শিশু মুহাম্মদের বক্ষ-বিদারণের কাহিনি
শিশু মুহাম্মদ জীবনের শুরুর কালটি অতিবাহিত করেন তাঁর দুধ-মা হালিমা সাদিয়ার কাছে, বনু সাদ গোত্রে। হালিমা সাদিয়া কোনো ধনী মহিলা ছিলেন না। অভাব নিত্য তাঁর ঘরে লেগেই থাকতো; এবং সে ছাপ পড়েছিলো পরিপার্শ্বের সর্বত্র; কিন্তু শিশু মুহাম্মদের প্রতিপালনের ভার নেওয়ামাত্রই হালিমার ভাগ্য ঝকমক করে উঠলো। হালিমা ও তাঁর স্বামী বুঝলেন, সচ্ছলতা-নিয়ে-আসা এ ছেলে কোনো সাধারণ ছেলে নয়; তাঁরা ভাগ্যের প্রসন্নতায় এবং এমন এক আশ্চর্য শিশুকে প্রতিপালনের সৌভাগ্য-মহিমায় এক অন্যরকম সুখ-সমৃদ্ধ জীবন কাটাতে লাগলেন।
দুটি বছর হয়ে গেলো। হালিমা মুহাম্মদের দুধ ছাড়িয়ে দিলো। অন্যান্য শিশুদের তুলনায় মুহাম্মদ এত সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে থাকলেন যে, দু বছর পুরো হতে-না-হতেই তাঁর দেহ বেশ শক্ত ও সুঠাম হয়ে গড়ে উঠলো। লালন-পালনের মেয়াদ দু বছর পূর্ণ হওয়ার পর হালিমা তাঁকে তাঁর মাতার নিকট নিয়ে গেলেন। দায়িত্বের স্বার্থে হালিমা মুহাম্মদকে তাঁর মায়ের কাছে নিয়ে গেলেও তাঁর মনে যুগপৎভাবে কাজ করছিলো এমন এক শিশুকে আরও কিছু কাল নিজের কাছে রাখার মাতৃজাত মায়া ও মুহাম্মদ কোলছাড়া হলে আবার না এসে পড়ে জৈবনিক দারিদ্র্যের উৎপাত, সেই অভাব-দুঃসহ ভয়;—এই মায়া ও ভয়ের কথা ভেবে হালিমা আমিনার কাছে তাঁর গোপন ইচ্ছার কথা বললেন; অনুরোধ করলেন, তিনি চান, মুহাম্মদ তাঁর কাছে আরও কিছু দিন থাকুক; তদুপরি হালিমা মক্কার চলমান মহামারীর প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কার কথাটিও বললেন; হালিমা বারবার অনুরোধে করায় অগত্যা রাজি হলেন আমিনা। শিশু মুহাম্মদ আবার ফিরে গেলেন বনু সাদে।
এ সময়েই বক্ষ বিদারণের ঘটনাটি ঘটে। তখন মুহাম্মদের বয়স চার কি পাঁচ। বালক মুহাম্মদ সঙ্গী-সাথিদের সঙ্গে খেলাধুলা করছিলেন, এমন সময় জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) সেখানে এসে উপস্থিত হন। তারপর তাঁকে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে চিৎ করে শুইয়ে দেন এবং তাঁর বক্ষ বিদীর্ণ করে হৃৎপিণ্ডটি বের করে আনেন। তারপর তার মধ্য থেকে কিছুটা জমাট রক্ত বের করে নিয়ে বললেন, ‘এটা হচ্ছে শয়তানের অংশ, যা তোমার মধ্যে ছিল।’ তারপর হৃৎপিণ্ডটি একটি সোনার তশতরিতে রেখে জমজমের পানি দ্বারা তা ধুয়ে যথাস্থানে প্রতিস্থাপন করে কাটা অংশ জোড়া লাগিয়ে দিলেন। এ সময় তাঁর খেলার সঙ্গী-সাথিগণ দৌড়ে গিয়ে দুধ-মা হালিমাকে বললো যে, মুহাম্মাদ নিহত হয়েছে। হালিমা এবং তাঁর স্বামী এ কথা শুনে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ও অস্থির হয়ে দৌড়ে সেখানে এলেন। উপস্থিত হয়ে মুহাম্মদের মুখমণ্ডলে মালিন্য এবং পেরেশানির ভাব লক্ষ করলেন। এ অবস্থায় তাঁরা তাঁকে বাড়িতে নিয়ে এলেন।
মুহাম্মদ যে নবি হবেন, তার কার্যত প্রস্তুতি এরকম নানা উপযোগ ও ঘটনা থেকে প্রতিভাত হতে লাগলো—অল্প কিছু লোকের চিত্তকে নাড়িয়ে দিয়ে আর অনেক লোকের অগোচরেই…