মানুষের একার পক্ষে সবসময় সব প্রয়োজন পূরণ সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে পরস্পরকে সাহায্য করতে হয়। এই সাহায্যের নানা ধরন ও অনেক উপায় রয়েছে। একটি বড় উপায় ঋণ তথা করজ। বিভিন্ন কারণে মানুষ করজ নিয়ে থাকে। তার মধ্যে মূলতঃ দুটি কারণ বড়। ১. সাধারণ জীবন চলা তথা খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ইত্যাদির প্রয়োজনে করজ নেয়া। ২. ব্যবসা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে ঋণ গ্রহণ। বক্ষমাণ নিবন্ধে আমরা মূলতঃ প্রথম প্রকার নিয়েই আলোচনা করব।
ঋণের ক্ষেত্রে সমাজে দু’টি অবস্থা লক্ষ করা যায়- সয়লাব ও সঙ্কট। অর্থাৎ সুদভিত্তিক ঋণের সয়লাব আর সুদবিহীন ঋণের সঙ্কট। একদিকে সামান্য প্রয়োজনেই ঋণগ্রহণ করে ফেলা হয়। বরং বিনা প্রয়োজনে ও গোনাহের কাজেও ঋণ নেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, ঋণের উপর ঋণগ্রহণ করা হয়। অন্যদিকে সত্যিকারের ঋণ বিরল। কঠিন বিপদেও তা কদাচিৎই পাওয়া যায়। একটা সফল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে এটা বড় প্রতিবন্ধক।
করজে হাসানা তথা ঋণের আদান-প্রদানের ব্যাপারে ইসলামে আছে কল্যাণকর নির্দেশনা। যার নিখুঁত চর্চা ও যথার্থ প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি। এখানে ঋণগ্রহীতা ও ঋণদাতা উভয় শ্রেণির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু নির্দেশনা উল্লেখ করা হল।
ঋণগ্রহীতার দায়িত্ব
এক. মানুষ মাত্রেরই অনেক প্রয়োজন। সেই প্রয়োজনেরও রয়েছে বিভিন্ন স্তর এবং পূরণেরও নানা পথ। ঋণগ্রহণের ক্ষেত্রে বাস্তবিকই প্রয়োজন আছে কি না, থাকলে সেটা কোন্ পর্যায়ের, ঋণগ্রহণ ছাড়া অন্যভাবে পূরণ সম্ভব কি না এবং ঋণ গ্রহণ করলে সময়মত পরিশোধ করা যাবে কি না- এ বিষয়গুলো বিবেচনা করা অতি জরুরি। ক্ষেত্রবিশেষে মুরব্বীর সঙ্গে পরামর্শও করা যেতে পারে। বিশেষ প্রয়োজন এবং সময়মত পরিশোধের প্রবল ধারণা ছাড়া ঋণগ্রহণ জায়েয নয়। আর অপচয় ও অন্যায় কাজে ঋণ নেওয়া এবং ঋণকে জীবনের সাধারণ নিয়মে পরিণত করার তো প্রশ্নই আসে না। (এ আলোচনা শুধু সাধারণ ঋণ তথা সুদবিহীন ঋণ নেওয়া সম্পর্কে, সুদভিত্তিক ঋণ নেওয়া সম্পর্কে নয়)
ঋণ একটা বোঝা। ঋণগ্রস্ততা অনেক সময় দুশ্চিন্তা, অশান্তি ও অনৈতিকতার কারণ হয়। এজন্য বান্দার কর্তব্য, আল্লাহ তাআলার কাছে ঋণ থেকে আশ্রয় চাওয়া এবং দুআ করা, তিনি যেন ঋণ ছাড়াই সব প্রয়োজন পূরণ করে দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে ঋণ থেকে আশ্রয় চাইতেন। এ প্রসঙ্গে দু’টি হাদীস উল্লেখ করা যায়।
১. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে এ দুআ করতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ المَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِالمَحْيَا وَفِتْنَةِ المَمَاتِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ المَأْثَمِ وَالمَغْرَمِ .
