এই হল নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্যাবলী, যা পূরুষ ব্যক্তিদের পরিপূর্ণ গুণাবলীর সমাহার, আমি সেসব গুণাবলী আপনাদের উদ্দেশ্যে বর্ণনা করেছি, যাতে তা আপনাদের জন্য নিদর্শন বা চিহ্ন হতে পারে ঐ সময়ে, যখন আপনারা তাঁকে স্বপ্নের মধ্যে দেখতে পাবেন; কারণ, যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর ব্যাপারে প্রমাণিত বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলীর আলোকে স্বপ্নের মধ্যে দেখতে পাবে, সে ব্যক্তি সত্যি সত্যি তাঁকে দেখেছে; কেননা শয়তান তাঁর রূপ ধারণ করতে পারে না(২১)।
টিকাঃ
(২১)আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« من رآني في المنام فقد رآني , فإن الشيطان لا يتخيل بي , ورؤيا المؤمن جزء من ستة وأربعين جزءا من النبوة » . ( رواه البخاري).
“যে আমাকে স্বপ্নযোগে দেখল, সে আমাকেই দেখল। কারণ, শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না। আর মুমিনের স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।” [ বুখারী, আস-সহীহ: তা‘বীর (স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান) / ১০, ৮ / ৭১ – ৭২]।
গ্রন্থের তাহকীককারী বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের (সৃষ্টিগত) বৈশিষ্ট্যসমূহের অন্যতম হচ্ছে,
১. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কেশ মুবারক:
কাতাদা র. বলেন:
« قُلْتُ لأَنَسِ بْنِ مَالِكٍ كَيْفَ كَانَ شَعَرُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ؟ قَالَ: « كَانَ شَعَرًا رَجِلاً لَيْسَ بِالْجَعْدِ وَلاَ السَّبِطِ بَيْنَ أُذُنَيْهِ وَعَاتِقِهِ» . ( رواه مسلم )
“আমি আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কেশ মুবারক কেমন ছিল? জবাবে তিনি বললেন: মধ্যম প্রকৃতির ছিল; খুব কোঁকড়ানো ছিল না, আবার একেবারে সোজাও ছিল না; তা ছিল দুই কাঁধ ও দুই কানের মাঝ বরাবর।”
[মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২৬, হাদিস নং- ২৩৩৮, ৪ / ১৮১৯]।
“আমি আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কেশ মুবারক কেমন ছিল? জবাবে তিনি বললেন: মধ্যম প্রকৃতির ছিল; খুব কোঁকড়ানো ছিল না, আবার একেবারে সোজাও ছিল না; তা ছিল দুই কাঁধ ও দুই কানের মাঝ বরাবর।”
[মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২৬, হাদিস নং- ২৩৩৮, ৪ / ১৮১৯]।
” رَجِلا “অর্থ: কোঁকড়ানো ও সোজা অবস্থার মাঝামাঝি অবস্থা। — [ ইমাম নববীর ব্যাখ্যাসহ সহীহ মুসলিম: ১৫ / ৯২ ]।
” الجعد “অর্থ: বস্তুর মধ্যে বক্রতা বা কুঞ্চিত হওয়া; বলা হয়: ” شعر جعد “(কোঁকড়ানো চুল); আর جعد শব্দটি سبط(সোজা) শব্দের বিপরীত। — দেখুন: আল-কামূসুল মুহীত, মূল অক্ষর: (جعد), পৃ. ৩৪৮।
” السبط “অর্থ: সোজা হওয়া; আর سبط শব্দটি جعد (বক্রতা) শব্দের বিপরীত। — দেখুন: আল-কামূসুল মুহীত, মূল অক্ষর: (سبط), পৃ. ৮৬৩
২. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সুরভীময় ও কোমল:
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« مَا شَمِمْتُ عَنْبَرًا قَطُّ , وَلاَ مِسْكًا , وَلاَ شَيْئًا أَطْيَبَ مِنْ رِيحِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم , وَلاَ مَسِسْتُ شَيْئًا قَطُّ دِيبَاجًا وَلاَ حَرِيرًا أَلْيَنَ مَسًّا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم » . ( رواه مسلم ) .
