পাশ্চাত্য ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র (১ম পর্ব) – শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম (রহঃ)

 

পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্রের স্বরূপ

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ [٣:١٠٣]

وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ [٣:١٠٤]

وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ ۚ وَأُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ [٣:١٠٥]

يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ ۚ فَأَمَّا الَّذِينَ اسْوَدَّتْ وُجُوهُهُمْ أَكَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ [٣:١٠٦]

وَأَمَّا الَّذِينَ ابْيَضَّتْ وُجُوهُهُمْ فَفِي رَحْمَةِ اللَّهِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ [٣:١٠٧]

“তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সম্মিলিত ভাবে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমাদের উপর কৃত আল্লাহর সে অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। ফলে তোমরা তাঁর রহমতে পরস্পর ভাইয়ে পরিণত হয়েছিলে। আর তোমরা জাহান্নামের গর্তের নিকটবর্তী ছিলে, তিনি তা থেকে তোমাদের রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ্ নিজের নিদর্শন সমূহ তোমাদের রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ্ নিজের নিদর্শন সমূহ তোমাদের জন্য প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হিদায়াত প্রাপ্ত হতে পার। আর তোমদের মাঝে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা আহবান জানাবে কল্যাণের প্রতি এবং আদেশ করবে সৎকর্মের ও নিষেধ করবে মন্দ কাজ থেকে। আর তারাই হবে সফলকাম। আর তোমরা তাদের ন্যায় হয়ো না, যারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শন সমূহ আসার পরও বিরোধ করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি। সেদিন কিছু চেহারা উজ্জ্বল হবে, আর কিছু চেহারা কালো হবে।  যাদের চেহারা কালো হবে, তাদেরকে বলা হবে, তোমরা কি ঈমান আনার পর কুফরী করেছ? অতএব, তোমরা তোমাদের কুফরীর শাস্তি আস্বাদন কর। আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা চিরকাল আল্লাহর রহমতে থাকবে।”[আলে ইমরানঃ১০৩-১০৭]।

 

ঐতিহাসিক সম্প্রীতি

ঐতিহাসিকদের বর্ণনা মতে আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়েছে আউস ও খাযরাজ গোত্রের ব্যাপারে। তারা জাহেলী যুগে একে অপরের চরম শত্রু ছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন এবং তাঁর হাতে আল্লাহ্ তাদের মাঝে সম্প্রীতি স্থাপন করে দিলেন। একদা আউস ও খাযরাজ গোত্রের লোকেরা পরস্পর কথা বলছিল। এ সময় কিছু ইয়াহুদী তাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আউস ও খাযরাজদের সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থায় গল্প করতে দেখে হিংসায় তাদের অন্তর জ্বলে গেল। তখন এক ইয়াহুদী কোন কোন বর্ণনা মতে তাঁর নাম শাস বিন কাইস কথা বলতে আরম্ভ করল এবং বিআ’সের কবিতা আবৃত্তি করতে লাগল। বিআ’স হচ্ছে সে করুণ দিন, যেদিন আউস ও খাযরাজ গোত্রের মাঝে এক মর্মান্তিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। তাই ইয়াহুদীর এ কবিতা আবৃত্তি তাঁদেরকে প্রভাবিত করল।  ইয়াহুদী তাঁর কবিতা আবৃত্তি শেষ করতে না করতেই তারা পরস্পরকে মারার জন্য জুতা ও খেজুরের ডাল নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ খবর পৌঁছালে তিনি তাদের মাঝে এসে উপস্থিত হন এবং বললেন-

آَبِدَعْوَيْ الْجَهِلِيَّةِ وَآَنَا بَيْنَ آَظْهُرِ كُم

“আমি তোমাদের মাঝে উপস্থিত থাকাবস্থায় তোমরা কি জাহেলী যুগের দাবী নিয়ে এক অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছ”? অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন। মুসলমানদের ব্যাপারে ইয়াহুদীদের এ ভূমিকা অস্বাভাবিক ছিল না। কারণ, বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে মদীনাতে তাদের আধিপত্যই বিরাজমান ছিল।হঠাৎ করে যখন আল্লাহ্ তা’আলা মদীনার রাজনৈতিক, আর্থিক ও ধর্মীয় কর্তৃত্ব তাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে দিয়ে দিলেন, তখন এসব আধিপত্যকামী লোকদের জন্য তা মেনে নেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই এ ঘটনা ঘটুক না কেন পরাজিত দলের পক্ষে বিজয়ী দলকে সহ্য করা সহজ হয় না। বিজীত দলের ক্ষমতা তাদের হাতে পুনরায় ফিরে না আসা পর্যন্ত তারা বিজয়ী দলের উপর যতদূর সম্ভব আক্রমণ, অপবাদ ও তিরস্কার ইত্যাদি ছুড়ে মারতে থাকে।

