গাজওয়াতুল হিন্দ : একটি তাত্ত্বিক ও তথ্যবহুল প্রবন্ধ – মুফতি তারেকুজ্জামান

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতিশ্রুত গাজওয়াতুল হিন্দ কি অতি সন্নিকটে?
আজ আমরা গাজওয়াতুল হিন্দ বা হিন্দুস্তানের মহাযুদ্ধ নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করব ইনশাআল্লাহ। এটা এমনই এক মর্যাদার্পূণ জিহাদ, যে ব্যাপারে হাদিসে সুস্পষ্ট ফজিলত ও দিক-নির্দেশনা রয়েছে।

গাজওয়াতুল হিন্দ বলতে ইমাম মাহদি এবং ইসা আ.-এর আগমনের কিছু আগে অথবা সমসাময়িক সময়ে এই পাক-ভারত-বাংলাদেশে মুসলিম ও কাফিরদের মধ্যকার সংগঠিত যুদ্ধকে বুঝায়। ‘গাজওয়া’ অর্থ যুদ্ধ, আর ‘হিন্দ’ বলতে এই উপমহাদেশ তথা পাক-ভারত-বাংলাদেশসহ শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানকে বুঝায়।

আমরা প্রথমত এসংক্রান্ত কয়েকটি প্রামাণ্য হাদিস উল্লেখ করব। এরপর এর প্রেক্ষাপট, সময় ও অবস্থান র্নিণয় সম্পর্কে কিছু আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

১ নং হাদিস :
حَدَّثَنَا أَبُو مُوسَى الزَّمِنُ، ثنا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سُلَيْمَانَ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ أَبَانٍ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ بُسْرِ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِي إِدْرِيسَ، عَنْ صُرَيْمٍ السَّكُونِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَتُقَاتِلُنَّ الْمُشْرِكِينَ، حَتَّى تُقَاتِلَ بَقِيَّتُكُمُ الدَّجَّالَ، عَلَى نَهْرٍ بِالأُرْدُنِّ، أَنْتُمْ شَرْقِيَّهُ وَهُمْ غَرْبِيَّهُ، وَمَا أَدْرِي، أَيْنَ الأُرْدُنُّ يَوْمَئِذٍ مِنَ الأَرْضِ.
অর্থ : সুরাইম রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিঃসন্দেহে তোমরা মুশরিকদের (মূর্তিপূজারীদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে; এমনকি এ যুদ্ধে তোমাদের অবশিষ্ট মুজাহিদরা জর্ডান নদীর তীরে দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এই যুদ্ধে তোমরা পূর্ব দিকে অবস্থান করবে আর দাজ্জালের অবস্থান হবে পশ্চিম দিকে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জানি না, সেদিন জর্ডান কোথায় অবস্থিত হবে?

সূত্র :
১. কাশফুল আসতার আন জাওয়াইদিল বাজ্জার : ৪/১৩৮, হা. নং ৩৩৮৭, প্র. মুআসাসাসতুর রিসালা, বৈরুত-
২. মাজমাউজ জাওয়ায়িদ : ৭/৩৪৮-৩৪৯, হা. নং ১২৫৪২, প্র. মাকতাবাতুল কুদসি, কায়রো-

মান :
এর সনদ বিশুদ্ধ। হাফিজ হাইসামি রহ. হাদিসটি উল্লেখ করে বলেন, এটি ইমাম তাবারানি রহ. ও ইমাম বাজ্জার রহ. বর্ণনা করেছেন। আর বাজ্জারে বর্ণিত হাদিসটির বর্ণনাকারী সবাই নির্ভরযোগ্য।
(দেখুন, মাজমাউজ জাওয়ায়িদ : ৭/৩৪৮-৩৪৯, হা. নং ১২৫৪২, প্র. মাকতাবাতুল কুদসি, কায়রো)

২ নং হাদিস :
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَعِيلَ بْنِ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَزِيدُ، قَالَ: أَنْبَأَنَا هُشَيْمٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا سَيَّارٌ أَبُو الْحَكَمِ، عَنْ جَبْرِ بْنِ عَبِيدَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: وَعَدَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزْوَةَ الْهِنْدِ، فَإِنْ أَدْرَكْتُهَا أُنْفِقْ فِيهَا نَفْسِي وَمَالِي، وَإِنْ قُتِلْتُ كُنْتُ أَفْضَلَ الشُّهَدَاءِ، وَإِنْ رَجَعْتُ فَأَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ الْمُحَرَّرُ.
অর্থ : হজরত আবু হুরাইরা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে হিন্দুস্তানের জিহাদ সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদি আমি সে জিহাদ পেয়ে যাই তাহলে আমি আমার জান-মাল সব কিছু তাতে ব্যয় করব। এতে যদি আমি শাহাদত বরণ করি তাহলে আমি হব সর্বশ্রেষ্ঠ শহিদ। আর যদি গাজি হয়ে ফিরে আসি তাহলে আমি হব (জাহান্নামের আগুন থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরাইরা।

