নুসাইরিয়া মতবাদ
নুসাইরিয়া মতবাদের অপর নাম আলবিয়া। নুসাইরী সম্প্রদায়ের বিশ্বাস যে আল্লাহ মানুষের আকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করেন। আর তিনি মানুষের আকৃতিতে সর্বশেষ আত্মপ্রকাশ করেছেন হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু-এর মাধ্যমে। আর হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু (তাদের বিশ্বাস মতে আল্লাহ-নাউযুবিল্লাহ) সৃষ্টি করেছেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে । আর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টি করেছেন সে পাঁচ ইয়াতীমকে , যারা বিশ্বজগত পরিচালনা করছেন। এ পাঁচ ইয়াতীম হচ্ছেন, (১) হযরত আবু যর রদিয়াল্লাহু আনহু যিনি বাতাস, বৃষ্টি ইত্যাদি প্রবাহিত করার কাজে লিপ্ত। (২) হযরত আব্দুল্লাহ বিন রওয়াহা রদিয়াল্লাহু আনহু যিনি প্রাণ দানের কাজে লিপ্ত। (৩) হযরত উসমান বিন মাযউন রদিয়াল্লাহু আনহু যিনি প্রাণ সংহারের কাজে লিপ্ত। (৪) কারান বিন কারান যিনি হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু-এর খাদেম ছিলেন। (৫) হযরত সালমান ফারসি রদিয়াল্লাহু আনহু যিনি জীবিকার কাজে লিপ্ত। নুসাইরীরা যা বলে, তা থেকে আল্লাহ পবিত্র ও অনেক ঊর্ধ্বে।
নুসাইরীর আকীদা হচ্ছে মাগরিবের নামায চার রাকআত। এ নুসাইরীরা সুলাইমান মুরশিদকে ইলাহ বলে বিশ্বাস করে। ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত তাকে ইলাহ দাবী করার পরামর্শ দেয় এবং বলে যে আপনি আপনার কাপড়ের ভিতর ইলেকট্রিক বোতাম লাগান। অতঃপর যখন ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ও তার অনুসারীরা তার নিকট গমন করতো, তখন তার পকেটে ইলাকেট্রিক তারের সংযোগ দেয়া হতো। ফলে বোতামগুলো জ্বলতো। তখন লোকজন সবাই তাকে সিজদা করতো। ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতও সিজদায় লুটে পড়তো এবং বলতো, হে রব আমাকে ক্ষমা করুন।
এভাবেই ফ্রান্স ইসলাম বিরোধী ভূমিকা পালন করেছে। অতঃপর ফ্রান্স সুলাইমান মুরশিদকে নুসাইরী সম্প্রদায় অধ্যুষিত পাহাড়ী এলাকার কর্তৃত্ব প্রধান করে এবং তার জন্য একটি বাহিনী তৈরী করে ও তাকে পার্লামেন্টের সদস্য বানায়। কি আশ্চর্য ! একটি লোককে কিভাবে মানুষ ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। অথচ সে ছিল এক সময় রাখাল। এ কথিত ইলা সুলাইমান মুরশিদের সুলাইমান মিদী নামের একজন নবীও ছিল। সে ছিল এক উট ব্যবসায়ী। এই হচ্ছে নুসাইরিয়া মতবাদ। (উল্লেখ্য, সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাসা আল আসাদ সংখ্যালঘু নুসাইরী সম্প্রদায়ের লোক-অনুবাদক)।
দারুয সম্প্রদায়
দারুয সম্প্রদায় নুসাইরীদের আরও মারাত্মক। হাকেম বিআমরিল্লাহ উপাধিধারী ফাতেমী শাসক আবু আলী মনসূরই এদের প্রধান গুরু। তার জন্ম ৩৭৫ হিঃ সনে। সে ৪১১ হিঃ সনে নিহত হয়। সে খুব নোংরা চিন্তাধারার লোক ছিল। তার প্রধান সহযোগী ছিল হামযা বিন আলী। সে আবু আলী মনসূরের সমবয়সী হলেও তার মৃত্যু ৪৩০ হিঃ সনে। সে ৪০৮ হিঃ সনে হাকেম বিআমরিল্লাহকে ইলাহ বলে ঘোষণা দেয়। সে তাদের নোংরা আকীদা বিষয়ে অনেক বইও লিখেছে মুসলমানদের নিকট হযরত মুহাম্মদ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রকম সম্মানিত দারুয সম্প্রদায়ের নিকট হামযা বিন আলীও সে রকম সম্মানিত। এই দারুযীরা সকল নবী রাসূলকে অস্বীকার করে এবং তাদেরকে ইবলিস বলে আখ্যায়িত করে (নাউযুবিল্লাহ)। এদের জন্ম মিশরে হলেও বর্তমান তাদের আবাসস্থল সিরিয়ায়। এরা সকল ধর্মাবলম্বীকে বিশেষ করে মুসলমানদের খুব ঘৃণা করে। বর্তমানে এরা সিরিয়া সরকারের বড় বড় পদে অধিষ্টিত। এদের সাথে কম্যুনিস্টদের খুব ভাল সম্পর্ক। এরা ইসলামের জন্য ইয়াহুদীদের মত মারাত্মক ক্ষতিকর।
পরিত্রাণের উপায়
এসব পথভ্রষ্টরা (জাতীয়াতাবাদ, সমাজবাদ, বাহাঈবাদ ও নুসাইরীবাদ ) থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? এসব পথভ্রষ্টতা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ হচ্ছে , আমাদের দ্বীনকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরা এবং এসব চিন্তাধারা ও মতবাদ যা আমাদের সমাজকে ভেঙে চুরমার করেছে তার বিরুদ্ধে যুব সমাজকে জ্ঞান ও সচেতনতার অস্ত্রে সজ্জিত করা। এসব চিন্তাধারা অল্পদিনে বিস্তার লাভ করলেও আল্লাহর শোকর ইসলামই জাগরণের মুখে তা ভেঙে পরতে শুরু করেছে এবং তার মুখোশ খসে পড়ছে। আমাদের আরো দরকার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার কথা- “তোমাদের যে কেউ তাদের (ইয়াহুদী ও খ্রিস্টান) সাথে বন্ধুত্ব রাখবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত ”-এর প্রতি গভীর দৃষ্টি দেয়া, তার উপর আমল করা। কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা কুফরী এবং তা মানুষকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। কোন এক সাহাবী কিংবা তাবেয়ী এ আয়াতের আলোকে বলতেন, ‘তোমাদের কেউ যেন নিজের অজান্তে ইয়াহুদী কিংবা খৃষ্টান না হয়ে যায় ।’ যারা ইয়াহুদী খৃষ্টানদের চিন্তাধারা লালন করে , তাদের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। তাই আপনারা আপনাদের ছেলে মেয়েদেরকে বার্থ পার্টি ও সমাজত্রান্ত্রিক পার্টির লোকদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করবেন না। বার্থ পার্টির লোকদের সাথে আত্মীয়তা করা মানে খৃষ্টান কিংবা মূর্তিপূজকদের সাথে আত্মীয়তা করা। বার্থ পার্টি, নুসাইরী ও কম্যুনিস্টদের যবাই করা পশু অগ্নি উপাসকদের যবাই করা পশুর ন্যায় ভক্ষণ করা হারাম। এ ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকবেন। এদের সালামের উত্তর দিবেন না। এরা কাফের, ইসলামের শত্রু। এটা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঝাণ্ডা বাদ দিয়ে অন্য ঝাণ্ডা গ্রহণ করেছে। যারা না বুঝে বিষয়টাকে হাল্কা ভাবে গ্রহণ করছে, তাদেরকে বলে দিবেন যে, বিষয়টা কোন ক্ষমতার দ্বন্দ্বগত বিষয় নয়, এটা আকীদাগত ব্যাপারে। ঈমান ও কুফর এবং ইসলাম ও অনৈসলামের বিষয়। যারা এ ভূখণ্ডে পশ্চিমা সংস্কৃতি চালু করতে চায়, তাদের জানা উচিত একে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সৈন্যরা (সাহাবা) জয় করেছেন এবং কুফরের পঙ্কিলতা মুক্ত করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুশয্যায় ইয়াহুদী খৃষ্টানকে আরব দ্বীপ থেকে তাড়িয়ে দিতে ওসীয়ত করে গেছেন এবং বলেছেন-
“আরব দ্বীপে দু’টি ধর্ম একত্রিত হতে পারে না। ”
হযরত উমর রদিয়াল্লাহু আনহু এ ওসীয়ত বাস্তবায়ন করেছিলেন। তিনি সর্বশেষ ইয়াহুদীকে খাইবার থেকে বিতাড়িত করেছিলেন। তাই উপসাগর থেকে সাগর এবং উত্তরে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এ আরব দ্বীপে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম প্রত্যাবর্তিত হতে পারে না। এখানে কোন গির্জা নির্মিত হতে পারে না এবং কোন ইয়াহুদী ফ্রীম্যাসনবাদী ক্লাব চলতে পারে না। ইসলামের চিত্র মুছে ফেলার চেষ্টা যতই করা হোক না কেন, এ ভূখণ্ডের সর্বশেষ পরিণতি ইসলামই। মুসলমানদের সন্তানদের দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে যতই যুদ্ধ পরিচালনা করা হোক না কেন, ইসলাম এ ভূখণ্ডের মানুষের অন্তরে ও মাটির গভীরে তার শিকড় গাড়বেই। কারণ, প্রকৃতিকে স্থায়ীভাবে চেপে রাখা যায় না। এ প্রকৃতি একদিন জেগে উঠবেই। আবার বিজয়ের নিশান উড়বে প্রকৃতির ধর্ম ইসলামের।
যে বাধা অবশ্যম্ভাবী
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-
لَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ [٢:٢٥١]
“আল্লাহ যদি মানুষের একাংশকে আরেকাংশের দ্বারা প্রতিরোধ না করতেন, তাহলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেত, কিন্তু আল্লাহ বিশ্ববাসীর প্রতি দয়াপরায়ণ (ফলে তিনি যুদ্ধের অনুমতি দেন)। ” [সূরা বাকারাঃ২৫১]।
প্রতিরোধ নীতি
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা কর্তৃক পৃথিবীর বুকের সমূহ কল্যাণ প্রতিষ্ঠার চিন্তা চিরন্তন নীতি ও আইন হল পৃথিবীর শান্তি অশান্তি ও স্থিরতা অস্থিরতা সত্য ও মিথ্যার এবং ভালো ও মন্দের পরস্পরের জয় পরাজয় ও দমন প্রতিরোধের উপর।
মিথ্যার উপর সত্য যতটুকু বিজয় লাভ করবে, পৃথিবীতে কল্যাণ ততটুকু প্রাধান্য বিস্তার করবে , মানবতা ততটুকু প্রশান্তি লাভ করবে, পশু পাখি ততটুকু আরাম বোধ করবে। মানুষ প্রতিরোধের এ নীতি থেকে যতটুকু সুরে সরে আসবে, দমনের এ আইনকে যতটুকু অমান্য করবে, তারা ততটুকু ধ্বংস হবে, তাদের অধিকার ততটুকু লঙ্ঘিত হবে।
শক্তির ভিত্তি
শক্তি বলতে এমন একটি বিষয়কে বুঝায়, যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা প্রত্যেক বস্তুকে তার নির্দিষ্ট নিয়ম ও নীতি অনুযায়ী দান করেন। এ শক্তি যখন সত্যের সংস্পর্শে আসে এবং প্রতিরোধ ন্যায়কে আঁকড়ে ধরে, তখন কল্যাণ সারা পৃথিবীর মাঝে প্রভুত্ব বিস্তার করে । কিন্তু শক্তি যখন কোন নিয়ম নীতি ও ভয় ভীতি ছাড়া পথ চলতে আরম্ভ করে, তখন মানুষ অসহনীয় ও নারকীয় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়; সম্মান লুণ্ঠিত হয়, নিরাপত্তা উধাও হয়, রক্ত প্রবাহিত হয়, নিয়ম ও শৃঙ্খলা উঠে যায় এবং তীর্থ ভূমি অপবিত্র হয় । শক্তি জন্ম লাভ করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আদেশ পালন, তার দিকে আহবান এবং পৃথিবীতে আল্লাহর নির্দেশকে আইন হিসেবে প্রয়োগ করার মধ্য দিয়ে । আল্লাহ বলেছেন-
يَا يَحْيَىٰ خُذِ الْكِتَابَ بِقُوَّةٍ ۖ وَآتَيْنَاهُ الْحُكْمَ صَبِيًّا [١٩:١٢]
وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَمُوتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا [١٩:١٥]
