নাম উবাই, ডাকনাম আবূল মুনজির ও আবুত তুফাইল। (আল-আ’লাম- ১/৭৮; আল-ইসাবা-
১/১৯) সায়্যিদুল কুররা, সায়্যিদুল আনসার প্রভৃতি তাঁর লকব বা উপাধি। মদীনার
খাযরাজ গোত্রের নাজ্জার শাখার সন্তান। পিতার নাম কা’ব ইবন কাইস, মাতার নাম
সুহাইলা। তিনি বনী ’আদী ইবন নাজ্জারের কন্যা এবং প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবূ
তালহা আল-আনসারীর ফুফু। সুতরাং উবাই, আবূ তালহার ফুফাতো ভাই। উবাইর আবুল
মুনজির কুনিয়াতটি খোদ রাসূল সা. দান করেন এবং দ্বিতীয় কুনিয়াতটি হযরত ’উমার
রা. তাঁর ছেলে তুফাইলের নাম অনুসারে আবুত তুফাইল রাখেন। তাঁর জন্মের সঠিক
সন-তারিখ জানা যায় না।
হযরত উবাইয়ের প্রথম জীবন সম্পর্কে তেমন কিছু
জানা যায় না। তবে হযরত আনাস ইবন মালিকের বর্ণনায় এতটুকু জানা যায় যে,
ইসলাম-পূর্ব জীবনে তিনি মদ পানে আসক্ত ছিলেন। হযরত আবু তালহার মদ পানের
আড্ডার তিনি ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তাঁকে মদীনার অন্যতম ইয়াহুদী
ধর্মগুরু বলে গণ্য করা হতো। প্রাচীন আসমানী কিতাব সমূহেও তাঁর জ্ঞান ছিল সে
যুগে লেখা-পড়ার তেমন প্রচলন ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি লিখতে পড়তে জানতেন। এ
কারণে ইসলাম গ্রহণের পর রাসূলুল্লাহর সা. সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন
এবং কুরআনের অন্যতম লেখকে পরিণত হন। (আল-আ’লাম- ১/৭৮)
মদীনায় ইয়াহুদীদের
যথেষ্ট ধর্মীয় প্রভাব ছিল। ইসলাম-পূর্ব জীবনে তিনি তাওরাতসহ অন্যান্য যে
সকল ধর্মীয় গ্রন্থ পড়েছিলেন, মূলতঃ সেই জ্ঞানই তাঁকে ইসলামের দিকে টেনে
আনে। যে সকল মদীনাবাসী মক্কায় গিয়ে সর্বশেষ আকাবায় রাসূলুল্লাহর সা. হাতে
বাই’য়াত করেন তিনিও তাঁদের একজন। আর এখান থেকেই তাঁর ইসলামী জীবনের সূচনা।
(আল-ইসাবা- ১/১৯)
হিজরাতের পর হযরত রাসূলে কারীম সা. ’আশারা মুবাশ্শারার
অন্যতম সদস্য হযরত সা’ঈদ ইবন যায়িদের সাথে উবাইয়ের মুওয়াখাত বা ভ্রাতৃ
সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে দেন। (সীরাতু ইবন হিশাম- ২/৫০৫) বালাজুরীর মতে,
তালহা ইবন ’উবাইদুল্লাহর সাথে তাঁর ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। (আনসাবুল
আশরাফ- ১/২৭১) রাসূল সা. মদীনায় আগমনের পর হযরত আবু আইউব আল-আনসারীর বাড়ীতে
অতিথি হন। তবে একটি বর্ণনা মতে, তাঁর বাহন উটনীটি উবাই ইবন কা’বের বাড়ীতে
থঅকে। (আনসাবুল আশরাফ- ১/২৬৭)
হযরত উবাই বদর থেকে নিয়ে তায়িফ অভিযান
পর্যন্ত রাসূলুল্লাহর সা. জীবদ্দশায় যত যুদ্ধ হয়েছে তার প্রত্যেকটিতে
যোগদান করেন। (আল-ইসাবা- ১/১৯, আল-আ’লাম- ১/৭৮) কুরাইশরা বদরে পরাজিত হয়ে
মক্কায় ফিরে প্রতিশোধ নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করে দেয়। উহুদ যুদ্ধের প্রাক্কালে
মক্কায় অবস্থানকারী রাসূলুল্লাহর সা. চাচা হযরত ’আব্বাস ইবন ’আবদুল
মুত্তালিব গোপনে বনী গিফার গোত্রের এক লোকের মাধ্যমে একটি পত্র
রাসূলুল্লাহর সা. নিকট পাঠান। সেই পত্রে তিনি কুরাইশদের সকল গতিবিধি
রাসূলকে সা. অবহিত করেন। লোকটি মদীনার উপকণ্ঠে কুবায় পত্রখানি রাসূলুল্লাহর
সা. নিকট হস্তান্তর করেন। রাসূলসা. পত্রখানা সেখানে উবাই ইবন কা’বের
দ্বারা পাঠ করিয়ে শোনেন এবং পত্রের বিষয় গোপন রাখার নির্দেশ দেন। (আনসাবুল
আশরাফ- ১/৩১৪) এই উহুদ যুদ্ধে শত্রু পক্ষের নিক্ষিপ্ত তীরের আঘাতে তিনি আহত
হন। হযরত রাসূল সা. তাঁর চিকিৎসার জন্য একজন চিকিৎসক পাঠান। চিকিৎসক তাঁর
রগ কেটে সেই স্থানে সেঁক দেয়।
উহুদ যুদ্ধের শেষে হযরত রাসূলে কারীম সা.
আহত-নিহতদের খোঁজ-খবর নেওয়ার নির্দেশ দিলেন। এক পর্যায়ে তিনি বললেনঃ
তোমাদের কেউ একজন সা’দ ইবন রাবী’র খোঁজ নাও তো। একজন আনসারী সাহাবী তাঁকে
মুমূর্ষু অবস্থায় শহীদদের লাশের স্তূপ থেকে খুঁজে বের করেন। কোন কোন বর্ণনা
মতে এই আনসারী সাহাবী হলেন উবাই ইবন কা’ব। (হায়াতুস সাহাবা- ২/৯৫)
খন্দক
যুদ্ধের প্রক্কালে মক্কার কুরাইশ নেতা আবূ সুফইয়ান, আবূ উসামা আল-জাশামীর
মারফত একটি চিঠি রাসূলুল্লাহর সা. নিকট পাঠান। সেই চিঠিও রাসূল সা. উবাইয়ের
দ্বারা পাঠ করান। (আনসাবুল আশরাফ- ১/৩৭০) তেমনিভাবে হিজরী ২য় সনের রজব
মাসে রাসূল সা. ’আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ আল-আসাদীর নেতৃত্বে একটি বাহিনী নাখলা
অভিমুখে পাঠান। যাত্রাকালে তিনি ’আবদুল্লাহর হাতে একটি সীলকৃত চিঠি দিয়ে
বলেনঃ ‘দুই রাত একাধারে চলার পর চিঠিটি খুলে পাঠ করবে এবং এর নির্দেশ মত
কাজ করবে।’ রাসূল সা. এই চিঠিটি উবাইয়ের দ্বারা লেখান। (আনসাবুল আশরাফ-
১/৩৭১)
হিজরী ৯ম সনে যাকাত ফরজ হলে রাসূল সা. আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে
যাকাত আদায়কারী নিয়োগ করেন। তিনি উবাইকে বালী, ’আজরা এব্ং বনী সা’দ গোত্রে
যাকাত আদায়কারী হিসেবে পাঠান। তিনি অত্যন্ত দ্বীনদারী ও সততার সাথে এই
দায়িত্ব পালন করেন। একবার এক জনবসতিতে গেলেন যাকাত আদায় করতে। নিয়ম অনুযায়ী
এক ব্যক্তি তার সকল গবাদিপশু উবাইয়ের সামনে হাজির করে যাতে তিনি যেটা
ইচ্ছা গ্রহণ করতে পারেন। উবাই উটের পাল থেকে দুই বছরের একটি বাচ্চা গ্রহণ
করেন। যাকাত দানকারী বললেনঃ এতটুকু বাচ্চা নিয়ে কি হবে? এতো দুধও দেয় না,
আরোহণেরও উপযোগী নয়। আপনি যদি নিতে চান এই মোটা তাজা উটনীটি নিন। উবাই
বললেনঃ আমার দ্বারা সম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহর সা. নির্দেশের বিপরীত আমি কিছুই
করতে পারি না। মদীনা তো এখান থেকে খুব বেশি দূর না, তুমি আমার সাথে চলো,
বিষয়টি আমরা রাসূলকে সা. জানাই। তিনি যা বলবেন, আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করবো।
লোকটি রাজী হলো। সে তার উটনী নিয়ে উবাইয়ের সাথে মদীনায় উপস্থিত হলো। তাদের
কথা শুনে রাসূল সা. বললেনঃ এই যদি তোমার ইচ্ছা হয় তাহলে উটনী দাও, গ্রহণ
করা হবে। আল্লাহ তোমাকে এই প্রতিদান দিবেন। লোকটি সন্তুষ্টচিত্তে উটনীটি
দান করে বাড়ী ফিরে গেল। (মুসনাদ- ৫/১৪২, কানযুল ’উম্মাল- ৩/৩০৯, হায়াতুস
সাহাবা- ১/১৫১)
হযরত রাসূলে কারীমের সা. ইনতিকালের পর হযরত আবু বকর রা.
খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই সময় পবিত্র কুরআনের সংগ্রহ ও সংকলনের
গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু হয়। সাহাবা-ই-কিরামের যে দলটির ওপর এই দায়িত্ব
অর্পিত হয়, উবাই ছিলেন তাঁদের নেতা। তিনি কুরআনের শব্দাবলী উচ্চারণ করতে,
আর অন্যরা লিখতেন। এই দলীটর সকলেই ছিলেন উঁচু স্তরের ’আলিম। এই কারণে মাঝে
মধ্যে কোন কোন আয়াত সম্পর্কে তাঁদের মধ্যে আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক হতো। যখন
সূরা আত-তাওবার ১২৭ নং আয়াতটি লেখা হয় তখন দলের অন্য সদস্যরা বললেন, এই
আয়াতটি সর্বশেষ নাযিল হয়েছে। হযরত উবাই বললেনঃ না। রাসূল সা. এর পরে আরও
দু’টি আয়াত আমাকে শিখিয়েছিলেন। সূরা আল-তাওবার ১২৮ নং আয়াতটি সর্বশেষ নাযিল
হয়েছে। (মুসনাদ- ৫/১৩৪)
হযরত আবু বকরের রা. ইনতিকালের পর হযরত ’উমার
রা. তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি তাঁর খিলাফতকালে অসংখ্য জনকল্যাণ ও
সংস্কারমূলক কাজের প্রবর্তন করেন। মজলিসে শূরা তার মধ্যে একটি। বিশিষ্ট
মুহাজির ও আনসার ব্যক্তিবৃন্দের সমন্বয়ে এাই মজলিস গঠিত হয়। খাযরাজ গোত্রের
প্রতিনিধি হিসেবে উবাই এই মজলিসের সদস্য ছিলেন। (কানযুল উম্মাল- ৩/১৩)
হযরত
’উমারের খিলাফতকালের গোটা সময়টা তিনি মদীনায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে কাটান।
বেশীর ভাগ সময় অধ্যয়ন ও শিক্ষাদানে ব্যয় করেন। যখন মজলিসে শূরার অধিবেশন
বসতো বা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপস্থিত হতো খলীফা ’উমার রা. তাঁর যুক্তি ও
পরামর্শ গ্রহণ করতেন।
হযরত ’উমারের রা. খিলাফতকালের পুরো সময়টা তিনি
‘ইফতার’ পদে আসীন ছিলেন। এছাড়া অন্য কোন পদ তিনি লাভ করেননি। একবার ’উমারকে
রা. জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আমাকে কোন এক স্থানের ওয়ালী (শাসক) নিযুক্ত করেন
না কেন? ’উমার রা. বললেনঃ আমি আপনার দ্বীনকে দুনিয়ার দ্বারা কলুষিত হতে
দেখতে চাই না। (কানযুল ’উম্মাল- ৩/১২৩) হযরত ’উমার রা. যখন তারাবীহর নামায
জামা’য়াতের সাথে আদায়ের প্রচলন করেন তখন উবাইকে ইমাম মনোনীত করেন। (বুখারীঃ
কিতাবু সালাতিত তারাবীহ) ’উমার যেমন তাঁকে সম্মান করতেন তেমনি ভয়ও করতেন।
তাঁর কাছে ফাতওয়া চাইতেন।
খলীফা ’উমারের রা. বাইতুল মাকদাস সফরে উবাই
তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন। খলীফার ঐতিহাসিক জাবিয়া ভাষণের সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাইতুল মাকদাসের অধিবাসীদের সাথে হযরত ’উমার রা. যে সন্ধি চুক্তি সম্পাদন
করেন তার লেখন ছিলেন হযরত উবাই। (আল-আ’লাম- ১/৭৮; সিফাতুল সাফওয়া- ১/১৮৮)
’উমারের
পর হযরত ’উসমানের রা. সময় খিলাফতের বিভিন্ন অঞ্চলে কুরআন মজীদের তিলাওয়াত ও
উচ্চারণে বিভিন্নতা ছড়িয়ে পড়ে। খলীফা ’উসমান রা. শঙ্কিত হয়ে পড়লেন। তিনি
এই বিভিন্নতা দূর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। তিনি শ্রেষ্ঠ ক্বারীদের ডেকে
পৃথকভাবে তাঁদের তিলাওয়াত শুনলেন। ’উবাই ইবন কা’ব, ’আবদুল্লাহ ইবন ’আব্বাস
এবং মু’য়াজ ইবন জাবাল- প্রত্যেকেরই উচ্চারণে কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করলেন।
অতঃপর তিনি বললেন, সকল মুসলমানকে একই উচ্চারণের কুরআনের ওপর ঐক্যবদ্ধ করতে
চাই।
সেই সময় কুরাইশ ও আনসারদের মধ্যে ১২ ব্যক্তি সম্পূর্ণ কুরআনে দক্ষ
ছিলেন। খলীফা ’উসমান এই ১২ জনের ওপর এই গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেন। আর এই
পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব দান করেন উবাই উবন কা’বকে। তিনি শব্দাবলী উচ্চারণ
করতেন, যায়িদ ইবন সাবিত লিখতেন। আজ পৃথিবীতে যে কুরআন বিদ্যমান তা মূলতঃ
হযরত উবাইয়ের পাঠের অনুলিপি। (কানযুল উম্মাল- ১/২৮২, ২৮৩)
হযরত উবাইয়ের
মৃত্যু সন নিয়ে বিস্তর মতভেদ আছে। সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মতে হযরত ’উসমানের রা.
খিলাফতকালে হিজরী ৩৯ সনের এক জুম’আর দিনে তিনি ইনতিকাল করেন। হযরত ’উসমান
তাঁর জানাযার নামায পড়ান এবং মদীনায় দাফন করা হয়। হাইসাম ইবন ’আদী ও
অন্যদের মতে তিনি হিজরী ১৯ সনে মদীনায় মারা যান। আর ওয়াকিদী, মুহাম্মদ ইবন
’আবদুল্লাহ প্রমুখের মতে তাঁর মৃত্যু হয় হিজরী ২২ সনে। (তাজকিরাতুল
হুফ্ফাজ- ১/১৭; শাজারাতুজ জাহাব- ১/৩১) তবে বিভিন্ন বর্ণনা মাধ্যমে খলীফা
’উসমানের খিলফতকালে বিভিন্ন কর্মকান্ডে তাঁর শরীক হওয়ার কথা জানা যায়। অতএব
হিজরী ৩৯ সনে তাঁর মৃত্যুর মতটি সঠিক বলে মনে হয়।
হযরত সন্তানদের সঠিক
সংখ্যা জানা যায় না। তবে যে সকল সন্তানদের নাম জানা যায় তারা হলেনঃ ১.
তুফাইল, ২. মুহাম্মাদ, ৩. রাবী’, ৪. উম্মু ’উমার। প্রথমোক্ত দুইজন হযরত
রাসূলে কারীমের সা. জীবদ্দশায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রীর ডাকনাম উম্মু
তুফাইল। তিনি সাহাবিয়্যা ছিলেন। হাদীস বর্ণনা কারী মহিলা সাহাবীদের নামের
তালিকায় তাঁর নামটিও দেখা যায়।
হযরত উবাইয়ের দৈহিক গঠন ছিল মধ্যম
আকৃতির হালকা পাতলা ধরণের। গায়ের রং ছিল উজ্জ্বল গৌর বর্ণের বার্ধ্বক্যে
মাথার চুল সাদা হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু খিযাব লাগাতেন না। (আল-ইসাবা- ১/১৯;
আল-আ’লাম- ১/৭৮; তাজকিরাতুল হুফ্ফাজ- ১/১৭) স্বভাব ছিল একটু সৌখিন
প্রকৃতির। বাড়ীতে গদীর ওপর বসতেন। ঘরের দেওয়ালে আয়না লাগিয়েছিলেন এবং
সেইদিকে মুখ করে নিয়মিত চিরুনী করতেন। একটু রুক্ষ প্রকৃতির ছিলেন। সাধারণঃ
স্বভাববিরোধী কোন কথা শুনলেই রেগে যেতেন। হযরত ’উমারের স্বভাবও ছিল একই
রকম। এই কারণে মাঝে মাঝে তাদের দুইজনের মধ্যে ঝগড়াহয়ে যেত। বিভিন্ন বর্ণনায়
এমন বহু ঝগড়ার কথা জানা যায়।
একবার হযরত উবাই একব্যক্তিকে একটি আয়াত
শেখালেন। হযরত ’উমার রা. লেকটির মুখে আয়াতটির পাঠ শুনে জিজ্ঞেস করেন, তুমি এ
পাঠ কার কাছে শিখেছ? লোকটি উবাইয়ের নাম বললো। হযরত ’উমার লোকটিকে সংগে করে
উবাইয়ের বাড়ীতে উপস্থিত হন এবং আয়াতটি সম্পর্কে জানতে চান। ’উবাই বললেনঃ
আমি রাসূলুল্লাহর সা. মুখ থেকে এভাবেই শিখেছি। হযরত ’উমার আরও নিশ্চিত
হওয়ার জন্য আবার জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি রাসূলুল্লাহর সা. মুখ থেকে শিখেছেন?
উবাই বললেনঃ হাঁ। হযরত ’উমার রা. প্রশ্নটির পুনরাবৃত্তির করেন। এবার উবাই
ক্ষেপে যান। তিনি বলেনঃ আল্লাহর কসম! আল্লাহ তা’য়ালা এই আয়াতটি জিবরীলের আ.
মাধ্যমে মুহাম্মাদের সা. অন্তকরণে নাযিল করেন। এই ব্যাপারে খাত্তাব ও তাঁর
ছেলের সাথে পরামর্শ করার প্রয়োজন বোধ করেননি। এ কথা শুনে হযরত ’উমার রা.
