আবদুল্লাহ নাম। কুনিয়াত বা উপনামের ব্যাপারে মতভেদ আছে। যথাঃ আবু মুহাম্মদ, আবু রাওয়াহা অথবা আবু ’আমর। ‘শায়িরু রাসূলিল্লাহ’- ‘রাসূলুল্লাহর সা. কবি’ তাঁর উপাধি। মদীনার খাযরাজ গোত্রের বনী আল-হারিস শাখার সন্তান। পিতা রাওয়াহা ইবন সা’লাবা এবং মাতা কাবশা বিনতু ওয়াকিদ। সাহাবিয়্যা ’আমরাহ বিনতু রাওয়াহা তাঁর বোন এবং কবি সাহাবী নু’মান ইবন বাশীর তাঁর ভাগ্নে। ইতিহাসে তাঁর জন্মের সময়কাল সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তিনি জাহিলী ও ইসলামী উভয় জীবনে অতি মর্যাদাবান ব্যক্তি ছিলেন। (তাবাকাত- ৩/৫২৫, আল-আ’লাম- ৪/২১৭, তাহজীবুল আসমা ওয়াললুগাত- ১/২৬৫)
তিনি তৃতীয় আকাবায় সত্তর জন (৭০) মদীনাবাসীর সাথে অংশগ্রহণ করে রাসূলুল্লাহর সা. হাতে বাই’য়াত করেন এবং সা’দ ইবনুর রাবূর’র সাথে তিনিও বনু আল-হারিসার ‘নাকীব’ (দায়িত্বশীল) মনোনীত হন। (সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৪৪৩, ৪৫৮, তাবাকাত- ৩/৫২৬, আনসাবুল আশরাফ- ১/২৫২, তারীখুল ইসলাম ও তাবাকাতুল মাশাহীর- ১/১৮১)
তবে সম্ভবতঃ তিনি এই তৃতীয় ’আকাবার পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেন। কোন কোন বর্ণনায় দেখা যায় তিনি প্রথম আকাবায় ছয়জনের সাথে ইসলাম গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহর সা. হাতে বাই’য়াত করেন। (হায়াতুস সাহাবা- ১/১০৫)
ইসলাম গ্রহণের পর মদীনায় ইসলামের তাবলীগ ও দাওয়াতের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। রাসূলুল্লাহ সা. মক্কা থেকে হিজরাত করে কুবায় উপস্থিত হলেন। তিনি যে দিন কুবা থেকে সর্বপ্রথম মদীনায় পদার্পণ করেন, সেদিন আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা, সা’দ ইবনুর রাবী ও খারিজা ইবন যায়িদ তাদের গোত্র বনু আল-হারিসার লোকদের সংগে নিয়ে রাসূলুল্লাহর সা. উটনীর পথরোধ করে দৌঁড়ান এবং তাঁকে তাদের গোত্রে অবতরণের বিনীত আবেদন জানান। হযরত রাসূলে কারীম সা. তাঁদের বলেন, উটনীর পথ ছেড়ে দাও। সে আল্লাহর নির্দেশমত চলছে, আল্লাহর যেখানে ইচ্ছা সেখানেই থামবে। তাঁরা পথ ছেড়ে দেন। (সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৪৯৫) হযরত রাসূলে কারীম সা. মিকদাদ ইবন আসওয়াদ আল-কিন্দীর সাথে তাঁর ভ্রাতৃসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে দেন।
বদর, উহুদ, খন্দক, হুদাইবিয়া, খাইবার, ’উমরাতুল কাদা- প্রত্যেকটি অভিযানে তিনি অংশগ্রহণ করেন। কেবল হিজরী চতুর্থ সনে সংঘটিত ‘বদর আস-সুগরা’ অভিযানে যোগদান করতে পারেননি। রাসূলুল্লাহ সা. তাঁকে মদীনায় স্বীয় স্থলাভিষিক্ত করে যান। (তাবাকাত- ৩/৫২৬, সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৪৫৮) উল্লেখ্য যে, উহুদ থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় কুরাইশ নেতা আবু সুফইয়ান ইবন হারব ঘোষণা দেয় যে, এখন থেকে ঠিক এক বছরের মাথায় ‘বদর আস-সুগরা’ তে আবার তোমাদের মুখোমুখি হব। রাসূলুল্লাহ সা. ও মুসলমানরা এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে যথাসময়ে সেখানে উপস্থিত হন। কিন্তু কুরাইশরা অঙ্গীকার পালনের ব্যর্থ হয়। এই বদর আস-সুগরা- তে রাসূল সা. বাহিনীসহ আট দিন অপেক্ষা করেন। এটা হিজরী চতুর্থ সনের জ্বিলকা’দ মাসের ঘটনা। (আনসাবুল আশরাফ- ১/৩৩৯-৩৪০)
বদর যুদ্ধের সূচনা পর্বে কুরাইশ পক্ষের বাহাদুর ’উতবা ইবন রাবীয়া’ তার ভাই শাইবা ইবন রাবীয়া ও ছেলে আল-ওয়ালীদ ইবন উতবাকে সংগে করে প্রতিপক্ষ মুসলিম বাহিনীকে দ্বন্দ্ব যুদ্ধের আহ্বান জানায়। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুসলিম বাহিনীর মধ্য থেকে ’আউফ, মুয়াওয়াজ ও আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা সর্বপ্রথম এগিয়ে যান। ’উতবা তাঁদের জিজ্ঞেস করেঃ তোমরা কারা? তাঁরা জবাব দেনঃ আনসারদের একটি দল। ’উতবা বলল, তোমাদের সাথে আমরা লড়তে চাইনা। (সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৬২৫)
বদরের বিজয় বার্তা দিয়ে হযরত রাসূলে কারীম সা. মদীনার চতুর্দিকে লোক পাঠান। তিনি ’আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহাকে পাঠান মদীনার উঁচু অঞ্চলের দিকে। (সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৬৪২)
রাসূলুল্লাহ সা. বদর যুদ্ধেল পর মুসলমানদের হাতে বন্দী কুরাইশদের সম্পর্কে সাহাবীদের মতামত জানতে চান। তাঁদের সম্পর্কে নানাজন নানা মত প্রকাশ করেন। ’আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা বলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ প্রচুর জ্বালানী কাঠে পরিপূর্ণ একটি উপত্যকায় তাদেরকে জড় করে তার মধ্যে ফেলে দেওয়া হোক। তারপর আমিই সেই কাঠে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে মেরে ফেলবো। (হায়াতুস সাহাবা- ২/৪২)
