হজ্জ্বঃ হাদীস ও আছারের আলোকে – ফাতাওয়া বিভাগ, মারকাযুদ্ দাওয়াহ আলইসলামিয়া – ঢাকা (১ম পর্ব)

হজ্ব তিন প্রকার : তামাত্তু, কিরান ও ইফরাদ।

মক্কার বাইরে অবস্থানকারী ব্যক্তিরা উপরোক্ত যেকোনো প্রকার হজ্ব করতে পারেন। এতে তাদের ফরয হজ্ব আদায় হবে। তবে উপরোক্ত তিন প্রকার হজ্বের মধ্যে সর্বোত্তম হল হজ্বে কিরান, এরপর হজ্বে তামাত্তু, এরপর হজ্বে ইফরাদ। নিচে প্রতিটির পরিচয় ও জরুরি মাসাইল উল্লেখ করা হল।

এক. কিরান

মীকাত অতিক্রমের পূর্বে উমরা ও হজ্বের ইহরাম বেঁধে একই ইহরামে উমরাহ ও হজ্ব উভয়টি আদায় করা। প্রথমে মক্কা মুকাররামা পৌঁছে উমরা করা অতঃপর এই ইহরাম দ্বারা হজ্বের সময়ে হজ্ব করা এবং কুরবানী দেওয়া।

দুই. তামাত্তু হজ্ব

হজ্বের মাসসমূহে মীকাত থেকে শুধু উমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা এবং মক্কা মুকাররামায় পৌঁছে উমরার কাজ সম্পন্ন করার পর চুল কেটে বা চেঁছে ইহরামমুক্ত হয়ে যাওয়া। অতঃপর এই সফরেই হজ্বের ইহরাম বেঁধে হজ্বের নির্ধারিত কাজগুলো সম্পন্ন করা এবং কুরবানী দেওয়া।

তিন. ইফরাদ

মীকাত থেকে শুধু হজ্বের নিয়তে ইহরাম বাঁধা এবং মক্কা মুকাররামা পৌঁছে উমরা না করা বরং (সুন্নত তাওয়াফ) তাওয়াফে কুদূম করে ইহরাম অবস্থায় হজ্বের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা। অতঃপর নির্ধারিত সময়ে হজ্বের আমলগুলো সম্পন্ন করা। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, বিদায় হজ্বে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমাদের মধ্যে কেউ (তামাত্তুর নিয়তে প্রথমে) উমরার জন্য তালবিয়া পাঠ করলেন, কেউ (কিরানের নিয়তে) হজ্ব ও উমরার জন্য তালবিয়া পাঠ করলেন এবং কেউ (ইফরাদের নিয়তে) শুধু হজ্বের ইহরাম গ্রহণ করলেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্বে ইফরাদের জন্য তালবিয়া পাঠ করলেন। যারা শুধু হজ্ব বা একত্রে হজ্ব-উমরার (কিরানের) ইহরাম গ্রহণ করেছিলেন তারা ১০ যিলহজ্বের পূর্ব পর্যন্ত- ইহরাম থেকে মুক্ত হননি।-সহীহ বুখারী ১/২১২

ইহরামের নিয়ম

ইহরামের মূল বিষয় হচ্ছে হজ্ব বা উমরার নিয়তে তালবিয়া পাঠ। এর দ্বারাই ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যায়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাথায় সিঁথি করা অবস্থায় ইহরামের তালবিয়া পাঠ করতে দেখেছি। তিনি বলেছেন, এই বাক্যগুলোর অতিরিক্ত কিছু বলেননি।-সহীহ মুসলিম ১/৩৭৬

তবে ইহরাম গ্রহণের সুন্নত তরীকা হল মোচ, নখ এবং শরীরের পরিষ্কারযোগ্য লোম চেঁছে বা কেটে পরিষ্কার করবে। উত্তমরূপে গোসল করবে, গোসল সম্ভব না হলে ওযু করবে। পুরুষগণ দু’টি নতুন বা ধৌত সাদা চাদর নিবে। একটি লুঙ্গির মতো করে পরবে। অপরটি চাদর হিসাবে ব্যবহার করবে। পায়ের পাতার উপরের অংশ খোলা থাকে এমন চপ্পল বা স্যাণ্ডেল পরবে। মহিলাগণ স্বাভাবিক কাপড় পরবে। তাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় জুতা-মোজা পরার অবকাশ রয়েছে। ইহরাম বাঁধার আগে খালি শরীরে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব। শরীরের আতর বা ঘ্রাণ ইহরাম গ্রহণের পর বাকি থাকলেও অসুবিধা নেই। তবে ইহরামের কাপড়ে আতর বা সুগন্ধি লাগাবে না। কেননা ইহরামের কাপড়ে এমন আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষেধ, যার ঘ্রাণ ইহরামের পরও বাকি থাকে। মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে ইহরাম বাঁধার আগে দুই রাকাত নফল নামায পড়বে। অতঃপর যে হজ্ব আদায়ের ইচ্ছা সে অনুযায়ী নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করবে।নিচে ইহরামের প্রতিটি বিষয় দলীলসহ আলোচনা করা হল

