মুহাম্মাদ ﷺ সারা বিশ্বের জন্য প্রেরিত সর্বশেষ নবী; তাওরাত-ইঞ্জিল ও আল-কুরআনের আলোকে
ইয়াহুদী ও খ্রিস্টান ভাইয়েরা মনে করে মূসা ও ঈসা আ. শেষ নবী। তাই তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনীত ধর্ম ইসলাম মানছে না। অথচ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই শেষ নবী, এ কথা যেমন কুরআনে বলা হয়েছে তেমনিভাবে তাওরাত-ইঞ্জিলেও বলা হয়েছে। আমরা আল কুরআন ও তাওরাত-ইঞ্জিল থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেষ নবী হওয়ার প্রমাণ উল্লেখ করার প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ। আমরা আশা করি সত্যপ্রেমি ইয়াহুদী-খ্রিস্টান ভাইয়েরা সত্য গ্রহণ করতে দ্বিধা করবে না।
আল কুরআন থেকে: হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশ্ব নবী ও সর্বশেষ নবী হওয়া সম্পর্কে আল কুরআনের কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হচ্ছে :
১.‘হে নবী আপনি বলুন, হে লোকসকল! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকলের জন্য প্রেরিত রাসূল’। (সূরা আরাফ:১৫৮)
২. ‘আমি আপনাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য (জান্নাতের) সুসংবাদদাতা ও (জাহান্নামের আযাবের ব্যাপারে) সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।’ (সূরা সাবা:২৮)
৩. ‘পরম কল্যাণময় তিনি যিনি তাঁর বান্দা (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর ফয়সালার গ্রন্থ (আল কুরআন) নাযিল করেছেন, যাতে করে তিনি বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হন।’ (সূরা ফুরকান:১)
৪. ‘তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়েত ও সত্য ধর্মসহ পাঠিয়েছেন, যাতে এ ধর্মকে অন্য সমস্ত ধর্মের উপর জয়যুক্ত করেন। সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সূরা ফাতহ:২৮)
৫. ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল।’ (সূরা ফাতাহ:২৯)
৬. ‘মুহাম্মাদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।’ (সূরা আহযাব:৪০)
এসব আয়াত থেকে আল কুরআনের আলোকে একথা সুপ্রমানিত হলো যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সারা বিশ্বের মানুষের জন্য নবী এবং তিনিই সর্বশেষ নবী। অতএব, পরকালে চিরমুক্তির জন্য ইয়াহুদি-খ্রিস্টানসহ অন্য সমস্ত ধর্মাবলম্বীদের জন্য ইসলামের নবী, বিশ্ব মানবতার নবী, সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মানতে হবে। তাঁর আনীত আদর্শকে নিজের জীবনের আদর্শরূপে গ্রহণ করতে হবে।
তাওরাত-ইঞ্জিলের আলোকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামঃ
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে অনেক আলোচনা হয়েছে। স্বয়ং কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যারা অনুসরণ করবে উম্মী রাসূলের যাঁর কথা তারা লিপিবদ্ধ পেয়ে থাকে তাওরাত ও ইঞ্জিলে’। (সূরা আনআম : ১৫৭)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে : ‘স্মরণ কর যখন মরিয়াম তনয় ঈসা বলেছিল, হে বনী ইসরাঈল! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতি প্রেরিত রাসূল, আর এমন রাসূলের আগমনের সুসংবাদবাহক যিনি আমার পরে আগমন করবেন, তাঁর নাম হবে আহমাদ’। (সূরা সাফ)