“হে ইয়াহইয়া তুমি কিতাবকে (প্রয়োগের মাধ্যমে) আঁকড়ে ধরো। আমি তাকে বাল্যবস্থায় আমার পক্ষ থেকে বিচার বুদ্ধি, কোমলতা ও পবিত্রতাবোধ দান করেছি। আর সে পরহেজগার ছিল। ” [সূরা মারয়ামঃ১২,১৫ ]।
অতএব কোমলতার সাথে শক্তির মিলনে কোন বাধা নে । কোমলতা আছে ঠিক তবে তার সাথে সাথে শক্তির উপস্থিতিও অপরিহার্য। এ জীবনের উপর দিয়ে চলার সময় শক্তি বিনয়ের সমর্থক হইয়া আবশ্যক, ঈমানী উচ্চ অভিলাষ, তাকওয়া ও পরহেযগারীর বন্ধনী সুদৃঢ় হওয়া অপরিহার্য। রব্বুল আলামীনের ঘোষণা –
وَكَتَبْنَا لَهُ فِي الْأَلْوَاحِ مِن كُلِّ شَيْءٍ مَّوْعِظَةً وَتَفْصِيلًا لِّكُلِّ شَيْءٍ فَخُذْهَا بِقُوَّةٍ وَأْمُرْ قَوْمَكَ يَأْخُذُوا بِأَحْسَنِهَا ۚ سَأُرِيكُمْ دَارَ الْفَاسِقِينَ[٧:١٤٥]
“আমি তার (মুসা আ.) জন্য পটে সর্ব বিষয়ে উপদেশ ও সকল বস্তুর বর্ণনা লিখে দিয়েছি। অতঃপর বললাম, তুমি একে শক্ত ভাবে ধর এবং তোমার লোকদেরকে এ ভাল বিষয়গুলোকে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দাও। শিগগিরই আমি তোমাদেরকে অবাধ্যদের দেশে কর্তৃত্ব দান করব। ”[সূরা আ’রাফঃ ১৪৫]।
দ্বীনকে ব্যক্তি জীবনে আকড়ে ধরা শত তিরস্কার মুখ বুঝে সহ্য করা, কণ্টকাকীর্ণ পথে চলাচল করা এবং বাধা ও প্রতিকূল প্রতিস্থিতিকেও তুচ্ছ ভেবে অতিক্রম করার মধ্য দিয়েই শক্তি অর্জনের সূচনা হয়। এর মাধ্যমেই রাব্বুল আলামীনের নির্দেশিত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুস্পষ্ট করে দেয়া গন্তব্যে পৌছা সম্ভব। ইবাদতের মধ্য দিয়ে রাত্রি যাপন ও সর্বাবস্থায় ধৈর্য্য ধারণ এ শক্তির অন্যতম উপাদান। যে সুন্দরীকে বিয়ে করতে চায় তাকে মোহর দিতেই হয়। আর যে উন্নতি কামনা করে তাকে রাত্রি জাগরণ করতেই হয়।
প্রবৃত্তি ও শয়তানের হও বিরোধী ও অবাধ্য।
যদি ও তারা তোমার মঙ্গল কামনা করে তার পরও বল সব মিথ্যা।
রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে অন্তর শক্তিশালী হয়। আল্লাহ বলেন-
قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا [٧٣:٢]
نِّصْفَهُ أَوِ انقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا [٧٣:٣]
أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا [٧٣:٤]
إِنَّا سَنُلْقِي عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيلًا [٧٣:٥]
“হে বস্ত্রাবৃত ! রাত্রের অর্ধেকাংশ বা তার চেয়ে বেশী জাগ্রত থাকুন এবং স্পষ্ট ও সুন্দর ভাবে কুরআন তেলাওয়াত করুন। শিগগিরই আমি আপনার উপর এক ভারী দায়িত্ব চাপিয়ে দেব। ” [মুযযাম্মিলঃ২-৫]
যার উপর থেকে আল্লাহর পক্ষ থেকে যত ভারী বোঝা ও কঠিন দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়, তার মর্যাদা আল্লাহর কাছে তত বেশি। যখন আল্লাহর কাছে তোমার মর্যাদা কতটুকু তা অনুমান করতে চাও, তখন তুমি তোমার কাজ ও দায়িত্বের দিকে তাকাও। যে লোক পরিস্থিতি ও মানুষের দৃষ্টিকে বিবেচনায় আনে, তার এবং সে আল্লাহর সৈনিকের মধ্যে অনেক অনেক দূরত্ব বিদ্যমান, যাকে আল্লাহ তার কুরআনের ধারক-বাহক বানিয়েছেন এবং তার বিধান প্রয়োগের তাওফিক দিয়েছেন।
যখন তুমি প্রবৃত্তির উপর বিজয় অর্জন করলে এবং তাকে যন্ত্রণা সহ্য, তিক্ততা আস্বাদন ও কণ্টকের উপর দিয়ে চালিয়ে নিতে সক্ষম হলে, তখন মনে করবে তুমি (জান্নাতের) অর্ধেক বা তার চেয়ে বেশী পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছ। এর পরে তুমি বাস্তব জীবনে এসে মানুষের সাথে মিশতে গেলে তোমার ধৈর্য্য ধারণের বিকল্প নেই। কারণ মানুষ সহজে কল্যাণের পথে পরিচালিত হতে চায় না। বিশেষ করে যখন মানুষের রুচির বিকৃতি ঘটে এবং চোখে প্রদাহের সৃষ্টি হয়।
প্রদাহের ফলে চোখ রবিকে জানে আযাব
রোগের কারণে মুখ বলে পানি খারাপ।
যে বাধা অবশ্যম্ভাবী
যখন তুমি তোমার সত্য ও শক্তি নিয়ে ডানে বামে চলতে যাবে, তখন তোমাকে অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে, অনেক লোক বিশেষত যারা সমাজ ও রাষ্ট্র ক্ষমতার অধিকারী তারা তোমার সত্যতাকে স্বীকার করে নিবে না, যতক্ষণ না তুমি ধারাল তরবারি দিয়ে তাদের শৌর্য বীর্য, বাধার পাহাড় ও অহংকারকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিতে সক্ষম হবে।
তোমাকে অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে জাহিলিয়্যাত তোমার সত্যকে কখনো গ্রহণ করবে না এবং জাহিলিয়াত অস্ত্রসজ্জিত, বিভিন্ন সংগঠন দ্বারা সংগঠিত, তার রয়েছে শক্তি, প্রভাব, সৈন্য ও নিরাপত্তা। এসব কিছু সত্যের কণ্ঠরোধ ও তার আলোকে নিভিয়ে দেয়ার জন্য সদাজাগ্রত। সত্যকে বহন করে চলতে হলে তোমার শক্তি থাকা অপরিহার্য। এ শক্তি দিয়ে প্রবৃত্তির বিরোধিতা করে তাকে বশে আনতে হবে। অতঃপর এ শক্তি দিয়ে সত্যকে মানুষের কাছে পৌছাতে হবে। আর যাদের কাছে তুমি সত্যকে পৌঁছাবে, তাদের মাঝে তুমি এমন কিছু শয়তানের সম্মুখীন হবে, যারা তোমার কণ্ঠরোধ করার জন্য উঠে পড়ে লাগবে। তাদের হাতে থাকবে শক্তি ও সম্পদ, যা দ্বারা তারা দুর্বলমনাদের ধোঁকায় ফেলে রাখবে, রোগাক্রান্ত অন্তরওয়ালা ও সুবিধাবাদীদের প্রতারিত করবে।