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের (মুবারক শরীরের) চেয়ে সুগন্ধিময় কোনো আম্বর, মিশক বা অন্য কোনো বস্তুর ঘ্রাণ গ্রহণ করি নি এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের (মুবারক শরীরের) চেয়ে কোমল কোনো রেশম বা মোলায়েম কাপড় আমি স্পর্শ করি নি।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২১, হাদিস নং- ২৩৩০, ৪ / ১৮১৪ – ১৮১৫]।
৩. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘামের সুগন্ধি এবং তার দ্বারা বরকত লাভ:
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« دَخَلَ عَلَيْنَا النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ عِنْدَنَا فَعَرِقَ وَجَاءَتْ أُمِّى بِقَارُورَةٍ فَجَعَلَتْ تَسْلُتُ الْعَرَقَ فِيهَا فَاسْتَيْقَظَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: « يَا أُمَّ سُلَيْمٍ ! مَا هَذَا الَّذِى تَصْنَعِينَ ؟ ». قَالَتْ هَذَا عَرَقُكَ نَجْعَلُهُ فِى طِيبِنَا وَهُوَ مِنْ أَطْيَبِ الطِّيبِ » . ( رواه مسلم ) .
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ঘরে আসলেন এবং বিশ্রাম নিলেন; অতঃপর তিনি ঘামছিলেন, আর আমার মা একটি শিশি নিয়ে তা মুছে মুছে তাতে ভরতে লাগলেন; অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে গেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন: হে উম্মে সুলাইম! একি করছ? জবাবে তিনি বললেন: এ আপনার ঘাম, যা আমরা সুগন্ধির সাথে মিশ্রিত করি, আর এ তো সব সুগন্ধির সেরা সুগন্ধি।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২২, হাদিস নং- ২৩৩১, ৪ / ১৮১৫]।
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরও বর্ণিত আছে, তিনি বলেন:
« كَانَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم يَدْخُلُ بَيْتَ أُمِّ سُلَيْمٍ فَيَنَامُ عَلَى فِرَاشِهَا , وَلَيْسَتْ فِيهِ , قَالَ: فَجَاءَ ذَاتَ يَوْمٍ فَنَامَ عَلَى فِرَاشِهَا , فَأُتِيَتْ , فَقِيلَ لَهَا : هَذَا النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم نَامَ فِى بَيْتِكِ عَلَى فِرَاشِكِ , قَالَ : فَجَاءَتْ وَقَدْ عَرِقَ , وَاسْتَنْقَعَ عَرَقُهُ عَلَى قِطْعَةِ أَدِيمٍ عَلَى الْفِرَاشِ , فَفَتَحَتْ عَتِيدَتَهَا فَجَعَلَتْ تُنَشِّفُ ذَلِكَ الْعَرَقَ فَتَعْصِرُهُ فِى قَوَارِيرِهَا , فَفَزِعَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم , فَقَالَ: « مَا تَصْنَعِينَ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ !؟» . فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ نَرْجُو بَرَكَتَهُ لِصِبْيَانِنَا , قَالَ: « أَصَبْتِ » . ( رواه مسلم ) .
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সুলাইমের ঘরে যেতেন এবং তার বিছানায় ঘুমাতেন, এমতাবস্থায় যে উম্মে সুলাইম তখন ঘরে থাকতেন না। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদিন তিনি এলেন এবং তার বিছানায় ঘুমালেন। অতঃপর তিনি (উম্মে সুলাইম) এলে তাকে বলা হল, ইনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তোমার ঘরে তোমার বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, উম্মে সুলাইম ঘরে এলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ঘেমেছেন, আর তাঁর ঘাম চামড়ার বিছানার উপর জমেছে। উম্মে সুলাইম তার কৌটা খুললেন এবং সে ঘাম মুছে মুছে শিশিতে ভরতে লাগলেন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ত্রস্ত হয়ে ঘুম থেকে উঠে তাকে বললেন, তুমি কী করছ, হে উম্মে সুলাইম!? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের শিশুদের বরকতের উদ্দেশ্যে নিচ্ছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ভাল করেছ।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২২, হাদিস নং- ২৩৩২, ৪ / ১৮১৫ – ১৮১৬]।
৪. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুচকি হাসি:
সকল হাদিস থেকে এই কথা পরিষ্কার যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ অবস্থায় মুচকি হাসি হাসতেন, তবে কখনও কখনও তিনি এর উপর বৃদ্ধি করে সাধারণভাবে হাসতেন।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন:
« ما رأيت النبي صلى الله عليه و سلم مستجمعا قط ضاحكا حتى أرى منه لهواته , إنما كان يتبسم » . ( رواه البخاري ) .
“আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মুখভরে হাসতে দেখি নি যে তাঁর আলা জিহ্বা দেখা যাবে; তিনি তো শুধু মুচকি হাসতেন।” [বুখারী, আস-সহীহ: আদব / ৬৮, ৭ / ৯৪ – ৯৫]।
৫. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথাবার্তা:
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন:
« إن رسول الله صلى الله عليه و سلم لم يكن يسرد الحديث كسردكم » . ( رواه البخاري ) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের কথা বলার মত করে অনবরত কথা বলতেন না।” [বুখারী, আস-সহীহ: মানাকিব / ২৩, ৪ / ১৬৪; তিরমিযী, আস-সুনান: মানাকিব / ৯, হাদিস নং- ৩৬৩৯, ৫ / ৬০০]। আর তিরমিযীর বর্ণনার মধ্যে অতিরিক্ত আছে:
« لكنه كان يتكلم بكلام بينه فصل , يحفظه من جلس إليه » .
“বরং তিনি সুস্পষ্ট করে আলাদা আলাদাভাবে কথা উচ্চারণ করতেন; ফলে যারা তাঁর কাছে বসা থাকত, তারা তা সংরক্ষণ করতে পারত।”
৬. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের (হাঁটা) পথচলা:
পূর্বোক্ত আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে:
« إِذا مشى تَكفَّا تكفِّيا . كأنما انحطّ من صبب . لم أر قبله ولا بعده مثله صلى الله عليه وسلم » . ( رواه الترمذي ) .
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাঁটতেন, তখন সামনের দিকে ঝুঁকে চলতেন, মনে হত যেন তিনি যমীনের নীচু অংশে অবতরণ করছেন। আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্বে ও পরে তাঁর মত (এত অধিক সুন্দর) আর কাউকে দেখি নি।” [ তিরমিযী, আস-সুনান: মানাকিব / ৮, হাদিস নং- ৩৬৩৭; ৫ / ৫৯৮]।
আর আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন:
« ما رأيت شيئا أحسن من رسول الله صلى الله عليه و سلم ,كأن الشمس تجري في وجهه , ما رأيت أحدا أسرع في مشيه من رسول الله صلى الله عليه و سلم , كأنما الأرض تطوى له , إنا لنجهد أنفسنا , وإنه لغير مكترث» . ( رواه الترمذي ) .
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সুন্দর কিছু দেখি নি; সূর্য যেন তাঁর চেহারায় ছিল প্রবাহিত। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা দ্রুত হাঁটতে আমি কাউকে দেখি নি, মনে হত যেন তাঁর জন্য যমীনকে সংকুচিত করে দেয়া হয়েছে; আমরা তো খুবই চেষ্টা করতাম (তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে); কিন্তু তিনি ছিলেন একেবারেই নিঃস্পৃহ।” [তিরমিযী, আস-সুনান: মানাকিব / ১২, হাদিস নং- ৩৬৪৮; ৫ / ৬০৪; আর তিনি বলেন: এই হাদিসটি গরীব হাদিস]।
৭. মোহরে নবুয়তের বর্ণনা ও নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেহে তার অবস্থান:
সায়েব ইবন ইয়াযিদ র. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« ذهبت بي خالتي إلى النبي صلى الله عليه و سلم فقالت: يا رسول الله ! إن ابن أختي وجع , فمسح رأسي , ودعا لي بالبركة , ثم توضأ فشربت من وضوئه , ثم قمت خلف ظهره فنظرت إلى خاتم النبوة بين كتفيه , مثل زر الحجلة » . ( رواه البخاري و مسلم ) .