সূত্র :
১. সুনানুন নাসায়ি : ৬/৪২, হা. নং ৩১৭৪, প্র. মাকতাবুল মাতবুআতিল ইসলামিয়্যা, হালব-
২. আস-সুনানুল কুবরা, বাইহাকি : ৯/২৯৭, হা. নং ১৮৫৯৯, প্র. দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত-
৩. মুসনাদু আহমাদ : ১২/২৮-২৯, হা. নং ৭১২৮, প্র. মুআসাসাসতুর রিসালা, বৈরূত-
৪. মুসতাদরাকুল হাকিম : ৩/৫৮৮, হা. নং ১৭৭৫/৬১৭৭, প্র. দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত-
৫. হিলইয়াতুল আওলিয়া : ৮/৩১৬, প্র. আস-সাআদা, মিসর-
৬. আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ : ১/৪০৯, হা. নং ১২৩৭, প্র. মাকতাবাতুত তাওহিদ, কায়রো-

মান :
এ বর্ণনাটির সনদ হাসান তথা উত্তম। কেননা, এর বর্ণনাকারীদের সবাই নির্ভরযোগ্য হলেও জাবর বিন আবিদা নামক একজন বর্ণনাকারীর ব্যাপারে সামান্য একটু বিতর্ক আছে। ইমাম ইবনে হিব্বান রহ. তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। হাফিজ জাহাবি রহ. দুর্বল রাবি বললেও হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. তার বিপরীতে তাকে মাকবুল বা গ্রহণীয় রাবি বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। (দেখুন, তাকরিবুত তাহজিব : ১/৩৩৭, জীবনী নং ৮৯২)

এছাড়াও এর সমর্থনে আরও কিছু হাদিস রয়েছে। যেমন ‘মুসনাদু আহমাদ’-এর ১৪/৪১৯ পৃষ্ঠার ৮৮২৩ নং হাদিস এবং ইমাম ইবনে আবি আসিম রহ. বিরচিত ‘আল জিহাদ’ গ্রন্থের ২৯১ নং হাদিস।

৩ নং হাদিস :
حَدَّثَنَا أَبُو النَّضْرِ، حَدَّثَنَا بَقِيَّةُ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ سَالِمٍ، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ الْوَلِيدِ الزُّبَيْدِيُّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْوَلِيدِ الزُّبَيْدِيِّ، عَنْ لُقْمَانَ بْنِ عَامِرٍ الْوُصَابِيِّ، عَنْ عَبْدِ الْأَعْلَى بْنِ عَدِيٍّ الْبَهْرَانِيِّ، عَنْ ثَوْبَانَ مَوْلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: عِصَابَتَانِ مِنْ أُمَّتِي أَحْرَزَهُمُ اللهُ مِنَ النَّارِ: عِصَابَةٌ تَغْزُو الْهِنْدَ، وَعِصَابَةٌ تَكُونُ مَعَ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ.
অর্থ : হজরত সাওবান রা. সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে হতে দুটি দলকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। একটি দল, যারা হিন্দুস্তানের যুদ্ধে শরিক হবে। আর দ্বিতীয় আরেকটি দল, যারা ইসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর সঙ্গে মিলে যুদ্ধ করবে।

সূত্র :
১. মুসনাদু আহমাদ : ৩৭/৮১, হা. নং ২২৩৯৬, প্র. মুআসাসাসতুর রিসালা, বৈরূত-
২. সুনানুন নাসায়ি : ৬/৪২, হা. নং ৩১৭৫, প্র. মাকতাবুল মাতবুআতিল ইসলামিয়্যা, হালব-
৩. আস-সুনানুল কুবরা, বাইহাকি : ৯/২৯৭, হা. নং ১৮৬০০, প্র. দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত-
৪. আল-মুজামুল আওসাত : ৭/২৩, হা. নং ৬৭৪১ প্র. দারুল হারামাইন, কায়রো-
৫. আত তারিখুল কাবির : ৬/৭২-৭৩, জীবনী নং ১৭৪৭, প্র. দায়িরাতুল মাআরিফিল উসমানিয়্যা, হায়দারাবাদ-
৬. আল কামিল, ইবনে আদি : ২/৪০৮, জীবনী নং ৩৫১, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত-