কানে হাত দিয়ে তাকবীর পড়তে পড়তে তাঁর ঘর থেকে বেরিয়ে যান। (কানযুল ’উম্মাল-
১/২৮৭)
হযরত হাসান থেকে বর্ণিত! উবাই ইবন কা’বের একটি আয়াতের
তিলাওয়াতের সাথে ’উমার ইবন খাত্তাব দ্বিমত পোষণ করলেন। উবাই তাঁকে বললেনঃ
আপনি যখন বাকী’র বাজারে কেনা-বেচা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন আমি তখন রাসূলুল্লাহর
সা. নিকট থেকে আয়াতটি শুনেছি। ’উমার বললেনঃ সত্যি কথা বলেছেন। কে সত্য বলে
আমি শুধু তাই পরীক্ষা করতে চেয়েছি। অন্য একটি বর্ণনায় এসেছেঃ উবাই সূরা
আল-মায়িদার ১০৭ নং আয়াতটি তিলাওয়াত করলে ’উমার বললেনঃ মিথ্যা বলছেন। উবাই
বললেনঃ আপনি অধিকতর মিথ্যাবাদী। এক ব্যক্তি বললোঃ আপনি আমীরুল মুমিনীনকে
মিথ্যাবাদী বললেন? উবাই বললেনঃ আমি আমীরুল মুমিনীনকে তোমার থেকে বেশী
সম্মান করি; কিন্তু তাঁকে আমি কিতাবুল্লাহর তাসদীক বা প্রত্যায়নের ব্যাপারে
মিথ্যাবাদী বলেছি। অর্থাৎ কিতাবুল্লাহর প্রতি অবিশ্বাস প্রকাশের ব্যাপারে
আমি তাঁকে সত্যবাদী বলে স্বীকার করিনি। (কানযুল ’উম্মাল ১/২৮৫; হায়াতুস
সাহাবা- ১/৭৪)
হযরত আবূ দারদা রা. একবার শামের অধিবাসীদের বিরাট একটি
দলকে কুরআন শিখানোর জন্য মদীনায় নিয়ে আসেন। তারা হযরত উবাইয়ের নিকট কুরআন
শিখেন। একদিন তাদেরই একজন হযরত ’উমারের সামনে কুরআন পাঠ করেন। ’উমার তার
ভুল ধরেন। লোকটি বলে, আমাকে তো উবাই এভাবে শিখিয়েছেন। ’উমার তার সংগে একজন
লোক দিয়ে বলেনঃ যাও, উবাইকে ডেকে নিয়ে এসো। তারা উবাইয়ের বাড়ীতে গিয়ে দেখেন
তিনি উটকে খাবার দিচ্ছেন। তারা বললেনঃ আমীরুল মুমিনীন আপনাকে ডেকেছেন।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী কাজে? তারা ঘটনাটি খুলে বললো। তিনি তাদের ওপর ভীষণ
ক্ষেপে গিয়ে বললেনঃ তোমরা কি ক্ষ্যান্ত দিবে না? রাগের চোটে সেই উটের খাবার
হাতে নিয়েই ’উমারের কাছে ছুটে যান। উমার তাঁর ও যায়িদ ইবন সাবিতের নিকট
থেকে আয়াতটি শোনেন। দুইজনের পাঠে কিছু তারতম্য ছিল। হযরত ’উমার যায়িদের পাঠ
সমর্থন করেন। এতে উবাই ক্ষেপে গিয়ে বলেনঃ আল্লাহর কসম! ’উমার! আপনার ভালো
জানা আছে, আমি যখন রাসূলুল্লাহর সা. নিকট অন্দরে থাকতাম আর আপনার তখন বাইরে
দাঁড়িয়ে থাকতেন। আজ আমার সাথে এমন আচরণ করছেন। আল্লাহর কসম! আপনি যদি
বলেন, আমি ঘরেই বসে থাকবো। আমরণ কারও সাথে কথা বলবো না, কাউকে কুরআনও
শিখাবো না। ’উমার বললেনঃ না, এমন করবেন না। আল্লাহ আপনাকে যে ইলম দান
করেছেন, আপনি অতি আগ্রহের সাথে তা শিখাতে থাকুন। (কানযুল ’উম্মাল- ১/২৮৫)
স্বভাবগতভাবেই
হযরত উবাই ছিলেন একটু স্বাধীনচেতা ও আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন। একবার হযরত
ইবন আব্বাস রা. মদীনার একটি গলি দিয়ে কুরআনের একটি তিলাওয়াত করতে করতে
যাচ্ছেন। এমন সময় তিনি শুনতে পেলেন, পিছন থেকে কেউ যেন তাঁকে ডাকছে। ঘাড়
ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখেন, ’উমার। কাছে এসে ইবন ’আব্বাসকে বললেনঃ তুমি আমার
দাসকে সংগে নিয়ে উবাই ইবন কা’বের নিকট যাবে এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করবে যে,
তিনি কি অমুক আয়াতটি এভাবে পড়েছেন? ইবন আব্বাস উবাইয়ের গৃহে পৌঁছলেন এবং
পরপরই ’উমারও সেখানে হাজির হলেন। অনুমতি নিয়ে তাঁরা ভিতরে প্রবেশ করলেন।
উবাই তখন দেওয়ালের দিকে মুখ করে মাথার চুল ঠিক করছিলেন। ’উমারকে গদীর ওপর
বসানো হলো। উবাইয়ের পিছ ছিল ’উমারের দিকে এবং সেই অবস্থায়ই বসে থাকলেন,
পিছনে তাকালেন না। কিছুক্ষণ পর বললেনঃ আমীরুল মুমিনীন, স্বাগত! আমার সংগে
সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে না অন্য কোন প্রয়োজন এসেছেন? ’উমার বললেনঃ একটি কাজে
এসেছি। অতঃপর একটি আয়াত তিলাওয়াত করে বলেন- এর উচ্চারণ তো খুব কঠিন। উবাই
বললেনঃ আমি কুরআন তাঁর নিকট থেকেই শিখেছি, যিনি জিবরীলের নিকট থেকে
শিখেছিলেন। এ তো খুব সহজ ও কোমল। ’উমার বললেনঃ আমি সন্তুষ্ট হতে পারলাম না।
হযরত ’উমারের রা. খিলাফতকালে একবার একটি বাগিচা নিয়ে খলীফা ও উবাইয়ের
মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হলো। উবাই কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ করলেন, আপনার
খিলাফতকালে এমন কর্ম? ’উমার বললেনঃ আমি তো এমনটি চাইনি। মুসলমানদের মধ্যে
যার কাছে ইচ্ছা, আপনি বিচার চাইতে পারেন। তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। উবাই
বিচারক মানলেন যায়িদ ইবন সাবিতকে রা.। ’উমার রাজী হলেন। হযরত যায়িদের
এজলাসে মুকাদ্দামার শুনানীর দিন ধার্য হলো। নির্ধারিত দিনে খলীফাতুল
মুসলিমীন এজলাসে হাজির হলেন। তিনি উবাইয়ের দাবী অস্বীকার করলেন এবং উবাইকে
লক্ষ্য করে বললেনঃ আপনি ভুলে গেছেন, একটু চিন্তা করে মনে করার চেষ্টা করুন।
উবাই বললেনঃ এখন আমার কিছুই স্মরণের আসছেন। তখন হযরত ’উমার ঘটনাটির পূর্ণ
চিত্র উবাইয়ের সামনে তুলে ধরেন। বিচারক যায়িদ উবাইকে বললেন, আপনার কোন
প্রমাণ আছে কি? তিনি বললেন, না। যায়িদ বললেনঃ তাহলে আপনি আমীরুল মুমিনীনকে
কসম দিতে আমার কোন আপত্তি নেই। (কানযুল ’উম্মাল- ৩/১৮১-১৮৪; হায়াতুস
সাহাবা- ১/৯৪)
একবার এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহর সা. নিকট এসে বললো, অমুক
তার পিতার স্ত্রীর (সৎমা) সাথে সহবাস করে। উবাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি
বলে উঠলেনঃ আমি এমন ব্যক্তির গর্দান উড়িয়ে দিতাম। একথা শুনে রাসূল সা.
একটু মৃদু হেসে বললেনঃ উবাই কতই না আত্মমর্যাদাসম্পন্ন। তবে আমি তাঁর চেয়েও
বেশী আত্মমর্যাদাবোধের অধিকারী। আর আল্লাহ আমার চেয়েও বেশী
আত্মমর্যাদাবোধের অধিকারী। (হায়াতুস সাহাবা- ১/৬৩৮)
হযরত উবাই ইবন
কা’বের পবিত্র জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত জ্ঞান চর্চার জন্য নিবেদিত ছিল।
মদীনার আনসার-মুহাজিরগণ যখন ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিকাজ নিয়ে দারুণ ব্যস্ত
থাকতো, হযরত উবাই তখন মসজিদে নববীতে কুরআন-হাদীসের জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার
পঠন-পাঠনে সময় অতিবাহিত করতেন। আনসারদের মধ্যে তাঁর চেয়ে বড় কোন ‘আলিম’ কেউ
ছিলেন না। আর কুরআন বুঝার দক্ষতা এবং হিফ্জ ও কিরআতে মুহাজির ও আনসারদের
মধ্যে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ছিল সর্বজন স্বীকৃত। খোদ রাসূলে কারীম সা. মাঝে মাঝে
তাঁর নিকট থেকে কুরআন তিলাওয়াত শুনতেন।
ইসলামী জ্ঞান ছাড়া প্রাচীন
আসমানী কিতাবের জ্ঞানেও ছিল তাঁর সমান দক্ষতা। তাওরাত ও ইন্জীলের আলিম
ছিলেন। অতীতের আসমানী গ্রন্থসমূহে রাসূল সা. সম্পর্কে যে সকল ভবিষ্যদ্বাণী ও
সুসংবাদ ছিল সে বিষয়ে তিনি ছিলেন একজন বিশেষজ্ঞ। তাঁর এই পান্ডিত্যের
কারণে হযরত ফারুকে আজম তাঁকে খুবই সমীহ ও সম্মান করতেন। এমন কি তিনি নিজেই
বিভিন্ন মাসয়ালার সমাধান জানার জন্য সময়-অসময়ে তাঁর গৃহে যেতেন।
ইসলামের
ইতিহাসে গভীর জ্ঞান ও অসাধারণ মনীষার জন্য হযরত ’আবদুল্লাহ ইবন ’আব্বাস
রা. ‘হিবরুল উম্মাত’ নামে খ্যাত। তিনিও হযরত উবাইয়ের হালকা-ই-দারসে উপস্থিত
হওয়াকে গৌরবজনক বলে মনে করতেন। তাঁর এই ফজীলাত ও মর্যাদা ছিল নবীর সা.
নিকট থেকে অর্জিত জ্ঞানের কারণেই। তিনি নবীর সা. নিকট থেকে এত বেশী পরিমাণ
জ্ঞান অর্জন করেছিলেন যে, অন্য কারও নিকট জ্ঞানের জন্য যাওয়ার প্রয়োজন
তাঁর ছিল না। সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে একমাত্র আবুবকর রা. ছাড়া তাঁর সমকক্ষ
আর কেউ ছিলেন না।
হযরত উবাই রা. বিভিন্ন শাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন। তবে
বিশেষভাবে কুরআন, তাফসীর, শানে নুযুল, নাসিখ-মানসুখ, হাদীস ও ফিকাহ
শাস্ত্রে ছিলেন ইমাম ও মুজতাহিদ। একজন মুজতাহিদ বা গবেষকের দৃষ্টিভঙ্গি
নিয়ে কুরআন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতেন। একদিন রাসূল সা. তাঁকে জিজ্ঞেস
করলেন, আচ্ছা বলতো কুরআনের শ্রেষ্ঠতম আয়াত কোনটি? বললেনঃ আয়াতুল কুরসী।
রাসূল সা. দারুণ খুশী হলেন এবং বললেনঃ উবাই, এই ইলম্ তোমাকে খুশী করুক।
উপরোক্ত
ঘটনা দ্বারা বুঝা যায় তিনি কুরআনের আয়াত নিয়ে কতখানি চিন্তা-ভাবনা করতেন।
একবার এক ব্যক্তি উবাইকে বললো, আমাকে কিছু নসীহত বা উপদেশ দান করুন। তিনি
বললেনঃ কুরআনকে পথের দিশারী মানবে, তার বিধি-নিষেধ ও সিদ্ধান্ত সমূহের ওপর
রাজী থাকবে। হযরত রাসূলে কারীম সা. তোমাদের জন্য এই জিনিসটিই রেখে গেছেন।
তাতে আছে তোমাদের ও তোমার পূর্ববর্তীদের কথা এবং যা কিছু তোমার পরে হবে, সব
কিছুই। (তাজকিরাতুল হুফ্ফাজ- ১/১৭; হায়াতুস সাহাবা- ৩/৫১৮)
উল্লেখিত মতামত দ্বারা উবাই মূলতঃ এই কথাগুলিই প্রকাশ করেছেনঃ
১. কুরআন ইসলামের পূর্ণ জীবন বিধান।
২. কুরআন মুসলমানদের সর্বোত্তম জীবন বিধান।
৩. কুরআনের সকল কাহিনী ও বর্ণনা শিক্ষা ও উপদেশমূলক।
৪. এতে সকল জাতি-গোষ্ঠীর মোটামুটি আলোচনা এসেছে।
কোন ব্যক্তি যদি এইভাবে কুরআনকে দেখে তাহলে তাঁর জ্ঞানের পরিধি যে কত বিস্তৃত, গভীর ও সূক্ষ্ণ হয় তা সহজেই অনুমান করা যায়।
ইসলাম
গ্রহণের পর থেকেই হযরত উবাই কুরআনের সাথে অস্বাভাবিক প্রীতির সম্পর্ক গড়ে
তোলেন। রাসূল সা. মদীনায় আগমনের পর অহী লেখার সর্বপ্রথম গৌরব তিনিই অর্জন
করে। (আল-ইসাবা- ১/১৭) তখন থেকেই তাঁর মধ্যে কুরআন হিফ্জ করার প্রবণতা দেখা
দেয়। যতটুকু কুরআন অবতর্ণি হতো তিনি হিফ্জ করে ফেলতেন। এভাবে রাসূলুল্লাহর
সা. জীবদ্দশায় সমগ্র কুরআন হিফ্জ শেষ করেন। আনসারদের যে পাঁচ ব্যক্তি
রাসূলুল্লাহর সা. জীবদ্দশায় সম্পূর্ণ কুরআন হিফ্জ করেন তাদের মধ্যে উবাইয়ের
স্থঅন ছিল সর্বোচ্চে। (হায়াতুস সাহাবা- ৩/১৯৫) মদীনার খাযরাজ গোত্রের
লোকেরা গর্ব করে বলতোঃ আমাদের গোত্রের চার ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ
রাসূলুল্লাহর সা. জীবদ্দশায় সমগ্র কুরআন সংগ্রহ করেনি। তাদের অন্যতম হলেন
উবাই ইবন কা’ব। (হায়াতুস সাহাবা- ১/৩৯৫)
হযরত উবাই পবিত্র কুরআনের
প্রতিটি হরফ রাসূলুল্লাহর সা. পবিত্র মুখ থেকে শুনে হিফ্জ করেন। রাসূলও সা.