তাওরাত ইঞ্জিলে যেহেতু শেষ নবীর আগমনের সুসংবাদ ছিল, তাই ইয়াহুদী-খ্রিস্টানরা অধীর আগ্রহে শেষ নবীর আগমনের প্রতীক্ষায় ছিলো। কিন্তু তারা আশা করছিলো যে, বনী ইসরাঈল থেকেই শেষ নবীর আগমন ঘটবে। যখন তা হলো না; বরং বনী ইসমাঈল থেকে শেষ নবীর আগমন ঘটল তখন তারা জিদের বশে জেনে শুনে শেষ নবীকে অস্বীকার করলো। তাদের এই আচরণের কথাও কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। বর্ণিত হচ্ছে : ‘যখন তাদের (ইয়াহুদী-খ্রিস্টান) কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব (কুরআন) এসে পৌঁছলো, যা সে বিষয়ে সত্যায়ন করে যা তাদের কাছে রয়েছে এবং তারা পূর্বে ভবিষ্যত রাসূলের দোহাই দিয়ে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভের দুআ করতো, যখন তাদের কাছে সেই পূর্বপরিচিত কিতাব আসলো, তখন তারা সেটাকে অস্বীকার করলো। এসব কাফেরদের উপর আল্লাহ তাআলার অভিসম্পাত।’ (সূরা বাকারা : ৮৯)
অন্যত্র বর্ণিত হচ্ছে: ‘আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি (ইয়াহুদী-খ্রিস্টান) তারা তাঁকে (শেষ নবীকে) চিনে যেমনভাবে চিনে আপন সন্তানদেরকে’। (সূরা বাকারা : ১৪৬)
যাই হোক আমরা এখন তাওরাত-ইঞ্জিল থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্পর্কে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখ করছি।
১. হযরত মূসা আ. বলেন: ‘মাবূদ তূর পাহার হতে আসলেন, তিনি সেয়ীর থেকে তাদের উপর আলো দিলেন, তাঁর আলো পারণ পাহাড় থেকে ছড়িয়ে পড়লো।’ (দ্বিতীয় বিবরণ: ৩৩/১:৩)
উপরিউক্ত উদ্ধৃতিতে ‘তাঁর আলো পারণ পর্বত হতে ছড়িয়ে পড়লো’ বলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর ওহী নাযিল হওয়া এবং বিশ্ব মানবের পথনির্দেশকারী আল কুরআনের কথা বুঝানো হয়েছে। এখানে ‘পারণ পর্বত’ বলে মক্কার পর্বত শ্রেণীকে বুঝানো হয়েছে। হেরা পাহাড় ঐসব পর্বত শ্রেণীরই অংশ। কেননা বাইবেলের ভাষ্যকার সকলেই একমত যে, এখানে ‘পারণ’ বলে ঐ স্থানকেই বুঝানো হয়েছে যে স্থানে হযরত হাজেরা ও হযরত ইসমাঈল বসবাস করতেন বলে আদি কিতাবে উল্লেখ পাওয়া যায়।
২. হযরত মূসা আ. বলেন: ‘যত দিন না শীলো আসেন এবং সমস্ত জাতি তাঁর হুকুম মেনে চলে, ততদিন রাজদণ্ড এহুদারই বংশে থাকবে। আর তার দুহাটুর মাঝ খানে থাকবে বিচার দণ্ড’। (আদি পুস্তক : ৪৯/১০)
উক্ত পদে ‘শীলো’ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই বুঝানো হয়েছে। কেননা ১৬২৫, ১৮২২, ১৮৩১ ও ১৮৪৪ খৃষ্টাব্দে মুদ্রিত বাইবেলের আরবী অনুবাদে ‘শীলো’ শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে الذى له الكل ‘যার জন্য সব কিছু’। এ গুণটিও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্যই খাটে। তিনি যেহেতু সকল নবী রাসূলের সর্দার ছিলেন, তাই সব কিছু তার জন্য হওয়াটাই স্বাভাবিক। তিনি নিজে বলেছেন : ‘আমি আদম সন্তানদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, এতে অহংকারের কিছু নেই’। (ইবনে মাজাহ হা. নং ৪৩০৮)