মান :
এ হাদিসটি হাসান। এর বর্ণনাকারীদের মধ্যে বাকিয়্যা বিন অলিদ নামক একজন মুদাল্লিস বর্ণনাকারী আছে। তবে বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি (عن) এর পরিবর্তে (حدثنا) ব্যবহার করায় এখানে তাদলিসজনিত কোনো দুর্বলতা সৃষ্টি হয়নি। আর আবু বকর বিন অলিদ মাজহুলুল হাল হলেও নির্ভরযোগ্য রাবি আব্দুল্লাহ বিন সালিম আশআরি রহ.-এর মুতাবাআত (অনুরূপ বর্ণনা) থাকায় হাদিসটি হাসান হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকল না।

৪ নং হাদিস :
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ إِسْحَاقَ، أَخْبَرَنَا الْبَرَاءُ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: حَدَّثَنِي خَلِيلِي الصَّادِقُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ: يَكُونُ فِي هَذِهِ الْأُمَّةِ بَعْثٌ إِلَى السِّنْدِ وَالْهِنْدِ، فَإِنْ أَنَا أَدْرَكْتُهُ فَاسْتُشْهِدْتُ فَذَاكَ، وَإِنْ أَنَا فَذَكَرَ كَلِمَةً رَجَعْتُ وَأَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ الْمُحَرَّرُ قَدْ أَعْتَقَنِي مِنَ النَّارِ. 
অর্থ : হজরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার সত্যবাদী বন্ধু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বর্ণনা করত বলেছেন, এ উম্মতের মধ্যে সিন্ধু ও হিন্দুস্তানের দিকে একটি যুদ্ধাভিযান পরিচালিত হবে। (আবু হুরাইরা রা. বলেন,) আমি যদি সে যুদ্ধ পেয়ে যাই, অতঃপর যুদ্ধ করতে করতে শহিদ হয়ে যাই তাহলে তো আমি মহাসৌভাগ্যবান। আর যদি আমি গাজি হযে ফিরে আসি তাহলে আমি হব মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরাইরা। আল্লাহ আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তিদান করেছেন।

সূত্র :
মুসনাদু আহমাদ : ১৪/৪১৯, হা. নং ৭১২৮, প্র. মুআসাসাসতুর রিসালা, বৈরূত-

মান :
এ বর্ণনাটির সনদ জইফ। কেননা, এর বর্ণনাকারীদের মধ্যে বারা বিন আব্দুল্লাহ গানাবি নামক একজন দুর্বল বর্ণনাকারী আছে। এছাড়াও এতে হাসান বসরি রহ. এবং আবু হুরাইরা রা.-এর মাঝে সূত্র বিচ্ছিন্নতার অভিযোগ রয়েছে। যেহেতু অধিকাংশ মুহাদ্দিসদের মতানুসারে হাসান বসরি রহ. আবু হুরাইরা রা. থেকে সরাসরি কোনো হাদিস শোনেননি।

৫ নং হাদিস :
حَدَّثَنَا أَبُو الْجَوْزَاءِ أَحْمَدُ بْنُ عُثْمَانَ – وَكَانَ مِنْ نُسَّاكِ أَهْلِ الْبَصْرَةِ – قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الصَّمَدِ قَالَ: حَدَّثَنَا هَاشِمُ بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ كِنَانَةَ بْنِ نُبَيْهٍ مَوْلَى صَفِيَّةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: وَعَدَنَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ غَزْوَةَ الْهِنْدِ، فَإِنْ أُدْرِكْهَا أُنْفِقْ فِيهَا نَفْسِي وَمَالِي، فَإِنْ قُتِلْتُ كُنْتُ كَأَفْضَلِ الشُّهَدَاءِ، وَإِنْ رَجَعْتُ فَأَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ الْمُحَرَّرُ. 
অর্থ : হজরত আবু হুরাইরা রা. বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে হিন্দুস্তানের জিহাদ সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমি যদি সে জিহাদ পেয়ে যাই তাহলে তাতে আমি আমার জান-মাল সব কিছু ব্যয় করব। এতে যদি আমি শাহাদত বরণ করি তাহলে আমি হব সর্বশ্রেষ্ঠ শহিদের ন্যায়। আর যদি গাজি হয়ে ফিরে আসি তাহলে আমি হব (জাহান্নামের আগুন থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরাইরা।

