নাম উতবা, ডাক নাম আবু আবদিল্লাহ। পিতা গাযওয়ান ইবন জাবির। জাহিলী যুগে তার গোত্র বনী নাওফাল ইবন আবদে মান্নাফের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল। ইসলামের সূচনালগ্নে তাওহীদের আহবানে সাড়া দানকারীদের মধ্যে উতবা অন্য ব্যক্তি। একবার এক ভাষণে তিনি দাবী করেন, তিনি সপ্তম মুসলমান। (উসুদুল গাবা-৩)
মক্কায় কাফিরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে হাবশার দ্বিতীয় হিজরাতে শরিক হন। তখন তার বয়স ৪০ বছর। কিছুদিন হাবশায় থাকার পর আবার মক্কায় ফিরে এসে বসবাস করতে থাকেন। হযরত রাসূলে করীম সা: তখনও মক্কায়। (আল ইসতিসাব, উসুদুল গাবা-৩/৩৬৪)।
রাসুলুল্লাহ সা: যখন মদীনায় হিজরাত করেন এবং কুফর ও ইসলামের মধ্যে সামরিক সংঘাত শুরু হলো, তিনি এবং মিকদাদ একটি কুরাইশ বাহিনীর সাথে মদীনার দিকে যাত্রা করেন। ইকরামা ইবন আবী জাহল ছিল এই বাহিনীর নেতা। পথে মদীনার মুসলিম মুজাহিদদের একটি ক্ষুদ্র দলের সাথে এই বাহিনীর ছোট-খাট একটি সংঘর্ষ হয়। এই মুজাহিদ দলটির নেতা ছিলেন হযরত উবাইদা ইবনুল হারিস। উতবা এবং মিকদাদ সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। তারা সুযোগমত মুজাহিদ দলটির সাথে যোগ দেন। মদীনায় পৌঁছে উতবা হযরত আবদুল্লাহ ইবন সালামা আজলানীর অথিতি হন এবং হযরত আবু দুজানা আনসারীর সাথে তার ভাতৃসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। (তাবাকাতে ইবন সা’দ-৩/৬৯)।
হযরত উতবা ইবন গাযওয়ান ছিলেন একজন দক্ষ তীরন্দায। বদর, উহুদ, খন্দক ছাড়াও যে সকল যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সা: প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন তার সবগুলোতো তিনি অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা পালন করেন। আবদুল্রাহ ইবন জাহাশের নেতৃত্বে রাসুলুল্লাহ সা: যে অনুসন্ধানী দলটি নাখলার দিকে পাঠান, তিনি সে দলেরও সদস্য ছিলেন। (হায়াতুস সাহাবা-২/৩৫০)।
হিজরী ১৪ সনে দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমার রা: ইরাকের সামুদ্রিক বন্দর উবুল্লা, মায়সান ও তার আশ পাশের এলাকায় অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর ওপর অর্পণ করে একটি বাহিনীসহ মদীনা থেকে পাঠান। ঘটনাটি বিভিন্ন গ্রন্থে এভাবে বর্ণিত হয়েছে: “আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব রা: ইশার নামাযের পর একটু বিশ্রামের জন্য বিছানায় গেলেন, যাতে একটু পরে রাতে নগর ভ্রমণে বের হতে পারেন। কিন্তু তাঁর দুচোখে ঘুম নেই। দূত খবর নিয়ে এসেছে, পরাজিত পারস্য বাহিনী পাল্টা আক্রমণের জন্য বিক্ষিপ্ত অবস্থা থেকে সুসংগঠিত হয়েছে। খলীফাকে আরো জানানো হয়েছে, বসরার নিকটবর্তী ‘উবুল্লা’ নগরী পরাজিত পারস্য বাহিনীর অর্থ ও লোক সরবরাহের প্রধান উতস। খলীফা পারস্য বাহিনীর এই উতস বন্ধ করার জন্য ‘উবুল্লায়’ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু অপর্যাপ্ত সামরিক শক্তি তার এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাড়ালো। কারণ, মদীনায় তখন অল্প কিছু লোক ছাড়া প্রায় সকলে বিভিন্ন ফ্রন্টে অভিযানে লিপ্ত। খলীফা উমার রা: তখন তাঁর চিরাচরিত পদ্ধতি কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। আর তা হলো, সৈন্যের স্বল্পতা শক্তিশালী ও যোগ্য নেতৃত্বের দূরীকরণ। তিনি সেনা কমান্ডারদের সম্পর্কে ভাবলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি আপন মনে বলে উঠলেন: পেয়েছি। হাঁ আমি পেয়েছি। তারপর এ কথা বলতে বলতে তিনি বিছানায় গেলেন, তিনি সেই মুজাহিদ যাকে বদর, উহুদ ও খন্দকের মত যুদ্ধ সমূহ চিনেছে। ইয়ামামাও তার যোগ্যতা ও ভূমিকার সাক্ষী। কোন যুদ্ধেই তার তরবারী ভোতা হয়নি, তার একটি তীরও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি। তদুপরি তিনি দুইটি হিজরাতের অধিকারী, ধরাপৃষ্টে তিনি সপ্তম মুসলমান।
সকাল বেলা তিনি বললেন: তোমরা কেউ উতবা ইবন গাযওয়ানকে ডেকে দাও। খলীফা তাঁকে তিনশোর কিছু বেশি সদস্য বিশিষ্ট একটি বাহিনীর নেতৃত্ব দান করেন এবং পশ্চাতগামী আরো কিছু সৈন্য দিয়ে সাহায্য করার অঙ্গীকারও করেন।
মদীনা থেকে উতবা তার বাহিনীসহ রওয়ানা হওয়ার প্রাক্কালে খলীফা উমার বাহিনী প্রধান উতবাকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন:
“আল্রাহর রহমত ও বরকতের ওপর নির্ভর করে আরবের শেষ সীমা ও অনারব সাম্রাজ্যের নিকটবর্তী অংশের দিকে আপনার সঙ্গীদের নিয়ে আপনি রওয়ানা হয়ে যান। যতদূর সম্ভব তাকওয়া অবলম্বন করবেন এবং স্মরণ রাখবেন, আপনারা শত্রু ভূমিতে যাচ্ছেন। আমি আশা করি আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করবেন। আমি আলা ইবনুল হাদরামীকে লিখেছি, আরফাজা ইবন হারসামাকে পাঠিয়ে আপনাকে সাহায্য করার জন্য। শত্রুর মোকাবেলায় তিনি এক করিৎকর্মা মুজাহিদ। তিনি আপনার উপদেষ্ঠা হিসেবে থাকবেন। অনারবদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান জানাবেন। যারা সে আহবান মেনে নেবে, তাদেরকে নিরাপত্তা দেবেন। আর যারা তা অস্বীকার করবে, জিযিয়া দিয়ে শাসিত জীবন যাপনে বাধ্য করবেন। অন্যথায় তলোয়ারের সাহায্যে ফায়সালা করবেন। চলার পথে যে সকল আরব গোত্রের পাশ দিয়ে যাবেন তাদেরকে শত্রুর সাথে যুদ্ধের জন্য উৎসাহিত করবেন এবং সর্ব অবস্থায় আল্লাহকে ভয় করবেন। (উসুদুল গাবা-৩/৩৬৪)।
উতবা ইবন গাযওয়ান তার বাহিনী নিয়ে রওয়ানা দিলেন। সেই বাহিনীর সাথে তার স্ত্রী সহ অন্য সৈনিকদের আরো পনেরো জন মহিলাও চললেন। তারা ‘উবুল্লা’ শহরের অদূরে ‘কাসবা’ নামক এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ বিশিষ্ট ভূমিতে পৌঁছলেন। তাদের কাছে তখন খেয়ে বেঁচে থাকার মত কোন কিছু নেই। যখন তারা মারাত্মক ক্ষুধার সম্মুখীন হলেন, উতবা তাঁর বাহিনীর কতিপয় সদস্যকে খাওয়ার কোন কিছু তালাশ করার নির্দেশ দিলেন। তাঁদের এই খাদ্য তালাশের সাথে একটি চমকপ্রদ কাহিনী জড়িত আছে। তাদেরই একজন বর্ণনা করছেন:
