আবু আবদুল্লাহ বিলাল তাঁর নাম। পিতা রাবাহ এবং মাতা হামামাহ। হাবশী বংশোদ্ভূত ক্রীতদাস। তবে মক্কায় জন্মলাভ করেছিলেন। বনু জুমাহ ছিল তাদের মনিব।
হাবশী দাস হিসাবে তাঁর বাহ্যিক রং কালো হলেও অন্তর ছিল দারুণ স্বচ্ছ। আরবের গৌরবর্ণের লোকেরা যখন আভিজাত্যের ও কৌলিণ্যের বিভ্রান্তিতে লিপ্ত হয়ে হকের দাওয়াত অস্বীকার করে চলেছিল, তখনই তাঁর অন্তর ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল। অল্প কিছু লোক দাওয়াতে হক কবুল করলেও যে সাত ব্যক্তি প্রকাশ্য ঘোষণার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে এ হাবশী গোলাম অন্যতম।
চিরকালই দুর্বলরা অত্যাচার উৎপীড়নের শিকার হয়ে থাকে। বিলালের সামাজিক অবস্থানের কারণে তাঁর ওপর অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট নেমে আসে। শাস্তি ও যন্ত্রণার নানা রকম অনুশীলনের মাধ্যমে তাঁর সবর ও ইসতিকলালের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। গলায় উত্তপ্ত বালু, পাথরকুচি ও জ্বলন্ত অংগারের ওপর তাঁকে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে, গলায় রশি বেঁধে ছাগলের মত শিশুরা মক্কার অলিতে গলিতে টেনে নিয়ে বেড়িয়েছে। তবুও তাওহীদের শক্ত রশি তিনি হাত ছাড়া করেননি। আবু জাহল তাঁকে উপুড় করে শুইয়ে দিয়ে পিঠের ওপর পাথরের বড় চাক্কি রেখে দিত। মধ্যাহ্ন সূর্যের প্রচণ্ড খরতাপে তিনি যখন অস্থির হয়ে পড়তেন, আবু জাহল বলতোঃ ‘বিলাল, এখনো মুহাম্মাদের আল্লাহ থেকে ফিরে এসো।’ কিন্তু তখনো তার পবিত্র মুখ থেকে ‘আহাদ’ ‘আহাদ’ ধ্বনি বের হতো।
অত্যাচারী মুশরিকদের মধ্যে উমাইয়্যা ইবন খালাফ ছিল সর্বাধিক উৎসাহী। সে শাস্তি ও যন্ত্রণার নিত্য নতুন কলা-কৌশল প্রয়োগ করতো। নানা রকম পদ্ধতিতে সে তাঁকে কষ্ট দিত। কখনো গরুর কাঁচা চামড়ায় তাঁকে ভরে, কখনো লোহার বর্ম পরিয়ে উত্তপ্ত রোগে বসিয়ে দিয়ে বলতোঃ ‘তোমার আল্লাহ লাত ও উয্যাহ’ কিন্তু তখনো এ তাওহীদ প্রেমিক লোকটির যবান থেকে ‘আহাদ’ ‘আহাদ’ ছাড়া আর কোন বাক্য বের হতো না। মুশরিকরা বলতো, তুমি আমাদের কথিত শব্দগুলিই উচ্চারণ করো। তিনি বলতেনঃ ‘আমার যবান ঠিক মত তোমাদের শব্দগুলি উচ্চারণ করতে পারে না।’
প্রতিদিনের মত সেদিনও হযরত বিলালের ওপর ‘বাতহা’ উপত্যকায় অত্যাচারের স্টীম রোলার চলছিল। ঘটনাক্রমে হযরত আবু বকর সিদ্দীকও সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দারুণ মর্মাহত হলেন। মোটা অংকের অর্থ বিলালের মনিবকে দিয়ে তিনি তাঁকে আযাদ করে দেন। এ খবর শুনে রাসূলুল্লাহ সা. বললেনঃ আবু বকর, আমাকেও তুমি এ কাজে শরীক করে নাও। তিনি আরজ করলেনঃ ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ আমি তো তাঁকে আযাদ করেই দিয়েছি।’
