মদিনার জীবনে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য জিহাদের নির্দেশনা মুসলিমদের উপর অর্পিত হয়। প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষামূলক এই সশস্ত্র কর্মপন্থা মাদানি জীবনের প্রায় পুরো সময় জুড়েই বিস্তৃত ছিলো।নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং এই দায়িত্ব পালন করেছেন, পালন করেছেন সাহাবাদের পুরো জামাত।নবীজির এই বিচিত্র যুদ্ধজীবন দুইটি ভাগে বিভক্ত;—নবীজি স্বয়ং যেসব যুদ্ধে অংশ নিতেন, সেগুলোকে গাজওয়া এবং অন্যগুলোকে সারিয়া বলা হয়।
স্মর্তব্য যে, মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকগণের পরিভাষায় ‘গাজওয়া’এবং‘সারিয়া’শব্দ দুটির প্রয়োগ এত সাধারণ যে, সামান্য সামান্য ঘটনাকেও গাজওয়া এবং সারিয়া নামে অভিহিত করা হয়েছে; একজন কিংবা দুজন লোক কোনো অপরাধীকে পাকড়াও করে নিয়ে আসার জন্য প্রেরিত হলে ঐতিহাসিকগণ এটাকেও সারিয়া বলেছেন; আবার, কয়েকজন লোকসাধারণ কোনো গোত্রের সংশোধন কিংবা তাদের অবস্থার সংবাদ নেওয়ার জন্য গেলে সেটাকেও সারিয়া বলা হয়েছে।—অনুরূপভাবে, ঐতিহাসিকগণের পরিভাষায় ‘গাজওয়া’ শব্দেরও ব্যাপকতা রয়েছে;—আর এসব কারণেই ২৩টি গাজওয়া ও ৪৩টি সারিয়া-যোগে নবীজির অংশগৃহীত ও নির্দেশিত মোট যুদ্ধ সংখ্যা ৬৬ টি পর্যন্ত পৌঁছে যায়; নতুবা আমাদের প্রচলন অনুযায়ী জিহাদ ও গাজওয়া যে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ কেমনে করা হয়, তা এ সকল যুদ্ধ-অভিযানের কয়েকটি মাত্র।
১ম হিজরি
সারিয়া:১. সারিয়ায়ে হামযা রা.। ২. সারিয়ায়ে উবায়দা রা.।
২য় হিজরি
গাজওয়া :১. গাজওয়ায়ে আবওয়া,এটাকে গাজওয়ায়ে ওয়াদ্দানও বলা হয়।২. গাজওয়ায়ে বাওয়াত।৩. গাজওয়ায়ে বদরে কুবরা।৪. গাজওয়ায়ে বনি কায়নুকা।৫. গাজওয়ায়ে সাভিক।
সারিয়া :১. সারিয়ায়ে আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রা.।২. সারিয়ায়ে উমাইর রা.।৩. সারিয়ায়ে সালেম রা.।
এবছরের গাজওয়াসমূহের মধ্যে গাজওয়ায়ে বদরই ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৩য় হিজরি
গাজওয়া :১. গাজওয়ায়ে গাতফান।২. গাজওয়ায়ে উহুদ।৩. গাজওয়ায়ে হামরাউল আসাদ।
সারিয়া :১. সারিয়ায়ে মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা রা.। ২. সারিয়ায়ে যায়েদ ইবনে হারেসা রা.।
এবছরের গাজওয়াসমূহের মধ্যে গাজওয়ায়ে উহুদই ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৪র্থ হিজরি
গাজওয়া:১. গাজওয়ায়ে বনু নযির।২. গাজওয়ায়ে বদরে সুগরা।
সারিয়া:১. সারিয়ায়ে আবু সালামা রা.। ২. সারিয়ায়ে আব্দুল্লাহ ইবনে উনাইস রা.। ৩. সারিয়ায়ে মুনযির রা.। ৪. সারিয়ায়ে মারসাদ।
৫ম হিজরি