“আমরা খাদ্যের সন্ধানে ঘন জঙ্গলে প্রবেশ করলাম। সেখানে দুটো বস্তা পড়ে থাকতে দেখলাম। তার একটিতে খেজুর ভর্তি এবং অন্যটিতে এক প্রকার সাদা শস্যদানা যার উপরিভাগ সোনালী আবরণে আবৃত। আমরা বস্তা দুটো টেনে আমাদের সেনা ছাউনীর কাছাকাছি নিয়ে এলাম। আমাদের একজন শস্যদানা ভরা বস্তাটির দিকে তাকিয়ে বললো, “এটা বিষ, শত্রুরা রেখে দিয়েছে। কেউ এর ধারে কাছে যাবে না।” আমরা খেজুর খেতে লাগলাম। এর মধ্যে আমাদের ঘোড়া ছুটে গিয়ে শস্যদানার বস্তায় মুখ দিয়ে খেতে শুরু করলো। আমরা তো প্রায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম, ঘোড়াটি মারা যাবার পূর্বেই জবেহ করে দেওয়ার, যাতে তার গোশত আমরা খেতে পারি।
অত:পর ঘোড়ার মালিক আমাদের বললো: একটু অপেক্ষা করা যাক, আজ রাত আমরা ঘোড়াটি পাহারা দেই। যদি দেখা যায়, সত্যি সত্যিই ঘোড়াটি মারা যাচ্ছে তাহলে জবেহ করা যাবে। কিন্তু সকালে দেখা গেল ঘোড়াটি সম্পূর্ণ সুস্থ। তখন আমার বোন আমাকে বললো: ভাই আমার আব্বাকে বলতে শুনেছি, বিষ আগুনে জ্বালিয়ে সিদ্ধ করা হলে তার ক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়। তারপর সে কিছু শস্যদানা নিয়ে হাঁড়িতে ফেলে সিদ্ধ করা শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর সে আমাদের ডেকে বলল, দেখুন, কেমন লাল হয়ে গেছে। সে দানাগুলির খোসা ছড়িয়ে সাদা দানা বের করলো। আমরা সেগুলি একটি পাত্রে রাখলাম। উতবা বললেন: তোমরা বিসমিল্লাহ বলে খেয়ে ফেল। আমরা খেয়ে দেখলাম চমৎকার স্বাদ। পরে আমরা জেনেছিলাম এই শস্যদানার নাম “ধান”।
এই ‘উবুল্লা’ ছিল দিজলার তীরে, শত্রু বাহিনীর একটি সুদৃঢ় ঘাঁটি। উতবা মাত্র ছয়’শ যোদ্ধা ও কতিপয় মহিলাকে সাথে নিয়ে এ ঘাঁটি জয় করেন। তাদের অস্ত্র শস্ত্রও ছিল অতি মামুলী ধরণের। যথা: তীর, তরবারি, বর্শা ইত্যাদি। কিন্তু তিনি মেধা, বুদ্ধিমত্ত ও সাহসিকতার সাহায্যে এ অসাধ্য সাধন করেন।
উতবা মহিলাদের জন্য অনেকগুলি পতাকা বানিয়ে বর্শার মাথায় বেঁধে দেন। তাদেরকে নির্দেশ দেন, তারা যেন মুসলিম মুজাহিদদের পেছনে সেগুলি উঁচু করে ধরে রাখে। তিনি তাদের আরো বলেন, আমরা যখন ‘উবুল্লা’ শহরের কাছাকাছি পৌঁছে যাব তখন তোমরা খুব বেশি করে ধুলো উড়াবে, যাতে চারিদিক ধূলোয় অন্ধকার হয়ে যায়।
মুসলিম বাহিনী যখন উবুল্লার নিকটবর্তী হলো, পারস্য বাহিনী শহর থেকে বেরিয়ে এসে দিগন্তব্যাপী ধূলোর মেঘ ও অসংখ্য পতাকার ওঠানামা দেখতে পেল। তারা পরষ্পর বলাবলি করল: এতো অগ্রবর্তী বাহিনী। এদের পেছনে অসংখ্য সৈন্য রয়েছে, তারাই এ ধূলো উড়াচ্ছে। তাদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার হলো, আতঙ্কে তারা অস্থির হয়ে পড়লো। তারা হাতের কাছে যা পেল তাই নিয়ে দিজলা নদীতে নোঙ্গর করা নৌকায় উঠে পালিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে গেল। উতবা তার বাহিনীর একজন সদস্যকেও না হারিয়ে উবুল্লায় প্রবেশ করেন। অত:পর দিজলা উপকূলবর্তী নগর ও গ্রামসমূহ পদানত করে ইসলামী ঝান্ডা সমুন্নত করেন।