“আমার খালা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে গেলেন, তারপর তিনি বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! এটি আমার বোনের ছেলে, সে অসুস্থ; তখন তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং আমার জন্য বরকতের দো‘আ করলেন; অতঃপর উযু করলেন, আর আমি তাঁর উযুর পানি থেকে পান করলাম; অতঃপর তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম এবং তাঁর দুই কাঁধের মাঝখানে হাজেলার বোতামের মত মোহরে নবুয়ত দেখতে পেলাম।” [ বুখারী, আস-সহীহ: মানাকিব / ২২, ৪ / ১৬৩; মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ৩০, হাদিস নং- ২৩৪৫, ৪ / ১৮২৩ ]।
” الحجلة “: ‘হাজেলা’ হল তাঁবুর মত ঘর বিশেষ, যার কতগুলো বড় বড় বোতাম রয়েছে এবং তা খোলামেলা। – [ ইমাম নববীর ব্যাখ্যাসহ সহীহ মুসলিম: ১৫ / ৯৮ ]।
আর ‘আসেম র. থেকে বর্ণিত, তিনি আবদুল্লাহ ইবন সারজিস রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
« رَأَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم وَأَكَلْتُ مَعَهُ خُبْزًا وَلَحْمًا , أَوْ قَالَ: ثَرِيدًا , قَالَ: فَقُلْتُ لَهُ: أَسْتَغْفَرَ لَكَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم ؟ قَالَ نَعَمْ , وَلَكَ , ثُمَّ تَلاَ هَذِهِ الآيَةَ: (وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ) .
قَالَ ثُمَّ دُرْتُ خَلْفَهُ فَنَظَرْتُ إِلَى خَاتَمِ النُّبُوَّةِ بَيْنَ كَتِفَيْهِ عِنْدَ نَاغِضِ كَتِفِهِ الْيُسْرَى جُمْعًا عَلَيْهِ خِيلاَنٌ كَأَمْثَالِ الثَّآلِيلِ » . ( رواه مسلم ) .
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি এবং তাঁর সাথে গোশত ও রুটি খেয়েছি, অথবা বলেছেন ‘সারিদ’ (খেয়েছি)। আসেম বলেন: অতঃপর আমি তাকে বললাম: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন? তিনি বললেন: হ্যাঁ, তোমার জন্যও। অতঃপর তিনি এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন: (وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ) [ ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার পাপের জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য]।”
আবদুল্লাহ বললেন: তারপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে গেলাম এবং মোহরে নবুওয়ত দেখলাম তাঁর দুই কাঁধের মাঝে বাম পাশের বাহুর হাড়ের কাছে অংগুলির মাথা একত্রিত করলে যেমন হয় অনেকটা তেমন, যাতে তিলক আছে, মনে হয় যেন কতগুলো বিচি এর সমষ্টি।” [ মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ৩০, হাদিস নং- ২৩৪৬, ৪ / ১৮২৩ – ১৮২৪ ]।
ناغض: অধিকাংশ আলেম বলেন, ” النغض ” এবং ” الناغض “অর্থ হল: কাঁধের সর্বোচ্চ ভাগ; কেউ কেউ বলেন: তা হল কাঁধের প্রান্তে অবস্থিত সূক্ষ্ম হাড়; আবার কেউ কেউ বলেন: নড়াচড়ার সময় তার থেকে যা প্রকাশ হয়। – [ ইমাম নববীর ব্যাখ্যাসহ সহীহ মুসলিম: ১৫ / ৯৮ ]।
الخِيلان: বহুবচন, একবচনে ” خال “, অর্থ হল: শরীরের মধ্যে তিলক বা মাশা। – [ ইমাম নববীর ব্যাখ্যাসহ সহীহ মুসলিম: ১৫ / ৯৯ ]।