সূত্র :
আল-জিহাদ, ইবনু আবি আসিম : ২/৬৬৮, হা. নং ২৯১, প্র. মাকতাবাতুল উলুম ওয়াল হিকাম, মদিনা-

মান :
এ বর্ণনাটি জইফ। কেননা, এর বর্ণনাকারীদের মধ্যে হাশিম বিন সাইদ নামক একজন দুর্বল বর্ণনাকারী রয়েছে। অবশ্য কিনানা বিন নুবাইহকে ইমাম আজদি রহ. জইফ বললেও হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. তা প্রত্যাখ্যান করে তাকে মাকবুল বা গ্রহণীয় রাবি বলে অভিহিত করেছেন।

৬ নং হাদিস : 
حَدَّثَنَا بَقِيَّةُ بْنُ الْوَلِيدِ، عَنْ صَفْوَانَ، عَنْ بَعْضِ الْمَشْيَخَةِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَذَكَرَ الْهِنْدَ، فَقَالَ: لَيَغْزُوَنَّ الْهِنْدَ لَكُمْ جَيْشٌ، يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ حَتَّى يَأْتُوا بِمُلُوكِهِمْ مُغَلَّلِينَ بِالسَّلَاسِلِ، يَغْفِرُ اللَّهُ ذُنُوبَهُمْ، فَيَنْصَرِفُونَ حِينَ يَنْصَرِفُونَ فَيَجِدُونَ ابْنَ مَرْيَمَ بِالشَّامِ. قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: إِنْ أَنَا أَدْرَكْتُ تِلْكَ الْغَزْوَةَ بِعْتُ كُلَّ طَارِفٍ لِي وَتَالِدٍ وَغَزَوْتُهَا، فَإِذَا فَتْحَ اللَّهُ عَلَيْنَا وَانْصَرَفْنَا فَأَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ الْمُحَرِّرُ، يَقْدَمُ الشَّامَ فَيَجِدُ فِيهَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ، فَلَأَحْرِصَنَّ أَنْ أَدْنُوَ مِنْهُ فَأُخْبِرُهُ أَنِّي قَدْ صَحِبْتُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: فَتَبَسَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَضَحِكَ، ثُمَّ قَالَ: هَيْهَاتَ هَيْهَاتَ.
অর্থ : আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিন্দুস্তানের যুদ্ধের আলোচনার প্রাক্কালে বলেছেন, অবশ্যই তোমাদের একটি দল হিন্দুস্থানের সাথে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ সেই দলের যোদ্ধাদের সফলতা দান করবেন এবং তারা হিন্দুস্তানের রাষ্ট্রপ্রধানদের শিকল/বেড়ি দিয়ে টেনে আনবে। আল্লাহ তাআলা সেই দলের যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর মুসলিমরা যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে ইসা ইবনে মারইয়াম আ.-কে সিরিয়ায় পেয়ে যাবে। হজরত আবু হুরাইরা রাযি. বলেন, আমি যদি গাজওয়াতুল হিন্দে অংশগ্রহণের সু্যোগ পাই তাহলে আমি আমার নতুন পুরাতন সব সম্পদ বিক্রি করে দেবো এবং এতে অংশগ্রহণ করব। এরপর যখন আল্লাহ তাআলা আমাদের বিজয় দান করবেন এবং আমরা যুদ্ধ থেকে ফিরে আসব তখন আমি হব (জাহান্নামের আগুন হতে) মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরাইরা, যে সিরিয়ায় গিয়ে ইসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর সাথে মিলিত হবে। হে আল্লাহর রাসুল, আমার খুব আকাঙ্ক্ষা যে, আমি ইসা আ.-এর নিকটবর্তী হয়ে তাঁকে বলব যে, আমি আপনার সংশ্রবপ্রাপ্ত একজন সাহাবি। তিনি বলেন, এতে রাসুলুল্লাহ সা. মুচকি মুচকি হাসতে লাগলেন এবং বললেন, সে (যুদ্ধ) তো অনেক দেরি! অনেক দেরি!!