খন্দক যুদ্ধের সময় হযরত রাসূলে কারীম সা. আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহার রচিত কবিতা বার বার আবৃত্তি করেছিলেন। তার কিছু অংশ নিম্নরূপঃ
‘‘হে আল্লাহ, তোমার সাহায্য না হলে আমরা হিদায়াত পেতাম না,
আমরা যাকাত দিতাম না, সালাত আদায় করতাম না
তুমি আমাদের ওপর প্রশান্তি নাযিল কর,
যুদ্ধে আমাদেরকে অটল রাখ।
যারা আমাদের ওপর জুলুম করেছে,
তারা বিপর্যয় সৃষ্টি করলে, আমরা অস্বীকার করবো।’’
(সীয়ারে আনসার- ২/৫৯)
এই খন্দক যুদ্ধের সময় মদীনার ইহুদী গোত্র বনু কুরাইজার নেতা কাব ইবন আসাদ রাসূলুল্লাহর সা. সাথে সম্পাদিত তাদের চুক্তি ভঙ্গ করে গোপন ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। খবরটি রাসূলুল্লাহর সা. কানে পৌঁছে। তিনি খবরের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কয়েকজন লোককে কা’বের নিকট পাঠান। তাদের মধ্যে ’আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহাও ছিলেন। (সীরাতু ইবন হিশাম- ২/২২১, আসাহ আস-সীয়ার- ১৯০)
খন্দক যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহর সা. একটি মু’জিযা বা অলৌকিক কর্মকান্ডের কথা সীরাত গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে। আর তার সাথে আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহার নামটি উচ্চারিত হয়েছে। ঘটনাটি সংক্ষেপে এইরূপঃ
’আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহার ভাগ্নী তথা নু’মান ইবন বাশীরের বোন বলেনঃ একদিন
আমার মা ’উমরাহ বিনতু রাওয়াহা আমাকে ডেকে আমার কাপড়ে কিছু খেজুর বেঁধে
দিয়ে বললেনঃ এগুলি তোমার বাবা বাশীর ও মামা ’আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহাকে দিয়ে
এস, তাঁরা দুপুরে খাবেন। আমি সেগুলি নিয়ে রাসূলুল্লাহর সা. পাশ দিয়ে
যাচ্ছি, আর আমার বাবা ও মামাকে খোঁজ করছি। রাসূল সা. আমাকে দেখে ডাক দিলেনঃ
এই মেয়ে, এদিকে এস। তোমার কাছে কি? বললামঃ খেজুর। আমার মা আমার বাবা বাশীর
ইবন সা’দ ও মামা ’আবদুল্লাহর দুপুরের খাবারের জন্য পাঠিয়েছেন। বললেনঃ আমার
কাছে দাও। আমি খেজুরগুলি রাসূলুল্লাহর সা. দুই হাতে ঢেলে দিলাম, কিন্তু
হাত ভরলো না। তিনি কাপড় বিছাতে বললেন এবং খেজুরগুলি কাপড়ের ওপর ছড়িয়ে
দিলেন; তারপর পাশের লেকটিকে বললেনঃ যাও, খন্দকবাসীদের দুপুরের খাবার খেয়ে
যেতে বল। ঘোষণার পর, সবাই চেল এল এবং খাবার খেতে শুরু কর। তাঁরা খাচ্ছে, আর
খেজুর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকলো। (সীরাতু ইবন হিশাম- ২/১১৮, হায়াতুস সাহাবা-
৩/৬৩১)
ষষ্ঠ হিজরীতে হুদাইবিয়ার সন্ধি ও বাই’য়াতে রিদওয়ানেও ’আবদুল্লাহ যোগদান করেন।
আবু রাফে’র পরে উসাইর ইবন রাযিম ইহুদীকে খাইবারের শাসক নিয়োগ করা হয়েছিল। ইসলামের শত্রুতায় সে ছিল উপযুক্ত উত্তরাধিকারী। সে গাতফান গোত্রে ঘুরাঘুরি করে তাদেরকে বিদ্রাহী করে তোলে। হযরত রাসূলে কারীম সা. খবর পেয়ে ষষ্ঠ হিজরীর রমাদান মাসে তিরিশ সদস্যের একটি দলের সাথে ’আবদুল্লাহকে খাইবারে পাঠান। তিনি গোপনে উসাইর ইবন রাযিমের সকল তথ্য সংগ্রহ করে রাসূলুল্লাহকে সা. অবহিত করেন। রাসূল সা. তিরিশ সদস্যের একটি বাহিনী ’আবদুল্লাহর অধীনে ন্যস্ত করে উসাইরকে হত্যার নির্দেশ দেন। (আনসাবুল আশরাফ- ১/৩৭৮)
আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা উসাইরের সাথে দেখা করে বলেন, যদি আপনি নিরাপত্তার আশ্বাস দেন তাহলে একটি কথা বলি। সে আশ্বাস দিল। ’আবদুল্লাহ বললেনঃ রাসূলুল্লাহ সা. আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। আপনাকে খাইবারের নেতা বানানো তাঁর ইচ্ছা। তবে আপনাকে একবার মদীনায় যেতে হবে। সে প্রলোভনে পড়ে এবং তিরিশজন ইহুদীকে সংগে করে ’আবদুল্লাহর বাহিনীর সাথে চলতে শুরু করলো। পথে ’আবদুল্লাহ প্রত্যেক ইহুদীর প্রতি নজর রাখার জন্য একজন করে মুসলমান নির্দিষ্ট করে দিলেন। এতে উসাইরের মনে সন্দেহের উদ্রেক হল এবং ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলো। ধোঁকা ও প্রতারণার অপরাধে মুসলিম মুজাহিদরা খুব দ্রুত আক্রমণ চালিয়ে তাদের সকলকে হত্যা করেন। এই ঘটনার পর খাইবারের মাথাচাড়া দেওয়া বিদ্রোহ দমিত হয়। (সীরাতু ইবন হিশাম- ২/৬১৮, সীয়ারে আনসার- ২/৬০)
পরে হযরত রাসূলুল্লাহ সা. ’আবদুল্লাহকে খাইবারে উৎপাদিত খেজুর পরিমাপকারী হিসাবে আবারও সেখানে পাঠান। কিছু লোক রাসূলুল্লাহর সা. নিকট ’আবদুল্লাহর কঠোরতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলো। এক পর্যায়ে তারা ঘুষও দিতে চাইল। ইবন রাওয়াহা তাদেরকে বললেনঃ ওহে আল্লাহর দুশমনরা। তোমরা আমাকে হারাম খাওয়াতে চাও? আমার প্রিয় ব্যক্তির পক্ষ থেকে আমি এসেছি। আমার নিকট তোমরা বানর ও শুকর থেকেও ঘৃণিত। তোমাদের প্রতি ঘৃণা এবং তাঁর প্রতি ভালোবাসা তোমাদের ওপর কোন রকম জুলুমের দিকে নিয়ে যাবে না। একথা শুনে তারা বললঃ এমন ন্যায়পরায়ণতার ওপরই আসমান ও যমীন প্রতিষ্ঠিত। (হায়াতুস সাহাবা- ২/১০৮, আল বিদায়া- ৪/১৯৯)
