মুমিনদের কাজ হল তাদের দ্বায়িত্ব পূর্ণ করা, এবং তাদের দ্বায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহ্কে গ্রহণ করা, দ্বীনকে দুনিয়ার উপর প্রাধান্য দেয়া, বিশ্বাসের মাধ্যমে নিজেদেরকে লাঞ্ছনার (অবিশ্বাসের লাঞ্ছনার জীবন থেকে) ঊর্ধ্বে আরোহন করানো এবং ইখলাসের সাথে সাথে আমলের মাধ্যমে আল্লাহ্র সাথে সত্যবাদী হয়ে যাওয়া। তারপর এটি আল্লাহ্র ব্যাপার তাদের সাথে এবং তাদের শত্রুদের সাথে, তার দ্বীনের সাথে, তার আহ্বানের সাথে কিভাবে বোঝাপড়া করবেন, যেহেতু তিনি ন্যায় বিবেচক। তিনি হয়ত তাদের জন্য যে কোন সমাপ্তি নির্বাচন করতে পারেন যা ইতিহাস জ্ঞাত, অথবা অন্য কোন সমাপ্তি যা শুধু তিনি জানেন, দেখেন।
তারা আল্লাহর কর্মী। যেকোন সময়, যেকোন স্থানে, যে কোন অবস্থাতেই তিনি চান তারা তাদের কাজ করুক, অতঃপর তাদের সেটা করা উচিত এবং এ ব্যাপারে ঘোষিত পুরষ্কার অর্জন করা উচিত। তাদের প্রচেষ্টার শেষ কি হবে তা নির্ধারণ করা তাদের ক্ষমতা বা দায়িত্বের ভিতরে নয়। এটি শুধুমাত্র একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারীর দ্বায়িত্ব, তাদের নয় যারা শুধুমাত্র কর্মী।
তারা তাদের পুরষ্কারের প্রথম অংশ হিসেবে লাভ করে অন্তরের সন্তুষ্টি, সুউচ্চ অন্তর্দৃষ্টি, চিন্তারধারার সৌন্দর্য, কামনা-বাসনা থেকে স্বাধীনতা এবং ভয় ও দুঃখ থেকে মুক্তি লাভের মাধ্যমে, তা যে অবস্থাতেই তারা থাকুক।
তারা তাদের পুরষ্কারের দ্বিতীয় অংশটি লাভ করে ফেরেশতাদের সাথে সাথে এই দুনিয়ার মানুষের প্রশংসা, স্মরণ এবং সম্মানের মাধ্যমে।
তারপর তারা তাদের পুরষ্কারের আরও উত্তম এবং সর্বশেষ অংশটি লাভ করে আখিরাতেঃ সহজ হিসাব এবং উত্তম অনুগ্রহ।
তারা প্রতিটি পুরষ্কারের সাথে সাথে সর্বোচ্চ পুরস্কারটিও লাভ করেঃ আল্লাহ্র সন্তুষ্টি। এটি হল তাদের উপর তাঁর অনুগ্রহ যে, তিনি তাদেরকে তাঁর উদ্দেশ্যের জন্য নির্বাচন করেছেন, তাঁর ক্ষমতার একটি উপাদান হিসেবে, যাতে করে তিনি তাদেরকে এই দুনিয়াতে কাজে লাগাতে পারেন, যেহেতু তিনি সর্বোত্তম বিবেচক।
এই বৈশিষ্ট্যকে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়াই ছিল মুসলিমদের মহান প্রথম প্রজন্মের কুরআনের শিক্ষা। এ কাজের জন্য তারা তাদের ব্যক্তিত্ব এবং পরিচয় হারিয়েছেন, শুধুমাত্র একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারীর কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন, এবং প্রতিটি সিদ্ধান্তে এবং প্রতিটি অবস্থায় আল্লাহ্র উপর সন্তুষ্ট ছিলেন।
রাসূলুল্লাহর (সাঃ) প্রশিক্ষণ কোর’আনের শিক্ষার সাথে সমান্তরালে চলছিলো, যা মনোনিবেশ করিয়েছিলো তাদের অন্তর এবং চক্ষুকে জান্নাতের দিকে এবং তাদের উপর ন্যস্ত কাজ ধৈর্য্যের সাথে সংরক্ষণ করার দিকে যতক্ষণ না পৃথিবীতে আল্লাহ যা চান তা ঘটে যায় এবং একই সাথে তা, যা উনাকে খুশি করবে আখিরাতে।
নবী কারীম (সাঃ)- আম্মার (রাঃ) ও তার মা-বাবার (রাঃ) উপর হয়ে চলা অত্যাচারের মাত্রা দেখেছেন, কিন্তু তিনি শুধুমাত্র এই কথাটিই বলেছেন, “হে ইয়াসিরের পরিবার! ধৈর্য ধারণ কর, তোমাদের জন্য জান্নাত নির্ধারিত রয়েছে”।
এবং খাব্বাব বিন আল-আরাত (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ “আমরা আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) এর কাছে অভিযোগ করলাম, তখন তিনি কা’বা শরীফের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, আমরা বললাম, “আপনি কেন আমাদের জন্য আল্লাহ্র কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছেন না? কেন আপনি আমাদের জন্য দুয়া করছেন না?” তারপর তিনি (সাঃ) বললেন, “তোমাদের আগে, এমন সব লোক ছিল যে, তারা একজন মানুষকে ধরে আনত, মাটিতে গর্ত করে তাতে ঐ লোকটিকে পুঁতে ফেলত, তারপর তার মাথা করাত দিয়ে কাটতো যতক্ষণ না সেই লোকটির মাথা দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়; অথবা একটি লোহার চিরুনি দিয়ে তার শরীরের হাড্ডি ও গোশত আলাদা করে ফেলত, তার পরেও এগুলো তাকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে আনতে পারতো না। আমি আল্লাহর নামে কসম করে বলছি ! আল্লাহ্ পাক এর সমাপ্তি আনবেন, এবং এমন সময় আসবে যখন একজন আরোহী ঘোড়ায় চরে সানা’আ থেকে হাদারমাউত পর্যন্ত একাকী ভ্রমণ করবে এবং তার অন্তরে কোন ভয় থাকবে না একমাত্র আল্লাহ্র ভয় ব্যতীত, অথবা তার ভেড়ার বিপরীতে নেকড়ের ভয়, কিন্তু তোমরা তো তাড়াহুড়ো করছ।“ (বুখারী)