সূত্র :
আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ : ১/৪০৯, হা. নং ১২৩৬, প্র. মাকতাবাতুত তাওহিদ, কায়রো-

মান :
এ সনদটি জইফ। কেননা, এর বর্ণনাকারীদের মধ্যে বাকিয়্যা বিন অলিদ নামক একজন মুদাল্লিস বর্ণনাকারী আছে। এছাড়াও আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণনাকারী এখানে অজ্ঞাত।

৭ নং হাদিস :
حَدَّثَنَا الْحَكَمُ بْنُ نَافِعٍ، عَمَّنْ حَدَّثَهُ عَنْ كَعْبٍ، قَالَ: يَبْعَثُ مَلِكٌ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ جَيْشًا إِلَى الْهِنْدِ فَيَفْتَحُهَا، فَيَطَئُوا أَرْضَ الْهِنْدِ، وَيَأْخُذُوا كُنُوزَهَا، فَيُصَيِّرُهُ ذَلِكَ الْمَلِكُ حِلْيَةً لَبَيْتِ الْمَقْدِسِ، وَيُقْدِمُ عَلَيْهِ ذَلِكَ الْجَيْشُ بِمُلُوكِ الْهِنْدِ مُغَلَّلِينَ، وَيُفْتَحُ لَهُ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، وَيَكُونُ مَقَامُهُمْ فِي الْهِنْدِ إِلَى خُرُوجِ الدَّجَّالِ.
অর্থ : হজরত কাব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জেরুজালেমের একজন বাদশাহ হিন্দুস্তানের দিকে একটি সৈন্যদল পাঠাবেন। সৈন্যদল হিন্দুস্তানের ভূমি জয় করে তা পদানত করবে। এর অর্থ-ভাণ্ডার দখল করবে। তারপর বাদশাহ এসব ধনদৌলত বাইতুল মুকাদ্দাসে সাজিয়ে রাখবেন। সৈন্যদলটি হিন্দুস্তানের রাজাদের শিকল দিয়ে বেঁধে বন্দি করে তাঁর নিকট উপস্থিত করবে। প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সকল এলাকায় তাঁর বিজয়ার্জন হবে। দাজ্জালের আবির্ভাব পর্যন্ত তাঁরা হিন্দুস্তানেই অবস্থান করবেন।

সূত্র :
আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ : ১/৪০৯, হা. নং ১২৩৫, প্র. মাকতাবাতুত তাওহিদ, কায়রো-

মান :
এটার সনদ জইফ। কেননা, কাব রহ. থেকে বর্ণনাকারীর নাম এখানে অস্পষ্ট। আর এটা ‘মাকতু’ তথা তাবিয়ি বর্ণিত একটি হাদিস।

৮ নং হাদিস :
حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، عَنْ جَرَّاحٍ، عَنْ أَرْطَاةَ، قَالَ: عَلَى يَدَيْ ذَلِكَ الْخَلِيفَةِ الْيَمَانِيِّ الَّذِي تُفْتَحُ الْقُسْطَنْطِينِيَّةُ وَرُومِيَّةُ عَلَى يَدَيْهِ، يَخْرُجُ الدَّجَّالُ وَفِي زَمَانِهِ يَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ، عَلَى يَدَيْهِ تَكُونُ غَزْوَةُ الْهِنْدِ، وَهُوَ مِنْ بَنِي هَاشِمٍ، غَزْوَةُ الْهِنْدِ الَّتِي قَالَ فِيهَا أَبُو هُرَيْرَةَ. 
অর্থ : হজরত আরতাত রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ইয়ামানি খলিফার নেতৃত্বে ইসতামবুল ও রোম (ইউরোপ) বিজয় হবে, তাঁর সময়েই দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করবে, তাঁর যুগেই ইসা ইবনে মারইয়াম আ. অবতরণ করবেন এবং তাঁর নেতৃত্বেই হিন্দুস্তানের যুদ্ধ সংঘটিত হবে। তিনি হবেন হাশিমি বংশের লোক। গাজওয়াতুল হিন্দ বলতে ঐ যুদ্ধ উদ্দেশ্য, যে ব্যাপারে আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেছেন।

সূত্র :
আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ : ১/৪১০, হা. নং ১২৩৮, প্র. মাকতাবাতুত তাওহিদ, কায়রো-

মান :
এটার সনদ জইফ। কেননা, এতে অলিদ বিন মুসলিম নামক একজন মুদাল্লিস বর্ণনাকারী আছে, যে হাদিসটি عن দ্বারা বর্ণনা করেছে। আর এটা ‘মাকতু’ তথা তাবিয়ি বর্ণিত একটি হাদিস।

