গায়েব জানা বলা হয়! অদৃশ্যের সকল খবর জানা, এবং অদৃশ্যের সকল বিষয় কেউ জানানো ব্যতিত নিজস্বভাবে জানা। এধরণের গায়েব একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন।
হুযূর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের গায়েব জানা সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা:
পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে ইহকালীন ও পরকালীন দৃশ্য-অদৃশ্যের সকল বিষয়ের বিস্তারিত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই রয়েছে। তবে আল্লাহ তা‘আলা আম্বিয়ায়ে কিরামকে ওহী ও ইলহামের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে অবগত করেছেন। বিশেষ করে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর শান অনুযায়ী আল্লাহ তা‘আলার স্বত্বা ও সিফাত সম্পর্কে এবং অতীত ও ভবিষ্যতের অসংখ্য ঘটনার মাধ্যমে আলমে বরযখ, কবরের অবস্থা, হাশরের ময়দানের চিত্র, জান্নাত ও জাহান্নামের পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয়ে অনেক জ্ঞান দান করেছেন যা অন্য কোন নবী এবং নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতাকেও দেওয়া হয়নি। এবং এর অনেক বিষয় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মাতকে জানিয়ে ছিলেন। এটাকে গায়েব জানা বলা হয় না। কারণ এগুলি অদৃশ্যের সকল গায়েব না। দ্বিতীয়ত যতটুকু জেনেছেন তা আল্লাহ তা‘আলা তাকে জানিয়েছেন, তিনি আবার উম্মাতকে জানিয়েছেন।
সুতরাং হুযূর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দৃশ্য-অদৃশ্যের সকল বিষয়ের তিনি জানতেন এবং পৃথিবীর শুরুলগ্ন থেকে যা কিছু ঘটেছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সবকিছুই তিনি জানেন, অথবা তাঁর জীবদ্দশায় কিংবা মৃত্যুপরবর্তী সময়ে কখন কোথায় কী হচ্ছে, তা সবকিছুই তিনি জানেন বা দেখছেন, এমন আক্বীদা পোষন করা স্পষ্ট কুফুরী ও শিরিকী আকীদা,যা ঈমান বিধ্বংসী বিশ্বাস।
মনে রাখতে হবে যে, হুযূর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাধারণ থেকে সাধারণ বেআদবী যেমন কুফুরীর কারণ, ঠিক তেমনিভাবে তাকে খোদায়ী গুণ, যেমন ‘আলীমুল গায়েবের গুণে গুণান্বিত করে খোদার আসনে বসানোও সুস্পষ্ট শিরক এবং শানে উলূহিয়্যাতের সাথে চরম বেআদবী। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সঠিক আক্বীদা পোষন করার তাওফীক দান করুন । (আমীন)
কুরআনের অসংখ্য আয়াত এবং নবীয়ে কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অগণিত হাদীস দ্বারা উল্লেখিত আক্বীদা প্রমানিত। সেগুলোর মধ্য হতে কয়েকটি আয়াত ও হাদীস এখানে পেশ করা হল।
১নং আয়াতঃ
قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ
অর্থ: (হে নবী) আপনি বলুন! আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া আসমান-যমীনে অন্য কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেনা। এবং তারা জানে না কখন তারা উত্থিত হবে। (সূরা নামল, আয়াত-৬৫)
২নং আয়াতঃ
قُلْ لَا أَقُولُ لَكُمْ عِنْدِي خَزَائِنُ اللَّهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَا أَقُولُ لَكُمْ إِنِّي مَلَكٌ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ –
অর্থ: (হে নবী) আপনি বলুন! আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার নিকট আল্লাহর ধন-ভান্ডার রয়েছে। এবং আমি গায়েব জানি না, এবং আমি তোমাদের এটাও বলিনা যে, আমি একজন ফেরেশতা। আমার নিকট যা প্রত্যাদেশ হয় আমি কেবল তারই অনুসরন করি। (সুরা আন‘আম, আয়াত- ৫০)
৩ নং আয়াতঃ
إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ (34)
অর্থ: কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহরই রয়েছে। তিনি বারি বর্ষণ করেন, এবং তিনি জানেন জরায়ুতে কী রয়েছে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে। এবং কেউ জানে না কোন স্থানে তার মৃত্যু ঘটবে। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবগত । (সুরা আন‘আম, আয়াত- ৩৪)
৪ নং আয়াতঃ وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ
অর্থ: অদৃশ্যের চাবিকাঠি কেবল আল্লাহর নিকট রয়েছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ জানেনা। (সুরা আন‘আম, আয়াত- ৫৯)
৫নং আয়াতঃ
قُلْ لَا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ
অর্থ: (হে নবী) আপনি বলুন! আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা করেন, তা ব্যতিত আমার নিজের ভাল মন্দের উপরও আমার কোন অধিকার নেই। যদি আমি গায়েব জানতাম তাহলে আমি প্রভূত কল্যাণ লাভ করতাম এবং কোন অকল্যাণ আমাকে স্পর্শ করত না। (সুরা আ‘রাফ, আয়াত-১৮৮)
উল্লেখিত সবগুলো আয়াতে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কেউ (চাই সে নবী হোক কিংবা ফেরেশতা) অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না।
হাদীস নং ১:
عن عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: «وَمَنْ حَدَّثَكَ أَنَّهُ يَعْلَمُ الغَيْبَ، فَقَدْ كَذَبَ، وَهُوَ يَقُولُ: لاَ يَعْلَمُ الغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ»
