দাদার প্রয়াণে মুহাম্মদের অভিভাবক হলেন চাচা
ইবনে হিশামের বর্ণনায় আছে, কাবাঘরের ছায়ায় মুহাম্মদের দাদা আব্দুল মুত্তালিবের জন্য বিশেষ একটি আসন বিছানো থাকতো। আব্দুল মুত্তালিব এ আসনে বসতেন এবং সন্তানগণ বসতেন সেই আসনের পার্শ্ববর্তী স্থানে। পিতার সম্মানার্থে তাঁর কোনো সন্তান এ আসনে বসতেন না। কিন্তু শিশু মুহাম্মদ সেখানে আগমন করে সেই আসনেই বসতেন। এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে চাচারা তাঁর হাত ধরে সেই আসন থেকে নামিয়ে দিতেন। কিন্তু আব্দুল মুত্তালিবের উপস্থিতিতে সেই আসন থেকে তাঁকে নামানোর চেষ্টা করা হলে তিনি বলতেন, ‘ওকে তোমরা এ আসন থেকে নামানোর চেষ্টা কোরো না, ওকে ছেড়ে দাও। আল্লাহর শপথ, এ শিশুকে আমার সাধারণ শিশু বলে মনে হয় না। ও হচ্ছে ভিন্ন রকমের এক শিশু, অনন্য এক ব্যক্তিত্ব।’ তারপর তাঁকে নিজের কাছেই বসিয়ে নিতেন সে আসনে, তাঁর গায়ে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে সোহাগ করতেন এবং তাঁর চালচলন ও কাজকর্ম দেখে আনন্দ প্রকাশ করতেন।
মায়ের মৃত্যুতে একা মুহাম্মদ দাদা আব্দুল মুত্তালিবের এমন স্নেহ আর আদরেই বড় হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু বাঁকে বাঁকেই দেখা গেছে, মুহাম্মদের জীবনে চিরস্থায়ী একনাগাড় কোনো সুখ আপাত-স্থায়ী হয়নি। পরিযায়ী মেঘের মতো এ মহাজীবন ভাসতে থেকেছে অনন্ত দুঃখের কোলে…
মুহাম্মদের বয়স যখন আট বছর দুই মাস দশ দিন, তখন তাঁর দাদা আব্দুল মুত্তালিব মৃত্যুবরণ করলেন। এ দুঃখ-শোকের মুহূর্তে দুঃখ-বেদনার বোঝা লাঘব করতে এগিয়ে এলেন চাচা আবু তালিব। হৃষ্টচিত্তে তিনি আপন কাঁধে তুলে নিলেন বালক মুহাম্মাদের লালন-পালনের সকল দায়িত্ব। বৃদ্ধ আব্দুল মুত্তালিব মৃত্যুর আগে আবু তালিবকেই ওসিয়ত করে গিয়েছিলেন।
এই লালন-পালনের ভার বা অভিভাবকত্ব আবু তালিব তাঁর জীবদ্দশায় আর কোনো দিনই সরিয়ে নেননি। এমনকি মৃত্যুর সময়েও ভাতিজার প্রতি ছিলো তাঁর অপার মমতার ছাপ। মুহাম্মদের যৌবনের শুরু ও রিসালাতের বেদনাবিধুর মক্কা-কাল, কোথাও তিনি মুহাম্মদকে একা হতে দেননি; মুহাম্মদের আদর্শ গ্রহণ না করলেও তাঁর প্রতি আবু তালিবের ছিলো সবরকমের সমর্থন।