গাজওয়াতুল হিন্দের হাদিসগুলোর সম্মিলিত মান :
উপরিউক্ত হাদিসগুলোর কিছু সহিহ, কিছু হাসান এবং কিছু জইফ। তবে এ জইফগুলো একটিও মারাত্মক নয়; বরং সবগুলোই সহনীয় পর্যায়ের। সবগুলো সনদ একসাথে করলে সম্মিলিতভাবে গাজওয়াতুল হিন্দের হাদিস সহিহ (বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত) বা কমপক্ষে হাসান (উত্তম সূত্রে বর্ণিত) পর্যায়ের বলে সাব্যস্ত হয়।
এজন্যই শাইখ আলবানি রহ. সুনানে নাসায়িতে বর্ণিত গাজওয়াতুল হিন্দের হাদিসটিকে সহিহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। (দেখুন, সুনানুন নাসায়ি : ৬/৪২, হা. নং ৩১৭৫, প্র. মাকতাবুল মাতবুআতিল ইসলামিয়্যা, হালব) আর সিলসিলাতুস সহিহা-তে এর সনদকে জাইয়িদ বা হাসান বলে অভিহিত করেছেন। (দেখুন : সিলসিলাতুল আহাহাদিসিস সহিহা : ৪/৫৭০, হা. নং ১৯৩৪, প্র. মাকতাবাতুল মাআরিফ, রিয়াদ) এছাড়াও শাইখ শুআইব আরনাওত রহ. মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত উক্ত হাদিসকে হাসান বলে অভিহিত করেছেন। (দেখুন, মুসনাদু আহমাদ : ৩৭/৮১, হা. নং ২২৩৯৬, প্র. মুআসাসাসতুর রিসালা, বৈরূত)

গাজওয়াতুল হিন্দের হাদিসগুলোর সারমর্ম :
এ মর্মে বর্ণিত হাদিসগুলো থেকে আমরা যে বিষয়গুলো জানতে পারি, তা হলো-
১. এটা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা. কর্তৃক প্রতিশ্রুত একটি যুদ্ধের ভবিষতবাণী, যা শেষ জমানায় ঘটবে। 
২. যুদ্ধটি হবে হিন্দুস্তানে, যা পাক-ভারত-বাংলাদেশসহ শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানকে বুঝায়।
৩. যুদ্ধটি হবে হিন্দুস্তানের মুশরিক তথা মূর্তিপূজারী হিন্দুদের সাথে।
৪. এ যুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে নিজের জান-মাল সব কিছু ব্যয় করে অংশগ্রহণ করা উচিত; যেমনটি আবু হুরাইরা রা. বলেছেন; এমনকি তিনি এ যুদ্ধ শেষ জমানায় হবে জেনেও তাতে শরিক হয়ে ইসা আ.-এর সাথে সাক্ষাতের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেছিলেন।
৫. এ যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় অর্জন হবে এবং মূর্তিপূজারী রাষ্ট্রপ্রধানদের হাতে পায়ে শিকল পরিয়ে বন্দি করে নিয়ে আসা হবে।
৬. গাজওয়াতুল হিন্দে অংশগ্রহণকারী মুজাহিদদেরকে ইসা আ.-এর সাথে অংশগ্রহণকারী মুজাহিদদের সাথে তুলনা করা হয়েছে এবং উভয় দলের একই মর্যদার কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
৭. এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুজাহিদদেরকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন।
৮. এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুজাহিদদেরকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে মুক্ত ঘোষণা করেছেন।
৯. এ যুদ্ধের শহিদগণ হবেন শ্রেষ্ঠ শহিদদের অন্তর্গত।
১০. এ যুদ্ধ রাসুল সা.-এর যুগের অনেক পরে দাজ্জাল আবির্ভাবের পূর্বে শেষ জমানায় সংঘটিত হবে।
১১. এ যুদ্ধ জেরুজালেম থেকে ইমাম মাহদির নেতৃ্ত্বে পরিচালিত হবে।
১২. এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুজাহিদদের মধ্য হতে যারা গাজি হয়ে ফিরবেন তারা ইসা আ.-এর সাথে দাজ্জালের বিরূদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধে শরিক হবেন।