কুরতবী বলেন: বিশুদ্ধ হাদিসসমূহের ঐক্যবদ্ধ রায় হল, মোহরে নবুয়ত ছিল তাঁর বাম কাঁধের কাছে স্পষ্ট লাল কিছু, যার পরিমাণ ছোট করে বুঝালে কবুতরের ডিমের পরিমাণ। আর বড় করে বুঝালে তখন তা হাতের আঙ্গুলের মাথা একত্রিত করলে যতটুকু হয় ততটুকু পরিমাণ হত। আল্লাহই অধিক ভাল জানেন। [ফতহুল বারী: ৬ / ৫৬৩ ]।
৮. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কপাল মুবারক:
হিন্দ ইবন আবি হালা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে এসেছে:
« كان رسول الله صلى الله عليه وسلم …. أزهر اللون ، واسع الجبين ، أزج الحواجب سوابغ فى غير قرن , بينهما عرق يدره الغضب ، أقنى العرنين , له نور يعلوه , يحسبه من لم يتأمله أشم ، كث اللحية , سهل الخدين … » .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন … অতি প্রাঞ্জল বর্ণের অধিকারী; ললাটের উভয় পার্শ্ব ছিল প্রশস্ততর; তাঁর ভ্রূযুগল বিমুক্ত বৃত্তাংশের ন্যায় বাঁকা, খুব সূক্ষ্ম ঘন চুল বিশিষ্ট ছিল; আর ঐ ভ্রূযুগলের মাঝে এমন একটি শিরা ছিল, যা রাগের সময় (অধিক রক্ত সঞ্চারিত হওয়ার ফলে) ভেসে উঠত (প্রকাশ পেত); তাঁর নাসিকা সুদীর্ঘ, অগ্রভাগ সরু ও মধ্যভাগ ন্যূজ্ব ছিল; তাঁর নাসিকায় এমন নূর (জ্যোতি) ছিল, যা নাকের উপর বিকীর্ণ হত; কেউ গভীর মনোযোগ সহকারে তাঁর নাকের প্রতি না তাকালে অত্যুন্নত নাসা মনে করত; তাঁর দাঁড়ি ছিল বিস্তীর্ণ ও খুব ঘন; গণ্ডদ্বয় ছিল মসৃণ; …।”
৯. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাথা মুবারক:
পূর্বে উল্লেখিত আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে, তিনি বলেছেন:
« كان رسول الله صلى الله عليه و سلم ليس بالطويل ولا بالقصير ضخم الرأس واللحية … » . ( رواه أحمد ) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম লম্বাও ছিলেন না, আবার বেঁটেও ছিলেন না (তিনি মধ্যম আকৃতির ছিলেন); আর তিনি ছিলেন বড় মাথা ও দাঁড়ির অধিকারী।” [ ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ: ১ / ৯৬; হাকেম, আল-মুসতাদরাক: ২ / ৬০৬]।
১০. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কণ্ঠস্বর:
উম্মে মা‘বাদ রা. থেকে বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে, তিনি বলেছেন:
« في صوته صهل » .
“তাঁর কণ্ঠস্বরের মধ্যে ছিল তীক্ষ্নতা ও বলিষ্ঠতা।”
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুচ্ছ গুণাবলী
হুবাইশ ইবন খালিদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« أن رسول الله صلى الله عليه وسلم حين خرج من مكة خرج منها مهاجرا إلى المدينة , هو وأبو بكر ومولى أبي بكر عامر بن فهيرة ، ودليلهما عبد الله بن أريقط الليثي , فمروا على خيمتي أم معبد الخزاعية , وكانت برزة جلدة تحتبي وتجلس بفناء الخيمة , ثم تسقي وتطعم ، فسألوها لحما وتمرا ليشتروه منها , فلم يصيبوا عندها شيئا من ذلك ، وكان القوم مرملين مسنتين فنظر رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى شاة في كسر الخيمة ، فقال : « ما هذه الشاة يا أم معبد ؟ » قالت : شاة خلفها الجهد من الغنم قال: « هل بها من لبن ؟ » قالت : هي أجهد من ذلك قال : « أتأذنين لي أن أحلبها؟ » قالت : بأبي أنت وأمي نعم إن رأيت بها حلبا فاحلب ، فدعا بها رسول الله صلى الله عليه وسلم فمسح بيده ضرعها , وسمى الله عز وجل , ودعا لها في شاتها , فتفاجت عليه ، ودرت , واجترت , ودعا بإناء يربض الرهط ، فحلب فيه ثجا حتى علاه البهاء , ثم سقاها حتى رويت ، وسقى أصحابه حتى رووا ، ثم شرب آخرهم , ثم أراضوا , ثم حلب فيه الثانية على هدة حتى ملأ الإناء , ثم غادره عندها , فبايعها وارتحلوا عنها ، فقلما لبثت حتى جاءها زوجها أبو معبد يسوق أعنزا عجافا , يتساوكن هزلا مخهن قليل ، فلما رأى أبو معبد اللبن عجب , وقال : من أين لك هذا يا أم معبد والشاة عازب حيائل ولا حلوب في البيت ؟ قالت : لا والله إلا أنه مر بنا رجل مبارك من حاله كذا وكذا , قال : صفيه لي يا أم معبد , قالت : رأيت رجلا ظاهر الوضأة ، أبلج الوجه ، حسن الخلق , لم تعبه نحلة , ولم تزر به صقلة ، وسيم قصيم ، في عينيه دعج ، وفي أشفاره وطف ، وفي صوته صهل ، وفي عنقه سطع ، وفي لحيته كثاثة ، أزج أقرن ، إن صمت فعليه الوقار ، وإن تكلم سماه وعلاه البهاء , أجمل الناس وأبهاه من بعيد و أجلاه وأحسنه من قريب , حلو المنطق ، فصل لا نزر ولا هزر ، كأن منطقه خرزات نظم يتحدرن ، ربعة لا يأس من طول , ولا تقتحمه عين من قصر ، غصن بين غصنين ، وهو أنظر الثلاثة منظرا ، وأحسنهم قدرا ، له رفقاء يحفون به ، إن قال أنصتوا لقوله ، وإن أمر بادروا إلى أمره ، محفود محشود , لا عابس ولا مفند , قال أبو معبد : هو والله صاحب قريش الذي ذكر لنا من أمره ما ذكره بمكة ، ولقد هممت أن أصحبه ، ولأفعلن إن وجدت إلى ذلك سبيلا ، فأصبح صوت بمكة عاليا يسمعون الصوت ، ولا يدرون من صاحبه , وهو يقول :
جزى الله رب الناس خير جزائه * رفيقين قالا خيمتي أم معبد
هما نزلاها بالهدى واهتدت به * فقد فاز من أمسى رفيق محمد
فيا لقصي ما زوى الله عنكم * به من فعال لا تجازى وسؤدد
ليهن أبا بكر سعادة جـــــده * بصحبة من يسعد الله يسعد
ليهن بني كعب مقام فتاتهــم * ومقعدها للمؤمنين بمرصد
سلوا أختكم عن شاتها وإنائها* فإنكم إن تسألوا الشاة تشهد
دعاها بشاة حائل فتحلبت * عليه صريحا ضرة الشاة مزبد
فغادرها رهنا لديها لحالب * يرددها في مصدر ثم مورد » . ( رواه الحاكم ).
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন মক্কা থেকে বের করে দেয়া হয়, তখন হিজরতকারী হিসেবে তিনি, আবূ বকর রা. এবং আবূ বকর রা. এর গোলাম আমের ইবন ফুহায়রা ও তাঁদের উভয়ের পথপ্রদর্শক আবদুল্লাহ ইবন ওরাইকিত আল-লাইসী মদীনার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়েন; তারা উম্মু মা‘বাদ আল-খুযা‘য়ীয়া’র তাঁবুর পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করেন; আর সে ছিল পরিণত বয়সী এক নারী, তাঁবুর আঙ্গিনায় কাপড় জড়িয়ে বসে থাকত; পানি পান করাত ও খাবার দিত। অতঃপর তাঁরা তার নিকট থেকে গোশত ও খেজুর ক্রয় করতে চাইল, কিন্তু তাঁরা তার নিকট এই ধরনের কিছুই পেল না; কারণ, তখন তারা (উম্মে মা‘বাদ এর গোষ্ঠী) ছিল রসদশূন্য দুর্ভিক্ষ কবলিত; অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁবুর একপাশে একটি ছাগল দেখতে পেলেন এবং বললেন: হে উম্মু মা‘বাদ! এই ছাগলটির অবস্থা কী? সে বলল: ছাগলের পাল