অত্যাধিক আগ্রহ দেখে তাঁর শিক্ষার প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি দেন।
রাসূলুল্লাহর সা. প্রতি সীমাহীন শ্রদ্ধা ও ভীতির কারণে অনেক বিশিষ্ট সাহাবী
অনেক সময় তাঁর কাছে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকতেন; কিন্তু উবাই নিঃসংকোচে
যা ইচ্ছা তাই প্রশ্ন করতেন। তাঁর এই আগ্রহের কারণ রাসূলও সা. মাঝে মাঝে
প্রশ্ন করার আগেই তাঁকে অনেক কথা বলে দিতেন। একবার তাঁকে বললেনঃ আমি তোমাকে
এমন একটি সূরার কথা বলছি, তাওরাত ও ইনজীলে যার সমকক্ষ কোন কিছু নেই। এমন
কি কুরআনেও এর মত দ্বিতীয়টি নেই। এতটুকু বলে তিনি অন্য কথায় চলে গেলেন।
উবাই বলেন, আমার ধারণা ছিল তিনি বলে দিবেন; কিন্তু তা না বলে বাড়ী যাওয়ার
জন্য উঠে পড়লেন। আমি পিছনে পিছনে চললাম। এক সময় তিনি আমার হাত মুট করে ধরে
কথা বলতে আরম্ভ করলেন এবং বাড়ীর দরজা পর্যন্ত পৌঁছলেন। তখন আমি সেই সূরাটির
নাম বলার জন্য ’আরজ করলাম। তিনি সূরাটির নাম আমাকে বলে দিলেন। (মুসনাদ-
৫/১১৪)
একবার হযরত রাসূলে কারীম সা. ফজরের নামায পড়ালেন এবং একটি আয়াত
ভুলে বাদ পড়ে গেল। হযরত উবাই মাঝখানে নামাযে শরীক হন। নামায শেষে রাসূল সা.
প্রশ্ন করলেন, তোমাদের কেউ কি আমার কিরআতের প্রতি মনোযোগী ছিলে? লোকেরা
কেউ কোন জবাব দিল না। তিনি আবার জানতে চাইলেন, উবাই ইবন কা’ব আছ কি? হযরত
উবাই ততোক্ষণে বাকী নামায শেষ করেছেন। তিনি বলে উঠলেন, আপনি অমুক আয়াতটি
পাঠ করেননি। আয়াতটি কি ‘মানসুখ’ (রহিত) হয়েছে নাকি আপনি পড়তে ভুলে গেছেন?
রাসূল সা. বললেনঃ মানসুখ হয়নি, আমি পড়তে ভুলে গেছি। আমি জানতাম তুমি ছাড়া
আর কেউ হয়তো এইদিকে মনোযোগী হবে না। (মুসনাদ- ৫/১২৩, ১৪৪)
উপরোক্ত ঘটনা
দ্বারা একথা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, কোন বিষয় হযরত উবাইয়ের বোধগম্য না হলে অন্য
সাহাবীদের মত চুপ থাকতেন না; বরং বিষয়টি নিয়ে রাসূলুল্লাহর সা. সাথে
আলোচনা করতেন এবং বুঝে আসার পরই উঠতেন। একবার মসজিদে ববীতে হযরত ’আবদুল্লাহ
ইবন মাস’উদ রা. একটি আয়াত পাঠ করলেন। যেহেতু তিনি ছিলেন হুজায়ল গোত্রের
লোক, এ কারণে তাঁর উচ্চারণে একটু ভিন্নতা ছিল। হযরত উবাই তাঁর পাঠ শুনে
প্রশ্ন করেনঃ আপনি এই আয়াত কার কাছে শিখেছেন? আমি রাসূলুল্লাহর সা. নিকট
আয়াতটির পাঠ এভাবে শিখেছি। ’আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ বললেনঃ আমাকেও তো রাসূল
সা. শিখিয়েছেন। উবাই বলেন, সেই সময় আমার অন্তরে ভ্রান্ত ধারণার প্রবাহ বয়ে
যেতে লাগলো। আমি ইবন মাস’উদকে সংগে নিয়ে রাসূলুল্লাহর সা. খিদমতে হাজির হয়ে
’আরজ করলামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার ও তাঁর কুরআন পাঠে তারতম্য দেখা
দিয়েছে। রাসূল সা. আমার পাঠ শুনলেন এবং বললেনঃ তুমি ঠিক পড়েছ। তারপর ইবন
মাস’উদের পাঠ শুনে বললেনঃ তুমিও ফিক পড়েছ। আমি হাত দিয়ে ইশারা করে বললামঃ
‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! দুইজনের পাঠই সঠিক হয় কি করে?’ এতক্ষণে হযরত উবাই ঘেমে
একাকার হয়ে গেছেন। রাসূলসা. এ অবস্থা দেখে তাঁর বুকের ওপর হাত রেখে বললেনঃ
‘হে আল্লাহ! উবায়ের সংশয় দূর করে দাও।’ পবিত্র হাতের স্পর্শে তাঁর হৃদয়ে
পূর্ণ প্রত্যয় নেমে আসে।
কিরায়াত শাস্ত্রে হযরত উবাই ছিলেন একজন
বিশেষজ্ঞ। এই বিষয়ে তিনি এত পারদর্শী ছিলেন যে, স্বয়ং রাসূল সা. তাঁর
প্রশংসা করেছেন। সাহাবা-ই-কিরামের মধ্যে কতিপয় ব্যক্তির বিশেষত্ব রাসূল সা.
নিজে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেইসব মহান ব্যক্তির একজন হযরত উবাই। তাঁর
সম্পর্কে রাসূল সা. বলেছেনঃ ‘আকরাহুম উবাই’- তাদের মধ্যে সবচেয়ে ক্বারী
উবাই। (তাজকিরাতুল হুফ্ফাজ- ১/১৬) মাসরূক থেকে বর্ণিত, রাসূল সা বলেছেনঃ
তোমরা ইবন মাস’উদ, উবাই ইবন কা’ব, মু’য়াজ ইবন জাবাল ও সালিম মাওলা আবী
হুজায়ফা- এই চারজনের নিকট থেকে কুরআনের জ্ঞান অর্জন করবে। (আনসাবুল আশরাফ-
১/২৬৪)
হযরত রাসূলে কারীমের সা. ইনতিকালের পর হযরত ’উমার রা. উবাই
সম্পর্কে রাসূলুল্লাহর সা. এসব বাণী অনেকবার মানুষকে নতুন করে স্মরণ করিয়ে
দেন। একবার মসজিদে নববীর মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলেনঃ উবাই সবচেয়ে বড় ক্বারী।
সিরিয়া সফরের সময় ‘জাবিয়া’ নামক স্থানের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি আর একবার
বলেনঃ তোমাদের কেউ কুরআন শিখতে চাইলে সে যেন উবাইয়ের কাছে আসে। (মুসনাদ-
৫/১২৩; হায়াতুস সাহাবা- ৩/২০১) হযরত ’উমার তাঁকে সায়্যিদুল মুসলিমীন নামে
আখ্যায়িত করেছেন। (হায়াতুস সাহাবা- ৩/৫১৯; তাজকিরাতুল হুফ্ফাজ- ১/১৭;
আল-ইসাবা- ১/১৯)
হযরত রাসূলে কারীম সা. নিজে উবাইকে কুরআন তিলাওয়াত করে
শুনাতেন। যে বছর তিনি ইনতিকাল করেন সে বছরও উবাইকে কুরআন শোনান। আর একথাও
বলেন যে, জিবরীল আমাকে বলেছেন, আমি যেন উবাইকে কুরআন শুনাই।
যখনই
কুরআনের যে আয়াতটি বা সূরাটি নাযিল হতো রাসূল সা. উবাইকে পাঠ করে শোনাতেন।
শুধু তাই নয়, মুখস্ত করিয়ে দিতেন। যখন সূরা ‘আল-বায়্যিনাহ’ নাযিল হয় তখন
তিনি উবাইকে ডেকে বলেন, আল্লাহ তোমাকে কুরআন শিখানোর জন্য আমাকে নির্দেশ
দিয়েছেন। উবাই তখন খুশীর আতিশয্যে কেঁদে ফেলেন। (আল-ইসাবা- ১/১৯) আবদুর
রহমান ইবন আবী আবযা নামক উবাইয়ের এক ছাত্র উস্তাদের এই ঘটনা অবগত হয়ে তাঁকে
জিজ্ঞেস করলেনঃ আবুল মুনজির! সম্ভবতঃ সেই সময় আপনি বিশেষ পুলক ও আনন্দ
অনুভব করেছিলেন? উবাই বললেনঃ কেন করবো না? একথা বলে তিনি সূরা ইউনুসের ৫৮
নং আয়াতটি পাঠ করেন। (মুসনাদ- ৪/১১৩) কিরায়াত শাস্ত্রে তাঁর পারদর্শিতার
কারণে বিশেষ এক ধরণের কিরায়াত সেখানে তাঁর নাম চালু হয় এবং ‘কিরায়াতে উবাই’
নামে পরিচিতি লাভ করে। বিশেষতঃ দিমাশ্কবাসীদের মধ্যে তা বেশী প্রচলিত ছিল।
হযরত
উবাইয়ের জীবদ্দশায় তাঁর কিরায়াত সারা মুসলিম বিশ্বে ব্যাপকভাবে গৃহীত হওয়া
উচিত ছিল, কিন্তু তা হয়নি। কারণ অনেক মানসূখ (রহিত) আয়াত তাঁর পাঠে
বিদ্যমান ছিল। আর এ জন্য হযরত ’উমার রা. তাঁর মর্যাদা উচ্চ কণ্ঠে স্বীকার
করা সত্ত্বেও বহুবার বহু ক্ষেত্রে উবাইয়ের সাথে কুরআন পাঠের ব্যাপারে
দ্বিমত পোষণ করেছেন। তিনি বার বার বলেছেন, উবাই আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী
কুরআন জানেন। তা সত্ত্বেও কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদেরকে তাঁর সাথে দ্বিমত পোষণ
করতে হয়েছে। তিনি দাবী করে থাকেন, সবকিছুই তিনি রাসূলুল্লাহর সা. নিকট
থেকে শিখেছেন। তাঁর দাবী অবশ্যই সত্য। কিন্তু যখন দেখা যায় বহু আয়াত মানসূখ
(রহিত) হয়েছে অথচ তিনি তা জানেন না, তখন তাঁর কিরায়াতের ওপর আমরা কেমন করে
অটল থাকতে পারি? (মুসনাদ- ৫/১১৩)
তবে পরবর্তীকালে তিনি সংশোধন হয়ে যান।
হযরত ’উসমানের খিলাফতকালে যখন কুরআন সংকলন করা হয় তখন মানসূখ আয়াতের প্রতি
সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। তখন উবাইয়ের কিরায়াত সর্বজন স্বীকৃতি লাভ করে এবং
সমগ্র মুসলিম খিলাফতে চালু হয়। (দ্রঃ সীয়ারে আনসার- ১/১৬২-৬৩)