হুদাইবিয়ার সন্ধি অনুযায়ী সে বছরের মূলতবী ’উমরাহ রাসূল সা. পরের বছর হিজরী সপ্তম সনে আদায় করেন। একে ‘উমরাতুল কাদা’ বা কাজা ’উমরা বলে। এই সফরে রাসূলে কারীম সা. যখন মক্কায় প্রবেশ করেন এবং উটের পিঠে বসে ‘হাজরে আসওয়াদ’ চুম্বন করেন তখন মক্কায় প্রবেশ করেন এবং উটের পিঠে বসে ‘হাজলে আসওয়াদ’ চুম্বন করেন তখন আবদুল্লাহ তার বাহনের লাগাম ধরে একটি স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন। কবিতাটির কিছু অংশের মর্ম নিম্নরূপঃ
ওরে কাফিরের সন্তানরা! তোরা তাঁর পথ থেকে সরে যা, তোরা পথ ছেড়ে দে। কারণ, সকল সৎকাজ তো তাঁরই সাথে। আমরা তোদের মেরেছি কুরআনের ব্যাখ্যার ওপর, যেমন মেরেছি তাঁর নাযিলের ওপর। এমন মার দিয়েছি যে, তোদের মস্তক দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বন্ধু ভুলে ফেলে গেছে তাঁর বন্ধুকে। প্রভু আমি তাঁর কথার ওপর ঈমান এনেছি। (তাবাকাত- ৩/৫২৬, আল ইসাবা- ২/৩০৭)
এক সময় হযরত উমার রা. ধমক দিয়ে বলেনঃ আল্লাহর হারামে ও রাসূলুল্লাহর সা. সামনে এভাবে কবিতা পাঠ? রাসূল সা. তাঁকে শান্ত করে বলেনঃ ’উমার! আমি তার কথা শুনছি। আল্লাহর কসম! কাফিরদের ওপর তার কথা তীর বর্শর চেয়েও বেশী ক্রিয়াশীল। (আল-ইসাবা- ২/৩০৭) তিনি আবদুল্লাহকে বলেনঃ তুমি এভাবে বলঃ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, নাসারা ’আবদাহ ওয়া আ’য়ায্যা জুনদাহ, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহ’- এক আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন, তাঁর সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করেছেন এবং একাই প্রতিপক্ষের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেছেন।
’আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা উপরোক্ত বাক্যগুলি আবৃত্তি করছিলেন, আর তার সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে উচ্চারণ করছিলেন সমবেত মুসলিম জনমন্ডলী। তখন মক্কার উপত্যকা সমূহে সেই ধ্বনি প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরছিল। (সীয়ারে আনসার- ২/৬১)
হিজরী অষ্টম সনের জামাদি-ইল-আওয়াল মাসে মূতার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। রাসূলুল্লাহ সা. বসরার শাসকের নিকট দূত মারফত একটি চিঠি পাঠান। পথে মূতা নামক স্থানে এক গাসসানী ব্যক্তির হাতে দূত নিহত হয়। দূতের হত্যা মূলতঃ যুদ্ধ ঘোষণার ইঙ্গিত। রাসূল সা. খবর পেয়ে যায়িদ ইবন হারিসার নেতৃত্বে তিন হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী মূতায় পাঠান। যাত্রার প্রাক্কালে হযরত রাসূলে কারীম সা. বলেনঃ যায়িদ হবে এ বাহিনীর প্রধান। সে নিহত হলে জা’ফর ইবন আবী তালিব তার স্থলাভিষিক্ত হবে। জা’ফরের পর হবে আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা। আর সেও যদি নিহত হয় তাহলে মুসলমানরা আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের আমীর বানিয়ে নেবে।
বাহিনী মদীনা থেকে যাত্রার সময় হযরত রাসূলে কারীম সা. ‘সানিয়্যাতুল বিদা’ পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে তাদের বিদায় জানান। বিদায় বেলা মদীনাবাসীরা তাদেরকে বললঃ তোমরা নিরাপদে থাক এবং কামিয়াব হয়ে ফিরে এসো। আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা কাঁদতে লাগলেন। লোকেরা বললঃ কাঁদার কী আছে? তিনি বললেন, দুনিয়ার মুহাব্বতে আমি কাঁদছিনা। তিনি সূরা মারিইয়াম এর ৭১ নং আয়াত- ‘তোমাদের প্রত্যেককেই তা (পুলসিরাত) অতিক্রম করতে হবে। এটা তোমার রব-এ অনিবার্য সিদ্ধান্ত’- পাঠ করেন। তারপর তিনি বলেন, আমি কি সেই পুলসিরাত পার হতে পারবো? লোকরা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললঃ আল্লাহ তোমাকে রাসূলুল্লাহর সা. সাথে আবার মিলিত করবেন। তখন তিনি স্বরচিত একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। কবিতাটির অর্থ নিম্নরূপ। ‘তবে আমি রহমানের কাছে মাগফিরাত কামনা করি, আর কামনা করি অসির অন্তরভেদী একটি আঘাত, অথবা কলিজা ও নাড়িতে পৌঁছে যায় নিযার এমন একটি খোঁচা, আমার কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রমকারী যেন বলে- হায় আল্লাহ, সে কত ভালো যোদ্ধা ও গাজী ছিল।’ (সীরাতু ইবন হিশাম- ২/৭৪, ৩৭৭ হায়াতুস সাহাবা- ১/৫২৯, ৫৩০)
কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, যায়িদ ও জা’ফর বাহিনীসহ সকালে মদীনা ত্যাগ
করলেন। ঘটনাক্রমে সেটা ছিল জুময়ার দিন। ’আবদুল্লাহ বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহর
সা. সাথে জুময়ার নামায আদায় করে রওয়াহা হব। তিনি নামায আদায় করলে। রাসূল
সা. নামায শেষে তাঁকে দেখে বললেনঃ সকালে তোমার সংগীদের সাথে যাওনি কেন?
