কালিমায়ে তাওহীদ
لا إله إلا الله محمد رسول الله
প্রথম অংশ-তাওহীদে ইলাহী
لا إله إلا الله
(লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) কোনো মাবুদ নেই আল্লাহ ছাড়া (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া ইবাদত ও উপাসনার যোগ্য কেউ নেই)।
তাওহীদ দ্বীনের বুনিয়াদ, ঈমানের প্রাণ এবং নিজ নিজ উম্মতের প্রতি সকল নবীর প্রথম পয়গাম।
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ
তোমার আগে আমি যে রাসূলই পাঠিয়েছি তাঁকেই ওহী করতে থেকেছি যে, আমি ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত কেউ নেই। সুতরাং আমারই ইবাদত কর। (সূরা আম্বিয়া ২১ : ২৫, রুকু ২)
এই তাওহীদকে মানা না-মানা এবং সে অনুযায়ী চলা না-চলার উপরই মানুষের সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য এবং মুক্তি ও ধ্বংস নির্ভর করে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সাহাবায়ে কেরামকে বললেন-
ثنتان موجبتان
‘দুটি বিষয় আছে, অপরিহার্যকারী।’
কেউ আরয করলেন-
يا رسول الله! ما الموجبتان؟
‘আল্লাহর রাসূল! কী সেই অপরিহার্যকারী?’
হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন-
من مات لا يشرك بالله شيئا دخل الجنة ومن مات يشرك بالله شيئا دخل النار
‘যে আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করে (অর্থাৎ কোনো ধরনের শিরককারী হয়ে) মারা যায় সে জাহান্নামে যাবে। আর যে আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরীক না করে (অর্থাৎ শিরক থেকে মুক্ত ও তাওহীদের উপর অটল থেকে) মারা যায় সে জান্নাতে যাবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৫৯)
অন্য হাদীসে আলাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
فإن حق الله على العباد أن يعبدوا الله و لا يشركوا به شيئا وحق العباد على الله عز وجل أن لا يعذب من لا يشرك به شيئا
নিশ্চয়ই বান্দাদের উপর আল্লাহর (খাস) হক এই যে, তারা আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দাদের হক এই যে, তিনি এমন কাউকে আযাব দিবেন না, যে তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করত না। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৯৬৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৫৩)
আরেক হাদীসে আছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ما من عبد قال لا اله الا الله ثم مات على ذلك الا دخل الجنة
যে কোনো বান্দা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে (অর্থাৎ তাওহীদকে দ্বীীন হিসেবে গ্রহণ করে এবং এর উপর অটল থাকে) আর এ অবস্থায় তার মৃত্যু হয় সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৮২৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৮৩)
একবার আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু হুরায়রা রা.কে বললেন-
اذهب بنعلي هاتين فمن لقيت من وراء هذا الحائط يشهد أن لا اله الا الله مستيقنا بها قلبه فبشره بالجنة
