اَلْحَمْدُ لِلّهِ وَكَفَى وَسَلَامٌ عَلَى عِبَادِهِ الَّذِيْن َاصْطَفَى اَمَّا بَعْدُ! فَاَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ. بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ. وَالَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ أُولَئِكَ هُمُ الصِّدِّيقُونَ. سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّة ِعَمَّا يَصِفُوْنَ. وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ. وَالْحَمْدُ للهِ رَبِّ الْعاَلَمِيْنَ. اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى الِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّبَارِكْ وَسَلِّمْ.
মুমিন মিথ্যাবাদী হতে পারে না
‘সাদিক’ সত্যবাদীকে বলা হয়। শব্দটি ‘সিদক’ থেকে নির্গত। ‘সিদ্দিক’ বলা হয়, অতিশয় সত্যবাদীকে। ইসলামধর্ম সত্যধর্ম। মহান আল্লাহ সত্যবাদী। وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ حَدِيثًا ‘আল্লাহর চেয়ে সত্যবাদী আর কে হতে পারে!’ যিনি ইসলামধর্মের পয়গাম নিয়ে এসেছেন, তিনিও সাদিক ও আমিন তথা সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত। এমনকি মুশরিকরাও তাঁকে সত্যবাদী বলত। আল্লাহর কিতাবও সত্য। যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে, নবী-রাসূলকে মানে, ইসলামধর্মের অনুসরণ করে, তারা মিথ্যাবাদী হতে পারে না। কেননা, আল্লাহ পবিত্র। আল্লাহর কালাম পবিত্র। আল্লাহর বন্ধু আমাদের নবীজী ﷺ তিনিও ছিলেন নিস্পাপ। সুতরাং তাঁদের সঙ্গে একজন অপবিত্র ব্যক্তির সম্পর্ক কিভাবে হতে পারে! এই জন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘মুমিনব্যক্তি সব হতে পারে, কিন্তু মিথ্যুক হতে পারে না,’ অর্থাৎ মুমিনব্যক্তির অন্যান্য গুনাহ ঘটে যেতে পারে, কিন্তু ‘মিথ্যা’ নামক গুনাহ তার থেকে হতে পারে না।
অবাক করা বিষয় হল, ‘মুমিন মিথ্যাবাদী হতে পারে না।’ একথাটা যতটা গুরুত্বের দাবি রাখে, ততটাই আমাদের যাপিত জীবনে মিথ্যাচারের ব্যাপারে উদাসীনতা বেড়ে চলেছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, بُعِثْتُ لِاُتَمِّمَ مَكَارِمَ الْاَخْلَاق ‘আমি উত্তম চরিত্রগুলো শিক্ষা দানের জন্য প্রেরিত হয়েছি।’
অর্থাৎ তাঁর আগমণের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, মানুষকে উত্তমচরিত্র শিক্ষা দেয়া। প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস হাফেজ ইবনু আবিদ্দুনইয়া রহ. এ বিষয়ে একটি স্বতন্ত্র কিতাব লিখেছেন। নাম দিয়েছেন ‘মাকারিমুল আখলাক’ (উত্তম চরিত্র)। উত্তম চরিত্র দশটি। এই দশটি বিষয়কে যে ব্যক্তি আপন করে নিবে, সে সম্পন্ন মার্জিত ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হবে।
উত্তম চরিত্র : সত্য বলা
উত্তম চরিত্রের তালিকাতে সবার আগে স্থান পেয়েছে সত্য বলা। সুতরাং সত্য বলা সকল ভালো চরিত্রের মূলভিত্তি। যেমন, প্রতিটি বৃক্ষের শেকড় হয়। প্রতিটি ইমারতের পিলার হয়। শেকড় ছাড়া বৃক্ষ, পিলার ছাড়া ইমারত টিকে থাকতে পারে না। অনুরূপভাবে ইসলামধর্মের শেকড় এবং পিলার হল সত্যবাদিতা। যে মানুষটির জীবনে সত্যবাদিতা নেই, তাঁর ধার্মিকতা অন্তঃসারশূন্য। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘বান্দা যখন মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তখন একটা সময়ে এসে আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে বলে দেন, এ ব্যক্তির নাম মিথ্যুকদের তালিকায় জুড়ে দাও।’
যদি আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান হতে চাও
