নবীজির শুভ জন্ম

মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কায় বিখ্যাত বনু হাশিম বংশে ৯ই রবিউল আওয়াল সোমবার দিবস-রজনীর মহাসন্ধিক্ষণে সুবহে সাদেকের সময় জন্মলাভ করেন। ইংরেজি পঞ্জিকামতে তারিখটি ছিল ৫৭১ খৃস্টাব্দের ২০শে অথবা ২২শে এপ্রিল। এ বছরটি ছিল বাদশাহ নওশেরওয়ার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার চল্লি­শতম বছর।

জন্মকালে আমিনার পাশে ছিলেন ফাতিমা বিনতে আব্দুল্লাহ নামের এক রমণী;—তিনি বলেন, দেখতে পেলাম, আকাশের তারাগুলো আমাদের দিকে ঝুঁকে আছে, যেন খসে পড়বে আমাদের গায়ে। শেষ রাতে ভবিষ্যৎ-নবী মুহাম্মদের জন্ম হলো। চোখ আলোতে ভরে উঠলো আমিনার। সেই আলোয় আমিনার চোখে দেখা দিয়ে গেলো সিরিয়ার রাজমহল।

আমিনা বলেন, যখন মুহাম্মদ তাঁর গর্ভে এলেন, তখন তাঁকে স্বপ্নে সুসংবাদ দেওয়া হলো যে, তোমার গর্ভে যে সন্তান রয়েছে, সে এই উম্মতের সর্দার। যখন সে ভূমিষ্ঠ হবে, তখন তুমি এভাবে দুআ করবে : আমি একে এক আল্লাহর আশ্রয়ে সোপর্দ করছি। আর তাঁর নাম রাখবে মুহাম্মদ।

ইবনে সাদ হতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মা বলেছেন, যখন তাঁর জন্ম হয়েছিলো, তখন আমার শরীর হতে এক জ্যোতি বের হয়েছিলো, যাতে শামদেশের অট্টালিকাসমূহ আলোকিত হয়েছিলো। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জন্মের সময় কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা নবুওতের পূর্বাভাসস্বরূপ প্রকাশিত হয় :—কিসরা-প্রাসাদের চৌদ্দটি সৌধচূড়া ভেঙে পড়ে; প্রাচীন পারসিক যাজকমণ্ডলির উপাসনাগারগুলোতে যুগ যুগ ধরে প্রজ্জ্বলিত-হয়ে-আসা অগ্নিকুণ্ডগুলো নির্বাপিত হয়ে যায়; বাহিরা পাদরিগণের সরগম গির্জাগুলো নিস্তেজ ও নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে;—এসব বর্ণনা হচ্ছে ইমাম বায়হাকি, তাবারি এবং অন্যান্যদের। তবে এগুলোর (এই প্যারার অলৌকিক ঘটনাগুলোর) কোনো সঠিক ভিত্তি নেই এবং তৎকালীন কোনো ইতিহাসও এর সাক্ষ্য দেয় না।

মুহাম্মদের জন্মপূর্ব এসব অলৌকিক ঘটনাগুলোকে মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকদের পরিভাষায় ‘ইরহাসাত’ বা ‘অপেক্ষমাণ নিদর্শন’ বলা হয়।

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই আমিনা আব্দুল মুত্তালিবের নিকট তাঁর পুত্রের জন্মগ্রহণের শুভ সংবাদটি প্রেরণ করেন। এ শুভ সংবাদ শ্রবণমাত্রই তিনি আনন্দ-উদ্বেল চিত্তে সূতিকাগারে প্রবেশ করে নবজাতককে কোলে তুলে নিয়ে কাবাগৃহে গিয়ে উপস্থিত হন। তারপর অপূর্ব সুষমামণ্ডিত এ শিশুর মুখমণ্ডলে আনন্দাশ্রু-সজল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করতে থাকেন এবং তাঁর সার্বিক কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করতে থাকেন। একান্ত আনন্দ-মধুর এ মুহূর্তেই তিনি এটাও স্থির করে ফেলেন যে, এ নবজাতকের নাম রাখা হবে মুহাম্মদ। আরববাসীগণের নামের তালিকায় এটা ছিলো অভিনব একটি নাম। তারপর আরবের প্রচলিত প্রথানুযায়ী সপ্তম দিনে তাঁর খাতনা করা হয়।

তাঁর মাতার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সর্বপ্রথম দুগ্ধ পান করিয়েছিলেন আবু লাহাবের দাসী সুয়ায়বা।


নবীজি