পাশ্চাত্য ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র (৯ম পর্ব) – শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম (রহঃ)

তোমাদের খাদ্য তোমাদের শত্রুর মুখে

কিন্তু জ্বিহাদ এ সকল আশঙ্কাকে দূরীভূত করে। মুসলমানরা বিজয়ী হলে গরীবরা ধনীতে পরিণত হয়। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

“আল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআলা আমার রিযিক রেখেছেন আমার বর্শার ছায়াতলে।” [আলজামিউস সগীরঃহাদীস নং ২৮৩১]।

এখন আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে একটি দুর্গ রয়েছে যাকে আহমাদ শাহ মাসউদ জয় করার কাছাকাছি পৌঁছেছে। আল্লাহ এ ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করুন। এ সপ্তাহে আপনাদেরকে উত্তরাঞ্চলের একটি বড় বিজয় ও অনেক গনীমতের সুসংবাদ দিচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ অনেক গনীমত। আমার ধারণা সাড়ে তিনশতটি ক্লাসিনকভ। আমার নিকট আবদুল ওয়াহিদ এসে জানাল যে, তাঁরা অনেক গনীমত পেয়েছে। সে ঐ অঞ্চলের লোক। কিন্তু তা কোন জায়গায় পেয়েছে তা ভুলে গেছে। ঐ গণীমতে একশত টন খাদ্য ছিল। আমরা যদি ওখান থেকে বাদাখশানে ঐগুলো নিয়ে যেতে চাই, তাহলে একটি খচ্চরের উপর করে পঞ্চাশ কেজির অধিক নেয়া যাবে না। অর্থাৎ, এক টন নিতে গেলে বিশটি খচ্চরের প্রয়োজন আছে। আর একশত টন নিতে গেলে প্রায় দু’হাজার খচ্চরের প্রয়োজন।

মুজাহিদগণ কমান্ডারের নিকট এসে বলতো, আমাদের জুতার প্রয়োজন। তিনি বলেন, তোমরা যদি পুরুষ হও, তাহলে তোমাদের জুতা তোমাদের সামনেই আছে। ঐ যে জুতায়পূর্ণ শত্রু ক্যাম্প সামনে, ওদিকে অগ্রসর হও। ফলে তাঁরা তাতে আক্রমণ করে জয় করে নিত এবং জুতা ও অস্ত্র অর্জন করত।

মুসলমানদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার প্রসঙ্গে-

ইমাম ইবনে তাইমিয়া ‘ মানুষ অভাবের কারণে না খেয়ে মারা গেলেও জিহাদে যাওয়া ফরয ‘ কেন বললেন, তার প্রসঙ্গে বলেন, ‘শত্রুরা যদি দুর্বল ও কাপুরুষ মুসলমানের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, তাহলে জ্বিহাদ চালিয়ে যাওয়ার স্বার্থে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা আমাদের জন্য ঐ সব মুসলমানদের হত্যা বৈধ করেছেন, যাতে আমরা ইসলাম ও মুসলমানের রক্ষার জন্য শত্রুর উপর বিজয় লাভ করতে পারি। অতএব, তাঁদেরকে শত্রুরা ঢাল হিসেবে ব্যবহারের সময় আমরা নিজেরা তাঁদের হত্যা করছি, আর অভাবের সময় তাঁরা আল্লাহর ইচ্ছায় মারা যাচ্ছে। আর ঢাল হিসেবে ব্যবহারের সময় তাঁদের হত্যার ব্যাপারটাতো ক্ষুধার কারণে মারা যাওয়ার চেয়ে আরো মারাত্তক। খাদ্যের অভাবতো এখন পৃথিবীর অনেক স্থানে বিরাজ করছে। আফ্রিকাতো ক্ষুধা ও খরার কবলে পতিত। এ থেকে আপনি তাঁদের কিভাবে রক্ষা করবেন। পৃথিবীর কোন অঞ্চলে স্থান করে বসুন এবং সেখানে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করুন, মুজাহিদদের সাহায্য করুন। মুজাহিদরা আপনার জন্য পৃথিবীর কল্যাণসমূহ নিয়ে আসবে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুসংবাদ

হযরত আদী বিন হাতেম রদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে আসলেন। এই আদী বিন হাতেমের আব্বা ত্বাই গোত্রের সর্দার ছিলেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একজন লোক এসে অভাবের অভিযোগ জানাল। এরপর আরেকজন এসে ডাকাতির অভিযোগ জানাল। আদী রদিয়াল্লাহি আনহু বড় লোক ছিলেন।আর বড়োলোকরা স্বভাবত শৌর্য বীর্য, টাকা পয়সা ও নিয়ম নীতি প্রিয় হয়। তাই তখন আদী রদিয়াল্লাহু আনহু-এর হাব ভাব দেখে বুঝা যাচ্ছিল যেন তিনি বলতে চাচ্ছেন, এ কেমন দ্বীন যাকে গ্রহণ করে তাঁরা সবাই ফকীর আর তাঁদের রাস্তা ঘাটগুলো চলার জন্য নিরাপদ নয়। এদের মাঝে নিরাপত্তা নেই, স্বচ্ছলতা নেই। আমরা রোমসহ সারা দুনিয়া বাদ দিয়েছি এদের জন্য ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাঁর দিকে তাকালেন এবং তাঁর মনে যা ছিল, তা যেন জেনে ফেললেন। বললেন, তুমি কী হীরায়* গেছো ? বললেন, না তবে তাঁর নাম শুনেছি ও তাঁকে চিনি।বললেন, যদি তোমার হায়াত দীর্ঘ হয়, তাহলে দেখবে, হীরা থেকে মহিলারা একাকী সফর করে আসছে এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছে। তাদের অন্তরে আল্লাহ ছাড়া আর কারও ভয় থাকবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালসাল্লাম সত্যই বলেছেন। আদী রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি মনে মনে বললাম, তাহলে ত্বাই গোত্রের সন্ত্রাসীদের কী অবস্থা হবে এবং সাআলীক ডাকাতরা কোথায় পালাবে, যারা মানুষের পকেটের টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য নির্দ্বিধায় তাঁদের হত্যা করে।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওরাসাল্লাম বলেন-

“তোমার জীবন দীর্ঘ হলে তুমি অবশ্যই কিসরা সম্রাটের রাজকীয় কোষাগার জয় করবে।বললা, কিসরা মানে কি কিসরা বিন হরমুয? বললেন, হ্যা ! এবং তাঁর সম্পদগুলো আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা হবে। আর তোমার জীবন দীর্ঘ হলে তুমি এটাও দেখতে পাবে যে, মানুষ তাঁর হাতের মুষ্ঠি ভরে স্বর্ণ রৌপ্য নিয়ে মানুষকে তা গ্রহণ করার জন্য ডাক দিবে। কিন্তু সবার স্বচ্ছলতার কারণে কেউ তা গ্রহণ করতে এগিয়ে আসবে না।”[বুখারী ও মুসলিম]।