উক্ত পদে বলা হয়েছে ‘সমস্ত জাতি তাঁর হুকুম মেনে চলবে’। এ কথাটি একমাত্র নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয়। কারণ, তিনিই সকল জাতির নবী। যা ইতিপূর্বে উল্লিখিত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। উক্ত পদ দ্বারা আরেকটি বিষয় স্পষ্ট বুঝা যায় যে, শীলোর আগমন হলে ইহুদীদের রাজত্ব ও জাতীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের পরে বাস্তবেই ইহুদীরা রাজত্ব হারিয়ে ছিলো। ‘আর রিসালাতুল হাদিয়া’ নামক গ্রন্থে ইহুদী পণ্ডিত আব্দুস সালাম ইসলাম গ্রহণের পর উপরে আলোচিত বিষয়টিই বিভিন্ন যুক্তি প্রমাণের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন।
৩. হযরত মূসা আ. বলেন: ‘মাবূদ আমাদের বলেছিলেন, তারা ভালোই বলেছে। আমি তাদের ভাইদের মধ্য থেকে তোমার মত একজন নবী দাঁড় করাবো। তার যবান দিয়েই আমি আমার বক্তব্য পেশ করব। আর আমি তাকে যা বলার নির্দেশ করব তিনি তাই তাদেরকে বলবেন। তিনি আমার নাম করে যে কথা বলবেন কেউ যদি আমার সে কথা না শুনে আমি নিজেই সে লোককে দায়ী করবো। পক্ষান্তরে আমি বলিনি এমন কোনো কথা যদি কোনো নবী আমার নাম করে বলতে দুঃসাহস করে কিংবা সে যদি দেব-দেবীর নামে কথা বলে, তবে তাকে হত্যা করতে হবে। কোনো একটা কথা সম্পর্কে তোমরা মনে মনে বলতে পার, মাবূদ এ কথা বলেছেন কিনা তা আমরা কি করে জানবো? কোনো নবী যদি মাবূদের নাম করে কথা বলে, আর তা যদি অসত্য হয় কিংবা না ঘটে, তবে বুঝতে হবে সে কথা মাবূদ বলেন নি, সেই নবী দুঃসাহস করে ঐ কথা বলেছে। তাকে তোমরা ভয় করো না। (দ্বিতীয় বিবরণ:১৮/১৭:২২)
এখানে উল্লেখিত ভবিষ্যদ্বাণী আখেরী নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কেই খাটে। কেননা উক্ত বাণীতে ‘তাদের ভাইদের মধ্য হতে একজন নবী দাঁড় করাবো।’ এখানে ‘তাদের বলে’ বনী ইসরাঈলকে বুঝানো হয়েছে। আর বনী ইসরাঈলের ভাই হল বনী ইসমাঈল। আদি পুস্তকের ১৬ এর ১২ তে ও বনী ইসমাঈলকে বনী ইসরাঈলের ভাই হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এ কথা সবাই জানে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনী ইসমাঈলের অন্তর্ভুক্ত।
উক্ত বাণীতে আরো বলা হয়েছে, ‘তার যবান দিয়েই আমি আমার কথা বলবো’ প্রাচীন বাংলা অনুবাদে আছে ‘তাহার মুখে আমার বাক্য দিবো’ এটি প্রাচীন ইংরেজী অনুবাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অর্থাৎ হযরত মূসা ও ঈসাকে যেভাবে লিখিত আকারে আল্লাহর কালাম দেওয়া হয়েছিল উক্ত নবীকে সেভাবে দেওয়া হবে না। বরং আল্লাহর কালাম তাঁর মুখে তুলে দেওয়া হবে। আর এ কথা তো সবার জানা যে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লিখিত আকারে কোনো কিতাব দেওয়া হয়নি। বরং যে কুরআন শরীফ তাঁর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল তা তাঁর যবানেই ছিল।
