আবুল হায়সাম উপনামেই তিনি ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। আসল নাম এবং কোন্ গোত্রের সন্তান সে সম্পর্কে মতভেদ আছে। একটি মতে ‘আবদুল্লাহ’ তাঁর আসল নাম। তবে অন্য একটি মতে ‘মালিক’ তাঁর নাম। আর এ মতের ওপরই মুসা ইবন ’উকবা, ইবন সা’দ, মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক, আবূ মা’শার ও মুহাম্মাদ ইবন ’উমার ঐক্যমত পোষণ করেছেন। তেমনিভাবে তাঁর গোত্র ও পিতার নামের ব্যাপারেও মতভেদ আছে। এক মতে পিতা বালী ইবন আমর ইবন আল-হাফ ইবন কুদা’য়া। এই হিসাবে তাঁকে আল-বালাবী বলা হয়। এটাই ইবন সা’দের মত। এ মতের বিরোধিতা করেছেন ইবন ইসহাক ও আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মাদ ইবন আম্মারা আল-আনসারী। ইবন ইসহাক বলেছেন, আবুল হায়সাম, যিনি বদরে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁর নাম মালিক এবং তাঁর ভাইয়ের নাম আতীক। তাঁরা উভয়ে তায়্যিহানের ছেলে। আর আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ আল-আনসারী বলেন, আবুল হায়সাম আউস গোত্রের সন্তান। তাঁর মা লায়লা বিনতু আতীক। এটাই অধিকাংশের মত। (তাবাকাত- ৩৪৪৭, আল-ইসাবা ৪/২১২, সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৪৩৩) তাঁর জন্মের সঠিক সময় জানা যায় না।
আবুল হায়সাম তাঁর বন্ধু আস’য়াদ ইবন যুরারার হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। একটি
বর্ণনা মতে আস’য়াদ ইবন যুরারা ও জাকওয়ান ইবন ’আবদি কায়েস মক্কায় ’উতবা ইবন
রাবী’য়ার নিকট যান। সেখানে তাঁরা রাসূলুল্লাহর সা. দা’ওয়াতের কথা শুনতে
পেয়ে গোপনে তাঁর সাথে দেখা করে ইসলাম গ্রহণ করেন। আস’য়াদ মদীনায়
প্রত্যাবর্তন করে আবুল হায়সামের সাথে দেখা করেন এবং নিজে ইসলাম গ্রহণের
কাহিনী, রাসূলুল্লাহ সা. ও তাঁর দা’ওয়াতের কথা তাঁর নিকট বর্ণনা করেন। ইবন
সা’দ বলেন, ইয়াসরিবে পূর্ব থেকে –সেই জাহিলী যুগে আস’য়াদ ও আবূল হায়সাম
ছিলেন তাওহীদ বা একত্ববাদের প্রবক্তা। আবুল হায়সাম বন্ধু যুরারার মুখে
রাসূলুল্লাহ সা. ও তাঁর দা’ওয়াতের কথা শুনে কোন রকম দ্বিধা-সংকোচ না করে
সাথে সাথে বলে ওঠেনঃ ‘আনু আশহাদু মা’য়াকা আন্নাহু রাসূলুল্লাহ- আমিও তোমার
সাথে সাক্ষ্য দিচ্ছি নিশ্চয় তিনি আল্লাহর রাসূল।’ এভাবে তিনি তাঁর বন্ধু
যুরারার হাতে মুসলমান হন।
পরের হজ্জ মওসুমে যেবার আটজন মতান্তরে ছয়জন ইয়াসরিববাসী মক্কায়
রাসূলুল্লাহর সা. সাথে গোপনে দেখা করে বাই’য়াত বা শপথ করেন তাঁদের মধ্যে
আবুল হায়সামও ছিলেন। ইতিহাসে এ বাই’য়াতকে আকাবার প্রথম বাই’য়াতও বলা হয়।
তবে একটি বর্ণনা মতে, উক্ত বাই’য়াত বা শপথে আবুল হায়সাম ছিলেন না।
(তাবাকাত- ১/২১৮-২১৯) উক্ত মতে, আস’য়াদ প্রথম আকাবায় ইসলাম গ্রহণ করেন এবং
