গৌরবময় ভূমিকা
জেনেভা চুক্তির পর আফগান জিহাদ এখন কোন পর্যায় গিয়ে পৌছেছে ? জেনেভা চুক্তির পর আমরা ভয় করেছিলাম যে, আফগান জিহাদকে গলাটিপে হত্যা করা হবে। বাস্তবেই এ পাকিস্তানী রাজনীতিকরা খুবই নির্বোধ। মার্কিনীরা যখনই তাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে যে, আফগান সমস্যার সমাধান আমাদের চাহিদা মতেই হবে, তখন তারাও বলে, আফগান সমস্যার সমাধান জেনেভা চুক্তির ধারা মতেই হবে। জুনেজু বলেছে, আমি জানি জিয়াউল হক এ চুক্তি গ্রহণ করবে না।অবশ্যই, তিনি যে গাছ রোপনে অংশগ্রহণ করেছেন, সে গাছের ফল নিয়ে অন্যরা কাড়াকাড়ি করবে তা হতে পারে না। জিয়াউল হকের সবচেয়ে সফল কাজ হচ্ছে যে, তিনি তাঁর সামরিক সহকর্মীদের নিয়ে আফগান জ্বিহাদের পাশে গৌরবময় ভূমিকা পালন করেছেন। এটা যদি তাঁর ইতিহাস থেকে বাদ দেয়া হয়, তাহলে তাঁর আর উল্লেখযোগ্য কোন কাজই পাওয়া যাবে না। তিনি পাকিস্তানে বেলুচী, সিন্দী, পশতুন ও পাঞ্জাবীদের শান্ত রাখতে কিছু প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তবে এসব সাগরে লাঙ্গল চালানো ও আকাশে চাষ করার মত। হ্যা ! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাঁকে সর্বশ্রেষ্ঠ যে কাজের তাওফীক দিয়েছেন, তা হচ্ছে আফগান মুজাহিদদের পাশে সফল অবস্থান গ্রহণ।
তাঁর নিয়ত সম্পর্কে আল্লাহই ভাল জানেন। তবে যেটা আমাদের কাছে স্পষ্ট, তা হচ্ছে তিনি নিষ্ঠাবান ও সত্যবাদী ছিলেন। তিনি ইসলামী জ্বিহাদের ব্যাপারে সত্যিকারের মুসলমানের ভূমিকা পালন করেছেন। জিহাদের পাশে অবস্থান গ্রহণ করে তিনি অনেক লাভবান হয়েছেন। আমি বিভিন্ন সেমিনার ও সমাবেশে তাঁর বক্তব্য কয়েকবার শুনেছি। তার কথা শোনার সময় তোমার মনে হবে যে, তিনি কোন রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নয়, তিনি একজন মিম্বরের খতীব ও একজন দাঈ। তার এ বক্তব্য লিখিত কোন বক্তব্য ছিল না, অন্তর থেকে বলতেন। তাই টেলিভিশনে প্রচারিত তাঁর অনেক বক্তব্য এমন ছিল যে, বড় বড় দাঈরা তাঁদের সঙ্কীর্ণ ও চাপপূর্ণ পরিবেশে থেকে ঐ ধরণের বক্তব্য দিতে সক্ষম হবেন না। জিয়াউল হক জুনেজুর সরকারের পতন ঘটিয়ে দ্বিতীয় বার ক্ষমতা গ্রহণের কয়েকদিন পূর্বে করাচীতে একটি ইসলামী সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সেখানে কথিত একজন ইসলামী দাঈ বক্তব্য রাখতে গিয়ে গর্বাচেভের প্রশংসা করলে এবং বলল, আমাদের উচিত গর্বাচেভের শুকরিয়া আদায় করা। কারণ,তিনি শান্তিপ্রিয় লোক বলেই আফগানিস্তান থেকে সৈন্যদের ফিরিয়ে নেয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
তাঁর বক্তব্যের পর জিয়াউল হক দাঁড়িয়ে বললন, ‘কেন আমরা গর্বাচেভের শুকরিয়া আদায় করবো ? সে তো একজন ডাকাত, যে ঘরে ঢুকে ঘরের আসবাবপত্র জ্বালিয়ে দিয়ে ও ঘরের মালিকে হত্যা করে বের হয়ে গেছে। এ রকম ডাকাত কি শুকরিয়া পাওয়ার যোগ্য নাকি লা’নত পাওয়ার যোগ্য?’ এটা কি কোন দেশের প্রেসিডেন্টের কথা ? না, এটা কোন দেশের প্রেসিডেন্টের কথা নয়, এটা একজন খতীবের কথা।