 

সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব

সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব চিরকাল চলবে। সত্য মিথ্যার সংঘাত এক মুহূর্তের জন্যেও ক্ষান্ত হবে না। মানব জীবনের জন্য আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলার এ এক অলংঘনীয় বিধান। প্রথম মানব ও মানবীর জান্নাত ত্যাগ করার পর থেকে শুরু হওয়া এ সংঘাত কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে । কুরআনের ঘোষণা-

قَالَ اهْبِطُوا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۖ وَلَكُمْ فِي الْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌ إِلَىٰ حِينٍ [٧:٢٤]

“তোমরা পৃথিবীতে নেমে পড়। সেখানে তোমরা পরস্পরের শত্রু হয়ে থাকবে। আর পৃথিবীতে তোমাদের জন্য রয়েছে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থান ও ভোগ করার সুযোগ।”[আ’রাফঃ২৪]।

ভাল ও মন্দের সংঘাত আল্লাহর রীতি সমূহের অন্যতম। আর এ সংঘাতের সমাপ্তি ঘটে মুমিনদের সফলতা লাভের মধ্য দিয়ে। আল্লাহ্ বলেছেন- وَالْعَقِبَةُ لِلمُتَّقِينَ  “ভাল পরিণতি একমাত্র মুত্তাকীদের জন্যেই।”[আ’রাফঃ১২৮]। فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَى الظَّالِمِينَ “একমাত্র জালিমরা ব্যতীত আর কারো সাথে যুদ্ধ করবে না। ”[বাকারাহঃ১৯৩]।

তাই যারা ভাল পরিণতির কামনা করে তাদের কর্তব্য হচ্ছে, জালিমদের সাথে যুদ্ধ করে পৃথিবীতে ইসলামকে পুনর্বার প্রতিষ্ঠিত করা। সত্যের সাথে মিথ্যার সহাবস্থান নেই। সত্যের সাথে মিথ্যার সংঘর্ষ সব সময় চলমান । তাই ইমাম শাফেয়ীকে যখন জিজ্ঞেস করা হল,  ‘পরীক্ষায় ফেলা ও প্রতিষ্ঠিত করার মধ্যে মানুষের জন্য কোনটা অধিক মঙ্গলজনক?’তিনি বলেন, –

‘পরীক্ষা ব্যতীত তাঁকে কখনও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ দেয়া হবে না। শায়খ হাসান আলবান্নাকে আল্লাহ্ রহম করুন। এক সময় তাঁকে মিসরের একটি গ্রামে সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছিল। বৃদ্ধ, যুবক ও শিশু বের হল ও আপনার জন্য সাধারণ সবাই সেখানে সমবেত হল। তার সহকর্মী বলেন, এ সময় আমরা তাঁকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ইখওয়ানের অফিসে গিয়ে দেখতে পেলাম, তিনি দরজার পিছনে ক্রন্দনরত অবস্থায় বসে আছেন। আমরা তাঁকে বললাম, আজকেতো আল্লাহ্ ইসলামকে সম্মানিত করেছেন। তাই আমাদের উচিত আনন্দ প্রকাশ করা। তিনি বললেন, নবীদেরকে তো এভাবে সম্বর্ধনা জানানো হতো না। তাঁদেরকে জানানো হতো প্রত্যাখ্যান, নিন্দা ও আঘাতের মাধ্যমে। আমি তাদের পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার ভয় করছি। শায়খের মানসপটে ব্যাপারটা স্পষ্ট ছিল যে, সত্য ও মিথ্যার মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য। তাই বললেন, এই গণসংবর্ধনাকে আমি কীভাবে গ্রহণ করতে পারি? তিনি আশংকা করতেন যে, দীর্ঘদিন পর হলেও সংঘর্ষ প্রকাশ্য রূপ নিবে। তাই তিনি মিসরে ইসলামী আন্দোলনের উপর দমন-নিপীড়ন আসার অনেক বছর আগ থেকে এ ব্যাপারে লেখালেখি করেছেন। তিনি তার সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমীনের কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘ভাইয়েরা! অনেক মানুষের কাছে আপনাদের দাওয়াত এখনো পরিচিত হয়ে উঠেনি। যখন তাদের নিকট আপনাদের দাওয়াত পরিচিত হবে, তখন আপনাদেরকে তাড়িয়ে দেয়া হবে, আপনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হবে এবং আপনাদের জন্য জেলের দরজা উন্মুক্ত করে রাখা হবে। এমনকি গোটা দুনিয়া আপনাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে। আর সর্বপ্রথম যারা আপনাদের বিরোধিতা করতে যাবে, তারা হচ্ছে সুবিধাবাদী, স্বার্থপর ও সরকারের পা-চাটা আলেম’। তিনি এ কথা বলার দশ বছর পার হওয়ার পর তাগুত সরকার ও তার সমর্থনের পক্ষ থেকে ইখওয়ানুল মুসলিমীন যে দমন পীড়নের সম্মুখীন হয়েছে, তা নিকটবর্তী-দূরবর্তী ও সচেতন-উদাসীন কোন মানুষের অজানা নয়।