মক্কা থেকে হিজরাত করে মদীনায় তিনি হযরত সা’দ ইবন খুসাইমার রা. অতিথি হলেন। হযরত আবু রুওয়াইহা আবদুল্লাহ ইবন আবদুর রহমান খাসয়ামীর রা. সাথে তাঁর ভ্রাতৃ-সম্পর্ক স্থাপিত হলো। তাঁদের দু’জনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমার ফারুকের সময় হযরত বিলাল সিরিয়া অভিযানে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেন। খলীফা উমার রা. জিজ্ঞেস করলেনঃ বিলাল, তোমার ভাতা কে উঠাবে? জবাব দিলেনঃ ‘আবু রুওয়াইহা। রাসূলুল্লাহ সা. আমাদের দু’জনের যে ভ্রাতৃসম্পর্ক কায়েম করে দিয়েছিলেন তা কখনো বিচ্ছিন্ন হতো পারে না।’
হিজরাতের আগ পর্যন্ত মক্কায় ইসলাম ছিল দুর্বল, হিজরাতের পর মদীনায় তা সবল হয়ে দাঁড়ায়। এই মাদানী জীবনের সূচনা থেকে ইসলামী আচার-আচরণ ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মুল ভিত্তির স্থাপনা শুরু হয়। মসজিদ প্রতিষ্ঠা, পাঁচ ওয়াক্ত নামায এবং নামাযের জন্য আযানের প্রচলন হলো। হযরত বিলাল প্রথম ব্যক্তি, আযানের দায়িত্ব যাঁর ওপর অর্পিত হয়। বিলালের উচ্চ ও হৃদয়গ্রাহী আযান ধ্বনি শুনে নারী পুরুষ, কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে কেউ ঘরে স্থির থাকতে পারতো না। মসজিদে তাওহীদের ধারক-বাহকদের ভীড় জমে উঠলে তিনি রাসূলুল্লাহর সা. দরজায় গিয়ে আওয়ায দিতেনঃ ‘হাইয়ালাস সালা, হাইয়ালাল ফালাহ, আস্সালাহ ইয়া রাসূলাল্লাহ- হে আল্লাহর রাসূল! নামায উপস্থিত।’ রাসূল সা. বেরিয়ে আসতেন, বিলাল তাকবীর দিতেন। কোনদিন হযরত বিলাল মদীনায় উপস্থিত না থাকলে হযরত আবু মাহযুরা এবং হযরত ‘আমর ইবন উম্মে মাকতুম রা. তাঁর দায়িত্ব পালন করতেন। বিলাল রা. সাধারণতঃ সুবহে সাদিক হওয়ার আগেই ফজরের আযান দিতেন। এ কারণে সকালে দু’বার আযান দেওয়া হতো। শেষের আযান দিতেন ’আমর ইবন উম্মে মাকতুম রা.। এ জন্য রমজান মাসে হযরত বিলালের আযানের পর পানাহার জায়েয ছিল।
রাসূলুল্লাহর সা. মদীনায় অবস্থান বা সফরের সময়, উভয় অবস্থায় বিলাল ছিলেন তাঁর বিশেষ মুয়াজ্জিন। একবার রাসূলুল্লাহর সা. কোন এক সফরে পথ চলতে চলতে রাত হয়ে গেল। সাহাবাদের কেউ কেউ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, এখানে কোথাও রাত্রি যাপনের জন্য তাঁবু গাড়ার হুকুম দিলে ভালো হতো। রাসূল সা. বললেনঃ ‘আমার ভয় হচ্ছে ঘুম তোমাদের নামায থেকে উদাসীন করে না দেয়।’ হযরত বিলাল সকলকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার দায়িত্ব নিলেন। রাসূলুল্লাহর সা. অনুমতি পেয়ে সবাই তাঁবু গেড়ে বিশ্রামে গা এলিয়ে দিলেন। এদিকে বিলাল রা. অধিক সতর্কতার সাথে হাওদার কাঠের সাথে হেলান দিয়ে সুবহে সাদিকের প্রতীক্ষায় থাকলেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে এ অবস্থায় তাঁর চোখ বন্ধ হয়ে এলো এবং গভীর