থেকে মূলত দুর্বলতাই এই ছাগলটিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে; তিনি বললেন: তার মধ্যে দুধ আছে কি? সে বলল: এই ব্যাপারে ছাগলটি খুবই দুর্বল; (অর্থাৎ এর অবস্থা দুধ দেওয়ার চেয়েও খারাপ) তিনি বললেন: তুমি কি আমাকে তা দোহন করার অনুমতি দেবে? সে বলল: আমার পিতা ও মাতা আপনার জন্য কুরবান হউক! আপনি যদি তা দোহন করতে চান, তাহলে তা দোহন করুন; অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাগলটিকে ডেকে আনালেন, তারপর তিনি তার ওলানে তাঁর হাত বুলালেন এবং আল্লাহ তা‘আলার নাম বললেন; আর তার (উম্মু মা‘বাদের) জন্য তার ছাগলের ব্যাপারে দো‘আ করলেন; অতঃপর বকরীটি দুধ দোহনের সুবিধার্থে তার দু’পায়ের মাঝখানে ফাঁক করল, তার দুধ অধিক হারে বৃদ্ধি পেল এবং সে জাবর কাটতে লাগল; তারপর তিনি একটি পাত্র নিয়ে আসার জন্য ডাকলেন যাতে কাফেলার সকলকে তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করাতে পারেন, তারপর তাতে দুধ দোহন করে দুধের প্রবাহ সৃষ্টি করলেন, এমনকি তার উপর চকচকে ফেনা উঠল; অতঃপর তিনি উম্মু মা‘বাদকে তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করালেন, আরও দুধ পান করালেন তাঁর সাথীদেরকে এবং তারাও পরিতৃপ্ত হলেন; অতঃপর তাদের বাকীরা দুধ পান করল; তারপর তারা সকলে দ্বিতীয়বার পান করল; অতঃপর তিনি তাতে দ্বিতীয়বার দুধ দোহন করলেন, এমনকি দুধের পাত্র পরিপূর্ণ হয়ে গেল; অতঃপর তিনি তা তার নিকট রেখে দিলেন, তারপর তার সাথে (পুনরায় সাক্ষাতের) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেন এবং তার নিকট থেকে রওয়ানা হলেন।
তারপর অল্প কিছুক্ষণ অবস্থান করার পরেই তার স্বামী আবূ মা‘বাদ তার নিকট কতগুলো দুর্বল শীর্ণকায় বকরী তাড়িয়ে নিয়ে এসে উপস্থিত হল, বকরীগুলো দুর্বলতার কারণে টলায়মান অবস্থায় হাটল; অতঃপর যখন আবূ মা‘বাদ দুধ দেখতে পেলেন, তখন তিনি অবাক হলেন এবং বললেন: হে উম্মু মা‘বাদ! তোমার নিকট এই দুধ কোথা থেকে এল, অথচ বকরীগুলো ছিল দূরে চারণভূমিতে এবং ঘরের মধ্যে কোন দুধ ছিল না? জবাবে সে বলল: না, আল্লাহর কসম! তবে আমাদের নিকট দিয়ে এমন এক বরকতময় ব্যক্তি চলে গেছেন, যাঁর অবস্থা এমন এমন; আবূ মা‘বাদ বললেন: হে উম্মু মা‘বাদ! তুমি আমাকে তাঁর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর, তখন সে বলল: আমি এক ব্যক্তিকে দেখেছি, যার অবস্থা হল- তিনি পরিষ্কার সুন্দর, উজ্জ্বল চেহারার অধিকারী, তিনি শীর্ণতার দোষে দুষ্ট নন; নিন্দিত নন ক্ষুদ্রতার অভিযোগে, তিনি ছিলেন উজ্জ্বল ফর্সা; তাঁর চোখ ছিল গভীর কালো; তাঁর চোখের পাতার প্রান্তদেশ ছিল লম্বা; তাঁর কণ্ঠস্বরের মধ্যে ছিল তীক্ষ্নতা ও বলিষ্ঠতা; তাঁর গর্দান ছিল লম্বা; তাঁর দাঁড়ির মধ্যে ঘনত্ব ছিল; ভ্রূ’র কিনারাসমূহ লম্বা হওয়ার সাথে ভ্রূ ছিল ধনুকাকৃতির; যদি তিনি চুপ থাকতেন, তাহলে তাঁর মধ্যে গাম্ভীর্যের ছাপ পরিলক্ষিত হত; আর যদি তিনি কথা বলতেন, তখন তিনি তাঁর মাথাকে উঁচু করতেন এবং তাঁর সাথীদের চেয়ে উঁচু হয়ে যেতেন; তিনি ছিলেন সবচেয়ে সুন্দর মানুষ, দূর থেকে দেখতে তিনি সর্বাধিক দীপ্তিমান, আর কাছ থেকে দেখতে তিনি অতি উত্তম; তিনি ছিলেন মিষ্টভাষী ও স্পষ্টভাষী