মদীনায় ফিরে এসে আবুল হায়সামকে ইসলামের দাও’য়াত দেন। এ দাওয়াতেই আবুল
হায়সাম ইসলাম গ্রহণ করেন। এর এক বছর পর বারো জনের সাথে এবং তারও পরের বছর
তিহাত্তর মতান্তরে পঁচাত্তর জনের সাথে তিনি ’আকাবায় রাসূলুল্লাহর সা. সাথে
আবার মিলিত হন। এভাবে তিনি ’আকাবার সব ক’টি বাই’য়াতে শরিক হওয়ার গৌরব অর্জন
করেন। (তাবাকাত- ১/২২, সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৪৩৩)
একটি বর্ণনা মতে, শেষ ’আকাবায় আবুল হায়সাম রাসূলুল্লাহর সা. হাতে
বাই’য়াতের জন্য সর্ব প্রথম নিজের হাতটি বাড়িয়ে দেন। মুসা ইবন ’উকবা ইমাম
যুহরী থেকে একথা বর্ণনা করেছেন। এ ব্যাপারে অবশ্য যথেষ্ট মতভেদ আছে।
(সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৪৪৭, আনসাবুল আশরাফ- ১/২৫৪)
তৃতীয় আকাবার শপথের সময় মদীনাবাসীরা যখন রাসূলুল্লাহকে সা. মদীনায় যাওয়ার
আমন্ত্রণ জানালো তখন মক্কা ও মদীনাবাসীদের পক্ষ থেকে যে কয়েকজন লোক ভাষণ
দেন, আবুল হায়সাম তাদের অন্যতম। তাবারানী ’উরওয়া থেকে বর্ণনা করেছেন। আবুল
হায়সাম ইবন তায়্যিহান রাসূলুল্লাহর সা. হাতে বাই’য়াত করার সময় বললেনঃ ইয়া
রাসূলুল্লাহ! আমাদের সাথে অন্য লোকদের চুক্তি আছে। এমনও কি হতে পারে, আমরা
সেই চুক্তি বাতিল করলাম, তাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হলাম, আর এ দিকে আপনি
স্বগোত্রে ফিরে এলেন? তাঁর কথা শুনে রাসূল সা. একটু হাসি দিয়ে বললেনঃ
তোমাদের রক্তের দাবীর অর্থ হবে আমারই রক্তের দাবী, তোমাদের রক্তপাত মানে
আমারই রক্তপাত। অর্থাৎ আমার ও তোমাদের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না।
রাসূলুল্লাহর সা. এ কথায় সন্তুষ্ট হয়ে আবুল হায়সাম সাথীদের লক্ষ্য করে
বলেনঃ ‘‘আমার স্বগোত্রীয় লোকেরা! এ ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল। আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি, নিশ্চয় তিনি সত্যবাদী। আজ তিনি মক্কার হারামে আত্মীয়দের মধ্যে
নিরাপদেই আছেন। জেনে রাখ, যদি তোমরা এখান থেকে বের করে তাঁকে তোমাদের কাছে
নিয়ে যাও তাহলে সমগ্র আরববাসী একই ধনুক থেকে তোমাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ
করবে। অর্থাৎ সকালের সাধারণ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। যদি তোমরা আল্লাহর
রাস্তায় জিহাদ করতে এবং জান-মাল ও সন্তান-সন্ততি বিলিয়ে দিতে রাজী থাক
তাহলেই তাঁকে তোমাদের ভূমিতে আমন্ত্রণ জানাও। কারণ, তিনি সত্যি সত্যিই
আল্লাহর রাসূল। তোমরা যদি পরে অনুশোচনার ভয় কর তাহলে ভেবে দেখ।’’ আবুল
হায়সামের এ বক্তব্যের পর তাঁর সাথীরা বললোঃ ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা কিছু
আমাদের দিয়েছেন, আমরা তা কবুল করেছি। হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের নিকট