উবুল্লায় মুসলিম বাহিনী অগণিত গণিমত লাভ করে। মুসলিম বাহিনীর এক সৈনিক মদীনায় এলে মদীনাবাসীরা তাকে প্রশ্ন করে উবুল্লায় মুসলমানরা কেমন আছে? তিনি বলেন, তোমরা কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করছো? আল্লাহর কসম, আমি যখন তাদেরকে রেখে এসেছি তখন তারা সোনা রূপা পাল্লায় করে ওজন দিচ্ছে।” এ কথা শুনে মদীনাবাসীরা উবুল্লার দিকে সওয়ারী হাঁকালো।
উবুল্লা জয়ের পর হযরত উতবা ভেবে দেখলেন, যদি তাঁর সৈন্যরা এই বিজাতীয় ভূমিতে শহরের স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে সহ অবস্থান করে তাহলে খুব তাড়াতাড়ি বিজাতীয় আচার আচরণে অভ্যস্ত হয়ে তাদের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলবে। বিষয়টি তিনি খলীফা উমার রা: কে জানান এবং বসরা নামক স্থানে একটি সামরিক শহর নির্মাণের অনুমতি প্রার্থনা করেন। এই বসরা ছিল উবুল্লা বন্দরের নিকটবর্তী একটি স্থান যেখানে পারস্য উপসাগরে চলাচলরত ভারতবর্ষ ও পারস্যের জাহাজসমূহ নোঙ্গর করতো। হযরত উতবা রা: আটশো লোক সঙ্গে করে সর্ব প্রথম উক্ত স্থানে যান এবং বসরা নগরীর ভিত্তি স্থাপন করেন। প্রত্যেক গোত্রের জন্য তিনি পৃথক মহল্লা নির্ধারণ করে দেন। জামে মসজিদ নির্মাণের দায়িত্ব অর্পণ করেন হযরত মিহজান ইবনুল আদরা এর ওপর। নগরীর বাড়ী ঘর প্রথমত: গাছ পাথর দিয়ে তৈরী হয়। এ কারণে জামে মসজিদও গাছপালা দিয়ে নির্মিত হয়। তবে তিনি নিজের জন্য কোন প্রাসাদ নির্মাণ করেননি। কাপড়ের তৈরী তাঁবুতে তিনি বসবাস করতেন। (উসুদুল গাবা-৩/৩৬৪)।
হযরত উতবা রা: এই নতুন শহরের প্রথম শাসক নিযুক্ত হন এবং ছয় মাস যাবত অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু পার্থিব সুখ-সম্পদের প্রতি তাঁর যুহদ ও নির্মোহ স্বভাব তাঁকে পদ থেকে সরে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করে। তাছাড়া তিনি বসরার মুসলমানদের বিলাসী জীবন যাবন লক্ষ্য করে আঁতকে ওঠেন। যারা কিছুদিন পূর্বেও সিদ্ধ ধানের চেয়ে উত্তম খাবার চিনতো না, এখন তারা পারস্যের অভিজাত খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তিনি দ্বীনের ব্যাপারে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। এই সময় তিনি মসজিদে সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তার কিয়দাংশ নিম্নরূপ:
