ধনাঢ্য ব্যবসায়ী খাদিজার ব্যবসার ভার ও যুবক মুহাম্মদ
সে সময় পবিত্র মক্কায় খাদিজা ছিলেন একজন বিত্তবান নারী। ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্না। যেসব দরিদ্র লোককে তিনি বুদ্ধিমান ও বিশ্বস্ত বলে মনে করতেন, তাদের হাতে নিজের বাণিজ্য-সম্ভার তুলে দিয়ে বলতেন, এগুলো অমুক স্থানে নিয়ে বিক্রয় করে এসো। তোমাদেরকেও এত পরিমাণ লভ্যাংশ প্রদান করা হবে।
যদিও তখন পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নবুওতের বিকাশ ঘটেনি, তথাপি গোটা মক্কাবাসীর মাঝে তাঁর সততা ও বিশ্বস্ততার সুনাম ছিলো। প্রত্যেকের কাছেই তাঁর পছন্দনীয় ও পূত-পবিত্র চরিত্রের মূল্যায়ন ছিলো। তিনি ‘আল-আমিন’ মানে ‘বিশ্বাসী’ উপাধিতে প্রসিদ্ধ ছিলেন। আর এই সুখ্যাতি ও মহত্ত্বের কথা খাদিজার নিকটও গোপন ছিলো না। তাই তিনি তাঁর ব্যবসার দায়িত্বভার মুহাম্মদের ওপর অর্পণ করে তাঁর বিশ্বস্ততা দ্বারা উপকৃত হতে চাইলেন।
তিনি মুহাম্মদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিকট প্রস্তাব পাঠালেন, আপনি যদি আমার ব্যবসার পণ্য সিরিয়ায় নিয়ে যান, তাহলে আমি আপনার দেখমতের জন্য আমার একটি গোলামকে আপনার সাথে দিয়ে দেবো এবং অন্যান্য লোকদের যে লভ্যাংশ দেওয়া হয়, তদপেক্ষা অধিক আপনাকে দেবো। মুহাম্মদ যেহেতু উচ্চ সাহসী ও প্রশস্ত চিন্তার অধিকারী ছিলো, তাই সঙ্গে সঙ্গে তিনি এই সুদূর সফরের জন্য প্রস্তুত হয়ে যান এবং হযরত খাদিজার গোলাম মাইসারাকে সাথে নিয়ে সিরিয়ার উদ্দেশে রওনা হন।
সিরিয়া গিয়ে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার আর নৈপুণ্যগুণে অধিক লাভে ব্যবসার পণ্য বিক্রি করেন এবং সেখান থেকে অন্যান্য পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে ফিরে আসেন। পবিত্র মক্কায় এসে সিরিয়া হতে আনা পণ্যসামগ্রী খাদিজার হাতে সোপর্দ করেন। খাদিজা সেগুলো বিক্রি করে প্রায় দ্বিগুণ মুনাফা অর্জন করেন।
সিরিয়ার পথে যখন মুহাম্মদ কোনো এক স্থানে অবস্থান করছিলেন, তখন একটি ঘটনা ঘটলো। নাসতুর নামক এক ধর্মযাজক মুহাম্মদকে দেখতে পেলেন। সর্বশেষ নবীর যেসব লক্ষণ পূর্ববর্তী আসমানি গ্রহ্নসমূহে বর্ণিত ছিলো, হুবহু তা মুহাম্মদের মধ্যে দেখতে পেয়ে নাসতুর তাঁকে চিনে ফেললেন ওই ধর্মযাজক মাইসারাকে আগ থেকেই চিনতেন। তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার সাথের এ লোকটি কে?’ সে বললো, ‘পবিত্র মক্কার অধিবাসী কুরাইশ বংশীয় এক সম্ভ্রান্ত যুবক।’ নাসতুর বললেন, ‘এই যুবক ভবিষ্যতে নবী হবেন।’