হযরত
উবাই রা. মৃত্যুর সময় তাঁর কিরায়াত শাস্ত্রে দুইজন যোগ্য উত্তরসূরী রেখে
যান যাঁরা বিশ্ব মুসলিমের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। তাঁরা
হলেনঃ হযরত আবূ হুরাইরা ও হযরত ’আবদুল্লাহ ইবন ’আব্বাস রা.। পরবর্তীকালে
বিখ্যাত সাত ক্বারীর মধ্যে নাফে ’ইবন কাসীর মাক্কীর সনদ আবদুল্লাহ ইবন
’আব্বাসের মাধ্যমে হযরত উবাই ইবন কা’বে গিয়ে মিলিত হয়েছে।
সেকালে হযরত
উবাইয়েল ‘মাদরাসাতুল কিরায়াহ’ (কিরায়াত শাস্ত্রের শিক্ষালয়) একটি কেন্দ্রীয়
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে। আরব, রোম, শাম এবং ইসলামী খিলাফতের
নানা অঞ্চলের ছাত্ররা মদীনায় এসে তাঁর শিক্ষালয়ে কিরায়াত শিখতো। বহু বড় বড়
সাহাবী দূর-দূরান্ত থেকে উৎসাহী লোকদের সাথে করে মদীনায় নিয়ে আসতেন এবং
উবাইয়ের মাদরাসায় ভর্তি করে দিতেন। হযরত ’উমার তাঁর খিলাফতকালে হযরত আবূ
দারদা আল-আনসারীকে রা. লোকদের কুরআন শিক্ষাদানের জন্য শামে পাঠান। তিনি
ছিলেন সেই পাঁচ রত্নের অন্যতম যাঁরা রাসূলুল্লাহর সা. জীবদ্দশায় গোটা কুরআন
হিফ্জ করেন। তা সত্ত্বেও তিনি উবাইয়ের কিরায়াতের ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে
পারেননি। একবার হযরত ’উমারের খিলাফতকালে শামবাসীদের একটি দল সংগে নিয়ে
তিনি মদীনায় উবাইয়ের নিকট আসেন। তাঁর নিকট তাঁদের সাথে তিনি নিজেও কুরআন
পড়েন।
ছাত্রদের শিক্ষাদানের ব্যাপারে হযরত উবাইয়ের যদিও বিশেষ আগ্রহ
ছিল, তবে মেজায ছিল এক্টু উগ্র। এই কারণে তাঁর ধৈর্য খুব শিগগিরই ক্রোধে
পরিণত হন। তিনি ক্ষেপে যান এই ভয়ে ছাত্ররা প্রশ্ন করতে ভয় পেত। হযরত
’আবদুল্লাহ ইবন মাস’উদের ছাত্র যার ইবন জা’য়শ, যিনি হযরত উবাইয়ের ছাত্র
হওয়ার গৌরবও অর্জন করেন- একদিন তাঁকে একটি প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করেন, কিন্তু
সাহস পাননি। একদিন এভাবে ভূমিকা দিয়ে একটি প্রশ্ন করেনঃ ‘আমার প্রতি একটু
অনুগ্রহের দৃষ্টি দিন। আমি আপনার নিকট থেকে ইলম হাসিল করতে চাই।’ উবাই
বললেনঃ হুঁ, সম্ভবতঃ তোমার ইচ্ছা, কুরআনের কোন আয়াত যেন জিজ্ঞাসা থেকে বাকী
না থাকে।
এই কারণে তাঁর মজলিস অর্থহীন প্রশ্ন থেকে মুক্ত থাকতো। তিনি
সম্ভাব্য কোন সমস্যার উত্তর দিতেন না; বরং অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতেন। একদিন
তাঁর ছাত্র পখ্যাত তাবে’ঈ মাসরূক এমন একটি পশ্ন করলে বললেনঃ এমনও কি আছে?
মাসরূক বললেনঃ না। তিনি বললেনঃ তাহলে অপেক্ষা কর। যখন তেমন অবস্থা হয় তখন
তোমার জন্য ইজতিহাদের কষ্ট স্বীকার করা যাবে। তবে যুক্তি সঙ্গত প্রশ্ন করা
হলে তিনি খুশী হতেন।
জুনদুব ইবন ’আবদুল্লাহ আল-বাজালী বলেনঃ আমি ইলম
হাসিলের উদ্দেশ্যে মদীনায় গেলাম, রাসূলুল্লাহর সা. মসজিদে উপস্থিত হয়ে
দেখলাম লোকেরা বিভিন্ন স্থানে হালকা করে বসে আলোচনা করছে। আমি একটি হালকার
কাছে গিয়ে লক্ষ্য করলাম তার মধ্যস্থলে একজন বিমর্ষ লোক, পরনে তার দুই
প্রস্থ কাপড়। তিনি যেন এই মাত্র সফর থেকে এসেছেন। আমি তাঁকে বলতে শুনলামঃ
‘ক্ষমতাসীন শাসকরা ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদের প্রতি আমার কোন সমবেদনা নেই।’ আমি
বসলাম। তিনি কিছু কথা বলার পর চলে গেলেন। আমি মানুষের নিকট জিজ্ঞেস করলামঃ
ইনি কে? তারা বললোঃ ইনি সায়্যিদুল মুসলিমীন উবাই ইবন কা’ব। আমি পিছনে
পিছনে তাঁর বাড়ীতে গেলাম। বাড়ীটি অতি সাধারণ ভাঙ্গাচোরা। তিনি যেন দুনিয়ার
ভোগ-বিলাসিতার প্রতি উদাসীন এক সাধক। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের
জবাব দিয়ে প্রশ্ন করলেনঃ কোথা থেকে আসা হয়েছে? বললামঃ ইরাক থেকে তিনি
বললেনঃ লোকেরা আমাকে খুব বেশী প্রশ্ন করে। একথা শুনে আমি একটু ক্ষুণ্ন
হলাম। আর কথা না বাড়িয়ে সোজা আমার বাহনের দিকে যেতে যেতে হাত উঁচিয়ে বলতে
লাগলামঃ হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে অভিযোগ পেশ করছি। আমরা অর্থ-কড়ি খরচ করে,
দৈহিক ক্লেশ-ভোগ করে, বাহন ছুটিয়ে ইলম হাসিলের উদ্দেশ্যে আলিমদের নিকট
যাই, আর তাঁর কিনা আমাদের সাথে রূঢ় ব্যবহার করেন। আমার একথা শুনে উবাই
কেঁদে ফেলেন এবং আমাকে খুশী করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেনঃ ‘যদি তুমি আমাকে
জুম’আর দিন পর্যন্ত সময় দাও তাহলে রাসূলুল্লাহ সা. থেকে আমি যা শুনেছি তার
কিছু তোমাদের শোনাবো। এ ব্যাপারে কারো কোন সমালোচনার পরোয়া করবো না।’ আমি
ফিরে এসে জুম’আ বারের অপেক্ষা করতে লাগলাম। বৃহস্পতিবার কোন প্রয়োজনে আমি
বের হয়ে দেখি মদীনার সব অলি-গলি লোকে লোকারণ্য। আমি মানুষকে জিজ্ঞেস করলামঃ
কী ব্যাপার? লোকেরা অবাক হয়ে বললোঃ মনে হচ্ছে আপনি বিদেশী। বললামঃ হাঁ।
তখন তারা বললো। সায়্যিদুল মুসলিমীন উবাই ইবন কা’বের ইনতিকাল হয়েছে।
(হায়াতুস সাহাবা- ৩/২০৬)
হযরত উবাইয়ের জীবনধারা ছিল অতি সাধারণ, তবে
গাম্ভীর্যপূর্ণ। বাড়ীর ভিতরে এবং বাইরে উভয় স্থানে গদীর ওপর বসতেন, আর
ছাত্ররা বসতেন সাধারণ সারিতে। মজলিসে আসা এবং মজলিস থেকে যাওয়ার সময় তাঁর
সম্মানে ছাত্ররা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যেত। সে যুগে এই নিয়ম ছিল সম্পূর্ণ নতুন।
একবার সুলায়ম ইবন হানজালা কোন একটি মাসয়ালা জানার জন্য উবাইয়ের নিকট
আসলেন। যখন উবাই উঠলেন তখন ছাত্ররা তাঁর পিছনে চলতে শুরু করলো। হযরত ’উমার এ
অবস্থা দেখে খুব অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বললেনঃ এটা আপনার জন্য ফিত্না এবং
তাদের জন্য অপমান। (কানযুল ’উম্মাল- ৮/৬১; হায়াতুস সাহাবা- ১/৬৯৮)
প্রথম
জীবনে তিনি ছাত্রদের নিকট থেকে হাদীয়া তোহফা গ্রহণ করতেন। হযরত রাসূলে
কারীমের সা. জীবনকালে একবার তুফাইল ইবন ’আমর আদ-দাওসীকে কুরআন শিখিয়েছিলেন।
তিনি একটি ধনুক হাদীয়া দেন। উবাই ধনুকটি কাঁধে ঝুলিয়ে রাসূলুল্লাহর সা
খিদমতে হাজির হন। রাসূল সা. জিজ্ঞেস করেনঃ এটা কোথায় পেয়েছ? বললেনঃ একজন
ছাত্রের হাদীয়া। রাসূল সা. বললেনঃ তাকে ফিরিয়ে দাও। ভবিষ্যতে এমন হাদীয়া
থেকে দূরে থাকবে।
আর একবার একজন ছাত্র কাপড় হাদীয়া দেয়। সেবারও একই
অবস্থা দেখা দেয়। এই কারণে পরবর্তীকালে কোন রকম হাদীয়া তোহফা গ্রহণ করতেন
না। শামের লোকেরা যখন তাঁর নিকট কুরআন শিখতে আসে, তখন তারা মদীনার কাতিবদের
(লেখক) দ্বারা কুরআন লিখিয়েও নিত। বিনিময়ে তারা লেখকদের আহার করিয়ে
পরিতুষ্ট করতো। কিন্তু হযরত উবাই কোন দিন তাদের কোন খাবারে হাত দেননি। হযরত
’উমার রা. একদিন তাঁকে প্রশ্ন করেন, শামীদের খাবার কেমন? তিনি বলেনঃ আমি
তাদের খাবার খাইনা। (হায়াতুস সাহাবা- ৩/২৪১)
কিরায়াত শিক্ষাদানের সময়
হরফের যথাযথ উচ্চারণের প্রতি জোর দিতেন। এতে মদীনা ও তার আশে-পাশের লোকদের
তেমন অসুবিধা হতো না। তবে মরু-বেদুঈন ও অন্য দেশের অধিবাসী, যারা আরবী
বর্ণ-ধ্বনির বিশুদ্ধ উচ্চারণ জানতো না তাদের নিয়ে কঠিন সমস্যায় পড়তেন।
অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে এই সমস্যার সমাধান করতেন। হযরত রাসূলে কারীমের সা.