 

খেলাফত ধ্বংসকরণ

পশ্চিমারা মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের মাধ্যমে ইসলামের সাথে প্রকাশ্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। মোস্তফা কামাল সেদিন দম্ভ ভরে খেলাফত বিলুপ্তির ঘোষণা দেয়, খলীফা ও তার সভাসদকে ইস্তাম্বুল ও তুরস্ক থেকে বের করে দেয়, ইসলামের প্রতীকসমূহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, আরবী ভাষার আযান দেয়া নিষিদ্ধ করে। আরবীর স্থলে ল্যাটিন ভাষার আযান দিতে বাধ্য করে, প্রকাশ্যে হিজাব পরে চলতে বিধিনিষেধ আরোপ করে, সরকারী কোন প্রতিষ্ঠানে মাথা ঢেকে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি, সরকারের পুলিশ বাহিনী হিজাব ও ওড়নাপরা মহিলাদের কাছে থেকে তাদের হিজাব ও ওড়না ছিনিয়ে নিত, অধিকন্তু ছিঁড়েও ফেলত, হজ্ব নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং এ নিষেধ ২৪ বছর বলবৎ থাকে। তুরস্কের লোকেরা হজ্ব করার অনুমতি পায় ১৯৪৬ এর পর। অর্থাৎ মুসলমান তুর্কীদের অন্তরে ইসলামী অনুভূতি আছে কিনা তা আমেরিকা পরীক্ষা করে দেখার পর।

মসজিদকে যাদুঘরে রুপান্তরিত করা হয়। তুরস্কের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে অধিক সুন্দর মসজিদ ‘আয়া ছুফিয়া’কে যাদুঘরে রুপান্তরিত করা হয় এবং তাতে নামায নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। এ মসজিদ পৃথিবীতে ইসলামী স্থাপত্যকলার অন্যতম উপহার বলে বিবেচিত হত। এখনো পর্যন্ত এ মসজিদে নামায নিষিদ্ধ। এটাকে পূর্বের বাঘ পূজারী তুর্কীদের মাথার খুলি ও হাড্ডি  সংরক্ষণের জন্য যাদুঘরে রুপান্তরিত করা হয়েছে।

এ সময় মোস্তফা কামাল আলেমদের এক মহাসমাবেশের আহবান করে তাদের কাছে রাষ্ট্র থেকে দ্বীনকে পৃথকীকরণ ও খেলাফত বিলুপ্তির বিষয়টি পেশ করে। আলেমগণ তার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ফলে সে তাদের যাকে পায় হত্যা করে এবং যারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় তারা পালিয়ে যায়।

ইসলামের প্রতি তার এ শত্রুতা যারা দ্বীনকে উপলব্ধি করে, তাদের সামনে সুস্পষ্ট থাকে। সে বাস্তবেই দ্বীনকে রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন রাখে এবং জামাআতে নামায পড়ার উপর পর্যন্ত বিধি নিষেধ আরোপ করে।

 