’আবদুল্লাহ বললেন, আমি ইচ্ছা করেছি, আপনার সাথে জুম’য়া আদায় করে তাদের সাথে
মিলিত হব। রাসূল সা. বললেন, তুমি যদি দুনিয়ার সবকিছু খরচ কর তবুও তাদের
সকালে যাত্রার সাওয়াবের সমকক্ষতা অর্জন করতে পারবে না। (হায়াতুস সাহাবা-
১/৪৬৩)
মদীনা থেকে শামের ‘মা’য়ান’ নামক স্থানে পৌঁছে তাঁরা জানতে পারেন যে, রোমান
সম্রাট হিরাকল এক লাখ রোমান সৈন্যসহ ‘বালকা’-র ‘মাব’ নামক স্থানে অবস্থান
নিয়েছে। আর তাদের সাথে যোগ দিয়েছে লাখম, জুজাম, কায়ন, বাহরা, বালী-সহ
বিভিন্ন গোত্রের আরও এক লাখ লোক। এ খবর পেয়ে তাঁরা মায়ানে দুই দিন ধরে
চিন্তা-ভাবনা ও পরামর্শ করেন। মুসলিম সৈনিকদের কেউ কেউ মত প্রকাশ করে যে,
আমরা শত্রুপক্ষের সৈন্যসংখ্যা ও প্রস্তুতির সব খবর রাসূলকে সা. অবহিত করি।
তারপর তিনি আমাদেরকে অতিরিক্ত সৈন্য দিয়ে সাহায্য করবেন অথবা অন্য কোন
নির্দেশ দেবেন এবং আমরা সেই মোতাবিক কাজ করব।
আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা তখন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে এক জ্বালাময়ী ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ওহে জনমন্ডলী, এখন তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হতে পসন্দ করছো না; অথচ তোমার সবাই শাহাদাত লাভের উদ্দেশ্যে বের হয়েছো। আমরা তো শত্রুর সাথে সংখ্যা, শক্তি ও আধিক্যের দ্বারা লড়বো না। আমরা লড়বো দ্বীনের বলে বলীয়ান হয়ে- যে দ্বীনের দ্বারা আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন। তোমরা সামনে ঝাঁপিয়ে পড়। তোমাদের সামনে আছে দুইটি কল্যানের যে কোন একটি হয় বিজয়ী হবে নতুবা শাহাদাত লাভ করবে। সৈনিকরা তাঁর কথায় সায় দিয়ে বললঃ আল্লাহর কসম! ইবন রাওয়াহা ঠিক কথাই বলেছেন। তারা তাদের সকল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হন। আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহাও একটি স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করতে করতে তাদের সাথে চলেন। (সীরাতু ইবন হিশাম- ২/৩৭৫, আসাহ আস-সীয়ার- ২৮০)
তাঁরা ‘মা’য়ান’ ত্যাগ করে মূতায় পৌঁছে শিবির স্থাপন করেন। এখানে অমুসলিমদের সাথে এক রক্তক্ষয়ী অসম যুদ্ধ হয়। ইতিহাসে এই যুদ্ধ ‘মূতার যুদ্ধ’ নামে খ্যাত। মুসলিম বাহিনীর সংখ্যা মাত্র তিনহাজার আর শত্রুবাহিনীর সংখ্যা অগণিত। (সীয়ারে আনসার- ২/৬২)
প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হল। সেনাপতি যায়িদ ইবন হারিসা যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ
হলেন। জা’ফর তাঁর পতাকাটি তুলে নিলেন। কিছুক্ষণ পর তিনিও শাহাদাত বরণ
করলেন। এবার আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা ঝান্ডা হাতে তুলে নিয়ে সামনে অগ্রসর
হলেন। তিনি ছিলেন ঘোড়ার পিঠে। ঘোড়ার পিঠ থেকে নামার মুহূর্তে তাঁর মনে একটু
দ্বিধার ভাব দেখা দিল। তিনি সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আপন মনে একটি কবিতা
আবৃত্তি করতে লাগলেন। তার কিছু অংশ নিম্নরূপঃ
‘হে আমার প্রাণ! আমি কসম করেছি, তুমি অবশ্যই নামবে, তুমি স্বেচ্ছায় নামবে
অথবা নামতে বাধ্য করা হবে। মানুষের চিৎকার ও ক্রন্দন ধ্বনি উত্থিত হচ্ছে,
তোমার কী হয়েছে যে, এখনও জান্নাতকে অবজ্ঞা করছো? সেই কত দিন থেকে না এই
জান্নাতের প্রত্যাশা করে আসছো, পুরানো ফুটো মশকের এক বিন্দু পানি ছাড়া তো
তুমি আর কিছু নও। হে আমার প্রাণ, আজ তুমি নহত না হলেও একদিন তুমি মরবে, এই
মৃত্যুর হাম্মাম এখানে উত্তপ্ত করা হচ্ছে। তুমি যা কামনা করতে এখন তোমাকে
তাই দেওয়া হয়েছে, তুমি তোমার সঙ্গীদ্বয়ের কর্মপন্থা অনুসরণ করলে হিদায়াত
পাবে।’
উপরোক্ত কবিতাটি আবৃত্তি করতে করতে তিনি ঘোড়া থেকে নেমে পড়েন। তখন তাঁর এক চাচাতো ভাই গোশতসহ একটুকরো হাড় নিয়ে এসে তার হাতে দেন। তিনি সেটা হাতে নিয়ে যেই না একটু চাটা দিয়েছেন, ঠিক তখনই প্রচণ্ড যুদ্ধের শোরগোল ভেসে এলো। ‘তুমি এখনও বেঁচে আছ’- এ কথা বলে হাতের হাড়টি ছুড়ে ফেলে দিয়ে তরবারি হাতে তুলে নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। শত্রুপক্ষের এক সৈনিক এমন জোরে তীর নিক্ষেপ করে যে, মুসলিম বাহিনীর মধ্যে ত্রাসের সৃষ্টি হয়। একটি তীর তাঁর দেহে বিদ্ধ হয়। তিনি রক্তরঞ্জিত অবস্থায় সাথীদের আহবন জানান। সাথীরা ছুটে এসে তাঁকে ঘিরে ফেলে এবং শত্রু বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। (তাবাকাত- ৩/৫২৯, সীরাতু ইবন হিশাম- ২/৩৭৯, হায়াতুস সাহাবা- ১/৫৩৩, সীয়ারে আনসার- ২/৬৩, আনসাবুল আশরাফ- ১/৩৮০, ২৪৪)
