এ-বিষয়ে প্রথম কথা হলো, নবীজি আমাদের মতোই মানুষ ছিলেন। স্বাভাবিক মানুষের মতোই আহার-নিদ্রা করতেন। উঠতে-বসতেন। এমনকি এইসব কাজে কখনও তিনি বিশেষ ভঙ্গিমা কিংবা আভিজাত্য প্রকাশের প্রয়োজন মনে করতেন না। আরাম করতেন, মার্জিত থাকতেন। তিনি রাজা ছিলেন না, রাজকীয় ভাব পছন্দ করতেন না। সাহাবীদের মধ্যে নবীজি ‘বিশেষ’ হয়ে থাকতেন না; তিনি ছিলেন তাদেরই একজন। তাদের মতোই বসতেন ও হেলান দিতেন। তাই তাদের সামনে নতুন কেউ এলে নবীজিকে আলাদা করে চিনতে পারতো না, জিজ্ঞেস করে নিতে হতো। যিমাম ইবনে সালাবার রা. ক্ষেত্রেও তেমনই ঘটেছে। তাই তিনি মসজিদে প্রবেশ করে জিজ্ঞাসা করেন, মুহাম্মদ কে? উপস্থিত সাহাবিরা বলে দেন যে, এই ফর্সা ব্যক্তিটি, যিনি হেলান দিয়ে আছেন। (১)
যেভাবে আরাম করতেন
আব্বাদ ইবনে তামিম রহ. তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নবীজিকে স. দেখেছেন মসজিদে চিৎ হয়ে এক পায়ের উপর অপর পা রেখে আরাম করতে দেখেছেন।(২) হাদিস-বিশারদগণ বলেছেন, পায়ের উপর পা রেখে আরাম করায় কোনো দোষ নেই।
যেভাবে হেলান দিতেন
তিনি কখনো মাটিতে বসে যেতেন, বসতে চাটাইয়ের উপর, অথবা বালিশে হেলান দিয়ে। কখনো মসজিদে গা এলিয়ে পায়ের ওপর পা রাখতেন।(৩) কখনো বালিশে হেলান দিয়ে বসতেন,(৪) তখন বালিশ থাকতো তার বাঁয়ে।(৫) তখন তার আচরণ ছিলো মার্জিত; অতিরঞ্জন নয় এবং লৌকিকতা থেকে দূরবর্তী। আবু বাকারা রা. বলেন— নবীজি স. একবার কবিরা গুনাহ সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। সে-সময় তিনি কিছুক্ষণ বালিশে হেলান দেওয়া ছিলেন। কথা বলতে বলতে তিনি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়লেন, তাই সোজা হয়ে বসলেন।(৬) এভাবে হাদিস বর্ণনার সময়ও তাকে হেলান দিতে দেখা গেছে।
কিন্তু খাওয়ার সময় ঠেস দেওয়া পছন্দ করতেন না। আবু জুহাইফা বলেন, নবীজি স. বলেছেন— আমি হেলান দিয়ে খাবার খাই না।(৭)
মসজিদে বসা
আবু সায়িদ খুদরি রা. বলেন— নবীজি কখনও মসজিদে ইহতিবা আকারে বসতেন।(৮) ইহতিবা বলা হয়, দুই উরুকে পেটের সাথে লাগিয়ে নিতম্বের উপর ভর দিয়ে বসা এবং দুই হাত দিয়ে পায়ের গোছা পেঁচিয়ে ধরা। সাধারণত আরামের জন্যেই এভাবে বসা হয়।
যেভাবে ঘুমাতেন
তিনি যখন ঘুমাতে যেতেন ডান কাত হয়ে শয়ন করতেন। মাঝেমধ্যে গালের নীচে হাত রাখতেন।(৯) আবু কাতাদ বলেন, রাতে বিশ্রাম নিলে তিনি ডান কাতে বিশ্রাম নিতেন এবং ভোর হওয়ার উপক্রম হলে যখন ঘুম ভেঙে যেত, তিনি ডান হাত কনুইতে ভর করে হাতের তালুর উপর মাথা রাখতেন।(১০) ইবনে আব্বাস রা. বলেন— কখনও তাকে নাক ডাকতেও দেখা যেত। মাঝেমধ্যেই তিন নাক ডাকতেন।(১১)
নবীজির শয়ন সম্পর্কিত হাদিসের সংখ্যা অপ্রতুল। তবে শয়নের দোয়া সংক্রান্ত বহু হাদিস রয়েছে। আমরা কেবল শয়নের পূর্বে নবীজির অবস্থা সম্পর্কেই জানতে পারি এবং বিভিন্ন সফরে দিনের বেলা তিনি শয়ন করলেই কেবল তার অবস্থা সাহাবিরা দেখতেন। তবে কোনো হাদিস থেকেই নবীজির বেসামাল ও এলোমলো হয়ে ঘুমিয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না।
মনযূরুল হক
মূলঃ নবীজি
- (বুখারি, হাদিস ৬৩)
- (বুখারি, হাদিস ৪৭৫)
- (মুসলিম, হাদিস ২১০০)
- (.তিরমিজি, হাদিস ২৭৭১)
- (তিরমিজি, হাদিস ২৭৭০)
- (বুখারি, হাদিস ২৬৫৪)
- (নাসাই, হাদিস ৬৭০৯)
- (আবু দাউদ, হাদিস ৪৮৪৮)
- (বুখারি, হাদিস ২৪৭)
- (মুসলিম, হাদিস ১৫৯৭)
- (মুসলিম, হাদিস ১৮২৪)