‘‘যাও, এমন যাকেই পাবে, যে অন্তরের ইয়াকীনের সাথে এই সাক্ষ্য দেয়-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, তাকে আমার তরফ থেকে বেহেশতের খোশখবরী শোনাও। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৫৬)
হযরত উছমান রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
من مات وهو يعلم أنه لا اله الا الله دخل الجنة
‘যে কেউ দুনিয়া থেকে এ অবস্থায় বিদায় নিল যে, তার ইয়াকীন ছিল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে দাখিল হবে।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৫)
হযরত মুয়ায রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বললেন-
مفاتيح الجنة شهادة أن لا اله الا الله
‘বেহেশতের চাবি হচ্ছে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সাক্ষ্য দেওয়া।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২২১০২)
হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম-
يارسول الله ما نجاة هذا الأمر؟
‘ আল্লাহর রাসূল! এই দ্বীনে মুক্তির বিশেষ উপায়টা কী’। তিনি বললেন-
من قبل مني الكلمة التي عرضت على عمي فردها علي فهي له نجاة
‘যে আমার আহবানে আমার আনীত ঐ কালেমা (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) কবুল করবে, যা আমি পেশ করেছিলাম আমার চাচা (আবু তালিবের) কাছে (তার অন্তিম শয্যায়) আর তিনি তা না-কবুল করেছিলেন, ঐ কালেমাই কবুলকারীর জন্য মুক্তির মূলমন্ত্র। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২০)
এই হাদীসগুলোর অর্থ সঠিকভাবে বোঝা প্রয়োজন।
এ মনে করা ঠিক নয় যে, শুধু ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা ও তাওহীদকে স্বীকার করার দ্বারাই কেউ মুক্তির উপযুক্ত ও জান্নাতের হকদার হয়ে যায়। ঈমানের অন্যান্য শর্ত ও দাবি পূরণের আর প্রয়োজন নেই; বরং এই হাদীসগুলোর অর্থ শুধু এই যে, নাজাতের প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এ ছাড়া কোনোভাবেই নাজাত পাওয়া সম্ভব নয়। তাওহীদের এ দাওয়াত যে কবুল করল নাজাতের বড় শর্তটি সে পূরণ করল। এছাড়া ঈমানের অন্যান্য শর্ত যেমন রাসূলের উপর ঈমান, আখিরাতের উপর ঈমান ইত্যাদি এবং দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ দাবিসমূহ যেমন সালাত, যাকাত ইত্যাদির গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা স্বস্থানে আছে। কুরআন-হাদীসের বিভিন্ন জায়গায় ঐ সকল শর্ত পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
একথাটি এভাবেও বলা যায় যে, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কবুল করা এবং তাওহীদ ইখতিয়ার করা প্রকৃতপক্ষে গোটা দ্বীন কবুল করারই শিরোণাম। এ কারণে ‘যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ কবুল করে সে জান্নাতে যাবে’ কথাটির অর্থ, যে ঐ দ্বীনকে কবুল করে, যার ভিত্তি ও বুনিয়াদ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে।