গাজওয়া:১. গাজওয়ায়ে যাতুর রিকা।২. গাজওয়ায়ে দাওমাতুল জানদাল।৩. গাজওয়ায়ে মুরাইসি,যেটাকে গাজওয়ায়ে বনি মুস্তালিকও বলা হয়।৪. গাজওয়ায়ে খন্দক।
এবছরের গাজওয়াসমূহের মধ্যে গাজওয়ায়ে খন্দকই ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৬ষ্ঠ হিজরি
গাজওয়া:১. গাজওয়ায়ে বনি লাহইয়ান২. গাজওয়ায়ে গাবাহ,যেটাকে গাজওয়ায়ে যি কারাদও বলা হয়।৩. গাজওয়ায়ে হুদায়বিয়া।
সারিয়া:১. সারিয়ায়ে মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা রা., কারতা অভিমুখে। ২. সারিয়ায়ে আক্কাশা রা.। ৩. সারিয়ায়ে মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা রা., যিলকুসসা অভিমুখে।৪. সারিয়ায়ে যায়েদ ইবনে হারেসা, বনি সালেম অভিমুখে।৫. সারিয়ায়ে আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা.।৬. সারিয়ায়ে আলি রা.। ৭. সারিয়ায়ে যায়েদ ইবনে হারেসা, উম্মে কারফা অভিমুখে।৮. সারিয়ায়ে আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক রা.।৯. সারিয়ায়ে আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা.। ১০. সারিয়ায়ে কুরয ইবনে জাবের রা.।১১. সারিয়ায়ে আমর আয যমরি রা.।
এবছরের গাজওয়াসমূহের মধ্যে গাজওয়ায়ে হুদায়বিয়াই ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৭ম হিজরি
গাজওয়া:১. গাজওয়ায়ে খায়বার।
সারিয়া: ১. সারিয়ায়ে আবু বকররা.।২. সারিয়ায়ে বিশর ইবনে সাদ রা.। ৩. সারিয়ায়ে গালেব ইবনে আব্দুল্লাহ রা.।৪. সারিয়ায়ে বশির রা. ৫. সারিয়ায়ে আহযাম রা.।
৮ম হিজরি
গাজওয়া:১. গাজওয়ায়ে মুতা। ২. গাজওয়ায়ে ফাতহে মক্কা। ৩. গাজওয়ায়ে হুনাইন।৪. গাজওয়ায়ে তায়েফ।
সারিয়া:১. সারিয়ায়ে গালেবরা., বনি মুলাব্বিহ অভিমুখে। ২. সারিয়ায়ে গালেব রা., ফাদাক অভিমুখে। ৩. সারিয়ায়ে শুজারা.।৪. সারিয়ায়ে কাবরা.।৫. সারিয়ায়ে আমর ইবনুল আস রা.।৬. সারিয়ায়ে আবু উবায়দা রা.। ৭. সারিয়ায়ে আবু কাতাদারা.।৮. সারিয়ায়ে খালেদ রা., যাকে গুমাইসাও বলা হয়।৯. সারিয়ায়ে তোফায়েল ইবনে আমর দাওসি রা.। ১০. সারিয়ায়ে কাতবা রা.।
৯ম হিজরি
গাজওয়া: এ বছর শুধু গাজওয়ায়ে তাবুক সংঘটিত হয়েছিলো,যা গুরুত্বপূর্ণ গাজওয়াসমূহের একটি।
সারিয়া:১. সারিয়ায়ে আলকামারা.।২. সারিয়ায়ে আলি রা.। ৩. সারিয়ায়ে আক্কাশা রা.।
১০ম হিজরি
সারিয়া:১. সারিয়ায়ে খালিদ ইবনে ওলিদরা., নাজরান অভিমুখে।২. সারিয়ায়ে আলি রা., ইয়েমেন অভিমুখে।
১১তম হিজরি
এবছর নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামহযরত উসামা ইবনে যায়েদ রা.-এর নেতৃত্বে একটিমাত্র সারিয়া প্রেরণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন,যা নবীজির ইন্তেকালের পর রওনা হয়েছিলো।