শেখ আমীন সিরাজের কথা

দু’দিন পূর্বে আমাদের মাঝে আল ফাতেহ মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক আমীন সিরাজ উপস্থিত হয়েছিলেন। সত্তরের দশকে মুসলমানরা পার্লামেন্টে যাওয়ার জন্য তার উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। তাঁকে নির্বাচনের জন্য প্রার্থী করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। যখন সালামত পার্টির টিকিট নিয়ে নির্বাচন করার জন্য তার উপর মুসলমানদের চাপ বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি বললেন, আমাকে ছাড়ুন, আমাকে সে দায়িত্ব পালনের জন্য ছাড়ুন, যার জন্য আমার পিতা আমাকে মানত করেছেন। আমার পিতা মানুষকে কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য আমাকে হাফিয বানিয়েছেন। আমাকে হাফিয বানাতে গিয়ে আমার পিতা যে কষ্ট ও দুঃখ সহ্য করেছেন তা আপনারা জানেন না। তিনি আমাকে আমার মা ও ভাইদের সামনে কুরআন হিফয করাননি। মানুষ যখন রাত্রে নিদ্রায় বিভোর থাকতেন, তখন তিনি আমাকে আমার বিছানা থেকে জাগ্রত করে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে যেতেন এবং কক্ষের দরজা বন্ধ করে আমাকে  কুরআনের আয়াত মুখস্থ করাতেন। কারণ, তখন তুরস্কে শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল।

 

ইবাদত হয়ে গেল রাজনৈতিক অপরাধ

এ তুরস্কে শিশুদের কুরআন মুখস্থ করানো রাজনৈতিক অপরাধ ছিল, যার জন্য গ্রেফতার হতে হত। সত্তরের দশকে সালামত পার্টির নেতা (যার বর্তমান নাম রিফাহ পার্টি)নজমুদ্দীন আরবাকানকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল। তাঁকে সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন হয়ে হয়েছিল,শুধু মানুষের সামনে নামায পড়ার অপরাধে। কারণ, রাজনৈতিক নেতাদের জন্য জনসমক্ষে নামায পড়া আইনসিদ্ধ ছিল না।

১৯৬৯ সালে আমি ফিলিস্তিনী যুবকদের একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ছিলাম। প্রসিদ্ধ মুসলিম সাংবাদিক মুহাম্মদ শওকাত আমাদের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। ঐ সময় প্রেসিডেন্ট সুলাইমান ডেমরিল সৌদি আরবে গিয়েছিলেন একটি অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পাদন করার জন্য। এ সময় সুলাইমান ডেমরিল গোপনে উমরা করতে চাইলেন। সৌদী সরকারের নিকট আবেদন জানালেন, যাতে তার এ উমরার কথা কেউ জানতে না পারে এবং কেউ যেন ইহরামের কাপড়ে তার কোন ছবি না তোলে। কারণ, তা রাজনৈতিক অপরাধ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে। সাংবাদিক বললেন, কেউ যদি আমাকে সুলাইমান ডেমরিলের ইহরাম পরিহিত অবস্থায় ছবি দিতে পারে, তাহলে আমি তাঁকে যে পরিমাণ অর্থ চাইবে দান করব।

এ রকম অবস্থা বিরাজ করছিল তুরস্কে। ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের এ লেলিহান শিখা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সর্বক্ষেত্রে বিরামহীন ভাবে জ্বলছিল । টুপি ও পাগড়ি ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কারণ, তা যে তুর্কীদেরকে এ দ্বীন নিয়ে আসা আরবদের সাথে সদৃশ্য করে দেয়!

 

আতার্তুকের পরিণতি

জীবনের শেষ দিকে মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের কর্মকান্ড এতটাই বেপরোয়া হয়েছিল যে, সে তার মুষ্ঠি দিয়ে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহকে হুমকি দিচ্ছিল। কিন্তু আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাঁকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিয়েছিলেন। অতঃপর তাঁকে প্রমেহসহ বিভিন্নরোগে আক্রান্ত করেন। ফলে তার ওজন নব্বই কেজি থেকে আটচল্লিশ কেজিতে এসে পৌঁছে। সে যন্ত্রণার তীব্রতার কারণে ‘দুলমা বাগজায়’ কুকুরের মত চিৎকার করত। ‘দুলমা বাগজা’ ইস্তাম্বুলের সমুদ্র তীরের একটি বিলাসবহুল অবকাশ কেন্দ্র।তার এ আওয়াজ যাতে কেউ না শুনে সে জন্য একটি স্টীমার এনে রাখা হল। স্টীমারের আওয়াজ দেবতার ন্যায় পূজনীয় প্রেসিডেন্টের আওয়াজকে চাপা দিয়ে রাখত। এই কামালকেই পশ্চিমারা আতাতুর্ক ও ধূসর বাঘ নামে অভিহিত করে। আতাতুর্ক মানে হচ্ছে তুর্কীদের পিতা। ধূসর বাঘ আগেকার তুর্কীদের উপাস্য ছিল। কামাল আতাতুর্কের মাধ্যমেই পশ্চিমারা তুরস্কে হাজারো ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে।