মূতায় অবস্থানকালে শাহাদাতের পূর্বে একদিন রাতে তিনি একটি মর্মস্পর্শী কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। আবৃত্তি শুনে যায়িদ ইবন আরকাম কাঁদতে শুরু করেন। তিনি যায়িদের মাথার ওপর দুররা উঁচু করে ধরে বলেনঃ তোমার কী হয়েছে? আল্লাহ আমাকে শাহাদাত দান করলে তোমরা নিশ্চিন্তে ধরে ফিরে যাবে। (আল-ইসাবা- ২/৩০৭)
হযরত রাসূলে কালীম সা. ওহীর মাধ্যমে মূতার প্রতি মুহূর্তের খবর লাভ করে মদীনায় উপস্থিত লোকদের সামনে বর্ণনা করছিলেন। সহীহ বুখারীতে আনাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, মূতার খবর আসার পূর্বেই রাসূল সা. মদীনায় যায়িদ, জা’ফর ও আব্দুল্লাহর শাহাদাতের খবর দান করেন। তিনি বলেনঃ যায়িদ ঝান্ডা হাতে নেয় এবং শহীদ হয়। তারপর জা’ফর তুলে নেয়, সেও শহীদ হয়। অতঃপর আবদুল্লাহ তুলে নেয় এবং সেও শহীদ হয়। তিনি একথা বলছিলেন আর তাঁর দুই চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। (আসাহ আস-সীয়ার- ২৮১) কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, যায়িদ ও জা’ফরের শাহাদাতের খবর দেওয়ার পর রাসূল সা. একটু চুপ থাকেন। এতে আনসারদের চেহারা বিবর্ণ হয়ে যায়। তারা ধারণা করে যে, ’আবদুল্লাহর এমন কিছু ঘটেছে যা তাদের মনঃপূত নয়। তারপর রাসূল সা. বলেনঃ অতঃপর আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা পতাকা উঠিয়ে নেয় এবং যুদ্ধ করে শহীদ হয়। তিনি আরও বলেন, তাদের সকলকে জান্নাতে আমার কাছে আনা হয়েছে। আমি দেখলাম, তারা সোনার পালঙ্কে শুয়ে আছে। তবে ’আবদুল্লাহর পালঙ্কটি তার অন্য দুই সঙ্গীর থেকে একটু বাঁকা। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এটা এমন কেন? বলা হলঃ তারা দুইজন দ্বিধাহীন চিত্তে ঝাঁপিয়ে পড়ে, কিন্তু আবদুল্লাহর চিত্ত দ্বিধা-সংকোচ একটি দোল খায়। তারপর সে ঝাঁপিয়ে পড়ে। (সীরাতু ইবন হিশাম- ২/৩৮০)
মূতার তিন সেনাপতির মৃত্যুর খবর রাসূলুল্লাহর সা. নিকট পৌঁছলে তিনি উঠে দাঁড়ান এবং তাঁদের কর্মকাণ্ড বর্ণনা করে এই বলে দুআ করেনঃ আল্লাহ তুমি যায়িদকে ক্ষমা করে দাও। একথা তিনবার বলেন, তারপর বলেনঃ আল্লাহ তুমি জাফর ও আবদুল্লাহ ইবন রাওযাহাকে ক্ষমা করে দাও। (হায়াতুস সাহাবা- ৩/৩৪৪)
মূতায় যাওয়ার পূর্বে একবার মদীনায় অসুস্থ অবস্থায় অচেতন হয়ে পড়েন। তখন তাঁর বোন ’উমরাহ নানাভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে আরবদের প্রথা অনুযায়ী বিলাপ শুরু করেন। চেতনা ফিরে পেয়ে তিনি বোনকে বলেন, তুমি আমার সম্পর্কে অতিরঞ্জন করে যা কিছু বলছিলে, তার সবই আমার কাছ থেকে সত্যায়িত করা হচ্ছিল। এই কারণে তাঁর মৃত্যুর সময় তারই উপদেশ মত সকলে ‘সবা’ (ধৈর্য্য) অবলম্বন করে। সহীহ বুখারীতে এসেছে- তিনি যখন মারা যান তাঁর জন্য কান্নাকাটি বা বিলাপ করা হয়নি। (উসুদুল গাবা- ৩/১৪৭-১৫৯, সীরাতু ইবন হিশাম- ২/৩৮০)
মূতা রওয়ানা হওয়ার সময় তাঁর স্ত্রী ও সন্তান ছিল। কিন্তু উসুদুল গাবা গ্রন্থকার বলেছেন, তিনি নিহত হন এবং কোন সন্তান রেখে যাননি। (উসুদুল গাবা- ৩/১৫৯, সীয়ারে আনসার- ২/২৬৫)
’আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহার স্ত্রী সম্পর্কে আল-ইসতীয়াব গ্রন্থে একটি কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। বিশেষ এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর স্ত্রী তাঁকে বলেন, তুমি যদি পাক অবস্থায় থাক তাহলে একটু কুরআন তিলাওয়াত করে শুনাও। তখন ’আবদুল্লাহ চালাকির আশ্রয় গ্রহণ করে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। যার কিছু নিম্নরূপঃ
‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহর ওয়াদা সত্য,
কাফিরদের ঠিকানা দোযখ,
’আরশ ছিল পানির ওপর,
’আরশের ওপর ছিলেন বিশ্বের প্রতিপালক,
আর সেই আরশ বহন করে তাঁরই শক্তিশালী ফিরিশতারা।’’
তাঁর স্ত্রী কুরআনের পারদর্শী ছিলেন না। এই কারণে তিনি বিশ্বাস করেন যে, আবদুল্লাহ কুরআন থেকেই তিলাওয়াত করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ সত্যবাদী, আমার চোখ দেখতে ভুল করেছে। আমি অহেতুক তোমাকে দোষারোপ করছি। দাসীর সাথে উপগত হওয়ার পর স্ত্রীর ক্রোধ থেকে বাঁচার জন্য হযরত আবদুল্লাহ এমন বাহানার আশ্রয় নেন। তিনি পরদিন সকালে এ ঘটনা রাসূলুল্লাহকে সা. জানালে তিনি হেসে দেন। (আল-ইসতীয়াব- ১/৩৬২, হায়াতুস সাহাবা- ৩/১৫)
সামরিক দক্ষতা ছাড়াও হযরত আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহার আরও অনেক যোগ্যতা ছিল। একারণে রাসূলুল্লাহ সা. তাঁকে সমাদর করতেন। সেই জাহিলী আরবে যে মুষ্টিমেয় কিছু লোক আরবীতে লেখা জানতো, ’আবদুল্লাহ তাদের অন্যতম। ইসলাম গ্রহণের পর রাসুল সা. তাঁকে স্বীয় ‘কাতিব’ (লেখক) হিসাবে নিয়োগ করেন। তবে কখন কিভাবে তিনি লেখা শিখেছিলেন, সে সম্পর্কে ইতিহাস কিছু বলে না।