“বন্ধুগণ! দুনিয়া গতিশীল ও বিলীয়মান। তার বেশী অংশ অতিক্রান্ত হয়েছে। তোমরা নিশ্চিতভাবে এই দুনিয়া থেকে এমন এক স্থানে স্থানান্তরিত হবে যার কোন ধ্বংস নেই। তাহলে সর্বোত্তম পাথেয় সংগে নিয়ে যাচ্ছ না কেন? আমাকে বলা হয়েছে, যদি কোন প্রস্তর খন্ড জাহান্নামের কিনারা থেকে নিক্ষেপ করা হয় তাহলে সত্তর বছরেও তার তলদেশে পৌঁছতে পারবে না। কিন্তু আল্লাহর কসম! তোমরা তা পূর্ণ করে ফেলবে। কি, তোমরা অবাক হচ্ছো? আল্লাহর কসম আমাকে বলা হয়েছে, জান্নাতের দরযা এত প্রশস্ত হবে যে, সেই দূরত্ব অতিক্রম করতে চল্লিশ বছর লাগবে। কিন্তু এমন একদিন আসবে যখন সেখানে প্রচণ্ড ভীড় জমে যাবে। আমি যখন ঈমান আনি তখন রাসুলুল্লাহ সা: সঙ্গে মাত্র ছয় ব্যক্তি। অভাব ও দারিদ্র্যের এমন চরম অবস্থা ছিল যে, গাছের পাতাই ছিল আমাদের জীবন ধারণের প্রধান অবলম্বন। সেই পাতা খেতে খেতে আমাদের ঠোঁটে ঘা হয়ে যেত। একদিন আমি একটি চাদর কুঁড়িয়ে পাই। সেটা ফেঁড়ে আমি ও সা’দ ইবন আবী ওয়াক্কাস পরনের তহবন্দ বানিয়ে নেই। কিন্তু আজ এমন দিন এসেছে যখন আমাদের প্রত্যেকেই কোন না কোন শহরের আমীর হয়েছে। আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে বড় মনে করি-এমন অবস্থা থেকে আল্লাহর পানাহ চাই। নবুওয়াত শেষ হয়েছে। অবশেষে রাজতন্ত্র কায়েম হবে এবং খুব শিগগিরই তোমরা অন্যান্য আমীরদের পরীক্ষা করবে। (মুসনাদে আহমাদ ইবন হাম্বল-৪/১৭৪)।
অত:পর হযরত উতবা রা: হযরত মাজাশি ইবন মাসউদকে ফুরাতের তীরবর্তী অঞ্চল সমূহে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন এবং হযরত মুগীরা ইবন শু’বাকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে হজ্জের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ যান। সেখানে আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার রা: ও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি খলীফার নিকট দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চান; কিন্তু খলীফা তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বারবার আবেদন করেন, আর খলীফাও বারবার তা প্রত্যাখ্যান করেন। খলীফা তাঁকে বসরায় ফিরে গিয়ে পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণের নির্দেশ দেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি খলীফার নির্দেশ মেনে নেন। মক্কা থেকে বসরা অভিমুখে যাত্রাকালে উটের পিঠে আরোহনের পূর্ব মুহুর্তে অত্যন্ত বিনীতভাবে তিনি দুআ করেন- আল্লাহুম্মা লা তারুদ্দানী ইলাইহা, আল্লাহুম্মা লা তারুদ্দানী ইলাইহা- ওহে আল্লাহ, তুমি আমাকে বসরায় ফিরিয়ে নিওনা, হে আল্লাহ তুমি আমাকে সেখানে ফিরিয়ে নিওনা। আল্লাহ পাক তাঁর দুআ কবুল করেন। পথিমধ্যে হঠাৎ উটের পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে মা’দানে সালীম নামক স্থানে পঁচাত্তর বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যু সন হিজরী ১৭ মতান্তরে ২০। সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য সুনান গ্রন্থসমূহে উতবা ইবন গাযওয়ান থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।