বাস্তবে তিনি তাঁর জীবনের শেষের তিন মাস সর্বাধিক স্বচ্ছ ও অকৃত্রিম জীবন যাপন করেছেন। আমাদের আশা আল্লাহ্ তাঁকে শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন। তিনি আফগান জ্বিহাদের কারণেই নিহত হয়েছেন। আর তাঁকে হত্যা করেছে আমেরিকানরাই, রাশিয়া বা ভারত নয়। রাজনৈতিক রিপোর্টগুলোর শতকরা পঁচানব্বই ভাগেরও অধিক রিপোর্ট সাক্ষ্য দেয় যে, আমেরিকানরাই তাঁকে বহনকারী বিমানটি ধবংস করেছে। বিমানটি উড়ে যাওয়ার সাথে সাথেই চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। কে জানে এটা কাদের মাধ্যমে করানো হয়েছে। শিয়া, ইসমাঈলিয়া গ্রুপ, বাহাঈ গ্রুপ নাকি কাদিয়ানীদের মাধ্যমে করানো হয়েছে- তা আমরা এখনো পর্যন্ত জানতে পারিনি। তবে এটা নিশ্চিত যে বিমানটি ধবংস করা হয়েছে সিআইএর ইঙ্গিতেই। তবে তাঁদের লোককে বলি দেওয়ার কারণ হল, জিয়াউল হক মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে সব সময় কাছে রাখতেন। যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত তাঁর সাথে নিহত হয়েছে , তাঁর নাম রূহফিল। সে নামে খৃষ্টান হলেও বাস্তবে ইয়াহুদী। সে তুরস্ক, ইরান ও অতঃপর পাকিস্তানে দায়িত্ব পালন করে। জিয়াউল হককে হত্যা করার জন্য তাঁর মত লোককে বলি বানানো মার্কিনীদের জন্য কোন ব্যাপার নয়।
জেনেভা চুক্তির পর আফগান জ্বিহাদ এখন কোন পর্যায়ে এসে পৌছেছে ? জেনেভা চুক্তির পর জুনেজু চেয়েছিল তা বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু জিয়াউল তা ভুলে যেতে চেয়েছেন। ফলে সে বলল, আমি জাতিসংঘ, রাশিয়া ও আমেরিকার কাছে রিপোর্ট দেব যে, তুমি জেনেভা চুক্তির ধারাগুলো প্রয়োগ করতে চাও না। জিয়াউল হক বললেন, আমি আজীবন লাঞ্চিত হয়ে বেঁচে থাকতে চাই না।আমরা ভয় করেছিলাম পাকিস্তান সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ বন্ধ হয়নি।
কন্টকাকীর্ণ পথ
সত্যের পথের অনুসারী যেখানেই আছে, সেখানে সত্যের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। তবে তা কষ্ট, পরীক্ষা, শহীদের রক্ত প্রবাহ ও লাশ ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার পর। এটা আল্লা্র চিরন্তন রীতি। এ রীতি ও নীতির কোন পরিবর্তন নেই। এটা সর্বদা স্থির, এদিক-সেদিক হবার নয়।
কণ্টকাকীর্ণ পথ
সত্যের পথের দাওয়াতের সূচনা হয় কষ্ট, বিপদ ও পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। এতে করে সত্যের পথের যাত্রীদের কাতার পরিচ্ছন্ন হয়, অন্তর পরিশুদ্ধ হয়। কষ্ট ও বিপদের সুকঠিন পরীক্ষায় যারা দুর্বল তাঁরা ঝরে যায় ও যাদের ঈমান ও বিশ্বাস মজবুত দৃঢ়পদ থাকে। আর যারা দৃঢ়পদ থাকে, তাদের মাধ্যমেই আল্লাহ্ তাঁর দ্বীনকে সাহায্য করেন এবং তাঁদেরকে দান করেন পৃথিবীর কর্তৃত্ব ।
শুনুন আল্লাহর অঙ্গীকারের কথা-
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا ۚ يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا ۚ وَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ [٢٤:٥٥]
“তোমাদের যারা ঈমান এনেছে ও ভাল কাজ করছে, তাদেরকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা ওয়াদা দিচ্ছে যে, তিনি তাঁদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দান করবেন , যেমন কর্তৃত্ব দান করেছিলেন তিনি তাঁদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি প্রতিষ্ঠিত করবেন তাঁদের দ্বীনকে, যা তিনি তাঁদের জন্য পছন্দ করেছেন। আর তাঁদের ভীতিকে নিরাপত্তা ও প্রশান্তিতে পরিবর্তন করে দিবেন। তারা আমারই ইবাদত করবে এবং আমার সাথে অন্য কোন কিছুকে (কোন দিক দিয়ে) শরীক করবে না।”[নূরঃ৫৫]।