যা কিছু দাবী করেছেন আমরা তা আপনাকে দান করলাম। আবুল হায়সাম, আপনি একটু সরে
দাঁড়ান, আমরা রাসূলুল্লাহর সা. হাতে বাই’য়াত করি।’ আবুল হায়সাম বললেনঃ
আমিই প্রথম বাই’য়াত করি। তাঁর বাই’য়াতের পর অন্যরা একের পর এক বাই’য়াত করে।
(হায়াতুস সাহাবা- ১/২৪৭,২৪৮, সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৪৪২) এ বাই’য়াতের পর
হযরত রাসূলে কারীম সা. বারোজন নাকীব বা দায়িত্বশীলের নাম ঘোষণা করেন। আউস
গোত্র থেকে আবুল হায়সাম, উসাইদ ইবন হুদাইর ও সা’দ ইবন খায়সামা- এই তিনজন
নাকীব মনোনীত হন। (আনসাবুল আশরাফ- ১/২৫২)
হযরত রাসূলে কারীম সা. মদীনায় হিজরাত করে প্রখ্যাত মুহাজির হযরত উসমান ইবন মাজ’উনের সাথে আবুল হায়সামের মুওয়াখাত বা ভ্রাতৃ-সম্পর্ক কায়েম করে দেন। (আনসাবুল আশরাফ- ১/২৭১, আল-ইসাবা- ৪/২১২)
বদর, উহুদ, খন্দকসহ রাসূলুল্লাহর সা. জীবদ্দশায় সংঘটিত সকল যুদ্ধে তিনি যোগ দেন। উহুদে তাঁর ভাই আতীক ইবন তায়্যিহান ইকরিমা উবন আবূ জাহলের হাতে শাহাদাত বরণ করেন। (আনসাব- ১/৩২৯) ইবন সা’দ বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা মূতায় শহীদ হওয়ার পর হযরত রাসূলে কারীম সা. আবুল হায়সামকে খেজুরের পরিমাপকারী হিসাবে খাইবারে পাঠান। রাসূলুল্লাহর সা. ইনতিকালের পর হযরত আবু বকরও তাঁকে এ পদে বহাল রাখার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন; কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। (তাবাকাত- ৩/৪৪৮)
খলীফা হযরত ’উমারের খিলাপতকালে হিজরী ২০ সনে তিনি ইনতিকাল করেন। একটি বর্ণনা মতে হিজরী ৩৭ সনে সিফ্ফীন যুদ্ধের পূর্বে তাঁর মৃত্যুর কথা জানা যায়। ইমাম আসমা’ঈ একটি বর্ণনা নকল করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি আবুল হায়সামের গোত্রের লোকদের নিকট তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি। তারা বলেছে, তিনি রাসূলুল্লাহর সা. জীবদ্দশায় মৃত্যুবরণ করেছেন। হিজরী ২১ সনেও তাঁর মৃত্যুর কথা যেমন অনেকে বলেছেন তেমনি কেউ কেউ একথাও বলেছেন যে, তিনি সিফ্ফীনে হযরত আলীর রা. পক্ষে যুদ্ধ করেছেন। অনেকে আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেছেন, তিনি সিফ্ফীনে ’আলীর রা. পক্ষে যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করেছেন। (আনসাব- ১/২৪০, সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৪৩৩) ঐতিহাসিক ওয়াকিদী স্পষ্ট করে বলেছেন, সিফ্ফীনে তাঁর যোগদানের বর্ণনা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এর বিপরীতে হিজরী ২০ সনে তাঁর মৃত্যুর কথা ইমাম যুহরী, সালেহ ইবন কায়সান এবং হাকেমের মত উঁচু স্তরের মুহাদ্দিসীন থেকে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং এর বিপরীতে একটি সন্দেহযুক্ত বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। (সীয়ারে আনসার- ২)