সম্রাট কিসরা সে সময় বর্তমান সময়ের গর্বাচেভের মত ছিল। সে সময় যেমন বিশ্ব দু’ভাগে বিভক্ত ছিল । অর্থাৎ, একদিকে আহলে কিতাব রোমানরা ও অন্যদিকে অগ্নিপূজারী মাজুসরা, তেমনি বর্তমানেও বিশ্ব দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে নাস্তিক কম্যুনিস্ট ও অন্য দিকে খৃস্টীয় পাশ্চাত্য। আদী বিন হাতেম রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- ‘বাস্তবেই আমি মহিলাদেরকে হীরা থেকে একাকী সফর করে এসে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করতে দেখেছি এবং আমি সেসব লোকদের একজন, যারা সম্রাট কিসরার কোষাগার জয় করেছে।’ এ ব্যাপারে দু বাজুবন্ধ- এর কিসসা ইতিহাস প্রসিদ্ধ, যার ওয়াদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওরাসাল্লাম সারাকা বিন মালেক বিন জা’শাম রদিয়াল্লাহু আনহুকে দিয়েছিলেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা হযরত সুরাকা রদিয়াল্লাহু আনহুকে ঐ সময় পর্যন্ত জীবিত রেখেছিলেন। হযরত উমর রদিয়াল্লাহু আনহু যখন ঐ দু’বাজুবন্ধ এর কাছে পৌছলেন, তখন কাঁদলেন এবং বললেন, কোথায় সারাকা বিন মালেক বিন জা’শাম ? তখন সারাকা কাছে গেলে উমর রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘এ হচ্ছে তোমাকে দেয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুসংবাদ।’

আশাবাদ

যেমন ধরুন আমি আপনাকে বললাম, আগামীতে যখন আমরা মস্কো বিজয় করব, তখন ক্রেমলিন ভবন আপনাকে দেয়া হবে। তখন আপনি হয়তো বলবেন, আমার জন্য ক্রেমলিন ভবন, যে ছাদা ক্যাম্পে অবস্থান করে ? হ্যাঁ ! আপনি ছাদা ক্যাম্পে অবস্থানকারীর জন্যই ক্রেমলিন ভবন।ব্যাপারটা এখন আপনার কাছে সুদূর পরাহত মনে হচ্ছে। কিন্তু ইনশাআল্লাহ আমরা শীঘ্রই ক্রেমলিন জয় করে নিব। গর্বাচেভ হয়তো আপনাদের গৃহ পরিচালকের কাজ করবে, যদি আত্মহত্যা না করে বা মারা না যায়। আমি মনে করি ইনশাআল্লাহ সিকি শতাব্দীর মধ্যেই মুসলমানদের হাতে রাশিয়ার পতন ঘটবে। নতুবা রাশিয়া ও আমেরিকা থেকে শুরু করে পুরো বিশ্ব কেন আফগানদের প্রতি এত ভীত ? তারা মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে করে যাচ্ছে। তারা চিকিৎসার নামে পর্যন্ত ফ্রান্স, জার্মান ও ডেনমার্ক থেকে আসছে।

খৃষ্টানদের বিদ্বেষ

জার্মান ও ফ্রান্সের অনেক চিকিৎসক চিকিৎসার নামে আফগান মহিলাদের জরায়ু কেটে ফেলে, যাতে তাঁরা গর্ভবতী হতে না পারে। মহিলারা বাচ্চা প্রসবের জন্য তাঁদের চিকিৎসালয়ে ফেলে বাচ্চা প্রসব শেষে তাঁদের জরায়ু কেটে ফেলা হয়। কারন, তারা আফগানদের বংশ বৃদ্ধিতে শঙ্কাগ্রস্ত। জন্ম নিয়ন্ত্রণের ট্যাবলেট আফগানিস্তানে খুব জোরেশোরে বিতরণ করা হচ্ছে। আফগান মহিলারা তাঁদের কাছে এসে মাথা ব্যাথার কথা বললে তাঁরা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাইয়ে দেয়।

আমাদের ভাই ডাক্তার সালেহ মাজারশরীফ ও বলখে গিয়েছিলেন। তিনি বলছেন, আমি সেখানে যে জিনিসটি বেশী বিতরণ করতে দেখেছি, সেটা হচ্ছে জন্মনিয়ন্ত্রণ ও বন্ধ্যাকরণ ট্যাবলেট এবং মাদক।

পাশ্চাত্যের চিকিৎসকরা মুজাহিদদের মাঝে মাদক বিতরণ করছে। কেউ এসে পেটের ব্যাথার কথা জানালে তাঁরা তাঁকে মাদকের ট্যাবলেট খাইয়ে দেয়। কারণ, তাঁরা আফগানদের ইউরোপ দখল করার ভয় করছে।

জ্বিহাদ ভীতি

টাইমস ম্যাগাজিন লিখেছে, কয়েকদিন আগে তা আমি নিজেই পড়েছি যে, ‘রুশরা আফগানিস্তানে সামরিক পথের পরিবর্তে বন্ধ দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ছে।’ অর্থাৎ, আফগান রণাঙ্গনে তাঁরা বিজয়ের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যাওয়ায় জহির শাহকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমেরিকানদের সাথে চুক্তি করতে চাচ্ছে। তারা বলল, জহির শাহ বা তাঁর মেয়ে জামাই শাহ ওলীকে নিয়ে আসুন, আমরা আফগানিস্তান থেকে চলে যাব। এসব ফান্ডামেন্টালিষ্টদের ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ দিবেন না।ফান্ডমেন্টালিষ্ট কারা ? অর্থাৎ, মৌলবাদী যারা মূলনীতিকে আকড়ে ধরে। এরা সাইয়েফ, হেকমতিয়ার, রব্বানী ও ইউনুস খালেস।

প্রথম দু’জন ষ্ট্রীম ফান্ডামেন্টালিষ্ট।অর্থাৎ, কট্টর মৌলবাদী। শেষের দু’জন একটু হালকা আর বাকীরা মডারেট তথা মধ্যপন্থী। মধ্যপন্থী মানে অসুবিধার কিছু নয়। ব্রিটিশ ও আমেরিকানদের মত তাদেরকেও পরস্পর সহযোগী হিসেবে পাওয়া যাবে।