এ যুদ্ধ কোথায় এবং কবে হবে?
‘আল-হিন্দ’ দ্বারা ভৌগলিকভাবে দুটি স্থানকে নির্দেশ করে। এক : ইরাকের বসরা নগরী; যেমন শাইখ মাশহুর হাসান স্বীয় ‘আল ইরাক ফি আহাদিসা ওয়া আসারিল ফিতান ওয়াল মালাহিম’ গ্রন্থে বলেন, ‘হিন্দ’ বলে কখনো কখনো ইরাকের বসরা নগরীকেও বুঝানো হয়ে থাকে। দুই : ভারত উপমহাদেশ, যা ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা নিয়ে গঠিত। হাদীসে বর্ণিত ‘আল হিন্দ’ বলতে সকল উলামায়ে কেরাম এ দ্বিতীয় অর্থ তথা ভারত উপমহাদেশই উদ্দেশ্য নিয়েছেন। তাই ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ আমাদের এ ভুখণ্ডেই সংঘটিত হবে। আর হাদিসের ভাষ্যানুসারে এর প্রতিপক্ষ দলটি হবে হিন্দুরা।

এ যুদ্ধ পূর্বে হয়ে গেছে নাকি অদূর ভবিষ্যতে হবে এ নিয়ে উলামায়ে কিরামের মাঝে কিছুটা মতানৈক্য পাওয়া যায়। কতিপয় উলামায়ে কিরামের মতে এ যুদ্ধ বনি উমাইয়ার শাসনামালে মুহাম্মাদ বিন কাসিম রহ.-এর ভারত বিজয়ের মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে গেছে। কারও মতে সুলতান মাহমুদ গজনবি রহ.-এর ভারত অভিযানের দ্বারাই এ যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু গাজওয়াতুল হিন্দের সবগুলো হাদিস সামনে রাখলে প্রতিভাত হয় যে, এ যুদ্ধ এখনও হয়নি; বরং ইসা আ.-এর আগমনের কিছু কাল পূর্বে ইমাম মাহদির নেতৃত্বে এটা সংঘটিত হবে এবং এ যুদ্ধের গাজিরাই সিরিয়ায় গিয়ে ইসা আ.-এর সাথে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।

শাইখ হামুদ তুওয়াইজিরি বলেন :
وما ذكر في حديث أبي هريرة رضي الله عنه الذي رواه نعيم بن حماد من غزو الهند؛ فهو لم يقع إلى الآن، وسيقع عند نزول عيسى ابن مريم عليهما الصلاة والسلام إن صح الحديث بذلك.
অর্থ : নুআইম বিন হাম্মাদ কর্তৃক বর্ণিত আবু হুরাইরা রা.-এর হাদিসে যে গাজওয়াতুল হিন্দের কথা এসেছে তা এখনও সংঘটিত হয়নি। এ হাদিসটি সহিহ হলে সত্বরই তা ইসা আ.-এর অবতরণের সময়কালে সংঘটিত হবে।

সূত্র :
ইতহাফুল জামাআহ : ১/৩৬৬, গাজওয়াতুল হিন্দসংক্রান্ত অধ্যায়, প্র. দারু সামিয়ি, রিয়াদ-

শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ বলেন :
الذي يبدو من ظاهر حديث ثوبان وحديث أبي هريرة ـ إن صح ـ أن غزوة الهند المقصودة ستكون في آخر الزمان ، في زمن قرب نزول عيسى بن مريم عليهما السلام ، وليس في الزمن القريب الذي وقع في عهد معاوية بن أبي سفيان رضي الله عنه 
অর্থ : সাওবান রা. ও আবু হুরাইরা রা. এর হাদিস সহিহ হয়ে থাকলে এর স্পষ্ট ভাষ্য থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, কাঙ্খিত গাজওয়াতুল হিন্দ শেষ জমানায় ইসা আ.-এর অবতরণের নিকটবর্তী সময়ে সংঘটিত হবে। মুআবিয়া রা.-এর যুগের কাছাকাছি সময়ে যে সকল যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, সেগুলো নয়।

সূত্র :
ইসলাম সুওয়াল ও জাওয়াব : প্রশ্নোত্তর নং ১৪৫৬৩৬-

বর্তমান পরিস্থিতি :
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভবিষ্যতবাণী অনুযায়ী খোরাসান (বর্তমান আফগানিস্থান) থেকে কালিমাখচিত কালো পতাকাধারীদের উত্থান এবং তাদের কাশ্মীর পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া, পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে ভারতের কাশ্মীর সীমান্তে সাত লক্ষ সেনা মোতায়েন, পাক-ভারত-বাংলাদেশের হকপন্থী দলগুলোর সুদৃঢ় অবস্থান, পানি নিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সাথে ভারতের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং মুসলিমদের নির্যাতন নিয়ে ভারতের ভেতরে মুসলিমদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ, সেভেন সিস্টারস বা ভারতের সাতটি অঙ্গরাজ্যের স্বাধীনতার দাবি নিঃসন্দেহে ভারত বিভক্তি এবং আশু সে মহাযুদ্ধেরই ইঙ্গিত বহন করে।

