গত হজ্বের মওসুমে ১৪২৯ হি. যিলহজ্ব মাসের কোনো একদিন মসজিদে হারামে বাইতে উম্মে হানীর কাছে হযরত মাওলানা ইয়াহইয়া জাহাঙ্গীর ছাহেব বললেন, ‘আলকাউসারের মাধ্যমে হোক বা অন্য কোনোভাবে এই গলত রসম সম্পর্কে আমাদের ভাইদেরকে একটু সচেতন করবেন। এখন ব্যাপকভাবে দেখা যায় যে, মুসাফাহার সময় দুআ পড়া হয় না। শুধু কুশল বিনিময় করা হয়। ‘কেমন আছেন’ই যেন আমাদের মুসাফাহার দুআ! অথচ অন্যান্য সৌজন্যমূলক কথাবার্তা তো দুআর পরেও হতে পারে।’
আমি পাঠকবৃন্দের কাছে তার পয়গাম পৌঁছে দিচ্ছি আমানত আদায়ের জন্য।
হাদীস শরীফে এসেছে যে-
إذا التقى المسلمان فتصافحا وحمدا الله عز وجل واستغفراه غفر لهما.
যখন দুইজন মুসলিমের সাক্ষাত হয় এবং তারা একে অপরের সঙ্গে মুসাফাহা করে, আল্লাহ তাআলার হামদ ও শোকর করে এবং আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করে তো আল্লাহ তাআলা উভয়কে মাগফিরাত দান করেন।’ (সুনানে আবু দাউদ হাদীস ৫১৬৯)
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ الْتَقَيَا فَأَخَذَ أَحَدُهُمَا بِيَدِ صَاحِبِهِ إِلا كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ يَحْضُرُ دُعَاءَهُمَا ، وَلا يُفَرِّقُ بَيْنَ أَيْدِيهِمَا حَتَّى يَغْفِرَ لَهُمَا
‘যখনই দুজন মুসলিমের সাক্ষাত হয় এবং তারা পরস্পর হাত মিলায় তো আল্লাহ তাআলার উপর তাদের এই হক জন্মে যে, আল্লাহ তাদের দুআ কবুল করবেন এবং তাদের হাতগুলো পৃথক হওয়ার আগেই তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন।’ (মুসনাদে আহমদ ৩/১৪২, হাদীস ১২৪৫১)
উপরোক্ত হাদীসগুলোর কারণে আমাদের পূর্বসূরী বুযুর্গরা মুসাফাহার সময় একে অপরের জন্য মাগফিরাতের দুআ করতেন। এই দুআর জন্য প্রসিদ্ধ আরবী বাক্যটি খুবই উপযুক্ত-
يَغْفِرُ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ
অর্থাৎ ‘আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ক্ষমা করুন।’
এটা কত ভালো বিষয় যে, মুসলমানদের পারস্পরিক সাক্ষাত প্রথমে শান্তি ও সালামতী এরপর ক্ষমা ও মাগফিরাতের দুআর দ্বারা হবে। ঈমানের পরে সুস্থতা ও নিরাপত্তা এবং মাগফিরাত ও পবিত্রতার চেয়ে বড় কোনো নিয়ামত আর আছে কি?
মুসলমানদের পারস্পরিক সাক্ষাত যে উদ্দেশ্যেই হোক না কেন, এর প্রকৃত প্রেরণা তো আল্লাহর হামদ ও ছানা এবং সালাম ও মাগফিরাত কামনাই হওয়া উচিত।
সায়ীদ আলমাকবুরী রাহ. থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন-
إني لا أخرج إلى السوق، ما لي حاجة إلا أن أسلم ويسلم علي
আমি (অনেক সময়) বাজারে যাই। তবে এজন্য নয় যে, সেখানে আমার কোনো প্রয়োজন রয়েছে; বরং এজন্য যাই যে, (সেখানে অনেক মানুষের সমাবেশ, তাই অনেক মানুষকে সালাম করার সুযোগ হবে) আমি তাদেরকে সালাম দিব এবং উত্তরে তাদের সালাম লাভ করব।’
বুশাইর ইবনে ইয়াসার বলেন-
ما كان أحد يبدأ أو يبدر ابن عمر بالسلام
‘আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.কে কেউ আগে সালাম দিতে পারত না।’ (আততবাকাতুল কুবরা ইবনে সাদ, খন্ড ৪. পৃষ্ঠা ১৫৫,১৫২)
উমর রা. এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন-
كيف أصبحت يا فلان؟
অর্থাৎ কেমন আছ? তিনি বললেন-
أحمد الله إليك
‘আমি আপনার কাছে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করছি।’ (হিলইয়াতুল আউলিয়া আবু নুয়াইম খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩০)
ইমাম ইবনুল মুবারক রাহ. থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন-
إن كنا لعلنا أن نلتقي في اليوم مرارا يسأل بعضنا بعضا، وإن نريد بذلك إلا الحمد الله عز وجل.
‘আমরা কখনও একে অপরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করি এবং কুশল জিজ্ঞাসা করি, শুধু এই উদ্দেশ্যে যে, এভাবে পরস্পরে আল্লাহর হামদ ও ছানা করব।’ (আযযুহদ ওয়ার রাকাইক পৃ. ৬৮-৬৯)
সালাফে সালেহীনের মধ্যে এই অভ্যাস গড়ে উঠেছিল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহর অনুকরণে। তবারানী বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন- কেমন আছ? তিনি বললেন-
أحمد الله إليك يا رسول الله
‘ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমি আপনার কাছে আল্লাহর প্রশংসা করছি।’ রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তোমার কাছে এটাই আমি চেয়েছি। (অর্থাৎ আমার প্রশ্নের উত্তরে তুমি আল্লাহর হামদ ও ছানা করবে এটাই আমার উদ্দেশ্য ছিল)। (মাজমাউয যাহওয়াইদ খন্ড ১০, পৃষ্ঠা ১৪০, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ৪৬)
সারকথা এই যে, মুসলমানদের কোনো সাক্ষাত সালাম, দুআয়ে মাগফিরাত ও হামদ ও ছানা বিহীন না হওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।