তাই এক মার্কিন পন্ডিত তাঁর এক লেখায় উল্লেখ করেছে যে, ‘রাশিয়া শীঘ্রই আফগানিস্তানে পরাজিত হবে। আফগানদের হাতে রুশ সাম্রাজ্যের পতন অবশ্যম্ভাবী। এরা রাশিয়া ভেদ করে ইউরোপের গভীরে পৌঁছে যাবে। তাই হে মার্কিনীরা ! তোমরা সে সময় তোমাদের দিকে ধাবমান ইসলামী স্রোতকে রোধ করা জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতে বাধ্য হবে। অতএব, এখন থেকে এ ক্যান্সারের বিস্তার বন্ধ কর।’

ম্যাট্রান অনেক দিন ধরে বলে আসছে যে, আফগানরা হচ্ছে ক্যান্সার, যা রুশ সাম্রাজ্যের দেহে ঢুকে পড়েছে। এ ক্যান্সার প্রতিদিন তাঁর দেহকে খেয়ে শেষ করে চলছে। এরা আফগানদের প্রচন্ড  ভয় করে।

আপনারা অবশ্যই জানেন ইয়াহুদীরা আফগানদের থেকে কত দূরে বাস করে। এ ইয়াহুদীরা আমেরিকার অভ্যন্তরে আফগানদের ইমিগ্রেশনের জন্য বিভিন্ন এজেন্সী গঠন করেছে। যে আফগান আমেরিকায় চলে যেতে চায়, তার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকেট সব কিছুর ব্যবস্থা করে এরা। কারণ, এরা দেখতে পাচ্ছে, জিহাদের চেতনা গোটা মুসলিম উম্মাহর শিরা-উপশিরায় চলাচল করছে। কেউ ফিলিপাইনী, কেউ মিশরী, কেউ সৌদী ও কেউ আলজেরী। এরা সবাই কেন আফগানিস্তানে এসেছে ? অবশ্যই আফগানিস্তানকে রক্ষা করার জন্য। কারন, আফগানিস্তান একটি ইসলামী ভূখন্ড। তো এরা আগামীতে তাঁদের দেশে ফিরে গিয়ে কী করবে ? এরা তাঁদের দেশে ফিরে গেলে পাশ্চাত্যের সকল স্বার্থ হুমকির সম্মুখীন হবে। এরা আফগানিস্তানে থাকলে রাশিয়া পরাজিত হবে। কিন্তু ভবিষ্যতে কি আমরা তাঁদের সম্মুখে দাঁড়াতে পারব ? এ ফিলিস্তিনী যুবক যে আফগানিস্তানকে কাফেরের থাবা থেকে মুক্ত করার জন্য লড়াই করছে , রক্ত দিচ্ছে , সে কি মসজিদে আকসাকে রক্ষা না করে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে ? বরং এর চেয়ে আরো বেশী ত্যাগ স্বীকার করবে। তাই মোসাদ তাঁদের পত্রিকায় লিখেছে, আমরা ক্ষান্ত হব না, শীঘ্রই পেশোয়ারের মুজাহিদ ক্যাম্পে হামলা চালানো হবে। কেন ? কারণ, তারা জেনেছে , যুবকরা এখান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ফিলিস্তিনে গিয়ে বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করছে।

ইয়াহুদীদের পত্রিকায় তাঁরা লিখেছে, আমি নিজেই তা পড়েছি। আলমুজতামা পত্রিকা মুজাহিদদের উপর যে রিপোর্ট করেছে সেটা তাঁরা তাঁদের পত্রিকায় ছেপেছে। পরে জর্ডানের কতিপয় ভাই আমাদের সাথে যোগাযোগ করে সতর্ক করে বলেছে যে, এ ইয়াহুদী দুষ্ট, তাই সতর্ক থাকবেন। তাদের একজন আমাকে একথাও বলেছে যে, কোন কোন ইসরাঈলী পত্রিকা স্বয়ং আপনার নাম উল্লেখ করেছে, তাই সতর্ক থাকবেন। এর কারণ হচ্ছে এ জিহাদী চেতনা, বিশেষ করে এ আফগান জ্বিহাদের প্রভাব এবং ইসলামী পুনর্জাগরণ।

এক ভাই আমাকে বলল যে, আমরা আপনার কিতাব ‘ আয়াতুর রহমান ফী জিহাদিল আফগান ‘ ফটোস্ট্যাট করে গোপনে পশ্চিম তীরের বিভিন্ন লাইব্রেরীতে দেয়ার পর ইয়াহুদীরা সন্ধান চালিয়ে তা নিয়ে নেয় এবং পুড়িয়ে ফেলে। এ হচ্ছে জিহাদ ভীতির কারণে।

এখন কোন ফিলিস্তিনী পাকিস্তান থেকে পশ্চিম তীরে প্রবেশ করলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইয়াহুদীরা ধরে নিয়ে যায়। শুধু পাকিস্তানে আসলেই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, যদিও তাঁরা পাঞ্জাব, সিন্ধু বা করাচীতে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য আগমন করে।

অতএব, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আল্লাহর সাথে থাকব, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি আমাদের শত্রুর হাতে ছেড়ে দিবেন না। গোটা বিশ্ব আমাদের বিরুদ্ধে । এমনকি মার্কিনীরাও আমাদের বিরুদ্ধে ।

মিথ্যা ধারণা

আরব বিশ্বের পত্র-পত্রিকা সমূহের কাছে ষ্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্রের খবর পৌছাল, তখন তাঁরা ব্যাপারটি এভাবে তুলে ধরল, যেন আফগানিস্তানে ষ্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়া আর কোন অস্ত্রই নেই। আমি তাঁদের বললাম, ষ্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র আফগানিস্তানের জ্বিহাদের জন্য কবে এসেছে ? মুজাহিদদের অধিকাংশ ফ্রন্টে এখনো ষ্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র পৌঁছেনি। বাস্তব কথা হচ্ছে আফগান জ্বিহাদের বদৌলতে মুসলিম উম্মাহর অন্তরে আল্লহর প্রতি যে ভরসা ও আস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা আমেরিকার কাছে খারাপ মনে হয়েছে। তাই তাঁরা এ ভরসা ও আস্থায় ফাটল সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে ষ্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্রের কাহিনী প্রচার করা শুরু করেছে। যাতে মানুষের মাঝে এ ধারণার সৃষ্টি হয় যে, আমেরিকাই হচ্ছে আফগান জ্বিহাদের সহানুভূতিশীল জননী ও পরিচর্যাকারী। আর এ জ্বিহাদ ইসলামের জ্বিহাদ নয়, বরং তারকাদের লড়াই, দুই পরাশক্তি আমেরিকা ও রাশিয়ার সংঘাত।যেখানে যাচ্ছি সেখানে ষ্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্রের কথাই শুনছি। আমি বললাম, আমেরিকা মুজাহিদদেরকে দেয়া প্রতিটি ষ্টিংগার ক্ষেপনাস্ত্রের বিনিময়ে মুসলমানদের কাছে সত্তর হাজার ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। আমি চ্যালেঞ্জ করছি যে, আমেরিকা আজ পর্যন্ত মুজাহিদদেরকে এক কাপ চাও দান করেনি।