জীবদ্দশায় এক ইরানীকে তিনি কুরআন শিখাতেন। যখন আদ-দুখানের ৪৩ নং আয়াত
‘ইন্না শাজারাতুজ যাকুম, তা’য়ামুল আছীম’ পর্যন্ত পৌঁছেন তখন লোকটির ‘আছীম’
শব্দের উচ্চারণে বিভ্রাট দেখা দেয়। হযরত উবাই উচ্চারণ করে ‘আছীম’ আর লোকটি
উচ্চারণ করে ‘ইয়াতীম’। একদিন উবাই তাকে শব্দটির উচ্চারণ মশ্ক করাচ্ছেন, এমন
সময় রাসূল সা. সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি উবাইয়ের অস্থিরতা ও
দুঃশ্চিন্তা দেখে তাঁর সাহায্যে এগিয়ে এলেন। তিনি ইরানী লোকটিকে প্রথমে
বলেনঃ বল, ‘তা’য়ামুজ জালিম’। লোকটি পরিষ্কারভাবে তা উচ্চারণ করলো। তখন তিনি
উবাইকে বললেনঃ প্রথমে তার জিহ্বা ঠিক কর এবং তাকে বর্ণ-ধ্বনির উচ্চারণ
শিখাও। আল্লাহ তোমাকে প্রতিদান দিবেন।
হযরত উবাই রা. রাসূলুল্লাহর সা.
নিকট যতটুকু কুরআন পড়তেন, ঘরে ফিরে তা লিখে রাখতেন। কিরায়াত শাস্ত্রের
ইতিহাসে এই কুরআনই ‘মাসহাফে উবাই’ নামে প্রসিদ্ধ। এই মাসহাফ হযরত ’উসমানের
রা. খিলাফতকাল পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। এই মাসহাফের খ্যাতি ছিল বহুদূর
পর্যন্ত বিস্তৃত। হযরত উবাইয়ের ইনতিকালের পর তাঁর পুত্র মুহাম্মাদ মদীনায়
বসবাস করতেন। একবার ইরাক থেকে কিছু লোক তাঁর নিকট এসে বললো, আমরা আপনার
পিতার মাসহাফ শরীফ দেখার জন্য এসেছি। তিনি বললেনঃ তা তো আমাদের নিকট নেই,
খলীফা উসমান তা নিয়ে নিয়েছিলেন।
হযরত উবাই ছিলেন কুরআনের মুফাস্সির
(ভাষ্যকার) সাহাবীদের অন্যতম। এই শাস্ত্রের বড় একটি অংশ তাঁর থেকে বর্ণিত
হয়েছে। ইমাম আবূ জা’ফর আর রামী তার বর্ণনাকারী। মাত্র তিনটি মাধ্যমে এই সনদ
হযরত উবাই পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই শাস্ত্রে হযরত উবাইয়ের বহু ছাত্র ছিল।
তাফসীরের বিভিন্ন গ্রন্থে তাঁদের বর্ণনা ছড়িয়ে রয়েছে। তবে তার সিংহভাগ আবুল
আলীয়্যার মাধ্যমে আমাদের নিকট পৌঁছেছে। এই আবুল আলীয়্যার ছাত্র রাবী ইবন
আনাস। ইমাম তিরমিযীর সনদের ধারাবাহিকতা এই রাবী পর্যন্ত পৌঁছেছে। উবাইয়ের
তাফসীরের বর্ণনাসমূহ ইবন জারীর ও ইবন আবী হাতেম প্রচুর পরিমাণে নকল করেছেন।
হাকেম তাঁর মুসতাদরাকে এবং ইমাম আহমাদ তাঁর মুসনাদে কিছু বর্ণনা সংকলন
করেছেন।
তাফসীর শাস্ত্রে হযরত উবাই থেকে দুই রকম রিওয়ায়াত (বর্ণনা) আছে।
১. তিনি রাসূলুল্লাহকে সা. যে সকল প্রশ্ন করেন এবং রাসূল সা. তার যে সকল
জবাব দেন, তাই। ২. এমন সব তাফসীর যা খোদ উবাইয়ের প্রতি আরোপ করা হয়েছে।
প্রথম প্রকারের তাফসীর, যেহেতু তা রাসূল সা. থেকে বর্ণিত হয়েছে এ কারণে তা
ঈমান ও ইয়াকীনের স্তরে উন্নীত হয়েছে। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় প্রকারের তাফসীর
হচ্ছে হযরত উবাইয়ের মতামত ও সিদ্ধান্তের সমষ্টি। তার কোনটিকে তাফসীরুল
কুরআন বিল কুরআন (কুরআনের দ্বারা কুরআনের তাফসীর)- এর পদ্ধতি অনুসরণ করা
হয়েছে, কোনটিকে সমকালীন চিন্তা-বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটেছে, আবার কোনটিতে
ইহুদী বর্ণনার প্রভাব পড়েছ্ আবার কোন কোন ক্ষেত্রে এ সবের উর্ধে উঠে একজন
মুজতাহিদের মত নিজস্ব মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। মূলতঃ এটাই তাঁর তাফসীর
শাস্ত্রের শ্রেষ্ঠ অবদান। শানে নুযূল বিষয়ে তাঁর থেকে অনেক বর্ণনা পাওয়া
যায়। তাফসীরের বিভিন্ন গ্রন্থে তা ছড়িয়ে রয়েছে।
সাহাবা-ই-কিরামের মধ্যে
যাঁদেরকে হাদীসের বিশেষজ্ঞ বলা হয় উবাই ইবন কা’ব তাঁদের অন্যতম। আল্লামা
জাহাবী বলেছেনঃ উবাই ছিলেন সেই সকল ব্যক্তির একজন যাঁরা রাসূলুল্লাহর সা.
নিকট থেকে হাদীসের বিরাট এক অংশ শুনেছিলেন। (তাজকিরাতুল হুফ্ফাজ- ১/১৬) এই
কারণে আলিম সাহাবীদের মধ্যে যাঁদের নিজস্ব হালকা-ইদারস ছিল তাঁরাও উবাইয়ের
হালকা-ই-দারসে শরীক হওয়াকে গৌরবের বিষয় বলে মনে করতেন। আর এই কারণে তাঁর
হালকা-ই-দারসে তাবে’ঈদের চেয়ে সাহাবীদের সমাবেশ ঘটতো বেশী। হযরত ’উমার
ইবনুল খাত্তাব, আবূ আইউব আল-আনসারী, উবাদাহ ইবন সামিত, আবূ হুরাইরা, আবূ
মূসা আল-আশ’য়ারী, আনাস ইবন মালিক, ’আবদুল্লাহ ইবন ’আব্বাস, সাহল ইবন সা’দ,
সুলায়মান ইবন সুরাদ রা. প্রমুখের মত উঁচু স্তরের সাহাবীরা উবাইয়ের দারসে
বসাকে গৌরবের বিষয় মনে করতেন। (তাজকিরাতুল হুফফাজ- ১/১৭) তাঁর দারসের
নির্দিষ্ট সময় ছিল। তবে তাঁর জ্ঞান ভান্ডার সবার জন্য সর্বক্ষণ উন্মুক্ত
ছিল। যখন তিনি নামাযের জন্য মসজিদে নববীতে আসতেন তখন কেউ কিছু জানতে চাইলে
মাহরূম করতেন না।
কায়স ইবন ’আববাদ সাহাবীদের দীদার লাভে ধন্য হওয়ার
জন্য একবার মদীনায় আসেন। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন এভাবেঃ ‘আমি
মদীনায় উবাই ইবন কা’ব অপেক্ষা অধিকতর বড় কোন ’আলিম পাইনি। নামাযের সময় হলে
মানুষ সমবেত হলো। জনগণের মধ্যে হযরত ’উমারও ছিলেন। হযরত উবাই কোন একটি
বিষয়ে মানুষকে শিক্ষাদানের প্রয়োজন অনুভব করলেন। নামায শেষে তিনি দাঁড়ালেন
এবং সমবেত জনমন্ডলীর নিকট রাসূলুল্লাহর সা. হাদীস পৌঁছলেন। জনতা অত্যন্ত
আগ্রহ ও আবেগের সাথে নীরবে তাঁর কথা শুনছিল।’ হযরত উবাইয়ের এমন সম্মান ও
মর্যাদা দেখে কায়স আজীবন মুগ্ধ ছিলেন।
হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে হযরত উবাই
ছিলেন খুবই বিচক্ষণ ও সতর্ক। এ কারণে জীবনে বিরাট এক অংশ রাসূলুল্লাহর সা.
সাহচর্যে কাটালেও খুব বেশী হাদীস তিনি বর্ণনা করেননি। ইমাম বুখারী ও
মুসলিম তাঁর বর্ণিত ১৬৪ টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। (আল-আ’লাম- ১/৭৮)
সাহাবা-ই-কিরামের
মধ্যে যাঁদের ইজতিহাদ ও ইসতিম্বাতের যোগ্যতা ছিল, উবাই তাঁদের অন্যতম।
হযরত রাসূলে কারীমের সা. জীবনকালেই তিনি ফাতওয়ার দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। হযরত
আবূ বকরের রা. খিলাফত কালেও সিদ্ধান্তদানকারী ফকীহদের মধ্যে গণ্য ছিলেন।
বিন সা’দ বর্ণনা করেনঃ আবূ বকর রা. কোন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে মুহাজির ও
আনসারদের মধ্যে যাঁরা চিন্তাশীল ও সিদ্ধান্তদানকারী ব্যক্তিত্ব ছিলেন
তাঁদের সাথে পরামর্শ করতেন। এই সকল ব্যক্তির একজন ছিলেন উবাই ইবন কা’ব।
(হায়াতুস সাহাবা- ১/৪৫) হযরত ’উমার ও হযরত ’উসমানের খিলাফতকালেও তিনি এ পদে
অধিষ্ঠিত ছিলেন। ইবন সা’দ, সাহল ইবন আবী খায়সামা থেকে বর্ণনা করেছেন।
রাসূলুল্লাহর সা. যুগে তিনজন মুহাজির ও তিনজন আনসার ফাতওয়া দিতেন। তাঁরা
হলেনঃ ’উমার, ’উসমান, আলী, উবাই, মু’য়াজ ও যায়িদ ইবন সাবিত। (হায়াতুস
সাহাবা- ৩/২৫৪)
মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা বিষয়ে তাঁর নিকট
ফাতওয়া চাওয়া হতো। এই ফাতওয়া তলবকারীদের মধ্যে সম্মানিত সাহাবা-ই-কিরামও
থাকতেন। সুমরাহ্ ইব জুনদুব ছিলেন একজন উঁচু স্তরের সাহাবী। তিনি নামাযে
তাকবীর ও সূরা পাঠের পর একটু দেরী করতেন। লোকেরা আপত্তি জানালো। তিনি হযরত
উবাইকে লিখলেন, এ ব্যাপারে প্রকৃত তথ্য আমাকে অবহিত করুন, আমি ভুলে গেছি।
হযরত উবাই সংক্ষিপ্ত জবাব লিখে পাঠান। তাতে তিনি বলেনঃ আপনার পদ্ধতি শরীয়াত
অনুসারী। আপত্তি উত্থাপনকারীরা ভুল করছে। (কানযুল ’উম্মাল- ৪/২৫১)
তাঁর
ইজতিহাদের পদ্ধতি ছিল, প্রথমে কুরআনের আয়াত নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা
করা, তারপর সেই বিষয়ে হাদীসের সন্ধান করা। আর যখন কোন বিষয়ে কুরআন হাদীস
সম্পটর্কে কিছু না পেতেন তখন কিয়াস বা অনুমানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করতেন।
হযরত ’উমারের নিকট এক মহিলা এসে দাবী করলো যে, সে যখন গর্ভবতী
তখন তার স্বামী মারা গেছে। এখন সে সন্তান প্রসব করেছে; কিন্তু ‘ইদ্দতের সময়
সীমা পূর্ণ হয়নি, এ বিষয়ে সে খলীফার মতামত চাইলো। খলীফা ’উমার বললেনঃ
’ইদ্দতের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। মহিলা উঠে উবাই ইবন
কা’বের নিকট গেল এবং ’উমারের নিকট তার যাওয়া, ফাতওয়া জিজ্ঞেস করা ইত্যাদি
তাঁকে অবহিত করলো। উবাই বললেনঃ তুমি ’উমারের কাছে আবার যাও এবং তাঁকে বল,
উবাই বলেছেনঃ মহিলার ’ইদ্দত পূর্ণ হয়ে হালাল হয়ে গেছে। যদি তিনি আমার কথা
জিজ্ঞেস করেন তাহলে বলবে, আমি এখানে বসে আছি, তুমি এসে আমাকে নিয়ে যাবে।
মহিলা ’উমারের নিকট ফিরে গেল। ’উমার রা. উবাইকে ডেকে পাঠালেন। তিনি হাজির
হলে ’উমার জিজ্ঞেস করলেনঃ আপনি একথা কিভাবে বললেন এবং কোথায় পেলেন?
