بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার উপর সবচে’ বড় ফরজ হল, ঈমান। ঈমান বান্দার উপর আল্লাহর সবচে’ বড় হক। ঈমানের পরিচয় হল, ইসলামকে একমাত্র সত্যধর্ম মেনে কবুল করে নেওয়া। ইসলাম আকায়েদ ও আহকামের সমষ্টি। ইসলামের বর্ণিত সঠিক আকায়েদ, ইসলামের প্রদত্ত শরীয়ত মেনে নেওয়ার নাম ঈমান। আকায়েদ মানা, ইসলামী শরীয়ত অস্বীকার করা অথবা শরীয়ত মানা, ইসলামী আকায়েদ অস্বীকার করা উভয়ই কুফর। এ কুফর থাকা অবস্থায় ইসলামের দৃষ্টিতে কাউকে মুসলিম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। যেমনটি আমি ‘উম্মাহর ঐক্য’ বইয়ে বিস্তারিত লিখেছি। শাখাগত মাসআলায় তো দলীলভিত্তিক মতবিরোধ সম্ভব। এমন মতবিরোধ হয়েছেও। ঐ মতবিরোধের দরুণ আল্লাহ পাকড়াও করবেন না। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একে মন্দ বলেননি। অবশ্য এ ব্যাপারে মতবিরোধের আদব-কায়দা রক্ষা করতে আমরা বাধ্য এবং এ ধরনের মতবিরোধ ঝগড়া বিবাদের মাধ্যম যেন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। কিন্তু আকায়েদের ব্যাপারটি (মুমিন ও মুসলিম হওয়ার জন্য যে বিষয়গুলো আন্তরিকভাবে স্বীকার করা এবং সেগুলো সত্য বলে সাক্ষ্য দেওয়া জরুরি) সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাতে দলীলভিত্তিক মতবিরোধের কল্পনাও করা যায় না। আকায়েদের বেলায় বিরোধ হয় সত্য-বিরোধীদের অন্যায় বিরুদ্ধাচরণ অথবা মূর্খতার কারণে। আকায়েদের ক্ষেত্রে বিরোধ আল্লাহ তাআলা মেনে নেননি। এক্ষেত্রে সবাইকে একমাত্র দ্বীন কবুল করে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। সত্য দ্বীনের বিরুদ্ধাচরণকারীদের যালেম, ফাসেক ও কাফের আখ্যায়িত করেছেন। সুস্পষ্ট বলে দিয়েছেন, পরকালে তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আল্লামা খালেদ মাহমূদের ভাষায়- ‘ইসলামী আকায়েদে এ কথা অকাট্য যে, আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন একটাই। তা হল, ইসলাম। এ হতে পারে না যে, অন্যান্য ধর্ম আপন আপন জায়গায় সঠিক। সে মতবাদ অনুযায়ী চলেও পরকালে মুক্তি লাভ হবে। আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ঈমান না এনে কেউ মুক্তি পাবে না। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআয রাযিআল্লাহু আনহুকে ইয়ামানে পাঠানোর সময় আহলে কিতাবদের ইসলামের দাওয়াত দিতে বলেছিলেন। সেসব দ্বীন আপন আপন ক্ষেত্রে মুক্তি দেওয়ার যোগ্য হলে তাদের ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআয রাযিআল্লাহু আনহুকে এ নির্দেশনা দিয়ে ইয়ামান পাঠান- إِنّكَ تَأْتِي قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ، فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَن لَا إِلهَ إِلّا اللهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذلِكَ، فَأَعْلِمْهُمْ أَنّ اللهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ. তুমি আহলে কিতাবের (ইহুদী ও নাসারাদের) কাছে যাচ্ছ। প্রথম তাদেরকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাক্ষ্য দেওয়ার দাওয়াত দিবে এবং এ কথার শাহাদাত প্রদানের দাওয়াত দিবে- মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। তারা এ কথা মেনে নিলে তাদেরকে বলবে, আল্লাহ তাআলা দিন ও রাতে তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করেছেন। (সহীহ মুসলিম, খ. ১, পৃ. ২৩৮, হাদীস ২৯; সহীহ বুখারী, খ. ৮, পৃ. ৪৯৩, হাদীস ৪৩৪৭) ইমাম তহাবী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ‘আলআকিদাতুত তাহাবিয়্যাহ’ কিতাবে বিষয়টি এভাবে লেখেন- ودين الله في الأرض والسماء واحد، وهو دين الإسلام، قال الله تعالى إن الدين عند الله الإسلام. আসমান ও জমিনের অধিবাসী সবার জন্য আল্লাহ তাআলার মনোনীত দ্বীন একটিই। তা হল, দ্বীনে ইসলাম। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট (গ্রহণযোগ্য) দ্বীন কেবল ইসলাম। (সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৯) আলআকিদাতুত তাহাবিয়্যাহ, পৃ. ৭৮৬ ইবনে হাযম জাহেরী রাহ. লেখেন- الإسلام دين واحد، وكل دين سواه باطل. অর্থাৎ ইসলাম একমাত্র সত্য ধর্ম। এছাড়া সব ধর্মই বাতিল। (আলমুহাল্লা, ইবনে হাযম, খ. ১, পৃ. ১০৪) আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এ আকীদাকে পেশ করেছেন এভাবে- من لم يقر باطنا وظاهرا بأن الله لَايقبل دينا سوى الإسلام فليس بمسلم. অর্থাৎ যে অন্তর ও মুখে একথা স্বীকার করে না, আল্লাহর কাছে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণযোগ্য নয়, তাকে মুসলমান ধরা হবে না। -ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া, খ. ২৭, পৃ. ৪৬৩ এ থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেল সকল ধর্ম হক হওয়ার মতাবলম্বীরা ইসলামের দাবি করা সত্ত্বেও মুসলমান নন। (আকায়েদে আহলুসসুন্নাহ ওয়াল জামাআহ, মাওলানা মুহাম্মাদ তাহের মাসউদের ভূমিকা, পৃ. ৪৫-৪৬ থেকে গৃহিত) শায়খুল মাশায়েখ হযরত মাওলানা সালীমুল্লাহ খান রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ভাষ্য হল, মানুষের নিজস্ব বলতে কিছু নেই। অস্তিত্ব তার নিজস্ব নয়। বিবেক ও প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও বোধ নিজস্ব নয়। শোনা, দেখা এবং বলার শক্তিও নিজস্ব নয়। এ সবই খোদাপ্রদত্ত। নিঃস্ব এ মানুষের কাছে আছে কেবল শূন্যতা। এ শূন্যতা মহান আল্লাহর ইচ্ছাধীন। এ শূন্যতার মালিকও সে নয়। আসলে আল্লাহ তাআলার পুরস্কার ও অনুগ্রহ যে, তিনি মানুষকে এসব মূল্যবান নিআমতে ভূষিত করেছেন। বিবেকের সিদ্ধান্ত হল, পুরস্কারদাতা ও অনুগ্রহকর্তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন জরুরি। আর যে নিআমতদাতা এত উদারতার সঙ্গে অসংখ্য অগণিত নিআমত দিয়েছেন তার কৃতজ্ঞতা আদায় তো যে কোনো অনুগ্রহকর্তা ও নিআমতদাতার চেয়ে বেশি করা জরুরি। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্য সর্বপ্রথম জরুরি কাজ হল, মহাপবিত্র খোদার সত্তা ও গুণ সংশ্লিষ্ট আকীদা সঠিক হতে হবে, তিনিই আহাদ-এক। সামাদ-তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন; সকলে তাঁর মুখাপেক্ষী এবং ইবাদতের যোগ্য তিনিই। তিনিই আমাদের সবার খালিক ও মালিক। তিনিই প্রতিপালক, তিনিই রিযিকদাতা, তিনিই মৃত্যু ও জীবনদাতা। অসুস্থতা-সুস্থতা, ধনাঢ্যতা-দারিদ্র্য, লাভ-ক্ষতি শুধুই তাঁর ক্ষমতাধীন। সব মাখলুক তাঁরই সৃষ্টি করা। সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন। এ সৃষ্টিকর্মের মধ্যে কেউ তাঁর অংশীদার কিংবা পরামর্শক নেই। কেউ তাঁর হুকুম বদলাতে পারে না। না তাঁর কাজে কারও দখল দেওয়ার অবকাশ আছে। তিনি মালিকুল মুলক – রাজাধিরাজ। আহকামুল হাকিমীন – মহা বিচারক। এজন্য তাঁর প্রতিটি হুকুম মানা জরুরি। তাঁর হুকুমের বিপরীতে অন্য কারও হুকুম কখনো মানা যাবে না। চাই সে শাসনকর্তা, বাবা-মা কিংবা গোত্রপতি অথবা নিজের প্রবৃত্তি হোক। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ হোক আমাদের স্বীকারোক্তি ও ঘোষণা, আমাদের বিশ্বাস ও ঈমান। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ হোক আমাদের আমল ও শান। এ আকীদাই দ্বীনের মূল ভিত্তি। সমস্ত নবীর সর্বপ্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ছবক। সাত আসমান, সাত জমিন এবং যা কিছু তাতে আছে সব এক পাল্লায় রাখা হলে আর লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অপর পাল্লায় রাখা হলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর পাল্লা ভারী হবে। এ ফযীলত ও ওজন এজন্য যে, এ কালেমায় আল্লাহর তাওহীদের অঙ্গিকার ও স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে। তাঁরই ইবাদত-বন্দেগী করার, তাঁরই আদেশ মতো চলার, তাঁকেই পরম প্রার্থিত বানানোর, তাঁর সঙ্গেই সম্পর্ক করার সিদ্ধান্ত ও অঙ্গিকার। এটাই ঈমান ও ইসলামের রূহ। হাদীসে এসেছে- جَدِّدُوا إِيمَانَكُمْ، قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، وَكَيْفَ نُجَدِّدُ إِيمَانَنَا؟ قَالَ: أَكْثِرُوا مِنْ قَوْلِ لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ. হে লোকসকল, ঈমান তাজা করে যাও। প্রশ্ন করা হল, কী করে ঈমান তাজা করব? বললেন, বেশি বেশি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ো। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৮৭১০; আলমুসতাদরাক, হাকেম, হাদীস ৭৬৫৭; আলমুনতাখাব মিন মুসনাদি আব্দ ইবনে হুমাইদ, হাদীস ১৪২৪ সে আল্লাহ জীবিত, জ্ঞানের অধিকারী, ক্ষমতাধর, সিফাতে কালামের অধিকারী, ইচ্ছা ও শ্রবণশক্তির অধিকারী, সৃষ্টি ও সৃজন তাঁর গুণ। তিনিই জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সম্মান ও লাঞ্ছনা তিনিই দেন। محمد رسول الله কালেমার এ অংশে হযরত মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল হওয়ার স্বীকারোক্তি ও ঘোষণা আছে। যার মর্ম হল, আল্লাহ তাআলা তাঁকে পৃথিবীবাসীর হেদায়েতের জন্য পাঠিয়েছেন। তিনি যা বলেছেন, যে খবর দিয়েছেন সব সঠিক। যেমন, কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হওয়া, ফেরেশতার অস্তিত্ব, কিয়ামত সংঘঠিত হওয়া, মৃতদের পুনরায় জীবিত হওয়া, নিজ নিজ আমল অনুযায়ী জান্নাত ও জাহান্নামে যাওয়া ইত্যাদি। রাসূলের প্রতি ঈমান আনার উদ্দেশ্যই হল, তাঁর সব কথা মানা। তাঁর শিক্ষা ও হেদায়েতকে আল্লাহ তাআলার শিক্ষা ও হেদায়েত মনে করা এবং তাঁর বিধান মোতাবেক চলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। কেউ যদি কালেমা পড়ে কিন্তু এ সিদ্ধান্ত না নেয়, আমি নবীজীর বর্ণিত প্রতিটি কথা একেবারে সত্য এবং তাঁর বিপরীতের সব কথা ভুল বলে বিশ্বাস করব, তাঁর আনীত শরীয়ত ও হুকুম অনুযায়ী চলব- তাহলে এমন মানুষ মুসলমান বলে গণ্য হবে না। কালেমা মূলত একটি অঙ্গীকার ও স্বীকারোক্তি। এর মর্ম এটাই- আমি শুধু আল্লাহ তাআলাকে সত্য খোদা এবং মাবুদ ও মালিক মানি। দুনিয়া ও আখেরাতের সবকিছুর চেয়ে তাঁর সাথে বেশি মুহাব্বত ও সম্পর্ক রাখছি। হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্য রাসূল মানছি। উম্মতের এক সদস্যের মতো আমি তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ করব এবং তাঁর আনীত শরীয়তের উপর আমল করতে থাকব। আকায়েদের বিষয়টি বড় গুরুত্বপূর্ণ। আকীদা দ্বীনে ইসলামের মূল বিষয়। আমল হল, তার শাখা। আকীদা ঠিক না হলে দোযখে চিরস্থায়ী আযাব ভোগ করতে হবে। আমলে অবহেলা হলে নাজাতের আশা করা যায়। নাজাত হয়ত শুরুতেই লাভ হবে অথবা শাস্তি ভোগ করার পর। (আকায়েদে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ, পৃ. ২৮-৩০) আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইসলামী আকীদার যথার্থ ও বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করার তাওফীক দান করুন। ঈমান নবায়নের এমন তাওফীক দান করুন, যার প্রভাব আমাদের কথা ও কাজ, আমাদের চরিত্র ও কর্মকাণ্ডে দৃশ্যমান হয়। আমাদেরকে এ বাস্তবতাও মনে রাখতে হবে, যা হযরত মাওলানা আব্দুল হক খান বশীর লিখেছেন। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের স্বীয় যুগের ইমাম হযরত মাওলানা সারফরায খান সফদর রাহমাতুল্লাহি আলাইহি যার পূর্ণ সমর্থন করেছেন এভাবে- ‘উপমহাদেশ পাক-ভারতে গত চার শতাব্দীর মধ্যে অসংখ্য ফেতনার জন্ম হয়েছে। মুসলমানদেরই কিছু মূর্খ ও স্বার্থপর ধর্মীয় নেতৃত্বের কারণে শিরক ও বিদআতের উত্থান হয়। কবর পূজার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। অগণিত শরীয়তবিরোধী প্রথার জন্ম হয়। চিন্তাগত কুবিশ্বাস মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। খতমে নবুওত, হাদীসের প্রামাণ্যতা, সুন্নাহর প্রামাণ্যতা, তাকলীদের প্রামাণ্যতা, মুজিযা ও কারামাতের বাস্তবতা, সাহাবা ও আহলে বাইতের মর্যাদা এবং নবীদের নিষ্পাপ হওয়ার মতো শরীয়ত বর্ণিত সর্বসম্মত আকীদা অস্বীকার করে বিভ্রান্তির নতুন পথ খোলা হয়েছে। এ অবস্থায় ইমামে রাব্বানী, মুজাদ্দিদে আলফেসানী হযরত শাইখ আহমদ সারহিন্দী রাহ., হাকীমুল হিন্দ হযরত মাওলানা শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহ. এবং সিরাজুল হিন্দ হযরত ইমাম শাহ আব্দুল আযীয দেহলভী রাহ. প্রমুখ বুযুর্গগণ সমস্ত জটিলতা সহ্য করে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মুতাওয়াতির ও মুতাওয়ারাস আকীদা হেফাজতের দায়িত্ব আঞ্জাম দেন। তাঁদের পর তাদের প্রকৃত জ্ঞানগত আত্মিক উত্তরাধিকারী আকাবিরে দেওবন্দ এ দায়িত্ব যথাযথ সামলান। এদিক থেকে তাঁদের চেষ্টা-মেহনত অন্যান্য দল থেকে স্বতন্ত্র মর্যাদা এনে দিয়েছে। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না; এ যুগে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মুতাওয়াতির ও মুতাওয়ারাস আকীদা ও দৃষ্টিভঙ্গি হেফাজতের ক্ষেত্রে দেওবন্দের বুযুর্গদের উপমা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাঁরা পরিপূর্ণভাবে তাদের মেধা, চিন্তা, জ্ঞান ও বোধ এ চেষ্টা ও মেহনতে ব্যয় করেন। যেন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মুতাওয়াতির ও মুতাওয়ারাস আকীদা ও চিন্তায় কোনো ধরনের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন অনুপ্রবেশ করতে না পারে। এমনকি এ প্রচেষ্টায় নিজের আপনজন বাধা হলেও তাদেরকে নিজেদের থেকে পৃথক করতে দ্বিধাবোধ করতেন না। যার একাধিক উদাহরণ আছে। দেওবন্দের পূর্বসূরিদের এই আন্তরিকতা, দ্বীনদারিতা ও দায়িত্বশীলতা ও পূর্ণ প্রচেষ্টার ফলাফল হয়েছে এই- আজ আমরা পূর্ণ বিশ্বাস ও দৃঢ়তার সঙ্গে এ দাবি করতে পারি, আলহামদু লিল্লাহ আমাদের কাছে আহলুসসুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা সে অবস্থাতেই আছে এবং সে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণসহই আছে, যে অবস্থায়, যে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীর মুসলমানদের কাছে ছিল। দেওবন্দের পূর্বসূরিদের জ্ঞানগত ও আত্মিক উত্তরাধিকারীরা কিয়ামত পর্যন্ত ইনশাআল্লাহ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা সংরক্ষণের এ দায়িত্ব পালন করে যাবে। (আকায়েদে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ, পৃ. ৩৫-৩৬) আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক আকীদা গ্রহণ করা, তার উপর অবিচল থাকা এবং তার সংরক্ষকদের কৃতজ্ঞতা আদায়ের তাওফীক দান করুন- আমীন।
বুধবার ২২ রবিউস সানি, ১৪৩৯ হিজরী ১০ জানুয়ারি, ২০১৮ ঈসাব্দ
জুমাদাল উলা ১৪৩৯ . ফেব্রুয়ারি ২০১৮
মাসিক আলকাউসার