দুধ-মায়ের কোল থেকে আপন মায়ের কোলে
কিছু অচেনা লোক বালক মুহাম্মদের বুক কেটে ফেললো; এবং তারা কারা, তা জানা গেলো না; কিন্তু মুহাম্মদ বা তাঁর খেলার সাথিদের বিবরণে সেসব লোকদের ভয়ঙ্করও মনে হলো না, কিন্তু বালক মুহাম্মদের সাথে যা ঘটে গেলো, তা তো ভয়ে-চিন্তায় অভিভূত হয়ে থাকবার মতো ব্যাপার।
এই ভয় চিন্তা ও বিহ্বলতা থেকে শান্তি পাবার নিমিত্ত হালিমা মুহাম্মদকে নিয়ে এক গণকের কাছে গেলেন। গণক মুহাম্মদকে দেখামাত্রই নিজ আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো এবং তাঁকে নিজের বুকের উপর উঠিয়ে চিৎকার করে বলতে শুরু করলো, ‘হে আরববাসীগণ, কোথায় তোমরা? দ্রুত এসো। যে বিপদ অচিরেই তোমাদের উপর আসন্ন, তা প্রতিহত করো। তোমরা এই শিশুটিকে হত্যা করো আর এর সাথে আমাকেও হত্যা করো। আর যদি তোমরা একে ছেড়ে দাও, তবে মনে রেখো, সে তোমাদের দ্বীনকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে এবং তোমাদেরকে এমন এক দ্বীনের প্রতি দাওয়াত দেবে, যার কথা তোমরা আজ পর্যন্ত কখনও শোনোনি।’ এসব দেখে হালিমা ভয়ও পেলেন, তাঁর মেজাজও খারাপ হয়ে গেলো; মুহাম্মদকে গণকের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বললেন, ‘তুমি পাগল হয়ে গেছো, আগে তোমার নিজের মস্তিষ্কের চিকিৎসা করানো উচিত।’
মুহাম্মদকে গণকের কাছ থেকে নিয়ে এলেও ঘটনার আকস্মিকতা হালিমার মন থেকে মুছে গেলো না। মুহাম্মদকে কাছের রাখার মায়ার থেকে মুহাম্মদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি ভাবিত হয়ে উঠলেন বেশি।দুটি এমন অযাচিত ঘটনা, যা আপাতত দুর্ঘটনাই, হালিমাকে ভীষণ ভয়গ্রস্ত করেও রাখলো। হালিমা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, এমন এই শিশুকে অনিরাপত্তায়-ঘেরা এই দূর-গ্রামে রাখা কোনোভাবেই ঠিক হবে না; মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেওয়াই হালিমার কাছে যথার্থ মনে হলো।
যখন হালিমা মুহাম্মদকে তাঁর শ্রদ্ধেয়া মাতার নিকট সোপর্দ করলেন, তখন তিনি হালিমাকে প্রশ্ন করলেন, ‘এত আগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এত শীঘ্র ফিরিয়ে নিয়ে আসার কারণ কী? প্রথমেই হালিমা বলতে চাইলেন না। কিন্তু অনেক পীড়াপীড়ির পর হালিমা সব ঘটনা খুলে বললেন। শুনে আমিনা বললেন, ‘নিশ্চয় আমার ছেলের এক বিশেষ মহিমা রয়েছে।’ অতঃপর তিনি গর্ভাবস্থা ও প্রসবকালীন সময়কার বিস্ময়কর ঘটনাবলি শোনালেন।
আর এই ঘটনাগুলোর মধ্য দিয়েই বালক মুহাম্মদের দিন যাপন শুরু হলো তাঁর মা আমিনার কাছে…