১. মোচ, নখ এবং শরীরের পরিষ্কারযোগ্য লোম চেঁছে বা কেটে পরিষ্কার করা। যে ব্যক্তি হজ্বে যেতে চায় তার শরীরের ক্ষৌর কার্য সম্পর্কে বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত আতা রাহ.কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, এর অনুমতি আছে, এতে কোনো অসুবিধা নেই।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৯৯৮

২. ইহরামের উদ্দেশ্যে উত্তমরূপে গোসল করা। হযরত যায়েদ বিন ছাবেত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইহরামের জন্য পরিহিত পোশাক খুলতে এবং গোসল করতে দেখেছেন।-জামে তিরমিযী ১/১০২ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, কোনো ব্যক্তি যখন ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা করবে তখন তার জন্য গোসল করা সুন্নত।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৮৪৭ গোসল সম্ভব না হলে ওযু করে নেওয়া। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি উমরার জন্য অযু করলেন, গোসল করলেন না।- মাসআলা : ঋতুমতী মহিলার জন্য ইহরামের আগে গোসল করা মুস্তাহাব।-গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৬৯ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো নারী হায়েয বা নেফাস অবস্থায় মীকাতে পৌঁছলে গোসল করবে এবং ইহরাম গ্রহণ করবে। অতঃপর হজ্বের যাবতীয় কাজ করতে থাকবে। শুধু বাইতুল্লাহর তাওয়াফ ব্যতীত।-সুনানে আবু দাউদ ১/২৪৩

৩. পুরুষদের দু’টি সাদা চাদর প্রয়োজন হবে, যা নতুনও হতে পারে কিংবা ধোয়াও হতে পারে। একটি লুঙ্গির মতো করে এবং অপরটি চাদর হিসাবে পরিধান করবে। কালো রংয়ের কিংবা পুরুষের জন্য অনুমোদিত এমন যেকোনো রংয়ের কাপড় পরিধান করাও জায়েয। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ চুল আঁচড়ালেন, তেল লাগালেন এবং লুঙ্গি ও চাদর পরিধান করে মদীনা থেকে হজ্বের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। তিনি জাফরানযুক্ত ব্যতীত অন্য কোনো চাদর ও লুঙ্গি পরতে নিষেধ করেননি।-সহীহ বুখারী ১/২০৯

৪. পায়ের পাতার উপরের উঁচু অংশ খোলা থাকে এমন চপ্পল বা স্যান্ডেল পরা যাবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা লুঙ্গি, চাদর ও চপ্পল পরে ইহরাম গ্রহণ কর। যদি চপ্পল না থাকে তবে চামড়ার মোজা পায়ের গীরার নিচ পর্যন- কেটে তা ব্যবহার করতে পারবে।-মুসনাদে আহমদ হাদীস : ৪৮৮১

৫. মহিলাগণ স্বাভাবিক পোষাক পরবে। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, মাসআলা : মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় নিজ অভিরুচি মাফিক পোষাক পরিধান করতে পারবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৪৩ মাসআলা : মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় জুতা-মোজা ব্যবহার করতে পারবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. মহিলাদেরকে ইহরাম অবস্থায় চামড়ার মোজা এবং পাজামা পরার অনুমতি দিতেন। তিনি বলেন, ছফিয়্যা রা. চামড়ার মোজা পরিধান করতেন, যা ছিল তাঁর হাটু পর্যন-।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৯৬৯ আরো দেখুন : হাদীস : ১৫৯৬৫ মহিলাগণ হাত মোজা ব্যবহার করতে পারবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় হাত মোজা এবং পাজামা পরিধান করতে পারবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৪৪০ বিখ্যাত তাবেয়ী কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ রাহ. বলেন, ইহরাম গ্রহণকারিনী হাত-মোজা ও পাজামা পরিধান করবে এবং পূর্ণ মুখমণ্ডল আবৃত রাখবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৯৬৮ তবে হাত মোজার বিষয়ে দুই ধরনের দলীল বিদ্যমান থাকায় কেউ কেউ তা পরিধান না করা উত্তম বলেছেন।