 

মিন্দরীসের ঘটনা

একবার তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিস পার্টি অব তুরস্ক-এর প্রধান আদনান মিন্দরীস বিমানযোগে কোথাও যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করে বিমানের ইঞ্জিন অচল হয়ে গেল। ক্যাপ্টেন ঘোষণা দিলেন, বিমানের বিপর্যয় নিশ্চিত। সবাইকে জীবন রক্ষাকারী বা প্যারাসুট জ্যাকেট দেয়া হল। আদনানও জামা পরিধান করল এবং আল্লাহর কাছে এ বলে মানত করল যে, যদি তুমি আমাকে রক্ষা কর এবং তুরস্কের শাসন ক্ষমতা আমার হাতে থাকে, তাহলে আমি তুরস্কের বুকে পুনরায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করব। আল্লাহ্ এ ধরণের লোকদের ব্যাপারে বলেছেন-

حَتَّىٰ إِذَا كُنتُمْ فِي الْفُلْكِ وَجَرَيْنَ بِهِم بِرِيحٍ طَيِّبَةٍ وَفَرِحُوا بِهَا جَاءَتْهَا رِيحٌ عَاصِفٌ وَجَاءَهُمُ الْمَوْجُ مِن كُلِّ مَكَانٍ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ أُحِيطَ بِهِمْ ۙ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ لَئِنْ أَنجَيْتَنَا مِنْ هَٰذِهِ لَنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ [١٠:٢٢]

“তারা যখন নৌযানে আরোহণ করে এবং অনুকূল বাতাস তাঁদেরকে চালিয়ে নিয়ে যায় আর তারা এ নিয়ে আনন্দবোধ করে, এমন সময় হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় আসে এবং চতুর্দিক থেকে ঢেউ আক্রমণ করে আর তারা মনে করে যে, তারা ধ্বংসের কবরে পতিত হয়েছে, তখন তারা আল্লাহকে শিরকমুক্ত ইবাদত সহকারে ডাকে।” [ইউনুসঃ২২]।

সে আল্লাহকে এভাবে ডাকল। বিমান বিধ্বস্ত হল। সকল যাত্রী পুড়ে মারা গেল। কিন্তু অত্যাশ্চর্যভাবে মিন্দরীস বেঁচে গেল। পরে মিন্দরীস নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করল। তার নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো এত নগণ্য ছিল যে, আমাদের আরব দেশে যদি কেউ কারো মুখ থেকে তা শুনে, তাহলে তার হাসি পাবে ও ঠাট্টা করবে।

মিন্দরীসের নির্বাচনী ইশতিহার ছিল, সে আরবী ভাষায় আযান দেয়ার অনুমতি দিবে, বিভিন্ন মক্তব পুনরায় চালু করবে এবং আয়া ছুফিয়া যাদু ঘরকে পুনরায় মসজিদে রুপান্তরিত করবে। নির্বাচন হল। নির্বাচনে কামাল আতাতুর্কের দলের ভরাডুবি হল। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে মিন্দরীস মন্ত্রীসভা গঠন করল ও নিজে প্রধানমন্ত্রী হল।