অর্থাৎ, ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই। মাছীহ দাজ্জালের ফেতনা থেকে আশ্রয় চাই। জীবনের ফেতনা ও মৃত্যুর ফেতনা থেকে আশ্রয় চাই। ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে গোনাহ ও ঋণ থেকে আশ্রয় চাই।
কেউ (অন্য বর্ণনায় আছে বর্ণনাকারী নিজেই) জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি ঋণ থেকে এত বেশি আশ্রয় চান! তিনি বললেন, মানুষ যখন ঋণগ্রস্ত হয় তখন কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৩২
২. আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুআ করতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَالعَجْزِ وَالكَسَلِ، وَالجُبْنِ وَالبُخْلِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ.
অর্থাৎ, ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দুঃখ-দুশ্চিন্তা থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, ভীরুতা ও কার্পণ্য থেকে, ঋণের বোঝা ও মানুষের প্রাবল্য (-এর শিকার হওয়া) থেকে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩৬৯
ঋণ থেকে বাঁচার জন্য করণীয় :
১. বিশেষ প্রয়োজন এবং নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধের প্রবল ধারণা ছাড়া ঋণ না নেওয়ার দৃঢ় সংকল্প করা।
২. আয় ও ব্যয়ের মাঝে সমন্বয় করে চলা।
৩. নামডাক, কৃত্রিমতা ও রসম-রেওয়াজ থেকে দূরে থাকা।
৪. যেসব কাজ জানমালে বরকতের পক্ষে সহায়ক তা গুরুত্বের সাথে করা। আর যেগুলো বরকত বিনষ্টকারী তা থেকে সযত্নে বেঁচে থাকা। একই সঙ্গে আল্লাহ তাআলার কাছে দুআও করা।
আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য, ঋণ থেকে বাঁচার ক্ষেত্রেও পরস্পরকে সাহায্য করা। পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে কাউকে ঋণগ্রহণের দিকে ঠেলে না দেওয়া। এটিও সাহায্যের একটি বড় উপায়।
দুই. সময়মত পরিশোধের প্রাক নিয়ত রাখা এবং এর জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। আর আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করা। নিয়ত, দুআ ও সত্যিকার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে আল্লাহর সাহায্য সঙ্গে থাকে। তিনি পরিশোধ বা মুক্তির ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু ঋণ নেওয়ার সময়ই খারাপ নিয়ত রাখা বা ঋণ নিয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে পড়া খুবই অন্যায়। এতে শুধু আল্লাহর সাহায্যই হাতছাড়া হয় না, জানমালের বরকতও নষ্ট হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে, যে মানুষের সম্পদ পরিশোধের নিয়তে (ঋণ) নেয়, আল্লাহ তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করে দেন। আর যে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে নেয়, আল্লাহ তা ধ্বংস করে দেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৩৮৭
তিন. নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তো অবশ্যই, চেষ্টা করা, তার আগেই পরিশোধ করার। টালবাহানা, মিথ্যা কথা ও মিথ্যা ওয়াদার তো প্রশ্নই আসে না। এধরনের আচরণ তো যে কারো সাথেই না-জায়েয। আর যে বিপদে ঋণ দিয়ে অনুগ্রহ করেছে তার সাথে তো আরো ভয়াবহ। বস্তুত সামর্থ্য সত্ত্বেও এরূপ আচরণ খুবই অন্যায়। হাদীসে এসেছে, বিত্তবানের টালবাহানা জুলুম। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৪০০
