৮৬তম পর্ব – একটি সুন্নাহকে বাঁচাবো বলে – কেরাত শ্রবণ – শায়খ আতিক উল্লাহ

সলাত মুমিনের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সলাত মুমিনের অষ্টপ্রহরকে আলোকময় করে রাখে। জামাতের সাথে সলাত আদায় করা ওয়াজিব। জামাতে নামায পড়লে, ইমামের অনুসরণ ফরয। জামাতে নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ইমামের কেরাত। ইমাম সাহেব যখন কেরাত পড়েন, তার কেরাত চুপচাপ মনোযোগ দিয়ে শোনা সুন্নাত। ফজরে, মাগরিবে, ইশায়, জুমা ও দুই ঈদে ইমাম সাহেব কেরাত জোরে পড়েন।

ইমাম সাহেব যখন জোরে কেরাত পড়েন, মুক্তাদি চুপচাপ কেরাত শুনবে। মুক্তাদি ইমামের সাথে সাথে কেরাত পড়বে না। অনুচ্চ স্বরেও না। মুক্তাদি কেরাত পড়লে,
ক: ইমামের কেরাতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে।
খ: নিজের মনোযোগও ইমামের কেরাত থেকে ভিন্ন দিকে চলে যাবে।
গ: আশেপাশের মুসল্লিদেরও নামাজেও ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে।

ইমাম যখন কেরাম পড়বেন, মুক্তাদি সম্পূর্ণ চুপ থেকে কেরাত শুনে যাবেন। বুঝতে পারলে ভালো, না বুঝলেও শুনে যাবে। পরিপূর্ণ মনোযোগ (الإنصات) জরুরী। কুরআন কারীমের দাবিও তাই,
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত হয় (আ‘রাফ ২০৪)।

১: চুপচাপ কুরআন কারীম পড়া শুনলে আল্লাহর রহমত পাওয়া যায়। কুরআন মানার সওয়াবও পাওয়া যায়।
২: চুপচাপ ইমামের কেরাত শোনা নবীজির হুকুমও বটে,
انصرَف مِنْ صلاةٍ جهَر فيها بالقراءةِ فقال: هل قرَأ معي أحدٌ منكم آنفًا؟ فقال رجلٌ: نعم يا رسولَ اللهِ، قال: إني أقولُ ما لي أُنازَع القرآنَ، قال: فانتهى الناسُ عن القراءةِ معَ رسولِ اللهِ ﷺ فيما جهَر فيه النبيُّ ﷺبالقراءةِ مِنَ الصلواتِ حينَ سمعوا ذلك مِنْ رسولِ اللهِ ﷺ
জোরে কেরাত পড়া হয়, এমন এক সলাতের পর, আল্লাহর রাসূল পেছন ফিরে বললেন,
-একটু আগে তোমাদের কেউ কি আমার সাথে কেরাত পড়েছিল?
একলোক বলল,
-ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি পড়েছি।
-(সে যখন আমার সাথে সাথে কেরাত পড়ছিল, আমি মনে মনে বলছিলাম) কী হল, আমার সাথে কুরআন পড়া নিয়ে প্রতিযোগিতা করা হচ্ছে?
এরপর থেকে সাহাবায়ে কেরাম, আল্লাহর রাসূল জোরে কেরাত পড়লে, তাঁর সাথে কেরাত পড়া বন্ধ করে দিলেন (আবু হুরায়রা রা। তিরমিযি ৩১২)।

ক: নবীজি ছিলেন প্রজ্ঞাবান শিক্ষক। সহনশীল মুরুব্বী। অপছন্দের আচরণ দেখেও ধমকালেন না। কঠোর হলেন না। সুন্দর করে বিষয়টা বুঝিয়ে দিলেন।
খ: সাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দিলেন, মুক্তাদি ইমামের কেরাত পাঠ বিন¤্র চিত্তে মনোযোগ দিয়ে শুনবে। সম্ভব হলে তাদাব্বুর করবে।

এতো গেল, ইমাম জোরে কেরাত পড়লে চুপ থাকার কথা। ইমাম সাহেব যদি আস্তে কেরাত পড়েন? তখন মুক্তাদি কি করবে?
صلَّى النَّبيُّ ﷺ الظُّهرَ، فقرأَ رجلٌ خلفَهُ سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى، فلمَّا صلَّى، قالَ: من قرأَ سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى . قالَ رجلٌ: أنَا، قالَ: قد علِمتُ أنَّ بعضَكم قد خالَجَنيها
নবীজি জোহর আদায় করার সময়, এক ব্যক্তি নবীজির পেছনে সূরা আ‘লা পড়ল। নামাজ শেষ হলে, নবীজি বললেন,
-কে সূরা আ‘লা পড়েছে?
এক ব্যক্তি বলল,
-আমি।
-আমি (নামাজে থাকাবস্থাতেই বুঝতে পারছিলাম) তোমাদের কেউ (জোরে কেরাত পড়ে) আমার কেরাত পড়ায় ব্যঘাত ঘটাচ্ছিল (ইমরান বিন হুসাইন রা। নাসাঈ ৯১৬)।

১: আস্তে কেরাতের সলাতেও মুক্তাদি কেরাত না পড়ে চুপচাপ থাকাই হাদীসের ভাবের বেশি নিকটবর্তী। কারণ ইমামের কেরাতই মুক্তাদির কেরাত,
من كانَ لَهُ إمامٌ، فقِراءةُ الإمامِ لَهُ قراءةٌ
যার ইমাম আছে, ইমামের কেরাতই তার কেরাত হিশেবে যথেষ্ট (জাবের বিন আবদুল্লাহ রা। ইবনে মাজাহ ৮৫০)।
২: তাহলে সূরা ফাতিহার ব্যাপারটা? সূরা ফাতিহা না পড়লে সলাতই হবে না?
لا صَلاةَ لِمَن لم يقرَأْ بفاتِحَةِ الكِتابِ
সূরা ফাতিহা না পড়লে, সলাতই হবে না (উবাদাহ বিন সামিত রা। বুখারি ৭৫৬)।
ক: হানাফী মাযহাব মতে, একাকি পড়লে তো সূরা ফাতিহা পড়তেই হবে। আর জামাতে পড়লে, আগের হাদীস অনুযায়ী ইমামের কেরাতই মুক্তাদির কেরাত। আলাদা করে সূরা ফাতিহা পড়া লাগবে না।
খ: ইমাম শাফেয়ী ও আহমাদ রহ.-এর অনুসারী হলে, সূরা ফাতিহা পড়ে নিবে। তবে ইমাম সাহেব পড়ার পর।
গ: ইমাম মালেক রহ.-এর বক্তব্যটাও সুন্দর। তিনি বলেছেন, ইমাম সাহেব জোরে পড়লে, মুক্তাদি আলাদা করে ফাতিহা পড়বে না। ইমাম সাহেব আস্তে পড়লে, মুক্তাদি ফাতিহা পড়ে নেবে।
ঘ: আহনাফের কেউ কেউও মনে করেন, আস্তে কেরাতের নামাযে, মুক্তাদি চাইলে সূরা ফাতিহা পড়ে নিতে পারে।

কুরআন কারীম শোনা অত্যন্ত বরকতময় কাজ। আর শোনাটা যদি সলাতে হয়, তাহলে তো কথাই নেই। ইমামের কেরাত শোনা কুরআনি সুন্নাহ। নববী সুন্নাহ। আজ থেকে আমার শ্রবণে আসুক বাড়তি মনোযোগ। অতিরিক্ত ইনসাত।