হ্যা ! আমরা স্বীকার করি যে, আমেরিকা জাতিসংঘ ইত্যাদির মাধ্যমে আফগান মুহাজিরদেরকে সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে। এটা ঠিক যে, পাকিস্তানে সাড়ে তিন মিলিয়ন আফগান মুহাজির রয়েছে।এদের জন্য প্রতিদিন দশ মিলিয়ন রুটির প্রয়োজন হয়, দশ মিলিয়ন রুটির দাম দশ মিলিয়ন রুপি। আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি প্রভৃতি দেশসমূহ ও ইন্টারন্যাশনাল চার্চ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান ইউনিসেফের মাধ্যমে এ সাহায্য দিচ্ছে এটা ঠিক। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ করে বলব যে, আমেরিকা মুজাহিদদেরকে একটি অস্ত্রের টুকরোও দিয়েছে এ কথা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। এমনকি মুজাহিদদেরকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার জন্যও তাঁরা কোন সাহায্য করেনি। একবার তাঁরা আফগানিস্তানে শিক্ষা খাটের জন্য ষাট মিলিয়ন ও চিকিৎসা খাটের জন্য একশ মিলিয়ন ডলার নিয়ে আসল এবং পেশোয়ারে মুজাহিদ নেতা রব্বানী, হেকমতিয়ার, সাইয়াফ ও ইউনুস খালেসের সাথে যোগাযোগ করল। কিন্তু তাঁরা এ সাহায্য প্রত্যাখ্যান করলেন।

জ্বিহাদের চিত্র বিকৃতিকরণ

আমেরিকানরা এ জ্বিহাদের চিত্রকে বিকৃত করতে চায়। অনুরূপ এ উদ্দেশ্যে ব্রিটিশরাও তাঁদের টেলিভিশনে আফগান জ্বিহাদের ফ্লিম প্রদর্শন করে। এতে মুজাহিদদেরকে দেখানো হয় মাদকদ্রব্য সেবনরত অবস্থায়। মাদকদ্রব্য সেবনের পর তাঁরা নৃত্য শুরু করে। আর নৃত্য শেষে তাঁরা তাঁদের সম্মুখেই শত্রু ঘাটিতেই আক্রমণ শুরু করে। আফগান জিহাদ যেন কতিপয় মাদকসেবীদের কাজ এটা প্রচারের উদ্দেশ্যেই তাঁরা এসব করছে।

ফ্রান্সের সাংবাদিক লুইস আফগানিস্তান নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করে। তার পত্রিকার কভারে আফগানদের চিত্র এভাবে তুলে ধরা হয় যে, তারা মানুষ নাকি বানর তা বুঝাই যায় না।আফগানদের সম্মানের প্রতীক পাগড়ী নিয়ে তোলা কোন চিত্র তাঁদের পত্রিকায় দেখা যায় না। দেখা যায় তাঁরা খেলনা ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বসে আছে। পাশ্চাত্যের এসব লোকেরা আফগানদের ঘৃণা করে। তাই তাঁরা তাঁদের চিত্র এভাবেই তুলে ধরে। তারা বলেছে, আমরা গোটা বিশ্বকে আমাদের সংস্কৃতির অনুসারী বানিয়েছি এবং বিশ্বাসী আমাদের আধিপত্য মেনে নিয়েছে। কেবল হিন্দুকুশ পর্বতমালার এসব ছাগলরাই এর বাইরে রয়ে গেছে। আমরা তাদেরকে আমাদের প্রতি দুর্বল বানাতে পারিনি। এরা আফগানদের পাহাড়ী ছাগল অথবা মরু এলাকার যাযাবর হিসেবে আখ্যায়িত করতে আরাম বোধ করে।

পুনর্জাগরণ

আমি বলব, শুষ্ক ভাঙ্গা লতাপাতায় যেমন আগুন ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি এ জ্বিহাদের বহ্নিশিখাও মুসলিম উম্মাহর মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে। আলহামদুলিল্লাহ, আপনারা এখানে দু’শ দশজন উপস্থিত আছেন। গত বছরের এমন সময়ে এখানে আমি আবু বুরহান ও আরেকজনসহ মোট তিনজনই উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু এক বছরের মধ্যে পরিবর্তন কিভাবে এল ? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা মানুষের বক্ষকে জ্বিহাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং আফগানিস্তানের জিহাদকে এমন একটি ঘাটিতে রুপান্তরিত করেছেন, যেখানে মানুষ জ্বিহাদের জন্য একত্রিত হচ্ছে।

দু’দিন পূর্বে আমি সৌদিআরব থেকে প্রত্যাবর্তন করেছি। আমি সেখানে জ্বিহাদের প্রতি যুবকদের আসক্তি দেখে বিস্মিত হয়েছি। তারা বহুদূর থেকে জ্বিহাদের আলোচনা শোনার জন্য ছুটে এসেছে।ভুল তথ্য পেয়ে শায়খ বিন বায প্রথমে আফগান জ্বিহাদের বিপক্ষে ফতোয়া দিয়েছিলেন। তাই তাঁরা তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর ফতোয়ার প্রতিবাদ জানাল। এটা একমাত্র জ্বিহাদের প্রতি ভালোবাসার ফল।

আমি আলকাছিমে গিয়েছিলাম। আলকাছিম একটি বিচ্ছিন্ন ও দূরবর্তী এলাকা। জিদ্দা, মদীনা, মক্কা বা রিয়াদের মত কোন শহর নয়। এটা বিশ্ব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। জিহাদের তথ্যসমূহ সেখানে স্পষ্টরুপে পৌঁছে না। আমি শায়খ ইবনে উছাইমীনের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলাম। ঐ সময় দেখলাম পূর্বাঞ্চল থেকে দু’জন যুবক আসল শায়খের নিকট আফগান জ্বিহাদের বিধান জিজ্ঞেস করার জন্য। তাদের একজন আফগান জ্বিহাদ সম্পর্কে আজে বাজে কথা বলা শুরু করল। আমি তাঁদের সামনে ছিলাম। ইবনে উছাইমীন তাঁকে বললেন, তুমি তাঁদের ব্যাপারে কী জান বল ? সে অনেক কিছু বলল। তার কথা শেষে আমি শায়খের সামনে আফগান জ্বিহাদের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরলাম। ফলে ইবনে উছাইমীন তাঁকে বললেন, তুমি এ ব্যাপারে কোন কথা বলবে না। তুমি এসব বললে গোনাহগার হবে। কারণ, তুমি মানুষকে জ্বিহাদ থেকে বিরত রাখছ। সে বলল, আমি তা অমুকের নিকট শুনেছি।

