৮১তম পর্ব – একটি সুন্নাহকে বাঁচাবো বলে – সালাতের ইন্তেজার! – শায়খ আতিক উল্লাহ

সালাত এমন এক ইবাদত, যা আদায়ে শুধু লাভই লাভ। ইসলামের প্রতিটি বিধানই পাশর্^প্রতিক্রিয়াহীন। সালাতও তাই। দুনিয়াতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের যত মাধ্যম আছে, সালাত সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। সালাত হল ঈমান ও কুফরের বিভেদরেখা। সালাতের অপেক্ষায় বসে থাকা মানে, আমি ঈমান বৃদ্ধির জন্যেই বসে রইলাম।
إنَّ بين الرجلِ وبين الشِّركِ والكفرِ تركُ الصلاةِ
একজন ব্যক্তি ও কুফর-শিরকের মাঝে বিভেদরেখা হল সলাত বর্জন করা (জাবের রা, মুসলিম ৮২)।

সলাত ফরযে আইন। সলাত ইসলামের দ্বিতীয় রোকন বা স্তম্ভ। তাওহীদের পর সালাতই সর্বশ্রেষ্ঠ আমলি রোকন। আল্লাহর রাসূল সা. সালাত তরকের ব্যাপারে অনেক সতর্কবাণী উচ্চারণ করে গেছেন। কেউ সালাতকে অস্বীকার করলে তার ঈমান চলে যাবে।
সলাতের প্রতি গুরুত্ব দেয়া, গুরুত্বের সাথে সলাত আদায় করা, ঈমানের আলামত। যথাসময়ে সলাত আদায় করা, আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় আমল। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন,
سألت النبي ﷺ: أي العمل أحب إلى الله؟ قال: الصلاة على وقتها. قال: ثم أي؟ قال: ثم بر الوالدين. قال: ثم أي؟ قال: الجهاد في سبيل الله.
আল্লাহর রাসূলের কাছে জানতে চাইলাম,
-কোন আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়?
-যথাসময়ে সলাত আদায় করা।
-তারপর?
-আম্মু-আব্বুর প্রতি সদাচার করা।
-তারপর?
-আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা (বুখারি ৫২৭)।

সলাতের এত গুরুত্ব সত্ত্বেও আমরা অবহেলা করি। নিজের দুনিয়াবি ব্যস্ততার অজুহাতে সলাতকে বিলম্বিত করি, কখনো পুরোপুরি ছেড়েও দেই। নামাজের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, তবুও আমাদের কোনও খবর থাকে না। আমরা যে যার কাজে বুঁদ হয়ে থাকি। নবীজি সা.-এর শিক্ষা উল্টো। যথাসময়ে সলাত আদায় করা তো বটেই, আগে আগে মসজিদে এসে, সলাতের ইন্তেজার (প্রতীক্ষা) করাকেও অনেক বড় সওয়াবের কাজ বলে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। সলাতের অপেক্ষায় বসে থাকা ব্যক্তির জন্য বড় পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন।

নবীজি সব সময় ভালো কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। সাহাবায়ে কেরামকে নিত্যনতুন নেকআমলের সন্ধান দিতেন। একদিন বললেন,
ألا أدلُكم على ما يمحو اللهُ بهِ الخطايا ويرفعُ بهِ الدرجاتِ؟ قالوا: بلى . يا رسولَ اللهِ ! قال إسباغُ الوضوءِ على المكارهِ . وكثرةُ الخطا إلى المساجِدِ . وانتظارُ الصلاةِ بعدَ الصلاةِ . فذلكمْ الرباطُ
আমি কি তোমাদের বলব, কোন আমলের কারণে আল্লাহ গুনাহ মাফ করে দেন, দারাজাত (মর্যাদা) বুলন্দ করেন?
-জি¦, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
-কষ্ট সত্ত্বেও ভালোভাবে ওজু করা, বেশি বেশি মসজিদে যাওয়া, সুন্নত-নফলের পর ফরযের জন্য অপেক্ষা করা। এটাই তোমাদের ‘রিবাত’ (আবু হুরায়রা রা. মুসলিম ২৫১)।