অতএব, তুমি যে পথে চলছ ও যে যাত্রীদের পরিচালনা করছ, তাতে তোমাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। তোমার শত্রুদের শত্রুতা স্পষ্ট, তাতে কোন অস্পষ্টতা ও কোন দুর্বোধ্যতা নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এ দ্বীনের প্রথম যে চারাগুলো উৎপন্ন করেছিলেন এবং পুষ্টিকর খাদ্য (তাকওয়া) দ্বারা সবল করেছিলেন, পরবর্তীকালে সেই তাদেরকে সত্য গ্রহণকারীদের নিকট সত্য পৌছাতে কত ঘাম ঝরাতে হয়েছে, কত রক্ত প্রবাহিত হয়েছে, কত প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে ও কত অন্তরজ্বালা সহ্য করতে হয়েছে, তা কি ভেবে দেখেছ?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জিন্দেগীর দিকে তাকাও। যখনই তিনি কোন বিজয় সম্পন্ন করেছেন, তখনই ভিতরের সুবিধাবাদী চক্রের পক্ষ থেকে তিনি ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন হয়েছে , যাদের কাজ ছিল গুজব ছড়ানো, আকাশ ধোয়াচ্ছন্ন করা যাতে সত্য ও আলো প্রকাশ পেতে না পারে। বদর প্রাঙ্গণে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিজয়ের প্রথম ধাপ অতিক্রম করার পর বনুকাইনুকার ইয়াহুদীদের কাছে গিয়ে ইসলামের দাওয়াত পেশ করলেন। অতঃপর তাদেরকে কুরাইশদের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তখন বনুকাইনুকার লোকেরা বলল, আমাদেরকে কুরাইশদের মত যুদ্ধানভিজ্ঞ মনে করবেন না। আমাদের সাথে লাগলে বুঝতে পারবেন আমরা কেমন ?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনুকাইনুকার লোকদেরকে দেশান্তর করলেন। এতে বাধা দিতে আসে একমাত্র সে মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ বিন উবাই, যে প্রতি জুমুআয় প্রথম কাতারে অবস্থা করত। যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে তার গোত্রের লোকেদের বলত, ‘হে খাজরাজের লোকেরা! তোমাদের মাঝে রাসূল্ললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবস্থান করছেন। তাকে সাহায্য সহযোগিতা কর।’ বর্তমানেও মুনাফিকরা দুর্বল আলেমদের টেলিভিশন ও রেডিওতে কিছু বলার সুযোগ দিয়ে তাদের মুনাফেকী চরিতার্থ করছে-।
তো সে (আব্দুল্লাহ বিন উবাই ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে নিজের জামার পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে আবেদন জানাল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকে ছাড়। কিন্তু সে ছাড়ল না। তৃতীয় বার বলার পরও জামা না ছাড়ায় রাগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। কারণ , রাগ আসলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেত এবং খুশি হলে চেহারা চাঁদের মত উজ্জ্বল দেখাত। তিনি তাকে আবার বললেন, তোমার অকল্যাণ হোক তুমি আমাকে ছাড়। সে বলল, না। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি আমার বন্ধুদের প্রতি অনুগ্রহ না করবেন ততক্ষণ ক্ষান্ত হব না। তারা দলে বৃহৎ এবং এ পর্যন্ত তারা আমার পক্ষে করছে। আজ একদিনে এ দলটি ধ্বংস হয়ে যাবে শুনে আমি ভবিষ্যতের ব্যাপারে ভীষণ শঙ্কিত। পরিশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও সব কিছু তোমার জন্য হল।
এ মুনাফিক উহুদের দিন সেনাদের এক তৃতীয়াংশ নিয়ে পথের মাঝখান থেকে ফিরে এসেছিল। মুরাইসী অভিযানে মক্কার এক মুসলমানের সাথে খাযরাজ গোত্রের এক মুসলমানের ঝগড়া হলে সে খাযরাজের লোকদের বলল, ওহে খাযরাজের লোকেরা কুরাইশরা তো আমাদের পালিত কুকুর, এখন গায়ে শক্তি বেশি হওয়ায় মনিবকে খেতে ইচ্ছে করছে। অতঃপর সে বলল –
‘আল্লাহর কসম যদি আমরা মদিনায় ফিরে যেতে পারি, তাহলে অবশ্যই তার
উৎকৃষ্ট অধিবাসীরা দুর্বলদের (মুহাজির) বহিষ্কার করবে। ‘
এ অভিযানে হযরত আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা-এর গলার হার হারিয়ে যাওয়ায় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পিছনে থেকে যান। পরে সর্বশেষ যাওয়া একজন সাহাবী একাকী দেখতে পেয়ে তাকে সাথে করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে আসেন। এ খবর মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ বিন উবাই জানতে পেরে অপবাদ রটিয়ে দিল যে ঐ সাহাবী আম্মাজান হযরত আয়শা রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর সাথে তার সম্মতিতে খারাপ কাজে লিপ্ত হয়েছে। মদিনায় ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলেন। বিষয়টা নিয়ে মদিনায় শোর পড়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধৈর্য্য ধারণ করেন। অতঃপর হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লহু আনহা-এর পবিত্রতা ও মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচন করে কুরআনের আয়াত নাযিল হল।