উনাইযাতে ইশার পর আমি বক্তব্য রেখেছিলাম। শায়খ বললেন, আপনি আগামীকাল জুমার পরও বক্তব্য রাখবেন। যারা আফগানিস্তানের জিহাদ সম্পর্কে ভুল ধারণা ছড়াচ্ছিলেন তাঁদের কাছে বিষয়টি খারাপ লাগল। তাই তাঁরা পরদিন শায়খের নিকট সীলমোহরকৃত একটি কাগজের পৃষ্ঠা হস্তান্তর করলেন। আমি জানি না এরা এসব কোথায় পেলেন। সেখানে লেখা আছে যে, ‘বিন বায ও ইবনে উছাইমীন কাফের।’ তাঁদের পিছনে নামায পড়া জায়েয হবে না। আর তাতে আবদু রাব্বির রাসূলসহ সাত দলের নেতাদের স্বাক্ষর বিদ্যমান। শায়খ আমাদের বললেন, কাগজটা দেখুন শায়খ আব্দুল্লাহ। আমি তা দেখে বললাম, আল্লাহর কসম ! এটা  মিথ্যা, বানোয়াট। সেদিন শায়খের জুমার খুতবা ছিল জ্বিহাদ সম্পর্কে।

মাতা পিতার অনুমতি

নামায শেষে লোকজন বসলেন। আমি বক্তব্য রাখলাম। মসজিদ অর্ধেকের চেয়ে বেশী ভর্তি ছিল।প্রায় দেড় ঘন্টা বক্তব্য রাখলাম। কোন মানুষ উঠল না। অতঃপর শায়খের সাথে দুপুরের খাবার খেলাম। শায়খকে বললাম, আফগানিস্তানের জ্বিহাদের ব্যাপারে আপনার মতামত কী?বললেন, ওয়াজিব। অর্থাৎ ফরয। ওয়াজিব আর ফরয একই জিনিস। অতঃপর বললাম, এতে অংশগ্রহণ করার জন্য কি মাতা পিতার অনুমতি প্রয়োজন ? বললেন, ছেলে যদি একজন হয় এবং মাতা পিতা যদি তাঁর প্রতি মুখাপেক্ষী হয়, তাহলে অনুমতি নেয়া আবশ্যক। তা না হলে অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই। এদিন বুরাইদার একটি মসজিদে মাগরিবের নামাযের পর আমার বক্তব্যের প্রোগ্রাম ঠিক করা হল। মসজিদ ভর্তি ছিল। মাগরিবের পর থেকে লাগাতার সোয়া তিন ঘন্টা বক্তব্য রাখলাম। মসজিদ ভর্তি। কেউ উঠেনি। অতঃপর আমি তাঁদের কাছে অযু করার জন্য অনুমতি চাইলাম। তারা বললেন, যান। আমি অযু করতে গেলাম। সবাই অপেক্ষা করল। কেউ বের হয়নি। আমি ফিরে এসে তাঁদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিলাম। পরের দিন রিয়াদের এক মসজিদে বাদ মাগরিব আমার বক্তব্যের প্রোগ্রাম ঠিক করা হল। আমি আসলাম। ইতোমধ্যেই ইমাম সাহেব নামায শুরু করে দিয়েছেন। আমি অযু করছিলাম। এতক্ষণে যুবকদের আগমণে পুরো মসজিদ এলাকা ভর্তি হয়ে গেল। আমি তাদেরকে ডিঙ্গিয়ে সামনে গেলাম। মসজিদের সাথে সংলগ্ন সকল রাস্তা গাড়ীতে ভর্তি হয়ে গেল। এ এলাকায় আর কোন গাড়ী চলাচল সম্ভব হচ্ছিল না। মসজিদের মানুষ জুমআর দিগুণ হল। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের আগমনও ঘটল।তাঁদের কেউ বসা, কেউ দাড়ানো। সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত কথা চলল। মাঝখানে অবশ্যই ইশার নামায পড়েছি। অতঃপর চলে আসতে বের হতে চাইলাম।

ইমাম সাহেব বললেন, শায়খের চলে যাওয়ার পথ দেন, সালাম দেয়ার জন্য ভিড় করবেন না।  কিন্তু লোকজন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করেনি। বাধ্য হয়ে ইমাম সাহেব মসজিদের পেছনের দরজা খুললেন। আমরা ঐ দরজা দিয়ে বের হলাম। কিন্তু ঐ দিকেও লোকজন এসে ভিড় জমাল।আমাদের পিছনে তাঁদের ভিড়ের কারণে আমার টুপি পড়ে গেল। আমি বাসায় গেলাম টুপিবিহীন অবস্থায়। গাড়ীতে উঠার সময়ও তাঁদের ভীড় থেকে রক্ষা পাইনি। সেখানেও তাঁরা এসে গাড়ী ধরে রাখল। কেবল সালাম করার জন্যই তাঁদের এতসব ভিড়।

আমার বক্তব্য শেষে ইমামা সাহেব বলেছিলেন, কেউ জ্বিহাদের জন্য কিছু দান করতে চাইলে করতে পারেন। এসব লোকেরা এসেছিলেন শুধু বক্তব্য শোনার জন্য। চাদার কথা কারও অন্তরে ছিল না। তারপরও তাঁরা যা ছিল দান করল। মসজিদের দরজায় একটি কার্টুন ছিল। শুধু এ একটি মাত্র কার্টুনে তাঁদের দান এসে জমা হল দু’ লক্ষ আটষট্টি হাজার রিয়েল।