وَمَنْ أَصْدَقُ فِىْ الْاَقْوَالِ فَهُوَ صَادِقٌ وَمَنْ أَصْدَقُ فِىْ الْاَعْمَالِ فَهُوَ صَدُوْقٌ وَمَنْ أَصْدَقُ فِىْ الْاَعْمَالِ وَالْاَحْوَالِ فَهُوَ صِدِّيْقٌ
‘যে ব্যক্তি কথায় সত্যবাদী তাকে ‘সাদিক’ বলা হয়। যে ব্যক্তি কাজে সত্যবাদী তাকে ‘সাদুক’ বলা হয়। যে ব্যক্তি কাজে ও সকল পরিস্থিতিতে সত্যবাদী হয় তাকে ‘সিদ্দিক’ বলা হয়।’
ভাবুন, সিদ্দিকের অবস্থান নবুওয়াতের পরেই। এর চাইতে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা উম্মতের জন্য নেই। বোঝা গেল, উম্মতের মধ্যে যে লোকটি আল্লাহর কাছে সবচে’ প্রিয় হয়, সে ‘সিদ্দিক’ (মহা সত্যবাদী) হয়েই হয়। যেমন হযরত আবুবকর রাযি. ছিলেন উম্মতের শ্রেষ্ঠ সিদ্দিক। আল্লাহ তাআলা তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,
وَالَّذِي جَاءَ بِالصِّدْقِ وَصَدَّقَ بِهِ أُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ
‘যারা সত্য নিয়ে এসেছে এবং সত্যকে সত্য বলে জেনেছে তাঁরাই তো আল্লাহভীরু।’
فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ
‘নবীগণ সিদ্দিকগণ শহিদগণ ও নেককারগণ– এদেরকে আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন। তাঁরা এদের সঙ্গে থাকবে।’
আলোচ্য আয়াত থেকে বোঝা গেল, সত্যবাদিতা আল্লাহ এতটাই পছন্দ করেন, তাঁর কাছে অধিক মর্যাদাবান হওয়ার মাধ্যম হল সত্যবাদী হওয়া। সিদ্দিকিয়্যাত তথা সত্যবাদিতার মাধ্যমে তুমি তাঁর কাছে এতটাই মর্যাদাবান হতে পারবে যে, যার কল্পনাও তুমি করতে পারবে না। এমনকি শহিদগণ সাধারণ নেককারগণের অবস্থানও সিদ্দিকগণের নিচে।
সত্যবাদীতা নবীগণের গুণ ছিল
সত্যবাদিতা ছিল নবীগণের গুণ। যেমন পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন,
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّهُ كَانَ صِدِّيقًا نَبِيًّا
‘আপনি এইকিতাবে ইবরাহিমের কথা বলুন, নিশ্চয় তিনি ছিলেন সত্যবাদী নবী।’
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِسْمَاعِيلَ إِنَّهُ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُولًا نَبِيًّا.
‘এই কিতাবে ইসমাঈলের কথা বলুন, নিশ্চয় তিনি ছিলেন প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী এবং তিনি ছিলেন রাসূল ও নবী।’
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِدْرِيسَ إِنَّهُ كَانَ صِدِّيقًا نَبِيًّا
‘কিতাবটিতে ইদরিসের আলোচনা করুন, নিশ্চয় তিনি ছিলেন সত্যবাদী নবী।’
আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের আলোচনা তাঁর কিতাবে করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, তাঁরা ছিলেন সত্যবাদী। সুতরাং সত্যবাদীদের এই পবিত্র কাফেলার সঙ্গে মিথ্যাবাদীরা চলবে কিভাবে!
সত্যবাদী কাকে বলে?
মাশায়েখগণ বলেছেন, যে বান্দা মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও সত্য উচ্ছারণ করে তাকে ‘সিদ্দিক’ বলা হয়।
আবুল হাসান খিরকানি রহ. ছিলেন নকশবন্দিয়া-সিলসিলার একজন প্রসিদ্ধ শায়েখ। তিনি বলতেন, সত্যবাদী তাকে বলা হয় যার অন্তর কথা বলে।
আব্দুল ওয়াহিদ ইবনু যায়েদ রহ. বলেন, আমলের মাধ্যমে সমূহ হক পূরণ করা অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর হকগুলো পূরণ করে, বান্দার হকগুলোও আদায় করে সেই সিদ্দিক হতে পারে।
হাদীসের আলোকে সত্যবাদিতা
এক. নবী কারীম ﷺ বলেছেন,
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ: اضْمَنُوا لِي سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَضْمَنْ لَكُمُ الْجَنَّةَ: اصْدُقُوا إِذَا حَدَّثْتُمْ، وَأَوْفُوا إِذَا وَعَدْتُمْ، وَأَدُّوا إِذَا اؤْتُمِنْتُمْ، وَاحْفَظُوا فُرُوجَكُمْ، وَغُضُّوا أَبْصَارَكُمْ، وَكُفُّوا أَيْدِيَكُمْ.