সত্যের অনুসারীদের এ যাত্রা গৌরবের যাত্রা, এ যাত্রা মুসলিম উম্মাহর যাত্রা, যার সংগ্রামের সূচনাভূমি আফগানিস্তান, যার মধ্যে রেনেসাঁ ফিরে এসেছে আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে। এ সংগ্রামের পদ্ধতি ও কৌশল সত্যের সন্ধানী সকলের জন্য অদ্বিতীয় ও অতুলনীয় আদর্শ। পূণ্যময় এ সংগ্রামের প্রাথমিক পদক্ষেপ ও অবস্থা যারা দেখেছেন, তারা জানেন কী কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এ পথের বীর সেনানীরা সামনে এগিয়ে চলেছেন। অধ্যাপক বুরহানুদ্দীন রব্বানী জানেন, যখন তাঁরা পেশোয়ারে অবস্থান করছিলেন এবং ছাদবিহীন একটি কক্ষে কিছু যুবকদের নিয়ে থাকতেন। প্রতিদিন দুপুরের দিকে তিনি এসে কিছু আছে কি না জিজ্ঞেস করলে অধিকাংশ সময় না সূচক উত্তরই দিতে হত। ফলে সারাদিন সকলেই অনাহারে কাটাতেন। অধ্যাপক রব্বানী এবং প্রথম দিকের পরিস্থিতি প্রত্যক্ষকারী সকলেই জানেন কী যন্ত্রণাময় ছিল এ সংগ্রামের সূচনাকারীদের জীবন। তারা যখন তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরতে সৌদিআরব যেতেন, তখন তাঁদের হোটেল ভাড়া সেয়ার সামর্থ্য ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে কোন ছাত্রের খাটেই তাঁরা রাত কাটাতেন।
অধ্যাপক রব্বানীই জানেন, যখন তাঁরা দাউদের সৈন্যদের বড় কোন ক্যাম্পে হামলা চালানোর জন্য একটি বা দু’টি বোমা দিয়ে ড. মুহাম্মদ উমরকে বাদাখসান, মৌলভী হাবীবুর রহমানকে লাগমান ও আহমাদ শাহ মাসউদকে পাঞ্জাশীরের দিকে পাঠাতেন, তখন তাঁরা তাঁদের ক্যাম্পগুলো পাহারা দেয়ার জন্য বন্দুক না পেয়ে লাঠি ও পাথর দিয়েই পাহারা দিতেন। তাদের ধৈর্য্য জ্বিহাদের দীর্ঘ এ পথে প্রদীপের কাজ দিয়েছে। এখন সে অবস্থা আর নেই।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাঁদের বিজয় দান করেছেন এবং পৃথিবী তাঁদের সম্মান করছে । সেদিন তাঁরা বলেছিলেন, আমরা এখানেই থাকব, আমরা মুসলমান এবং আমাদের মাথা রাব্বুল আলামীন ব্যতীত কারও সামনে নত করব না। তারা তাঁদের মাথা তুলে দাড়িয়েছিলেন। ফলে তাঁদের সাথে বিশ্বের আরো লক্ষ কোটি মুসলমানও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল। তাঁরা দৃঢ়পদে দাঁড়িয়েছিলেন। ফলে বিভিন্ন জায়গার মানুষের মাঝে এ চেতনা ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে তাঁরা এ পবিত্র জ্বিহাদের ব্যাপারে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠে। ‘আল জ্বিহাদ’ ও ‘আলবুনয়ানুল মারছূছ’ সাময়িকী কবে বের হয়ে তাঁদের কাছে পৌছবে সে অপেক্ষায় থাকে। কোন মুজাহিদের ক্যাসেট, ফিল্ম কিংবা আফগানিস্তান থেকে আসা কোন মানুষের খবর পেলে তাঁরা দৌড়ে আসে। মুসলিম বিশ্ব তাঁদের পাশে এসে জড়ো হচ্ছে বরং কাফির মুসলিম সবাই তাঁদের খেদমত করতে চাচ্ছে ।কিছুদিন পূর্বেও পৃথিবীর কোথাও কোন সরকার তাঁদেরকে বিমান বন্দর , গেষ্ট হাউস কিংবা তাঁদের দফতরে আলোচনার জন্য স্বাগত জানায়নি। এখন পৃথিবীর সকল শক্তি তাঁদেরকে দেখার জন্য ও তাঁদের কথা শোনার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিগ্যান তাঁদের সাথে বৈঠক করার জন্য বহুবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাঁরা কথিত এ বিশ্ব নেতার সাথে বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তাদের সাথে সাংবাদিকের সাক্ষাতের পর স্থানীয় পত্রিকাসমূহ লিখেছে ‘ এরাই পৃথিবীর সর্বপ্রথম প্রতিনিধি দল,যারা রিগ্যানের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন ‘ ।
আল্লাহ্ তাঁদেরকে এখন বিজয় ও সাফল্য দান করেছেন। চূড়ান্ত সফলতা তাঁদের পদচুম্বন করতে অতি নিকটবর্তী। বিজয়ের ফল পরিপক্ক হয়ে তাঁদের নাগালে এসে পৌঁছেছে । আর গোটা পৃথিবী এ সুফল ভোগ করতে লোভাতুর হয়ে আছে। যদিও এর প্রকৃত মালিক মুজাহিদ ও তাঁদের সাহায্যকারীগণ এখনো এ ফল উপভোগ করতে পারেননি। মুসলিম উম্মাহর সকল সদস্য তাঁদের পাশে রয়েছে। কিন্তু মুসলিম দেশের শাসকরা কথিত (মার্কিন) বিশ্ব নেতার ভয়ে এ ব্যাপারে ভীত ও আতংকিত এবং উম্মাহর স্বার্থ বিরোধী ভূমিকায় লিপ্ত। তবে যে আল্লাহ্ দুর্বল থাকাবস্থায় আমাদের সাহায্য করেছেন, তিনি (যদি চান) আমাদেরকে শক্তিশালী হওয়ার পরও সাহায্য করবেন। আমাদের প্রভু আকাশ ও পৃথিবীরও প্রভু।
وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعْجِزَهُ مِن شَيْءٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ ۚ إِنَّهُ كَانَ عَلِيمًا قَدِيرًا [٣٥:٤٤]
“আকাশসমূহ ও পৃথিবীর কোন বস্তুই আল্লাহকে দুর্বল করার নয়। নিঃসন্দেহে তিনি সর্বজ্ঞাত ও সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান। ”[আল-ফাতিরঃ৪৪]
ইসলামের শত্রুরা এ জ্বিহাদের ভয়াবহতা উপলব্ধি করেছে তখন, যখন তাঁরা এ জিহাদকে এমন একটি বিদ্যালয় রূপে দেখতে পেল, যাতে ছাত্র হয়ে প্রবেশ করছে মুসলিম বিশ্ব। তাঁরা এ জিহাদকে দেখতে পেল এমন একটি চূড়া ও আলোক স্তম্ভ বা লাইট হাউস রূপে, যা দেখে পথ চলছে মুসলিম উম্মাহর সকল সন্তানেরা । তারা দেখতে পেল একটি সম্প্রদায়ের লড়াই থেকে আফগানিস্তানের এ জ্বিহাদ বিশ্ব জিহাদে রুপান্তরিত হচ্ছে আর এ জ্বিহাদের প্রতিক্রিয়া গিয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে পৃথিবীর নির্যাতিত জনগণের উপর। যার ফলে আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, পোল্যান্ড ও পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনে গণজাগরণ ও আন্দোলন শুরু হয়েছে। সুতরাং-
‘ইয়াহুদীরা ! খাইবার থেকে বিতাড়িত হওয়ার কথা স্মরণ কর। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীন পৃথিবীতে পুনরায় বিজয়ের পতাকা উড়বে ‘।
জ্বিহাদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো
হ্যাঁ ! এ জ্বিহাদের ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী একটি আতংকও সৃষ্টি হয়েছে। তাই তাঁরা ইসলামের সন্তানেরা অন্তরে গ্রথিত জিহাদের এ পবিত্র শপথকে বিনাশ করার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে। ষ্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়টি গোটা বিশ্বের সাংবাদিকদের গল্পগুজবের বস্তু হয়ে দাড়িয়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে দাড়িয়েছে যে, এ পবিত্র জ্বিহাদ সিআইএ কর্তৃক পরিচালিত একটি মার্কিন খেলায় পরিণত হয়েছে।
মুজাহিদদেরকে কলঙ্কিত করতে তাঁরা বিভিন্ন নেতিবাচক ছবি তুলে মুজাহিদদের নামে প্রচার করছে। এ উদ্দেশ্যে তাঁরা একটি ছবি তৈরী করেছে এভাবে যে, জনৈক আবদুল কাদীর নামের কান্দাহারের একজন ডাকাত মাদক সেবন করছে। এরপর সে একটি ক্যাম্পে হামলা করছে। ওরা আফগানিস্তানের জিহাদকে কতিপয় মাদকসেবী আবদুল কাদীর প্রমুখের ব্যাপারে পরিণত করেছে, যারা মাদক ক্ষেত ধবংস ও নিষিদ্ধ করতে আসা কম্যুনিজমের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এদের শিরা উপশিরায় চলাচল করা সুপ্ত জ্বিহাদ বিদ্বেষের ঘৃণ্য প্রকাশ ঘটেছে আই.আর.সির হাসপাতালে। এ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করতে যাওয়া মহিলাদের শতকরা সাইত্রিশ জনের জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে যাতে তাঁরা আর কখনো সন্তান জন্ম দিতে না পারে। উম্মাহর বীর সন্তানদের অন্তরে সৃষ্ট কিতালের ভালবাসার প্রতি খৃষ্টবাদীদের সুপ্ত বিদ্বেষ তখন দেখা গেছে, যখন তাঁরা কান্দাহারে আহত মুজাহিদদের সেবা করতে গিয়ে বলল, তোমরা তো বড্ড বোকা। রাশিয়ার বিরুদ্ধে কেন লড়াই করছ?এখন যে তোমার পা কেটে গেছে তাঁর জন্য তো তোমাকে আজীবন বেকার ও পরের বোঝা হয়ে থাকতে হবে !
আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের রূপ এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। এ ষড়যন্ত্রকারীরা জার্মান ও জাপানের মত আফগানিস্তানকেও অস্ত্রমুক্ত করতে চায়। জার্মানরা যখন ১৯১৪ সনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করল এবং এরপর ২৫ বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করল, তখন তাঁরা বলল, জার্মানদের অন্তরে সৃষ্ট যুদ্ধের দাবানল নিভিয়ে ফেলার জন্য তাঁদেরকে খন্ড বিখন্ড করার বিকল্প নেই। তাঁরা জার্মানদেরকে দু’ভাগে ভাগ করে ফেলল। এক ভাগ রাশিয়ার ও আরেক ভাগ আমেরিকার। অতঃপর তাঁরা জার্মানদেরকে অর্থ ও কারিগরী কাজে ডুবিয়ে রাখে এবং অস্ত্র মুক্ত দেশে পরিণত করে। এভাবে তাঁরা সফল হলে আফগানিস্তানেও অর্থ ও শিল্প কাজে ডুবিয়ে রাখবে। আমি মনে করি ইনশাআল্লাহ্ তাঁরা সফলকাম হবে না। আল্লাহ তাঁদের ষড়যন্ত্র তাঁদের দিকেই ছুড়ে মারবেন।
وَاللَّهُ غَالِبٌ عَلَىٰ أَمْرِهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ [١٢:٢١]
“আল্লাহ্ তাঁর কাজে সফল। কিন্তু মানুষের অধিকাংশই তা জানে না।”[ইউসুফঃ২১]।
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (ওগঋ) নিকট তাঁরা প্রস্তাব রাখছে আফগানিস্তানকে অর্থ , কারিগরী ও চাষাবাদ প্রকল্পে ডুবিয়ে রাখতে এবং অস্ত্র মুক্ত করতে। ফলে আফগানিস্তান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়বিহীন দেহে পরিণত হবে। কারণ, তারা বিগত শত বছরে কয়েকবার আফগানদের হাতে মার খেয়েছে। এ যুদ্ধ ইউরোপিয়ানদের বিরুদ্ধে আফগানদের চতুর্থ যুদ্ধ। সকল যুদ্ধে তাঁরা আফগানদের হাতে পরাজিত হয়েছে।
আফগানদের প্রতিরোধ যুদ্ধসমূহ
১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে আফগান মুসলিম জনতা ১৭ হাজারের ব্রিটিশ বাহিনীকে সম্পূর্ণ রূপে খতম করেছে। কেবল ডা. ব্রাইডান নামের একজনকে না মেরে জীবিত রেখেছিল, যাতে সে মানুষের কাছে তাঁদের নির্মম পরাজয়ের কথা প্রচার করতে পারে।
১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে চার হাজারের ব্রিটিশ বাহিনী কাবুলে খতম হওয়ার পর তাঁরা বুখারায় আশ্রয় গ্রহণকারী একজন বন্দী নেতা আবদুর রহমান খানকে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসায়, যাতে সে ব্রিটিশদের ক্রীড়ানক হিসেবে কাজ করতে পারে। ১৯১৯ সালে যখন আফগান ইসলামী বাহিনী ভারতের সীমানা পার হয়ে ‘তিল’ পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং ইংরেজ সরকার তাঁদের দ্বিতীয়বার দিল্লী পৌঁছে যাওয়ার আশংকা করল, তখন টিসার্সেল লন্ডন থেকে আফগানিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
অতঃপর ধর্মহীন একজন আমানুল্লাহ খানকে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসায়, যে আফগানিস্তানকে কামাল আতাতুর্কের তুরস্কের পথে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।
জোট সরকার কী?
এখন হেলমন্দ, কান্দাহার ও অন্যান্য অঞ্চল যখন শহীদের রক্তস্নাত হয়েছে ও শহীদের লাশ পড়তে পড়তে যখন আফগানিস্তানের মাটি লাশের স্তুপ থেকে লাশের পাহাড় বহন করে চলছে, তখন তাঁরা আবারো জ্বিহাদের পূর্বেকার অবস্থাকে স্বাগতম জানিয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করতে চাচ্ছে। সেদিন জহির শাহ লাঞ্চিত ও অপদস্ত হয়ে আফগানিস্তান থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। জহির শাহ এখন ইটালিতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় আছে। তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন কাবুলে বাদশাহ থাকাকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার চেয়ে আরো মজবুত করা হয়েছে। জহির শাহর নিরাপত্তা সহায়তার জন্য ইটালিতে যেতে চাইলে এখন কাউকে ভিসা দেয়া হয় না। এরা কেন জহির শাহ ও তাঁর সগোত্রীয়দের যেমন আবদুল হাকীম তবিবী আফগানিস্তানে ফিরিয়ে আনতে চায় ? এ আবদুল হাকীম তবিবী সম্পর্কে দু’জন মুজাহিদ নেতা বলেন ‘আমরা সুইজারল্যন্ডে একটি গাড়ীতে করে তাঁর সাথে যাচ্ছিলাম। যখন আমরা খৃষ্টানদের একটি কবরস্থান দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন তিনি সেদিকে তাকালেন এবং আমাদেরকে বললেন, দেখ কবরের উপর ফুলের তোড়া কেমন সুন্দর লাগছে ! আমরা বললাম এটা খৃষ্টান কবরস্থান। এখানে অভিশাপ পড়ছে এবং রাত দিন আল্লাহর আযাব অবতীর্ণ হচ্ছে। তিনি আবারো বললেন দেখ এসব ফুল ও সৌন্দর্যের দিকে ‘। হ্যাঁ ! ওরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণের জন্য এ ধরণের লোকের নামই প্রস্তাব করছে !
ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের অনেকে এখন বলছে জোট সরকার কায়েম কর। কোয়ালিশন সরকার কী?জোট সরকার মানে হচ্ছে মুজাহিদ ও কম্যুনিস্টদের যৌথ সরকার। এ সরকার যেন এমন, যার প্রেসিডেন্ট আবু জাহল, প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আবু বকর রদিয়াল্লাহু আনহু ও শিক্ষামন্ত্রী আবু লাহাব। অর্থাৎ,জোট সরকার এমনই সরকার, যেখানে কুফর ও ইসলাম একাকার হয়ে যায়। হয়তো এরা একে ভবিষ্যতে কম্যুনিস্ট-ইসলামিক সরকার নামে অভিহিত করবে। নিরপেক্ষ সরকার মানে হচ্ছে ফুলের তোড়া দেখে খৃষ্টানদের কবরস্থানে দাফন হতে চাওয়া। আবদুল হাকীম তবিবীদেরকে দিয়ে সরকার গঠন করা, যাদের না আছে কোন আত্মমর্যাদাবোধ, না আছে পৌরুষ, না আছে তাঁদের দ্বীন-ধর্ম। দশটি বছর লাগাতার খুন ঝরেছে, লাশ পড়েছে ও ইজ্জত সম্মান লুণ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এ করুণ পরিস্থিতি তাঁদের কেশাগ্রও স্পর্শ করেনি। তাঁদের চোখে পানি আসেনি এবং শরীর থেকে এক ফোটা ঘামও ঝরেনি।
কারা ওরা? নিরপেক্ষা সরকার সেটা আবার কী? তৃতীয় পক্ষ আবার কোথাকার? এখানে কেবল দুটিই পক্ষ। একটি ইসলাম ও আরেকটি কুফর, একটি ঈমান ও আরেকটি নাস্তিকতা, একটি কম্যুনিস্ট ও আরেকটি মুসলিম। এখানে তৃতীয় পক্ষ বলতে কোন কিছু নেই। একটি শয়তানের দল ও আরেকটি রহমানের দল, একটি আল্লাহর বাহিনী ও আরেকটি লেনিন-ষ্টালিনের বাহিনী। এ দু’দলের মাঝে তৃতীয় কোন দল নেই। নিরপেক্ষতা ও তৃতীয়পক্ষ ইত্যাদি সব রাজনৈতিক পুতুল খেলা। জ্বিহাদ অবশ্যই চলতে হবে। পাকিস্তান এখন তাঁদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু রব্বুল আলামীনের দরজা সব সময় উন্মুক্ত। মুসলিম রাষ্ট্রগুলো তাঁদের সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে, মুসলমানদের সাহায্যের হাত জ্বিহাদ থেকে গুটিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু আকাশ ও পৃথিবীর সব ধন আল্লাহর হাতে, তাঁর হাতেই সব কিছুর চাবিকাঠি ।
قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَن تَشَاءُ وَتَنزِعُ الْمُلْكَ مِمَّن تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَن تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَاءُ ۖ بِيَدِكَ الْخَيْرُ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ [٣:٢٦]
“বলুন,হে যাবতীয় ক্ষমতার মালিক আল্লাহ্ ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা ছিনিয়ে নাও; আর যাকে ইচ্ছা সম্মান দাও এবং যাকে ইচ্ছা অসম্মান কর। তোমার হাতেই কল্যাণের চাবিকাঠি এবং নিঃসন্দেহে তুমি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।”[আলে ইমরানঃ২৬]।
هُمُ الَّذِينَ يَقُولُونَ لَا تُنفِقُوا عَلَىٰ مَنْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ حَتَّىٰ يَنفَضُّوا ۗ وَلِلَّهِ خَزَائِنُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَٰكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَا يَفْقَهُونَ [٦٣:٧]
“তারাই বলেছে, আল্লাহর রসূলের নিকট যারা অবস্থান করছে তাঁদের জন্য ব্যয় করো না। এতে তাঁরা চলে যাবে। কিন্তু আকাশ সমূহ ও পৃথিবীর যাবতীয় কিছুর চাবিকাঠি যে আল্লাহ্র হাতে সে কথা মুনাফিকরা উপলব্ধি করতে পারছে না। ”[সূরা আল-মুনাফিকূনঃ৭]।
তাঁর হাতেই সাহায্য, সবকিছু তাঁর ইচ্ছায়ই হয়, তিনিই সবকিছু নাড়া-চাড়া করেন, তার ইচ্ছার পরিবর্তন ও বিরোধীতাকারী কেউ নেই।
হে আফগান নেতৃবৃন্দ
হে আফগান নেতৃবৃন্দ ! রক্তের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন। আল্লাহকে ভয় করুন অশ্রু ও খন্ড বিখন্ড লাশের ব্যাপারে। জিহাদ অব্যাহত রাখুন। ইনশাআল্লাহ্ ! আমরা আপনাদের সাথে আছি।আমরা আপনাদেরকে কখনো অসহযোগিতা করব না। আমরা সব সময় আপনাদের পাশেই থাকব ইনশাআল্লাহ্।