অর্থ: হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তোমাকে বলে নবীজি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গায়েব জানেন, সে মিথ্যাবাদী। কারণ নবীজি (স.) নিজেই বলতেন, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কেউ গায়েব জানে না। (বুখারী, হাদীস নং- ৭৩৮০)
২নং হাদীস:
عن اياس بن سلمة عن ابيه قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي قُبَّةٍ حَمْرَاءَ، إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ عَلَى فَرَسٍ عَقُوقٍ يَتْبَعُهَا مُهْرُهُ، فَقَالَ: مَنْ أَنْتَ؟ قَالَ: «أَنَا رَسُولُ اللهِ» قَالَ: مَتَى السَّاعَةُ؟ قَالَ: «غَيْبٌ، وَلَا يَعْلَمُ الْغَيْبَ إِلَّا اللهُ» قَالَ: فَمَتَى نُمْطَرُ؟ قَالَ: «غَيْبٌ، وَلَا يَعْلَمُ الْغَيْبَ إِلَّا اللهُ» قَالَ: فَمَا فِي بَطْنِ فَرَسِي؟ قَالَ: «غَيْبٌ، وَلَا يَعْلَمُ الْغَيْبَ إِلَّا اللهُ»
উপরোক্ত হাদীসের সারাংশ হল, এক অশ্বারোহী নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে তাঁকে গায়েবের বিষয়ে তিনটি প্রশ্ন করল, ১. কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে? ২. আমাদের উপর বৃষ্টি কখন বর্ষন হবে? ৩. আমার ঘোড়ার পেটের বাচ্চাটি কি (নর না মাদী)?
নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবগুলোর উত্তরে বলেছেন, এটা গায়েবের বিষয় আর গায়েব আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া আর কেউ জানেনা ।
এখন আমার প্রশ্ন হল যদি নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম গায়েব জানতেনই তাহলে তিনি উল্লেখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর না দিয়ে একথা কেন বললেন যে, ইহা গায়েবের বিষয় ,আর গায়েব আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না? (আল মু‘জামুল কাবীর,হাদীস নং : ৬৬৪৫)
৩নং হাদীস:
عَنِ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: دَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى بَعْضِ أَهْلِهِ فَوَجَدَ عِنْدَهُمْ تَمْرًا أَجْوَدَ مِنْ تَمْرِهُمْ، فَقَالَ: «مِنْ أَيْنَ هَذَا؟» فَقَالُوا: أَبْدَلَنَا صَاعَيْنِ بِصَاعٍ،
নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার তার কতক বিবির নিকট গমন করলেন, তখন তাদের ঘরে যে খেজুর ছিল তার চেয়ে উত্তম খেজুর দেখে বললেন, তোমরা এ খেজুর কোথা থেকে পেলে? তারা বলল, আমরা আমাদের দুই সা’ (নিম্নমানের খেজুর) এর বিনিময়ে এক সা’ (উত্তম খেজুর) গ্রহন করেছি। (মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক,হাদীস নং : ১৬১৯১)
এবার বলুন, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি গায়েব জানতেনই তাহলে বিবিদেরকে কেন প্রশ্ন করলেন যে, তোমরা এ খেজুর কোথা থেকে পেলে?
৪নং হাদীস:
আমের ইবনে মালেক নামে এক ব্যক্তি নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি নজদবাসীর নিকট কিছু সাহাবী প্রেরণ করা হয় আর তারা নজদবাসীকে ইসলামের দাওয়াত দেয়, তাহলে আমি আশা করি তারা ইসলাম গ্রহন করবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাদের ব্যাপারে আমার আশংকা হয়। তখন সে বলল, আমি তাদের দায়িত্ব নিব। সুতরাং তার দায়িত্ব গ্রহনের শর্তে নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্তরজন সাহাবীর এক জামা‘আত যারা ক্বারী হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন,তাদেরকে নজদে প্রেরণ করলেন। যখন এই কাফেলা বীরে মা‘ঊনা নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন নজদবাসী এই সত্তরজন সাহাবীর কাফেলাকে শহীদ করে ফেলল।(বুখারী, হাদীস নং: ৩০৬৪)
সম্মানিত পাঠক! নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি গায়েব জানতেন যে, তারা সত্তরজন জালীলুর কদর সাহাবীকে শহীদ করে ফেলবে, তাহলে কি নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে প্রেরণ করতেন? তিনি কি এতটাই নির্দয়? (নাঊযুবিল্লাহ)
৫নং হাদীস:
খাইবার যুদ্ধের পর যাইনাব বিনতে হারিস নামক এক ইয়াহুদী মহিলা কোন কৌশলে নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিষ মিশ্রিত বকরীর গোশত হাদিয়া পেশ করল। নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোশত মুখে দেওয়া মাত্রই ‘গোশতের টুকরাটিই’ বিষ মিশ্রিত হওয়ার বিষয়টি নবীজীকে জানিয়ে দিল। সাথে সাথে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোশত রেখে দিলেন। ইতিমধ্যে নবীজীর সঙ্গী সাহাবী বিশর ইবনে বারা (রাযি.) তা গলধঃকরণ করে ফেলেন। ফলে এর বিষক্রিয়ায় তিনি ইন্তিকাল করেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামও এর বিষক্রিয়ায় কিছুটা আক্রান্ত হয়েছিলেন। ফলে তিনি চিকিৎসা স্বরূপ শিংগা লাগান। এবং পরবর্তীতে যখন নবীজী মৃত্যরোগে আক্রান্ত হন তখনও তিনি উক্ত বিষক্রিয়া অনুভব করেছিলেন। (বুখারী, হাদীস নং- ৪২৪৯, আল বিদায়া ওয়ান নিহয়া: ৪/১২৭-১২৮)
এখন পাঠকের নিকট আমার প্রশ্ন হল, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি গায়েব জানতেন তাহলে কি তিনি বিষমিশ্রিত গোশত নিজে মুখে দিতেন এবং নিজ সাহাবীকে খেতে দিতেন?