‘তোমরা আমার নিকট ছয়টি বিষয়ের জিম্মাদার হও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হব। তাহল- ১. যখন তোমরা কথা বলবে, সত্য বলবে। ২. অঙ্গীকার করলে তা পূরণ করবে। ৩. আমানত যথাযথ আদায় করবে। ৪. তোমাদের গুপ্তাঙ্গ সংরক্ষণ করবে। ৫. তোমাদের দৃষ্টি নিম্নগামী রাখবে এবং ৬. অন্যায় কাজ থেকে তোমাদের হাত ফিরিয়ে রাখবে।’ (মুসনাদে আহমদ)
দুই. আব্দুল্লাহ ইবনু উমর রাযি. বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ: أَرْبَعٌ إِذَا كُنَّ فِيكَ فَلَا عَلَيْكَ مَا فَاتَكَ مِنَ الدُّنْيَا: حِفْظُ أَمَانَةٍ، وَصِدْقُ حَدِيثٍ، وَحُسْنُ خَلِيقَةٍ، وَعِفَّةٌ فِي طُعْمَةٍ.
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যদি তোমার মাঝে চারটি স্বভাব পাওয়া যায়, তবে দুনিয়ার সব কিছু ধ্বংস হলেও তোমার কোনো ক্ষতি হবে না। তাহল- ১. আমানত রক্ষা করা। ২. সত্যবাদী হওয়া। ৩. সচ্চরিত্রবান হওয়া এবং ৪. হালাল খানা খাওয়া।’ (মুসনাদেআহমদ)
তিন. আবুবকর সিদ্দিক রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّهُ مَعَ الْبِرِّ، وَهُمَا فِي الْجَنَّةِ
‘তোমরা নিজেদের জন্য সত্যবাদিতা অপরিহার্য করে নিবে। কেননা, তা সৎকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর এ দু’টি গুণের অধিকারী জান্নাতি।’(সহীহ ইবনু হিব্বান)
চার. রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
تَحَرَّوْا الصِّدْقَ وَاِنْ رَاَيْتُمْ اَنَّ الْهَلَكَةَ فِيْهِ فَاِنَّ فِيْهِ النَّجَاةَ
‘তোমরা সর্বাত্মকভাবে সত্য অবলম্বন কর। অর্থাৎ সত্যের পেছনে লেগে থাকো। যদিও বাহ্যিকদৃষ্টিতে তার মধ্যে ধ্বংস দেখতে পাও। অর্থাৎ পরিস্থিতি এমন যে, তোমাদের কাছে দৃশ্যত মনে হচ্ছে, সত্য বললে বিপদে পড়বে। তবুও সত্য বল। কেননা, আল্লাহ সত্যের মধ্যে মুক্তি রেখেছেন।’ (ইবনু আবিদ্দুনইয়া)
পাঁচ. অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
اَلصِّدْقُ يُنْجِىْ وَالْكِذْبُ يُهْلِكُ.
‘সত্য মুক্তি দেয়, মিথ্যা ধ্বংস করে।’
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযি. বলেন, ‘চারটি স্বভাবের মাধ্যমে মানুষ কামিয়াবি পায়। তাহল- ১. সত্য বলা দ্বারা। ২. লজ্জাশীলতা দ্বারা। ৩. উত্তম চরিত্র দ্বারা এবং ৪. শোকর আদায় করা দ্বারা।’
এমন সফলতা যার পরে ব্যর্থতা নেই, এমন হেদায়াত যার পরে গোমরাহি নেই, আল্লাহর এমন নৈকট্য লাভ যার পর আর দূরত্ব নেই। একে বলা হয় فلاح বা কামিয়াবি। মানুষ কামিয়াবি পায় উক্ত চারটির মাধ্যমে।
সত্যবাদিতার ছয়টি স্তর
ইমাম গাযালী রহ. সিদ্ক তথা সত্যবাদীতার ছয়টি স্তর বলেছেন,
প্রথম স্তর : صِدْقُ اللِّسَانِ অর্থাৎ যবান সত্য হওয়া।
দ্বিতীয় স্তর : صِدْقُ النِّيْةِ অর্থাৎ নিয়ত সত্য হওয়া। যার নিয়ত সত্য হবে সে মুখলিস হবে। এজন্যই কেয়ামতের দিন সবার আগে যাদের শাস্তি হবে তারা হবে তিন শ্রেণীর বান্দা। বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে, তাদের মধ্যে একজন হবেন আলেম, দ্বিতীয়জন হবে দানশীল, তৃতীয়জন হবে মুজাহিদ।