তিনিবললেনঃ কুরআনে পেয়েছি। এই বলে তিনি সূরা আত-তালাকের ৪ নং আয়াত- ‘ওয়া
উলাতিল আহমালি আজালুহুন্না আন ইয়াদা’না হামলাহুন্না-’ পাঠ করেন। তারপর
বলেন, যে গর্ভবতী মহিলা বিধবা হবে সেও এই বিধানের অন্তর্গত। তাছাড়া রাসূল
সা. থেকে এ সম্পর্কে একটি হাদীসও শুনেছি। হযরত ’উমার মহিলাকে বললেনঃ
উবাইয়ের কথা শোন। (কানযুল ’উম্মাল- ৫/১৬৬)
রাসূলুল্লাহর সা. চাচা হযরত
’আব্বাসের রা. বাড়ীটি ছিল মসজিদে নববীর সংলগ্ন। হযরত ’উমার রা. যখন মসজিদ
সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তখন তিনি ’আব্বাসকে রা. বলেন, মসজিদ
বানাতে হবে, বাড়ীটি বিক্রী করে দিন। ’আব্বাস বললেন, না, আমি বিক্রী করবো
না। ’উমার বললেন, তাহলে বাড়ীটি মসজিদের অনুকূলে হিবা (দান) করে দিন। এ
প্রস্তাবেও তিনি রাজী হলেন না। ’উমার তখনবরলেনঃ তাহলে আপনি নিজে মসজিদটি
সম্প্রসারণ করে দিন এবং আপনার বাড়ীটিও তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন। ’আব্বাস
রাজী হলেন না। ’উমার রা. বললেনঃ এই তিনটি প্রস্তাবের যে কোন একটি আপনাকে
মানতে হবে। অবশেষে দু’জনই উবাই ইবন কা’বকে শালিস মানলেন। তিনি ’উমারকে রা.
প্রশ্ন করলেনঃ ইচ্ছার বিরুদ্ধে কারও জিনিস কেড়ে নেওয়ার অধিকার আপনি কোথায়
পেলেন? ’উমার জানতে চাইলেন, এ বিধান কুরআন না হাদীসে পেয়েছেন? বললেনঃ
হাদীসে। তারপর বলেনঃ হযতে সুলাইমান বাইতুল মাকদাসের প্রাচীর নির্মাণ করেন।
প্রাচীরের একাংশ অন্যের জমিতে নির্মিত হয় এবং তা ধ্বসে পড়ে। অতঃপর হযরত
সুলাইমানের নিকট ওহী আসে যে, জমির মালিকের অনুমতি নিয়ে তা পুনঃনির্মাণ
করবে। একথা শুনে হযরত ’উমার চুপ হয়ে যান। এই ঘটনার পর হযরত ’আব্বাস
স্বেচ্ছঅয় মসজিদের জন্য বাড়ীটি দান করেন। (হায়াতুস সাহাব- ১/৯৪, ৯৫)
সুওয়ায়দ
ইবন গাফলা, যায়িদ ইবন সুজান ও সুলাইমান ইবন রাবী’য়ার সাথে কোন এক অভিযানে
যান। পথে ‘উজায়ব’ নামক স্থানে একটি চাবুক পড়ে থাকতে দেখে উঠিয়ে নেন। তাঁর
অপর সঙ্গীদ্বয় বললেন, আপনি ওটা ফেলে দিন। তিনি ফেললেন না। এই ঘটনার কিছু
দিন পর সুওয়ায়দ হজ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। পথে মদীনায় যাত্রা বিরতি করে
হযরত উবাইয়ের নিকট যান এবং চাবুকের ঘটনা বর্ণনা করেন। উবাই বললেন; আমার
জীবনে একবার এমন ঘটনা ঘটেছিল। রাসূলুল্লাহর সা. জীবদ্দশায় একবার আমি একশো
দীনার পথে পাই। তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন, এক বছর পর্যন্ত মানুষকে জানাতে
থাকবে। একবছর পূর্ণ হলে বললেন, দীনারের পরিমাণ, থলির অবস্থা সব ভালোভাবে
মনে রেখে আরও এক বছর অপেক্ষা করবে। এর মধ্যে প্রমাণসহ কেউ উপস্থিত হলে তাকে
দেবে। অন্যথায় তুমি মালিক হবে।
হযরত ’উমার রা. একবার ইচ্ছা ব্যক্ত
করলেন যে, তিনি মানুষকে ‘তামাত্তু’ হজ্জ আদায় করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন।
উবাই তাঁকে বললেন, এমন নিষেধাজ্ঞা জারির কোন ইখতিয়ার আপনার নেই।
হযরত
উবাই ‘কিরায়াত খালফাল ইমাম’ (ইমামের পিছনে কিরায়াত পাঠ)- এর প্রবক্তা
ছিলেন। তবে তার রূপ ছিল এমনঃ যুহর ও ’আসরের ফরয নামাযে ইমামের পিছনে
কিরায়াত পাঠ করতেন। একবার ’আবদুল্লাহ ইবন হুজায়ল তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি
কি ইমামের পিছনে কিয়ারাত পড়েন? বললেনঃ হাঁ। (কানযুল ’উম্মাল- ৪/২৫৪) তিনি
সূরা আল-আ’রাফের ২০৪ নং আয়াত ‘ওয়া ইজা কুরিয়াল কুরআন ফাসতামি’উ লাহু ওয়া
আনসিতু-’ যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে শোন এবং চুপ থাক-
এর বাহ্যিক অর্থের ওপর ’আমল করতেন। যুহর ও আসরে ইমাম যখন চুপে চুপে কিরায়াত
পড়েন তখন তো শোনার প্রশ্ন আসেনা। সুতরাং তাঁ রমতে যে নামাযে ইমাম জোরে
কিরায়াত পাঠ করবেন সেখানে মুক্তাদী চুপ করে শুনবেন। আর যেখানে ইমাম চুপে
চুপে পাঠ করবেন সেখানে মুক্তাদীও কিরায়াত পাঠ করবেন।
একবার এক ব্যক্তি
মসজিদে একটি হারানো জিনিসের ব্যাপারে হৈ চৈ করছিল। হযরত উবাই রেগে গেলেন।
লোকটি বললো, আমি তো অশ্লীল কিছু বলছিনে। উবাই বললেন, অশ্লীল না হলেও এটা
মসজিদের আদবের খেলাফ। (কানযুল ’উম্মাল- ৪/২৫০)
আর একবার রাসূল সা.
জুম’আর খুতবা দিলেন এবং সূরা বারায়াত থেকে পাঠ করলেন। এই সূরাটি হযরত আবূ
দারদা ও আবূ জারের রা. জানা ছিল না। তাঁরা খুতবার মধ্যেই ইশারায় উবাইকে
জিজ্ঞেস করলেন, এই সূরাটি কবে নাযিল হয়েছে, আমাদের তো জানা নেই? উবাইও
ইশারায় তাদেরকে চুপ থাকতে বললেন। নামায শেষে তিনজনই নিজ নিজ বাড়ীতে ফেরার
জন্য রওয়ানা হচ্ছেন, তখন অন্য দু’জন উবাইকে বললেন, আপনি আমাদের প্রশ্নের
উত্তর দিলেন না কেন? উবাই বললেনঃ আজ আপনাদের নামায নষ্ট হয়ে গেছে, আর তাও
একটি অহেতুক কারণে। এমন কথা শুনে তাঁরা হযরত রাসূল কারীমের সা. নিকট হাজির
হলেন এবং বললেনঃ উবাই আমাদেরকে এমন কথা বলেছেন। তিনি বললেনঃ সে ঠিক কথাই
বলেছে। (কানযুল ’উম্মাল- ৪/২৫৫)
ব্যভিচারের শাস্তি সম্পর্কে হযরত উবাই
বলতেন, তিন রকম লোকের জন্য তিন রকম হুকুম আছে। কিছু লোক দুররা ও রজম উভয়
প্রকার শাস্তির যোগ্য। কিছু লোক শুধু রজম এবং কিছু শুধু দুররার শাস্তি
লাভের উপযুক্ত। যে বৃদ্ধ স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও ব্যভিচার করে তাকে উভয়
শাস্তি দিতে হবে। আর যে যুবক স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও ব্যভিচার করে তাকে শুধু
রজম করতে হবে। যে যুবকের স্ত্রী নেই সে ব্যভিচার করলে তাকে শুধু দুররা
লাগাতে হবে।
নাবীজ (খেজুরের শরবত) হালাল হওয়া সম্পর্কে সকল ’আলিম প্রায়
একমত। তবে উবাই থেকে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, নাবীজের মধ্যে
এমন কী দেখেছ? পানি, ছাতুর শরবত, দুধ ইত্যাদি পান কর। প্রশ্নকারী বললো, মনে
হচ্ছে আপনি নাবীজ পানের সমর্থক নন। তিনি বললেন, মদ পান আমি কিভাবে সমর্থন
করতে পারি?