চার. সময়মত পরিশোধ না করলে ঋণদাতা থেকে কখনো কষ্টদায়ক আচরণ প্রকাশিত হতে পারে। এক্ষেত্রে ছবর করা ও পাল্টা জবাব না দেওয়া কর্তব্য। ওজর থাকলে তাকে নম্রভাবে বুঝিয়ে বলা উচিত। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোকের কাছ থেকে একটি উটনী ঋণ নিয়েছিলেন। সে তা চাইতে এসে কঠোর ব্যবহার করল। তখন উপস্থিত সাহাবীগণ তার সাথে অনুরূপ ব্যবহার করতে চাইলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে বাধা দিয়ে বললেন, ‘তাকে বলতে দাও। পাওনাদারের কিছু বলার আছে।’ এরপর তাঁদেরকে তাকে একটি উটনী কিনে দিতে বললেন। তাঁরা খুঁজে এসে বললেন, আমরা (এর সমকক্ষ উটনী পাইনি) এর চেয়ে উৎকৃষ্টই শুধু পেয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটাই কিনে দাও। (জেনে রেখ) তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে, যে পরিশোধে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৩৯০
পাওনাদারের কিছু বলার আছে- একথার অর্থ হল, সময়ের আগে বা পরে তার পরিশোধ তলবের হক আছে। তবে যথাযথ আদব অবশ্যই রক্ষা করবে। কিন্তু লোকটি (সম্ভবত বেদুইন ছিল) তা রক্ষা করেনি। এবং কার সঙ্গে? সায়্যেদুল বাশার, সায়্যেদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীনের সঙ্গে (এবং খুব সম্ভব সে সময়ের আগেই পরিশোধ তলব করেছিল)। তা সত্ত্বেও পাওনাদারের এই আচরণ তিনি সহ্য করেছেন। শুধু তাই নয়, তার যে পরিশোধ তলবের অধিকার আছে সেটাও উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন। উপরন্তু তার ঋণ উত্তমরূপে পরিশোধ করেছেন।
পাঁচ. ঋণ দেওয়ার জন্য দাতার শোকর আদায় করা, তার জন্য দুআ করা। এতে সে খুশি হবে এবং ঋণদানে উৎসাহ বোধ করবে। আবদুল্লাহ ইবনে আবী রাবিয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইনের যুদ্ধের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছ থেকে ত্রিশ বা চল্লিশ হাজার (দিরহাম?) ঋণ নিয়েছিলেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে তিনি তা পরিশোধ করলেন এবং বললেন, আল্লাহ তোমার পরিবারে ও সম্পদে বরকত দান করুন। ঋণের বিনিময় তো হল পরিশোধ ও কৃতজ্ঞতা।
بَارَكَ اللَّهُ لَكَ فِي أَهْلِكَ وَمَالِكَ.
-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬৪১০; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৬৮৩
ছয়. ঋণ বান্দার হক, যা পরিশোধ করতে হয় অথবা দাতা কর্তৃক মাফ পেতে হয়। এছাড়া মুক্তির কোনো পথ নেই। আল্লাহ তাআলা তা মাফ করেন না। এজন্য তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিশোধ করে নেওয়া উত্তম, মৃত্যুর আগে-আগে তো অবশ্যই। কিন্তু (আল্লাহ না করুন) তার আগেই যদি কারো মৃত্যুক্ষণ এসে যায়, তবে কাউকে অসিয়ত করে যাওয়া উচিত।
হাদীসে এসেছে, ঋণ ছাড়া শহীদের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৮৮৬
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে মায়্যিত উপস্থিত করা হলে জিজ্ঞাসা করতেন ঋণ আছে কি না, থাকলে পরিশোধের মত কিছু রেখে গিয়েছে কি না। রেখে না গেলে তিনি নামায পড়তেন না।
সালামা ইবনুল আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত, আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিশে ছিলাম। তখন একজন মায়্যিত উপস্থিত করা হল। লোকেরা তাঁকে নামায পড়ানোর অনুরোধ করলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তার উপর কি কোনো ঋণ আছে? লোকেরা বলল, জ্বী না। আবার জিজ্ঞাসা করলেন, সে কি কিছু রেখে গিয়েছে? তারা বলল, জ্বী না। তখন তিনি নামায পড়ালেন। তারপর আরেকজন মায়্যিত উপস্থিত করা হল। লোকেরা তাঁকে নামায পড়ানোর অনুরোধ করলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তার উপর কি কোনো ঋণ আছে? বলা হল, জ্বী হাঁ। জিজ্ঞাসা করলেন, সে কি কিছু রেখে গিয়েছে? লোকেরা বলল, তিন দিনার রেখে গিয়েছে। তখন তিনি নামায পড়ালেন। এরপর আরেকজন মায়্যিত আনা হল। লোকেরা তাঁকে নামায পড়ানোর অনুরোধ করলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে কি কিছু রেখে গিয়েছে? তারা বলল, জ্বী না। জিজ্ঞাসা করলেন, তার উপর কি কোনো ঋণ আছে? বলা হল, তিন দিনার আছে। তিনি বললেন, তোমাদের সাথীর নামায তোমরাই পড়। এ কথা শুনে আবু কাতাদা রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি নামায পড়িয়ে দিন, তার ঋণ আমার জিম্মায়। তখন তিনি নামায পড়ালেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২২৮৯