ভাবুন, এই তিনজনের আমল কত বড় ছিল। এরপরেও এরা জাহান্নামে যাবে কেন? জাহান্নামে যাবে নিয়তের ঘাপলার কারণে। সত্য নিয়তের অভাবে। সুতরাং যার মিথ্যা বলার অভ্যাস আছে, আমল নিয়ে তার গর্ব করার কিছু নেই। সে নিজেকে নেককারদের অন্তর্ভুক্ত মনে করার দরকার নেই। কারণ, এমনও তো হতে পারে যে, আল্লাহর দফতরে তার নাম মিথ্যাবাদীদের মধ্যে পড়ে আছে।
তৃতীয় স্তর : صِدْقُ الْعَزْمِ অর্থাৎ প্রতিজ্ঞায় সত্য ও দৃঢ় হওয়া। যেমন, উমর রাযি. বলতেন, যদি আমার ঘাড়ও তরবারির আঘাতে দু’টুকরো হয়ে যায় তবুও আমি এমন জাতির নেতৃত্ব গ্রহণ করতে পারব না, যেখানে আছেন আবুবকর রাযি.-এর মতো সুমহান ব্যক্তি।
চতুর্থ স্তর : صِدْقُ َوَفَاءِ الْعَزْمِ অর্থাৎ যা প্রতিজ্ঞা করেছে তা সম্পন্ন করার ব্যাপারে সত্যবাদী হওয়া। যেমন, আনাস রাযি.Ñএর চাচা ইবনুনযর রাযি.। যিনি বদরযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেন নি। এজন্য তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যদি কখনও আল্লাহর রাস্তায় যেতে পারি তাহলে তা পুষিয়ে নিব। এরপর উহুদ যুদ্ধের সময় আল্লাহ তাআলা তাঁকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিলেন। যুদ্ধ চলাকালীন তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন হযরত সা’দ রাযি.। তাঁকে দেখে তিনি বলে ওঠলেন, সা’দ! আমি জান্নাতের সুঘ্রাণ পাচ্ছি। এরপর তিনি শত্রুদলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। فَقَاتَلَ فَقَاتَلَ حَتّى قُتِلَ. লড়াই করতে করতে তিনি শহিদ হয়ে গেলেন। তারপর তাঁকে দেখা গেল তাঁর শরীরে আশিটি জখমের দাগ। চেহারা দেখে চেনা যাচ্ছিল না। তাঁর বোন তাঁকে চিনলেন আঙ্গুলগুলোর সন্ধিস্থল দেখে। এটাকেই বলা হয়, প্রতিজ্ঞা পূরণে সত্যবাদী হওয়া। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাযিল করেছিলেন,
رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ فَمِنْهُمْ مَنْ قَضَى نَحْبَهُ وَمِنْهُمْ مَنْ يَنْتَظِرُ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا
‘কিছু লোক আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করে নি।’
পঞ্চম স্তর : صِدْقُ الْاَعْمَالِ অর্থাৎ যার আমলের অবস্থা নির্জনতা ও লোকসম্মুখে অভিন্ন হয়। এমন নয় যে, সে লোকচক্ষুর সামনে আল্লাহ তাআলার প্রিয় পাত্র সাজে অথচ লোকচক্ষুর আড়ালে শয়তানের বন্ধু থাকে। আমলের এ দ্বিমুখীরূপ তার জীবনে নেই। এজন্যই দুআ শিক্ষা দেয়া হয়েছে,
اَللَّهُمَّ اجْعَلَ سَرِيْرَتِىْ خَيْرًا مِّنْ عَلَانِيَّتِىْ وَعَلَانِيَّتِىْ صَالِحًا
‘হে আল্লাহ! আমার গোপন অবস্থা দৃশ্যমান অবস্থা থেকে ভালো করে নিন এবং আমার বাহ্যিকটাকে ঠিক করে দিন।’
ষষ্ঠ স্তর : صِدْقُ الْمَقَامَاتِ অর্থাৎ মর্যাদালাভের দিক থেকে সত্য হওয়া। যাকে আল্লাহ নিজের প্রিয়পাত্র হিসাবে কবুল করে নেন এবং যে লোকটি নিজের আমলে একনিষ্ঠ হয়ে সেই এই স্তর লাভ করতে পারে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতাআলা বলেন,
ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ
‘এরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না। আল্লাহর পথে প্রাণ ও ধনসম্পদ দ্বারা জিহাদ করে। এরাই সত্যবাদী।’