তো উপরের সকল হাদীসে (এবং এছাড়া কুরআন-হাদীসের আরো অনেক নসে) পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, নাজাতের মূল কথা তাওহীদ। অর্থাৎ নাজাত ও মুক্তি নির্ভরশীল ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর পয়গাম কবুল করা এবং জীবনের নীতি হিসেবে গ্রহণ করার উপর।
তাওহীদের হাকীকত ও ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থ
তাওহীদের হাকীকত এবং ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর মর্মবাণী বোঝার জন্য একথা উত্তমরূপে উপলব্ধিতে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তাআলার সৃজন-পালন (অর্থাৎ এই বিশ্বসংসারের সৃষ্টি ও পরিচালনা) পর্যন্ত তো আরবের মুশরিকরাও আল্লাহ তাআলাকে ‘ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু’ স্বীকার করত। অর্থাৎ নিজেদের আকীদা এই প্রকাশ করত যে, এই বিশ্বজগতের স্রষ্টা আল্লাহ আপন সত্ত্বায় এক ও লা-শরীক। তিনি একা এ বিশ্বসংসার সৃষ্টি করেছেন আর তিনিই তা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করছেন। আরবের মুশরিকদের এই আকীদা-ইকরার কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় নকল করা হয়েছে।
(সূরা ইউনুস ১০ : ৩১, রুকু : ৪; সূরা মুমিনূন ২৩ : ৮৪-৮৯, রুকু : ৫; সূরা আনকাবুত ২৯ : ৬১-৬৩, রুকু : ৬)
আরবের মুশরিকদের শিরক ও তাদের কাছে তাওহীদের দাওয়াতের দাবি
আলাহকে সৃষ্টিকর্তা মেনেও তারা যেহেতু ইবাদতে-উপাসনায়, যা শুধু আল্লাহর জন্য হওয়া চাই, নিজেদের দেব-দেবী ও কাল্পনিক উপাস্যদের শরীক করত এবং তাদেরকে হাজত পূরণকারী ও বালা-মুসীবত থেকে উদ্ধারকারী বলে বিশ্বাস করে তাদের কাছে প্রার্থনা করত। এ কারণে তারা ‘মুশরিক’ সাব্যস্ত হয়েছে।
আরব জাহেলিয়াতের ইতিহাস ও কুরআন শরীফের শত শত আয়াত থেকে জানা যায় যে, তাদের বড় শিরক ছিল এই দু’টোই (উপাসনার শিরক ও প্রার্থনার শিরক)। সুতরাং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র যে পয়গাম তাদের সামনে পেশ করেছেন এর প্রথম ও প্রধান দাবি ছিল, যে আল্লাহকে তোমরা তাঁর সত্তায় ও বিশ্বজগতের সৃজন-পালনে ‘ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু’ মনে কর, ইবাদত ও ইসতিআনাত (উপাসনা ও ফরিয়াদ)-এর সম্বন্ধও শুধু তাঁর সাথেই রাখ। শুধু তাঁরই উপাসনা কর, আর কারো নয়। শুধু তাঁকেই হাজত ও মনোবাঞ্ছা পূরণকারী বলে বিশ্বাস কর। আর কাউকে নয়। সমস্যায়-সংকটে একমাত্র তাঁরই কাছে ফরিয়াদ কর, আর কারো কাছে নয়। এ-ই ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তাওহীদের দাওয়াতের প্রথম দাবি। আর একেই তিনি তাঁর দ্বীনের বুনিয়াদ ও ভিত্তিরূপে পেশ করতেন।
সূরা ইউনুসের শেষ রুকুতে বলা হয়েছে-
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنْ كُنْتُمْ فِي شَكٍّ مِنْ دِينِي فَلَا أَعْبُدُ الَّذِينَ تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلَكِنْ أَعْبُدُ اللَّهَ الَّذِي يَتَوَفَّاكُمْ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ l وَأَنْ أَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ l وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ lوَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ يُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
