আমার উস্তায, আমার শায়েখ
আল্লাহপাক হযরত হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ.-কে উস্তাযও এমন মিলিয়ে দিয়েছিলেন, তাদের প্রত্যেকেই সে সময়ে যার যার বিষয়ের ইমাম ছিলেন। বিশেষত হযরত থানভী রাহ.-এর সর্বাধিক প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ উস্তায হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াকুব নানুতবী রাহ. সম্পর্কে তিনি প্রায়ই বলতেন, হযরতের দরস দরস তো নয় যেন হালকায়ে তাওয়াজ্জুহ। হযরতের অবস্থা এমন ছিলো যে, তিনি হয়তো তাফসীরের সবক পড়াচ্ছেন, কোনো আয়াতের অর্থ ও ব্যাখ্যা করছেন, অপর দিকে চক্ষু হতে দরদর করে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে।
– আশরাফুস সাওয়ানেহ, ১ম খন্ড, ৩৬ পৃষ্ঠা
উস্তায-ছাত্রের অপূর্ব সাদৃশ্য
হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রাহ.-এর কেরাতের উস্তায ছিলেন জগদ্বিখ্যাত কারী, কারী মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রাহ.। মক্কা মুকাররমায়ই হযরত তার নিকট মশ্ক করেন এবং মশ্ক করতে করতে উস্তাযের সাথে ছাত্রের কণ্ঠস্বর এতই মিলে যায় যে, উপরের তলায় যখন তাঁরা মশ্ক করতেন তখন নিচের লোকদের জন্য কোনটা উস্তাযের আওয়ায আর কোনটা ছাত্রের আওয়ায পার্থক্য করা মুশকিল হয়ে যেত।
এ সম্পর্কে হযরত হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ. বলেন, ‘আমিও আগে মনে করতাম আমি কেরাতে পারদর্শী। হযরত কারী ছাহেবের নিকট নিজের যোগ্যতা দেখানোর জন্য এ কৌশল অবলম্বন করলাম যে, তাঁকে বললাম, মশক আরম্ভ করার আগে আপনি যদি আমার এক রুকু পরিমাণ শুনেন তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন আমার দুর্বলতা কোথায়? তারপর আপনি সেগুলো শুধরে দিবেন। আসলে উদ্দেশ্য এটা ছিল না, প্রকৃতপক্ষে এটা আমার নফসের ষড়যন্ত্র ছিল।
সুতরাং কারী ছাহেব রাহ.-কে এক রুকু শুনিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ‘কেমন বুঝলেন?’ তিনি যেহেতু অত্যন্ত স্নেহশীল ছিলেন, তাই বললেন, সামান্য একটু অসুবিধা আছে, ইনশাআল্লাহ শীঘ্রই তা দূর হয়ে যাবে।
অথচ মশ্ক আরম্ভ করার পর বুঝলাম, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, আমি তো কেরাতের কিছুই শিখিনি। পরবর্তীতে এ কথা চিন্তা করে খুবই লজ্জা হতো, আমি অযথাই কারী ছাহেবকে কষ্ট দিয়েছি।
হযরত হাকীমুল উম্মত রাহ. কারী ছাহেব রাহ.-এর শিখানো কেরাতের অত্যন্ত মূল্যবান একটি মৌলিক নিয়ম উদ্ধৃত করতেন। হযরত কারী ছাহেব রাহ. বলতেন, সুর ও ভঙ্গির প্রতি মনযোগ দিবে না, সকল মনযোগ মাখরাজ তথা উচ্চারণ ঠিক করার প্রতি দিবে, কারণ উচ্চারণ সহীহ করার পর যে সুরই সৃষ্টি হবে সেটা অত্যন্ত আকর্ষণীয় হবে।
– আশরাফুস সাওয়ানেহ, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৬-৩৭
আদবের বরকত
হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রাহ. বলতেন, আমি পড়া-শোনার জন্য কখনো তেমন পরিশ্রম করিনি। আল্লাহ পাক যা কিছু দান করেছেন, তা কেবলমাত্র আমার উস্তায ও বুযুর্গানে দ্বীনের সাথে মুহাববতের সম্পর্ক ও তাদের প্রতি আদব রক্ষা করার বদৌলতেই দান করেছেন।
আলহামদু লিল্লাহ! আমি একথা বলতে পারি যে, আমি আমার কোনো মুরুববীকে এক মিনিটের জন্যও অসন্তুষ্ট করিনি। আমার অন্তরে বুযুর্গানে দ্বীনের প্রতি এমন আদব আছে, সম্ভবত বর্তমান কালের কারো অন্তরে এ পরিমাণ নেই।
অন্য সকল ছাত্রের চেয়ে হযরত থানভী রাহ.-এর প্রতি সকল উস্তাযের সুদৃষ্টি ও স্নেহ-মমতা অনেক বেশি ছিলো। হযরত থানভী রাহ.-ও উস্তাযদের সাথে এমন গভীর সম্পর্ক রাখতেন যে, তা অন্যদের দ্বারা সম্ভব হতো না। উস্তাযদের সাথে হযরতের ইশকের সম্পর্ক ছিলো।
– আশরাফুস সাওয়ানেহ, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৭-৩৮ পৃষ্ঠা
শাওয়াল ১৪৩৫ – আগস্ট ২০১৪
মাসিক আল কাউসার