তাওরাতের টীকায় উল্লেখিত বাইশটি উপদেশ
ওয়াহাব ইবনু মুনাব্বিহ রহ. বলেন, আমি তাওরাতের টীকায় বাইশটি এমন বাক্য দেখেছি, যেগুলো বনুইসরাঈলের ওলামারা তাদের মজলিসে সম্মিলিতভাবে পাঠ করত। অর্থাৎ বাক্যগুলো ছিল তাদের কাছে অত্যন্ত শক্তিমান-উপদেশসূচক। বাক্যগুলো ছিল এই-
ইলম থেকে উপকারী সম্পদ আর নেই। গোস্বা থেকে নিকৃষ্ট কোনো গরিমা নেই। আমল থেকে সাজসজ্জাশীল কোনো সঙ্গী নেই। মূর্খতা থেকে বেশি দোষ অন্বেষণকারী কোনো সাথী নেই। তাকওয়া থেকে বড় কোনো আভিজাত্য নেই। প্রবৃত্তির দাপট উপেক্ষা করা থেকে বড় দয়া দ্বিতীয়টি নেই। ফিকির থেকে উৎকৃষ্ট আমল আরেকটি নেই। সবর থেকে বড় সৎকর্ম নেই। অহঙ্কার থেকে বড় লাঞ্ছণাকারী আর নেই। নম্রতার চাইতে বেশি প্রভাব বিস্তারকারী সাক্ষী নেই। বোকামি থেকে বেশি কষ্টদানকারী রোগ নেই। লোভ থেকে বেশি ইজ্জত হরণকারী গরিবিপনা নেই। সম্পদ সঞ্চিত রাখার চাইতে নিৎকৃষ্ট অভ্যাস অন্যটি নেই। সুস্থতার চাইতে উৎকৃষ্ট কোনো জীবন নেই। শালীনতাবোধের চাইতে উত্তম জীবন আর নেই। আল্লাহমুখিতার চাইতে উত্তম ইবাদত নেই। অল্পতুষ্টির চাইতে উত্তম ধার্মিকতা নেই। চুপ থাকার চাইতে বেশি তৎপর পাহাদার কেউ নেই। মৃত্যুর চাইতে নিকটবর্তী কোনো অদৃশ্যমান বস্তু নেই এবং সত্যবাদীতার চাইতে শ্রেষ্ঠ উপদেশ দানকারী দলিল নেই।
সবচে’ বড় নেকি
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাযি. বলতেন, সবচে’ সত্যবাণী হল পবিত্র কুরআন। সবচে’ উত্তম যিকির আল্লাহর যিকির। وَلَذِكْرُ اللهِ اَكْبَرُ ‘নিশ্চয় আল্লাহর যিকির সুমহান।’ অন্তরের অন্ধত্ব সবচে’ বড় অন্ধত্ব। সবচে’ বড়লজ্জা কেয়ামত দিবসের লজ্জা। সবচে’ উত্তম সম্পদ অন্তরের অমুখাপেক্ষিতা। সবচে’ উত্তম পাথেয় তাকওয়া। সবচে’ খতরনাক ফাঁদ নারীর ফাঁদ। সবচে’ বড়গুনাহ মদপান করা এবং সবচে’ বড় নেকি হল সকল পরিস্থিতিতে সত্যবলা।
সত্য শেখার জন্য চেষ্টা করতে হয়
বুযুর্গানেদীন লিখেছেন, সত্য শিক্ষা করা সহজ নয়; বরং এর জন্য পরিশ্রম করতে হয়। জনৈক বুযুর্গ বলেন, আমার শায়েখ যখন আমাকে সত্যবলার নির্দেশ দিয়েছেন, নির্দেশটির ওপর পরিপূর্ণরূপে আমি আমল করেছি। তবে এর জন্য বিশ বছর মেহনত করতে হয়েছে।
বোঝা গেল, সত্যবলা সহজ নয়; বরং এর জন্য চেষ্টা করতে হয়। কারণ, আমাদের জীবনটা মিথ্যাচারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। সত্যবলার সঙ্গে অপরিচিত। আমরা মিথ্যা বলি বেশি, সত্য বলি কম। অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়াও মিথ্যা বলি। মিথ্যা কপচানো আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এমনও হয়, মিথ্যাবলার পর যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কী বললেন? তখন সরলতার ভান দেখিয়ে উত্তর দেয়া হয়, কখন? কই না তো কিছু বলি নি! অর্থাৎ আমরা যে মিথ্যা বলি, তা আমরা নিজেরাও অনুধাবন করি না কিংবা মিথ্যা বলাটাকে কিছুই মনে করি না। এজন্য প্রতিটি কথা বলার সময় আগে নিজের কানে শোনার অভ্যাস করতে হয়। আমার প্রতিটি কথার আমি নিজেও একজন শ্রোতা এভাবে চলতে পারলে মিথ্যা থেকে বাঁচা যায় এবং সত্যবলা সহজ হয়।
অর্থহীন মিথ্যা