এভাবে বিভিন্ন মাসয়ালা সম্পর্কে হযরত উবাইয়ের মতামত
গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে ফকীহ সাহাবীদের মধ্যে তাঁর যে উঁচু মর্যাদ ছিল সে
সম্পর্কে স্পষ্টধারণা লাভ করা যায়।
হযরত উবাই লিখতে-পড়তে জানতেন। এ
করণে ওহীর বেশীর ভাগ আয়াত তিনিই লিখতেন। হযরত রাসূলে কারীমের সা. মদীনা
আগমণের পর ওহী লেখার প্রথম গৌরব তিনিই লাভ করেন। (আনসাবুল আশরাফ- ১/৫৩১) সে
যুগে কোন লেখা বা কুরআনের শেষে লেখকের নাম লেখার রেওয়াজ ছিল না। হযরত উবাই
সর্বপ্রথম নাম লেখার প্রচলন করেন। পরে অন্যরা তাঁর অনুসরণ করে।
সকল
প্রকার বিদ’য়াত থেকে দূরে থাকা, সত্য প্রকাশের সৎ সাহস- এ জাতীয় গুণাবলী
হযরত উবাইয়ের মধ্যে বিশেষভাবে বিদ্যমান ছিল। আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি প্রবল
উৎসাহ- আবেগ তাঁর মধ্যে রূহানিয়্যাতের চরম বিকাশ সাধন করেছিল। গভীর রাতে
মানুষ যখন আরাম-আয়েশে বিছানায় গা এলিয়ে দিত, তিনি তখন ঘরের এক কোণে
বিনীতভাবে আল্লাহর ইবাদাতে মাশগুল থাকতেন, মুখে আল্লাহর কালাম জারী থাকতো
এবং চোখ থেকে অশ্রুর ধারা প্রবাহিত হতো। তিন রাতে কুরআন খতম করতেন। রাতের
এক অংশ দরূদ ও সালাম পেশের মাধ্যমে অতিবাহিত হতো।
হযরত রাসূলে কারীমের
সা. প্রতি তাঁর ভালোবাসা এত প্রবল ছিল যে ’উস্তুনে হান্নানা’র একাংশ
তাবারুক হিসেবে বাড়ীতে রেখে দেন এবং উইপোকায় খেয়ে শেষ না করা পর্যন্ত তাঁর
বাড়ীতেই ছিল।
সব ধরণের বিদ’য়াত থেকে এত দূরে থাকতেন যে, রাসূলুল্লাহর
সা. পবিত্র সময়ে যে কথা বা কাজ হয়নি তা বলা বা করাকে তিনি খুব খারাপ মনে
করতেন। হযরত ’উমার রা তাঁর খিলাফতকালে একদিন মসজিদে নববীতে এসে দেখলেন
লোকেরা পৃথকভাবে যার যার মত তারাবীহর নামায পড়ছে। ’উমার জামায়াতবদ্ধ করতে
চাইলেন। তিনি উবাইকে বললেনঃ আমি আপনাকে ইমাম নিযুক্ত করতে চাই, আপনি
তারাবীহ্র নামায পড়াবেন। উবাই বললেনঃ যে কাজ আগে করিনি এখন তা কিভাবে করি?
’উমার রা. বললেন, আমি তা জানি। তবে এ কোন খারাপ কাজ নয়। (কানযুল ’উম্মাল-
৪/২৪৮; হায়াতুস সাহাবা- ৩/১৪৯)
একবার এক ব্যক্তি হযরত রাসূলে কারীমকে
সা. প্রশ্ন করলোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই আমরা মাঝে মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ি বা
নানাবিধ কষ্ট ভোগ করি, কি কোন সাওয়াব আছে? রাসূল সা. বললেনঃ এতে গুণাহ্র
কাফ্ফারা হয়ে যায়। সেখানে হযরত উবাই উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানতে চাইলেন, ছোট
ছোট বিপদ-মুসীবতও কি গুণাহ্র কাফ্ফারা হয়? বললেনঃ একটি কাঁটা ফুটলেও তা
কাফ্ফারা হয়। তখন ঈমানী আবেগে তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে যায়; হায়! সব সময় যদি
আমার দেহে জ্বর লেগে থাকতো, আর তা সত্ত্বেও আমি হজ্জ ’উমরা আদায়ে সক্ষম
হতাম এবং জিহাদে গমন ও জামায়অতে নামায আদায়ের যোগ্য থাকতাম। আল্লাহ পাক
তাঁর এই দু’আ কবুল করেন। তারপর থেকে যত দিন জীবিত ছিলেন, শরীরে সব সময় জ্বর
থাকতো। (কানযুল ’উম্মাল- ২/১৫৩; আল-ইসাবা- ১/২০; হায়াতুস সাহাবা- ১/৫০২-৩)
আল্লাহর
ভয়ে, শেষ বিচার দিনের ভয়ে, সব সময় তিনি কাঁদতেন। কুরআন পাঠের সময় ভীষণ ভীত
হয়ে পড়তেন। বিশেষতঃ সূরা আল-আনয়ামের ৬৫ নং আয়াত ও পরবর্তী আযাবের আয়াতগুলি
যখন পাঠ করতেন তখন তাঁর শঙ্কা ও ভয়ের সীমা থাকতো না। (রিজালুন হাওলার
রাসূল- ৪৯৮)
ইসলামী খিলাফতের সীমা যখন বিস্তার লাভ করে এবং সাধারণ
মুসলমানরা বিভিন্ন অঞ্চলের ওয়ালী বা শাসকদের অহেতুক তোয়াজ খাতির করে চলতে
থাক তখন তিনি বলতেনঃ কা’বার প্রভুর নামে শপথ। তারা ধ্বংস হয়েছে। তারা ধ্বংস
হয়েছে। অন্যদেরকে তারা ধ্বংস করেছে। তাদের জন্য আমার কোন দুঃখ নেই। আমার
দুঃখ তাদের জন্য, যাদের তারা সর্বনাশ করেছে। (রিজালুন হাওলার রাসুল- ৪৯৮)
হযরত
উবাই বলতেনঃ মুমিনের চারটি বৈশিষ্ঠ্যঃ ১. বিপদে ধৈর্যধারণ করে, ২. কোন
কিছু পেলে আল্লাহর শোক করে, ৩. যখন কথা বলে, সত্য বলে, ৪. যখন বিচার করে,
ন্যায়-নীতির সাথে বিচার করে। তিনি আরও বলতেন, মুমিনের জীবন পাঁচটি নূর বা
জ্যোতির মধ্যে বিবর্তিত হয়। ১. তার কথা নূর, ২. তার ইলম বা জ্ঞান নূর, ৩.
কবরে সে নূরের মধ্যে অবস্থান করবে, ৪. কবর থেকে সে নূরের মধ্যে উঠবে এবং ৫.
কিয়ামতের দিন নূরের দিকেই তার শেষ যাত্রা হবে। অপর দিকে একজন কাফিরের জীবন
পাঁচটি অন্ধকারের মধ্যে বিবর্তিত হয়। ১. তার কথা অন্ধকার, ২. তার আমল
অন্ধকার, ৩. তার কবর অন্ধকার, ৪. কবর থেকে উঠবে অন্ধকারে এবং ৫. কিয়ামতের
দিন তার শেষ যাত্রা হবে অন্ধকারের দিকে। (হায়াতুস সাহাবা- ৩/৫১৮)
জীনের
সাথে হযরত উবাইয়ের একটি ঘটনার কথা বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। খেজুর
শুকানোর জন্য হযরত উবাইয়ের একটি উঠোন ছিল। সেখানে খেজুর নেড়ে দেওয়া ছিল।
তিনি মাঝে মাঝে সেখানে আসতেন। একদিন খেজুরে ঘাটতি লক্ষ্য করে রাতে পাহারা
দিলেন। হঠাৎ অন্ধকারে একজন যুবকের মত একটি প্রাণী দেখতে পেলেন। তিনি তাকে
সালাম দিলেন। সে সালামের জবাব দিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন যে তুমি? সে বললোঃ
জীন। তিনি বললেনঃ তোমার একটি হাত দাও তো। সে হাত বাড়িয়ে দিল। তিনি হাত
ধরলেন এবং তাঁর মনে হলো, সেটা যেন কুকুরের হাত এবং তার লোম কুকুরের লোমের
মত। তিনি বললেনঃ জীবনের সৃষ্টি কি এমনই? আমার তো ধারণা ছিল তারা আরও
শক্তিশালী। তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি যা করেছ, তার কারণ কি? সে জবাব
দিলঃ আমরা জেনেছি, আপনি সাদাকা (দান) করতে ভালোবাসেন। তাই আমরা এই খেজুর
থেকে কিছু গ্রহণ করতে চেয়েছি। তিনি জীনকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের হাত থেকে
আমাদের নিরাপত্তা কিসে? সে বললোঃ সূরা বাকারার আয়াতুল কুরসীতে। কেউ
সন্ধ্যায় পড়ে ঘুমালে সকাল পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে; আর কেউ সকালে পড়লে সন্ধ্যা
পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে। পরদিন সকালে হযরত উবাই রাসূলুল্লাহর সা. নিকট গিয়ে
রাতের ঘটনা খুলে বললেন। রাসূল সা. সবকিছু শুনে বললেন” এই খবীসটি
(পাপাত্মাটি) সত্যি কথা বলেছে। নাসাঈ, হাকেম, তাবারানী প্রভৃতি গ্রন্থে
ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে। (হায়াতুস সাহাবা- ৩/২৯০)
হযরত আনাস রা. থেকে
বর্ণিত। একদিন উবাই ইবন কা’ব প্রতিজ্ঞা করলেনঃ আজ আমি মসজিদের এমন নামায
আদায় করবো এবং আল্লাহর এমন প্রশংসা করবো যা আর কেউ কোন দিন করেনি। তিনি
মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করে যেই না আল্লাহর প্রশংসার জন্য বসেছেন অমনি পিছন
দিকে জোরে জোরে কাউকে হামদ পাঠ করতে শুনতে পেলেন। তিনি ঘটনাটি রাসুলকে সা.
জানালেন। রাসুল সা. বললেন, এই হামদের পাঠন ছিলেন জিবরীল আ.। (দ্রঃ হায়াতুস
সাহাবা- ৩/৫৪১)
ইবন ’আব্বাসের বর্ণনা করেন। একবার ’উমার ইবন আল-খাত্তাব
আমাদেরকে কোথাও বের হতে বললেন। আমরা পথ চলছি। আমি ও উবাই এক সময় কাফিলার
একটু পিছনে পড়ে গেলাম। এমন সময় আকাশে একটু মেঘ দেখা গেল। উবাই দু’আ করলেনঃ
হে আল্লাহ! এই মেঘের কষ্ট আমাদের থেকে দূরে সরিয়ে দিন। আমরা মেঘের কষ্ট
থেকে বেঁচে গেলাম। আমরা কাফিলার সাথে মিলিত হলে ’উমার জিজ্ঞেস করলেনঃ
তোমরাও কি আমাদের মত কষ্ট পেয়েছ? আমি বললামঃ আবুল মুনজির (উবাই) মেঘের কষ্ট
থেকে আমাদেরকে রেহাই দেওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করেছিল। ’উমার বললেনঃ
আমাদের জন্যও একটু দু’আ করলে না কেন? (হায়াতুস সাহাবা- ৩/৬৫৮)