৬. ইহরাম গ্রহণের আগে খালি শরীরে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস-াহাব। শরীরের আতর ও ঘ্রাণ যদি ইহরাম বাঁধার পর অবশিষ্ট থাকে তবুও কোনো অসুবিধা নেই। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম গ্রহণের সময় তাঁর সর্বাধিক উত্তম সুগন্ধিটি ব্যবহার করতেন। তিনি বলেন, ইহরাম বাঁধার পর তাঁর শ্মশ্রু ও শির মোবারকে তেলের ঔজ্জ্বল্য দেখতে পেতাম।-সহীহ মুসলিম ১/৩৭৮ মাসআলা : ইহরামের কাপড়ে আতর বা সুগন্ধি লাগাবে না। কেননা ইহরামের কাপড়ে এমনভাবে আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষেধ যা ইহরামের পরও অবশিষ্ট থাকে।-রদ্দুল মুহতার ২/৪৮৯; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৭০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২২; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ৯৮ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা (ইহরাম অবস’ায়) এমন কোনো কাপড় পরিধান করবে না যা জাফরান বা ওয়ারসযুক্ত।-সহীহ মুসলিম ১/৩৭২

৭. মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে ইহরাম গ্রহণের পূর্বে দুই রাকাত নফল নামায পড়া।-গুনইয়াতুন নাসিক ৭৩; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ৯৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮২ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্বের উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে রওনা হয়ে যুলহুলাইফাতে পৌঁছলেন এবং দুই রাকাত নামায পড়লেন। অতঃপর যুলহুলাইফার নিকট যখন উটনী তাঁকে নিয়ে উঠে দাঁড়াল তখন তিনি তালবিয়া পাঠ করলেন …।-সহীহ মুসলিম ১/৩৭৬

৮. নিয়ত : (পুরুষ হলে টুপি বা মাথার কাপড় খুলে ফেলতে হবে) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, মুখমণ্ডল ও তার উপরের অংশ মাথার অন-র্ভুক্ত। অতএব ইহরাম গ্রহণকারী থুতনী থেকে উপরের কোনো অংশ আবৃত করবে না।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৪৫২ মাসআলা : তামাত্তুকারী শুধু উমরার নিয়ত করবে, ইফরাদকারী শুধু হজ্বের নিয়ত এবং কিরানকারী হজ্ব ও উমরার নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করবে। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, আমরা বিদায় হজ্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বের হলাম। আমাদের মধ্যে কেউ শুধু উমরার উদ্দেশ্যে তালবিয়া পাঠ করলেন, কেউ হজ্ব-উমরা দু’টোর উদ্দেশ্যে এবং কেউ শুধু হজ্বের উদ্দেশ্যে তালবিয়া পাঠ করলেন।-সহীহ মুসলিম ১/২১২ মাসআলা : পুরুষ উচ্চ স্বরে তালবিয়া পাঠ করবে এবং মহিলাগণ নিম্নস্বরে।-মানাসিক পৃ. ১০০, গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৭৪, আদ্দুররুল মুখতার পৃ. ৪৮৪ সাইব ইবনে ইয়াযিদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার নিকটে জিবরাইল আ. এলেন এবং বললেন, আমি যেন আমার সাহাবীদেরকে উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠের নির্দেশ দেই।-জামে তিরমিযী ১/১৭১ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মহিলাগণ উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করবে না।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৮৮২তালবিয়া আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তালবিয়া এই-লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লাব্বাইক লা শারীকা লাকা লাব্বাইক ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক লা শারীকা লাক।-সহীহ মুসলিম ১/১৭৫ মাসআলা : পূর্ণ তালবিয়া পাঠ করতে হবে। এর কিছু অংশ ছেড়ে দেওয়াও মাকরূহ।-মানাসিক পৃ. ১০২, আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৩

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, তালবিয়া শেষ পর্যন- পাঠ কর। কেননা এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তালবিয়া।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩৬৩৮ মাসআলা : তালবিয়ার উক্ত দুআর স’লে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, কালিমা তাইয়্যিবা বা কোনো জিকির পাঠ করলেও ইহরাম সম্পন্ন হবে। কিন’ তালবিয়া ছাড়া অন্য কিছু পাঠ করা মাকরূহ। তাই তালবিয়া পাঠ একান- অসম্ভব হলে আল্লাহ তাআলার কোনো জিকিরের মাধ্যমে ইহরাম গ্রহণ করবে।-মানাসিক ১০২, গুনয়াতুন নাসিক ৭৬, আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮৩ বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত তাউস রাহ.কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, এক ব্যক্তি ‘তালবিয়া’র স’লে ‘আল্লাহু আকবার’ বলেছে। তিনি বললেন, তার ইহরাম সম্পন্ন হয়েছে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৯৩৫