ঘুমে এমন অচেতন হয়ে পড়লেন যে সূর্যোদয়ের আগে আর চেতনা ফিরে এলো না। রাসূলুল্লাহ সা. ঘুম থেকে জেগে সর্বপ্রথম বিলালকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার দায়িত্ব পালনের কি হলো? বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, আজ আমি এমনভাবে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম যে, এমনটি আমার সাধারণতঃ হয় না। রাসূল সা. বললেনঃ ‘আল্লাহ যখন ইচ্ছা তোমাদের রূহ অধিকার করে নেন, আবার যখন ইচ্ছা তা ফিরিয়ে দেন। উঠে আযান দাও এবং লোকদের নামাযের জন্য সমবেত কর।’
হযরত বিলাল রা. প্রধান প্রধান সকল যুদ্ধেরই শরীক ছিলেন। বদর যুদ্ধে তিনি ইসলামের এক মস্তবড় দুশমন উমাইয়্যা ইবন খালাফকে হত্যা করেন। মক্কায় যাঁরা বিলালেরও ওপর নির্যাতন চালাতো, এ উমাইয়া ছিল তাদের অন্যতম। মক্কা বিজয়ের দিনে তিনি রাসূলুল্লাহর সা. সংগী ছিলেন। রাসূলুল্লাহর সা. সাথে তিনিও কা’বার অভ্যন্তরে প্রবেশের সৌভাগ্য লাভ করেন। রাসূলুল্লাহর সা. নির্দেশে কা’বার ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি আযান ধ্বনি উচ্চারণ করেন।
রাসুলুল্লাহর সা. ওফাতের পর হযরত বিলাল রা. তাঁর প্রতি সর্বাধিক ইহসানকারী ব্যক্তি হযরত সিদ্দিকে আকবরের রা. নিকট আরজ করলেনঃ ‘হে আল্লাহর রাসূলের খলীফা! আপনি কি আমাকে আযাদ করেছেন আল্লাহর ওয়াস্তে না আপনার সংগী বানানোর উদ্দেশ্যে? তিনি বললেনঃ ‘আল্লাহর ওয়াস্তে’। বিলাল বললেনঃ ‘আমি রাসূলুল্লাহর সা. মুখে শুনেছি, মুমিনের উত্তম কাজ হচ্ছে আল্লাহর পাথে জিহাদ করা। এ কারণে আমি চাই, এই মহান কাজটিকে আমরণ আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করতে।’ হযরত আবু বকর রা. বললেনঃ ‘বিলাল, তুমি আমার থেকে দূরে চলে গিয়ে বিচ্ছেদ বেদনায় আমাকে কাতর করে তুলো না।’ হযরত আবু বকরের আবেদনে সাড়া দিয়ে তাঁর জীবদ্দশায় বিলাল কোন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি।
হযরত আবু বকরের পর খলীফা হযরত ’উমার। বিলাল তাঁর কাছেও অনুমতি চাইলেন জিহাদে অংশগ্রহণের। প্রথম খলীফার মত দ্বিতীয় খলীফা তাঁকে ঠেকিয়ে রাখতে চাইলেন। কিন্তু তাঁর অত্যধিক উৎসাহ ও অনমনীয় মনোভাব দেখে খলীফা উমার তাঁকে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। তিনি সিরিয়া অভিযানে অংশগ্রহণ করলেন। ১৬ হিজরী সনে হযরত উমারের সিরিয়া সফরকালে অন্যান্য সামরিক অফিসারদের সাথে বিলালও ‘জাবিয়া’ নামক স্থানে খলীফাকে স্বাগত জানান এবং ‘বাইতুল মুকাদ্দাস’ সফরে তিনি খলীফার সংগী হন। সফরের এক পর্যায়ে একদিন খলীফা বিলালকে অনুরোধ করলেন আযান দেওয়ার জন্য। বিলাল বললেনঃ ‘যদিও আমি অঙ্গীকার করেছি, রাসূলুল্লাহর সা. পর আর কারো জন্য আযান দিব না, তবে আজ আপনার ইচ্ছা পূরণ পূরণ করবো।’ এ কথা বলে তিনি এমন হৃদয়গ্রাহী আওয়াযে আযান দিলেন যে উপস্থিত জনতার মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিল। হযরত ’উমার এত কাঁদলেন যে তাঁর বাক রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। হযরত আবু ’উবাইদা ও হযরত মুয়ায বিন জাবাল রা. কান্নায় ভেংগে পড়েছিলেন। সবারই মনে তখন নবী-যুগের ছবি ভেসে উঠছিল, অন্তরে তখন এক বিশেষ অনুভূতি জেগে উঠেছিল।
সিরিয়ার সবুজ ও শস্য-শ্যামল ভূমি হযরত বিলালের খুবই মনঃপুত হয়। তিনি দ্বিতীয় খলীফার নিকট তাঁর ইসলামী ভাই আবু রুওয়াইহাসহ তাঁকে সিরিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দানের জন্য আবেদন জানান। তাঁর আবেদন মঞ্জুর হলো। তাঁরা দু’জন ‘খাওলান’ নামক ছোট একটি শহরে বসতি স্থাপন করেন। তাঁদের পূর্বেই এ শহরে বসতি স্থাপন করেছিলেন প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু দারদা আনসারীর রা. গোত্র। এখানে তাঁরা দু’জন এ গোত্রের দু’টি মেয়ে কে বিয়ে করে তাদের সাথে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন।
দীর্ঘদিন যাবত হযরত বিলাল রা. সিরিয়ায় বসবাস করতে থাকেন। একদিন স্বপ্নে দেখলেনঃ রাসূল সা. বলছেনঃ ‘বিলাল, এমন নিরস জীবন আর কতকাল? আমার যিয়ারতের সময় কি তোমার এখনো হয়নি?’ এ স্বপ্ন তাঁর প্রেম ও ভালোবাসার ক্ষত আবার তাজা করে দিল। তখুনি তিনি মদীনা রওয়ানা হলেন এবং পবিত্র রওজা মুবারকে হাজির হয়ে জবাই করা মোরগের মত ছটফট করতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহর সা. কলিজার টুকরা হযরত হাসান ও হুসাইনকে রা. জড়িয়ে ধরে আদর করতে থাকেন। তাঁরা দু’জন সে দিন সকালে ফজরের আযান দেওয়ার জন্য হযরত বিলালকে রা. অনুরোধ করেন। তাঁদের অনুরোধ তিনি প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি। সুবহে সাদিকের সময় মসজিদে নববীর ছাদে দাঁড়িয়ে তিনি ‘আল্লাহু আকবর’ বলছিলেন, আর সে ধ্বনি মদীনার অলিতে গলিতে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরছিল। তাঁর সে আযান ধ্বনি শুনে মদীনার জনগণ তাকবীর ধ্বনি দিয়ে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুলছিল।
তিনি যখন ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলাল্লাহ’ বলরেন, তখন মদীনার নারী-পুরুষ সকলের অস্থিরভাবে কাঁদতে কাদতে ঘর থেকে বেরিয়ে মসজিদের দিকে দৌড়াতে শুরু করেন। বর্ণিত আছে, এমন ভাব-বিহ্বল দৃশ্য মদীনায় আর কখনো দেখা যায়নি।
এ নিষ্ঠাবান রাসূলপ্রেমিক হিজরী ২০ সনে প্রায় ষাট বছর বয়সে ইনতিকাল করেন। দিমাশকের ‘বাবুস সাগীরের’ কাছেই তাঁকে দাফন করা হয়।
চারিত্রিক সৌন্দর্য হযরত বিলালের রা. মর্যাদা ও সম্মানকে অত্যধিক বাড়িয়ে দিয়েছিল। হযরত উমার বলতেনঃ ‘আবু বকর আমাদের নেতা এবং তিনি আমাদের নেতা বিলালকে আযাদ করেছেন।’