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ অসম্মতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে হলে উম্মতের জানাযার নামাযের ব্যাপারে তাঁর যে গুরুত্ব ছিল, সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। এক মহিলা (কোনো কোনো বর্ণনায় আছে পুরুষ) মসজিদে নববী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করত। হঠাৎ সে মৃত্যুবরণ করল। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা জানতেন না। তার অনুপস্থিতি বোধ করলে তিনি সাহাবীদেরকে তার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। তাঁরা বললেন, সে তো মৃত্যুবরণ করেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমাকে জানাওনি কেন? তাঁরা আরয করলেন, তাকে রাতে দাফন করা হয়েছিল (তখন আপনার কষ্ট হতে পারে, তাই জানানো হয়নি)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকে তার কবরের কাছে নিয়ে চল। সেখানে গিয়ে তিনি তার জানাযার নামায পড়লেন এবং বললেন, এই কবরগুলো অন্ধকারাচ্ছন্ন। আল্লাহ আমার নামাযের অসিলায় তা নূরানী করে দেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯০৩৭; সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৩ (নামায ও কাফন-দাফনের পর পুনরায় নামায পড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য বিশেষ বিধান ছিল, ওয়াল্লাহু আ‘লাম)
লক্ষ করুন, একজনের কাফন-দাফন, নামায সবকিছু সম্পন্ন হয়ে গেছে। কিন্তু মৃত্যুসংবাদ না পৌঁছায় তিনি জানাযায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। যখন সংবাদ পৌঁছেছে তখন তার কবরের কাছে গিয়ে নামায পড়েছেন, যাতে আল্লাহ তাআলা তার কবরকে নূরানী করে দেন। পক্ষান্তরে আরেকজনকে তাঁর সামনে উপস্থিতই করা হয়েছে তিনি নামায পড়াবেন- এই উদ্দেশ্যে। কিন্তু তিনি অসম্মত। কারণ তার উপর ঋণ আছে এবং পরিশোধের মত কিছু রেখে যায়নি।
এ অসম্মতির মধ্য দিয়ে তিনি উম্মতকে এই বার্তা দিতে চেয়েছেন যে, ঋণের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর! কেউই যেন বিশেষ প্রয়োজন এবং পরিশোধের প্রবল ধারণা ছাড়া ঋণ না নেয়। বিশেষ প্রয়োজনে নিলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করে ফেলে। পরিশোধ না করে বা অন্তত পরিশোধ করার জন্য কিছু না রেখে মৃত্যুবরণ না করে।
তিনি রাহমাতুল লিল আলামীন, তাঁর গোটা জীবন ছিল উম্মতের সর্বাঙ্গীণ শান্তি-সফলতার জন্য ব্যাকুল। সেই উম্মতেরই একজন আজ তাঁর সালাতরূপ দুআর মাধ্যমে বিদায় নিতে এসেছে। এবং তাঁরও ইচ্ছা ছিল, দুআ ও সালাতের মধ্য দিয়ে তাকে শেষ বিদায় জানাবেন। কিন্তু তিনি তা করছেন না (অথচ এখনই সে এর সবচেয়ে বেশি মুখাপেক্ষী)। কারণ তার উপর ঋণ আছে, যা পরিশোধের জন্য সে কিছু রেখে যায়নি এবং তাঁরও তা পরিশোধের সক্ষমতা নেই। একসময় যখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে কিছুটা সচ্ছলতা দান করলেন তখন তিনি তা নিজ জিম্মায় নিয়ে নিলেন।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দেনাদার মায়্যিত আনা হলে তিনি জিজ্ঞাসা করতেন, সে কি পরিশোধের জন্য কিছু রেখে গিয়েছে? রেখে গিয়েছে বললে তিনি নামায পড়াতেন। অন্যথায় বলতেন, তোমাদের সাথীর নামায তোমরাই পড়। এরপর যখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে বিজয় দান করলেন তখন তিনি ঘোষণা করলেন, আমি মুমিনদের তাদের নিজের চেয়েও আপন। সুতরাং মুমিনদের মধ্যে যে ঋণ রেখে মৃত্যুবরণ করে, তা পরিশোধ করা আমার দায়িত্ব। আর যে সম্পদ রেখে মৃত্যুবরণ করে, তা তার ওয়ারিশদের। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২২৯৮
