আল মুকতাফী বিল্লাহ আবু মুহাম্মাদ আলী বিন মুতাযদ ২৬৪ হিজরির রবিউল আখির মাসের মাঝামাঝিতে জীজক নামের তুর্কি বাঁদির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি দৃষ্টান্তহীন সুদর্শন ছিলেন। পিতা মুতাযদ এর খিলাফতকালেই তিনি উত্তরাধিকার মনোনীত হোন। পিতার অসুস্থতার সময় ২৮৯ হিজরির রবিউল আখির মাসের ১৯ তারিখ আসর নামাযের পর লোকেরা তার বাইয়াত করে।
সূলী বলেনঃ খলীফাদের মধ্যে তার নামটি আলী ছাড়া আর কারো ছিল না। ইমাম হাসান বিন আলী, হাদী আর মুকতাফী ছাড়া ‘আবু মুহাম্মাদ’ কারো কুনিয়ত ছিল না।
মুতাযদ এর মৃত্যুর সময় মুকতাফী রাকা শহরে অবস্থান করছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে উযীর আবুল হাসান কাসিম বিন উবায়দুল্লাহ তার পক্ষ থেকে বাইয়াত গ্রহণ করেন। তাকে খবর দেওয়া হলে তিনি জমাদিউল আখির মাসের ৭ তারিখ দজলা নদী দিয়ে জাহাজ যোগে বাগদাদ এসে পৌঁছান। তার আগমনে বাগদাদবাসী খুশী হয়ে তাকে স্বাগত জানায়। তিনি তখত নসীন হওয়ার পর তার পিতা লোকদের কাছ থেকে যেসব ঘরবাড়ি দখল করেছিলো, তিনি সেগুলো ভেঙে সে স্থানে মসজিদ নির্মাণ করেন। যেসব বাগান আর দোকান নেওয়া হয়েছিলো, তিনি তা মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেন। এতে তিনি জনতার চোখে মহানুভবতায় পরিণত হোন। লোকেরা তার জন্য দুয়া করতে থাকে।
এ বছর বাগদাদে প্রচণ্ড ভুমিকম্প হয়, এর প্রকোপ কয়েক দিন পর্যন্ত থাকে। বসরায় তীব্র ঝড়ের কারনে অনেক বৃক্ষ উপড়ে পড়ে, যার দৃষ্টান্ত পূর্ববর্তী ইতিহাসে বিরল। ইয়াহইয়া বিন যাকরুয়া কারমতীর সাথে শাহী সৈনিকদের দীর্ঘ যুদ্ধ হয়। অবশেষে ২৯০ হিজরিতে সে মারা গেলে সে স্থানে তার ভাই হুসাইন ‘আমিরুল মুমিনীন মাহদি’ উপাধি ধারণ করে নেতৃত্ব দেন। তার চেহারায় একটি দাগ ছিল। সেও ২৯১ হিজরিতে নিহত হয়। ২৯১ হিজরিতে ইনতালিয়া প্রচুর গনিমতের মালসহ বিজিত হয়।
২৯৩ হিজরিতে দজলা নদী ফুলে-ফেঁপে এমন তরঙ্গের সৃষ্টি করে, যার আকস্মিক আঘাতে বাগদাদের অধিকাংশ অংশ ধ্বসে পড়ে। সেদিন বাগদাদের রাজপথে ২১ হাত পানি জমা হয়।
সূলী বলেছেনঃ মুকতাফীর কাছ থেকে শুনেছি যে, তিনি মুমূর্ষু অবস্থায় বলেন, “আল্লাহ’র কসম, আমি সেই সাতশো দিনারের জন্য দারুন ভীত – যা মুসলমানদের সম্পদ আমি ব্যয় করছি। আমার ভয় হচ্ছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ যেন এ ব্যাপারে কোন প্রশ্ন না করেন। এ ভুলের জন্য আমি আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”
তিনি ২৯৫ হিজরির যিলকাদা মাসের ২২ তারিখ রবিবার রাতে যুবক কালেই ইন্তেকাল করেন। আট ছেলে আর আট মেয়ে রেখে তিনি মারা যান।
তার যুগে যে সকল ওলামা মৃত্যুবরণ করেন তারা হলেন – আবদুল্লাহ বিন আহমাদ বিন হাম্বল, ইমামুল আরাবী কানবাল মাকরী, মুফতী আবু আবদুল্লাহ বুসানজী, মুসনাদের লেখক বাযযার, আবু মসনদ আল-কুযী, কাযী আবু হাযিম, সালেহ জুযাহ, মুহাম্মাদ বিন নাসরুল মরুযী, আবু হুসাইন নুরী, আবু জাফর তিরমিযী প্রমুখ।
আবদুল গাফের কতৃক প্রণীত তারিখে নিশাপুর গ্রন্থে মুকতাফীর খিলাফতের তখতে উপবেশন সংক্রান্ত ইবনে আবিদ দুনিয়ার একটি রেওয়ায়েত আমি দেখেছি। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, ইবনে আবিদ দুনিয়া মুকতাফীর যুগে জীবিত ছিলেন।