রাবাহ ইবনু ইয়াযিদ রহ. বলেন, ‘সত্যবলার অভ্যাস গড়ে তুলতে আমার সময় লেগেছে ষোল বছর।’ কিছু মিথ্যা তো এমন আছে, যা স্বাদহীন, অনর্থক। কিন্তু আমাদের তো অভ্যাস বলার। যেমন, ফোনে বললাম, আমি এক সেকেনডে আসছি। বলুন তো, কেউ কি এক সেকেন্ডে কোথাও যেতে পারে? স্পষ্ট মিথ্যা। ফেরেশতারা তো সেটাই লিখবে, যা সে বলেছে। এটাকে বলা হয় স্বাদহীন গুনাহ। অর্থাৎ গুনাহ করল, কিন্তু মজা পেল না।
নিজের কানকে শোনান
এজন্য নিজেকে যাচাই করুন। দেখুন, কী পরিমাণ মিথ্যা বিনাকারণে আমরা বলি। বলার সময় নিজের কানেও নিজের কথাটা একটু শুনুন। দেখবেন, আমাদের নিত্যদিনের মিথ্যাগুলো পাথরকণার মত জমা করলে ‘মিথ্যার পাহাড়’ হয়ে যাবে। এমন নয় যে, কেবল মিথ্যাবাজরাই মিথ্যা বলে। বরং তাহাজ্জুদগুজার, নেককারলোকও মিথ্যা বলে। কিন্তু অর্থহীন মিথ্যাগুলোকে আমরা মিথ্যা মনে করি না, তাই টের পাই না। এজন্য আবারও বলছি, আজ থেকে নিজের কথাগুলো নিজের কানকেও একটু শোনান। দেখবেন, কত মিথ্যা যে আমরা প্রতিদিনই বলে যাচ্ছি!
বাহানাও মিথ্যা
অবাক করা ব্যাপার হল, এইযুগে শয়তান মিথ্যার জঘন্যতাকে সহজ করে তোলার উদ্দেশে মিথ্যার আরেকটি নাম দিয়েছে ‘বাহানা’। কেননা, ‘মিথ্যা’ শব্দ শুনতে একটু হলেও খারাপ লাগে কিন্তু ‘বাহানা’ শব্দ বললে এই খারাপ লাগাটা আর বাকি থাকে না। স্ত্রী বলে, স্বামীকে একটা বাহানা দেখিয়ে দিয়েছি। স্বামী বলে, স্ত্রীর কাছে একটা ‘বাহানা’ পেশ করে দিয়েছি। ছেলে বলে, বাবার কাছে ‘বাহানা’ দেখিয়ে টাকা আদায় করে নিয়েছি। অথচ এসবই মিথ্যা। আল্লাহর কাছে এগুলো মিথ্যা হিসাবেই লিপিবদ্ধ হয়। সুতরাং আজ থেকে নিজের কানে নিজের কথা শোনার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। দেখবেন, নিজেই নিজের মিথ্যার দীর্ঘ তালিকা দেখে অবাক হবেন। ভাববেন, এত মিথ্যা আমি বলি! অনেক সময় তো ক্ষণিকের লজ্জা থেকে বাঁচার জন্যও আমরা মিথ্যা বলি। একটু ভাবুন, ক্ষণিকের লজ্জার চাইতে আল্লাহর কাছে কেয়ামতদিবসের লজ্জা আরো কত বেশি হবে! কত ক্ষতির সওদা আমরা প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি।
সত্যবাদীর চারটি নিদর্শন
যারা সত্য কথা বলে তাদের চারটি নিদর্শন আছে-
এক. মিষ্টিকথা। সত্যবাদীদের কথা শুনতে ভালো লাগে। তাদের কথা অন্তরে দাগ কাটে। হৃদয় স্পর্শ করে।
দুই. ব্যক্তিত্ব। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ব্যক্তিত্বদান করেন। যেমন, নবীজী ﷺ বলেছেন, نُصِرْتُ بِالرُّعُبِ. আল্লাহ আমাকে ব্যক্তিত্ব দান করে সাহায্য করেছেন।’ এমন নয় যে, তারা রাগ করেন, অসন্তুষ্টি দেখান, তাই তাদের সামনে যেতে ভয় লাগে। বরং সিংহ যেমন চুপ করে বসে থাকলেও ডর লাগে। অনুরূপভাবে সত্যবাদীরা চুপ করে বসে থাকলেও তাদের সামনে যেতে একপ্রকার ভয় লাগে। এটা তাদের ব্যক্তিত্বের প্রভাব। এজন্য আল্লাহওয়ালারা ব্যক্তিত্বমান হন। কবির ভাষায়,
نہ تاج تخت ميں نہ لشكرو ں سے ہے
جو بات مرد قلندر كے بار گاه ميں ہے
‘সিংহাসন কিংবা সৈন্যসামন্তে নেই,
যা আছে আল্লাহওয়ালাদের দরবারে।’
كوئى كتنا بهى ہو خوددار ليكن ہم نے ديكها ہے
حضور حسن آكر دست بستہ ہو ہى جاتا ہے
‘যে যত আত্মসম্মান-বোধ-সম্পন্ন হোক না কেন, আমরা দেখেছি,