মাদরাসাতুল যাবাত-এর পরিচালক আমার ব্যাপারে জানার পর বললেন, আমরা চাই আপনি আমাদের মাদ্রাসায় এসে কিছু বলুন। আমি তাঁদের মসজিদে বক্তব্য রাখার সময় যখন একজন শহীদের ঘটনা শোনালাম, তখন কান্নার আওয়াজে মসজিদ ভারি হয়ে উঠল। মানুষের হৃদয় গলে গেল। এটা অবশ্যই আমার জন্যে নয়। জিহাদের জন্য, জিহাদের ব্যাপারে কিছু শোনার জন্য।মহিলারা কাগজের টুকরায় লিখে পাঠাচ্ছে, আমরা জিহাদে যেতে চাই, কিভাবে আমরা জিহাদে যেতে পারি ? মোটকথা, একের পর এক সবাই জ্বিহাদের ব্যাপারে জানতে চাচ্ছে। সাংবাদিকরা এসে জ্বিহাদের ব্যাপারে জানতে চাচ্ছে। তারা আমার শয়নকক্ষে এসে আমার শায়িত অবস্থায় পর্যন্ত জিহাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য পীড়াপীড়ি করছে। কারণ, তারা দেখতে পাচ্ছে জ্বিহাদের প্রতি মানুষের বিপুল সাড়া।

সোমবার তিনটা বাজে আমি রিয়াদ থেকে জেদ্দার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। মাগরিবের আযানের সামান্য পূর্বে ওখানে গিয়ে পৌছালাম। দেখলাম, ওখানে যুবকরা একটি মসজিদে আমার বক্তব্যের প্রোগ্রাম ঠিক করে রাখল। ওখানে বক্তব্য রাখার পর একই দিন আরেকটি মসজিদেও বক্তব্য রাখতে হল ।

সেই বিষাক্ত নাগিনী ব্রিটেন

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-

هَا أَنتُمْ أُولَاءِ تُحِبُّونَهُمْ وَلَا يُحِبُّونَكُمْ وَتُؤْمِنُونَ بِالْكِتَابِ كُلِّهِ وَإِذَا لَقُوكُمْ قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا عَضُّوا عَلَيْكُمُ الْأَنَامِلَ مِنَ الْغَيْظِ ۚ قُلْ مُوتُوا بِغَيْظِكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ [٣:١١٩]

إِن تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِن تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُوا بِهَا ۖ وَإِن تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا ۗ إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ [٣:١٢٠]

“হে মুমিনগণ ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ রূপে গ্রহণ করো না। ওরা তোমাদের সর্বনাশ সাধনে ত্রুটি করে না। তোমরা কষ্টে পতিত হও এটাই তাঁরা কামনা করে। তাদের মুখ থেকেও তোমাদের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়েছে। আর যা তাঁদের অন্তরে লুক্কায়িত আছে তা আরো মারাত্মক। যদি তোমরা উপলব্ধি করতে চাও, তাহলে এজন্য তোমাদের ব্যাপারটা সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেছি। দেখ, তোমরা তাদেরকে আন্তরিক ভালবাস, কিন্তু তাঁরা তোমাদের প্রতি মোটেই আন্তরিকতা রাখে না। আর তোমরা সকল কিতাবের উপর বিশ্বাস রাখ (কিন্তু তাঁরা তোমাদের কুরআনকে বিশ্বাস করে না)। তাঁরা যখন তোমাদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে আমরা (তোমাদের ন্যায়) ঈমান এনেছি। আর যখন তাঁরা তোমাদের কাছ থেকে আলাদা হয়, তখন তোমাদের প্রতি ক্ষোভে আঙ্গুল কামড়ায়। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাঁদের অন্তরের বিষয় সমূহের ব্যাপারে অবগত আছেন। তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়, তাহলে তাঁদের খারাপ লাগে। আর যদি তোমাদের কোন ক্ষতি হয়, তাহলে তাঁরা তা নিয়ে আনন্দবোধ করে। তবে যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর। তাহলে , তাঁদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তারা যা কিছু করছে, তা নিশ্চয়ই আল্লাহর আয়ত্বাধীনে রয়েছে।”[আলে ইমরানঃ১১৯-১২০]।

এ পবিত্র আয়াতগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি মদীনায় তাঁর ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক প্রচেষ্টার সময় অবতীর্ণ হয়েছিল। অর্থাৎ, বদর ও উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পর। উহুদ যুদ্ধ ইসলামী আন্দোলনের একটি অন্যতম শিক্ষনীয় ঘটনা ছিল, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের অন্তর ও চিন্তাধারায় পরিবর্তন এনে দিয়েছিল। যে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ইচ্ছুক, তার উচিত হবে সাইয়েদ কুতুব রহ.-এর ‘ ফী যিলালিল কুরআন’ দেখে নেয়া। তিনি যুদ্ধের ঘটনাবলী এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যেন মনে হবে তিনি প্রতি মুহূর্তে প্রত্যক্ষ করা পূর্বক যুদ্ধের তাজা তাজা সংবাদ নিয়ে আসছেন।

এ আয়াতগুলো আমাদেরকে এমন কিছু লোকের ব্যাপারে সতর্ক করছে, যারা বসবাস করে আমাদের মাঝে, যাদের গায়ের রঙ আমাদের মত এবং যারা কথা বলে আমাদের মত ভাষায়। এরা মুসলমানদের পরাজয় ও দুর্ভোগ কামনা করে, তাদের অসহায়ত্ব ও পতনের প্রতীক্ষায় থাকে।আর তাঁরা তখনই আনন্দবোধ করে, যখন কুফরের ঝান্ডাকে সমুন্নত ও ইসলামের ঝান্ডাকে পতিত অবস্থায় দেখে। আমি যখন এ কথা বলছি, তখন আরবের বামপন্থী ও আফগানিস্তানের সুবিধাবাদীদের কথা আমার মনে পড়ছে।

সবার দৃষ্টি এখন আফগানিস্তানের প্রতি

ভাইয়েরা ! এখন গোটা দুনিয়ার দৃষ্টি, কণ্ঠ, মিডিয়া, কলম ও আলো পৃথিবীর যে ভূখন্ডকে নিয়ে ব্যস্ত, তার নাম আফগানিস্তান। আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে একটি বিশেষ বিভাগ খোলা হয়েছে। এর নাম আফগানিস্তান বিভাগ। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মিশন নামে একটি শিক্ষাগার ছিল। ওটার নাম পরিবর্তন করে এখন নাম দেয়া হয়েছে আফগানিস্তান স্কুল। উদ্দেশ্য আফগানিস্তানের ঘটনাবলী সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা।

তাঁরা পৃথিবীতে ইসলাম পুনরায় বিজয় লাভ করায় বয়ে ভীত , কম্পমান। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোর দিকে চেয়ে দেখুন এবং পত্র পত্রিকা ও সাময়িকীগুলো পড়ে দেখুন। দেখবেন আফগানিস্থানই এখন লেখার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। কারণ, চলতি শতাব্দীর গোড়ার দিকে পশ্চিমারা ইসলামী খেলাফত ধ্বংস করার পর আফগানিস্তানই একমাত্র সেই দেশ, যেটা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিতে সক্ষম হয়েছে।