ঋণদাতার দায়িত্ব
এক. বিশেষ প্রয়োজনে কেউ ঋণ চাইলে সামর্থ্য থাকলে এবং মুনাসিব মনে হলে তাকে ঋণ দেওয়া।
ঋণ দেওয়া মূলত মুখাপেক্ষীকে সাহায্য করা। এজন্য কুরআন-হাদীসে মুখাপেক্ষীকে সাহায্যের যে সওয়াব ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, তা এখানেও প্রযোজ্য। একারণে ঋণ দেওয়ার গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে বিশদ আলোচনার প্রয়োজন নেই। শুধু একটি হাদীস উল্লেখ করছি।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার উপর জুলুম করে না। তার সাহায্য ত্যাগ করে না। যে তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে থাকে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণে থাকেন। আর যে কোনো মুসলিমের একটি বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তার কিয়ামতের দিনের বিপদসমূহ থেকে একটি বিপদ দূর করবেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৪৪২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৮০
এই হাদীসে ঋণ দেওয়ার গুরুত্ব ও ফযীলত একাধিকভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। এখানে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের এক দাবি এই উল্লেখ করা হয়েছে যে, সে তার ভাইয়ের সাহায্য ত্যাগ করে না। বিপদে পড়ে ঋণপ্রার্থনা করা ব্যক্তিকে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ও মুনাসিব মনে হওয়া সত্ত্বেও ফিরিয়ে দেওয়া তার সাহায্য ত্যাগ করা বৈকি? এদিক থেকে বিবেচনা করলে ঋণ দেওয়ার গুরুত্ব খুবই স্পষ্ট।
হাদীসটির পরের অংশে মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ এবং বিপদ দূর করার ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। আর ঋণ তো সেটিরই একটি উপায়।
দুই. ঋণগ্রহীতা সময়মত পরিশোধের প্রবল ধারণার ভিত্তিতেই ঋণ নিবে। এবং এর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টাও করবে। কিন্তু কখনো এমন হতে পারে যে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সে তা পরিশোধ করতে অক্ষম; বরং কখনো কখনো সম্পূর্ণ অক্ষমতারও আশঙ্কা থাকে, এক্ষেত্রে সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে (বাস্তবতা বিবেচনা করে) সচ্ছল হওয়া পর্যন্ত তাকে সুযোগ দেওয়া বা মাফ করে দেওয়া অনেক বড় সওয়াবের কাজ। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) এবং কোনো (দেনাদার) যদি অসচ্ছল হয়, তবে সচ্ছলতা লাভ পর্যন্ত তাকে অবকাশ দেওয়া উচিত। আর যদি সদাকাই করে দাও, তবে তোমাদের জন্য সেটা অধিকতর শ্রেষ্ঠ, যদি তোমরা উপলব্ধি কর। -সূরা বাকারা (২) : ২৮০
সুদখোরের অভ্যাস হল, ঋণগ্রহীতা নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধে অক্ষম হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের শর্তে মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় এবং চক্রবৃদ্ধিহারে সুদের ব্যবসা চালায়। মহান আল্লাহ তাআলা এখানে এই নির্দেশ দিয়েছেন যে, কেউ যদি বাস্তবিকই অক্ষম হয় তবে তাকে অতিষ্ঠ করা জায়েয নয়; বরং সচ্ছলতা লাভ পর্যন্ত সময় দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে এ ব্যাপারেও উৎসাহিত করা হয়েছে যে, যদি মাফ করে দাও তবে তা তোমাদের জন্য উত্তম।
এখানে মাফ করাকে ‘সদাকা’ বলা হয়েছে। এতে সম্ভবত এ দিকে ইঙ্গিত করা উদ্দেশ্য যে, এই ক্ষমা সদাকা হিসেবে গণ্য হবে এবং অনেক সওয়াবের কারণ হবে।