(হে নবী! ঐ লোকদের সামনে) ঘোষণা করুন যে, লোকসকল! তোমরা যদি আমার দ্বীন সম্পর্কে কোনো সন্দেহ-সংশয়ে থাক তাহলে (শোন, আমার দ্বীন এই যে,) আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের উপাসনা কর আমি ওদের উপাসনা করি না। আমি শুধু ঐ আল্লাহর ইবাদত করি যিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে নেন (অর্থাৎ যাঁর কব্জায় তোমাদের জীবন-মৃত্যু)। আর আমার প্রতি এই নির্দেশ আছে যে, আমি যেন হই ঈমানওয়ালাদের একজন এবং এই নির্দেশও আছে যে, ‘তুমি একনিষ্ঠ হয়ে নিজেকে এই দ্বীনের (তাওহীদের প্রতি) অভিমুখী রাখ আর শিরককারীদের একজন হয়ো না। আর আল্লাহ ছাড়া এমন কাউকে ডেকো না, যে না তোমার উপকার করতে পারে, না ক্ষতি। এরপর যদি তা কর তবে তুমিও জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আল্লাহর তরফ থেকে যদি কোনো কষ্ট তোমাকে স্পর্শ করে তাহলে কেউ নেই তা দূর করার মতো। আর তিনি যদি চান তোমাকে কোনো কল্যাণ দান করতে তাহলে কেউ নেই তার করুণা রোধকারী। বান্দাদের মধ্যে যাকে চান তিনি তা দান করেন। আর তিনিই ক্ষমাকারী মেহেরবান।’ (সূরা ইউনুস ১০ : ১০৪-১০৭, রুকু : ১১)
এ ধরনের আরো অনেক আয়াতে ‘‘তাওহীদ ফিল ইবাদা’’ (উপাসনার তাওহীদ) ও ‘‘তাওহীদ ফিল ইসতিআনা’’ (সাহায্য প্রার্থনার তাওহীদ) পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছে।
উপাসনা ও প্রার্থনার সন্নিবিষ্টতা
প্রার্থনা ও উপাসনা পরস্পর সংযুক্ত ও সন্নিবিষ্ট। মুশরিকরা দেব-দেবীর পূজা-অর্চনা সাধারণত এ কারণেই করত ও করে যে, নির্বুদ্ধিতার কারণে এদেরকে তারা কল্যাণ-অকল্যাণ, সাফল্য-ব্যর্থতার কর্তা-অধিকারী মনে করত ও করে এবং এদেরকে মনোবাঞ্ছা পূরণকারী ও সংকট মোচনকারী বলে বিশ্বাস করত ও করে। এককথায় কল্যাণ-অকল্যাণের বিশ্বাসই বাতিল উপাস্যের পূজা-অর্চনার কারণ হয়ে থাকে।*
তাই কুরআন মজীদে তাওহীদের প্রসঙ্গে বারবার এই বাস্তবতার উল্লেখ হয়েছে যে, মুশরিকদের ঐ সকল কাল্পনিক উপাস্যের কব্জা ও ইখতিয়ারে কিছুই নেই।
قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَمَا لَهُمْ فِيهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَمَا لَهُ مِنْهُمْ مِنْ ظَهِيرٍ
(হে নবী! ঐ মুশরিকদের) বলুন, আলাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের (হাজত পূরণকারী ও কর্মবিধায়ক) মনে করে আছ তাদের ডাক। তারা তো কণা পরিমাণ ক্ষমতাও রাখে না-না আকাশমন্ডলে আর না ভূমিতে। আর না এ দুইয়ে আছে এদের কোনো শরীকানা। আর না তাদের কেউ খোদার মদদগার। (সূরা সাবা ৩৪ : ২২, রুকু : ৩)
قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِهِ فَلَا يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنْكُمْ وَلَا تَحْوِيلًا