ইঞ্জিল শরীফের প্রেরিত অংশে সর্ব প্রধান হাওয়ারী হযরত ঈসার শিষ্য পিতরের বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, হযরত ঈসা আ. এর শিষ্যদের বদ্ধমূল বিশ্বাস ছিল, এ ভবিষ্যদ্বাণীটি হযরত ঈসা আ. ছাড়া অন্য কোনো নবী সম্পর্কে করা হয়েছে। অতএব, কোনো খ্রিষ্টান যদি মনে করেন যে, মূসা আ. ভবিষ্যদ্বাণীটি হযরত ঈসা আ. এর ব্যাপারে তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ ভুল। পিতরের বক্তব্যের বর্তমান বঙ্গানুবাদটি খানিকটা বিকৃত বিধায় আমরা ১৮৪১ সালের ফার্সী অনুবাদ থেকে তা তুলে ধরছি: পিতর বলেন, ‘আপনারা তাওবা করুন এবং আল্লাহর দিকে রুজু করুন, যাতে করে আপনাদের পাপ মোচন করা হয় এবং তিনি ঈসা মসীহকে যাকে তোমাদের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিলো পুনরায় পাঠাতে পারেন, কেননা আসমান ততদিন তাকে হেফাজত করবে যতদিন পর্যন্ত প্রাচীন কাল থেকে পাক নবীদের মাধ্যমে আল্লাহ যা বলেছিলেন তা না ঘটবে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, হযরত মূসা আমাদের পূর্ব পুরুষদের বলেছিলেন, তোমাদের খোদা তোমাদের জন্য তোমাদের ভাইদের মধ্য থেকে আমার মত একজন নবী পাঠাবেন। তিনি যা কিছু তোমাদেরকে বলবেন, তোমরা তা মান্য করবে, যে কেউ তাঁর কথায় কর্ণপাত করবে না তাকে তাঁর লোকদের মধ্য থেকে একেবারে ধ্বংস করে ফেলা হবে।’ (প্রেরিত:১৮/১৯:২৩)
উপরিউক্ত বক্তব্য থেকে দিবালোকের ন্যায় এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ভবিষ্যদ্বানীকৃত নবী হযরত ঈসা ব্যতীত অন্য কেউ হবেন। যার আগমনের পূর্ব পর্যন্ত হযরত ঈসা আ. আসমানে অবস্থান করবেন।
ইহুদী পণ্ডিতরা অকপটে স্বীকার করতো যে, উক্ত ভবিষ্যদ্বাণী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কেই করা হয়েছে। তাদের কেউ তো ইসলাম গ্রহণ করেছে যেমন, আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাযি.। আর কেউ কেউ সে সৎসাহস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. বর্ণনা করেন, একবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহুদীদের বাইতুল মিদারাস (যে ঘরে তারা তাওরাত ইত্যাদি পড়ে শোনাতো) এ গেলেন এবং বললেন, তোমাদের সর্বাপেক্ষা বড় আলেমকে নিয়ে আস। তারা আব্দুল্লাহ বিন সুরিয়াকে নিয়ে আসল। তিনি তাকে নিরালায় নিয়ে স্রষ্টার কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি জানেন আমি আল্লাহর রাসূল? উত্তরে বললো, হ্যাঁ, অবশ্যই জানি, আর আমাদের সকলেই আমার মতোই জানে। আপনার গুণাবলি তাওরাতে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু আমাদের লোকেরা প্রতিহিংসাবশত তা মানতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনার ইসলাম গ্রহণ করতে বাঁধা কোথায়? সে বলল, আমি গোত্রীয় লোকদের বিরুদ্ধে চলা পছন্দ করি না। আমি আশাবাদী তারা আপনার কথা মেনে নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করবে আর তখন আমিও ইসলাম গ্রহণ করব।’ (আল ওয়াফা: ১/১০৩, আশশিফা: ১/৩৬৩, সীরাতে ইবনে হিশাম: ২/৫১৮)
৪. হযরত ঈসা আ. আপন শিষ্যদেরকে মোনাজাতের বিষয়ে শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমরা এইভাবে মুনাজাত করো; হে আমাদের বেহেশতী পিতা! তোমার নাম পবিত্র বলে মান্য হোক, তোমার রাজ্য আসুক, তোমার ইচ্ছা যেমন বেহেশতে তেমনি দুনিয়াতেও পূর্ণ হোক।’ (মথি : ৬/৯ : ১০, লুক : ১১/২) অনত্র বলা হয়েছে, ঈসা আ. তাঁর বারজন শিষ্যকে ধর্ম প্রচারের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তোমরা যেতে যেতে এ কথার তাবলীগ করো যে, বেহেশতী রাজ্য কাছে এসে গেছে। (মথি:১০/৭) তাছাড়া হযরত ইয়াহইয়া আ. এবং হযরত ঈসা আ. একই কথার তাবলীগ করতেন যে, তাওবা কর। কারণ, বেহেশতী রাজ্য কাছে এসে গেছে। (মথি: ৩/১:২, ৪/১২:১৭) অন্যত্র উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত ঈসা আ. আরো সত্তরজন উম্মতকে তাবলীগে পাঠাবার জন্য বাছাই করলেন এবং যাবার সময় যা উপদেশ দিলেন তার মধ্যে ‘আল্লাহর রাজ্য কাছে এসে গেছে’ এর তাবলীগের উপদেশ ছিল। (লুক: ১০/১, ৮:১১)