হাদীসে এসেছে, তোমাদের পূর্ববর্তী এক লোকের হিসাব নেওয়া হলে তার কোনো নেক আমল পাওয়া যায়নি। তবে সে মানুষের সাথে লেনদেন করত এবং বিত্তবান ছিল। কর্মচারীদের প্রতি তার এ নির্দেশ ছিল যে, অক্ষমদের যেন তারা মাফ করে দেয়। আল্লাহ বললেন, মাফ করার সক্ষমতা তো ওর চেয়ে আমার বেশি। এরপর তিনি ফিরিশতাদেরকে আদেশ দেন তাকে মাফ করে দেওয়ার। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৬১
অন্য এক হাদীসে এসেছে, যে অক্ষমকে সুযোগ দেয়, আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন তাঁর আরশের ছায়াতলে জায়গা দিবেন- যখন আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে। -সুনানে তিরমিযী, হাদীস ১৩০৬
আবদুল্লাহ ইবনে আবী কাতাদা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু কাতাদা রা. তার এক ঋণগ্রহীতাকে খুঁজলে সে আত্মগোপন করল। পরে তাকে পাওয়া গেল। তখন সে বলল, আমি অসচ্ছল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহর কসম? সে বলল, আল্লাহর কসম (আমি অসচ্ছল)! আবু কাতাদা রা. বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যার পছন্দ যে আল্লাহ তাকে কিয়ামতের বিপদসমূহ থেকে মুক্তি দিন সে যেন অসচ্ছলকে সুযোগ দেয় অথবা মাফ করে দেয়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৬৩
তিন. সময়ের পরে তো বটেই, (ক্ষেত্রবিশেষে) আগেও পরিশোধ তলব করা যাবে। তবে সর্বাবস্থায় নম্রতা ও ভদ্রতার পরিচয় দেওয়া কর্তব্য। কঠোরতা, গালি-গালাজ, ঝগড়া-বিবাদ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা উচিত। উত্তম চরিত্র মুমিনের বৈশিষ্ট্য, যার সর্বোত্তম ক্ষেত্র লেনদেন। হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ ঐ ব্যক্তির উপর রহমত নাযিল করুন যে সহৃদয় যখন বেচে, যখন কিনে এবং যখন নিজের হক তলব করে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২০৭৬
অন্য এক হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি হক তলব করে সে যেন পবিত্রতার সঙ্গে তলব করে…। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৫০৮০
এখানে পবিত্রতা বলতে চারিত্রিক পবিত্রতা উদ্দেশ্য। সুতরাং চরিত্রকে কলুষিত করে এমন যেকোনো কথা ও কাজ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।
চার. ভোগ্য ঋণ হোক বা ব্যবসায়ী ঋণ, ঋণের বিনিময়ে মূলধনের অতিরিক্ত কোনোরূপ শর্তারোপ না করা কর্তব্য। এটা রিবা, যা সম্পূর্ণ হারাম। কেউ এরূপ করে ফেললে যথা নিয়মে তাওবা করে শুধু মূলধনই গ্রহণ করবে।
কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) যারা সুদ খায় (কিয়ামতের দিন) তারা সেই ব্যক্তির মত উঠবে, শয়তান যাকে স্পর্শ দ্বারা মোহাবিষ্ট করে দেয়। এটা এজন্য হবে যে, তারা বলেছিল, বিক্রিও তো সুদেরই মত হয়ে থাকে। অথচ আল্লাহ বিক্রিকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। সুতরাং যার কাছে তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উপদেশ এসে গেছে সে যদি নিবৃত্ত হয়, তবে অতীতে যা কিছু হয়েছে তা তারই। আর তার ব্যাপার আল্লাহরই এখতিয়ারে। আর যে পুনরায় সে কাজই করল, তো এরূপ ব্যক্তি জাহান্নামী হবে। তারা তাতেই সর্বদা থাকবে। …হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা যদি প্রকৃত মুমিন হয়ে থাক, তবে সুদের যে অংশই অবশিষ্ট রয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও। তবু যদি তোমরা এটা না কর তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও। আর তোমরা যদি (সুদ থেকে) তাওবা কর, তবে তোমাদের মূল পুঁজি তোমাদের প্রাপ্য। তোমরাও কারো উপর জুলুম করবে না এবং তোমাদের উপরও কেউ জুলুম করবে না। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৫, ২৭৮-২৭৯