বলুন, তোমরা ডেকে দেখ তোমাদের ঐ দেব-দেবীদের, যাদের তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে (নিজেদের কর্ম-বিধায়ক) ভেবে আছ। ওরা না তোমাদের দুঃখ নিবারণের ক্ষমতা রাখে, আর না তা পরিবর্তনের। (সূরা বনী ইসরাইল ১৭ : ৫৬, রুকু : ৬)
এ ধরনের আয়াতগুলোতে যদিও মুশরিকদের মিথ্যা উপাস্যকুলের অক্ষমতা প্রকাশ করে বাহ্যত শুধু শিরক ফিল ইসতিআনা (সাহায্য প্রার্থনার শিরক) খন্ডন করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে এ সকল আয়াত দ্বারা ‘শিরক ফিল ইবাদা’ (উপাসনার শিরকও) খন্ডন হয়ে যায়। কারণ যেমনটা ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে, উপাসনা ও সাহায্য প্রার্থনা পরস্পর সন্নিবিষ্ট। সাধারণত কল্যাণ-অকল্যাণের বিশ্বাস থেকে এবং প্রার্থনা ও ফরিয়াদের পথ ধরেই উপাসনার সূচনা হয়।
তদ্রূপ যেসকল আয়াতে সরাসরি শুধু ‘শিরক ফিল ইবাদা’ (উপাসনার শিরক) খন্ডন করা হয়েছে এই সন্নিবিষ্টতার কারণে ঐ সকল আয়াত দ্বারা ‘শিরক ফিল ইসতিআনা’ (সাহায্য প্রার্থনার শিরকও) খন্ডন হয়ে যায়।
যাইহোক, আরবের মুশরিক সম্প্রদায়, যারা কুরআন মজীদের পয়গামে তাওহীদের প্রথম সম্বোধিত, তাদের প্রধান শিরক ছিল এই দুটো : উপাসনার শিরক এবং প্রার্থনা-ফরিয়াদের শিরক। এ কারণে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র মাধ্যমে তাদেরকে তাওহীদের যে পয়গাম দেওয়া হয়েছে এর প্রথম ও প্রধান দাবি তাদের কাছে এ-ই ছিল যে, ‘ইবাদত ও ইসতিআনাত তথা উপাসনা ও ফরিয়াদে তারা যেন আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে। আমাদের কাছেও প্রতি নামাযের প্রতি রাকাতে এরই স্বীকারোক্তি নিম্নোক্ত শব্দে নেওয়া হয়-
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
অর্থাৎ (ইয়া আল্লাহ!) আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি ও করব এবং শুধু তোমারই কাছে সাহায্য চাই ও চাইব।
তাওহীদের প্রথম স্তর
তো আল্লাহ তাআলাকে তাঁর যাত ও সিফাত তথা সত্ত্বা ও গুণাবলিতে এক ও একক মানার পর এই ‘তাওহীদ ফিল ইবাদা’ ও ‘তাওহীদ ফিল ইসতিআনা’ হচ্ছে তাওহীদের ঐ প্রধান ও অপরিহার্য স্তর, যা কর্মে ও বিশ্বাসে গ্রহণ করা ছাড়া কেউ মুসলমানই হতে পারে না। তাওহীদের এই পর্যায়টি থেকেও যে শূন্য, যে আল্লাহর যাত ও সিফাত তথা সত্ত্বা ও গুণাবলি কিংবা ইবাদত-ইসতিআনাত তথা উপাসনা ও ফরিয়াদে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করে আর এ অবস্থায় তার মৃত্যু হয় তাহলে (নবীগণের যবানীতে) আল্লাহ তাআলার ঘোষণা, এ লোকের জন্য জান্নাত হারাম।
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ
‘নিশ্চয়ই যে আল্লাহর অংশী স্থির করে আল্লাহ তার উপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন, তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর এইরূপ জালিমদের কোনো সাহায্যকারী হবে না। (সূরা মাইদাহ ৫ : ৭২, রুকু : ১০)
আর এ-ই হচ্ছে সেই শিরকে আকবর, বড় শিরক, যা আল্লাহ কখনো মাফ করবেন না।
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا
আল্লাহ কখনো মাফ করবেন না তাঁর সাথে শরীক স্থির করাকে। এ ছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা মাফ করে দিবেন। (সূরা নিসা ৪ : ১১৬, রুকু : ১৮)