তাঁর সৌন্দর্য-আভিজাত্যের সামনে এসে কাত হয়েই যায়।’
আল্লাহওয়ালাদেরকে আল্লাহ যৌন্দর্যাভিজাত্য দান করেন। তাদের চেহারা কালো হলেও এক প্রকার নূর থাকে। যার ফলে যত বড় ব্যক্তিই আসুক না কেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে ‘আমতা-আমতা’ করে। স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে ভয় করে। এটা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে দানকৃত ব্যক্তিত্বের প্রভাবে।
তিন. সত্যবাদীদের চেহারায় লাবণ্য থাকে। ফুলের পাপড়ির মত হাস্যমুখ থাকে। এটা আল্লাহর যিকিরের কারণেও হয়। হাসিমুখে কথা বলা ইবাদত। যিকির ও এ ইবাদতের নূর সত্যবাদীদের চেহারায় ফুটে ওঠে।
চার. সত্যবাদীদের অন্তর থাকে শান্ত। পেরেশানি সকলের জীবনেই আসে। সত্যবাদীদের জীবনেও আসে। কিন্তু তারা পেরেশানির জগতে থেকেও অন্তরের দিক থেকে প্রশান্ত থাকে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে তারা পেরেশান হলেও অন্তরের দিক থেকে তারা শান্তির জগতে থাকে।
সত্যবাদী বিশেষ নেয়ামত পায়
যেব্যক্তি সত্যাচারী হয়, আল্লাহ তাআলা তাকে কিছু বিশেষ নেয়ামত দান করেন। যেমন, ঈমানি অন্তর্দৃষ্টি। যে যত বেশি সত্যকথা বলবে আল্লাহ তাকে ততবেশি অন্তর্দৃষ্টি দান করবেন। তিনি ততবেশি মানুষের অন্তর বুঝতে সক্ষম হবেন। অন্তরের রোগনির্ণয়ে দক্ষতা তাঁর বেড়ে যাবে। হাদীসশরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
مَنْ طَلَبَ اللهَ بِالصِّدْقِ اتَاهُ مِرْأَةً يُّبْصِرُ فِيْهَا الْحَقَّ وَالْبَاطِلَ
‘যেব্যক্তি আল্লাহর কাছে সত্য প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে একটি আয়না দান করেন, যেখানে সে হক ও বাতিল দেখতে পায়।’ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাকে ‘ফুরকান’ তথা হক-বাতিলের মাঝে পার্থক্য নির্ণয়কারী মাপকাঠি দান করেন।
তাছাড়া সততার সঙ্গে ব্যবসা করলে সে গরিব হয় না। প্রয়োজনে পরীক্ষা করে দেখুন, সততা মানুষকে ধনী বানিয়ে দেয়।
সত্যবাদীকে পাঁচটি পুরস্কার দেয়া হয়
যে ব্যক্তি সত্যবলার অভ্যাস করে আল্লাহ তাআলা তাকে পাঁচটি পুরস্কারদান করেন। যেমন-
এক. আল্লাহ তাআলা তাকে পেরেশানি থেকে বের হওয়ার পথ দেখিয়ে দেন এবং তাকে শান্তির ভেতর প্রবেশ করার তাওফীক দান করেন। মক্কিজীবনে রাসূলুল্লাহ ﷺ কত কষ্ট সহ্য করেছেন। দুশমনের তুনীরে এমন কোনো তীর ছিল না যা তাঁর প্রতি নিক্ষিপ্ত হয় নি। ঘরে ঘরে তাঁর শত্রু ছিল। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁকে এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের করে এনেছেন এবং সহিসালামাতে মদিনায় পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে এমর্মে বলা হয়েছে,
رَبِّ أَدْخِلْنِي مُدْخَلَ صِدْقٍ
‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে প্রবেশ করান সত্যের সাথে।’
আলোচ্য আয়াতে মদিনায় হিজরতের প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত যেলোকটি সত্য বলবে, আল্লাহ তাআলা তাকে দুশমনের ভীড় থেকে উদ্ধার করে নিরাপদ জীবন দান করবেন।
দুই. কুরআন মজিদে এসেছে,
وَأَخْرِجْنِي مُخْرَجَ صِدْقٍ.