উপরিউক্ত ভবিষ্যদ্বাণী দ্বারা বুঝা যায় যে, ‘বেহেশতী রাজ্য’ তথা ঈসা কর্তৃক আনীত নাজাতের পথ ছাড়া অন্য কোনো একটা উত্তম নাজাতের পথ। আর তা হলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনীত পথ। হযরত ঈসা আ. হযরত ইয়াহইয়া আ. এবং ঈসা আ. এর শিষ্যদের যমানাতেও উক্ত নাজাতের পথ আসেনি। নতুবা তারা তা প্রকাশের সময় কাছে এসে গেছে মর্মে দাওয়াত প্রদান করতেন না এবং শিষ্যদেরকেও এ ব্যাপারে উপদেশ দিয়ে যেতেন না।
৫. হযরত ইদরীস আ. বলেন: (প্রাচীন ইংরেজী অনুবাদ হিসাবে বঙ্গানুবাদ) ‘প্রভু তার দশ হাজার পবিত্র লোকের সঙ্গে আসলেন।’ (এহুদা : ১৪:১৫) এ পদটিতে খ্রিষ্টানরা বিভিন্নভাবে পরিবর্তন সাধন করে তা অন্য খাতে প্রবাহিত করতে চেয়েছে। ‘দশ হাজার’ এর অর্থ করেছে, অযুত অযুত। আরেক বাইবেলে অর্থ করেছে, লক্ষ। আর পবিত্র লোকের সঙ্গে আগমনের অর্থ করেছে, পবিত্রের নিকট থেকে এলেন, অর্থাৎ একাই বের হয়ে এলেন। এসব আলামত দ্বারা যাতে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চিনা না যায় এ জন্য তারা এসব খিয়ানত আশ্রয় নিয়েছে। (বিস্তারিত দেখুন : খ্রিষ্টান:মুসলিম সংলাপ পৃ.৩৪)
কিন্তু প্রাচীন ইংরেজী অনুবাদ দেখলে বুঝা যায়, উক্ত ভবিষ্যদ্বানীতে হযরত ইদরীস আ. ‘প্রভু’ বলে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আর ‘পবিত্রলোক’ বলে সাহাবায়ে কেরামকে বুঝিয়েছেন। কারণ তিনিই মক্কা বিজয় কালে দশহাজার সাহাবীসহ মক্কায় হাজীর হয়েছিলেন।
৬. হযরত ঈসা আ. বলেন: ‘তোমরা যদি আমাকে মুহাব্বাত কর, তাহলে আমার সমস্ত হুকুম মেনে চলবে, আমি পিতার নিকট প্রার্থনা করবো এবং তিনি তোমাদের কাছে আরেকজন সাহায্যকারী প্রেরণ করবেন। তিনি তোমাদের কাছে চিরকাল থাকবেন। সেই সাহায্যকারীই সত্যের আত্মা। দুনিয়া তাকে গ্রহণ করতে পারে না, কারণ দুনিয়া তাকে দেখতে পায় না এবং তাকে জানেও না। তোমরা কিন্তু তাকে জানো, কারণ তিনি তোমাদের সংগে সংগে থাকবেন। তিনি তোমাদের অন্তরে বাস করবেন। (যোহন ১৪:২৫:২৬)
ঈসা মসীহ আ. আরো বলেন, তোমাদের সংগে থাকতে থাকতেই এ সমস্ত কথা আমি তোমাদের বলছি। সেই সাহায্যকারী অর্থাৎ পাক রূহ যাঁকে পিতা আমার নামে পাঠিয়ে দিবেন, তিনিই সমস্ত বিষয় তোমাদের শিক্ষা দিবেন। আর আমি তোমাদের যা কিছু বলছি সেই সমস্ত তোমাদের মনে করিয়ে দিবেন। (যোহন:১৫/২৬) এখানে সাহায্যকারীকে পাক রূহ বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এটা খ্রিষ্টান পণ্ডিতদের খিয়ানত। কারণ সাহায্যকারী পাক রুহ নন বরং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কারণ, তিনিই দুনিয়াবাসীকে হযরত ঈসা আ. এর শিক্ষা মনে করিয়ে দিয়েছেন।
