আমার বয়স যখন সাত বছর হল তখন আব্বু আমাকে নামাযের আদেশ দিলেন। আলহামদু লিল্লাহ, এই বয়সেই আমি অনেক দুআ ও বেশ কিছু সূরা মুখস্থ করে ফেলেছিলাম। আম্মু ঘুমের সময় আমাকে নবীদের কাহিনী শোনাতেন। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে শুনতাম। আম্মুর কাছ থেকে নবীদের কাহিনী শুনে শুনে ওই বয়সেই আমি অনেক নবীদের কাহিনী জানতাম।
সাত বছর বয়স থেকেই আমি আব্বুর সাথে মসজিদে যাওয়া শুরু করলাম। যখন আমি দশ বছরে পা রাখলাম আব্বু একদিন বললেন, তোমার এখন নয় বছর পূর্ণ হয়েছে, তুমি এখন দশ বছরে পা রেখেছ। এখন যদি তুমি নামায তরক কর তোমাকে কিন্তু শাসন করব। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের সন্তানেরা যখন সাত বছরে উপনীত হয় তখন তাদের নামাযের নির্দেশ দাও। আর যখন দশ বছরে উপনীত হয় তখন নামাযের জন্য (প্রয়োজনে) প্রহার কর। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৫) সাথে সাথে আব্বু আমাকে শিশুদের কাহিনী শোনালেন, যারা শৈশবে গুরুত্বের সাথে নামায আদায় করেছে, ফলে তারা অনেক বড় হয়েছে এবং তাদের অনেক মর্যাদা হয়েছে।
আব্বুকে আমি বললাম, ইনশাআল্লাহ, আমাকে নামাযের জন্য প্রহার করতে হবে না। আমি নিজে থেকেই নামাযের প্রতি যতœবান হব। এ কথা শুনে আব্বু খুব খুশি হলেন। আর আমিও তখন থেকে নামাযের প্রতি আরো বেশি যতœবান হলাম। আমি যেখানে যে অবস্থায়ই থাকতাম নামায পড়ে নিতাম। বাজারে রয়েছি বা কোনো কাজে রয়েছি; আযান হয়েছে, আমি দ্রুত মসজিদে চলে গিয়েছি এবং জামাতের সাথে নামায আদায় করেছি। মাঠে-ঘাটে কোথাও রয়েছি, নামাযের সময় হয়েছে তো সেখানেই নামায পড়ে নিয়েছি। কারণ আমি অন্যদের দেখতাম, ক্ষুধা পেলে যেখানে যে অবস্থায়ই থাকে খেতে কোনো লজ্জা করে না। তাহলে আমি কেন নামায আদায় করতে লজ্জা পাবো?
নামায তো মুসলিমের জন্য ফরয ও আবশ্যকীয় বিধান। আর নামাযেই মুসলিমের সম্মান।
একবারের ঘটনা। আমি একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলাম। অনেক মানুষ, অনেক ভীড়। এদিকে আসরের নামাযের সময় হয়ে এল। আগে থেকেই আমার ওযু ছিল। আমি মাঠের একপাশে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলাম। লোকেরা আশ্চর্য হয়ে আমাকে দেখতে লাগল। আমি সুন্দরভাবে ধীরস্থিরতার সাথে নামায আদায় করে আবার প্রতিযোগিতায় ফিরে এলাম।
যাহোক, নামাযের পর আমি প্রতিযোগিতা শেষ করলাম। এক ব্যক্তি আমার দিকে এগিয়ে এলেন। প্রতিযোগিতার মাঠে আমার নামায পড়া তার ভালো লেগেছে। তিনি আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন। আব্বুর নাম জিজ্ঞেস করলেন। আমার বয়স কত তাও জিজ্ঞেস করলেন। আমার আব্বুর প্রসংশা করলেন এবং আমার জন্য দুআ করলেন। তিনি বললেন, প্রতিযোগিতায় এসে আমি কোনো ছেলেকে নামায পড়তে দেখিনি। অনেক মানুষই অন্য সময় নামায পড়লেও এ সকল সময় নামায ছেড়ে দেয়। আমি আল্লাহর প্রসংশা করলাম এবং আব্বুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম।
আলহামদু লিল্লাহ, আব্বুর শিক্ষার কারণে এবং আল্লাহর রহমতে আমি সফর অবস্থায় বা অসুস্থ অবস্থায়ও নামায তরক করি না। অথচ অনেক মানুষকে দেখা যায়, বাড়িতে থাকতে নিয়মিত নামায পড়ে কিন্তু সফরে নামায তরক করে। সুস্থ অবস্থায় নামায পড়ে, অসুস্থ অবস্থায় সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নামায তরক করে। অথচ নামায সব অবস্থায়ই ফরয।
তেমনি অনেক মানুষকে দেখা যায় ধীরস্থীরভাবে নামায আদায় করে না, বরং তাড়াহুড়ো করে। নামায ধীরস্থীরভাবে আদায় করা উচিত।
আর আমার মনে পড়ে না, দীর্ঘদিন থেকে আমি নামায তরক করেছি। কখনো ঘুম থেকে জাগতে না পারলে ওঠার সাথে সাথে নামায আদায় করে নিয়েছি।
আল্লাহ আমাদেরকে নামাযে যতœবান হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।
শাওয়াল ১৪৩৮ – জুলাই ২০১৭
মাসিক আল কাউসার