হচ্ছে ইখলাস/সততা। এটি একজন জ্ঞান পীপাসু/ত্বালীব আল ইলমের প্রয়োজন ততোটুকু, যতোটুকু শব্দ সে শুনে, যতোটুকু শব্দ সে বলে, কার্যত যতোক্ষণ সে বেঁচে থাকে।

আমাদের পূর্ববর্তী সফলকামেরা (সাহাবী, তাবেঈ, তাবে তাবেঈ, সালাফ) ইখলাস/সততা ব্যতীত দ্বীনে তাদের সফলতা অর্জন করেননি, যার ফলে আল্লাহ তাদের কাজ সহজ করে দিয়েছিলেন।

ইখলাস/সততা হচ্ছে হৃদয়ের দিকে ফিরে যাওয়া, তাকে জিজ্ঞেস করা যে সেখানে তার রবের জন্য কি আছে, এবং নিজেকে জানান দেয়া – মুনাফেকী যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট লোক দেখানো হয়েছে, যথেষ্ট পরিমাণে মানুষকে খুশি করা হয়েছে, যথেষ্ট পরিমাণে বাহবা কুঁড়ানো হয়েছে, এখন সময় এসেছে আল্লাহর দিকে ফিরে যাবার ও আখিরাতের জন্য প্রস্তুত হওয়ার।

“সেদিনতো (কারো) ধন সম্পদ কাজে লাগবে না, না সন্তান সন্ততি (কারো কাজে আসবে), অবশ্য যে আল্লাহর কাছে একটি বিশুদ্ধ্ব অন্তর নিয়ে হাজির হবে (তার কথা আলাদা)” [২৬ নং সূরা শুয়ারা : ৮৮-৮৯]।

এটাই ইখলাস, যা হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার জন্য সঞ্চালিত হয়। তারাই আল্লাহকে ভালোবাসায় সবচেয়ে সত্যবাদী যারা আল্লাহর প্রতি সবচেয়ে সৎ (খালিস), এবং তারাই আল্লাহর ভালোবাসায় সবচেয়ে সত্যবাদী, যারা আল্লাহর ইবাদাতে নিয়মিত মগ্ন থাকে।

“তারা বলেঃ কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে খাবার দিচ্ছি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না। আমরা আমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে এক ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনের ভয় রাখি। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে সেদিনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন এবং তাদেরকে দিবেন সজীবতা ও আনন্দ। এবং তাদের সবরের প্রতিদানে তাদেরকে দিবেন জান্নাত ও রেশমী পোশাক।” [৭৬ নং সূরা ইনসান : ৯-১২]

এটা জ্ঞান পীপাসু/ত্বালিব আল ইলমের জন্য অত্যাবশকীয় যে তারা জ্ঞানের (দ্বীনি) অন্বেষণ করবে এবং সৎ (খালিস) মনে (নিয়্যতে) আল্লাহর জন্য কাজ করবে। এ হচ্ছে এ দুনিয়া ও আখিরাতে লাভবান হবার ছোট্ট উপদেশ।