১: রিবাত মানে মুসলিম রাষ্ট্রের সীমান্তে পাহারায় অনঢ় অবস্থান করা। এই দু’টি আমল করলে, বান্দা ঘরে বসেও রিবাতের ফজীলত লাভ করবে। একটা কথা মনে রাখা জরুরী, রিবাতে থাকা আর রিবাতের ফজীলত লাভ করা এক নয়। একজন পড়াশোনা করে, ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করল, আরেকজন সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করল। দু’জনের জ্ঞানগম্যি নিশ্চয়ই এক হবে না। এক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে। উক্ত দুই আমল করলে, আমি রিবাতের সওয়াব পাব, কিন্তু আমাকে কি মুজাহিদ বলা হবে? জি¦ না, হবে না।
২: শীতকালে, শরীর অসুস্থ থাকলে, ওজু করতে কষ্ট হয়। তবুও আমি মনের উপর জোর খাটিয়ে ওজুটা সেরে নিতে পারি। না পারলে গরম পানি দিয়ে ওজু করে নেব। এতবড় একটা ফজীলত কেন হাতছাড়া করব?
৩: মসজিদে গিয়ে বসে থাকতে হবে, তাই কাটায় কাটায় বের হই। দুয়েক মিনিট আগে বের হলে, কতবড় ফজীলতের ভাগীদার হতে পারব। ইশা ও আসরের আগে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নেই। ঐচ্ছিক সুন্নত আছে। নবীজি বলেছেন (وانتظارُ الصلاةِ بعدَ الصلاةِ) সলাতের পর সলাতের অপেক্ষা করা। হাদীসের উপর আক্ষরিক আমলের জন্য, কষ্ট করে আসর-ইশার আগেও সুন্নাত আদায় করে নিতে পারি। অন্তত দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়তে পারি।
৪: মুখ্য বিষয় হল, জামাতের ইন্তেজার করা। আমি মসজিদে গিয়ে ফরজ নামাজের অপেক্ষায় বসে থাকলে, আশা করি ফজীলত লাভ করতে পারব। আগে কোনও সালাত না পড়লে, আল্লাহ আমাকে পুরো ফযীলত দিয়ে দিতে পারেন।
৫: মা-বোনেরা ফজীলত লাভের জন্য, সুন্নত পড়ে জায়নামাজে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে পারি। আল্লাহর ভাণ্ডরে কি কমতি আছে?

কিছুকথা
ক: সলাতের ইন্তেজারে বসে থাকলে, আমরা অনেক সময় পাশের জনের সাথে কথা বলতে শুরু করি। কথা না বলে আমরা যিকির করতে পারি। কুরআন কারীম তিলাওয়াত করতে পারি।
খ: সলাতের ইন্তেজারে বসে থাকতে থাকতে অনেক সময় কেউ কেউ বারবার ঘড়ির দিকে তাকাই। একটু দেরী হলে বিরক্তি প্রকাশ করি। এমন ফজীলতপূর্ণ সময়ে কোনও মুমিন বিরক্ত হতে পারে?
গ: জামাতের ইন্তেজারে বসে থাকার সময়টাতে, মনটা সাধারণত আল্লাহমুখী থাকে। কলব নরম থাকে। মনে কেমন এক ভালো লাগার অনুভুতি ছড়িয়ে থাকে। এই হালতকে আমরা কাজে লাগাতে পারি। দু‘আ করে, মুহাসাবা (আত্মসমালোচনা) করে।
ঘ: তবে এমন কিছু করা উচিত নয়, যার রেশ ফরজ নামাজে গিয়ে পড়ে। অনেক সময় আমরা সলাতের আগে দ্বীনি বইপত্র পড়ি। নামাজে দাঁড়ানোর পর পঠিত বিষয় বারবার চিন্তায় হানা দেয়। সলাতর খুশু-খুযু নষ্ট হয়।
ঙ: সবচেয়ে ভালো হয়, আল্লাহর কুদরতের মুরাকাবা করা। মুরাকাবা মানে ধ্যান করা। আমার প্রতি আল্লাহর কি কি অনুগ্রহ আছে, সেটা নিয়ে ভাবা। আমার গুনাহের কথা ভেবে ইস্তেগফার করা। সলাতের ফজীলত সম্পর্কে চিন্তা করা।