বর্তমানে এই উপমহাদেশের মূর্তিপূজারী ভূখণ্ডের মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডের ওপর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের অব্যাহত প্রচেষ্টা দেখলে বুঝা যায় যে, এটি খুব সত্বরই চূড়ান্ত সংঘাতময়রূপ ধারণ করবে এবং এখানকার ইসলামকে টিকিয়ে রাখতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভবিষ্যতবাণী অনুসারে উম্মতের একটি দলকে এদিকে অগ্রসর হতে হবে। এটি ঘটবে সেই সমসাময়িক সময়ে, যখন সমগ্র দুনিয়াতে ইসলামের ক্রান্তিলগ্নে বৈশ্বিক শাসনব্যশাসনব্যবস্থা খিলাফতের আদলে সাজাতে আল্লাহ তাআলা ইমাম মাহদিকে প্রেরণ করবেন, যার খিলাফতের সপ্তম বছরে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং দাজ্জালের সাথে মহাযুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে ইসা আ.-এর আগমন ঘটবে। গাজওয়াতুল হিন্দের সময় অবশ্যই পাক-ভারত-বাংলাদেশের মুসলিম নামধারী মুনাফিকরা আলাদা হয়ে যাবে। তারা হয়তো কাফিরদের পক্ষে যোগ দিবে অথবা পালিয়ে বেড়াবে। এই ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মুসলিমরা জয়ী হবে এবং তারা ফিলিস্তিনের বাইতুল মুকাদ্দাসে গিয়ে ইসা আ.-এর সাথে মিলিত হবে।

সারকথা :
গাজওয়াতুল হিন্দের প্রকৃত সময় এবং অবস্থা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন। আমরা কেবল হাদিসের আলোকে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ঘটনা সম্পর্কে নিজেদেরকে সচেতন এবং প্রস্তুত করতে পারি। সার্বিক বিচারে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, এ যুদ্ধ খুবই সন্নিকটে। কেননা, এ যুদ্ধের সাথে ইমাম মাহদি ও ইসা আ.-এর সম্পর্ক রয়েছে। আর আমার পূর্বের দুটি পোস্টে এ বিষয়ে তথ্যবহুল আলোচনা করে দেখিয়েছি যে, তাঁদের আগমন খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে ঘটতে যাচ্ছে বলে আমাদের ধারণা। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল যারা, তারা ভালো করেই জানেন যে, বর্তমানে তাগুতি শক্তিগুলো আসন্ন মহাযুদ্ধের জন্য কী পরিমান প্রস্তুতি গ্রহন করছে! অথচ আমরা মুসলিমরাই একমাত্র জাতি, যারা কিনা আজও এ সম্পর্কে গাফিল ও চরম উদাসীন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এত করে সতর্ক করে দিয়ে গেছেন, যার কারণে তাগুতরা পর্যন্ত সতর্ক হয়ে গেছে, আর আমরা হতভাগার দল আজও আমাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িত।

“CIA terrified of Ghazwa e Hind” (ইংরেজি) শিরোনামে এই ভিডিওটি দেখলে বুঝতে পারবেন, তারা কতটা সচেতন আর আমরা কতটা গাফিল হয়ে আছি!
http://www.youtube.com/watch?v=RqNbqfai9aE

হে আমার প্রিয় ভাই, ঘুম থেকে এবার জাগো। একবার চেয়ে দেখো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভবিষ্যতবাণী ও বর্তমানের ভয়ংকর পরিস্থিতি। এখনই যদি সতর্ক না হও তাহলে ঘুম থেকে জেগে দেখবে তোমরা শিয়রে অস্ত্র হাতে তাগুতের বাহিনী দণ্ডায়মান। হে আমার দ্বীনের বন্ধু, এখনই সময় সজাগ হওয়ার, প্রস্তুতি নেওয়ার। অসময়ে তোমার দৌঁড়ঝাপ তোমার কোনো কাজে আসবে না। সত্যের বাহিনী তোমার অপেক্ষায় আছে। সাড়া দাও তাদের ডাকে; নইলে আর সময় পাবে না। হে আল্লাহ, তুমি মুসলিমবিশ্বের এ বিনাশী নিদ টুটে দাও। তাদের অন্তর্চক্ষু খুলে দাও। আশু বিপদ অনুধাবনের শক্তি দাও। আল্লাহ, আমাদের রক্ষা করো, হিম্মত দাও, তাওফিক দাও।