খন্দক যুদ্ধে এ মুনাফিকরা বলেছিল-
إِنَّ بُيُوتَنَا عَوْرَةٌ وَمَا هِيَ بِعَوْرَةٍ ۖ إِن يُرِيدُونَ إِلَّا فِرَارًا [٣٣:١٣]
“নিশ্চয় আমাদের ঘরে কেউ নেই। অথচ তাদের ঘর খালি নয়। এ বলে কেবল তারা যুদ্ধ থেকে পালাতে চাইছে।” [সূরা আহযাবঃ১৩]।
মুসলমানের বিপদের সময় এ মুনাফিকরা বলত, মুহাম্মদ আমাদেরকে কাইসার ও কিসরার প্রাসাদ বিজয়ের কথা বলে। অথচ আমাদের কেউ নিজেদের প্রয়োজনটুকু সারতে পারে না।
তাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের বাইরের শত্রুদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার সাথে সাথে ভিতরের শত্রুদের ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। ভিতরের শত্রুরা বেশ ভূষা ও নামায কালামে তোমার মতই। এরা তোমার দলেরই লোক। এদের মুখোশ যখনই ত্যাগের প্রশ্ন আসে, তখনই খসে পড়ে।
ইসলামী আন্দোলনকে যারা জান মালের অবিরাম কুরবানি দ্বারা এগিয়ে নেন, তারা ভোগ করেন কম। মুনাফিক এবং দুর্বল ঈমানদাররাই আন্দোলনের ফল ভোগ করে থাকে বেশী। মক্কায় মুসলমানের বিজয় লাভ এবং হুনাইনের যুদ্ধে গণিমত প্রাপ্তি শেষে নওমুসলিম হযরত আবু সুফয়ান রদিয়াল্লাহ আনহু -যিনি পরে ভাল মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর কাছে এসে বললেন , ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ আমাকে গণিমত দিন। ‘
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে একশটি উট ও চল্লিশটি উকিয়া দেয়ার নির্দেশ দেন। বললেন, আমার ছেলে ইয়াযিদ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্যেও একশটি উট ও চল্লিশটি উকিয়ার নির্দেশ দেন। বললেন, আমার ছেলে মুআবিয়া রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্যও একশটি উট ও চল্লিশটি উকিয়ার নির্দেশ দেন।
অতঃপর আকরা’ বিন হাবিশসহ বিভিন্ন গোত্রের নওমুসলিম সর্দারগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর কাছে এসে একশটি করে উট নিয়ে গেলেন। অতঃপর আসলেন নওমুসলিম সফওয়ান বিন উমাইয়া, যিনি কিছু দিন আগেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করার জন্য একজন লোক পাঠিয়েছিল। হুনাইনের যুদ্ধে যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে কিছু বর্ম চাইলে তিনি বলেছিলেন, কি জোর করে নিয়ে যেতে চান ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না ধার হিসেবে। হুনাইনের যুদ্ধে বিপুল গণিমত লাভের পর যখন এ সফওয়ান বিন উমাইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে গণিমত চাইলেন, তখন তিনি তাকে দু’পাহাড়ের মাঝখানে যতগুলো ছাগল ছিল সব দিয়ে দিলেন। এ গণীমত পেয়ে সফওয়ান বললেন, কোন নবী ছাড়া এতগুলো সম্পদ আমাকে দিতে কারো মন রাজী হওয়ার কথা নয়।
পরে এ সফওয়ান আন্তরিক ভাবে ইসলাম পালন করতে শুরু করলেন। নওমুসলিম হাকিম বিন হিযাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দেয়া একশটি উট পেয়ে বললেন-
আমি কি তার অবাধ্য হতে পারি যে আমাকে বাচাল প্রাণে
এবং দিল আমাকে একশটি উট আমার আবেদন শুনে।
অন্যদিকে যারা ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন , বিভিন্ন প্রকার কষ্ট সহ্য করেছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে জান মাল কুরবান করে লড়াই করে আসছেন , তারা কিছুই নিলেন না। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়েই ফিরে গেলেন।
বিরামহীন অপপ্রচার
বর্তমান আফগান জিহাদ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ষড়যন্ত্রের শিকার। এ অপপ্রচারে অনেক আফগান যুবক জিহাদ নিয়ে বিভ্রান্তিতে ভুগছে এবং দুঃখজনক ভাবে এ বিভ্রান্তি তারা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তারা বিভ্রান্তি ছড়াতে সময় পায়, কিন্তু এখানে এসে বাস্তব অবস্থা দেখে যেতে পারে না। এরা গোটা পৃথিবীকে হাতের তালুতে এবং আকাশকে সুচের ছিদ্র দিয়ে দেখতে চায় ? পৃথিবীতে কি বলছে , কিভাবে সমাজ বিপ্লব চলছে এবং পৃথিবীর অবস্থার কিভাবে পরিবর্তন ঘটছে সে খবর তারা রাখে না। ইসলামের শত্রুরা ও জিহাদের গুরুত্ব ও প্রভাব যতটুকু টের পাচ্ছে , তার সামান্য পরিমাণও এরা টের পাচ্ছে না। ব্রিটিশ প্রচার কেন্দ্র (ই.ই.ঈ) বিশ্ব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলেছে, ‘ব্রিটেন আফগানিস্তানে প্রবেশ করে আফগানদের উপর জোর করে ক্ষমতা ব্যবহার করতে গিয়ে ভুল করেছে। ফলে তাকে সব কিছু হারিয়ে আফগানিস্তান থেকে পরাজিত হয়ে বের হয়ে আসতে হয়েছে। এখন মুজাহিদরা আফগানিস্তানে রুশ সৈন্যদের তাড়া করে ফিরছে। রুশরা ব্রিটেনের পরাজয় থেকে শিক্ষা নেয়নি। ফলে তারা আফগানদের উপর তাদের অপছন্দনীয় শাসক চাপিয়ে দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং পশ্চিমা দেশগুলোও আফগানদের কামনা বিরোধী সরকার তাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে তৃতীয় বার ভুল করতে যাচ্ছে। ‘