তিনি ছিলেন তৎকালীন আরবের একজন বিখ্যাত করি। ডক্টর ’উমার ফাররুখ বলেন, ’মদীনায় ইসলাম রাষ্ট্রশক্তি অর্জন করলে আরবের মুশরিকগণ আরও শংকিত হয়ে পড়ে। মক্কার পৌত্তলিক কবিগণ বিশেষতঃ ’আবদুল্লাহ ইবন আয-যিবা’রী, কা’ব ইবন যুহাইর ও আবু সুফইয়ান ইবন আল-হারিস রাসূলুল্লাহ সা. ও ইসলামের নিন্দা ও কুৎসা রটনা করে কবিতা লিখতো। তখন মদীনায় হাসসান ইবন সাবিত, ’আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা ও কা’ব ইবন মালিক তাদের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড়িয়ে সমুচিত জবাব দেন এবং ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরেন। মক্কা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত দু’পক্ষের এ কবিতায় যুদ্ধ চলতে থাকে। ’আবদুল্লাহ ছিলেন তাঁর যুগের ভালো কবিদের একজন। তিনি হাস্সান ও কা’বের সমপর্যায়ের কবি। জাহিলী যুগে তিনি কবি কায়েস ইবনুল খুতাইম- এর সাথে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ মূলক কবিতা লিখে প্রতিযোগিতা করতেন। আর ইসলামী যুগে রাসূলের সা. প্রশংসা এবং মুশরিক কবিদের প্রতিবাদ ও নিন্দায় কবিতা রচনা করতেন। (তারীখুল আদাব আল-আরাবী- ১/২৫৮, ২৬১, ২৬২)
জুরযী যায়দান বলেনঃ ‘মক্কার পৌত্তলিক কবিদের মধ্যে যারা মুসলমানদের নিন্দা করে কবিতা বলতো তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবন আয-যিবারী, আবু সুফইয়ান ইবন আল-হারিস ও ’আমর ইবন আল- ’আস ছিল সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। একদিন নবী সা. বললেনঃ যারা তাদের অস্ত্রের দ্বারা আল্লাহর রাসূলকে সাহায্য করেছে, জিহ্বা দিয়ে তাঁকে সাহায্য করতে তাদেরকে কিসে বিরত রেখেছে? এই কথার পর যে তিন কবি উপরোক্ত কবিদের প্রতিরোধে দাঁড়িয়ে যান তাঁরা হলেন, হাস্সান, ক’ব ও আবদুল্লাহ। রাসুল সা. মনে করতেন, এই তিন কবির কবিতা শত্রুদের মধ্যে দারুণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তিনি বলেছেনঃ এই তিন কবি কুরাইশদের কাছে তীরের ফলার চেয়েও বেশী শক্তিশালী। (তারীখু আদাব আল-লুগাহ আল-’আরাবিয়্যাহ- ১/১৯১)
কবি হাস্সান কুরাইশদের বংশ ও রক্তের ওপর আঘাত হানতেন, কবি কা’ব কুরাইশদের যুদ্ধ-বিগ্রহ ও অতীত ইতিহাস বর্ণনা করে তাদের দোষ-ত্রুটি তুলে ধরতেন। পক্ষান্তরে আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা তাদের কুফরীর জন্য নিন্দা ও ধিক্কার দিতেন। (উসুদুল গাবা- ৪/২৪৮) আবুল ফারাজ আল-ইস্পাহানী বলেনঃ হাস্সান ও কা’ব প্রতিপক্ষ কুরাইশ কবিদের মত যুদ্ধ বিগ্রহ ও গৌরবমূলক কাজ-কর্ম নিয়ে কবিতা রচনা করতেন এবং তার মধ্যে কুরাইশদের বিভিন্ন দোষ-ত্রুটি তুলে ধরতেন। আর আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহ তাদের কুফরীর জন্য ধিক্কার ও নিন্দা জানাতেন। কুরাইশদের ইসলাম গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত পূর্বোক্ত দু’জনের কবিতা ছিল তাদের নিকট ’আবদুল্লাহর কবিতা অপেক্ষা অধিকতর পীড়াদায়ক। কিন্তু যখন তারা ইসলাম গ্রহণ করে তার মর্মবাণী উপলব্ধি করলো তখন ’আবদুল্লাহর কবিতা সর্বাধিক প্রভাবশালী ও পীড়াদায়ক বলে তাদের নিকট প্রতিভাত হলো। (কিতাবুল আগানী- ৪/১৩৬)
আবদুল্লাহ ছিলেন স্বভাব কবি। উপস্থিত কবিতা রচনায় দক্ষ ছিলেন। হযরত যুবাইর ইবনুল আওয়াব রা. বলেনঃ তাৎক্ষণিক কবিতা বলার ক্ষেত্রে আমি ’আবদুল্লাহ অপেক্ষা অধিকতর সক্ষম আর কাউকে দেখিনি। (তাহীবুল আসমা ওয়াল লূগাত- ১/২৬৫) একদিন তিনি মসজিদে নববীতে। পূর্বেই সেখানে হযরত রাসূলে কারীম সা. একদল সাহাবীর সাথে বসে ছিলেন। তিনি ’আবদুল্লাহকে কাছে ডেকে বলেন, তুমি এখন মুশরিকদের সম্পর্কে কিছু কবিতা শোনাও।’ আবদুল্লাহ কিছু কবিতা শোনালেন। কবিতা শুনে রাসূল সা. একটু হাসি দিয়ে বলেন, আল্লাহ তোমাকে অটল রাখুন। (আল-ইসতীয়াব- ১/৩৬২, তাবাকাত- ৩/৫২৮, আল-ইসাবা- ২/৩০৭)
হযরত আবু হুরাইরা রা. ওয়াজ নসীহাতের সময় বলতেন, তোমাদের এক ভাই আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা অশ্লীল কথা বলতেন। তারপর তিনি ’আবদুল্লাহর একটি কবিতা আবৃত্তি করতেন। ইমাম আহমাদ তাঁর মুসনাদ গ্রন্থে কবিতাটি সংকলটন করেছেন। (আল-ফাতহুর রাব্বানী, শরহু মুসনাদ আহমাদ- ২২/২৮৭)
’আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহার সব কবিতা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। তবে এখনও পঞ্চাশটি শ্লোক (verse) সীরাত ও ইতিহাসের বিভিন্ন গ্রন্থে সংরক্ষিত আছে। সীরাতু ইবন হিশামে তার অধিকাংশ পাওয়া যায়। (দারিয়া-ই-মা’য়ারিফ ইসলামিয়্যা (উর্দু)- ১২/৭৮০)
