চতুর্থ হিজরিতে নবীজি

নানাভাবে নবীজিকে ভারাক্রান্ত করার পাঁয়তারা কুরাইশরা ফেঁদেই রাখতো। আরবের প্রায় প্রতিটি গোত্রকে তারা নবীজির বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে এবং লেলিয়ে দিয়েছিলো। সেই সূত্রে উহুদে এবং তৎপরবর্তী সময়েও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গোত্র মদিনার উপর বা মদিনার মুসলিম কাফেলার কোনো না কোনোভাবে ক্ষতি করার তক্কে থাকতো। সেই ধারাবাহিকতায় এই বছর দুইটি বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনা ঘটে। কিছু গোত্রের কতিপয় লোক রাসূলের কাছে ইসলাম শিক্ষার প্রয়োজন জানিয়ে শিক্ষাবিদ সাহাবাদেরকে তাদের গোত্রে আমন্ত্রণ জানিয়ে নির্মমভাবে তাঁদের শহিদ করে। সিরাতে এই দুইটি ঘটনা ক্রমে রাযি ও বিরে মাউনার যুদ্ধ বলে পরিচিত। এছাড়াও নবিজিকে হত্যার ষড়যন্ত্র করার অপরাধে বনু নাযিরকে মদিনা থেকে বিতাড়িত করা হয়।

রাযির যুদ্ধ

চতুর্থ হিজরির সফর মাসে আযাল এবং কারাহ গোত্রের কয়েক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হয়ে আরজ করে, তাদের মধ্যে কিছু কিছু ইসলামের চর্চা রয়েছে। কাজেই, কুরআন ও দ্বীন শিক্ষাদানের জন্য তাদের সঙ্গে কয়েকজন সাহাবিকে পাঠালে ভালো হয়। সে মোতাবেক রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশজন সাহাবিকে তাদের সঙ্গে প্রেরণ করে আসিম বিন সাবেতকে এ দলের নেতৃত্বে প্রদান করেন। এরা যখন রাযি নামক ঝরনার নিকটে পৌঁছান, তখন আযাল এবং কারাহর উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ হুযাইল গোত্রের শাখাগোত্র বানু লাহয়ানকে তাদের উপর আক্রমণ চালানোর জন্য লেলিয়ে দেয়।এ গোত্রের একশত তিরন্দাজ তাঁদের অনুসন্ধান করতে থাকে। পদচিহ্ন অনুসরণ করতে করতে গিয়ে নাগালের মধ্যে তাদের পেয়ে যায়। সাহাবাগণ একটি পাহাড়ের চূড়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। এ অবস্থায় বনু লাহয়ান তাদের চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলার পর ঘোষণা করে, পাহাড় থেকে নেমে এলে তাদেরকে অক্ষত রাখা হবে। কিন্তু কাফেলার আমির আসিম তাদের এই কথায় সম্মত না হয়ে লড়াইয়ে নেমে পড়েন।শত্রুপক্ষের অবিরাম তির তাদের উপর বর্ষণ হয়। বেঁচে থাকেন শুধু খুবাইব এবং যায়দ ইবনে দাসিন্না রাযিয়াল্লাহু আনহুমা। তাঁদেরকে মক্কায় বিক্রি করে দেওয়া হয়। তাঁরা বদর যুদ্ধে শীর্ষ পর্যায়ের কুরাইশদের হত্যা করেছিলেন। তাঁদেরও মর্মান্তিকভাবে শহিদ করা হয়। এই ঘটনা রাযির যুদ্ধ হিসেবে খ্যাত।

তথ্যসূত্র :আর-রাহিকুল মাখতুম, সফিউর রহমান মোবারকপুরি;সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, মুফতি শফি।