এ কাফিররা তাদের অভিজ্ঞতা অর্জন ও ভুলের খেসারত দিয়ে সত্য কথা বলতে বাধ্য হচ্ছে। ধরা পড়লে মিথ্যুকরাও সত্য কথা বলে। হাদীসে আছে –
“সে (শয়তান) তোমাকে সত্য কথা বলেছে, অথচ সে বড় মিথ্যুক। ” [বুখারী শরিফে বর্ণিত এক সাহাবীর হাতে শয়তান ধরা পরা বিষয়ক হাদীসের অংশবিশেষ]।
যে সব মুসলমান এ জিহাদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তারা যদি কাবুলে এসে কোন পরিবারের কাছে কম্যুনিস্টদের পাশবিকতার খবর শোনত। তারাকী ও হাফিযুল্লাহ আমীনের আমলে কাবুলে কেউ প্রকাশ্যে নামায পর্যন্ত পড়তে পারেনি। ইসলামী আন্দোলন তো দূরের কথা, যারা শুধু নামায পরার অপরাঁধ করত, তাদেরকেও হত্যা করত। ফাঁসি দিয়ে মারা এবং লাশ দাফনের সময় তাদের হাতে ছিল না। তাই তারা নামাযী মুসলমানদের রশি দিয়ে বেধে শোয়াত, অতঃপর বুলডোজার এসে তাদেরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিত। এভাবে একশজন থেকে দুশজনকে পর্যন্ত মৃত্যু দণ্ড দেয়া হত। পলায়নকারী এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে তারাকীর আমল থেকে এ পর্যন্ত (১৯৭৯-১৯৮৯) শুধু কাবুলের পিলচারখী কারাগারের এক লাখ ছিয়াশি হাজার বন্দীকে হত্যা করা হয়েছে।
জিহাদের প্রভাব
বরকতময় জিহাদের দশ বছরের মাথায় এখন কাবুলের কি অবস্থা ? যারা কুফর আর শিরকের ধ্বজা নিয়ে ঘুরত এবং ইসলাম ও আল্লাহর রাসূলের শাহে প্রকাশ্য শত্রুতা করত, তারা এখন কোথায় ? নজীব সরকারের মন্ত্রীরা এখন ঘরে ঘরে খতমে কুরআনের আয়োজন করছে। নজীব সরকারের সাম্প্রতিক একটি ফরমান হচ্ছে, যে লাগাতার তিনদিন জামায়াতে নামায ছেড়ে দিবে, তাকে চাকরীচ্যুত করা হবে। নজীব এখন লম্বা দাড়িওয়ালা কিছু মুনাফিককে আযান দিলে মানুষকে মসজিদে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিয়োগ করেছে। মুয়াযযিন আযান দিলে তারা লাঠি নিয়ে বের হয়ে মানুষকে মসজিদে যেতে বাধ্য করে। কাবুলের যুবতীরা এখন জিহাদের গান গায়। তারা এখন মুজাহিদদেরকে তারকা মনে করে এবং তাদেরই সান্নিধ্য পেতে চায়। তারা এখন দেশ ও সম্মান বিক্রয়কারী নীতি-বিবেকহীন কম্যুনিস্টদের ঘৃণা করে । এ হচ্ছে কাবুলের অবস্থা। গ্রামের মহিলারাতো আরো ধার্মিক ও আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন। প্রেসিডেন্ট নজীব বলছে, তাকে নজীব না বলে নজীবুল্লাহ নামেই অভিহিত করতে। সে কমান্ডার জালালুদ্দীন হক্কানির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিটি আমি নিজেই পড়েছি। এতে সে লিখেছে , ‘শেখ জালাল আমি আপনার সাথে যে কোন জায়গায় সাক্ষাত করতে চাই যাতে আপনি জানতে পারবেন যে আমি একজন মুসলমান। কম্যুনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমি এবং সীমান্ত মন্ত্রী সুলাইমান লায়েক ছাড়া আর কোন মুসলমান নেই। আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই। এ কম্যুনিস্টদেরকে আমি আমার ইচ্ছার কথা জানাতে পারছি না। ‘
শায়খ জালাল উদ্দীন হক্কানী বলেছেন-
لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ [٦١:٢]
كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ [٦١:٣]
“তোমরা যা করবে না তা বল কেন। তোমরা যা করবে না তা বলে বেড়ানো আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তুষ্টিজনক। ”[আছছাফঃ ২, ৩]।
‘তোমার পরিণতি তোমার পূর্বসূরিদের মতই হবে। তুমি তোমার লোকদের হাতে হয়তো নিহত হবে অথবা কারাগারে নিক্ষিপ্ত হবে। তারাকীকে মুজাহিদরা হত্যা করেনি। তাকে হত্যা করেছে কম্যুনিস্টরাই। অনুরূপ হাফিযুল্লাহ আমিনীকেও। বারবাক কারমালকে বন্দী করেছিল কম্যুনিস্টরাই। তোমার পরিণতিও দু’টার একটা হবে। হয়তো দাউদ, তারাকী ও হাফিযুল্লাহর মত নিহত হবে অথবা তোমার পূর্বসূরি বারবাক কারমালের মত বন্দী হবে। ‘
মুজাহিদ কমান্ডারদের কাছে প্রায় প্রতিদিন রুশ এবং কম্যুনিস্ট কমান্ডারদের চিঠি আসছে। চিঠিতে তারা বলছে , ‘আমরা কিছুদিন বা এক কিংবা দু মাসের মধ্যে চলে যাব। আমাদেরকে মারবে না এবং আমরাও তোমাদেরকে মারব না। এ কম্যুনিস্টরা আপনাদেরই দেশের লোক। তাদেরকে চাইলে হত্যা করুন। আর যদি তাদের কাউকে ধরতে চান, তাহলে বলুন আমরা তাকে হাত পা বেধে আপনাদেরকে কাছে পাঠাব।’ উত্তরে আফগানিস্তানে একটি ঘটনা দেখেতো মানুষ হতবাক হয়েছে। দেখা গেল কিছু মুজাহিদ আর.পি.জি. ক্ষেপণাস্ত্র কাঁধে দাড়িয়ে আছে। রুশদের দুটি ট্যাংক আসছে। ট্যাংক থেকে মুজাহিদদের উপর গুলি ছুড়া হল না। মুজাহিদরাও কোন গুলি ছুড়ল না। মানুষ তাদের জিজ্ঞেস করল, আপনারা ট্যাংক দেখে চুপচাপ দাড়িয়ে আছেন কেন ? তারা বলল, আমরা এ অঞ্চলের এক কম্যুনিস্ট নেতাকে গ্রহণ করার জন্য অপেক্ষা করছি। রুশ সৈনিকরা তাকে আমাদের কাছে সত্তর হাজার রুপির বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে। রুপির বিনিময়ে কম্যুনিস্ট নেতাদের এভাবেই বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে মুজাহিদদের কাছে। বর্তমানে কম্যুনিস্টদের কাছ থেকে মুজাহিদদের নিকট প্রতিদিন চিঠি আসছে। চিঠিতে তারা বলছে ,’আমরা কম্যুনিস্টদের সাথে চাই না ; আমরা আপনাদের কাছে চলে আসতে চাই। আমাদের জন্য আপনাদের কাছে পৌছার পথ করে দিন। ‘