তুর্কী জনগণের সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণের সময় হল। রমযানের প্রথম দিন মিন্দরীস তুরস্কবাসীকে আরবী ভাষায় আযান উপহার দেয়। মানুষ কান্নারত অবস্থায় বাজারের দিকে বের হয়। কন্সটানটিনপল বিজয়ের পর আজকের মত আনন্দের দিনের সাথে তারা আর কখনো পরিচিত হয়নি। আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর ধ্বনি ইস্তাম্বুলের হাজারো মিনার থেকে এক যোগে বের হয়ে আকাশ-বাতাস মুখরিত করছে। আজ থেকে ২৬ বছরের অধিক কাল যাবত এ মিনার সমূহ থেকে আল্লাহু আকবর ধ্বনি বের হওয়া নিষিদ্ধ ছিল। মিন্দরীস জনগণের সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করায় পশ্চিমাদের অন্তরে অস্থিরতা শুরু হয়। ওয়াশিংটনে এ ব্যাপারে চাপ প্রয়োগের কথা উঠে এবং ফ্রীম্যাসনবাদীরা এর বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে উঠে। অতঃপর মিন্দরীসের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয় এবং তার এ কাজকে মহা বিশ্বাসঘাতকতা ও সংবিধান বিরোধী বলে অপবাদ দিয়ে তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

তুরস্কের অভিজ্ঞতা একটি অদ্বিতীয় ও সফল অভিজ্ঞতা ছিল। তাই ইউরোপ ও মার্কিনীরা এ অভিজ্ঞতা থেকে ইসলামের উৎখাতের জন্য এমন এক পদ্ধতিতে কাজ করতে শিক্ষা অর্জন করে, যা আগের চেয়ে অধিক সহজ। তারা বলে যে , আজ থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করা যাবে না। এমন লোকদের দিয়ে এ দ্বীন ধ্বংস করতে হবে, যারা তার অনুসারী, যারা আরবীতে কঠা বলে ও যারা বাহ্যিক ভাবে নামায পড়ে কিন্তু এ দ্বীনের মূলোৎপাটনের তারা আমাদের সাথে একমত।

 

ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নতুন পরিকল্পনা

ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশ্চাত্যের নতুন পরিকল্পনা হল, এখন থেকে ইসলাম উৎখাতের লড়াই নেপথ্যে থেকে করতে হবে। প্রকাশ্যে এ দ্বীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা যাবে না। বলল, মুসলমানদের মসজিদ নির্মাণ ও মিনার উঁচু করছে, করতে অনুমতি দাও, শাসকদেরকে মসজিদ উদ্ধোধনের ফিতা কাটতে দাও, কল্যাণ ও সেবামূলক সংস্থা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সুযোগ দাও। কিন্তু সাথে সাথে ময়দান ও রাজ পথকে সর্ব প্রকার ইসলামী আন্দোলন থেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য তাঁদেরকে বাধ্য কর। ইসলামী আন্দোলনকে অঙ্কুরেই ধ্বংস করার জন্য পাশবিক যুলুম-অত্যাচারের ষ্টীম রোলার অপ্রতিহত গতিতে চালানোর জন্য শাসকদের প্রতি চাপ প্রয়োগ কর। এ পরিকল্পনা মাফিক কাজ করার জন্য তারা আরব বিশ্বের বিভিন্ন অংশে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায়। ফলে দ্বীনকে পৃথিবীতে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যে সব ব্যক্তিবর্গ আত্মপ্রকাশ করেছেন, তাঁদেরকে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে ও ইসলামী আন্দোলনের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করে একটির বিরুদ্ধে আরেকটিকে উসকে দেয়া হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে তাদের প্রথম উদ্যোগ প্রকাশ পায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত দ্বারা আরব অঞ্চলে তাদের অনুগত দালাল সৃষ্টির মাধ্যমে। ১৯৪৯ এর মার্চ মাসের মার্কিন ইংগিতে অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে সিরিয়ার হুসনী যঈমের আত্মপ্রকাশ ঘটে। দেখুন ১৯৪৯-এর ফেব্রুয়ারীতে শায়খ হাসান আল বান্নাকে হত্যা করা হয় আর এর দু’দিন পর মিশর, সিরিয়া ও জর্ডানের ইসরাঈলের সাথে ‘রুডস’ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং ইয়াহুদীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট সীমানার রাষ্ট্রের স্বীকৃতি প্রদান করে। অন্যদিকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের রাজধানী কায়রোতে দু’বছর ধরে দমন নিপীড়নের পরেও ইসলামী আন্দোলনকে পরিপূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। তাই তারা ভাবল এ ইসলামী আন্দোলনকে নির্মূল করতে একজন জনপ্রিয় স্বদেশী বীর গাদ্দারের প্রয়োজন। ফলে তারা জেফার্সনের* মাধ্যমে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নতুন সফল দালাল আবদুন নাসেরকে নিয়ে আসল। মাইলফ কোপলন্ড তার বই ‘জাতি সমূহের খেলা’তে উল্লেখ করেছেন, ‘আবদুন নাসের আমাদের খেলায় শতে নব্বই ভাগের চেয়ে বেশী সফলতা প্রদর্শন করেছে। আর সে ই হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য সাধনে সবচেয়ে বেশী সফলকাম’। সে ইসলামী আন্দোলনকে দমন করেছে, কুরআন-সুন্নাহর শাসন থেকে দেশকে মুক্ত রেখেছে, আল আযহারকে তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে দূরে রেখেছে, পাঠ্যসূচীতে পরিবর্তন এনেছে এবং ইসরাঈলের নিরাপত্তা বিধান করেছে।

