সূরা আলে ইমরানের ১৯০ এ আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন,
“..নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে।”
আয়াতটি পড়ার পর প্রথম যে ভাবনাটি আমার মাথায় আসল তা হল, দুনিয়ার বুকে মানবজাতির আগমন হয়েছে বহু বছর আগে, সে তুলনায় মাত্র অল্প কিছুদিন হল আমরা মহাকাশীয় বস্তগুলো সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে আরম্ভ করেছি। হাজার হাজার বছর হল পৃথিবীর বুকে আমাদের বসবাস, কিন্তু মাত্র কয়েকশ বছর আগে টেলিস্কোপের মাধ্যমে আমরা কাছ থেকে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহগুলোর উপগ্রহ যেমন চাঁদের সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি; আরো পেয়েছি মিল্কি ওয়ের চারপাশের তারকারাজি এবং অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহের ছবি।
যে বিষয়টি আমাকে মুগ্ধ করে তা হল, আমাদের আবিষ্কারের লক্ষাধিক বছর পূর্ব থেকেই এই তারকারাজি, ছায়াপথ কিংবা এই সমগ্র মহাবিশ্বের অস্তিত্ব ছিল, এমনকি যখন এসবের অস্তিত্ব সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণাও রাখতাম না তখনো এদের অস্তিত্ব ছিল; তখনো শনির সুন্দর বলয়, বৃহস্পতির রঙ বেরঙের স্তর ছিল, গাঢ় নীলের নেপচুন ছিল – সর্বোপরি সৌর মন্ডলের দেখা-অদেখা জগৎসমূহ বিরাজমান ছিল, আমাদের যখন তাদের সত্যিকারের সৌন্দর্য এবং চমকপ্রদ ছবি উপভোগ করার সৌভাগ্য হয় নি, তখনো সেগুলো ছিল। এরা নিজ কক্ষপথে ঘুরত, পরিভ্রমণ করত, জাজ্জ্বল্যমান ছিল এবং মহাকাশকে অলংকৃত করে রেখেছিল।
যে উপলদ্ধিটি আমাকে খুব করে নাড়া দেয় তা হল, আমাদের চারপাশের চেনাজানা জগত দেখে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার কে যতটুকু ক্ষমতাবান মনে করি, প্রকৃতপক্ষে তিনি আরো অনেক বেশি শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান, কেননা আমাদের চারপাশের জগতেই সবকিছু শেষ নয়, বরং তা আরো সুবিশাল এবং আরো চমৎকার – যা কিনা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। আমাদের দেখা ও জানার পরিসর যতই বড় হোক না কেন, তার বাহিরেও একটা বিস্ময়কর জগতের অস্তিত্ব সবসময় অজানা থেকে যাবে।
এরপর আমার মনে প্রশ্ন উঁকি দিল – আচ্ছা, লক্ষ লক্ষ বছর ধরে অস্তিত্বমান এই নিদর্শনগুলো যদি আমাদের এই দীর্ঘসময় ধরে অজানাই থেকে যায়, তবে এই মহাকাশীয় বস্তুগুলো আজকে আমাদের নিকট আসলে কিসের বার্তা দেয়? আমি যে উপসংহারে উপনীত হলাম তা হল, এগুলো আমাদের নিকট সেই বার্তাই পৌছে দেয় যে, মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’আলা এই নক্ষত্র, ছায়াপথসহ নানান মহাকাশীয় গ্রহাণুপুঞ্জ কিছু সৃষ্টি করেছেন কেননা তাঁর এগুলো সৃষ্টি করার ক্ষমতা আছে, তিনি তা পারেন, যেন বহু বছর পর টেলিস্কোপ কিংবা মহাকাশযান এর মাধ্যমে আমরা তাদের আবিস্কার করতে সক্ষম হই; যেন আমাদের উপর আল্লাহর একচ্ছত্র কর্তৃত্বকে পুনরায় উপলদ্ধি করতে পারি।
এই সিরিজের পূর্বের একটি লেখাতেও আমাদের জীবনে আয়াতটির প্রয়োগের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি করার একটি উপায় উল্লেখ করেছিলাম, তা হল, হাবল টেলিস্কোপ এবং ভয়েজার মহাকাশযানের ধারণ করা ছবিগুলো থেকে এই লুক্কায়িত মহাকাশ এবং এই সুবিশাল মহাবিশ্বের বিশালতা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা লাভ করা। এগুলো আমাদের জন্য নিদর্শনস্বরূপ এবং তা আমাদের বোধবুদ্ধিকে আরো মজবুত করতে সাহায্য করে।
তারিক মেহান্না
প্লাইমাউথ কারেকশনাল ফ্যাসিলিটি
আইসোলেশন ইউনিট – সেল #১০৮