কিন্তু কিছু মুসলমানরা এসবের খবর রাখে না। পূর্ব ও পশ্চিমের নেতারা আফগানিস্তানে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে বলে যে আশংকা প্রকাশ করছে, তা তাদের কানে পৌছাচ্ছে না। বিবিসি ঐ সব নেতাদের এ কথাও প্রচার করছে যে, ‘মুজাহিদদের সরকার কারো কাছে গ্রহণ যোগ্য নয়। জনগণ ও মুজাহিদ কারো কাছে নয়। কারণ, তারা (মুজাহিদ সরকার) ওহাবী এবং মৌলবাদী। ‘ বিবিসির ভাষ্য মতে তারা ইখওয়ানুল মুসলিমীনের লোক। গোটা বিশ্ব ইসলামী সরকারকে ভয় করছে। কারণ, এ সরকার কুরআন সুন্নাহর আলোকেই তাদের কর্ম নির্ধারণ করবে। কুরআন সুন্নাহর আলোকে পরিচালিত সরকারকে সহ্য করা বিশ্বের কোন শক্তির পক্ষেই সম্ভব নয়। এ ধরনের সরকার থেকে তারা নিরাপদ হয়েছে প্রায় সত্তর বছর আগে। এ ধরনের সরকারের (অর্থাৎ, উসমানী খেলাফত) ভয়ে তাদের নিদ্রা হত না। শেষ পর্যন্ত তারা ধূসর বাঘের (কামাল আতাতুর্ক) মাধ্যমে ইস্তাম্বুলের জমিনে তার পতন ঘটিয়ে স্বস্তি পেল। এরপরে কি তাদের পক্ষে কোন ইসলামী সরকারকে মেনে নেয়া সম্ভব ?
মুজাহিদদের সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে দু’ মাস হল। রাজীব গান্ধী এ অঞ্চলে ইসলামী সরকারের ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। বলেছে , এতে গোটা অঞ্চল হুমকির মুখে পড়বে। হ্যাঁ ! হিন্দুরাও মুসলমানদের ক্ষমতায় যাওয়ার ভয় করছে। কারণ , তাদের সোমনাথ মূর্তি ধ্বংসকারী বীর সুলতান মাহমুদ গজনবীর কথা মনে পড়ছে। এ মূর্তি না ভাঙ্গার জন্য তারা তাকে অনেক প্রলোভন দেখিয়েছিল। কিন্তু তিনি তাদের প্রলোভনে কান দিলেন না। এ হিন্দুরা নিকট অতীতে সৈন্য নিয়ে দিল্লি প্রবেশকারী আহমদ শাহ আব্দালীর কথাও স্মরণ করছে। আহমদ শাহ আব্দালীর রাজ্য উত্তর বুখারা, দক্ষিণে আরব সাগর, পূর্বে দিল্লী ও কাশ্মীর এবং পশ্চিমে নিশাপুর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তিনি আফগান মুসলমানদের নিয়ে দিল্লিতে সাত বার অভিযান চালিয়েছিলেন। তার হাতে দিল্লির উপকণ্ঠে কত হিন্দু নিহত হয়েছে এবং পেশোয়ারে কত শিখ নিহত হয়েছে তাও তাদের জানা আছে। পেশোয়ার ছিল আহমদ শাহ আব্দালীর শীতকালীন রাজধানী ও কাবুল ছিল গ্রীষ্মকালীন রাজধানী।
তাই হিন্দুরা আফগান মুসলমানদের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার ভয় করছে। রাশিয়াসহ সমগ্র পাশ্চাত্য আফগান জিহাদের আগুণ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার মুসলিম অঞ্চল সমূহে ছড়িয়ে পড়ার ভয় করছে। পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদীরাও মুজাহিদদের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার ভয় করছে। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পাশ্চাত্য সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছে, ‘আফগান জিহাদ এমন একটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ যেটা কোথাও থামবে না। শিগগিরই এ অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ইউরোপে প্রবেশ করবে এবং এয়ে পৃথিবীর ইতিহাসই পালটে যাবে।’
নিরস্ত্র ও দুর্বল আফগানরা অস্ত্র হাতে নিয়ে যে সম্মান ও প্রভাব অর্জন করেছে তা দেখে কি কেউ শিক্ষা নিবে ? মুসলমানদের অস্ত্রধারণকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফিরদের ত্রাস বলে উল্লেখ করেছেন। যেদিন অস্ত্র মুসলমাদের হাত থেকে পড়ে গেছে, সেদিন তাদের প্রভাবও শেষ হয়ে গেছে ।
শক্তি নিয়েই লঙ্ঘিতে হবে পথ
জাতি গঠিত হয় বীর দ্বারা। সম্মান ও প্রভাবের খুঁটি হচ্ছে এ বীরগণ। সত্যকে মানুষ তখনই দেখতে পায় যখন মিথ্যার সাথে সত্যের যুদ্ধ বাঁধে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিকমাত ও সদোপদেশ দ্বারা মক্কার লোকদেরকে ইসলামে প্রবেশ করানোর কত চেষ্টা করেছেন ? মক্কাতে তিনি দীর্ঘ তের বছর অবর্ণনীয় কষ্ট স্বীকার করে যে দাওয়াতের কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন, তাতে কতজন লোক মুসলমান হয়েছে ? একশর সামান্য বেশি মাত্র। কিন্তু যেদিন তিনি অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে মক্কার কাফিরদের দম্ভ চূর্ণ করে দিলেন, সেদিন থেকে মানুষ দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করতে শুরু করে। মক্কা বিজয়ের দিন মুসলমানদের সংখ্যা ছিল দশ হাজার। কিন্তু তাবুক যুদ্ধের সময় এ সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ত্রিশ হাজারে। বিশাল এ পার্থক্য মাত্র এক বছরেরও সময়ে। মক্কা বিজয় হয়েছিল নবম হিজরীর জমাদিউসসানীতে এবং তাবুক অভিযান হয়েছিল ঐ বছরের রমাদানে । অর্থাৎ, মাত্র কয়েক মাসের ব্যাবধানে ইসলামের বাহিনী তিনগুণ বৃদ্ধি পায় ।