মাসআলা : মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় হাত-মোজা ও পা-মোজা ব্যবহার করতে পারবে। তবে হাত-মোজার বিষয়ে দু’ধরনের দলীল বিদ্যমান থাকায় কেউ কেউ হাত মোজা পরিধান না করাকে উত্তম বলেছেন। -আল ইসতিযকার ১১/৩০; সুনানে আবু দাউদ ২/২৫৪; আত্তারগীব ওয়াত তারহীব ৪/৪৭৭; ইলাউস সুনান ১০/৪৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২২৩; বাদায়ে ২/৪১০; ফাতহুল মুলহিম ৩/২০৪; মানাসিক ১১৬; গুনইয়াতুন নাসিক -৭৪; ফাতাওয়া খানিয়া -১/২৮৪; আহকামে হজ্ব ৩৫

মাসআলা : মহিলাগণ ওযর অবস্থায় অর্থাৎ মাসিক ঋতুস্রাব, সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব ইত্যাদি থাকলেও তালবিয়া পাঠ ও ইহরাম গ্রহণ করতে পারবে। হজ্বের অন্যান্য কাজও করা যাবে। তবে এ অবস্থায় তাওয়াফ করা ও নামায পড়া জায়েয নয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মহিলাগণ হায়েয বা নেফাস অবস্থায় মীকাতে এলে গোসল করবে এবং ইহরাম গ্রহণ করবে। অতঃপর হজ্বের আমলসমূহ সম্পন্ন করবে শুধু তওয়াফ ব্যতীত।-সুনানে আবু দাউদ ১/২৪৩ মাসআলা : ইহরামের হালতেও মহিলাদের জন্য পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা নিষেধ। তাই এ অবস্থায় এমনভাবে চেহারা আবৃত রাখা জরুরি যাতে মুখমণ্ডলের সঙ্গে কাপড় লেগে না থাকে। এখন এক ধরনের ক্যাপ পাওয়া যায়, যা পরিধান করে সহজেই চেহারার পর্দা করা যায়। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে হজ্বের ইহরাম অবস্থায় ছিলাম। হাজ্বীদের কাফেলা যখন আমাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করত তখন আমরা মাথা থেকে চেহারার উপর চাদর ঝুলিয়ে দিতাম। যখন তারা আমাদেরকে অতিক্রম করে যেত তখন চাদর সরিয়ে ফেলতাম।-সুনানে আবু দাউদ ১/২৫৪;

হযরত আলী রা. মহিলাদেরকে নিষেধ করতেন তারা যেন ইহরাম অবস’ায় নেকাব ব্যবহার না করে। তবে চেহারার উপর দিয়ে কাপড় ঝুলিয়ে দিবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৫৩৯; আদিল্লাতুল হিজাব ৩২৯-৩৩৪; নাইলুল আওতার ৫/৭১ মানাসিক ১১৫, ফাতহুল বারী ৩/৪৭৫; ইলামুল মুআককিয়ীন ১/১২২-১২৩,

তাবেয়ী তাউস রাহ. থেকেও উপরোক্ত সিদ্ধান- বর্ণিত হয়েছে। দেখুন : মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৫৪০ মাসআলা : হজ্বের মাস শুরু হওয়ার আগে অর্থাৎ শাওয়াল মাসের আগে হজ্বের ইহরাম গ্রহণ করা মাকরূহ।-শরহু লুবাবিল মানাসিক ৯৮; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৬৭হযরত জাবির রা. বলেন, শুধু ‘আশহুরে হজ্ব’ বা হজ্বে মাসসমূহেই হজ্বের ইহরাম গ্রহণ করা যায়।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৮৩৮ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, সুন্নাহ্ এই যে, ‘আশহুরে হজ্বে’ই হজ্বের ইহরাম গ্রহণ করা হবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৮৩৭

মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় ইহরামের পোশাক পরিবর্তন করা যাবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় ‘তানয়ীম’ নামক স্থানে কাপড় পরিবর্তন করেছিলেন।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫০১০ বিখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখাঈ রাহ. বলেন, ইহরাম গ্রহণকারী ইহরামের কাপড় পরিধান করার পর যখন ইচ্ছা তা পরিবর্তন করতে পারবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫০১১

মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় কেউ মারা গেলে তাকে অন্যান্য মৃতের মতোই গোসল দেওয়া হবে এবং যথানিয়মে অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করা হবে। হযরত আয়েশা রা.কে ইহরাম অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি উত্তরে বললেন, সাধারণ মৃতের বেলায় যা করে থাক তার বেলায়ও তা-ই করবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৬৪৯