তাওহীদের দ্বিতীয় পর্যায়ের দাবিসমূহ
তাওহীদের এই প্রথম ও প্রধান দাবি পূরণের পর আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি আছে, যা ছাড়া তাওহীদ কামিল হয় না। যেমন এ ফয়সালা করা যে, আমাকে শুধু আল্লাহর হুকুম মত চলতে হবে, তাঁর হুকুমের বিপরীতে বাপ-দাদার নীতি, গোত্র ও সমাজের রীতি, রাষ্ট্রের বিধান, লোকের মতামত, নিজের ইচছা বা অন্যদের মর্জি ইত্যাদি দেখার সুযোগ নেই; বরং তাঁর হুকুমের বিরোধী হলে এসকল কিছুকে পশ্চাতে ফেলে শুধু তাঁরই বিধান ও মর্জি মোতাবেক আমাকে চলতে হবে।
মোটকথা, তাওহীদের পূর্ণতার জন্য জরুরি, জীবনের সকল অঙ্গনে এক আল্লাহর হুকুম মোতাবেক চলার ফয়সালা কর। এবং সর্বাবস্থায় তাঁর দাসত্ব ও আনুগত্যকে জীবনের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা। সামনের আয়াতসমূহে তাওহীদের এ স্তরের কথা বলা হয়েছে-
أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَى عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَى سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَى بَصَرِهِ غِشَاوَةً فَمَنْ يَهْدِيهِ مِنْ بَعْدِ اللَّهِ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
অতএব তুমি কি সেই ব্যক্তির অবস্থা দেখেছো, যে নিজের প্রবৃত্তিকে আপন উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে? আর আল্লাহ তাকে (সত্য উপলব্ধির) জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও পথভ্রষ্ট করে দিয়েছেন এবং কর্ণ ও অন্তরের উপর মোহর মেরে দিয়েছেন আর তার চোখের উপর পর্দা ফেলে দিয়েছেন? সুতরাং আল্লাহ ( গোমরাহ করার) পর কে তাকে হেদায়েত করবে? তোমরা কি তবুও বোঝ না। (সূরা জাছিয়া ৪৫ : ২৩)
قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَى وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُمْ بَعْدَ الَّذِي جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ
অর্থাৎ বল, আল্লাহর হেদায়েতই প্রকৃত হেদায়েত। আর যদি তুমি তাদের মত ও মর্জির অনুসরণ কর তোমার কাছে প্রকৃত ইলম আসার পর তাহলে আল্লাহ থেকে রক্ষাকারী তোমার না কোনো বন্ধুও থাকবে, না কোনো সাহায্যকারীও। (সূরা বাকারা ২ : ১২০, রুকু : ১৪)
قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَى وَأُمِرْنَا لِنُسْلِمَ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ
বল, আল্লাহর হেদায়েতই সত্য হেদায়েত। আর আমাদের প্রতি হুকুম হয়েছে, আমরা যেন রাববুল আলামীনেরই ফরমাবরদারি করি। (আলআনআম ৬ : ৭১, রম্নকু : ৯)
اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ قَلِيلًا مَا تَذَكَّرُونَ
ঐ বিষয়ের অনুসরণ কর, যা তোমাদের উপর নাযিল হয়েছে তোমাদের রবের তরফ থেকে।
আর তাঁকে ছেড়ে অন্য প্রভূদের তাবেদারী করো না। (আলআরাফ ৭ : ৩, রুকু : ১)