এবং মাঝামাঝি পর্যায়ে কথা বলতেন, কমও বলতেন না, আবার বেশিও বলতেন না; (বলার সময়) তাঁর কথা যেন মণিমুক্তা ও ছন্দোবদ্ধ বাক্যের ন্যায় অবতীর্ণ হত; তিনি মধ্যম আকৃতির, দৃষ্টিকটু লম্বা নন এবং এমন বেঁটেও নন, যার কারণে কোনো চোখ তাঁকে অবজ্ঞা করতে পারে; তিনি ছিলেন দুই ডালের মাঝামাঝি একটি ডাল; সুতরাং তিনি ছিলেন তাদের তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর এবং আভিজাত্যের দিক থেকে সবচেয়ে উত্তম; তাঁর সাথীগণ তাঁকে বেষ্টনী দিয়ে রাখে, তিনি যদি কথা বলেন তারা তাঁর কথা শুনে এবং তিনি যদি তাদের নির্দেশ দেন তারা তাঁর নির্দেশ পালনে প্রতিযোগিতা শুরু করে; তাঁর নিকট তাঁর সঙ্গীগণ সবসময় সমবেত থাকে; তিনি বিষণ্ন (বিরক্তি) চেহারার অধিকারী নন এবং কথাবার্তায় অসংলগ্ন নন[1]।
(বর্ণনা শোনার পর) আবূ মা‘বাদ বললেন: আল্লাহর কসম! তিনি কুরাইশ বংশের মহামান্য ব্যক্তি, আমার নিকট তাঁর ব্যাপারে যা আলোচনা করা হল, তা মক্কাতেও আলোচনা হয়; আমার প্রবল অভিপ্রায় হল, আমি তাঁর সঙ্গী হব এবং এর জন্য আমি কোনো পথ পেলে অবশ্যই আমি সেই পথ ধরব। আর মক্কাতে একটি আওয়াজ সুউচ্চ হল, তারা আওয়াজটি শোনল কিন্তু কে আওয়াজ করছে তা জানতে পারল না; আর সে (আওয়াজকারী) বলছিল:
মানুষের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা দান করুন উত্তম পুরস্কার
দুই বন্ধুকে, যাঁরা আগমন করেছেন দুই তাঁবুতে উম্মু মা‘বাদের;
তাঁরা অবতরণ করেছে তার নিকট হিদায়াতসহ এবং সে হয়েছে হিদায়েত প্রাপ্ত,
সুতরাং সেই ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে, যে হয়েছে মুহাম্মদের সঙ্গীতে পরিণত;
অতএব, হে কুসাই সম্প্রদায়! কি কারণে আল্লাহ তোমাদের থেকে দূর করলেন,
এমন কল্যাণ, শ্রেষ্ঠত্ব ও নেতৃত্ব, যার কোনো প্রতিদান হয় না।
আবূ বকরের সৌভাগ্যের জন্য তাকে মুবারকবাদ, এ জন্য যে তিনি এমন লোকের সাহচর্য নিয়েছেন, যার সাহচর্যে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন সৌভাগ্যমণ্ডিত করেন।
বনী কা‘বের কন্যার জন্যও মুবারকবাদ, কারণ সে মুমিনদের জন্য উঁৎ পেতে বসেছিল, তোমরা তোমাদের বোনকে তার বকরী ও পাত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর,
কেননা তোমারা বকরীকে জিজ্ঞাসা করলে সে সাক্ষ্য দিবে;
তিনি তার নিকটে ডেকে আনলেন দুধহীন বকরীকে, অতঃপর সেটি ফোঁটা ফোঁটা দুধ ঝরাল
ফেনায়িত দুধ বকরীর স্তন স্পষ্টভাবে তাঁর নিকটে;
তারপর তিনি তাকে রেখে গেলেন বন্ধক হিসেবে তার নিকটে দোহনকারীর জন্য
সে তাকে মূল উৎসে দুধ বের করবে, তারপর সরবরাহ কেন্দ্রে।”
[হাকেম, আল-মুসতাদরাক: ৩ / ৯ – ১০ এবং তিনি বলেন, এই হাদিসটির সনদ সহীহ, ইমাম বুখারী ও মুসলিম র. হাদিসটি বর্ণনা করেন নি, আর ইমাম যাহাবী র.ও অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছেন; বাগবী, শরহুস সুন্নাহ ( شرح السنة ): ফাদায়েল / নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামগ্রীক গুণাবলী ( جامع صفاته صلى الله عليه و سلم ), হাদিস নং-৩৭০৪, ১৩ / ২৬১ – ২৬৪ ]।
তাখরীজ ও বর্ধিত কলেবর করেছেন, ড. আহমাদ মু‘আয হাক্কী
অনুবাদ : মোঃ আমিনুল ইসলাম
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া