আবু বারা আমির বিন মালিক এক দফা মদিনায় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের খেদমতে উপস্থিত হলো।নবীজি তাঁকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। সে ইসলাম গ্রহণ করলো না কিংবা সরেও গেলো না, বরং বললো, ‘হে আল্লাহর রাসূল, যদি আপনি দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য কিছু সাহাবিকেনাজদবাসীর নিকট প্রেরণ করেন, তাহলে তারা আপনার দাওয়াত গ্রহণ করবে বলে আশা করি।’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘নাজদবাসীদের থেকে আমি আমার সাহাবাদের ব্যাপারে আশঙ্কা অনুভব করছি।’আবু বারা বললো, ‘তারা আমার আশ্রয়ে থাকবেন।’রাসূল তারপর এই কথায় আশ্বস্ত হয়ে ৭০ জন সাহাবাকেতার সঙ্গে প্রেরণ করেন।মুনযির বিন আমির কে দলের নেতা নিযুক্ত করেন। এ সাহাবিবৃন্দ ছিলেন বিজ্ঞ, কারিএবং শীর্ষস্থানীয়। তাঁরা দিবাভাগে জঙ্গল থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করে তার বিনিময়ে আহলে সুফফাদের জন্য খাদ্য ক্রয় করতেন ও কুরআন শিক্ষা করতেন এবং শিক্ষা দিতেন; আর রাত্রিবেলা আল্লাহর সমীপে মুনাজাত ও সালাতের জন্য দণ্ডায়মান থাকতেন।
তাঁরা মাউনার কূপের নিকট গিয়ে পৌঁছুলেন।এই স্থানে শিবির স্থাপনের পর সাহাবিগণ হযরত হারাম বিন মিলহানকে রাসূলুল্লাহর পত্রসহআমির বিন তোফাইলের নিকট প্রেরণ করেন। কিন্তু হতভাগা পত্রটি পাঠ করা তো দূরের কথা, বরং তার ইঙ্গিতে এক ব্যক্তি হারামকে পিছন দিক থেকে এত জোরে বর্শা দিয়ে আঘাত করলো যে, তাদেহের অপর দিক দিয়ে ফুটো হয়ে বের হয়ে গেলো। বর্শাবিদ্ধ রক্তাক্তদেহী হারাম বলে উঠলেন, ‘আল্লাহ মহান! কাবার প্রভুর কসম, আমি কৃতকার্য হয়েছি।’এর পরপরই আল্লাহর শত্রু আমির অবশিষ্ট সাহাবাদের উপর আক্রমণ করার জন্য তার গোত্র বনু আমিরকে আহ্বান জানালো। কিন্তু তাঁরা আবু বারার আশ্রয়ে ছিলেন বলে তারা সেই আহবানে সাড়া দিলো না।কিন্তু বুন সুলাইমের তিনটি গোত্র উমাউয়া, রেল এবং যাকওয়ান—এরা তৎক্ষণাৎ সাহাবিদেরকেঘিরে ফেললো। সাহাবায়ে কেরাম যুদ্ধে মশগুল হলেন এবং হযরত কাব ইবনে যায়েদ বাদে সকলেই শাহাদত বরণ করলেন।
তখন সে অঞ্চলেআমর বিন উমাইয়া যামরি নামে এক সাহাবি ছিলেন। তিনি এই সংবাদ জানতে পেরে বেদনাদায়ক এই ঘটনার খবর নিয়ে মদিনায় পৌঁছুলেন। ৭০ জন বিজ্ঞ মুসলিমের এ হৃদয়বিদারক শাহাদাত উহুদ যুদ্ধের ক্ষতকে আরও বহুগুণে বর্ধিত করে তোলেচ; তবে উহুদের তুলনায় এ ঘটনা আরও মর্মান্তিক ছিলো এ কারণে যে, উহুদ যুদ্ধে মুসলিমগণ শত্রুদের সঙ্গে মুখোমুখি যুদ্ধ করে শাহাদত বরণ করেন, কিন্তু এক্ষেত্রে মুসলিমগণ চরম এক বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
মাউনা এবং রাযির উল্লিখিত বেদনাদায়ক ঘটনাবলিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতই ব্যথিতহয়েছিলেন এবং এ পরিমাণ চিন্তিত ও মর্মাহত হয়েছিলেন যে, যে সকল গোত্র ও সম্প্রদায় বিশ্বাসঘাতকতা করে সাহাবিগণকে হত্যা করে, এক মাস যাবৎ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধেবদ দুয়া করতে থাকেন।
তথ্যসূত্র :আর-রাহিকুল মাখতুম, সফিউর রহমান মোবারকপুরি;সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, মুফতি শফি।