মুমিনদের কাছে এ সকল আয়াতের দাবি নিজেদের জীবন ও কর্মে তারা শুধু আল্লাহর নির্দেশ ও নির্দেশনার অধীন থাকবে এবং জীবনের সকল অঙ্গনে শুধু তাঁরই ফরমাবরদারী করবে। তাওহীদের এ দাবি নিঃসন্দেহে অনেকের জন্য কঠিন, কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই যে, এটিও তাদের কাছে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র দাবি এবং এছাড়া তাদের ঈমান ও ইসলাম পূর্ণাঙ্গ নয়।
جو مى گويم مسلمانم بلرزم
كہ دانم مشكلات لا الہ را
যখন বলি, আমি মুসলমান তো কেঁপে উঠি কারণ/আমি জানি ‘লা-ইলাহা’র জটিলতাগুলো।
তেমনি পূর্ণাঙ্গ তাওহীদের এক দাবি মুমিনদের কাছে এটাও যে, একমাত্র সেই সর্বশক্তিমান কর্মবিধায়কের উপরই ভরসা ও তাওয়াক্কুল করবে, তাঁকেই নিজের রক্ষক ও আশ্রয়স্থল মনে করবে, শুধু তাঁরই কাছে কল্যাণের আশা রাখবে, তাঁরই ক্রোধ ও শাস্তিকে ভয় করবে।**
আর শুধু তাঁরই মদদ ও নুসরতের ভরসায় দুনিয়ার বড় থেকে বড় শক্তিকেও তুচ্ছজ্ঞান করবে।
কবি বলেন-
موحد كہ درپائى ريزى زرش
دگر آر ۂمے نہى برسرش
اميدو ہر اسش نہ باشد زكس
ہميں است بنياد توحيد وبس
মুয়াহহিদের (তাওহীদ-পন্থীর) আশা ও ভয়/(জগতের) কারো সাথেই যুক্ত নয়।/চাই তার পদপ্রান্তে স্বর্ণ লুটাও কিংবা শীরে করাত ধর।/তাওহীদের বুনিয়াদ এ-ই, আর কিছু নয়।
وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَدًا إِلَّا اللَّهَ
‘আর তাঁরা ভয় করে না আলাহ ছাড়া কাউকে।’ (সূরা আহযাব ৩৩ : ৩৯, রুকু : ৫)
মোটকথা, এ সবগুলোই ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর একেকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি। এসকল বিষয়ে যার যতটুকু কমতি থাকবে, বুঝতে হবে তার তাওহীদ ততটুকু নাকিস। আর যার মধ্যে এ বিষয়গুলো যে পরিমাণ পূর্ণতা পাবে তার তাওহীদও সেই অনুপাতে পূর্ণাঙ্গ।
এখানে এ কথাও বলে দেওয়া সমীচীন যে, বস্ত্তবাদী ও খোদা-বিস্মৃত ইউরোপে ব্যক্তি-পূজা, বংশ-পূজা ও দেশ-পূজা শ্রেণির যেসব ভ্রষ্টতার জন্ম ও বিস্তার ঘটেছে এগুলোও শিরকেরই ‘আন্ডা-বাচ্চা’।
ইসলাম ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র আঘাতে এই নতুন উপাস্যদেরও নিধন করতে চায়।
যেমন ‘জাতীয়’ বীর ও নেতাগণের শর্তহীন আনুগত্য, তাদের মূর্তি ও ভাষ্কর্য প্রতিষ্ঠা, তাদের ছবি ও প্রতিকৃতির সম্মুখে নতশীরে-প্রণতি জ্ঞাপন, অর্ঘ্য দান ও পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং ‘জাতীয়’ পর্ব ও দিবসে এবং সম্মিলিত কর্মকা– আল্লাহর বিধান থেকে বিমুখ হয়ে খোদা-বিস্মৃত নেতাদের অনুসরণ, এই নেতা-পূজা ও বীর-বন্দনার সকল রূপ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র পয়গামে তাওহীদের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ইসলামে এগুলোর কোনো অবকাশ নেই।
একইভাবে ইউরোপ ‘দেশ’ ও ‘জাতি’ কে যেভাবে উপাস্যের আসনে আসীন করেছে এবং যেভাবে এর সেবায়েতগণ এসবের বন্দনা-গান করে, হক-বাতিল, ন্যায়-অন্যায়ের বিচার ত্যাগ করে এ উপাস্যকুলের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা যেভাবে এক স্বতন্ত্র ধর্মের রূপ পরিগ্রহ করেছে (এবং মুসলমানদের মাঝেও এ সকল ভ্রষ্টতা ও প্রান্তিকতা বিদ্যুৎবেগে প্রবেশ করছে) এগুলোও ইসলামের দৃষ্টিতে এক ধরনের শিরকই বটে; বরং বাস্তবতা এই যে, ইউরোপের বুতখানায় নির্মিত এই সকল দেব-দেবী (নেতা, দেশ, জাতি ইত্যাদি) একদিক থেকে মাটি-পাথরের প্রাচীন মূর্তির চেয়েও ভয়াবহ।