সপ্তম হিজরীতে হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় মুসলমানদের সংখ্যা ছিল মাত্র চৌদ্দশত। এ সন্ধির ফলে মানুষ বুঝতে পারল মক্কার নেতারা ইসলামের শক্তি স্বীকার করে নিয়েছে, তখন মানুষ ইসলামের গুরুত্ব বুঝতে শুরু করল। অতঃপর মক্কা বিজয়ের সময় তথা দু’বছরের কম সময়ের ব্যাবধানে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দশ হাজারে উপনীত হয় ।
তাই আমি বলি, শক্তিই মানুষকে আল্লাহত দ্বীনে দলে দলে প্রবেশ করতে উদ্ধুদ্ধ করে। আগে ঈমান ও তাকওয়ার মাধ্যমে আমাদেরকে শক্তি অর্জন করতে হবে। অতঃপর যখন আমাদের এ শক্তির আলোতে বাতিলের অন্ধকার দূরীভূত হয়ে শুরু করবে, তখন আল্লাহর দ্বীনের জন্য মানুষের দৃষ্টি খুলে যাবে এবং তারা এসে তাতে দলে দলে প্রবেশ করবে। তাই হযরত উমর রদিয়াল্লাহু আনহু যখন সাহাবীদের জিজ্ঞাসা করলেন আপনারা আল্লাহর কথা –
إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ [١١٠:١]
وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا [١١٠:٢]
“যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসে গেল, তখন আপনি মানুষকে আল্লাহর দ্বীনে দলে দলে প্রবেশ করতে দেখছেন ” থেকে কি বুঝলেন ? তখন হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইন্তেকালের ঘোষণা বুঝেছি। কারণ, ইসলামের শক্তি কুফরের প্রভাবের উপর বিজয় লাভ করেছে। ফলে মানুষ আল্লাহর দ্বীনে দলে দলে প্রবেশ করেছে। আর এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দায়িত্ব পালনও শেষ হল। অতঃপর তিনি প্রভুর কাছে চলে গেলেন। ‘
নতুন ইতিহাসের আভাষ
আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকে এখন বিভিন্ন লোক শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করেছে। গাদ্দাফীর কারাগার ধ্বংসের ঘোষণা আফগানিস্তান পরিস্থিতির প্রতিধ্বনির ভয় থেকেই এসেছে। মানুষের পক্ষে দীর্ঘ দিন জুলুম অত্যাচার সহ্য করা সম্ভব হয় না। অত্যাচারের এক পর্যায়ে তারা আগ্নেয়গিরির মত বিস্ফোরিত হয়। তাই গাদ্দাফী এ সত্য বুঝতে পেরে মানুষের উপর যুলুম কমাতে লাগল। সিরিয়া ও দক্ষিণ ইয়েমেনেও এ ধরণের পরিবর্তন শিগগিরই দেখা যাবে। হিন্দুকুশের এ প্রতিরোধ যুদ্ধ শিক্ষাগ্রহণকারীরদের জন্য মাথা তুলে দাড়িয়ে রয়েছে। যে বিপদে পড়ে শিক্ষা গ্রহণ করেছে সে হতভাগা। যে আরেকজনের বিপদ দেখে শিক্ষা গ্রহণ করেছে সে সৌভাগ্যবান। যে সব মুসলমানরা এখনো সমাজের পরিবর্তন উপলব্ধি করেছে না, তাদের চোখ আল্লাহ খুলে দিন এটাই কামনা করি।
আমাদের ধারনা আফগানিস্তানই হবে ইতিহাস পরিবর্তনের সূচনা ভূমি। হিন্দুকুশের পর্বতমালা থেকে ইসলামের যে আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে তাই পৃথিবীর নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে। কিন্তু কিছু লোক এখনো তার নেতৃত্বের প্রতি সন্ধিহান। আমাকে এক যুবক বলল, ‘আপনি কি মনে করেন এসব লোকদের হাতে আফগানিস্তানে একটি কার্যকর ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে ?’ অর্থাৎ সে বলতে চাচ্ছে দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ এ লোকেরা কিভাবে ইসলামী সরকার পরিচালনা করবে ? আমি তাকে বললাম, হাফিজ আলাআসাদ, গাদ্দাফী, নুসাইরী, হুসনী মোবারক ও সাদ্দাম হোসেনের মত নিম্ন মেধার* লোকেরা যদি দশ-বিশ বছর ধরে একটি রাষ্ট্র চালাতে পারে ; ইরানের মোকাবিলা করতে পারে, তাহলে এসব আফগান যারা ইসলামী পরিবেশে লালিত পালিত হয়েছে এবং দশ বছর ধরে রণাঙ্গনে নেতৃত্ব দিচ্ছে ; সৈন্যদের পরিচালনা করছে তারা কি একটি রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারবে না ? এদের অভিজ্ঞতার সামনেতো ওই পুতুলদের** কোন অভিজ্ঞতাই নেই। নিম্ন মেধার অধিকারী মানেতো অর্ধপাগল কিংবা পূর্ণপাগল। ওরা দেশ চালাতে পারলে এসব পোড় খাওয়া নেতারা কেন পারবে না ? বিষয়টা একেবারে সহজ। এরা ক্ষমতায় গিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের দু’বছরে মাথায় আকীদার ক্ষেত্রে মক্কা, মদিনা ও রিয়াদের বিদ্ধানদের চেয়ে অধিক জ্ঞান ও যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে। কারণ, টিভি, রেডিও ও পত্রিকা থেকে শুরু করে সবকিছুর দায়িত্ব তাদেরই হাতে থাকবে। তাদের আহবানে বিভিন্ন পেশার অভিজ্ঞ লোকজন সাড়া দিয়ে তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসবে।
সমাপ্ত