৩৬. পানাহারের পর কুলি করব
কোনো কিছু খাওয়ার পর দাঁতের ফাঁকে বা মুখের বিভিন্ন কোণে খাবারের অংশবিশেষ রয়ে যায়। তেমনি দুধ বা এজাতীয় তরল খাবার পান করার পরও এর তৈলাক্ত অংশ মুখে লেগে থাকে। তাই পানাহারের পর কুলি করা চাই।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানাহারের পর কুলি করতেন। ইবনে আব্বাস রা. বলেন-
أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ شَرِبَ لَبَنًا فَمَضْمَضَ، وَقَالَ: إِنّ لَهُ دَسَمًا.
একবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুধ পান করলেন। এরপর কুলি করলেন এবং বললেন, এতে চর্বি রয়েছে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৬০৯
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও মুখ ভালো করে পরিষ্কার করা উচিত, যাতে মুখে রয়ে যাওয়া খাবার-কণা দাঁতের ক্ষতি করতে না পারে। সবচেয়ে ভালো, শোয়ার আগে মিসওয়াক করা। আর শোয়ার আগে মিসওয়াক করা তো সুন্নত।
তেমনিভাবে নামাযের আগ মুহূর্তে কিছু খেলে কুলি করা উচিত। একবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাতু খেলেন। এরপর কুলি করলেন, তারপর নামায পড়লেন।
সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৩৯০
৩৭. পানাহারের পর ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলব
খাবার আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিআমত। আর নিআমত ভোগ করার পর মুমিন শুকরিয়া আদায় করবে এটাই স্বাভাবিক। নিআমতের শুকরিয়া আদায় করলে আল্লাহ খুশি হন। সুতরাং আমরা খাওয়ার পর বা পান করার পর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করব- ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলব। আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنّ اللهَ لَيَرْضَى عَنِ الْعَبْدِ أَنْ يَأْكُلَ الْأَكْلَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا أَوْ يَشْرَبَ الشّرْبَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا
আল্লাহ ঐ বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, যে খাওয়ার পর বা পান করার পর আল্লাহর প্রশংসা করে (আলহামদু লিল্লাহ বলে)। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৩৪
৩৮. খাবারও খেলাম গুনাহ্ও মাফ হল
আমার সামনে গরম গরম সুস্বাদু খাবার উপস্থিত। এত মজার খাবার- ঘ্রাণেই পেট ভরে যাচ্ছে। এ খাবার কি আমি প্রস্তুত করেছি? এ খাবার প্রস্তুত করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন এর জোগাড়যন্ত্র কি আমি করেছি? এর জন্য যে অর্থ ব্যয় হয়েছে তা কি আমি উপার্জন করেছি? এ ফল-ফসল ফলাতে যত ঘাম ঝরেছে তা কি আমার ঘাম?
এত সুস্বাদু খাবার আমার সামনে এসেছে অথচ এর জন্য আমি সামান্য কষ্টটুকুও স্বীকার করিনি। একে বলে রিযিক, যা বান্দাকে আল্লাহ দান করেন। প্রতিদিন, প্রতি বেলা দান করেন। তো বান্দার কি উচিত নয় তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা? আল্লাহ চান বান্দা যেন আল্লাহর রিযিক গ্রহণ করে কৃতজ্ঞ হয়, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে।
আবার দেখ, আল্লাহরই দেওয়া রিযিক গ্রহণ করে বান্দা যদি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তাহলে আল্লাহ খুশি হন এবং বান্দাকে মাফ করে দেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ أَكَلَ طَعَامًا فَقَالَ: الحَمْدُ لِلهِ الّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوّةٍ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.
যে ব্যক্তি কোনো খাবার খাওয়ার পর বলে-
الحَمْدُ لِلهِ الّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلاَ قُوّةٍ.
(সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি কোনো প্রকার কষ্ট-মেহনত ছাড়া আমাকে এ খাবার খাওয়ালেন, এ রিযিক দান করলেন।) আল্লাহ তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৪৫৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০২৩
৩৯. রাতে পাত্র ঢেকে রাখব
রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে যায় তখন পোকা-মাকড় স্বাধীন রাজ্য লাভ করে। তেলাপোকা, টিকটিকি স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়; যেখানে খুশি সেখানে যায়, যাতে ইচ্ছা মুখ দেয়। কথার কথা, একটি পাত্রে পিঠা রেখে তুমি ঘুমিয়ে গেলে, ঢেকে রাখলে না। এখন বাথরুমের তেলাপোকা এসে পিঠার উপর দিয়ে দশবার হেঁটে গেল। কোনো এক কোণা থেকে সামান্য খেল। সকালে উঠে তুমি সেই পিঠা খেলে। অথচ পিঠার পাশ দিয়ে তেলাপোকা হেঁটে যেতে দেখলেই তুমি সেই পিঠা খেতে না। অথবা একটি গ্লাসে দুধ রেখে তুমি ঘুমিয়ে গেলে, ঢেকে রাখলে না। রাতে তেলাপোকা দুধের মধ্যে পড়ল এবং দুধে ডুব দিয়ে উঠে গেল। তুমি কিছুই দেখলে না। সকালে উঠে সেই দুধ পানকরলে। অথচ পাত্রটি বা গ্লাসটি ঢেকে রাখলে এমনটি ঘটত না। সুতরাং রাতে শোয়ার সময় সকল পাত্র রেখে রাখব।
তাই তো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
غَطّوا الْإِنَاءَ، وَأَوْكُوا السِّقَاءَ، وَأَغْلِقُوا الْبَابَ.
(রাতে শোবার সময়) পাত্র ঢেকে রাখ, মশকের মুখ বন্ধ কর, দরজা বন্ধ কর।
সহীহ মুসলিম, হাদীস ২০১২
৪০. খাওয়ার আগে জেনে নেব
তোমার সামনে খাবার পেশ করা হল। সুুন্দর একটা পাত্রে খুব সুন্দরভাবে সাজিয়ে পরিবেশন করা হল। দেখেই জিভে পানি এসে যাচ্ছে। তোমার জানা নেই, এটা কী জিনিস- হালাল কোনো প্রাণীর গোস্ত নাকি হারাম। দেখতে খুব সুন্দর লাগছে এবং মনে হচ্ছে- খাবারটা খুব সুস্বাদু হবে। এখন কি তুমি কিছু না জেনেই খাওয়া শুরু করে দিবে? পরে আফসোস করবে- আরে এটা তো একটা হারাম প্রাণীর গোস্ত ছিল!
বিশেষ করে যখন তুমি দেশের বাইরে, কোনো অমুসলিম রাষ্ট্রে রয়েছ। সুতরাং যে খাবারের ব্যাপারে আমার জানা নেই খাওয়ার আগে জেনে নেব। খালীদ ইবনুল ওয়ালীদ রা. বলেন-
وَكَانَ قَلّمَا يُقَدِّمُ يَدَهُ لِطَعَامٍ حَتّى يُحَدّثَ بِهِ وَيُسَمّى لَهُ.
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবার সম্বন্ধে না জেনে কোনো খাবারে হাত দিতেন না। সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৩৯১
৪১. বছরের প্রথম ফল সামনে এলে
এ বছর কেবল আম পাকা শুরু করেছে। বাজারে কিছু কিছু আম পাওয়া যাচ্ছে বা নিজেদের গাছের আমও দু-একটা করে পাকা শুরু করেছে। এ বছর এখনো আম খাওয়া হয়নি। তোমার সামনে এ বছরের প্রথম আম উপস্থিত। তুমি আল্লাহর নাম নেয়া ছাড়াই তাঁর এ নিআমত খাওয়া শুরু করে দিলে। এমনটি করা যাবে না। এ ফল তো আল্লাহর নিআমত, যা বান্দার প্রতি অনুগ্রহ করে তিনি দান করেছেন। সুতরাং বছরের প্রথম ফল সামনে এলে আল্লাহর নাম নিব এবং বরকতের দুআ করব।
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে যখন বছরের প্রথম ফল উপস্থিত করা হত তখন তিনি বলতেন-
اللّهُمّ بَارِكْ لَنَا فِي مَدِينَتِنَا، وَفِي ثِمَارِنَا، وَفِي مُدِّنَا، وَفِي صَاعِنَا، بَرَكَةً مَعَ بَرَكَةٍ.
(আয় আল্লাহ! আমাদের মদীনায় বরকত দান করুন, আমাদের ফল-ফলাদিতে বরকত দান করুন। আমাদের ‘মুদ’, আমাদের ‘ছা’(একটি পরিমাপ)-এ বরকত দান করুন; ধারাবাহিক বরকত দান করুন।)
এরপর নবীজী সবার আগে পাশে থাকা কোনো শিশুকে ঐ ফল খেতে দিতেন (তারপর নিজে খেতেন)। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩৩২৯
যিলকদ ১৪৩৯ – আগস্ট ২০১৮
মুহাররম ১৪৪০ – অক্টোবর ২০১৮
মাসিক আলকাউসার