“মুসলমান পরস্পর ভাই। কেউ তাঁর ভাইকে শত্রুর হাতে ছেড়ে দেয় না ও তাঁর উপর যুলুম করে না।”[বুখারী ও মুসলিম]
আমরা আপনাদেরকে মধ্যপথে ছেড়ে চলে যাব না। আল্লাহর কাছে দৃঢ়তা কামনা করি।ইনশাআল্লাহ্, সবাই অস্ত্র ত্যাগ করলেও আমরা অস্ত্র হাত থেকে ফেলবো না। আল্লাহ্ বলছেন-
وَلَيَنصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ [٢٢:٤٠]
“আল্লাহ্ তাঁকে অবশ্যই সাহায্য করবেন যে তাঁকে সাহায্য করে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ শক্তিবান ও ক্ষমতাধর”[হজঃ৪০]।
আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করুন এবং পূণ্যময় যাত্রা অব্যাহত রাখুন। কয়েক কদম সামনেই সাহায্য অপেক্ষা করছে।
আল্লাহ্ বলেছেন-
وَاللَّهُ مَعَكُمْ وَلَن يَتِرَكُمْ أَعْمَالَكُمْ [٤٧:٣٥]
“আল্লাহ্ তোমাদের সাথে রয়েছেন। তিনি কখনো তোমাদের কর্মের প্রতিদান হ্রাস করবেন না ”[মুহাম্মদঃ৩৫]
তিনি আরো বলেছেন-
أَلَيْسَ اللَّهُ بِكَافٍ عَبْدَهُ ۖ وَيُخَوِّفُونَكَ بِالَّذِينَ مِن دُونِهِ ۚ وَمَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ [٣٩:٣٦]
وَمَن يَهْدِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِن مُّضِلٍّ ۗ أَلَيْسَ اللَّهُ بِعَزِيزٍ ذِي انتِقَامٍ [٣٩:٣٧]
وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ ۚ قُلْ أَفَرَأَيْتُم مَّا تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ إِنْ أَرَادَنِيَ اللَّهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِي بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهِ ۚ قُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ ۖ عَلَيْهِ يَتَوَكَّلُ الْمُتَوَكِّلُونَ [٣٩:٣٨]
“আল্লাহ্ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নয় ? তাঁরা আপনাকে সৃষ্টির ভয় দেখাচ্ছে। আল্লাহ যাকে পথ ভ্রষ্ট করেন, তাকে পথ দেখানোর কেউ নেই। আর আল্লাহ্ যাকে পথ দেখান, তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই। আল্লাহ্ কি শক্তিধর ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী নন ? আর আপনি যদি তাঁদেরকে প্রশ্ন করেন, পৃথিবী ও আসমান সমূহকে কে সৃষ্টি করেছে ? তাহলে তাঁরা নির্দ্বিধায় বলবে আল্লাহ।তাঁদেরকে বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ আল্লাহ ছাড়া যে সব বস্তুকে তোমরা ডাক তাঁরা কি আল্লাহ আমার কোন ক্ষতি করতে চাইলে সে ক্ষতি থেকে আমাকে বাঁচাতে পারবে ? অথবা যদি তিনি আমার উপর কোন অনুগ্রহ করতে চান, সে অনুগ্রহকে রোধ করে দিতে পারবে ? বলুন আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। ভরসাকারীরা তাঁর উপরই ভরসা করে।”[সূরা যুমারঃ৩৬-৩৮]।
তাঁরা আল্লাহর অনুগ্রহকে রোধ করতে পারবে না এবং আল্লাহর ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারবে না।অতএব বলুন- ‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট’।
আর হে আরব যুবকেরা তোমরা দুনিয়াকে তালাক দিয়ে দাও। পথ চল এবং সীমান্ত অতিক্রম কর। তাহলে দু’কল্যাণের কোন একটি প্রাপ্ত হবে। হয়তো বিজয় নতুবা আল্লাহর ইচ্ছায় শাহাদাত বরণ। তোমাদের ভাইয়েরা তোমাদের অপেক্ষায় হিন্দুকুশের চূড়ায় প্রহর গুণছে।
হে আফগান নেতৃবৃন্দ ! এসব রক্ত, খন্ডিত লাশ, এসব বিধবা, এতীম এবং ড.মুহাম্মদ উমর, মৌলভী হাবীবুর রহমান, রব্বানী আতীস, ইঞ্জিনিয়ার হাবীবুর রহমান ও গোলাম মুহাম্মদ নিয়াযীর মত মনীষীদের রক্ত জহির শাহকে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রবাহিত হয়নি, জহির শাহর বিরুদ্ধেই হয়েছে।