হাদীসের গ্রন্থসমূহে আবুল হায়সাম থেকে বর্ণিত কিছু হাদীস দেখা যায় তবে সেগুলির বিশুদ্ধতা সন্দেহের উর্ধ্বে নয়। ইবন হাজার ’আসকালানী বলেছেনঃ আবুল হায়সাম থেকে বর্ণিত যত হাদীস দেখা যায় তার সবই সন্দেহযুক্ত। এমন কোন একটি বর্ণনা শৃঙ্খল পাওয়া যায় না যার দ্বারা সেগুলির কোন একটি যথার্থতা প্রমাণিত হয়। এর কারণ হল, বহু আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। (আল-ইসাবা- ৪/২১৩)
আল-হায়সাম ইবন নাসর আল-আসলামী রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহর সা খিদমাত করেছি। আবুল হাযসাম ইবন তায়্যিহানের ‘জাসিম’ নামক একটি কূয়ো ছিল। এই কূয়োর পানি ছিল সুমিষ্ট। আমি রাসূলুল্লাহর সা. জন্য এই কূয়ো থেকে পানি আনতাম। একবার গরমের দিনে হযরত রাসূলে কারীম সা. আবু বকরকে রা. সংগে করে আবুল হাযসামের বাড়ীতে আসেন এবং জিজ্ঞেস করেনঃ ঠান্ডা পানি আছে কি? আবুল হায়সাম এক বালতি বরফের মত ঠান্ডা পানি নিয়ে আসেন। ছাগলের দুধের সাথে সেই ঠান্ডা পানি মিশিয়ে রাসূলুল্লাহকে সা. পান করান। তারপর আরজ করেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের একটি ঠান্ডা ছাউনী (’আরীশ) আছে। এই দুপুরে আপনি সেখানে একটু বিশ্রাম নিন। আবুল হায়সাম ছাউনীর ওপর পানি ছিটিয়ে দেন। রাসূল সা. আবু বকরকে সংগে করে সেখানে প্রবেশ করেন। আবুল হায়সাম বিভিন্ন ধরণের খেজুর এবং ডিশ ভর্তি ‘সারীদ’ (এক প্রকার উপাদেয় পানীয়) তাঁদের সামনে হাজির করেন। বর্ণনাকারী হাযসাম ইবন নাসর বলেন, রাসূল সা. আবু বকর এবং আমরা সবাই তা আহার ও পান করলাম। তারপর নামাযের সময় হলে তিনি আবুল হায়সামের বাড়ীতে আমাদের নিয়ে জামা’য়াত নামায আদায় করেন। জামা’য়াতে আবুল হায়সামের স্ত্রী ছিলেন আমার পেছনে। নামায শেষে তিনি আবার ছাউনীতে ফিরে যান এবং সেখানে জুহরের ফরজের পরের দু’রাকা’য়াত নামায আদায় করেন। (আনসাবুল আশরাফ- ১/৫৩৫)
একদিন হযরত রাসূলে কারীম সা. অভ্যাসের বিপরীত, যখন তিনি ঘর থেকে বের হন না এমন এক সময়ে বের হলেন। কিছুক্ষণ পর আবু বকরও আসলেন। জিজ্ঞেস করলেন, আবু বকর, এমন অসময়ে বের হলে যে? বললেন, আপনার সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে। এর মধ্যে ’উমারও উপস্থিত হলেন। রাসূল সা. তাঁকেও ঠিক একই প্রশ্ন করলেন। ’উমার জবাব দিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, ক্ষুধাই আমাকে এখানে তাড়িয়ে নিয়ে এসেছে। রাসূল সা. বললেনঃ আমিও ক্ষুধার্ত। তিনজন একসাথে আবুল হায়সামের বাড়ীতে গেলেন। তাঁর ছিল খেজুরের বাগান এবং বকরীর পাল। কিন্তু কোন চাকর-বাকর ছিল না। সব কাজ নিজে করতেন। আর তখন তিনি বাড়ীতেও ছিলেন না। আওয়ায দিলে তাঁর স্ত্রী বললেন, পানি আনতে গেছেন। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল তিনি মশক ভর্তি পানি নিয়ে ফিরছেন। রাসূলুল্লাহকে সা. দেখে মশক মাটিতে রেখে দেন এবং তাঁকে জড়িয়ে ধরে অত্যন্ত আবেগের সাথে বলতে থাকেন, আমার মা-বাবা আপনার প্রতি কুরবান হোক! তারপর সবাইকে বাগানে নিয়ে যান। সেখানে বসার জন্য কোন জিনিস বিছিয়ে দেন। সবাইকে বসিয়ে রেখে খেজুরের একটি কাঁধি কেটে নিয়ে আসেন। রাসূল সা. বললেনঃ যদি পাকা খেজুর নিয়ে আসতে। বললেনঃ এতে কাঁচা-পাকা সব রকমের আছে, আপনার খুশীমত গ্রহণ করুন। রাসূল সা. সেই খেজুর থেকে কিছু খেলেন। তারপর পানি পান করলেন। সেই পানি ছিল খুবই স্বচ্ছ ও সুস্বাদু। রাসূল সা. পানাহারের পর বললেন, দেখ, আল্লাহর কত নি’য়ামত। ছায়া, উৎকৃষ্ট খেজুর, ঠান্ডা পানি- আল্লাহর কসম, কিয়ামতের দিন এর সবকিছু সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। আবুল হায়সাম সম্মানিত মেহমানদের বাগানে বসিয়ে রেখে বাড়ীতে আসেন এবং খাবারের আয়োজন করেন। তিনি ছোট একটি ছাগল জবেহ করেন এবং তা ভূনা করে মেহমানদের সামনে পেশ করেন। আহার পর্ব শেষ করে রাসূল সা. তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের কি কোন চাকর নেই। বললেনঃ না। রাসূল সা. বললেনঃ আমার হাতে কোন যুদ্ধবন্দী এলে তুমি আমার কাছে এস। সেই সময় রাসূলুল্লাহর সা. হাতে দু’জন যুদ্ধবন্দী আসে। তিনি আবুল হায়সামকে তাদের যে কোন একজনকে গ্রহণ করতে বলেন। তিনি রাসূলুল্লাহর সা. ওপর নির্বাচনের ভার ছেড়ে দেন। রাসূল সা. তাঁদের একজনকে তাঁর হাতে তুলে দিয়ে বলেনঃ এর সাথে ভালো ব্যবহার করবে। তিনি দাসটিসহ বাড়ীতে এসে রাসূলুল্লাহর সা. উপদেশের কথা স্ত্রীর নিকট বলেন।
স্ত্রী ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী। তিনি বললেন, যদি রাসূলুল্লাহর সা. আদেশ-পালন করতে চাও, তাহলে তাকে আযাদ করে দাও। তিনি স্ত্রীর পরামর্শ মত দাসটি আযাদ করে দেন। তাঁদের এ কাজের কথা রাসুল সা. জানতে পেরে খুব খুশী হলেন এবং তাদের দু’জনেরই প্রশংসা করেন। (তিরমিজী- ৩৯১) তাছাড়া কানসুল ’উম্মাল গ্রন্থেও ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুসলিম ও ইমাম মালিক ঘটনাটি সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন। হাফেজ আল-মুনজিরী বলেন, এই ঘটনাটি আবুল হায়সাম ও আবু আইউব আল-আনসারী উভয়ের সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। (হায়াতুস সাহাবা- ১/৩১০)
আবুল হাযসামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনারা ’আকাবায় কিসের ওপর বাই’য়াত করেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, বনী ইসরাঈলরা মূসার আ. হাতে যে বিষয়ের বাই’য়াত করেছিল আমরাও রাসূলুল্লাহর সা. হাতে ঠিক সেই বাই’য়াত করেছিলাম। (আনসাবুল আশরাফ ১/২৪০)