ভোগ্য সুদ ও ব্যবসায়ী সুদ, সাধারণ সুদ ও চক্রবৃদ্ধিহারের সুদ ইত্যাদি সবই ‘রিবা’ ও হারাম। এটা কুরআন, হাদীস ও উম্মাহর ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। এ বিষয়ে বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন বই-পুস্তক লেখা হয়েছে। আগ্রহী পাঠক তা পাঠ করতে পারেন। এখানে সংক্ষেপে কিছু কথা আরয করা হল।
(ক) উপরের আয়াতটিতে আমরা লক্ষ করেছি যে, সুদের বিভিন্ন প্রকারের মধ্যে কোনোরূপ পার্থক্য না করে ব্যাপকভাবে রিবা’কে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এবং পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, …‘সুদের যে অংশই অবশিষ্ট রয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও।’
আরো বলা হয়েছে,…‘তোমাদের মূল পুঁজি তোমাদের প্রাপ্য…।’
(খ) আগে একটি হাদীসে আমরা এ কথা দেখে এসেছি যে, ‘ঋণের বিনিময় তো হল পরিশোধ ও প্রশংসা।’
এ থেকে বোঝা যায় যে, পরিশোধ ও প্রশংসা ছাড়া ঋণের আর কোনো বিনিময় নেই।
(গ) সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীন যুগ থেকে আজ পর্যন্ত উম্মাহ এটাই বুঝে আসছে যে, রিবা হচ্ছে, ঋণের বিপরীতে মূলধনের অতিরিক্ত শর্তকৃত অর্থ। এতে ঋণের ধরন ও শর্তকৃত অর্থের কম-বেশির কোনো পার্থক্য নেই।
বিষয়টি একেবারে স্পষ্ট। মাসিক আলকাউসার এপ্রিল (২০১৫ঈ.) সংখ্যায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে দু’একজন সাহাবীর ফতোয়া উল্লেখ করা হল :
১. নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেছেন, ঋণদাতা ঋণ পরিশোধ ছাড়া অন্য কোনো শর্তারোপ করতে পারে না। -মুয়াত্তা মালেক ২/২১৫
২. ইবনে সীরীন রাহ. থেকে বর্ণিত, এক লোক একজনকে পাঁচ শ দিরহাম ঋণ দিয়েছে এবং তার ঘোড়ায় চড়ার শর্তারোপ করেছে। একথা শুনে ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ‘সে তার ঘোড়ায় চড়ে যে উপকৃত হয়েছে তা রিবা হিসেবে গণ্য হবে।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২১০৮০
এধরনের ফতোয়া আরো অনেক সাহাবী-তাবেয়ী থেকে বর্ণিত আছে, যা থেকে স্পষ্ট যে, সুদের ধরন ও সুদের হারের কম-বেশির কোনো ফারাক নেই। বরং ভোগ্য সুদ ও ব্যবসায়ী সুদ, কমহারের সুদ ও বেশিহারের সুদ ইত্যাদি সবই রিবা।
রিবা’র নিষেধাজ্ঞা ও এর ভয়াবহতা সব পদ্ধতিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তবে হাঁ, সুদের পরিমাণ যত বেশি হবে, গোনাহের ভয়াবহতা তত তীব্র হতে থাকবে এবং ভোগ্য ঋণের ক্ষেত্রে এই হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া অধিক অপরাধ ও অধিক হীনতা বিবেচিত হবে। আর সুদ আদায়ের জন্য শারীরিক বা আর্থিক কিংবা অন্য কোনো ধরনের জরিমানা আরোপ তো জুলুমের উপর জুলুম।
পাঁচ. খোটা বা অন্য কোনোভাবে ঋণগ্রহীতাকে কষ্ট না দেওয়া। সদকা, ঋণসহ যাবতীয় ঐচ্ছিক দান-অনুগ্রহের জন্য এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে আমলটির সওয়াব নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। অথচ সওয়াব অর্জনই এর একমাত্র উদ্দেশ্য। এটি নষ্ট করে ফেললে আল্লাহর কাছে আর কী পাওনা থাকে? এ কারণে কারো খোটা বা এজাতীয় কিছুর অভ্যাস থাকলে ঋণ দেওয়া অপেক্ষা ঋণপ্রার্থীর সাথে সুন্দর কথা বলা ও দুআ করাই উত্তম। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) হে মুমিনগণ! খোটা ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের সদাকাকে সেই ব্যক্তির মত নষ্ট করো না, যে নিজের সম্পদ ব্যয় করে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে না। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত এ রকম- যেমন এক মসৃণ পাথরের উপর মাটি জমে আছে, অতঃপর তাতে প্রবল বৃষ্টি পড়ে এবং সেটিকে (পুনরায়) মসৃণ পাথর বানিয়ে দেয়। এরূপ লোক যা উপার্জন করে তার কিছুই তাদের হস্তগত হয় না। আর আল্লাহ কাফেরদেরকে হেদায়েতে উপনীত করেন না। -সূরা বাকারা (২) : ২৬৪
জুমাদাল উলা ১৪৩৭ – ফেব্রুয়ারি ২০১৬
মাসিক আলকাউসার