তাবেদার আবদুন নাসের পাশ্চাত্যের ইচ্ছেমত দেশ শাসন করতে শুরু করে। নাসেরের পক্ষের লোকদের মাঝে বিতরণ করার জন্য আইজন হাওর আবদুন নাসেরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিন মিলিয়ন ডলার হস্তান্তর করেছিল। আবদুন নাসের ষোল বছর ক্ষমতায় থেকে ইসলামের মূলোৎপাটন ও তার অনুসারীদের ধরপাকড়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল।

আর জনসাধারণ শ্লোগান দিত আবদুন নাসের জাতীয়তাবাদের বীর, আরববাদের বীর, সমাজবাদের বীর প্রভৃতি।

 

জিহাদের আকীদা পুনরুজ্জীবিতকরণ

বর্তমানে আমরা পেশোয়ারের জমীনে থেকে উম্মাহর হৃদয়ে জিহাদের আকীদাকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছি। আল্লাহ্ আমাদেরকে এ ক্ষেত্রে ইখলাসের সাথে কাজ করার তাওফীক দান করুন। উম্মাহর অবস্থার প্রতি তাকিয়ে দেখলাম যে, তারা সব জায়গায় আজ মৃত। তাই আমরা বললাম, আফগানিস্থানই হোক ইসলামী বিশ্ব প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের সূচনা ভূমি। তাই আমরা বলে আসছি, হে লোক সকল! পূর্বসুরী, উত্তরসুরী, মুহাদ্দিসীন, মুফতিইয়ীন ও মুফাসসিরীন সবার কথা মতে আফগানিস্থানের জিহাদে অংশগ্রহণ করা মুসলমানদের জন্য ফরযে আইন। এ ব্যাপারে আমরা একটি ফতওয়াও লিপিবদ্ধ করেছি ‘মুসলিম দেশ মুক্ত করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরযে আইন’নামে। এ ফতওয়াটি আমি ইমাম ইবনে তাইমিয়ার কথা-

‘দ্বীন ও দুনিয়ার ক্ষতিকারক হানাদার শত্রুদের হটানোই ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরয কাজ’-এর উপর ভিত্তি করে লিখেছি।

অতএব, মুসলমানদের প্রথম কাজ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ’ এর স্বীকৃতি দেয়া। অতঃপর হানাদার শত্রুকে হটানো। এ ফতওয়া আমি বড় বড় আলেমগণের নিকট পেশ করেছি। সর্ব প্রথম যার কাছে পেশ করেছি,  তিনি হলেন পিতৃতুল্য শায়খ আবদুল আযীয বিন বায। তিনি এ ফতওয়াকে সমর্থন করেন। ফতওয়ার বক্তব্যটি দীর্ঘ ছিল। তাই শায়খ বললেন, একে সংক্ষীপ্ত কর যাতে আমি এতে একটি ভূমিকা লিখে দিয়ে প্রচার করতে পারি। এরপর আমি সংক্ষীপ্ত করেছি। কিন্তু হজ্ব নিয়ে শায়খের কর্ম ব্যস্ততার দরুন তার কাছে তা পেশ করতে সক্ষম হইনি। এরপর আমারও আর সুযোগ হয়নি। তবে আমি ফতওয়াটি অনেক আলেমকে পড়ে শুনিয়েছি এবং এর প্রতি তাদের সমর্থনের উপর সাক্ষরও গ্রহণ করেছি।