যখন সূরা শু’য়ারা- এর ২২৪-২২৬ নং আয়াতগুলি- ‘কবিদেরকে তারাই অনুসরণ করে যারা বিভ্রান্ত। তুমি কি দেখনা তারা উদভ্রান্ত হয়ে প্রত্যেক উপত্যকায় ঘুরে বেড়ায়? এবং যা করে না তাই বলে বেড়ায়’- নাযিল হয় তখন হাস্সান, আবদুল্লাহ ও কাব এত ভীত হয়ে পড়েন যে, তাঁরা কাঁদতে কাঁদতে রাসূলুল্লাহর সা. নিকট ছুটে যান। তাঁরা বলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ, এই আয়াত নাযিলের সময় আল্লাহ তো জানতেন আমরা কবি। তখন রাসূল সা. আয়াতের পরবর্তী অংশ- ‘কিন্তু তারা ব্যতীত যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, আল্লাহকে বার বার স্মরণ করে ও অত্যাচারিত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে’- পাঠ করেন এবং বলেন এই হচ্ছো তোমরা। (আল-ইসাবা- ২/৩০৭, তাবাকাত- ৩/৫২৮, হায়াতুস সাহাবা- ৩/৭৭, ১৭২)
আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা থেকে কয়েকটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি হাদীসগুলি খোদ রাসূল সা. ও বিলাল থেকে বর্ণনা করেছেন। আর তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন ইবন ’আব্বাস, উসামা ইবন যায়িদ, আনাস ইবন মালিক, নু’মান ইবন বাশীর ও আবু হুরাইরা। (আল-ইসাবা- ২/৩০৬)
আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা ছিলেন একজন দুনিয়া বিরাগী ’আবিদ ও সব সময় আল্লাহকে স্মরণকারী (জাকির) ব্যক্তি। আবুদ দারদা বলেনঃ এমন কোন দিন যায়না যেদিন আমি তাঁকে স্মরণ করিনা। আমার সঙ্গে একত্র হলেই তিনি বলতেনম, এস, কিছুক্ষণের জন্য আমরা মুসলমান হয়ে যাই। তারপর বসে ‘জিকর’ শুরু করতেন। ‘জিকর’ শেষ হলে বলতেন, এটা ছিল ঈমানের মজলিস। (উসুদুল গাবা- ৩/১৫৭)
আনাস ইবন মালিক বলেন। ’আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহার সাথে রাসূলুল্লাহর সা. কোন সাহাবীর দেখা হলে বলতেন, এস, আমরা কিছু সময়ের জন্য ঈমান আনি। একদিন এক ব্যক্তি তাঁর এমন কথায় খুব রেগে গেল। সে সোজা রাসূলুল্লাহর সা. নিকট অভিযোগ করে বললঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনি কি দেখেন না, ইবন রাওয়াহা আপনার ঈমান ত্যাগ করে কিছুক্ষণের ঈমানকে পসন্দ করছে? তিনি বললেন, আল্লাহ ইবন রাওয়াহার ওপর রহম করুন। সে এমন সব মজলিস পসন্দ করে যার জন্য ফিরিশতারাও ফখর করে থাকে।
একবার তো তাঁর এমনি ধরণের আহ্বানে এক ব্যক্তি প্রতিবাদ করে বলে বসলো, কেন আমরা কি মুমিন নই? তিনি বললেনঃ হাঁ, আমরা মুমিন। তবে আমরা জিকর করবো, তাতে আমাদের ঈমান বৃদ্ধি পাবে। (আল-ফাতহুল রাব্বানী- ২২/২৮৬, হায়াতুস সাহাবা- ৩/১৫)
তাঁর স্ত্রী বর্ণনা করেন, যখন তিনি ঘর থেকে বের হতেন, দুই রাকায়াত নামায আদায় করতেন। আবার ঘরে ফিরে এসে ঠিক একই রকম করতেন। এ ব্যাপারে কক্ষণও অলসতা করতেন না। (আল-ইসাবা- ২/৩০৭, হায়াতুস সাহাবা- ৩/১৪৮)
একবার এক সফরে এত প্রচণ্ড গরম ছিল যে, মানুষ সূর্যের তেজ থেকে বাঁচার জন্য নিজ নিজ মাথার ওপর হাত দিয়ে রেখেছিল। এমন গরমে কে রোযা রাখে? কিন্তু তার মধ্যেও কেবল হযরত রাসূলে কারীম সা. ও ’আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা ‘সাওম’ পালন করেন। (সহীহ বুখারী- ১/২৬১, মুসলিম- ১/৩৫৭, হায়াতুস সাহাবা- ১/৪৭৯, তাহজীবুল আসমা ওয়াল লুগাত- ১/২৬৫)
জিহাদের প্রতি ছিল তাঁর দুর্নিবার আকর্ষণ। বদর থেকে নিয়ে মূতা পর্যন্ত যত যুদ্ধ হয়েছে তার একটিতেও তিনি অনুপস্থিত থাকেননি। রিজাল শাস্ত্রবিদরা (চরিত অভিধান) বলেছেনঃ আবদুল্লাহ সবার আগে যুদ্ধে বের হতেন এবং সবার শেষে ঘরে ফিরতেন। (আল-ইসাবা- ২/৩০৭)
হযরত রাসূলে কারীমের সা. আদেশ-নিষেধ তিনি অক্ষরে পালন করতেন। একটি ঘটনায় এর সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। একবার হযরত রাসূলে কারীম সা. মসজিদে খুতবা (ভাষণ) দিচ্ছেন। আর ইবন রাওয়াহা যাচ্ছেন মসজিদের দিকে। তিনি যখন মসজিদের বাইরের রাস্তায় এমন সময় তিনি শুনতে পেলেন রাসূল সা. বলছেন, তোমরা নিজ নিজ স্থানে বসে পড়। এই নির্দেশ ইবন রাওয়াহার কানে যেতেই সেখানে বসে পগেন। রাসূল সা. খুতবা শেষ করার পর কোন এক ব্যক্তি ইবন রাওয়াহার ব্যাপারটি তাঁকে শোনান। শুনে তিনি মন্তব্য করেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের লালসা আল্লাহ তার মধ্যে আরও বৃদ্ধি করে দিন। (আল-ইসাবা- ২/৩০৬, হায়াতুস সাহাবা- ২/৩৫৬)