আফগানরা আফগানী দাউদ, তারাকী, হাবীবুল্লাহ ও বাবরাকের বিরুদ্ধে লড়েছে। এ লড়াই কেবল রাশিয়ার বিরুদ্ধে হয়নি। এ দ্বন্দ্ব রাশিয়া ও নজীবকে নিয়ে নয়, এ দ্বন্দ্ব ইসলাম ও অনৈসলামের দ্বন্দ্ব । এ দ্বন্দ্ব আল্লাহর শাসন ও শয়তানের শাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে । এ দ্বন্দ্ব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মতবাদ প্রতিষ্ঠা এবং পুঁজিবাদ ও মার্কস-লেলিন-স্টালিনবাদ প্রতিষ্ঠার। ভাইয়েরা আল্লাহকে ভয় করুন, পথ চলুন, আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করুন, ইনশাআল্লাহ আমরা আপনাদের সাথে আছি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দৃঢ়পদ রাখুন।
ট্রাজেডির যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে
আমরা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর লোক এখানে সমবেত। আমি ফিলিস্তিনী। আল্লাহর কসম ! আমাদের সমস্যার সমাধান তখনই গায়েব হয়ে গেছে, যখন আমরা আমাদের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব আরব রাষ্ট্র সমূহের ঘাড়ে তুলে দিয়েছি।
অতএব, আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পাকিস্তান কিংবা অন্য কোন রাষ্ট্রের হাতে ছেড়ে দিয়ে ভুল করবেন না। ব্যাপার আপনাদেরই, আপনারাই তাঁর প্রতিনিধি এবং এর পেছনে কুরবানী ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন আপনারাই।
১৯৪৮ সালে যখন ইয়াহুদীরা পরাজিত হল, তখন তাঁরা পশ্চিমা রাষ্ট্র সমূহের কাছে আবেদন জানায়, যাতে তাঁরা ফিলিস্তিনীদের উপর চাপ সৃষ্টি ও তাঁদেরকে যুদ্ধ বিরতিতে রাজী করানোর জন্য আরব রাষ্ট্রসমূহের উপর চাপ প্রয়োগ করে। ফিলিস্তিনীরা ধোকা খেল ও যুদ্ধ বিরতিতে রাজী হল। এতে করে অস্ত্র চালানের জাহাজ ইসরাঈলে এসে নোঙ্গর করল। তারা পুনরায় ফিলিস্তিনীন্দের বিতাড়ন ও হত্যার পথ গ্রহণ করে। সাত আরব রাষ্ট্র ইসরাঈলের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করেই ফিলিস্তিন থেকে ফিরে এসেছে। ফিলিস্তিনে শান্তির মিশনে যাওয়া সাত আরব রাষ্ট্রের সৈন্যদের সেনাপতি ছিল ইংরেজ জুলুব পাশা। মিশর, সিরিয়া, ইরাক ও জর্ডান থেকে আগত ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা তাঁর জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। দুঃখজনক ! পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্রে আরব রাষ্ট্র সমূহের ট্যাংকবহর আন্দোলনের কর্মীদের ঘিরে ফেলে এবং তাঁদেরকে আত্মসমর্পণ নতুবা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকার জন্য প্রস্তাব দেয়। কারণ, ইসরাঈলের অগ্রগতির জন্য ইসলামী আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার যে বিকল্প নেই।
তাঁরা ইসলামী আন্দোলনকে দমানোর জন্য পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র সমূহের উপর চাপ প্রয়োগ করে। ১৯৫৫ সালে আবদুন নাসেরের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনকে দমন করা হয়, যাতে ইসরাঈল উন্নতি অর্জন করতে পারে। ইসরাঈলের আশু উন্নতির জন্য ১৯৬৬ সালে সাইয়েদ কুতুব ও তাঁর সহকর্মীদের বিশ্বাসঘাতকতার অপবাদ দিয়ে ফাসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়। তারপর যখনই ইসরাঈলের সম্প্রসারণ কিংবা শান্তি চুক্তির প্রয়োজন হয়, তখন ইসরাঈলের পার্শ্ববর্তী আরব নেতাদের কাছে এ রিপোর্ট পাঠানো হয় যে, আপনাদের সেনাবাহিনীতে কিছু দাড়িওয়ালা চরমপন্থী রয়েছে। তাদের থেকে সেনাবাহিনীকে মুক্ত রাখুন। বাইরের বিষয় নিয়ে চিন্তাকারীদের সেনাবাহিনী থেকে দূরে রাখুন, মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত করুন ও শিক্ষা ব্যাবস্থা সংস্কার করুন।
ওহে আফগানিস্তানের সন্তানেরা ! আপনাদের প্রতি অনুরোধ কোন দেশের হাতে আপনাদের সমস্যা ছেড়ে দিবেন না। সকল দেশ আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতিস্বীকারকারী। ইনশাআল্লাহ আপনারা সকল শর্ত ও চাপ থেকে মুক্ত। সারা দুনিয়া আপনাদেরকে সুনজরে না দেখলেও রব্বুল ইজ্জত আপনাদের প্রতি খেয়াল রাখবেন, আপনাদেরকে হেফাযত করবেন, আপনাদের সাহায্য করবেন। আল্লাহর রহমতের উপর ভরসা রেখে পথ চলুন, আল্লাহ আপনাদের সাথে রয়েছেন এবং আমরা আপনাদের পেছনে রয়েছি।