‘আর আমাকে বের করুন সত্যের সঙ্গে।’
তাফসীরকারকগণ এই আয়াতের তাফসিরে লিখেছেন, অনেক সময় তোমরা নিজেকে দুশমনের সামনে দুর্বল হিসাবে পাবে। তোমরা সংখ্যায় কম হবে, তারা হবে বেশি। তারা হবে শক্তিশালী তোমরা হবে দুর্বল। কিন্তু যদি তোমাদের সঙ্গে সততার গুণ থাকে তাহলে আল্লাহর সাহায্য তোমাদের সঙ্গী হবে। তোমরা দুশমনের দুশমনি থেকে আল্লাহর মেহেরবানিতে মুক্তি পাবে। সুতরাং বোঝা গেল, সত্যবাদীদের জন্য দ্বিতীয় পুরস্কার হল, দুশমনের দুশমনি থেকে মুক্তির ব্যবস্থা লাভ করা।
তিন. সত্য বলার কারণে মানুষের প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَجَعَلْنَا لَهُمْ لِسَانَ صِدْقٍ عَلِيًّا.
‘আমি তাদের নাম-যশ সুউচ্চ করলাম।’
চার. সত্যবলার কারণে আল্লাহ তাআলা মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। যেমন পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا أَنَّ لَهُمْ قَدَمَ صِدْقٍ عِنْدَ رَبِّهِمْ
‘ঈমানদাদেরকে সুসংবাদ দিন, সত্যের বিনিময়ে তাদের জন্য তাদের প্রতিপালনের কাছে মর্যাদা রয়েছে।’
পাঁচ. সত্যবাদীরা আল্লাহ সাক্ষাত লাভে ধন্য হবে। আল্লাহ বলেন,
فِي مَقْعَدِ صِدْقٍ عِنْدَ مَلِيكٍ مُقْتَدِرٍ.
‘সত্যআসনে, সর্বাধিপতি সম্রাট আল্লাহর সম্মুখে।’
এজন্যই হাদীসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা সত্যবাদী বান্দাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন।
সত্যবাদীর দুআ কবুল হয়
একজন বুযুর্গের নাম ছিল বাবাজি আব্দুল্লাহ রহ.। ইনি ছিলেন ‘মুসতাজাবুদ্দাওয়াত’ অর্থাৎ তাঁর দুআ অধিকহারে কবুল হত। অনেক বড় আল্লাহর ওলি ছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, আপনি উক্ত মর্যাদা লাভ করলেন কিভাবে? তিনি উত্তর দিলেন, যে যবান থেকে মিথ্যা বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়, আল্লাহ তাআলা তার জন্য দুআ কবুল হওয়ার দরজা খুলে দেন।
আমাদের দুআ কবুল হয় না কেন?
আমাদের দুআ কবুল হয় না কেন? কারণ আমরা সত্য বলায় অভ্যস্ত নই; বরং মিথ্যা বলার মাঝেই আমরা মজা খুঁজে পাই। ভাবুন, যদি কারো একটি মিথ্যা প্রকাশ পায় আমরা তার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করি। সুতরাং যার মিথ্যা বেহেসেবি, তার সঙ্গে কি আল্লাহ সুসম্পর্ক রাখবেন? কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্য কথা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। ভাবুন, তখন মিথ্যাবাদীদের কী অবস্থা হবে? আল্লাহ বলেন,
لِيَسْأَلَ الصَّادِقِينَ عَنْ صِدْقِهِمْ
‘তিনি সত্যবাদীদেরকে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন।’
আল্লাহ তাআলা আমাদের সহিহ-সমঝ দান করুন। মিথ্যাচারিতা থেকে বের হয়ে সত্যবাদী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
وَآخِرُ دَعْوَانَا اَنِ الْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
অনুবাদ ও সম্পাদনা
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী নকশবন্দী