হযরত আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা যেমন রাসূলকে সা. গভীরভাবে ভালোবাসতেন তেমনি রাসূল সা.-ও তাঁকে ভালোবাসতেন। একবার আবদুল্লাহ অসুখে পড়ে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। রাসূল সা. দেখতে গেলেন। তিনি দু’আ করলেঃ হে আল্লাহ, যদি তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসে থাকে তাহলে সহজে তার মরণ দাও অন্যথায় তাকে ভালো করে দাও। (আল-ইসাবা- ২/৩০৬)
উসামা ইবন যায়িদ বলেনঃ সা’দ ইবন ’উবাদা অসুস্থ হলে রাসূল সা. তাঁকে দেখার জন্য বের হলেন। আমাকেও বাহনের পিছনে বসিয়ে নিলেন। ’আবদুল্লাহ ইবন উবাই তার মুযাহিম দুর্গের ছায়ায় নিজ গোত্রের আরও কিছু লোকের সাথে বসে ছিল। রাসূল সা. মনে করলেন, কোন কথা না বলে তাদের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া শিষ্টাচারের পরিপন্থী। তাই তিনি বাহনের পিছ থেকে নামলেন এবং সালাম দিয়ে কিছুক্ষণ বসলেন। তারপর কুরআনের কিছু আয়াত তিলাওয়াত করে তাদের সকলকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। এতক্ষণ ’আবদুল্লাহ ইবন উবাই চুপ করে ছিল। রাসূলুল্লাহর সা. কথা শেষ হলে সে বললঃ দেখুন, আপনার কথা সত্য হলে বাড়ীতে গিয়ে বসে থাকুন। কেউ আপনার কাছে গেলে তাকে যত পারেন শুনাবেন। এমন অবাঞ্ছিতভাবে কোন মজলিসে উপস্থিত হয়ে কাউকে বিরক্ত করবেন না। সেখানে উপস্থিত মুসলমানদের মধ্যে ’আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহাও ছিলেন। তিনি গর্জে উঠলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ, তার কথা কক্ষণও মানবেন না। আপনি আসবেন! আপনি আমাদের মজলিসে, ঘরে ঘরে এবং বাড়ীতে বাড়ীতে আসবেন। আমরা সেটাই পসন্দ করি। আপনার আগমণের দ্বারা আল্লাহ আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন, আমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন। (সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৫৮৭, হায়াতুস সাহাবা- ২/৫০৯)
একদিন আবদুল্লাহ তাঁর স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে কাঁদা শুরু করলেন। তাই দেখে স্ত্রীও কাঁদতে লাগলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কাঁদছো কেন? স্ত্রী বললেনঃ তোমাকে কাঁদতে দেখে আমি কাঁদছি। তখন তিনি সূরা মরিয়াম- এর ৭১ নং আয়াতটি তিলাওয়াত করে বলেন, আমি এই আয়াতটি স্মরণ করে কাঁদছি। জানিনে আমি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাব কিনা। (হায়াতুস সাহাবা- ৩/৪৫)
বিখ্যাত আনসারী সাহাবী আবু দারদা-র ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে আবদুল্লাহর ভূমিকাটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। জাহিলী যুগে উভয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্ক ছিল। ’আব্দুল্লাহর ইসলাম গ্রহণের পরও আবু দারদা মূর্তি উপাসক থেকে যান। তাঁর বাড়ীতে ছিল বিরাট এক মূর্তি। একদিন আবু দারদা বাড়ী থেকে বের হলেন, আর ঠিক সেই সময় ভিন্ন পথ দিয়ে আবদুল্লাহ বাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করলেন। তিনি আবু দারদা-র স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেনঃ আবু দারদা কোথায়? স্ত্রী জবাব দিলেনঃ এই মাত্র বেরিয়ে গেলেন। আবদুল্লাহ মূর্তির ঘরে প্রবেশ করে সেখানে রক্ষিত একটি হাতুড়ী দিয়ে মূর্তিটি ভেঙ্গে চুরমার করে ফেললেন। শব্দ শুনে আবু দারদা-র স্ত্রী ছুটে গেলেন। আবদুল্লাহ কাজ শেষ করে চলে গেলেন। এ দিকে আবু দারদা-র স্ত্রী ভয়ে মাথায় হাত দিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন। আবু দারদা ঘরে ফিরে স্ত্রীর নিকট সব কথা শুনে প্রথমে খুব রেগে গেলেন। কিন্তু পরক্ষণেই চিন্তা করলেন, যদি মূর্তির কোন ক্ষমতা থাকতো তাহলে সে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হতো। এই উপলব্ধির পর তিনি আবদুল্লাহকে সংগে করে রাসূলুল্লাহর সা. নিকট যান এবং ইসলামের ঘোষণা দেন। (হায়াতুস সাহাবা- ১/৩৩২, ৩৩৩)
একবার কবি হাস্সান ইবন সাবিত, একটি কবিতায় সাফওয়ান ইবন আল-মুয়াত্তাল ও তাঁর গোত্রের নিন্দা করেন। সাফওয়ান ক্ষেপে গিয়ে কবিকে মারপিট করে এবং তাঁকে দু’হাত গলার সাথে বেঁধে বনু আল-হারিসের পল্লীতে নিয়ে যায়। আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা তাকে ছাড়িয়ে দেন এবং বিষয়টি রাসূলুল্লাহকে সা. অবহিত করেন। তাদের দু’জনকেও রাসূলুল্লাহর সা. দরবারে নিয়ে আসেন। তিনি তাদের ঝগড়া মিটমাট করে দেন। (সীরাতু ইবন হিশাম- ২/৩০৫)
উপরে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যসমূহের কারণে রাসূল সা. তাঁর প্রশংসায় বলেছেনঃ ‘নি’মার রাজুলু আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা’- আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা কতই না ভালো মানুষ। (আল-ইসাবা- ২/৩০৬)