যে  আফগানরা জ্বিহাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তারা এখনও রোম থেকে আফগানিস্তানে মমিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এরা এবং আরব বিশ্বের বামপন্থীদের কথা আমরা ভুলিনি। কুয়েতের ‘ আসাসিয়াসাহ ‘ ও ‘ আলওয়াতান ‘ ও আমিরাতের ‘ আলখলীজ ‘ সহ অনেক পত্রিকা নোংরা ও তথাকথিত বাম চিন্তাধারা প্রচারের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এ আলওয়াতানকে কুয়েতী ‘ আলওয়াতান’  না বলে সোভিয়েত বা রাশিয়ান ‘ আলওয়াতান ‘ বলা উচিত।

‘আলওয়াতান ‘লিখেছে , ‘আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ কার স্বার্থে অব্যাহত রয়েছে ?’ ‘উপসাগরীয় অর্থ ব্যয়ে আফগানিস্তানে রক্ত প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে’  ইত্যাদি। সোভিয়েত ইউনিয়ন তাঁদের পার্লামেন্টে নাকি হাজী শাকূর নামে একজন মুসলমানকে বিসমিল্লাহ বলার অনুমতি দিয়েছে। তাই পত্রিকাটি সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়ে গর্ববোধ করছে। আল্লাহই ভাল জানেন লোকটি শাকূর ‘ কৃতজ্ঞ ‘ না কাফূর ‘ নাফরমান ‘। একজন মুসলমানকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পার্লামেন্টে বিসমিল্লাহ বলার অনুমতি প্রদান বিরল ও বিস্ময়কর ঘটনা।

আমাকে একজন টেলিফোন করে বলল, আমার চোখ দিয়ে অশ্রু বের হচ্ছে। বাস্তবেই কি নজীব ক্ষমতা হাত ছাড়া হবার পর খাইবারের পথে পুনরায় পৌঁছে যাচ্ছে ? আমি বললাম, ভাই নিশ্চিত থাকুন। মাত্র দু’দিন আগে নজীব রেডিওতে ঘোষণা দিয়েছে যে, আমরা একটি শর্তে জালালাবাদ ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে পারি। আর তা হচ্ছে, আমাদের চলে আসার পথে মুজাহিদরা আমাদের উপর কোন প্রকার আক্রমণ চালাতে পারবে না। বলল, আপনি কি সত্য বলেছেন ? আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি সত্যই বলছি। বললাম, যারা বৃহৎ সোভিয়েত সাম্রাজ্যের উচ্ছিষ্ট খেয়ে জীবন ধারণ করছে, সে সব বামপন্থীদের কথা বিশ্বাস করবেন না। আফগানিস্তানে পশ্চিমা ও আন্তর্জাতিক কুচক্রী মহলের কিছু দালাল জহির শাহ নামের সে মমিকে আফগানিস্তানে ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে, যে অপমানিত হয়ে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল।আমি ঈদের খুতবায় কান্দাহারের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম। কিছু লোক যারা এতীমের সম্পদ খেয়ে নিজেদের পেটকে মোটা তাজা করে আসছিল, তারা শুরু থেকে মুজাহিদদের জন্য জগদ্বল পাথরের ন্যায় কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এসব লোকেরা কান্দাহার বিমান বন্দরের কাছে ফাকাগুলি ছুড়ে ঘোষণা দিল যে, বড় বড় বীররা সক্ষম না হলেও তাঁরা বিমান বন্দরের বাউণ্ডারী ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে। অতঃপর কান্দাহারের গভর্নর মুজাহিদদের রক্ত নিয়ে ব্যবসাকারীদের কাছে আত্মসমর্পণের ঘোষণা দিল। অতঃপর এ রক্ত ব্যবসায়ীরা বিমান বন্দরে জহির আহহর আগমনের খবর দিল। তাকে এসব নির্বোধ মুহাজির ও পাশ্চাত্যের কাছ থেকে অর্থ লাভ করা লোকদের মাধ্যমে স্বাগতম ও অভ্যর্থনা জানিয়ে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় বসানোর ঘোষণাও দেয়া হল।

পর্দা নিয়ে যুদ্ধ

এখানে লক্ষণীয় যে, তাঁরা জহির শাহকে ফিরিয়ে আনার জন্য সেই কান্দাহারকে নির্বাচিত করেছে, যার লোকদের অন্তরের গভীরে জহির শাহর প্রতি বিদ্বেষ বিদ্যমান। মুসলিম নারীদের কাছ থেকে পর্দা ছিনিয়ে নেয়ার জন্য জহির শাহর পাঠানো সৈন্য ও তাঁদের কমান্ডার খান মুহাম্মদের কথা কান্দাহারের মানুষ এখনো ভুলতে পারেনি। সে সময় মুসলিম নারীরা কুরআন শরীফ মাথায় নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে পুরুষদের কাছে সাহায্য চেয়ে বলেছিল, ওহে আল্লাহর সৈন্যরা এদেরকে প্রতিরোধ কর। সেদিন জহির শাহর এ অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এক হাজার সাতশজন নারী-পুরুষ শহীদ হয়েছিল। তারা তাঁদের মা-বোনদের মুখ ঢাকার ছোট্ট একটি কাপড়ের টুকরা রক্ষা করার জন্য মাঠে নেমেছিল।

সামান্য কয়েকটি টাকার বিনিময়ে কম্যুনিজমের কাছে আফগানিস্তান বিক্রয়কারী এ দুষ্ট ও পাপিষ্ট কাফির জহির শাহর প্রতি সুপ্ত বিদ্বেষ মানুষের অন্তরে এখনও বিদ্যমান। পরে এ কম্যুনিজম মতবাদ পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রী বাবরাক অতঃপর তারাকী, হাফীযুল্লাহ আমীন, ও নজীব প্রমুখের কোলে লালিত-পালিত হতে থাকে। চল্লিশ বছর শাসন করার পর সে যখন দেশ ছেড়ে যাচ্ছিল, তখন তাঁর জন্য কেউ আক্ষেপ করেনি। ব্রিটেন ও আমেরিকা এখন নারী ও মাদকাসক্ত এ পাপিষ্টকে আফগানিস্তানে আবার ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে।