হযরত রাসূলে পাকের সাহচর্য ও সেবাই ছিল তাঁর জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য। সব সময় রাসুলুল্লাহর সা. আশেপাশে উপস্থিত থাকতেন। রাসূলুল্লাহর সা. সফর সংগী হতেন। ঈদ ও ইসতিসকার নামাযের সময় বল্লম হাতে রাসূলুল্লাহর সা. আগে আগে ময়দানে যেতেন। ওয়াজ নসীহতের মজলিসেও উপস্থিত থাকতেন। শত প্রয়োজন ও দারিদ্র্য থাকা সত্ত্বেও হাতে কিছু এলেই তার একাংশ রাসূলকে সা. উপঢৌকন পাঠাতেন। একবার উৎকৃষ্ট মানের কিছু খেজুর রাসূলুল্লাহর সা. কাছে নিয়ে আসেন। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ ‘বিলাল, এগুলি কোথায় পেলে? জবাব দিলেনঃ আমার কাছে কিছু নিম্নমানের খেজুর ছিল। যেহেতু আপনার খিদমতে কিছু পাঠানোর ইচ্ছা ছিল, এ জন্যই দু’ সা’য়ের বিনিময়ে এর এক সা’ খেজুর লাভ করেছি। রাসূল সা. বললেনঃ ‘হায়, হায়, এমন করোনা। এ তো এক ধরণের সুদ। যদি তোমাকে খরীদ করতেই হতো, তাহলে প্রথমে তোমার খেজুরগুলি বিক্রি করে দিতে এবং সেই অর্থ দিয়ে এগুলি খরীদ করতে।
মক্কায় যে অত্যাচার ও উৎপীড়ন হযরত বিলাল সহ্য করেছিলেন, তাদ্বারাই তাঁর সহ্যশক্তি, ধৈর্য ও দৃঢ়তার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী। কেউ তাঁর কোন গুণের কথা বললে বলতেনঃ ‘আমি তো শুধু একজন হাবশী, কাল পর্যন্তও যে দাস ছিল।’ সততা, নিষ্কলুষতা ও বিশ্বস্ততা ছিলো তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
হযরত বিলাল যেহেতু রাসূলুল্লাহর সা. বিশেষ মুয়ায্যিন ছিলেন এ কারণে অধিকাংশ সময় মসজিদেই কাটাতে হতো। রাত দিনের বেশী সময় ইবাদতে অতিবাহিত করতেন। একবার রাসূল সা. তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কোন্ ভালো কাজটির জন্য সবচেয়ে বেশী সাওয়াবের আশা করো? বললেনঃ ‘আমি তো এমন কোন ভালো কাজ করিনি। তবে প্রত্যেক অজুর পরে নামায আদায় করেছি।’
সম্ভ্রান্ত আরব পরিবারে তিনি একাধিক বিয়ে করেছিলেন। হযরত আবু বকরের কন্যার সাথে রাসূল সা. নিজে বিয়ে দিয়েছিলেন। বনু যুহরা ও আবু দারদার পরিবারের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন, কিন্তু কোন পক্ষেই তাঁর কোন সন্তান জন্ম লাভ করেনি।
সহীহ ইবন খুযাইমা গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, একদিন রাসূল সা. বিলালকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেনঃ বিলাল, কিসের বদৌলতে তুমি আমার আগেই জান্নাতে পৌঁছে গেলে? গতরাতে আমি জান্নাতে প্রবেশ করে তোমার ‘খশ্খশা’ আওয়ায শুনতে পেলাম।’ বিলাল বললেনঃ ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি কোন গুনাহ করলেই দু’রাকায়াত নামায আদায় করি। আর অজু চলে গেলে তখনি আবার অজু করে আমি দু’রাকায়াত নামায আদায় করে থাকি।’