ঈসা আ. আরো বলেছেন, ‘ সাহায্যকারীকে আমি পিতার নিকট থেকে তোমাদের নিকট পাঠিয়ে দিব, তিনি যখন আসবেন তখন তিনিই আমার বিষয় সাক্ষ্য দিবেন। তিনি সত্যের রূহ।’ (যোহন:১৬:৭:৮) সত্যিই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কিতাব আল কুরআনে ঈসা আ. সম্পর্কে বিভিন্নভাবে সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে।
ঈসা আ. আরো বলেছেন, ‘তবুও আমি তোমাদের সত্যি কথা বলছি যে, আমার যাওয়া তোমাদের জন্য ভালো, কারণ আমি না গেলে সে সাহায্যকারী তোমাদের নিকট আসবে না। আমি যদি চলে যাই তবে তাকে তোমাদের নিকট পাঠিয়ে দিব, আর তিনি এসে পাপের সম্বন্ধে, ধার্মিকতার সম্বন্ধে এবং বিচারের সম্বন্ধে জগতকে দোষী সাব্যস্ত করবেন।’ (যোহন: ১৬/১২)
ঈসা আ. আরো বলেন, ‘পরন্ত সেই সত্যের আত্মা যখন আসবেন, তখন তিনি তোমাদের পথ দেখিয়ে পূর্ণ সত্যে নিয়ে যাবেন, কারণ তিনি নিজ থেকে কথা বলবেন না, কিন্তু যা কিছু শুনেন তাই বলবেন এবং আগামী ঘটনাও তিনি তোমাদের জানাবেন, তিনি আমাকে মহিমান্বিত করবেন। (যোহন: ১৬:১৩)
উপরে উল্লেখিত বানীগুলোতে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। খ্রিষ্টান পাদ্রীরা এসব বাণীর মধ্যে অনেক রদবদল করেছে। যাতে এসব বাণী দ্বারা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝা না যায়; বরং স্বয়ং ঈসাকে বুঝা যায়। কিন্তু শেষ অবধি তারা সফল হতে পারেনি। কারণ, এসব বাণীর মধ্যে এমন সব গুণাবলীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে যা ঈসা এর মধ্যে পাওয়া যায় না বরং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যেই পাওয়া যায়। কিভাবে এসব গুণাবলী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে পাওয়া যায় তা দেখানো হচ্ছে :
বলা হয়েছে, ‘তিনি বিশ্বাসীদের কাছে চির কাল থাকবেন’ অর্থাৎ তার আদর্শ ও আনীত মুক্তির পথ কিয়ামত পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এই গুণ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথেই খাস।
বলা হয়েছে ‘তিনি সমস্ত বিষয় মানুষকে শিক্ষা দিবেন’ ইসলামই একমাত্র ধর্ম যেখানে মানুষকে তার জীবনের প্রয়োজনীয় সমস্ত বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আর এই পূর্ণ শিক্ষার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বিদায় হজ্জের সময় আরাফার দিন একটি আয়াত নাযিল করে।
বলা হয়েছে ‘ঈসা মসীহ যা কিছু বলেছিলেন সেই সমস্ত কথা বিশ্বাসীদের মনে করিয়ে দিবেন’ আল কুরআন এ ব্যাপারে সাক্ষী যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈসা আ. এর শিক্ষা বিশ্ববাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
বলা হয়েছে ‘তিনিই ঈসা আ. এর বিষয়ে সাক্ষ্য দিবেন, তার সম্পর্কে বলবেন।’ কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈসা আ. সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
বলা হয়েছে, ‘ঈসা আ. না গেলে সেই সাহায্যকারী বিশ্ববাসীর নিকট আসবেন না।’ ঠিকই ঈসা আ.কে উঠিয়ে নেওয়ার পাঁচশত বছর পর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়াতে এসেছেন।