অনেক উৎসাহী যুবক আমাদের কাছে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন করেছে। কিন্তু আমরা বলেছি, বর্তমান এখানে আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের মুখোমুখি। এ কাজ এ ভূখন্ডে দ্বীন প্রতিষ্ঠারই কাজ। এ ব্যাপার পৃথিবীতে পুনরায় খেলাফত প্রতিষ্ঠার ব্যাপার। এটা সুবর্ণ ও স্বর্ণালী সুযোগ। তাই আমাদেরকে এ কেন্দ্রে থাকতে দাও। এ কেন্দ্র আফগান জিহাদের পরিচর্যা কেন্দ্র। তাই আমরা এখানে দলপ্রীতি, নেতাপ্রীতি, মতবিরোধ ও আঞ্চলিক গোঁড়ামি থেকে মুক্ত থাকতে চাই। আফগানরা যে বিরোধ ও কষ্টের সম্মুখীন তাদের জন্য যথেষ্ট। তোমরা এখানে আবার নতুন কষ্ট নিয়ে আগমন করো না, তাদের মাথার উপর নতুন বোঝা তুলে দিও না।

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা জানেন, প্রথম পদক্ষেপ থেকে এ পর্যন্ত এ পবিত্র জিহাদের সেবা ছাড়া আমাদের আগমনের আর কোন উদ্দেশ্য নেই। অতঃপর কিছু যুবক এসে এখানে জড়ো হল। আমাদের সবার হৃদয় এক ব্যক্তির হৃদয়ের মত। এ ব্যাপারে একটি ঘটনা উল্লেখ করছি, একবার শহীদ আবদুল্লাহ মুহাইবর পেশোয়ার থেকে ইসলামাবাদে আসলেন। তখন আমার নিকট কতিপয় ভাই উপস্থিত থাকায় আমি তাঁকে সময় দিতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি একমাত্র আপনাকে দেখার আগ্রহ পূরণের জন্যেই এখানে এসেছি। আপনাকে দেখলাম। এরপর তিনি পেশোয়ারে ফিরে যান।

 

শত্রুরা ওৎপেতে আছে

আমরা এখানে আসার কিছুদিন যেতে না যেতেই শত্রুরা আমাদের প্রতি তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। কোন রাষ্ট্রই আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট নয়। পৃথিবীতে এমন কোন রাষ্ট্র নেই, যেটা আমাদের প্রতি বিরাগভাজন নয়। আবারও বলছি, এখানে (ইসলামাবাদে)এমন কোন দূতাবাস নেই, যেটা আমাদের ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি করতে চায় না। মুসলিম বিশ্বের এমন কোন রাষ্ট্র নেই, যেখান থেকে এখানে কোন না কোন যুবক এসে শহীদ হয়েছে কিন্তু ওরা রাত-দিন আমাদের ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি ও আমাদেরকে পরস্পর বিচ্ছিন্ন করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। মুসলিম বিশ্বে আজ ইসলামী সমাবেশ নিষিদ্ধ। এমনকি হেরেম শরীফের অভ্যন্তরেও চার জনের সমাবেশ নিষিদ্ধ।

নামাযের সময় ব্যতীত মসজিদগুলো আল্লাহর ইবাদতকারী ও আহ্বানকারী থেকে মুক্ত ও তালাবদ্ধ থাকে। ফরয নামায শেষে দীর্ঘ যিকরকারীকে বের করে দেয়া হয়। কারণ, মুআযযিনের তাড়াতাড়ি মসজিদ বন্ধ করে দিতে হয়। পৃথিবীর কোন ভূখন্ডে বিশেষ করে আরব বিশ্বে ইসলামের জন্য কোন অস্ত্র নড়াচড়া করা যায় না। গুলি ছোড়া এক মহা অপরাধ, যার জন্য সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। অতএব আমরা বললাম, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের অর্পিত ফরয দায়িত্ব (জ্বিহাদ) পালণের এটাই সুবর্ণ সুযোগ। তাই আমরা আফগান মুজাহিদগণের পাশে এসে দাঁড়ালাম। এর ফলে হয়তো আল্লাহ্ আমাদের চক্ষুসমূহ শীতল করবেন ও আমাদের বক্ষসমূহ উন্মুক্ত করবেন এবং আমরা আফগানিস্থানে আল্লাহর খেলাফত প্রতিষ্ঠিত দেখতে পাব। এরপর সবাই এ দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ব এবং আফগানিস্থান পরিণত হবে বিশ্বময় ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও মুসলমান রক্ষার নিরাপদ সূচনাভূমি ও মজবুত দুর্গ।