ইকবাল যথার্থই বলেছেন-
اس دور ميں مے اور ہے جام اور ہے جم اور
ساقى نے بنائى روش لطف وكرم اور
مسلم نے بهى تعمير كيا اپنا حرم اور
تہذيب كے آرز نے تر شوائے صنم اور
ان تازہ خداؤوں ميں بڑا سب سے وطن ہے
جو پير ہن اس كا ہے وہ مذہب كا كفن ہے
এ যুগের ‘শরাব’ আলাদা, ‘পেয়ালা’ আলাদা, জামশীদ আলাদা/সাকীর রহম-সতমের ভঙ্গিমাও আলাদা/ মুসলমানও নির্মাণ করেছে ‘হারাম’ আলাদা/সভ্যতার আযর গড়ে চলেছে ‘মূর্তি’ আলাদা/এই নব ইশ্বরকুলের বড়টির নাম ‘ভূমি’/এর উত্তরীয়ের মাঝেই দেখবে ধর্মের কাফন তুমি।
তাওহীদের উচ্চতম স্তর
এরপর তাওহীদের উচ্চতম স্তর এই যে, আমাদের হৃদয়ের সম্পর্ক হবে শুধু আল্লাহর সাথে। তিনিই হবেন আমাদের মাহবুব ও মাকসূদ। তাঁর মহববত ও ভালবাসায় আমরা এমনভাবে ফানা হব যে, আমাদের সকল কাজ শুধু তাঁরই জন্য হবে, তার সন্তুষ্টিই হবে আমাদের অন্তরের একমাত্র চাহিদা। এরপর আমাদের শুধুামায-রোযাই নয়; বরং খাওয়া-দাওয়া, হাসি-কান্না, শয়ন-জাগরণ কারো প্রতি সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি,এক কথায় আমাদের জীবন ও মরণ শুধু আল্লাহর জন্য হবে। আমরা হব কুরআনের এ আয়াতের বাস্তব নমুনা
محياي ومماتي لله رب العالمين
আর আমাদের অন্তরের ধ্বনি হবে-
خواہم كہ ہميشہ در ہوائے تو زيم
خاكے شوم وبزير پائے تو زيم
مقصود من خستہ زكونيں توئى
ازبہر تو ميرم وبرائے تو زيم
আমি চাই, প্রতিমুহূর্তে তোমারই ইচ্ছাপূরণে বেঁচে থাকি/
তোমার পদতলের মৃত্তিকা হয়ে বেঁচে থাকি
দোজাহানে এ ছন্নছাড়ার মকসুদ শুধু তুমি/
তোমারই জন্য মরি, তোমার জন্যই বাঁচি।
টীকা
* এ-ই সেই পরম বিষয়, যে সম্পর্কে হযরত ফারুকে আযম (রা.) দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তাম্বীহ করেছেন। হজ্বে হজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়ার আগে বুলন্দ আওয়াজে তিনি এই ইয়াকীন ও বিশ্বাসের ঘোষণা করেন-
وايم الله إنك حجر لا تنفع ولا تضر
(অর্থ) এবং কসম খোদার, তুমি তো এক প্রাণহীন পাথর, না আমাদের কোনো উপকার করতে পার, না ক্ষতি।’
এ বাক্যে তিনি পরিষ্কার করে দিলেন যে, আমাদের হজরে আসওয়াদ চুমু খাওয়া ও সম্মান করা আর মূর্তি পূজারীদের নিজেদের মূর্তির সাথে কৃত আচরণাদির মাঝে মৌলিক পার্থক্য কী।
** পরিষ্কার থাকা দরকার যে, গাইরুল্লাহর শুধু ঐ প্রকারের ভয় তাওহীদের বিরোধী, যা আল্লাহ তাআলার কামিল কুদরত ও তাঁর فعال لما يريد গুণ সম্পর্কে অপরিচিতি বা অনাস্থার কারণে হয়, যা সাধারণত দুর্বল ঈমানের লোকদের বৈশিষ্ট। নতুবা কোনো হিংস্র প্রাণী, সাপ বা কোনো অত্যাচারী শাসককে শুধু স্বভাবগতভাবে ভয় করা তো মানবীয় বৈশিষ্ট্য, যা দিয়েই আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এ ভয় তাওহীদের উচ্চতম স্তরেরও বিরোধী নয়।
যিলহজ্ব ১৪৩৪ . অক্টোবর ২০১৩
মাসিক আলকাউসার