বলা হয়েছে, ‘তিনি এসে পাপ, ধার্মিকতা ও বিচার সম্বন্ধে জগত বাসীকে দোষী সাব্যস্ত করবেন।’ এটাও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন। যেমন খ্রিষ্টানরা তিন খোদা মানে, আল্লাহর সন্তান আছে বলে দাবী করে এবং আদম আ. এর অন্যায় তার সন্তানদের কাঁধে চাপিয়ে দেয়। অথচ এটা কোনো ন্যায় বিচার হতে পারে না যে, একজনের অন্যায় অন্যের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হবে।
আর খ্রিষ্টানরা ধার্মিকতা বলতে মনে করে যে, শুধু এ কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করা যে, ‘ঈসা মসীহ বিশ্ববাসীর পাপ মোচনের জন্য ক্রুশ বিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।’ তারা আরো বিশ্বাস করে যে, শরীয়াত মত চললে মুক্তি নেই, শরীয়ত মত চলনেওয়ালা ঈসা মসীহ থেকে আরো দূরে সরে যায়। হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ উভয় বিষয়ে খ্রিষ্টানদেরকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। ক্রুশ এর বিশ্বাসকে শিরক ও কুরআন বিরোধী বলেছেন এবং শুধুমাত্র শরীয়াত মানার মধ্যে মুক্তির ঘোষণা করেছেন।
বলা হয়েছে, ‘সেই সত্যের আত্মা মানুষকে পথ দেখিয়ে পূর্ণ সত্যে নিয়ে যাবেন।’ আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর কুরআন নাযিল করে দ্বীনকে পূর্ণতায় পৌঁছে দিয়েছেন। যা বিদায় হজ্জের সময় নাযিলকৃত আয়াতে বলা হয়েছে।
বলা হয়েছে, ‘তিনি নিজ থেকে কথা বলবেন না, যা শুনেন তাই বলবেন।’ আল কুরআনের সূরা নাজমে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘তিনি নিজের মন মত কথা বলেন না; বরং তিনি যা বলেন সবই ওহী।’
বলা হয়েছে, ‘তিনি আগামী ঘটনাও বিশ্বাবাসীকে জানাবেন।’ এর হাজারো প্রমাণ আছে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। যা অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত হয়েছে। যেমন কুরআন শরীফের সূরা রুম দেখুন।
বলা হয়েছে, ‘তিনি ঈসা আ. কে মহিমান্বিত করবেন।’ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল কুরআনের মাধ্যমে ঈসা আ. সম্পর্কে অনেক বাস্তব আলোচনা করেছেন। যার দ্বারা ঈসা আ. এর কদর বা মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রিয় পাঠক! ভেবে দেখুন উপরে উল্লেখিত গুণাবলী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া আর কার মধ্যে বিদ্যমান ছিলো? এসব ভবিষ্যদ্বাণী দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ই এসব কথার উদ্দেশ্য ছিলেন। সুতরাং খ্রিষ্টান জগত যে, এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলি পাক রূহের জন্য প্রমাণের চেষ্টা করে তা একেবারেই ভুল। এসব আলামত পাক রূহের মধ্যে পাওয়া যাওয়া তো দূরের কথা, আজ অবধি পাক রূহের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এখানে খ্রিষ্টানদের ত্রিত্ববাদ সম্পর্কে কিছু কথা বলা সময়ের দাবী । তাই আল কুরআন ও তাওরাত-ইঞ্জিল থেকে ত্রিত্ববাদ সম্পর্কে কিছু কথা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো :
১. আল্লাহ তাআলা ত্রিত্ববাদীদেরকে সর্তক করে দিয়ে বলছেন; ‘হে গ্রন্থধারীগণ তোমরা নিজেদের ধর্মে সীমালঙ্ঘন করিওনা এবং আল্লাহ সম্বন্ধে ভ্রান্ত উক্তি করিও না, আর তিন (খোদা) বলিও না। ক্ষান্ত হও, ইহা তোমাদের জন্য উত্তম হইবে, প্রকৃত প্রভুতো এক আল্লাহই…।’ (সূরা:৪ আয়াত:১৭১)