উপরোল্লিখিত আয়াত ও হাদীস দ্বারা একথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল যে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলীমুল গায়েব ছিলেন না।
নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের গায়েব জানা সম্পর্কে প্রচলিত ভ্রান্ত আক্বীদা
বিদ‘আতী ও রেজাখানীদের আক্বীদা হল, পৃথিবীর শুরুলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে, সবকিছুই নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানেন। এবং তার মৃত্যুপূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে যখন যেখানে যা কিছুই ঘটছে, সবকিছুই তিনি জানেন। তারা এর স্বপক্ষে কয়েকটি আয়াত ও হাদীস পেশ করেন। নিম্নে সেগুলো জাওয়াব সহ উল্লেখ করা হল।
১নং আয়াত: وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَجْتَبِي مِنْ رُسُلِهِ مَنْ يَشَاءُ
অর্থঃ আল্লাহ তা‘আলার শান এটা নয় যে, তিনি তোমাদেরকে গায়েবের বিষয়ে অবগত করবেন, তবে তিনি স্বীয় রাসূলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনিত করেন। (সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত- ১৭৯)
বিদ‘আতীদের বক্তব্য হল, উক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা আম্বিয়ায়ে কিরামকে গায়েবের বিশেষ জ্ঞান দান করেছেন।
২য় আয়াত: فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا (26) إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِنْ رَسُولٍ
অর্থঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মনোনিত রাসূল ব্যতিত গায়েবের বিষয়ে কাউকে অবহিত করেন না। (সূরা জিন্ন-আয়াত-২৬-২৭)
তারা বলে, এই আয়াত স্পষ্টরূপে প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলা নবীজীকে অদৃশ্যের বিশেষ জ্ঞান দান করেছেন।
খন্ডনঃ এ কথা সর্বস্বীকৃত যে, আল্লাহ তা‘আলা আম্বিয়ায়ে কিরামকে ওহী ও ইলহামের মাধ্যমে প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু বিষয়ে গায়েবের জ্ঞান দান করেছেন। কিন্তু এর দ্বারা এটা প্রমানিত হয় না যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অদৃশ্যের সকল জ্ঞান দেওয়া হয়েছে।
২নং আয়াতের পূর্বের আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلْ إِنْ أَدْرِي أَقَرِيبٌ مَا تُوعَدُونَ أَمْ يَجْعَلُ لَهُ رَبِّي أَمَدًا (25)
এ আয়াতে مَا تُوعَدُونَ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আযাব অথবা কিয়ামত, তাহলে আয়াতের অর্থ হয়, হে নবী আপনি বলে দিন, তোমাদেরকে যে (আযাব বা কিয়ামতের) প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা নিকটে নাকি আমার প্রভু তার জন্য কোন সময় নির্ধারন করেছেন, তা আমার জানা নেই। (সূরা জিন-আয়াত-২৫)
এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হল যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আযাব অথবা কিয়ামতের সময় সম্পর্কে জানেন না। তাহলে এ কথা বলা কিভাবে সহীহ হল যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অদৃশ্যের সকল বিষয়ে অবগত?
উপরোল্লিখিত আলোচনা দ্বারা একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলীমুল গায়েব ছিলেন না। সাথে সাথে একথাও মনে রাখতে হবে যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলীমুল গায়েব না হওয়ায় আল্লাহ তা‘আলা তাকে যে মর্যাদা দান করেছেন তাতে সামান্যতমও ঘাটতি আসবে না, বরং যথার্থই বাকী থাকবে। কারণ নবী বা রাসূল হওয়ার জন্য গায়েবের ইলম থাকা শর্ত নয়, তার নিকট ওহী আসা শর্ত। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সঠিক আক্বীদা পোষন করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)