মুহাম্মদের (সাঃ) বিয়ে ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী খাদিজা
আরবে খাদিজা ছিলেন একজন বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমতী নারী। তিনি মুহাম্মদকে (সাঃ) তাঁর ব্যবসার দায়িত্ব ন্যস্ত করে মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছেন এবং হাতে হাতে তার প্রমাণ পেয়েছেন। মুহাম্মদের (সাঃ) আভিজাত্য ও বিস্ময়কর চরিত্র-মাধুর্য খাদিজার অন্তরে এক সত্যিকার বিশ্বাস ও অকৃত্রিম ভালোবাসা জন্ম দেয়। ফলে তিনি নিজেই মনস্থ করেন, যদি মুহাম্মদ (সাঃ) সম্মত হন, তাহলে তিনি তাঁর সাথে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হবেন। যখন মুহাম্মদের (সাঃ) বয়স একুশ বছর পূর্ণ হলো, তখন খাদিজার সাথে তাঁর বিবাহ নির্ধারিত হলো। সে সময় খাদিজার বয়স ছিলো চল্লিশ বছর। আর কোনো কোনো বর্ণনামতে পঁয়তাল্লিশ বছর।
বিবাহ-অনুষ্ঠানে আবু তালিব এবং বনু হাশেম ও মুযার গোত্রের সকল নেতৃবর্গ সমবেত হন। আবু তালিব বিবাহের খুতবা পাঠ করেন। এ খুতবায় আবু তালিব ভাতিজা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে যেসব শব্দগুলো ব্যবহার করেন, তা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। যার অর্থ নিম্নরূপ :
‘ইনি হলেন, মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ;—যিনি ধন-সম্পদের দিক থেকে গরিব হলেও মহান চরিত্র ও অনুপম গুনাবলির দরুন যাকেই তাঁর সাথে তুলনা করা হবে, তিনি তার চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ ও উন্নত প্রমাণিত হবেন। কেননা, ধন-সম্পদ হলো এক বিলীয়মান ছায়া ও প্রত্যাবর্তনশীল বস্তুবিশেষ আর এই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), যাঁর আত্মীয়তার সম্পর্কের খবর আপনাদের সবারই জানা, তিনি খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদকে বিবাহ করতে যাচ্ছেন। তাঁর নগদ ও বাকি সমুদয় আমার সম্পদ হতে পরিশোধ করা হবে। আর আল্লাহর শপথ, এরপর তিনি বিপুল সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবেন।’
নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে আবু তালেবের এই মন্তব্য সে সময়কার, যখন তাঁর বয়স একুশ বছর আর বাহ্যত তিনি তখনও নবুওতপ্রাপ্ত হননি। তদুপরি অধিকতর বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, আবু তালিব তখনও নিজের সেই প্রাচীন ধর্ম-বিশ্বাসের উপর অটল-অবিচল ছিলেন, যা বিলুপ্ত করার জন্য নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোটা জীবন উৎসর্গিত; কিন্তু বাস্তবতা হলো এই যে, সত্যকে লুকিয়ে রাখা যায় না।
মোটকথা, হযরত খাদিজার সাথে মুহাম্মদের (সাঃ) বিবাহ সম্পন্ন হয়ে গেল। তিনি চব্বিশ বছর নবি মুহাম্মদের (সাঃ) সংসার করেন। কিছু কাল ওহি অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে এবং কিছু কাল ওহি অবতীর্ণ হওয়ার পরে। খাদিজার জীবদ্দশায় মুহাম্মদ (সাঃ) আর কোনো বিয়ে করেননি।