২. আল্লাহ তাআলা ত্রিত্বাবাদীদের ভয়ানক শাস্তির সংবাদ দিয়ে বলছেন: ‘নিশ্চয়ই তারা কাফের যারা বলে, আল্লাহ তিনের এক, অথচ এক উপাস্য ছাড়া কোনো উপাস্য নাই। যদি তারা স্বীয় উক্তি থেকে নিবৃত্ত না হয়, তবে তাদের মধ্যে যারা কুফরে অটল থাকবে, তাদের উপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি পতিত হবে। তারা আল্লাহর কাছে তাওবা করে না কেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে না কেন? আল্লাহ যে ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা:৫ আয়াত:৭৩:৭৪)
৩. আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: ‘দুই (বা ততোধিক) উপাস্য গ্রহণ করিও না, উপাস্য তো শুধু একজনই। সুতরাং তোমরা কেবল আমাকেই ভয় করিতে থাক।’ (সূরা:১৬ আয়াত:৫১)
তাওরাত-ইঞ্জিলে একত্ববাদ শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। ত্রিত্ববাদের প্রমাণ তাওরাত ইঞ্জিলে নেই। যীশু একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলেন। আর এ কথা সর্বজন বিদিত যে, পুরাতন নিয়মে ত্রিত্ববাদের লেশ মাত্র নেই। মূসা আ.ও ত্রিত্ববাদ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। আর ঈসা আ. তার শিষ্যদেরকে একত্ববাদই শিক্ষা দিয়ে গেছেন। নিম্নে এ সম্পর্কে মূসা ও ঈসা আ. এর উক্তি তুলে ধরা হলো।
মোশি (মূসা আ.) বলেন: ‘হে ই ইস্রায়িল শোন, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভূ একই সদাপ্রভূ, আর তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভূকে প্রেম করিবে।’ (দ্বিতীয় বিবরণ:৬:৪:৫)
ফরীশীদের একজন আলেম ঈসা আ. কে জিজ্ঞাসা করলেন, হুজুর মূসার শরীয়াতের মধ্যে সবচেয়ে বড় হুকুম কোনটা? যিশু কেবল মোশিরই পুনরুক্তি করে বললেন: প্রথমটি এই, হে ইস্রায়িল, শোন, আমাদের ঈশ্বর প্রভু একই প্রভু, আর তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে।’ (বাইবেল,মার্ক:১২:২৯:৩০)
ইঞ্জিল শরীফে বলা হয়েছে: ‘খোদা এক এবং তিনি ছাড়া আর কোনা খোদা নাই।’ (ইঞ্জিল শরীফ, মার্ক:১২:৩২)
ত্রিত্ববাদের উৎস: মূলত ঈসা আ. এর প্রস্থানের ৩২৫ বছর পর নেছীয়া সম্মেলনে এথ্যানেসিয়ান নামক একজন মিসরী যাজক ত্রিত্ববাদের জন্ম দেয়। সম্রাট কনষ্ট্যানটাইন উক্ত মতবাদ মেনে নেয়। ঐ সম্মেলনে আরো কতগুলো ধর্মমত গ্রন্থ বদ্ধ করা হয়। তখন হতেই এ ধর্মমতকে এথ্যানেসিয়ান ধর্মমত বলা হয়ে থাকে। (সত্যের সন্ধানে পৃ.২৭)
যাই হোক আল কুরআন ও তাওরাত-ইঞ্জিলের আলোকে এ কথা প্রমাণিত হলো যে, ত্রিত্ববাদ বলতে কোনো কিছু নাই। বরং মোশি (মূসা) যীশু (ঈসা) এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলে একত্ববাদই শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন। তাই মুসলমান হয়ে যাওয়া এবং একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়াই ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদের মুক্তির একমাত্র পথ। আমরা সমস্ত অমুসলিমদেরকে বিশেষ করে খ্রিষ্টান ভাইদেরকে বাস্তবতা মেনে নিয়ে মুসলমান হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আল্লাহ তাআলা সবাইকে সত্যকে বুঝার ও মানার তাওফীক দান করুন। আমীন।