আফগানিস্তান নিয়ে ব্রিটেনের ষড়যন্ত্র

ব্রিটেন হচ্ছে সে বিষাক্ত নাগিনী, যে তাঁর বিষ দিয়ে মুসলিম অঞ্চলগুলোকে ধ্বংস করেছে। সে এখন জহির শাহকে ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্রের বৃহৎ অংশীদার এবং জহির শাহও তাঁর পিতার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর স্বপ্ন দেখছে। এ জহির শাহর পিতা নাদির খানকে যেমন আফগানবাসী কাঁধে করে মিরানশাহ থেকে তারমানজিল এবং সেখানে থেকে পাকতিয়া হয়ে কাবুলে নিয়ে এসেছিল, তেমনি জহির শাহও স্বপ্ন দেখে আফগানবাসী তাঁকে আবার আফগানিস্তানে সেভাবে নিয়ে আসুক। এ নাদির খানকে ক্ষমতায় আনার ক্ষেত্র তৈরী করেছিল ব্রিটেন। কারণ, অভিশপ্ত কামাল আতাতুর্কের সাথে সাক্ষাৎ করে আফগান শাসক আমানুল্লাহ খান তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে মুসলিম নারীদের সম্ভ্রম রক্ষার প্রধান হাতিয়ার পর্দার বিধান বাতিল করে এবং একাধিক বিয়ে নিষিদ্ধ করে। ফলে আফগান গোত্রীয় নেতা বাচ্চা ও সাকা (প্রকৃত নাম হাবীবুল্লাহ) আফগানবাসীকে নিয়ে আমানুল্লাহ খানকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। বাচ্চা ও সাকা ইসলাম প্রেমিক ও ব্রিটিশ বিদ্বেষী ছিলেন। তিনি বলতেন, ‘আমি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে ধ্বংস ও মস্কো বিজয় করা পর্যন্ত জ্বিহাদ চালিয়ে যাব।’ তাই ব্রিটেন তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তাঁর মন্ত্রী মাসউদকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে এবং নাদির খানকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য আফগান গোত্রগুলোর মাঝে দেদারছে অর্থ ঢালে। ফলে আফগান গোত্রগুলো নাদির খানকে বরণ করে ক্ষমতায় বসায়। বিষাক্ত নাগিনী ব্রিটেন ইসলাম পন্থী বাচ্চা ও সাকাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষান্ত হয়নি। নাদির খানের মাধ্যমে তাঁকে হত্যাও করে। তিনি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যখন তাঁর বাহিনী নিয়ে কাবুল ত্যাগ করেন, তখন নাদির খান চিঠি লিখে তাঁকে কাবুলে নিরাপত্তা দেয়ার অঙ্গীকার করেন। চিঠিটি কতিপয় আলেমের মাধ্যমে তাঁর নিকট পাঠানো হলে তিনি কাবুলে ফিরে আসেন। কাবুলে ফিরে আসলে তাঁকে বিশ্বাসঘাতকতা করে গ্রেফতার করা হয়। কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কিছুদিন রাখার পর প্রভু ব্রিটেনের নির্দেশে নাদির খান (জহির শাহর পিতা) তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়। তাঁর শাহাদাতে আফগানিস্তান এক মুজাহিদ নেতা হারাল।

জ্বিহাদ বিলুপ্তির ব্রিটেনী ষড়যন্ত্র

ব্রিটেন কি জ্বিহাদ ও মুজাহিদের উপস্থিতি সহ্য করতে পারে ? সে এ অঞ্চলে জ্বিহাদ বিলুপ্তি করতে কিছু নতুন নতুন ধর্ম আবিস্কার করে। নবুওয়াতের দাবীদার মির্জা গোলাম আহমাস কাদিয়ানীর মাধ্যমে কাদিয়ানীবাদের জন্ম দিয়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনীত জিহাদকে রহিত করার চেষ্টা চালিয়েছে। অনুরূপ বাবিয়া ও বাহাঈবাদেরও জন্ম দিয়েছে একই উদ্দেশ্যে।জিহাদ বিলুপ্ত করে ইসলামকে রক্ত শূন্য করার জন্য।

হাবীবুলাহকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হল । তিনি তাঁর প্রভুর নিকট চলে গেছেন। অতঃপর নাদির শাহকে হত্যা করার জন্য আল্লাহ একজনকে ঠিক করে দেন। এক যুবক একটি জনসভায় করমর্দন করতে গিয়ে তাকে হত্যা করে। অতঃপর তার ছেলে এ মমির (জহির শাহ) আগমন ঘটে। এখন ব্রিটেন তাকে আফগানিস্তানে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার সামনে এখন অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরী হয়েছে। এখন আফগানিস্তানে জিহাদের ঝাণ্ডা বহনকারী ও মুজাহিদ নেতারা রয়েছে, রয়েছে সত্যিকারের আলিম, সৎ জনসাধারণ ও ইসলামী আন্দোলনের বেগবান স্রোত। অতএব, সে এসব বাধা কীভাবে অতিক্রম করবে ।সব বাধা সে বাধার ন্যায় হাল্কা না, যা তার বাপকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার সময় অতিক্রম করতে হয়েছিল।

তাই এখন ব্রিটেনী ষড়যন্ত্রের নতুন ব্যবস্থাপত্র হচ্ছে পেশোয়ার ও আফগানিস্তানে অবস্থান করা মুজাহিদ নেতৃবৃন্দকে শেষ করে দেয়া । ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থা আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশের কাছে যে রিপোর্ট পেশ করছে , তা হচ্ছে , হেকমতিয়ার, রব্বানী, সাইয়াফ ও খালেসকে শেষ করে দেয়া অপরিহার্য। নতুবা জাহির শাহকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। যহির শাহকে ফিরিয়ে আনার জন্য তারা সম্ভাব্য সব কিছু করে যাচ্ছে। তারা আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে সমস্যা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে , মুজাহিদদের দুর্নাম করছে, মুজাহিদদের মাঝে ভীতি ও  হতাশা ছড়িয়ে দিচ্ছে এবনহ নজীবকে বড় ও শক্তিশালী করে দেখাচ্ছে। অন্যদিকে তারা পেশোয়ার ও ইসলামাবাদে অবস্থান করা তাদের গোয়েন্দাদের আফগানিস্তানে পাঠিয়ে এতীম, বিধবা ও আহতদের কষ্ট ও আর্তচিৎকার দ্বারা সুবিধালাভকারী আফগান মুনাফিকদের মাধ্যমে তাদের বিষাক্ত ষড়যন্ত্রের থাবা বিস্তার করতে চাচ্ছে। এতে তাদের যে উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে, তা হচ্ছে ইঙ্গ মার্কিন ও পাশ্চাত্যের এসিডে বিলীন হয়ে যেতে অস্বীকার করা আফগান মুজাহিদ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা এবং আফগানদের মাঝে বিভেদের বীজ বপন করার মাধ্যমে তারা পৃথিবীর কোথাও ইসলামকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না দেয়ার জন্য পরস্পরে যে শপথাবদ্ধ হয়েছে, তা অটুট রাখা।