অন্যায়-অত্যাচারের বিভীষিকাময় ধারা-প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম সূচিত হয় নবুওতের চতুর্থ বর্ষের মধ্যভাগে কিংবা শেষের দিক থেকে। জুলুম-নির্যাতনের শুরুতে এর মাত্রা ছিল সামান্য। কিন্তু দিনের পর দিন মাসের পর মাস সময় যতই অতিবাহিত হতে থাকলো জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা ততই বৃদ্ধি পেতে পেতে পঞ্চম বর্ষের মধ্যভাগে তা চরমে পৌঁছুলো এবং শেষ পর্যন্ত এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হলো যে, মক্কায় মুসলিমদের টিকে থাকা একরকম অসম্ভব হয়ে উঠলো। তাই এ বিভীষিকার কবল থেকে পরিত্রাণ লাভের উদ্দেশ্যে তাঁরা বাধ্য হলেন পথের সন্ধানে প্রবৃত্ত হতে। অনিশ্চয়তা এবং দুঃখ-দুর্দশার এ ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থার মধ্যে অবতীর্ণ হল সূরা যুমার।
এতে হিজরতের জন্য ইঙ্গিত প্রদান করে বলা হয় যে, ‘আল্লাহর জমিন অপ্রশস্ত নয়।’
অত্যাচারের মাত্রা যখন ধৈর্য ও সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেলো, বিশেষ করে কুরআন মাজিদ পড়তে এবং নামায আদায় করতে না দেওয়ার মানসিক যন্ত্রণা যখন চরমে পৌঁছুলো, তখন তারা দেশান্তরের কথা চিন্তা-ভাবনা করতে শুরু করলেন। তিনি বহু পূর্ব থেকেই আবিসিনিয়ার সম্রাট আসহামা নাজ্জাশির উদারতা এবং ন্যায়পরায়ণতা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। অধিকন্তু, সেখানে কারো প্রতি যে কোন অন্যায়-অত্যাচার করা হয় না, সে কথাও তিনি জানতেন। মুসলিমগণ সেখানে গমন করলে নিরাপদে থাকার এবং নির্বিঘ্নে ধর্মকর্ম করার সুযোগ লাভ করবে। এ সব কিছু বিচার-বিবেচনা করে তাঁদের জীবন এবং ঈমানের নিরাপত্তাবিধান এবং নির্বিঘ্নে ধর্মকর্ম করার সুযোগ লাভের উদ্দেশ্যে হিজরত করে আবিসিনিয়ায় গমনের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে নির্দেশ প্রদান করেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ পেয়ে মুসলমানগণ ব্যাপকভাবে হিজরতের প্রস্তুতি নিতে থাকলেন। এ হিজরত ছিলো খুবই কঠিন। কেননা, এর আগেও মুসলিমগণ একবার হিজরতের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তারা অসতর্ক ছিলেন বলে সে সময় তাঁদের সে যাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়। এবার তাঁরা অতন্দ্র প্রহরীর মতো, এখন তাঁরা সচেতন এবং যে কোনো মূল্যে এ ধরনের প্রচেষ্টা প্রতিহত করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। কিন্তু আকাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য-সাধনে সাফল্য লাভের ব্যাপারে কুরাইশগণের তুলনায় মুসলমানদের সচেতনতা ও ঐকান্তিকতার মাত্রা ছিলো অনেক গুণে বেশি। উপরন্তু নিরীহ, নির্দোষ এবং ন্যায়নিষ্ঠ মুসলিমদের প্রতি ছিলো আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহ। যার ফলে কুরাইশগণের তরফ থেকে কোনো অনিষ্ট কিংবা প্রতিবন্ধকতা আসার পূর্বেই তাঁরা সহি সালামতে গিয়ে পৌঁছুলেন হাবশের সম্রাটের দরবারে। সর্বমোট ৮২ জন কিংবা ৮৩ জন পুরুষ হিজরত করেছিলেন এবং ১৮ কিংবা ১৯ জন মহিলা ঐ দলে ছিলেন।